হিমির_বিয়ে(৭ম এবং শেষ পর্ব)

0
2485

হিমির_বিয়ে(৭ম এবং শেষ পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

মেডিকেলে এসে ভাবছি, পার্সেলটা খুলবো কি খুলবো না। আসার পরে সেই নাম্বার থেকে আমাকে মেসেজ করল। আমি সেই নাম্বারে ফোন দিলাম ফোন বাজছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণ পরে আমাকে সেই নাম্বার থেকে আবার ম্যাসেজ দেয়

_ এত ফোন দিচ্ছেন কেন হ্যাঁ? পার্সেলটা আমিই পাঠিয়েছিলাম, এইবার একটু শান্ত হন।

– আপনি পার্সেল পাঠিয়েছেন আপনাকে ফোন দিব না এটা কেমন কথা?

– হ্যা আমাকে ফোন দিয়েন না।আর পার্সেল কি খুলেছেন খুলে দেখছেন ওর মধ্যে কি আছে?

– না দেখিনি।

– আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আসার পরেই খুলে দেখবেন।

-মানে?

সেই যে ম্যসেজ দিয়ে রেখেছি তার পরে আর রিপ্লাই নেই। সব কিছুই গোল মাল লাগতে শুরু করলো। বাবা এর মধ্যে চলে আসলেন..

– রায়ান এত বড় প্যাকেটে কি?

– জানি না তো। এটার জন্যই তো আমি অফিসে গিয়েছিলাম।

– কি আছে এতে?

– জানবো কি করে কি আছে?

– আচ্ছা রেখে দে অল্প কিছুদিন পরে তো বাসায় চলে যাবো তখন না হয় খুলে দেখিস।

– জি বাবা। আমিও তা ভাবছি।

কিছুক্ষন পরে মায়ের মাথার পাশে গিয়ে বসলাম। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর বলছি…

– মা এসব কেনো করলে? কি হয়েছিলো হিমিকে নিয়ে?

আমার মা চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বলছে না। হিমির বেড আর মায়ের বেড খুব পাশাপাশি। তাই হয়তো কিছু বলছে না। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারো বলছি…

– মা তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না? মা প্লিজ কিছুতো বলো। আর এই যে দেখো যে হিমির জন্য তুমি এমন করলে সেই হিমিই তোমাকে ওর শরীরের একটা কিডনি দিয়ে দিয়েছে।

মা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখটা মলিন করে রইলেন। আমি লক্ষ্য করলাম আমার মায়ের চোখ বেয়ে পানি পরছে। আমি আস্তে করে মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে হিমির পাশে গিয়ে বসলাম।

– এইযে ম্যাডাম, আপনিও দেখছি মায়ের মত চোখ থেকে পানি ফেলতেছেন।

হিমিও চুপ চাপ।

– যাব্বাবা ইনিও অভিমান করছে বোধ হয়। আমি এখান থেকে যাই।

তাদের কাছ থেকে বের হয়ে ডাক্তারের রিসিপশনে গেলাম। গিয়ে জানতে চাইলাম তারা কখন বাসায় চলে যেতে পারবে।ডাক্তার আমাকে জানিয়ে দিলেন এখনো কমপক্ষে একমাস থাকতে হবে এখানে। দুজনের মোটামুটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতে হবে বাসায় যেতে পারবেনা।

বাবার কাছে গিয়ে বললাম…

– আমাদের এখানে এখনো একমাস থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের তো এখানে থাকতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আর আমার বোন কথা যেহেতু মায়ের এবং হিমির কাছে আছে তাদের দুজনকে দেখভাল করতে পারবে। আমি চাচ্ছি যে আমার অফিসে গিয়ে জবে জয়েন করি। কেননা টাকার দরকার আছে। মায়ের অপারেশনের ট্রিটমেন্টের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি আপনার হাতে এখন তেমন একটা টাকা নেই। সে কারণেই আমি চাচ্ছি চলে যেতে।

– তুই যেটা ভালো মনে করিস।

আমার বসকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম অফিসে জয়েন করতে চাই। আমার কথা শুনে অফিসের বস বেশ খুশি। আমাকে বলল যত তাড়াতাড়ি পারি যেনো জয়েন করি।

বাবা এবং কথাকে সবকিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে দিয়ে আমি আমার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।

রওনা দেওয়ার আগে আমি, মা এবং হিমির সাথে দেখা করে আসলাম। দেখা করে আসার পথে হিমি আমাকে বললো…

– মিস্টার রায়ান আপনার মা আপনাকে অনেক ভালোবাসে বুঝতে পেরেছি। আপনি বুঝতে পারেননি। আমি যতটুকু বলব যে মায়ের দিকে একটু লক্ষ্য করবেন। আর তাছাড়া সে তো বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, এখন ভালো একটা মেয়ে দেখে শুনে বিয়ে করে নিবেন। আমাদের আর দেখা হবে না কখনো। আপনার সাথে আর কখনো কথা বলতে পারব না। আপনি আপনার মাকে ভালবাসেন এটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার কারণে আজ আপনার মায়ের এই অবস্থা। আপনার মায়ের জন্য তেমন কিছুই করতে পারলাম না।

– আপনি কি সব বলছেন? কই যাচ্ছেন? আমিতো এখানে চলে আসব আপনাদের বাসায় যাওয়ার আগেই। তখন কথা হবে। আর উল্টোপাল্টা বলে না তো নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখেন। আপনার ঋন আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। কোনদিন সম্ভব না।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আমার গাড়ি আসার সময় হয়ে গেছে। তাদের সাথে আর কথা বলতে পরালাম না। আমি তাদের রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।

আমি আজ যখন অফিসে জয়েন করি আজকে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করেছে। আজকে সবার ব্যবহার দেখে আমি বেশ মুগ্ধ। এমন মুগ্ধতা আমি আগে কখনো দেখিনি এই অফিসে। নতুন কিছু কলিগ জয়েন করেছে। তবে তাদের সম্মান বা সকলের ভালোবাসা দেখে আমি বেশ আশ্চর্য হয়ে গেছি।

অবাক লাগছে নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি কিছু বুঝতে পারছিনা। অফিসের বস আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে সবার সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন আমার প্রমোশন হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাকে নাকি একটা ফ্ল্যাট এবং গাড়িও দেয়া হবে। কিন্তু কী কারণে এটাতো আমি আসলে বুঝতে পারছি না। আগামীকালকে নাকি সবকিছু বলবে।

এখন আপাতত আমার কলিগের বাসায়ই আছি। কারন যখন জবটা ছেড়েদিয়ে গিয়েছিলাম তখন বাসাটাও ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। তাই ওর বাসায়ই গেলাম।

পরের দিন যখন অফিসে যাই তারপরে একটা পার্টির আয়োজন করেছে। অফিসের কলিগসহ বসের পরিবারের সবাই আছে। সবার সামনে বস আমার দিকে একটি নতুন গাড়ির চাবি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন রায়ান এখন থেকে গাড়িটা তোমার। তোমাকে অফিসের পক্ষ থেকে গিফট করা হলো।

– কেন স্যার? আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা। আমার প্রমোশন, বাড়ি গাড়ি এসব কি? আমার তো কিছুই মাথায় কাজ করছে না।

– বুঝতে হবেনা। আজকে তোমার জন্য আমার কোম্পানি সফল। তোমার কাজের দক্ষতার মাধ্যমে একটা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির সাথে আমাদের ডিল হয়েছে। বুঝতে পারছ একটা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির সাথে ডিল হওয়া মানে কি? হাজার কোটি টাকার ব্যাবসা। তোমার কারণে আমাদের কোম্পানিটা সংবাদপত্রের পাতায় উঠেছে। একমাত্র তুমি তোমার কাজের দক্ষতা দিয়ে যে অ্যাসাইনমেন্ট দেখিয়েছিলে তার জন্যই এত কিছু। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

– স্যার আমি এতকিছু চাই না আমি শুধু আপনার ভালোবাসা পেলেই হবে।

– ধুর বোকা। ভালোবাসা তো আছেই।

খুশিতে আমার চোখ ছল ছল করে উঠলো। মাস খানেক পরে মাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। আমি অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।

বাড়িয়ে গিয়ে দেখি হিমিও আমাদের বাসায়। আমি বেশ খানিকটা অবাক হলাম। হিমি আমাদের বাসায় কেন? পরে ভাবলাম যে হিমি হয়তো আমার মাকে কিডনি দিয়েছে সে কারণেই আমার মা এবং বাবা দুজনেই আমাদের বাসায় নিয়ে গেছেন।

দুইদিন যেতে পারলো না হিমির বাবা আমাদের বাসায় এসে হাজির। বাসায় এসেই তুমুল ঝগড়া শুরু করলেন বাবার সাথে। আমার বাবা মাথা নিচু করে হিমির বাবার কথাগুলো শুনছিল। বাবার কাছে কোন প্রশ্নের অ্যানসার ছিল না।

এরই মধ্যে হিমি আস্তে আস্তে হেঁটে এসে ওর বাবাকে বললো…

– অনেক হয়েছে আর নয় বাবা। যদি কিছু বলার থাকে তাহলে আমার সাথে বলতে পারেন। কিন্তু তাদের সাথে কিছু বলার অধিকার আপনার নাই। আপনি রায়ানের বাবার জীবন বাঁচিয়েছেন। ব্যাস এটুকুই। আপনার ডিভোর্সি মেয়েকে তার অবিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে দেবেন কেনো? আপনিতো রায়ানের বাবাকে লোভ দেখিয়েছিলেন। রায়ান যদি আমাকে বিয়ে করে তাহলে রায়হানকে অনেক অর্থ-সম্পদ দিবেন। যে ব্যাপারটা রানের বাবাও কারো কাছে প্রকাশ করেনি। কিন্তু এটাই অপরাধ আপনার। এই রায়ানকে আপনি চিনেন?

– কিসব বলিস? কে রায়ান?

রায়ান সেই মায়ের সন্তান যাকে আপনি ত্রিশ বছর আগে ডিভোর্স দিয়েছিলেন?

– মানে?

-মিস যোহরার কথা ভুলে গেছেন? আপনার সাবেক স্ত্রী। যাকে আপনি লাত্থি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। দেখলেন? ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়? আজ আমিও আপনার সন্তান হয়ে ডিভোর্সি একজন। কত্ত মানুষের কথা শুনেছেন।

হিমির বাবা আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো।
তার মানে আমার মা এ কারনেই রাজী ছিলো না। আগে থেকেই সব জানতো। কিন্তু আমাদের কাছে প্রকাশ করেনি লজ্জায়। কিন্তু আমার মা যদি জানিয়ে দিতো তাহলে এমনটা কখনোই হতো না।

হিমি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাতটা ধরলো।

– ভাইয়া তুমি কি আমায় বোন হিসেবে মেনে নিবে? আমি চাই না ওরকম স্বার্থ লোভী মানুষকে বাবার পরিচয় দিতে। মা যখন পয়জন খেয়েছিলো তখনই আমার খটকা লাগলো। আমি সব কিছু নিয়ে খোঁজ নিই। তারপরে এসব জানতে পারি। যখন শুনেছি মায়ের কিডনি ড্যামেজ এবং কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমিই কিডনি দিবো। প্লিজ এই বোনটাকে ফিরিয়ে দিও না।

আমি হিমির কোনো কথার জবাব না দিয়ে মাথাটা নাড়িয়ে মায়ের কাছে চলে গেলাম। পিছনে আমার বাবাও গেলো। বাবা সবার সামনে মায়ের হাটটা চেপে ধরে ক্ষমা চাইলো। আমার মা অঝোরে কান্না করে দিলো। হিমি আর আমার ছোট বোন কথা মায়ের কাধের উপরে মাথা রেখে বললো। আজ থেকে আমরা দুই বোন। মা তুমি কি মেয়ে হিসেবে হিমি আপুকে মেনে নিবা? মা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।

অফিস থেকে ছুটি শেষ। আমি আবারো চলে গেলাম অফিসে। কিছুদিন পরে বাবা সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে গেলো। তাদের দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো। আমার এত্ত বড় ফ্লাটে এতদিন একাই কাটিয়ে দিয়েছি। তাদের সঙ্গ পেয়ে আমার বেশ ভালোই লাগলো।

কিছুদিন পরে হুট করেই দেখি তানহার বাবা আমার দরজার সামনে। আমি বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। হঠাৎ তিনি?

বাবা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললেন…

– ভাইজান ভিতরে আসেন। একটু পরে দেখি তানহা এবং ওর মা সহ প্রায় দশজন আমাদের বাসায় আসলেন। এইবার অবাক না হয়ে পারলাম না। কিভাবে সম্ভব? সবার মাঝে বাবা আমার সামনে দুইটা হাত তুলে ক্ষমা চাইলেন। আমি তার হাতটা নামিয়ে দিয়ে বললাম..

– কি হচ্ছে এসব?

– আজ সব পরিষ্কার করবো আমি। একমাত্র আমার কারনেই অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছিলো। আমি অপরাধী। জানিনা কারো কাছে আমি কিঞ্চিৎ পরিমান ক্ষমা পাবো কিনা। তবুও আমার বলতে হচ্ছে। রায়ান তুই যখন কথাকে তোর ভালোবাসার কথা বলিস তখন আমি ওপাশ থেকে সবই শুনেছিলাম। কিন্তু তখন অনেক অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছিলাম হিমির বাবার সাথে কথা বলে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই তানহাকে যেভাবেই হোক তোর জীবন থেকে সরিয়ে নিব। আমি কাউকে না জানিয়েই তোর এখানে চলে আসি। আমি তো তানহাকে চিনতাম কারন তোর প্রথম বাসার পাশেই ছিলো তানহাদের বাসা। আমি হুট করেই ওদের বাসায় গিয়ে লোকজন দিয়ে থ্রেড দেই। সাথে ছিলো হিমির বাবা। তোর কাছ থেকে আমি তানহার মাধ্যমে ষাট হাজার টাকাও নেওয়াতে বাধ্য করি। তানহাকে লোভী বানানোর জন্য। তুই যখন টাকা দিস আমি তখন ওদের বাসায় ছিলাম। সব নাটক আমি সাজিয়েছি। হিমি কিডনি দেওয়ার পরে আমিও ওর পরিবার সম্পর্কে খোজ নিয়ে জানতে পারি হিমি তোর…

বাবা চুপ হয়ে গেলেন। তানহা আমার কাছে এসে বললো।

– যা হয়েছে প্লিজ ভুলে যাও। আমাকে আর বাবাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর পার্সেলটা তো খুলে দেখলে না। সেই প্রায় দুই মাস আগেই বিয়ের সব কিছু পার্সেলের মধ্যে ছিলো। অবশ্য না খুলে বেশ ভালোই করেছো। আজ একসাথে দুইটা নিউস তো পেতে না।

-দুইটা নিউস মানে?

– হিমি আপুর বিয়ে, এবং তোমার আর আমার বিয়ে। হিমি আপুর জন্য পাত্র আমি আর বাবা’ই ঠিক করেছি। ওই যে পার্সেল পেলে না? তার আগেই বাবা আমার সাথে যোগাযোগ করে সব কিছু বলে দেয়।
প্লিজ সবাইকে ক্ষমা করে দাও না?

আজ হিমির বিয়ে। হিমি অনবরত কান্না করেই যাচ্ছে। তানহা হিমিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে আমি এসে পরলাম।

-হিমি তোর বিয়েতে ভাবছিলাম তোর ভাবি আর আমি দুজনে কাপন ডান্স দিবো। কিন্তু তোর ভাবি বললো তার সাথে নাকি আমায় মানাবে না,তাই ডান্স দিবে না। এটা কি মানা যায়?

হিমি হেসে দিয়ে বললো।
তোমাদের ছেলে মেয়েদের বিয়েতে আমরা সবাই ডান্স দিব। কি বলো?

আজকে খুশির দিন।আজকে সুখবরের দিন। হিমির বিয়ে কিংবা রায়ানের বিয়ে নয়। বরং গোটা পরিবারের খুশির দিন।

কথার বিয়েতে কিন্তু অনেক মজা হবে!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here