হিমির বিয়ে(১ম পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
“ডিভোর্সি মেয়ের সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
কথাটা শোনার সাথে মেজাজ প্রচন্ড ভাবে গরম হলো।
আমি কি কোনোদিক দিয়ে পঙ্গু নাকি অটিজমের সমস্যা আছে সেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। বাবা কি দেখে একটা ডিভোর্সি মেয়েকে পছন্দ করলো?
এমনও না মেয়ের বাবার প্রচুর অর্থসম্পদ আছে। ভুড়িভুড়ি টাকা পয়শা দিবে আমাকে। পড়াশুনার দিক দিয়েও কমতি নেই আমার। আল্লাহের সহায় হলে খুব শীঘ্রই একটা ভালো গভমেন্ট জব পেয়ে যাবো। আর তাছাড়া যে ফার্মে আমার জবটা সেখানে ভালো মাইনে পাই। কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই তবুও বাবার এমন সিদ্ধান্ত আমি মানতে পারলাম না।
হতে পারি বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমি। তাই বলে আমার লাইফের বড় সিদ্ধান্ত তাদের মতে হতে পারে না। কাকে নিয়ে আমার লাইফ সেটেল্ড করবো তা একান্তই আমার ব্যাপার। যদি কাউকে পছন্দ আমার থাকে তা যাচাই-বাছাই করতে পারে বাবা।
গত সপ্তাহ ধরে বাবা বাড়িতে যাওয়ার জন্য বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। অফিস থেকে ছুটিও নিয়েছিলাম। যখন আমার ছোট বোন কথা ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় বাবা আমাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে তাও একটা ডিভোর্সি মেয়েকে দেখতে,তখন ছুটি ক্যান্সেল করছি।
তানহা ফোন দিয়ে ফেললো আরেক ঝামেলায়। এই মুহুর্তে নাকি তানহার ষাট হাজার টাকা প্রয়োজন। কোনো ভাবেই নাকি টাকা যোগাড় করতে পারছে না। আমার হাতেও টাকা নাই। দিতে পারলেও কাল ব্যাংকে গিয়ে টাকা উঠিয়ে তারপরে দেওয়া লাগবে। এই রাতে তো আর যেতে পারব না।
ইমার্জেন্সি ভাবে এক কলিগের কাছে টাকা চাইলাম। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তানহার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম বাইক নিয়ে। টাকাটা তানহা নিয়েই বাসার মধ্যে চলে গেলো। কেনো টাকা লাগলো তা জিজ্ঞেস করার সময়টা দিলো না। আমি বাসায় এসে আর ফোন দিলাম না। ঘুমিয়ে পরলাম তাড়াতাড়ি।
আজ সকালে তানহা ফোন দিলো না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে তানহা একটা বার হলেও ফোন দিতো। কিন্তু আজ কি হলো। আমি ফ্রেশ হয়ে তানহাকে ফোন দিলাম। দুইবার ফোন দেওয়ার পরেও রিসিভ করলো না। তাড়াহুড়োর জন্য আর ফোন দেইনি। অফিসে গিয়ে ফোন দিলাম তখন ফোন বন্ধ পেলাম।
বিকেলে অফিস থেকে বের হয়েছি। তানহার সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। অন্যদিকে কথা আমাকে ফোন দিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। বাবা নাকি কথাকে রাগারাগি করেছে। কথা কেনো আমাকে ডিভোর্সি মেয়ের ব্যাপারে জানালো। কথার জন্যই আমি বাসায় যাইনি। ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। আর বার বার তানহার নাম্বারে ফোন দিয়েই যাচ্ছি। এতটা ব্যস্ত ছিলাম যে তানহার বাসার সামনেও যেতে পারিনি।
খুব চিন্তার পরে গেলাম আমি। কি কারনে তানহার ফোন অফ করে রেখেছে। কোনো ধরনের বিপদে পরেনি তো। আর কোনো সমস্যা হলে তো আমাকে জানাতো। কোনো কিছুই বললো না আমাকে কাল টাকা নেওয়ার সময়। একটা মানুষ এতটা বোকা থাকে কীভাবে?
তানহা আমার ভালোবাসার মানুষ। দুই বছর আগে তানহার সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হয়। আমি আগে যে বাসায় ছিলাম সেই একই বাসায় তানহার পরিবারও ছিল। সেখান থেকেই তাহার সাথে আমার পরিচয়। আস্তে আস্তে কথাবাত্রা, ওদের বাসায় আসা যাওয়ার মাধ্যমেই তানহার সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তানহার পরিবার একটু আঁচ করতে পারার কারণে আমি সেই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য একটা বাসা নিয়েছি।
তানহা মেয়েটা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। যখন আমাদের সম্পর্ক শুরু হয় তখন সবেমাত্র আমি জবটায় জয়েন করি। কোন ধরনের ঝামেলা চাইনি বা তানহা ওর পরিবার থেকে কোন ধরনের প্রেসারে পড়ুক, যে কারণেই খুব তাড়াতাড়ি আমি সেই বাসা থেকে চলে গিয়ে নতুন একটি বাসায় উঠেছি। আমি যে বাসায় উঠেছি সেই বাসায় তানহা মাঝেমধ্যে যেতো, বা কোন খাবার রান্না করলে তানহা নিয়ে যেতো। একদিন তো আমি প্রচুর অসুস্থ। এত পরিমান জ্বর ছিলো বলতে গেলে আমার কোন জ্ঞানই ছিলনা।তানহা আমাকে বারবার ফোন দিয়ে না পাওয়ায় আমার বাসায় চলে গিয়েছিল। গিয়ে আমার অবস্থা দেখে খুব তাড়াতাড়ি আমাকে উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।দুইটা দিন তানহা আমার সেবা যত্ন করেছে। পরিবারের কাছে কি বলে আমার কাছে ছিলো তা আমি ঠিক জানি না। তবে দুইটা দিন আমার সেবা যত্ন এবং সারাটা দিন আমার কাছেই ছিল।
আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবারকে তানহার ব্যাপারে জানাবো। কিন্তু তার আগেই বাবা আমার জন্য নাকি মেয়ে দেখা শুরু করেছে। এবং মেয়ে দেখতে দেখতে এমন একটা মেয়ে বাবা পছন্দ করেছে তা কোনো ভাবেই মানার মত নয়। আর তাছাড়া আমি তানহাকে ভালোবাসি। বিয়ে করলে তো আমি তানহাকেই করব। কোনো ভাবেই আমি ওকে হারাতে পারবো না। এমন নয় যে তানহার পরিবারের সাথে আমার পরিবার মিলবে না। বরং তানহার পরিবারের স্টাটাস অনেক ভালো।
বাড়িতে যাওয়ার পরে কথা আমার গলা ধরে কান্না করে দিলো। বুঝতে পেরেছি বাবা তানহাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। আমি কথাকে সামলে বললাম পরে দেখবো কি হয়েছে।
বাবার কাছে যেতেই বাবা বললো…
– ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেস্ট নে। আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি রাতে ফিরবো। তখন কথা হবে।
– কথা কান্নাকাটি করতেছে কেন? কি হয়েছে? আমি বলেছি না কথাকে কোনো কিছু না বলতে?
– এখন চুপ থাক,বললাম তো রাতে আলাপ হবে।
বাবার আচরন টা আমার ভালো লাগে নি। তার আচরনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। তার ভাষায় রাগী ভাব মিশে গেছে। আমি আর বাবাকে কিছু বললাম না। কাঁধ থেকে ব্যাগটা কথার হাতে ধরিয়ে দিলাম। কথার জন্য কিছু নিয়ে আসছি কিনা তা খুঁজে দেখা শুরু করলো। প্রত্যেকবার কথার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছি। এইবার ব্যাগে কিছু না পেয়ে মনটা খারাপ করে বসেছে। আর আমার দিকে তাকাচ্ছে।
মা চুলোয় রান্না বসিয়ে দিয়েছে। আমি যে এসেছি সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একটা বার আমার কাছেও আসলো না। আমি পিছন থেকে মায়ের গলাটা জড়িয়ে ধরলাম। তবুও মা আমার দিকে তাকাচ্ছে না। কি ব্যাপার কিছুই বুঝতেছি না। বাবার রাগী চেহারা আর মা বসে আছে অভিমান করে। চোখের ইশারায় কথার কাছে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। কথা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কিছুই জানে না। বুঝলাম না কি হলো এদের। কি ফ্রেশ হবো আর কি নাস্তা করবো। ভালো লাগছে না কিছুই।
একদিকে তানহা ফেলে দিলো এক চিন্তায় আরেক দিকে বাসায় এসে দেখি এই অবস্থা। মাথাটা একে বারে জ্যাম হয়ে আছে। বারান্দার বিছানায় শুয়ে পরলাম। কথা আমার সামনে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত নিয়ে আসছে। ওর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম…
– কি হলো কথা? বাবা মা এমন করতেছে কেন?
– বাবা মাকে গালাগালি করেছে। বাবা যে মেয়ে পছন্দ করেছে তাতে মায়ের আর আমার দুজনেরই অমত। তা নিয়ে বাবা বকছে।
– তা তুই কান্না করে আমায় আসতে বললি কেন?
– মা দুইদিন ধরে খাবার খায় না।
– তুই বাবার সাথে কথা বলবি, আর মায়ের রাগ ভাঙ্গাবি। আমার কোনো কথাই মা শুনছে না।
– বাবা ওই মেয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে কেনো?
– কি জানি, কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
– আচ্ছা বাদ দে বাবা আসুক বাসায়। তারপরে দেখি।
– আমার জন্য কিছু আনলি না কেন?
– কি আনবো? প্রত্যেকবারই তো তোর জন্য নিয়ে আসি। তাই এইবার কিছু নিয়ে আসি নাই।
– আচ্ছা।
– শোন, সামনে বিয়ে করতে হবে না? তাই টাকা গুছিয়ে নিচ্ছি।
– হুম হুম বুঝতে পারছি।
– আচ্ছা ঘুমাই একটু। রান্না হলে ডাক দিস।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। তানহার নাম্বারে আরেকবার ফোন দিলাম। কিন্তু ব্যার্থ হলাম। সুইচ অফ। প্রচুর ভাবে রাগ উঠে গেলো আমার। ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সব ডিএ্যাকটিভ। এর কারনটা কি?
সন্ধ্যায় কথাকে ডাক দিলাম।
– দেখতো পছন্দ হয় কিনা?
– তু তুই ফোন আনছিস? বাবাহ এতো দামী ফোন!
– হুম আর কিন্তু কিছুই দিতে পারবো না। তুই আমারে গরীব বানাই দিবি।
– তোর একটা মাত্র বোন আমি। যাহ কিছুই লাগবে না। এই নে তোর ফোন।
– নাহ এটা রাখ। এটাই শেষ বার।
তানহার নাম্বার থেকে আমায় ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই..
– রিয়ান আমি জানি তুমি বেশ চিন্তিত। তবুও বলছি। তুমি আমায় আর খুঁজো না। তোমার ষাট হাজার টাকা সময় মত পেয়ে যাবে। আর হ্যাঁ আমায় ভুল বুঝো না। ভালো থেকো…….
[চলবে………]