হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,০৫,০৬

0
509

উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,০৫,০৬
কলমে:চন্দ্রা।
পর্ব:০৫

মেঘমেদুর শারদ প্রভাত। নিহারিকা আচ্ছাদিত সবুজ ঘাস মাড়িয়ে নগ্ন পায়ে হেঁটে চলেছে রিতি। বাড়ির সামনে বেশ খানিকটা ফাকা জায়গা।তার এক পাশে ফুলের বাগান।চোখ বুজে কোনরকমে রাতটুকু পার করে উঠে এসেছে সে। নতুন কোন জায়গায় গেলে ওর ঘুম দেবী ছুটি কাটাতে চলে যায় কোথাও। সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে। বাড়ির কেউ তখনো জাগেনি।আস্তে দরজা খুলে বেড়িয়ে পরে ঘড় থেকে।সূর্য দেবও আজ ভীষণ আলসেমি করছে আঁখি মেলতে। তিনিও কি রাত জেগে ছিলেন রিতির সাথে? ফাঁকা জায়গা টুকুতে শীতকালে টেনিসের কোট আঁকা হয়। অন্নপূর্ণা দেবীর ছোট ভাইয়ের ছেলে অভিরাজ এখানে থেকে পড়াশুনা করে।সে বন্ধুদের নিয়ে আর কদিন পরে টেনিস খেলবে এখানে। ছোট নরম দূর্বাঘাস তাতে শীতল শিশিরের আলিঙ্গন। অভূতপূর্ব এক ভালো লাগার সৃষ্টি করছে রিতির মধ্যে।রাত্রি জাগরণের অস্বস্তি প্রায় মিলিয়ে এসেছে।একটা অন্যরকম সুবাসে রিতির ঘ্রানেন্দ্রীয় সজাগ হয়ে ওঠে।এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে ঘ্রাণের উৎসটা।
অবশেষে পেয়েও যায় সেটা।মন পুলকিত হয় ভীষণ ভাবে। একছুটে দৌড়ে যায় ফুল বাগিচার দক্ষিণ কোনে।হাঁটু মুড়ে বসে পরে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে। দুহাতের আজঁলাতে ভরে নেয় শিউলি ফুল গুলো। নাকের কাছে নিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ফুল গুলোর সুবাস নিজের ভেতরে প্রবেশ করায়।অনেক দিন কাছ থেকে ছোঁয়া হয়না তার অতি পছন্দের শিউলি ফুল।মনে মনে আফসোস করে রিতি, আহারে,এমন শুভ্র তরতাজা শিউলির একটা মাল্য যদি গোবিন্দকে পরাতে পারতাম?পেছন থেকে নারী স্বর ভেসে আসে,
এই যে গোপালের পাগল ফুল গুলো নিয়ে আয়।মালা গেঁথে পরাস তোর গোবিন্দকে।

রিতির যেনো বিশ্বাস হয়নি কথাটা এমন ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, কিন্তু বৌদিদি, তোমাদের মন্দিরে তো মা সিংহ বাহিনীর পূজা হয়।

তাতে কি হলো?এবাড়ির একমাত্র ছেলের বৌ গোবিন্দের আরাধনায় সদা মগ্ন আর প্রভাকর রায় চৌধুরীর এতবড়ো মন্দিরে সেই গোবিন্দের পূজা হবে না? তুই তাই ভাবিস?এখন যা তো তোর গোপালের আহারের ব্যবস্তা কর।আমি জল খাবার করে আসছি।
রিতি হতবাক এমন অনাকাঙ্খিত প্রাপ্তিতে।সে ভেবেছিলো কৃষ্ণ ঠাকুরকে বুঝি নিজের ঘড়েই বন্দী রাখতে হবে। কিন্তু না সকালটা পার করার জন্য তবে মুখ্য উপায়টাই পেলো।

পাড়ার মধ্যে বহুল আলোচিত সমালোচিত মহালদার বাড়িটি।অন্যান্য গ্রামে যেমন পাখির কলকাকলি আর মোরগের বাগ দেওয়ার স্বরে মনু্ষ্যজাতির ঘুম ভাঙ্গে তেমনি চন্ডীনগর বাসীর ঘুম ভাঙ্গে মহালদার বাড়ির রোজকার চেঁচামেচি ঝগড়া ঝাটি শুনে।আগে বিরক্ত হলেও এখন কান সওয়া হয়ে গিয়েছে সবার।কেউ ওদের হাউ কাউ এখন আর বিশেষ পাত্তা দেয়না।ও বাড়ির হরিশ মহালদারের বৌটা হয়েছে দুনিয়ার হতচ্ছাড়া।গুরুজনে ভক্তি নাই, মুখের কোন লাগাম নেই।যা খুশি বলবে,যা ইচ্ছা তাই করবে।
কলপাড়ে হাতমুখ ধুচ্ছিলো সুমি।মহালদার বাড়িতে ভীষণ ভাবে চেঁচামেচি শুনে দ্রুত এগিয়ে যায়, সেখানে যা পরিস্থিতি, দেখে চোখ উল্টে যাবার জোগাড় হয় তার।হরিশ কাকার মা রাঙা ঠাম্মা উঠোনে পরে কাতরাচ্ছে আর যে শলার ঝাড়ুটা দিয়ে এতক্ষণ উঠোনে ঝাঁট চলছিলো সেটা দিয়ে এখন হরিশের বৌ অনিতার দেহ ঝাড়ু চলছে। সেদিকে একবার তাকিয়ে রাঙা ঠাম্মাকে টেনে উঠায় সুমি। বৃদ্ধা মহিলা কাঁপছে থরথর করে।খোলা বারান্দায় একটা পাটি বিছিয়ে বসিয়ে দেয় ঠাম্মাকে। ততক্ষনে বেশ কয়েকজন জমে গিয়েছে উঠোনে।হরিশ থেমে গিয়েছে কিন্তু অনিতার মুখ ঠিক কখন বা কদিনে থামবে সঠিক খবরটা কেউ বলতে পারবেনা।
সুমি ঘড়ে ঢুকে সময় দেখার জন্য ফোনে চাপ দিতেও দেখলো চারটা কল মিস হয়েছে।তিনটা রিতির একটা প্রদীপের।রিতিকে কল ব্যাক করে সুমি। এমনিতেই করতো রাঙা ঠাম্মাকে ডাক্তার দেখানো দরকার সেটা রিতিকে বললে ওই ব্যবস্থা করে দেবে।বুড়ির বোধহয় ডানহাতটা চটে গিয়েছে।

হ্যালো,,,

হ্যা ।বল?

শোন সুমি ,,,কাজে আসার সময় আমার ঘড় থেকে বুটিক হাউস এর ফাইলদুটো নিয়ে আসিস তো,,আনতে ভুলে গিয়েছি,,,,,

আরো কিছু দরকারি কথা শেষে সকালের ঘটনাটার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলো সুমি।রিতি ডাক্তার কাকাকে পাঠিয়ে দেবে বলে আস্বস্ত করলো সুমিকে।

মান্নান মিয়ার সকালটা আজ ভারী প্রসন্ন। দিনের আলোয় সবার সম্মুখে স্ত্রীর সাথে করা দুর্ব্যবহারের সমস্ত মনমালিন্য মিটেছে কাল রাতের অন্ধকারে।রিতির শাসানিতে স্ত্রী কে আনতে শশুর বাড়িতে গিয়ে যখন শুনলো রাবেয়ার খেলার সাথী আসছে।দাদী শাশুড়ি বললেন, এই অবস্থায় পোয়াতি মাইয়াডার গতরে ক্যানো হাত দিলো। তখন মান্নানের যেনো খুশিতে পাগল পাগল অবস্থা। দ্বিতীয় সন্তানের আগমনের খবরটা যেনো কর্ণকুহরে এক বালতি মধু ঢাললো। বাবা হওয়ার অনুভূতি গুলো অন্যরকম তা সেটা প্রথমবার হোক বা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বার হোক।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো।দুই দিন কাজ কামাই করেছে আজ যেতেই হবে তার।না হলে থাকবেনা কাজটা। বিছানায় বসে বড়ো একটা হাই তুললো।বাইরে থেকে হাঁস মুরগির কান ঝালাপালা করা ডাক শুনা যাচ্ছে।রাবেয়ার মা সেগুলোকে খাবার দিয়ে খোয়ার মুক্ত করছিলেন। মান্নান বাইরে বেরোতেই লুঙ্গি, গামছা টা এগিয়ে দিয়ে বললো, গোসল কইরে আইসেন, খাওন দিতেছি। রাবেয়া তখনো গণিত বইয়ের সরল অংক সমাধানে ব্যস্ত,,
অনেক হইছে রাবু,,অহন গোসল দিয়া খাইয়া তোর বাপের লগে স্কুলে যা।বেলা অনেক হইছে।মেয়েকে তাগাদা দিয়ে রান্না ঘড়ে ঢোকে সালমা বানু।
এইতো আম্মা,ভাত দেও আমি আসছি।
সালমা বানু নিজে পড়ালেখার সুযোগ পায়নি । অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিলো।তবে পড়ালেখার প্রতি তার ভীষণ শ্রদ্ধা।তাই শত অভাবের মাঝেও মেয়ের পড়ার জন্য কিছু দিতে কমতি রাখে না। নিজের গর্ভের সন্তান যখন অনর্গল শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে তখন সালমা বানুর বুকটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে।এইতো চায় লেখা পড়া শিখে সন্তান তার সভ্যতা ভদ্রতা শিখুক।রিতি দিদিমনির কারনে কামলা মান্নানের স্থায়ী একটা কাজ জুটেছে চৌধুরীদের খামার বাড়িতে।বেতন কড়ি ভালো দেয়।এখন হাতে দুটো পয়সা জমে সালমা বানুর আর মনের কোণে জমে মেয়েকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন। কিন্তু মান্নান মাঝে মাঝে জানোয়ারের চাইতে খারাপ ব্যবহার করে।লোকের কানভাঙানি শুনে ঘড়ের বৌ পেটায় বেধরক ভাবে। তখন আর কোনো স্বপ্নের কথা মনে থাকে না।মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।

সকালের পূজা শেষে তরিঘরি করে ব্যাগ গোছাতে ব্যাস্ত রিতি। গতকাল তার ব্যাগ দুটো বিরূপাক্ষ এর ঘড়েই রেখেছিলো রঘুনাথ। অন্নপূর্ণা দেবী অনেক অনুরোধ করলেন ঐ ঘড়ে থাকার জন্য। কিন্তু রাজি হয়নি রিতি।রিতির একগুঁয়েমি যে অন্যসবাইকে হার মানাতে ওস্তাদ সে সম্পর্কে অবগত এবাড়ি চাকর বাকর সহ মনিব পর্যন্ত। একবার না করলে আর হ্যা হয়না তার দ্বারা। অবশেষে হার মেনে রূপের ঘড়ের পাশের ঘড়েই ব্যবস্থা হয়েছিলো তার থাকার জন্য।একদম পাশের ঘড়ে থাকাতে আপত্তি থাকলেও সেটা নিয়ে গাঁইগুঁই করে কাউকে আর অপ্রস্তুত করতে মন চাইলো না রিতির বৌদিদি নিজে আলমারি ক্যাবিনেট গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে।সকাল বেলা সারদা পিসি এসে একটা তাজা ফুল সহ ফুলের টব রেখে গিয়েছে টেবিলের উপর। সেগুলোর মৃদু সৌরভ আর মন্দিরে জালিয়ে রাখা ধুপকাঠির অপূর্ব সুগন্ধে মনটা চনমনে হয়ে উঠেছে রিতির।
হাতে কয়েকটি নতুন শাড়ি নিয়ে ঘড়ে প্রবেশ করলেন অন্নপূর্ণা দেবী।
একি সকাল সকাল ব্যাগ গোছাতে লেগেছিস ক্যানো?কোথাও যাবি?রিতি ফিরে তাকায় ঠোঁটের কোনে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি টেনে বলে,বা রে,,, স্কুলে যেতে হবেনা?ছুটি নেওয়া হয়নি তো।
ক্যানোরে তুই না গেলে স্কুল চলবেনা?রঘুকে বলছি ছুটির ব্যবস্থা করতে।হাতের শাড়িগুলো বিছানায় রেখে বললেন অন্নপূর্ণা দেবী।

না বড়মা, পূজো এখনো কয়েকদিন বাকী ।এত আগে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে পরে হাতপায়ে বাত ধরে যাবে। শাড়ির কুঁচি নেড়ে বললো রিতি।

শুধু এড়িয়ে যাওয়ার ফন্দি ফিকির তোর।এই বয়সে এত খাটুনির কি দরকার বলতো?মন দিয়ে ডাক্তারীটা পড়।কটা দিন বিশ্রাম নে না?একটু কাছে কাছে থাক।তোর জন্য আমার বুকের জলুনীটা যে কি,সেটা বুঝলে এই মিছে অভিমান করে দূরে দূরে থাকতি না।আমারই বা কি অধিকার আছে তোকে আটকানোর‌‌। নিজের সন্তানকে মানুষ করতে পারিনি তো,সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। কান্নায় কন্ঠ রোধ হয়ে আসে অন্নপূর্ণা দেবীর।
রিতির ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে।সবাই শুধু ভুলই বুঝলো তাকে।
পেছন থেকে জাপটে ধরে বড়মাকে।তারপর আহ্লাদী সুরে বলে,বড়োমা তুমি কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো।দিনে দিনে কচি খুকিটি হয়ে নাকের, চোখের জলে এক করছো।আমি কি তোমাকে ভালো বাসি না। তোমার বুকে মুখ গুঁজে যে শান্তি পাই তা পৃথিবীর আর কোথাও পাইনা বুঝলে? এখন শান্ত হয়ে কিছু খেতে দিলে দাও না হলে পরে আবার বলতে পারবে না ,এত ব্যস্ত মেয়েটা , দুটো খাওয়াতে ও পারলাম না।

আমার কান্না দেখে তুই রসিকতা করছিস?বেয়াদব হয়েছিস দিন দিন।এত কিছু বলছি তাও তোকে যেতে হবে? অভিমান ঝরে অন্নপূর্ণা দেবীর কন্ঠে।
তো কি করবো? তোমার সাথে দল বেঁধে কেঁদে কেঁদে জল বৃদ্ধি করলে সারা বাড়িতে কাঁদা হবে ‌আমি বাবা পূজার দিনে এমন অঘটন ঘটাতে পারবোনা।
রিতির কথার ধরনে হাসি ফুটে ওঠে অন্নপূর্ণা দেবীর মুখে।

এইতো এবার ঠিক আছে।সূর্যটা তবে উঠলো।
অন্নপূর্ণা দেবী আদর করে রিতির গালটা টিপে দিয়ে বলেন, কিছু বলার কায়দা নেই উত্তর সব সময় সাজানো থাকে তাইনা?

রিতি তাড়া লাগায়,বড়োমা ঢাকা থেকে লোক আসবে। সকাল সকাল বুটিক হাউসে যেতে হবে।এখন তবে আসি।

এই আগে খেয়ে নে।আর এই শাড়ি গুলো পরবি কিন্তু।না করা চলবে না।দাদাভাই নিজে এনেছে পরতে না দেখলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে।
রিতি তাঁর দিকে একবার অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে পেছনে অন্নপূর্ণা দেবী।

চৌধুরী বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশী নয়। হেঁটে যেতে মিনিট পাঁচেক ব্যয় হয়। মূল গেটের কাছে যেতেই একটা পুরনো বাইসাইকেল এসে থামে রিতির সামনে মান্নান নেমে সালাম দিলো, আসসালামুয়ালাইকুম আপা,,,
রিতি মান্নানের দিকে লক্ষ্য করে দেখে তার চোখে মুখে চাপা অনুশোচনা খেলা করছে। সালামের উত্তর দিয়ে বলে সে,কি ব্যাপার মান্নান ভাই। ভালো আছেন?

জি আপা।

কাজে যাচ্ছেন?কি রাবেয়া বেড়ানো ক্যামন হলো?
আমতা করে বলল মান্নান,আপা আসলে হেই দিনের কামের জন্য বহুত শরমিন্দা হইছি ।মাফ দিয়েন আপা।
ছি ছি মান্নান ভাই এমন করে বলবেন না।এইযে রাবেয়া স্কুলে আসছে,আপনাদের মিট মাট হয়ে গেছে শুনেই অনেক শান্তি পেলাম।আর এমন করবেন না।
আল্লাহর কিরা আপা এমন আর করবো না।অহন আসি।
একটু সরে গিয়ে মান্নান সাইকেলে চড়ে বসে।রিতি তাকিয়ে থাকে সেদিকে।সে জানে যত যাই আল্লাহর কিরা দিক আর অনুতপ্ত হোক এমন ঘটনা আবারো ঘটবে। আগেও ঘটেছে। গ্রামের মানুষ গুলোই তো এমন কথায় কথায় বৌকে মারে বকে, আবার গর্ব করে বলবে, আমার দাদায় বৌ পিডাইছে,পরদাদায় পিডাইছে,বাবায় পিডাইছে, আমিও পিডামু হেতে কার বাপের কি?

বিকেলে বুটিক হাউস এর অফিস সেরে বাড়ির পথ ধরেছে রিতি।মনটা তার খুবই ফুরফুরে। নিজেকে হাওয়ায় ভাসাতে ইচ্ছা করছে তার।আজ ঢাকার ক্লায়েন্ট পার্টির সাথে ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেলো।এসব ক্লাইন্টরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাতের কাজ করা শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবী, তাঁতে বোনা যাবতীয় সব কিছু ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করে।মালগুলো ভালোয় ভালোয় ডেলিভারি দিতে পারলে অন্তত পঁচাত্তর লক্ষ টাকা লাভ হবে রিতির।সেখান থেকে আড়াইশ তিনশো শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার পরেও বেশ টাকা থাকবে।এমন বড়ো ডিল তার এই প্রথম। শহরের দেশীয় পন্যের বাজারে “অন্নপূর্ণা তাঁত এন্ড বুটিক”এর তৈরী সবকিছুর সুনাম আকাশ ছোঁয়া। এলাকায় তাঁতি না থাকলেও প্রায় শ খানেক নারী পুরুষ কাজ করে তাঁত কলে।গামছা থেকে শুরু করে শাড়ি বুননের কাজ ও দক্ষ হাতে করে শ্রমিকেরা। অফিস রেজিস্ট্রেশনের খাতায় তিনশো শ্রমিকের নাম থাকলেও কাজের চাপ বেশী হলে পার্ট টাইম লোকের অভাব হয়না।
হাঁটতে হাঁটতে যখন বড় রাস্তা থেকে মোড় ঘুরবে তখন বাঁধলো বিপত্তি।বড় একটা নতুন গাড়ি মোড় ঘুরছে আগে কখনো এই গাড়িটা দেখেনি রিতি। এদিকে ঢুকছে মানে চৌধুরী বাড়িতেই যাবে।আগে থেকে লক্ষ্য করেনি গাড়িটা দেখলো সামনে একটা ছাগলছানা এসে পরেছে‌। আর একটু হলেই এতোক্ষণে থেঁতলে যেতো সাদা কালো মিশেলের সুন্দর বাচ্চাটি। বাচ্চাটাকে জোড়ে ধরায় ম্যা ম্যা করে চেঁচাচ্ছে।রিতি শাড়িতে জড়িয়ে হাঁটু মুড়ে পরে গিয়েছে পিচের উপর ।ব্যাথাও পেয়েছে বেশ। কাঁধের ব্যাগটা সরে পরে গিয়েছে। ততক্ষনে গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত গতিতে নেমে এসেছে চালক।

দেখি আপনার কোথাও লাগেনি তো?উৎকন্ঠিত হয়ে প্রশ্ন করল আগন্তুক।
রিতি উঠে হাত ঝেড়ে আগন্তুকের দিকে তাকায়।এই রোদহীন বিকেলে কালো সানগ্লাস দিয়ে চোখ দুটো ঢাকা,তথাপি জোড়ভ্রূ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।স্কাই ব্লু ডেনিম জিন্স প্যান্টের উপরিভাগে রয়েল ব্লু টিশার্ট। উজ্জ্বল শ্যমলা।একদম ফর্সাও না আবার কালোও না।একপলক দেখতেই চিনতে ভুল হয়না রিতির । কিন্তু তার তো আরো একদিন পরে আসার কথা ছিলো । আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে মানুষটা ।কে বলবে এই ছেলে আরো তিন বছর আগে ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে?মনে মনে ভাবছিল রিতি ।বুকে মধ্যে হার্টবিট দ্রুত বাড়ছে।

কি হলো মিস,,

সম্বিত ফিরে পেয়ে নিচ থেকে ব্যাগটা নিতে ঝুঁকতেই পুনরায় বিপত্তি ঘটলো। দুজনের মাথা আচ্ছা মতো গুতো লাগলো। আগের বার শান্ত থাকলেও এবার চরম মেজাজ খারাপ হলো রিতি কিন্তু অভদ্র ব্যবহার সে কারো সাথেই করে না আর এ ব্যাক্তির সাথে তো মরে গেলেও করবে না।
খুব বেশি ব্যাথা পেলেন?

আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে।একটা কথা বলি,এই অজো পাড়াগাঁয়ের মানুষ গুলোই ট্রাফিক রুলসে অভ্যস্ত নয় সেখানে ছাগল,গরু তো বাদ দিলাম ।বেশি ভালো হয় যদি আপনারা একটু দেখে শুনে চলেন।
কথাটা রূঢ় না হলেও তেমন ভালো লাগলো না রূপের‌।তবে সামনের দিদিমনি টাইপের নারীটির দিকে বার বার দেখতে ইচ্ছে হলো। নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে বললো ,আপনি কি এদিকেই যাবেন? চলুন পৌঁছে দেবো।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যা আমি ঐদিকেই থাকি তবে একা যেতে পারবো আপনি আসুন এবার।
অগত্যা রূপ নিজের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।রিতি এতক্ষণ স্থির থাকলেও আর পারলো না। লজ্জা,ভয়, সংকোচ তাকে ঘিরে ধরলো অক্টোপাসের মতো।কি ভাবে পারবে এই মানুষটার সামানে ঘুরতে।

মেয়েটা কিন্তু দারুণ কথা বলে রূপ।ড্রাইভিং রত অবস্থায় পাশের সিটের সল্প বসন পরিহিতা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে রূপ,ওটাকে তুই দারুন বলছিস? সুযোগ পেয়ে দিদিমনি ভাব ধরে একটু জ্ঞান দিয়ে দিলো আর কিছু না।
তবে হ্যা দেখতে বেশ রুপবতী।ঐ মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছিলো আমার,,, এটুকু বললো অস্ফুটে।

চলবে,,,

উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে: চন্দ্রা।

পর্ব:০৬

তুমি যামিনী আমি শশী হে,

ভাতিছো গগনো মাঝে

মম সরসীতে তব উজ্বলো প্রভাত

বিম্বিত যেন লাজে,,,

গভীর নিশি। বাড়িতে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে কাঁদা।বিরূপাক্ষের ঘড় থেকে মৃদু ভলিউমে শ্রীকান্ত আচার্যের গাওয়া এই গানটি ভেসে আসছে। কিচেনে গ্যাসের চুলোয় কফির জন্য জল ফুটতে দিয়ে আনমনে গানটা শুনছিলো রিতি,,গানটা তার অত্যধিক পছন্দের। আর যদি রাতের এই নিঃশব্দ নির্জন পরিবেশে হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিচেনের দরজায় মৃদু শব্দ শুনে ঘুরে তাকায় রিতি।কালো শর্টস আর অফহোয়াইট ঢোলা টিশার্ট পরে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপ।চোখে তাহার রাজ্যের কৌতুহল। বিকালে রাস্তায় দেখা ভদ্র মহিলা এই রাতদুপুরে তাদের বাড়ির কিচেনে কি করছে?
রিতির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। গায়ের রং টা একটু চাপা হলেও নিঃসন্দেহে সুদর্শন সুপুরুষ সে। দেহের মধ্যে শীতল শিহরণ বইছে রিতির। ফুটন্ত গরম জলে চামচ মেপে কফির গুঁড়ো দিতেই প্রশ্ন ভেসে আসে,আপনি এতরাতে এখানে ক্যানো?
ক্যানো কেউ কারো বাড়িতে আসতে পারে না?কফি নাড়তে নাড়তে উত্তর দেয় রিতি
পারবে না ক্যানো?তবে অনাত্মীয় কেউ তো আর কারো বাড়িতে রাত দুপুরে কফি করবে না তাইনা?আমি চিনি না তাই বললাম।

আত্মীয়তা থাকলেই কি সবাই সবখানে স্থান পায় ?নাকি সম্পর্ক থাকলেই সবজায়গায় অধিকার খাটানো যায়?এই পাশের স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা আমি।বড়মা অনেক স্নেহ করেন তাই পূজার কদিন এখানে থাকবো।আশা করি বুঝতে পেরেছেন?মগে কফি ঢালতে ঢালতে বললো রিতি।
রূপ মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো সামনের রূপবতী নারীর হাত পা নেড়ে কাজ করা। চুলগুলো হাত পেঁচিয়ে খোপা করে রাখা।সাধারন একটা সুতির শাড়ি পড়নে , গলার ফাঁকা জায়গাটুকুতে চিকন স্বর্ণের চেইনটা জলজল করছে উজ্জ্বল আলোতে।একজন স্বয়ংসম্পূর্ন সুন্দরীর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যা কিছু আছে তার কোনোটাই কমতি নেই মেয়েটার মধ্যে ,তবে একটু বেশীই আছে সেটা হলো ঐ মধুর কন্ঠ ঝংকার।নিচু স্বরে আস্তে আস্তে কথা বলে মেয়েটা,এসব যখন ভাবছিলো তখনই অতি নিকটে শোনা যায়,এই যে আপনার কফি উইদাউট মিল্ক এন্ড সুগার।
রূপ একটু অবাক হয়ে কফির মগটা হাতে তুলে নিয়ে বলে, আপনার টা কোথায়?

আমি চা,কফি তেমন পছন্দ করিনা।

বিরূপাক্ষ একটু বেশিই অবাক হলো,
আপনি এই রাতে আমার জন্য কফি করছিলেন? বুঝলেন কিভাবে আমার এখন এক মগ কফির ভীষণ প্রয়োজন ছিলো?

আমি কিভাবে বুঝলাম সেটা মুখ্য নাকি আপনার কফি পানে মন দেওয়াটা এখন মুখ্য বিষয়?

রূপ মনে মনে বিরক্ত হয়ে বিরবির করে,কথা সাতটা বলবে কিন্তু সোজা ভাবে একটা উত্তর দেবেনা। এখন তার কফি পান করাটাই জরুরী তাই বিরক্তিকে ঝেড়ে গরম কফিতে ছোট্ট চুমুক দিয়ে বললো,আমি যে দুধ চিনি ছাড়া কফি খাই এটা কিভাবে জানলেন সেটুকু তো বলুন।তবে হ্যা দারুন হয়েছে কিন্তু।
হ্যা নেকামি যতসব,,দুধ চিনি ছাড়া কফি গেলা যায়? আবার বলে দারুন হয়েছে।
মুখ ফুটে আর বলা হয়ে উঠলো না কথাগুলো।

বড়োমা বলেছেন।আর বৌদিদির শরীরটা একটু খারাপ তাই দায়িত্বটা আমাকে দেওয়া হয়েছে।আসছি আমি।
ড্রইং রুম পেরিয়ে সবে সিঁড়িতে উঠবে পেছন থেকে ডেকে ওঠে রূপ,এই যে শুনছেন,,
রিতির পা থেমে যায়,এমন ভাবে ডাকে ক্যানো মানুষটা।ওকি বোঝে এইটুকু স্বরে আমার সমস্ত শরীরের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য?
আপনার হাঁটুর চোটটা কি বেশী ছিলো?না মানে খুড়িয়ে হাঁটছেন তাই বলছি, আমার কাছে ঔষধ আছে।একটু লাগিয়ে নিন ঠিক হয়ে যাবে চলুন আমি দিচ্ছি।

তেমন কিছু না।ঠিক হয়ে যাবে।ঔষধ লাগবেনা আমার। আচ্ছা শুভ রাত্রি।

এত একরোখা ক্যানো আপনি।ব্যাথায় হাঁটতে পারছেন না আবার বলছেন ঠিক হয়ে যাবে? একটু জোড়ে বললো রূপ।

রিতির মনটা অশান্ত হয়ে ওঠে, শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে বলে,একজন অজানা অচেনা মেয়ের জন্য এত উতলা হচ্ছেন ক্যানো আপনি? বাইরের এইটুকু চোট দেখলেন আর ভেতরে ভেতরে যে প্রতিনিয়ত ভাঙচুরের খেলা চলে তার বেলায়?

খুড়িয়ে খুড়িয়ে দ্রুতবেগে উপরে উঠে যায় রিতি। বিরূপাক্ষ আহম্মক বনে সেদিক পানে চেয়ে থাকে।
আজব তো,,কি ভাঙচুরের খেলা ?কি বলে গেলো মেয়েটা? শুনেছি রিটায়ার্ডকৃত
টিচার্সদের মানসিক সমস্যা দেখা দেয় ,এর তো অবসর নিতে এখনো অনেক বাকী তার আগেই কি গেলো মাথাটা?
নিজের মনে কথা গুলো আওড়ে কফি সমেত মগটা অত্যন্ত বিরক্তির সাথে পাশের সেন্টার টেবিলে রাখে।ওটা আর খাওয়ার উপযুক্ত নেই।

বালিশে মুখ গুঁজে পরে আছে রিতি।ও ঘড়ের গানটা বন্ধ হলো। তারমানে সে এসেছে ঘড়ে। কতটুকুই বা দূরত্ব দুজনের মাঝে?ইট পাথরের তৈরি ইঞ্চি কয়েক পুরু দেওয়ালইতো। কিন্তু মনের দূরত্ব যে যোজন যোজন ক্রোশ।রিতি শঙ্কিত , এতদিন ধরে মনে মনে যে কঠিন বলয় গড়ে তুলেছিল সেটা বুঝি ভেঙে যাবে,ঐ তো ওঘড়ে মানুষ টা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ এভাবে কেঁদে নয় ,ঐ প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে একটা মধুময় রাত সে পার করতে পারতো। চোখের একফোঁটা জলও হয়তো নিচে পতিত হতে দিতো না সে।আর এই যে এখন বালিশ ভিজছে তাকে ভেবে সে কথাটা কি কোনদিন ঐ পাষান হৃদয় মানুষটা জানতে পারবে?

গত দিনের মতো আজো কুয়াশা ভেজা ঘাস মাড়িয়ে শিউলি তলায় এসেছে রিতি।আজ মন্দির থেকে ফুলের সাজিটা আনতে ভোলেনি।রাতটা নির্ঘুম থেকে কান্নাকাটির ফলে মাথাটা ভার হয়েছিলো তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই স্নান সেরে নিয়ে তবে বেরিয়েছে ঘড় থেকে।ভেজা চুলগুলো পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চুলের মাঝখানে সিঁথিতে এক চিলতে সিঁদুর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আর যাই করুক না কেন সিঁথিতে সিঁদুর দিতে কখনোই ভোলে না রিতি।একপাশে সিঁথি করলে সেটা ঢাকা ই থাকে বেশ লক্ষ্য না করলে হয়তো বুঝা যায় না।
বিরূপাক্ষের সকালে জিম করার অভ্যাস কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। যতদিন সেগুলোর ব্যাবস্থা না হচ্ছে গ্রামের ফ্রেশ খোলা হাওয়ায় দৌড়ে সন্তুষ্ট রাখতে হবে দেহকে।সাদা পাতলা টিশার্ট,সাদা ট্রাউজার এবং পায়ে কেডস্ গলিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ আটকে যায় শিউলি তলায়।সাদা লাল পেড়ে তাঁতের শাড়ি পরিহিতা রমনীর পিঠময় ছড়িয়ে আছে একঢাল দীঘল কালো কেশ রাশি। সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশে কোন স্বর্গের দেবী ভাবতে ভুল হবে কারো। বিরূপাক্ষ চোখ দুটো কচলে নেয় ।তার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো। ভুল দেখছে নাকি এই সাত সকালে কোন ভূতনী নেমে দুহাতের আজঁলাতে ফুল নিয়ে সাজি ভরছে?তখনো পর্যন্ত ভূতনীর পৃষ্টদেশ ছাড়া সম্মুখভাগ দৃষ্টিগোচর হয় নি বিরূপাক্ষের।
রিতি যখন ফুল কুড়ানো শেষে সাজি তুলে হাটা ধরলো মন্দিরাভিমুখে তখন বিরূপাক্ষের মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে গেল,এ মেয়ে কি ঘুমায় না নাকি?একই অঙ্গে কতরুপ?

সকালের জল খাবার টা নিজের ঘড়ে বসেই করছিলো রিতি।বৌদিদিকে বলেছে সবার সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবেনা ও। বড়মার কানেও কথাটা গিয়েছে তিনি কোন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেননি। রূপের সাথে তিতলি নামক ওর যে বান্ধবীটা এসেছে তাকে মন থেকে কেউই মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু সেটা তিতলিকে বুঝতে দেবে এমন মানবিকতা হীন নয় এবাড়ির কেউ। রূপের সাথে মেয়েটির গলায় গলায় ভাব বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের চোখে কাঁটার মতো বিঁধছে।
রিতি খাচ্ছে আর জয়া বসে আছে।দোনা মোনা করে বললো সে,একটা কথা বলবো রিতি?রাগ করবি না বল?

আগে সব নিয়ম মেনে একটা দরখাস্ত জমা দাও আমি ভেবে দেখবো তোমার সাথে কথা বলা যায় কিনা?

ফাজলামি করবি না মোটেও।এমন গোমড়া মুখে থাকিস কথা বলতে ই ভয় করে।

খিলখিল করে হেসে উঠলো রিতি, এবার হলোতো ?আর গোমড়া মুখে নেই আমি এবার বলো কি বলবে?আর একটা কথা, আমার সাথে কথা বলতে যদি ফের কখনো এইসব ফর্মালিটিজ দেখাও তাহলে সত্যিই তোমাকে দিয়ে দরখাস্ত লেখিয়ে ছাড়বো বলে দিলাম।

কথা তেমন কিছুই না শুধু একটা অনুরোধ করি তোকে,তিতলি মেয়েটা ভাইয়ের সাথে ক্যামন আঠার মতো সেঁটে থাকে দেখেছিস? আমার কিন্তু মোটেও ভালো ঠেকছে না ব্যাপার টা। অভিমান পুষে রেখে এভাবে ছেড়ে দিসনে দিদি,ওকে একটু সময় দে। তাহলে মনটা আর এদিক ওদিক ঘুরবে না।ঠিক সাত পাকের মধ্যেই ফিরবে দেখিস ‌।
রিতি এ কথার কি উত্তর দেবে বুঝতে পারে না। নিজেকে অতটাও সস্তা মেয়েদের কাতারে দাঁড় করানো সম্ভব নয় তার পক্ষে।সে স্বামী হোক বা অন্য কেউ তার মনকে বশে আনতে নিজেকে, নিজের আত্ম সন্মান বোধকে বিকিয়ে দিতে পারবে না ,কোনো দিনও না।

বৌদিদি তোমার ভাইয়ের মন যদি অন্য কোথাও বাঁধা পরে থাকে তো এতদিনে পরে গেছে।সে তিতলি হতে পারে বা অন্য কেউ।আর যদি এখনো মনে কাউকে না ধরে তাহলে চিন্তা করোনা।যে যতই লেপ্টে থাকুক বা চিপকে থাকুক তাঁর মনে দাগ কাটা তো দূরে থাক ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবেনা।ধীরে সুস্থে কথাগুলো বললো রিতি।
ত্রাসিত নয়নে তাকিয়ে থাকে জয়া রিতির সহজ স্বাভাবিক মুখপানে।
******
সুমিতা দেবী ঝকঝকে কাঁসার থালায় অন্ন ব্যঞ্জন সাজিয়ে আসন পেতে খেতে ডাকলেন শশীশেখর বাবুকে। তিনি সামনের বারান্দায় পেতে রাখা চৌকিতে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলেন।আজ দুদিন হলো রিতি বাড়িতে নেই।বাড়ি ঘড় ক্যামন খাঁ খাঁ করছে। কোনো দিকে তাকাতে পারছেন না তিনি।একটা মানুষের অভাব সবখানে।এমনতো কখনো হয়না তাঁর।রিতি এর আগেও বহুবার পরীক্ষা বা কাজের জন্য পনেরো বিশ দিন বাইরে থেকেছে কিন্তু তখন মনটা এত বিক্ষিপ্ত হয়নি শশিশেখর বাবুর।সুমিতা দেবীর আহ্বান শুনেই উঠে বসেন তিনি।সকালে খাওয়ার সময় হলো।

খাওয়া প্রায় শেষের দিকে তখনি উঠোনে কারো কথা শুনে রান্না ঘরের বাইরে উঁকি দেন শশীশেখর বাবু।

দাদু,,,ওদাদু,,,আরে পিসি কোথায় গেলে সব?দ্যাখো কে এসেছে?
প্রদীপের স্বর শুনে বাইরে বেরোতেই ভূত দেখার মতো চমকে ওঠেন সুমিতা দেবী।দ্রুত মাথায় কাপড় টেনে দেন। ততক্ষনে পায়ে কারো হাতের স্পর্শে থতমত খেয়ে বলেন ,ভালো থাকো বাবা,বাইচ্চা থাকো। এমনিতেই ছেলেটা দেখতে সোন্দর আছিলো । গায়ের রং টা বাপের লাহান হইলেও মুখটা হইছে মায়ের মতন ছাঁচে গড়া। একবার দেখলে পরাণডা জুড়ায় যায়।এসব ভাবছিলেন সুমিতা দেবী।
ক্যামন আছেন পিসিমা? রূপের কন্ঠে ঘোড় কাটে তাঁর।

এইতো বাপ,যেমন রাখছে গোপাল ঠাকুর, তেমনই আছি। তুমি তো ভালো আছো ?

ও পিসি দাদুকে দেখছিনা যে? বাড়িতে নেই না কি?

হ হ আছে‌।খাইতেছেন ।তোমরা ঘড়ে গিয়া বসো।জ্যাঠার খাওয়া প্রায় শেষ।
অ প্রদীপ যা না বাবা ওনারে নিয়া ঘড়ে যা।দ্রুত রান্নাঘড়ে পা বাড়ান সুমিতা দেবী।প্রদীপ ঘড়ে দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,পিসি এত তাড়াহুড়া করিও না।স্পেশাল গেস্ট নিয়া আসছি। পাঁঠার মাথাটা , মুরগীর ঠ্যাং দুটো , পুঁটি মাছের পেটি টা না খেয়ে নরছি না কিন্তু।

চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here