হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,পর্ব:২৪

0
488

উপন্যাস : হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,পর্ব:২৪
কলমে: চন্দ্রা।

জেলা শহর থেকে খানিকটা দূরের একটা মফস্বল এলাকা।ধরি,সে স্থানের নামটা কাটোয়া । নিকটবর্তী শহরে যারা স্বল্প বেতনের চাকুরী করেন তাদের জন্য স্বল্প খরচের আবাসিক ভবনের অভাব নেই এই কাটোয়ায়। সে হোক ইট পাথরের তৈরি বহুতল ভবন কিংবা ইটের দেওয়ালের টিনসেড ঘড়।

মেইনরোড থেকে খানিকটা দূরে এগিয়ে গিয়ে একটা দোতলা ভবনের উপর তলার দুইরুম বিশিষ্ট ঘড়। এখানে এতটাই প্রসস্থ পথটা, একমাত্র বাইসাইকেল ছাড়া কিছুই ঢোকার জো নেই। একমাত্র অতি দায়ে না পরলে কেউ এই গলি মুখো হয় বলে মনে হয়না।গলির পাশ দিয়ে অপরিচ্ছন্ন জলীয় নালা থেকে গল গল করে হাওয়ায় ভাসে নাক ঝাঁঝালো দম আটকানো গন্ধ। তবুও সেটা বিলাসবহুল এলাকা খাতায় সবার উপরে আছে। এখানে যারা ভাড়া নিয়ে বা নিজস্ব বাড়িতে থাকেন কেউই ছা পোষা লেভেলে পরেন না কিন্তু ঐ যে রাস্তায় গলিত লাশের গন্ধ এড়িয়ে নাকে রোমাল চেপে পাশ কাটিয়ে গা বাঁচানো বাঙালির স্বভাব কি না? আবার কারো বাড়িতে বৌ, শাশুড়ির একান্ত ব্যক্তিগত কোন্দল দেখতেও বাঙালির আগ্রহের শেষ নেই।তো আসল কথায় আসা যাক,,,সেই দোতলা বিশিষ্ট ভবনের উপর তলার দুইরুম বিশিষ্ট বাসাটিকে কবুতরের খোপের সাথে তুলনা করা চললেও আধুনিক এবং মানসম্মত রুচির পরিচয় অবশ্যই বহন করে।দরজা খুলতেই দামী দামী ফার্নিচার চোখে পরবে।যা অভিজাত শ্রেণীর লোকে ছাড়া ব্যবহার করে না।হালকা গোলাপী দরজার ভেতরে দামী পালঙ্কে অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে এক রমনী।বয়স হয়তো পয়ত্রিশের কাছাকাছি বা তারও কম কিন্তু প্রথম দেখায় পঁচিশের বেশী ভাবা সম্ভব নয় সৌন্দর্যের পূজারী কোনো ব্যক্তির।সে উঠে বসতেই একঝটাকায় নিজের নগ্ন বুকের উপর ফেলে দেয় পাশে থাকা পুরুষটি।ধীরে ধীরে দুজনে মাতে অবাধ্য নিষিদ্ধ প্রেমে।ঠিক প্রেম বললে ভুল হবে। পরকীয়া ই এই সম্পর্কের সঠিক নাম করণ। সময়ের ব্যাবধানে আত্মতৃপ্তির শেষ পর্যায়ে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দেয় দুজনেই।

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে এরই মধ্যে,, বেডরুমের লাগোয়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে পুরুষ টি নিজের স্যান্ড পরিহিত শরীরে শার্ট পরতে পরতে বললো ব্লাঙ্কেটে ঢাকা নারীকে,,অর্পিতা উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।

ব্লাঙ্কেট সহ নড়ে ওঠে অর্পিতা। আড়মোড় ভেঙে বলে হাই তুলে,,,,তুমি কি আজ চলে যাবে রঘু?

হুম যেতেই হবে। অনেক কাজ আছে আমার।আগে ফ্রেশ হয়ে এসো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো হাসপাতালে।শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করে নেয় রঘু।মুখে ঝলমল করছে শারীরিক তৃপ্তির আলোক রশ্মি।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসে অর্পিতা।পাশে থাকা তোয়ালে জড়িয়ে নেয় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র দেহে।মেঝে থেকে অন্তর্বাস গুলো কুড়িয়ে নিয়ে ঢুকে পরে ওয়াশ রুমে।
কিছুক্ষণ পর অন্য তোয়ালে জড়িয়ে লাস্যময়ী মোহময় জল চিকচিকে শরীরে দাঁড়ায় বড়ো সাইজের ড্রেসিং টেবিলের সামনে।পশমহীন সুন্দর সুগঠিত পা দুখানির হাঁটুর উপর অব্দি তোয়ালে।সামনে থরে থরে সাজানো দেশী বিদেশী সব প্রসাধনী সামগ্রী।একটু একটু করে যত্ন করে নিজের এই কোমল শরীরে মাখবে অর্পিতা।এমন রূপে ঘোর লাগে রঘুনাথের।সোফা থেকে উঠে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অর্পিতাকে,মুখ ডোবায় উন্মুক্ত কাঁধে।
গ্রামের দরিদ্র ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা অর্পিতা, কোনোরকমের এস, এস, সি টপকানোর পরে সরকারী খরচে নার্সিং পড়েছিলো বেশ আগে।সেই সুবাদে সরকারী হাসপাতালের সিনিয়র নার্স এখন। কিন্তু উচ্চাভিলাসী অর্পিতা ঐ অর্থে খুশি ছিলো না।তার স্বপ্ন বড়লোক হওয়া। বিভিন্ন ডঃ দের সাথেও তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বিয়ে করেনি কেউই।ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ানো ভ্রমর কি কখনো বাসা বাঁধে? অবশেষে বছর দুই আগে কপাল খুললো তার।পেলো রঘুনাথকে। সেদিন রঘুনাথ কোন এক নেতাকে নিয়ে এসেছিলো ব্লাড টেস্ট করাতে।সেই থেকেই পরিচয় রঘুনাথের সাথে।আস্তে আস্তে শরীর দেখিয়ে এমন বশে করে নিয়েছে রঘুনাথকে সে এখন অর্পিতা ছাড়া কিছুই বোঝে না।মামা, মামির সংসারে রাজার হালে মানুষ হলেও মাতা,পিতা হারা রঘুনাথ নিজের একটা নিজস্ব দুনিয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো স্ত্রী জয়াকে নিয়ে।সেই স্ত্রীকে দিনের পর দিন ঠকাতেও তার বিবেকে বাঁধে না একটুও শুধুমাত্র এই অবৈধ পরকীয়া সম্পর্কের জন্য।রঘুনাথের বিবেককে জাগতে দেয় না অর্পিতা। নিজের সুন্দর সুগঠিত ফিগার আর বাকপটুতায় নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলেছে রঘুনাথের মতো অমন নম্র, ভদ্র,সচ্চরিত্র রঘুনাথকে।যার এখন আর চরিত্র বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
রঘুনাথ তার কাজ করেই চলেছে। রুপের নেশায় আসক্ত মাতাল রঘুনাথকে আয়নার প্রতিবিম্বে দেখে ঠোঁটের কোনে কুটিল হাসি ফুটে উঠল অর্পিতার।হ্যা সে পেরেছে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।অনেক দিয়েছে রঘুনাথ তাকে।টাকা,পয়সা,সোনার গহনা ইচ্ছে মতো বাগিয়ে নিয়েছে অর্পিতা।এখন শুধু ঐ টাকা ওয়ালা মানুষটাকেই কাগজে কলমে নিজের নামে করে নেওয়া বাকী। এখনি মোক্ষম সময় ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করার নইলে কূলে এসে তরী ডুববে।

সুইটহার্ট,,, তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?সত্যি করে বলো না?ন্যাকামির সেরা যাকে বলে।

হ্যা ভালো বাসি।সত্যিই ভালো বাসি।ঘোরলাগা কন্ঠে বলে রঘুনাথ।

আমরা বিয়ে কবে করছি বলো?আর দূরে দূরে থাকা ভালো লাগে না।নাকি সুরে বলে অর্পিতা।

করবো তো বিয়ে। নির্বাচনটা হয়ে যেতে দাও।আমরা তো কাছাকাছি ই আছি।

তাহলে তোমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দাও!শেষ অস্ত্র ত্যাগ করে অর্পিতা।

অর্পিতার শরীরে বিচরণ করা হাতটা কেঁপে উঠল রঘুনাথের।ঘোর কাটে তার। বুকের ভেতর কেউ যেনো লোহার রড ঢুকিয়ে দিলো এইমাত্র।

নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় অর্পিতাকে,,,,
জয়াকে ডিভোর্স দিলে ও কোথায় যাবে?ও থাকুক না ওর মতো। তুমি এখানেই থাকবে। নতুন যে জমিটা কিনেছি ওখানেই তোমাকে প্রাসাদ গড়ে দেবো।বিয়ের পর দুজনেই থাকবো সেখানে। অর্পিতাকে মানানোর চেষ্টা করে রঘুনাথ।
অর্পিতার মনে খুশির দামামা বেজে ওঠে। রঘুনাথ তার প্লান অনুযায়ী চলছে। মানুষ যখন অতিরিক্ত পুলকে থাকে বা অধিক আনন্দিত হয়ে পরে তখনি সে আবেগের বশে ভুল করে বসে।অর্পিতাও করলো সেই রকম একটা ভুল,,,,

বলছিলাম কি,, আমাদের পেছনে যে শত্রু লেগেছে। সেদিন আমাকে যা না হয় তাই বলে গেলো তার কি কোনো সাজা তুমি দিতে পারবে না রঘু??রঘুনাথের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতেই বললো অর্পিতা।

রঘুনাথের দৃষ্টি স্থির হয়ে ভ্রু কুঁচকে আসে,,,

কার কথা বলছো তুমি?সেই ছেলেটাকে তো হাত ভেঙে দিয়েছি।ওর সাজা দেওয়া হয়েছে।

না না,,যে আমাকে আমারই বাসায় দাঁড়িয়ে এতবড়ো অপমান টা করলো তার শাস্তি চাই কঠিন শাস্তি যাতে ভুলেও আর আমার সাথে লাগতে না আসে।

তুমি রিতির কথা বলছো?ও আর আসবে না।নিরস কন্ঠ রঘুনাথের।

কঠিন হয়ে ওঠে অর্পিতার চোখ মুখ,,

না আসলে ভালো।আর যদি কোনোদিন এসেই পরে তো ওকে ফিরে যেতে দেবো না আমি। মেরে এইখানেই গুম,,
কথাটা সম্পূর্ণ করার সুযোগ হয়ে ওঠে না অর্পিতার তার আগে ছিটকে পড়ে বারি খায় দূরে সোফার সাথে।বুঝে উঠতে পারে না কি ঘটে গেলো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে খানিকটা দূরে দাঁড়ানো রঘুনাথের দিকে।শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্পিতার দিকে। একটু আগে পরম আবেগে বা শারীরিক চাহিদার কারনে যে ফর্সা গাল আদরের ফলে লালচে হয়েছিলো সেখানে এখন শক্ত সামর্থ্য হাতের চারটি আঙুলের ছাপই ফিঙ্গার প্রিন্টের মতো জ্বলজ্বল করছে।

হেঁটে এসে টেনে তোলে অর্পিতাকে।ডান হাতে টুঁটি চেপে ধরে রঘুনাথ মিনিট খানেক আগেও যেখানে সোহাগের অত্যাচার চলছিলো।এখন সেখানে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে পিষে ফেলতে চায়। জিহ্বা টা বের করে টেনে ছিঁড়ে ভাগাড়ের কুকুর দিয়ে খাওয়াতে পারলেই শান্তি লাগতো।চোখ দুটো উল্টে দিগুন হয়ে আসে অর্পিতার।ছাড়া পেয়ে হাঁফাতে থাকে হাঁপানির রোগীর মতো। রঘুনাথ কিছুতেই শান্ত হতে পারে না, অর্পিতার মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনের মৃত্যুর কথা মুখে আনিস?তোর মতো ছেলে ভুলানো দুই টাকার মেয়ে আমার বোনকে মারবে?রিতি ঠিকই বলেছিলো কাল, টাকার জন্যে তোর মতো মেয়ে যার তার বিছানায় যেতে পারে। আমার বৌকে ডিভোর্স দিতে বলিস না তুই?শুনে রাখ,,আমি ডঃ প্রতুল নই।তোর কথা শুনে আমার স্ত্রীকে ছাড়তে পারবো না।যদি ইচ্ছা হয় থাকবি আমার সাথে না হয় এই বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে মরবি গিয়ে কর্মজীবী হোস্টেলে।এই যে মসৃন দেহের বড়াই করিস ভুলে যাসনা সেটা আমার টাকায়। অর্পিতার নগ্ন বাহুতে নখের আঁচড় কেটে বলে রঘুনাথ।
একটা কথা শুনে রাখ টাকা থাকলে তোর চেয়ে হাজার গুণ বেশি সুন্দরী রঘুনাথের শয্যা সঙ্গিনী হতে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। নেহায়েৎ মায়ায় পরে গিয়েছি তোর।

অর্পিতা কাঁশতে থাকে, চোখ দিয়ে তার জল ঝরছে আঝোরে।রঘুনাথের এমন রুদ্র মূর্তি আগে দেখেনি সে।এত কিছুর মাঝেও একটাই ভাবনা প্রতুলের কথা কি করে জানলো রঘুনাথ?আরো কিছু কি জেনে গেছে সে?না না এভাবে সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে পারে না। অর্পিতা সুর তুলে কাঁদতে থাকে,কষ্টটা তার শরীরে নয়,মনের মধ্যে।এই আরাম আয়েশ এর জীবনে ভাটা পরার সম্ভাবনার শোকে কাতর সে।

*******
রাতের খাওয়া শেষ হলো সবে।রিতি নিজের মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে এক দুপা করে উঠে যায় ছাদে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো।কয়েকটা জরুরী কল করার আছে। আজকাল ছাদের আলোটা জালায় না কেউ।

হঠাৎ চিলেকোঠার ছাদ থেকে কারো বাক্যালাপ কান খাড়া করে শোনে রিতি।চিনতে অসুবিধা হয় না।দাদাভাই আর বিরূপাক্ষ কি একটা ব্যাপারে কথা বলছে,,,

কতদিন তোর সাথে এভাবে একাকী দাঁড়ানো হয়না বলতো দাদাভাই?বললো বিরূপাক্ষ। ট্রাউজারের দুই পকেটে দুটো হাত তার ,দৃষ্টি দূরের ঐ নক্ষত্র মন্ডলীতে আবদ্ধ।

তুই নিজেই তো দূরে দূরে থাকিস রূপ!আমাদের সময় দেওয়ার সময় কোথায় তোর?

সে তো ঠিকই কিন্তু তুইও আজকাল অনেকটা বদলে গিয়েছিস।একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বিরূপাক্ষ।

হুম,,, মানুষ কি সব সময় এরকম থাকে, নাকি থাকতে পারে বলতো? ভীষণ হতাশার আভাস রঘুনাথের গলায়।তো বল কি বলতে ডেকে আনলি?বিরূপাক্ষের মুখের দিকে তাকায় রঘুনাথ।

তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে দাদা ভাই। আগে বল আমাকে তুই সাপোর্ট করবি?

আগে বলতো ?তারপর দেখি কি করবো?বিরস মুখে বলে রঘুনাথ। এমনিতেই অর্পিতার ঘটনায় মেজাজটা অত্যধিক তেতে আছে তার।

তুই একটু বাবা,মাকে বুঝিয়ে বলনা,আমি রিতিকে মানতে পারবো না কখনো। শুধু শুধু প্যারাময় করছে আমার জীবনটা।আমার কি নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকতে নেই। কতদিন বাদে দেশে আসলাম।ঘুরবো ফিরবো, কদিন বিশ্রাম নিয়ে কিছু একটা করতে চাই।সে ব্যবস্থাও করা হয়ে গেছে কিন্তু এভাবে যদি ঐ মেয়েটা সব সময় সামনে ঘোরে ফেরে তাহলে তো আমার ভালো লাগবে না দাদাভাই।
এতক্ষণ প্রতিক্রিয়া হীন থাকলেও রঘুনাথ সিরিয়াস হয় এবার,,,

কি সমস্যা তোর বলনা ভাই?রিতি কোন দিক দিয়ে অযোগ্য তোর? একটু মানিয়ে দ্যাখ,,আর কোনো দ্বিধা থাকবে না।

সম্ভব নয় দাদাভাই,,,ওকে ছাড়তেই হবে আমাকে। দৃঢ়তার সাথে বললো বিরূপাক্ষ।

তুই জানিস না ও তোকে কতটা ভালোবাসে।মুখে বলে না ঠিকই কিন্তু ওর অন্তরে তোর বসবাস তা বুঝিসনি এতদিনেও। মেয়েটা বাঁচবে না তোকে ছাড়া বিশ্বাস কর।তুই দেখসনি,,তোর এই অসুস্থতায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে কে? নিজের খাওয়া ঘুম ছেড়ে শুধু তোর কাছে পরে থেকেছে হাসপাতালে?

সরি ,,দাদা ভাই, তোরা চিনতে পারছিস না ওকে। অনেক স্নেহ করিস তো তাই!ও পরে আছে শুধু আমাদের এই অর্থ সম্পত্তির লোভে।আড়ালে আবডালে দ্যাখ কার কার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।ও মেয়ে গাছের ও খাবে আবার তলারও কুড়োবে।

রঘুনাথ থমকে যায়,,চমকে ওঠে ভীষণ ভাবে।যেনো বিশ্বাস হয়না কথাটা বিরূপাক্ষ বলেছে তাও রিতির মতো শুদ্ধ পবিত্র একটা মেয়ের সম্পর্কে।

কি বললি আরেকবার বল?বিরূপাক্ষের সামনে দাঁড়ালো রঘুনাথ।

যা বলেছি সত্যি বলেছি।রিতিকে আমি মানিনি আর মানতেও পারবোনা।মরুক বাঁচুক কিচ্ছু আসে যায় না আমার।ওর পথ ও খুঁজে নিক।

রঘুনাথের হাতটা আজ ভীষণ অবাধ্য হয়ে উঠেছে।কোনো কিছুই পরোয়া করছে না। দুপুরে অর্পিতার গালে উঠেছিলো আর এখন বিরূপাক্ষের গালে।
বিস্মিতি বিরূপাক্ষ নিজের আঘাত প্রাপ্ত গালটাতে নিজের হাত রাখে,,, দাদাভাই,,,তুই আমাকে মারতে পারলি?

রঘুনাথের ক্রোধাচ্ছন্নতা কেটে যায় মুহুর্তেই। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে সময় লাগে না। ভাইয়ের দু কাঁধে দুহাত রেখে মনস্তাপে ভেঙে পরে,,,

এই ভাই,,দ্যাখ আমি এমনটা করতে চাইনি।আসলে আমি দিন দিন ক্যমন যেনো হয়ে যাচ্ছি। ভুল হয়ে গেছে আমার। রঘুনাথের চোখের কার্নিশে জল জমেছে।

বিরূপাক্ষ আস্তে রঘুনাথের হাত দুটো নামিয়ে দেয় নিজের কাঁধ থেকে,,, স্বাভাবিকভাবেই বলে,,,একটা পরের মেয়ের জন্য তুমি নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তুললে? তুমি এতোটা বদলে গেলে দাদা ভাই?আমি ভেবেছিলাম কেউ না থাকলেও আমার দাদাভাই কখনো আমার কাঁধ ছাড়বে না।

রঘুনাথ চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নেয়,,কি করে বুঝাবে এই নির্বোধটাকে?রিতি, বিরূপাক্ষ দুজনই যে তার প্রাণাধিক প্রিয়।কারো দুঃখ নিজের চোখে দেখতে পারবে না সে,,

তুই ভূল বুঝিস না রূপ।আপন,পর এসব তো প্রচলিত কথা মাত্র, ভালোবেসে পরকে আপন করা যায় ঠিকই কিন্তু আপন কখনো পর হয় না জানিস তো?ওকে আমি ছোট থেকে নিজের হাতের তালুর মত চিনি,জানি।আমি তোদের দুজনেরই দাদাভাই।এর বেশি কিচ্ছু জানি না।হাতের পাঁচ টা আঙুল যেমন সমান নয় কর্মের গুরুত্বেও তাদের বিশাল ব্যবধান কিন্তু কেটে গেলে যন্ত্রণাটা যে একই রকম হয়।

ঠিক বলছিস তো দাদাভাই?বিরূপাক্ষের সুরটা হেয়ালীর মতো ঠেকে।

ওদিকে রিতি লোহার সিঁড়ির তিনধাপ উঠেছিল। কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বুকের ভেতর চাঁপা ব্যাথা।এখনি মন খুলে কাঁদতে না পারলে বুকটা হয়তো ফেটে ভেঙে যাবে তার।
কোনো রকমে সিঁড়ির হাতল হাতরে নেমে আসে নিচে।
কোথাকার কোন জরুরী কলে কথা আর কোথায় একাকী তাঁরা ভরা রাতের আকাশ উপভোগ করা, চুলোয় যাক সব।জীবন বাঁচানো জরুরী হয়েছে তার,সেটা করতে হলে অবশ্যই একা বসে মরা কান্না কাঁদাটা বিশেষ জরুরী হয়ে পরেছে।হ্যা মরা কান্নাই বটে, এই কয়েক দিনে বিরূপাক্ষের প্রতি যে প্রেমাবেগঘন অনুভূতিরা জটলা পাকিয়ে ছিল হৃদয়ের পাশ ঘেঁষে তাদের তো নির্মম মৃত্যু ঘটলো এখনি।স্বামী সোহাগী হয়ে যে ঘড় বাঁধার স্বপ্নটা দানা বেঁধেছিল মনের ভেতর তার মৃত্যু হলো মনের অন্ধকুঠিরেই। নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না রিতির। বিরূপাক্ষ তাকে ছেলে পটানো মেয়ে ভাবে?এত অপমান,,এযে মৃত্যুরই নামান্তর রিতির জন্য। কিন্তু রিতির ভেতরে দ্বৈত সত্তা কাজ করছে।মনটা তার দু ভাগ হয়ে দু’টো দল গড়েছে।একটা দল বিরূপাক্ষের দেওয়া অপবাদের ঘোর বিরোধী হয়ে বৃথা আস্ফালন করছে,অপর দল মুচকি হেসে বলছে, বিরূপাক্ষ সেতো সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের মত,এমন মিথ্যা বাক্য মুখেও আনতে পারে না।এমটা হলে তার আচার আচরণে বোঝা যেতো না?রিতি আর পারে না।ভাবনারা মৃত্যু শয্যায় তার।

তোর বিশ্বাস হয় না আমার কথা?বললো রঘুনাথ।

হ্যা হ্যা খুব বিশ্বাস হয়। তুই রিতিকে স্নেহ করিস, ভালো বাসিস। আমিও আমার বৌদিদিকে শ্রদ্ধা করি ভালো বাসি একদম মায়ের মতো। বাইরের কেউ আমার সেই বৌদিদির ভালোবাসার ছোট্ট পৃথিবীটা নিজের করে নিতে চাইবে আর তুই আমার বৌদিদিকে নিঃস্ব করে তার একান্ত একার পৃথিবীটা ঐ আর্থলোভী মেয়াটাকে লিখে দিতে চাইবি সেটা কি আমি মানবো বল?

রঘুনাথের কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার শক্তিই যেনো নেই।তারমানে অর্পিতার কথাটা রূপ ও জেনে গেছে?এ লজ্জা লুকাবে কোথায় রঘুনাথ।ছোট ছোট ভাই বোনের কাঠ গড়ায় আজ দাঁড়িয়েছে সে।তাও যে সে মামলা নয়, চরিত্র হীনতা ‌ছি:ছি:!নিজেকেই ধিক্কার দেয় রঘুনাথ।

তাহলে রিতির সম্পর্কে তোর ঐ কথাগুলো মিথ্যা ছিলো?অনেক কষ্টে কথাগুলো বললো রঘুনাথ।

বিরূপাক্ষের ঠোঁটের কোনে বিশ্বজয়ীর রহস্যময় হাসি।

সে সব পরে হবে।আগে তোর আর তোর অর্পিতা ম্যাডামের ব্যাপারটা শেষ করি না?
শোন তুই বড়ভাই তাই আমার গায়ে হাত তুলে শাসন করেছিস।ও কর্ম আমাকে মেরে ফেললেও আমার দ্বারা হবে না।তবে শুনে রাখ তুই যদি আর এক পা এগোস ঐ দিকে তবে আমি বিষ খেয়ে,গলায় দড়ি দিয়ে নাকি হাতের শিড়া কেটে মরবো সেটা পরে ভেবে চিন্তে ঠিক করবো।রেডি থাকিস তুই। আমার বৌদিদির কোন কষ্ট নিজের চোখে দেখবো না আমি।একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চড় খাওয়া গালে হাত ডলতে ডলতে নিচে নেমে গেল বিরূপাক্ষ। রঘুনাথ বিস্ফোরিত নেত্রে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো সেদিকে।এমন হুমকিতে তার এখন নিচের দিকে পা বাড়াতেও ক্যামন জানি গা ছমছম করছে।
রাগে গা টা জলে উঠলো রঘুনাথের, বিরূপাক্ষ শিশ বাজিয়ে হাঁটছে,,,

এই রাত তোমার আমার,,,

ঐ চাঁদ তোমার আমার,,,

চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here