হিমির_বিয়ে(৫ম পর্ব)

0
1125

হিমির_বিয়ে(৫ম পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

– আমার মায়ের এখন কি অবস্থা?

– আশংকাজনক। একে তো তার শরীরে বড় ধরনের সমস্যা আছে। তার উপরে অনেক পরিমান পয়জন খেয়ে ফেলেছে।

– শরীরে বড় ধরনের সমস্যা মানে?

-আপনার মায়ের শরীরে রক্ত খুবই কম। তার শরীর প্রচুর পরিমানে দূর্বল।

– ডাক্তার প্লিজ আমার মাকে সুস্থ্য করে দিন।

– দেখুন আমরা সর্বচ্চ চেষ্টা করছি। আপনার মায়ের ট্রিটমেন্ট চলছে। তবে কোনো ভাবেই জ্ঞান ফিরছে না। সেখান থেকেই আমরা বড় ধরনের ভয়ে আছি।

আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। দিব্যি পাগল হয়ে যাচ্ছি। সম্পুর্ন দোষ আমার। আমি যদি মায়ের কথা শুনতাম তাহলে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতাম না। মন চাচ্ছে আমি নিজেই মরে যাই। আমি বাবা মায়ের এমন কুলাঙ্গার সন্তান যে আমার কারনেই মা পয়জন খেয়ে ফেলেছে। বাবা অজ্ঞানের মত পড়ে আছে। আমার তার কাছেও যেতে ইচ্ছে করছে না।

বাবার সবই নাটক। আজ তার কারনেই এত কিছু, সে যদি আমাকে বাধ্য না করতো তাহলে আজ এমন হত না। সে কি কারনে এমন করলো আমার সাথে। তার স্বার্থ কোথায়?

কথা কোথায়? কথাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের পাশের বাসার এক আন্টি আছে। তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম। সে জানালো কথা মায়ের পাশেই আছে। হস্পিটালে পায়চারি করতে লাগলাম। কখন ডাক্তার বের হবে আর আমাকে জানাবে আমার মা সুস্থ্য হয়েছে। কোনো ডাক্তারকেও দেখতে পাচ্ছি না। পাগলের মত ছোটাছুটি করলাম কিন্তু কোনো রেজাল্ট পেলাম না।

হিমির বাড়ির সবাই মেডিকেলে ছুটে এসেছে। হিমির বাবা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো…

– রায়ান কি অবস্থা? তোমার মা এখন কেমন?

– আপনারা কেনো এসেছেন? আপনাদের কারনেই আমার মা এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কি এমন দেখিয়েছিলেন যে আমার বাবা আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো।এখন তো সবাই খুশি? আমার মা মরে গেলেই তো সবাই ভালো থাকবেন?

– ছি ছি কি বলছো? আমাদের কি দোষ বলো?

– চুপ থাকেন। আর প্লিজ এখান থেকে চলে যান।

হিমির বাবা এখান থেকে চলো গেলো। বাবার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই বাবা চিৎকার করতে শুরু করলো। চিৎকার করে সমস্ত মেডিকেল মাতিয়ে তুললো। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না বাবার কাছে। পাশের বাসার আন্টি আর আংকেল বাবাকে শান্ত করলেন…

কিছুক্ষন পরে হিমি আমার পাশে এসে বসলো…

– মিস্টার রায়ান, প্লিজ চিন্তা করবেন না। এই মুহুর্তে আপনার শক্ত হতে হবে।

– আপনি যাননি?

– না আমি যাইনি। কিভাবে আপনাদের এই সময়ে ফেলে রেখে আমি যাই। আমার কারনেই এত কিছু। আজ আমি যদি ডিভোর্সি না হতাম তাহলে আজ এই দিনটি দেখতে হতো না। আমি কি করবো বলেন? আমাকে তো বাধ্য করেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাবাকে বুঝাতে। কিন্তু বাবা কোনো ভাবেই যেনো শুনেনি।

– আচ্ছা এটা বলেন তো আপনার বাবা আমার বাবাকে কি এমন দেখিয়েছেন যে বাবাও উঠে পরে লেগেছিলো?

– ঠিক তেমন কিছু জানি না। হাল্কা পাতলা কিছু শুনেছিলাম।

– কি শুনেছেন আমাকে বলেন।

– আমার বাবা আপনার বাবার জীবন বাঁচিয়েছেন। কোনো একদিন আপনার বাবার বিপদের সময় বাবা হাজির হয়ে যায়। যার কারনেই তিনি বেঁচে যান।

– মানে? আমি বুঝলাম না।

– আমিও সঠিক জানি না। তবে আমার ব্যাপারে বাবা আপনার কাছে বলেছিলো তার পরেই কি যেনো ভেবে সে রাজি হয়েছেন।

– আচ্ছা আপনার ডিভোর্স হলো কিভাবে?

– আমি খারাপ মেয়ে যে কারনেই তো স্বামীর সংসার টা করতে পারলাম না। খারাপ মেয়ে না হলে কি কারো সংসার ভাঙ্গে? তবে ডিভোর্সটা আমিই দিয়েছিলাম।

– তা বুঝতে পেরেছি যে ডিভোর্সটা আপনি দিয়েছিলেন।

– কিভাবে বুঝলেন?

– কেন জানো আমার মনটা বারবার বলছিল যে আপনার মাধ্যমেই ডিভোর্সটা হয়েছে।

– আচ্ছা যে হাজব্যান্ড বিয়ের এক বছর পর্যন্ত আমাকে স্ত্রীর সম্মতি দেয় নি সেখানে তার সাথে সংসারটা কিভাবে করব? আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি তার সাথে সংসার টিকিয়ে রাখার তার মনের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার। তাকে ভালোবেসে সম্মান করে আমার করে নিতে চেয়েছি। কিন্তু সেই মানুষটা যদি আমাকে আপন করে নিতে না পারে বিয়ের এক বছর পরেও। তাহলে আমি তার কাছে ঝুলে থেকে কি করব। তার জীবনে ভালোবাসার কেউ আছে যে কারনে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। যেদিন আমাদের বাসর রাত সেদিনই আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে সারাটি জীবন পার করে দেবে। অবশ্য এটা কিন্তু খারাপ না। একটা মানুষ যদি কাউকে ভালোবাসে তাকে যদি ভালোবেসে পেতে চায়। কাছে পাওয়ার জন্য যদি আমাকে না মেনেও নয় এটা আসলে অনেক ভালো। কারণ সে ভালোবাসার সম্মান দেখিয়েছে। আর তাই আমি একটা বছর তার অপেক্ষা করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমি চলে এসেছি। কারণ আমি চাইনা যার জীবনে অন্য কেউ আছে বিয়ের পরেও তাকে পেতে চায় তার জীবনে থেকে যাওয়ার জন্য।

– হাহ ভালোবাসা। আচ্ছা শুনুন!

– জি বলুন

তাকে কিছু বলতে যাব এর মধ্যেই ডাক্তার এসে আমাকে যেটা বললেন আমি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ডাক্তার এসে আমাকে বললেন এই মুহূর্তে মাকে ভালো একটা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে। আমার মায়ের কিডনি দুটো নষ্ট হয়ে গেছে। আগে থেকেই নাকি তার কিডনিতে সমস্যা ছিল। আমার মনে হলো আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না।

খুব তাড়াতাড়ি মাকে নিয়ে অন্য একটা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমি, বাবা, কথা আর সেই আংকেল টা। চারজনে মিলে মাকে নিয়ে রওনা হলাম। কিন্তু মায়ের জ্ঞান এখনো ফিরছে না। মা এখনো অজ্ঞান অবস্থায় আছে।

আমার মাঝে একটা ভয় কাজ করছে। আমি আমার মাকে হারিয়ে ফেলব। এই বুঝি আমি মা হারা হয়ে যাব। বাবা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন সমস্ত পাপ এবং সমস্ত অপরাধের বোঝা তার মাথার উপর বয়ে গেছে। আর কথা তো সেই থেকেই মায়ের পাশে বসে কান্নাকাটি করছে। আমি যে কিভাবে কথাতে শান্তনা দিব খুঁজে পেলাম না।

শহরের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তাররা জনিয়ে দিলেন ৭ দিনের মধ্যেই মায়ের অপারেশন করাতে হবে। কিডনি ডোনেট করতে হবে। কিন্তু এই সাতদিনের মধ্যে মায়ের জন্য কিডনি কিভাবে খুঁজে পাবো। মায়ের ব্লাড গ্রুপ আর আমার ব্লাড গ্রুপ এক নয়। যদি একই গ্রুপ হতো তাহলে তো কোনো চিন্তাই ছিলো না। বাবা পাগলের মত হয়ে গেছেন। দেয়ালে দেয়ালে মাথা ঠুকাচ্ছেন। দুইদিন পার হয়ে গেলো। তবুও মায়ের জন্য কিডনি ম্যানেজ করতে পারলাম না। এই হস্পিটাল থেকে অই হস্পিটালে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলাম কিন্তু কোথাও মায়ের গ্রুপে কিডনি নাই।

ডাক্তার এসে জানালেন মায়ের জ্ঞান ফিরেছে। আমি দৌড়ে ছুটে গেলাম। আমার মা কি যেনো আমাকে বলতে চাচ্ছেন। ডাক্তার থামিয়ে দিয়ে বললেন মাকে রেস্ট নিতে কোনো ভাবেই কথা বলা যাবে না। তাই আমরাও মায়ের সামনে বসে রইলাম।

বাবা মায়ের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আর তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি ফেলছে। বাবার অবস্থা দেখে আমি অবাক। বাবার এই ভালোবাসা আগে ছিলো কোথায়? বাবা যদি এমন না করতেন তাহলে আজ এমন দেখা লাগতো না। কিন্তু মায়ের কিডনি পাবো কোথায়।

সকল আত্মীয়ের সাথে কথা বললাম। কিন্তু ফলাফল শূন্য। দিশেহারা হয়ে তানহার নাম্বারে কল দিলাম। উফ্ ফোন এখনো বন্ধ। হায়রে সময়ে আমি ঠিকই সবার পাশে ছিলাম কিন্তু এখন আমার পাশে কেউ নেই। কিডনির অভাবে কি মায়ের অপারেশন হবে না?

মা বারবার জিজ্ঞেস করেছেন তার কি হয়েছে। মাকে যে কি জবাব দিবো ভেবে পাচ্ছি না। মা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু তার শরীরের যে এতটা সমস্যা তা সে নিজেও জানে না।

কিচ্ছুক্ষন ডাক্তার এসে একটা সু খবর দিলেন। মায়ের কিডনির ডোনেট পাওয়া গেছে। কিন্তু কে কিডনি দিচ্ছে তা জানালেন না ডাক্তার। সে ডাক্তারের কাছে পরিচয়ও দিলেন না।

আমি বাহিরে ছিলাম,মেডিকেলে এসে জানতে পারি মাকে অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছে….

[চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here