হিমির সৃতি (ছোট গল্প)

1
8818

হিমির সৃতি (ছোট গল্প)
লেখক -তাসভীর ইসলাম

—ভাইয়া ওটা কি খাচ্ছো তুমি?
— তুই কি খাচ্ছিস?
— আমি তো ললিপপ খাচ্ছি।
— আমিও ললিপপ খাচ্ছি!
— তোমার ললিপপে দেখছি আগুন জলতেছে!
— হ্যা এটা স্পেশাল ললিপপ তো তাই।
— ভাইয়া তোমার নাখ, মুখ দিয়ে ধোয়া বার হচ্ছে কেনো?
— তোকে বল্লাম না এটা স্পেশাল ললিপপ! এই স্পেশাল ললিপপ খেলে এমনি হয়!
— ভাইয়া কেমন লাগে তোমার ললিপপ টা?
— অনেক টেষ্টি।
— ভাইয়া আমিও খাবো!
— এই একটাই আছে তোকে দিলে আমি কি খাবো? তাছারা এই ললিপপ তোকে খেতে দেওয়া যাবে না!
— কেনো?
— তুই মেয়ে মানুষ আর অনেক ছোট এগুলা ললিপপ তোর জন্য না। এই তো তুই ছোটদের ললিপপ খাচ্ছিস এটাই অনেক ভালো।
— আমি পাশের বাসার আংকেল কে দেখলাম আমার মতো ললিপপ খাচ্ছে উনি তো ছোট না!
— এত বেশি কথা বলিস কেনো এই ললিপপ তোকে খাওয়া যাবে না তো যাবে না।
— না আমি খাবো দাও না, আমিও নাখ,মুখ দিয়ে ধোয়া বার করবো।
— তোকে ধোয়া বার করতে হবে না!
— না আমিও ধোয়া বার করবো দাও আমাকে।
— এক থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলবো, যা এখান থেকে ফাজিল কোথাকার! খুব জেদ হইছে আজকাল কোনো কথা শুনিস না।
আমার ধমক শুনে ছোট বোন ঠোট বাকা করে রুম থেকে বার হয়ে গেলো,,, মনে হয় এখনি কেঁদে দিবে।
ঠিক তাই হলো দরজার বাইরে গিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
আমার আর নিস্তার নাই এখনি বাবা মা দুজনেই ছুটে আসবে।আর এসে যদি কান্নার কারণ জানতে চায় তাহলে আমি শেষ! কোনো রকম যদি জানতে পারে আমি সিগারেট খাই তাহলে বাবা উল্টা ঝুলিয়ে রাম ধোলাই দিবে। তারা তারি সিগারেট নিভিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলাম। তার পরপরেই বাবা মা দুজনেই দৌড়ে আসলো।
ছোট মেয়ের প্রতি দরদ উপচে পরে, একটু কান্না করতেই দুজনে দৌড়ে এসে কি করবে কি না করবে কোনো হুস পায় না।
মা বল্লো
— কি হয়েছে মা মনি কাঁদো কেনো?
— ভাইয়া ললিপপ দেয় নি?
এইরে ফেঁসে গেলাম আজ কপালে দুঃখ আছে।
মা এসেই বলা শুরু করলো
— এত বড় হইছিস ছোট বোনের সামান্য আবদার পূর্ণ করতে পারিস না।
কোথায় ললিপপ রাখছিস এখনি বার কর।
হিমির (ছোট বোন) জন্য এক প্যাকেট ললিপপ এনে রাখছিলাম গোটা প্যাকেট বার করে মায়ের হাতে দিলাম।
ওখান থেকে একটা ললিপপ বার করে হিমির হাতে দিতেই সে আরো জোরে কান্না করে বল্লো
— আমি এই ললিপপ খাবো না, আমি স্পেশাল ললিপপ খাবো?
বাবা বল্লো
— স্পেশাল ললিপপ মানে?
— হ্যা স্পেশাল ললিপপ একটু আগে ভাইয়া খাচ্ছিলো!
— তুই কি স্পেশাল ললিপপ খাইছিস আবার?
— আরে কই কিছু নাতো।
বাবা হিমিকে বল্লো
— কি রকম ললিপপ দেখছো আম্মু, আমাকে বলো আমি এনে দিবো।
— ঐ যে যেটার মাথায় আগুন থাকে, আবার নাখ মুখ দিয়ে ধোয়া বার করা যায় ঐ ললিপপ টা খাবো।
— তোকে কে বল্লো এটা ললিপপ, এটা তো সিগারেট আর এটা সাস্থর জন্য খুব খারাপ।
— ভাইয়া তো বল্লো ওটা ললিপপ, ভাইয়া খাচ্ছিলো আর নাখ মুখ দিয়ে ধোয়া বের করছিলো। আমিও ধোয়া বার করবো।
হিমির কথা শুনে বাবা আমার উপর ক্ষেপে গেলো
— হারাম জাদা আমি এত বড় হইছি বউ, বাচ্চা সব আছে আজ প্রযন্ত সিগারেট ছুয়ে দেখিনি! আর তুই বাসায় রুমে বসে সিগারেট খাচ্ছিস। খাচ্ছিস তো খাচ্ছিস তাও আবার ছোট বোন কে বলিস ললিপপ খাচ্ছিস! তোর ললিপপ খাওয়া টা বার করছি আমি।
আমার শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে! আজ আমি শেষ, যেকোনো ভাবে বাঁচতেই হবে মাইরের হাত থেকে। তারা তারি শার্টের বোতাম খুলে দিয়ে বাবার হাতে শার্ট রেখে দিলাম ভো দৌড়।
বাসায় থেকে নেই তো কাজ,
ভুলে গিয়ে সব লাজ,
খালি গায়ে দৌড়ে পালাই!
বারান্দায় একটা টি শার্ট ছিলো ওটা হাতে নিয়ে রাস্তায় এলাম।
বাবা হুংকার দিয়ে বলে দিলো
— তোকে যদি আর একবার এই বাড়িতে দেখি হাঁত পাঁ ভেঙ্গে বিছানায় ফেলে রাখবো।
বুঝতে পারছি তার মাথায় এখন প্রচন্ড রাগ জমে আছে।
বাসার কথা পরে ভাবাযাবে এখন একটু দেবদাসের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াই।
সারাদিন বাইড়ে ঘুড়লাম কোনো লাভ হলো না মানিব্যাগ টা বিছানায় ফেলে এসেছি প্রচন্ড খিদা লাগছে, ঘুড়ে ফিরে বাসায় চলে আসলাম।
গেট বন্ধ কলিং বেল বাজালে নিশ্চিত বাবার কানে পরবে।
জনালা দিয়ে উকি দিতে দেখলাম ছোট বোন সোফায় বসে খেলতেছে।
হাত ইশারা করে ডাকতেই ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে জানালার কাছে আসলো।
— কি হয়েছে?
— দরজা খুলে দে প্রচন্ড খিদা লাগছে।
— কেন তোর কাছে স্পেশাল ললিপপ টা আছে না ওটা বার করে খা পেট ভরে যাবে।
— লিলিপপ খেয়ে কি আর পেট ভরে কোনো একটা ব্যবস্থা কর না বোন আমার।
— হ্যা করতে পারি তবে এরকম ললিপপ তোমাকে যেনো আর খেতে না দেখি।
— আচ্ছা খাবো না কোনো একটা ব্যবস্থা কর।
— করতেছি, তবে চুপি চুপি ভিতরে আসবে বাবা বাসায় আছে তোমাকে দেখলে মেরে হালাুয়া টাইট করে দিবে কথাটা মনে রাখিও।
হিমির কথা মতো চুপি চুপি আমার রুমে গিয়ে বসে পরলাম,, একটু পরেই রুমে হিমির আগমন হাতে একটা খাবারের প্লেট খাবার দেখে জিহ্বায় পানি এসে গেলো।
হাত বাড়িয়ে প্লেট নিতেই হিমি বল্লো
— আমার পাঁচশত টাকা লাগবে
— টাকা দিয়ে কি করবি তুই?
— সেটা তোমাকে বলবো কিসের জন্য?
— তাহলে টাকা দিবো না
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আব্বুকে গিয়ে বলতেছি তোমার বাদর ছেলে বাসায় আসছে।
— মহা মুশকিল তো এই টুকু বয়সে তুই এত পাকনা হইছিস আগে জানতাম না!
— এখন দিবা কিনা বলো।
— আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি
মানিব্যাগ টা খুজে ৫০০ টাকার একটা চকচকে নোট হিমির হাতে দিয়ে দিলাম।
খাবার দিয়ে হিমি গুন গুন করে গান গেয়ে রুম থেকে চলে গেলো!
৫০০ টাকা কোনো ব্যাপার না কিন্তু হিমি ৫০০ টাকা করবে কি সেটাই হলো বড় ব্যাপার।
খাবার খেয়ে শুয়ে পরতেই হিমির আগমন
— এই ভাইয়া ঐদিক একটু সরে ঘুমাও না
— আবার কি হলো
— আমি এখানে ঘুমাবো
— না এখানে ঘুমানো যাবে না।
— না আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাবো!
— এত জেদ কেনো তোর
— কই আর জেদ করলাম আমি তো আমার ভাইয়ার সাথে ঘুমাবো এতে জেদের কি আছে।
—বাবা মা খুজতে আসবে
— না আসবে না আমি তাদের বলে এসেছি।
— আমার কথা শুনে বাবা কিছু বল্লো না?
— নাহ আর কিছু বলবে না আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।
— আচ্ছা হইছে এত পাকা পাকা কথা বলতে হবে না শুয়ে পড়।
শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতেছি ছোট বোন আমার গালা জরিয়ে ধরে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি গার্লফ্রেন্ড Messenger এ ভিডিও কল দিলো।
গার্লফ্রেন্ড ফোন দিচ্ছে আমি কেটে দিচ্ছি, আবার দিচ্ছে আবার কেটে দিচ্ছি
হিমি কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে বল্লো
— তুমি বার বার ফোন কেটে দিচ্ছো কেনো এবার যদি কেটে দেও তোমার চুল টেনে ছিরে দিবো।
মহা মুশকিলে পরে গেলাম আর একবার ফোন দিতেই ধরে ফেল্লাম
যদিও আমার প্রতি রাগ দেখাতো হিমিকে পাশে দেখতে পেয়ে আর কিছু বল্লো না। তখনি হিমি আমার হাত থেকে ফোন কেরে নিয়ে বল্লো
— তুমি আমার মিষ্টি ভাবি তাই না
— হ্যাঁ।আচ্ছা তোমার নাম কি?
— আমি হিমি,, তোমার নাম কি?
— আমি রাখি।
— তোমার মতো তোমার নামটাও অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি এটা বুঝতেছি না তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ে আমার মতো একটা বান্দর ভাইয়ার প্রেমে পরলো কেমনে?
— তোমার ভাইয়া আবার কি বাদরামো করলো
— জানো আজকে কি করছে?
— কি?
— আজকে সিগারেট খাইছে জন্য বাবা ভাইয়ার পিছনে তারা করছে আর ভাইয়া বাদরের মতো ছুটে পালাইছে।
— একদম ঠিক কাজ করছে
— এই মিষ্টি ভাবি তুমি তারা তারি আমাদের বাসায় এসে ভাইকে অনেক বকবে। তুমি আসলে এক সাথে ভাইয়ার চুল টানবো।
— তোমার ভাইয়া তো আমাকে নিয়ে যায় না।
— আমি বাবাকে বলে তোমার আসার ব্যবস্থা করবো তুমি একদম চিন্তা করবে না।
এই নাও আমার বাদর ভাইয়াটার সাথে এখন কথা বলো।
বলেই হিমি আমাকে ফোন দিয়ে পিছন ফিরে শুয়ে পরলো।
এই বয়সে মেয়েটা এত যে পাকা পাকা কথা শিখছে তা ধারনার বাইরে।
সকাল বেলা বাইকে করে হিমিকে তার প্রাইভেট টিচারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি
হিমিকে বল্লাম
— কাল কে আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিলি সেটা কি করবি?
— আমার একটা বন্ধুকে দিবো ওরা অনেক গরিব প্রাইভেট বেতন দেয় নি।
এই বয়সে বন্ধুর প্রতি ওর মানবতা দেখে অনেক খুশি হলাম।
হিমিকে তার স্যারের কাছে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় গেলাম।
তিন ঘন্টা পর মায়ের ফোন
ফোন ধরতে মায়ের হাউ মাউ করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
— মা কি হয়েছে?
— হিমি সহ তোর বাবা বাইক এক্সিডেন্ট করেছে তুই তারা তারি হাসপাতালে চলে আয়।
মায়ের কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেল্লাম! বন্ধুদের কে নিয়ে দ্রুতো হাসপাতালে পৌঁছিয়ে দেখলাম মা বাইরে বসে কাঁদতেছে আর বাবার মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
দৌড়ে গিয়ে মাকে বল্লাম মা হিমি কোথায়?
আমাকে দেখে মা হাউমাউ করে কেদে বল্লো অপারেশন থিয়েটারে,৩০ মিনিট হলো এখনো ডাক্তার বার হলো না!
প্রচন্ড চিন্তায় পরে গেলাম আমার পিচ্চি বোনটার কিছু হয়ে গেলো নাতো।
হিমির ছবির সামনে বসে ওর সাথে ঘটে যাওয়া সৃতি গুলো ভাবছি।
খোদা আমাদের নিরাশ করে নি আজ তিন মাস হলো পিচ্চিবোন টা কোমায় চলে গেছে ! এখনো আশা আছে যে বোনটা একদিন না হয় একদিন ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।
ওর কথা গুলো এখনো কানে বাজে
ভাইয়া আর কখনো স্পেশাল ললিপপ খাবেনা, আমার বন্ধু অনেক গরীব ও প্রাইভেটের বেতন দেয় নি, ভাবি আসলে এক সাথে তোমার চুল টানবো সেগুলো এখন সব সৃতি! এখনো ঘুমাতে গেলে মনে হয় এই বুঝি ও আমার পাশে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে!

সমাপ্ত

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here