হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,০৮,০৯

0
507

উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে,০৮,০৯
কলমে: চন্দ্রা।
পর্ব:০৮

প্রভাতের মোলায়েম আলো মুখে কপালে পরতেই চোখ মেলে তাকালো রিতি।বেডের এক পাশে উদ্বিগ্ন চিত্তে হয়ে বসে আছেন অন্নপূর্ণা দেবী।অবাক হয় রিতি।মাথাটা ক্যামন হালকা লাগছে তার। অতিরিক্ত কফ কাঁশি নির্মূলের ঔষধ সেবন করলে যেমন একটা ঝিম ধরা অনূভুতি হয় এ ঠিক তেমনই এক গা এলানো অনুভূতি। অন্নপূর্ণা দেবী সশব্যস্ত হয়ে ঝুঁকে বলেন,,এই তো চোখ মেলেছিস।কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম,খোকা যখন শেষ রাতে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডেকে উঠালো।এসে দেখি অজ্ঞান হয়ে পরে আছিস তুই,কপালে জলপট্টি।সুখদেব ডাক্তারকে এনে তারপর ক্ষান্ত হলো সবাই।
মনে মনে খানিকটা লজ্জিত রিতি।কি বিব্রতই না করলো মানুষ গুলোকে। দরজার দিকে ফিরতেই হালকা আলোয় একটা মনুষ্য মূর্তি সরে যেতে দেখলো জানালার পাশ থেকে।
একগ্লাস গরম দুধ হাতে নিয়ে শয়নগৃহে প্রবেশ করলো জয়া।বেডসাইড টেবিলে গ্লাসটা রেখে বললো,মামিমা তুমি গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নাও।আমি দেখছি ওকে।

এই সাত সকালে তোমরা এখানে? খুব বাড়াবাড়ি করেছি কি? লজ্জিত হয়ে প্রশ্ন করে রিতি।
টেবিলে রাখা জল ভর্তি বাটিটা নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে অন্নপূর্ণা দেবী বললেন,জয়া মা,ওকে গরম দুধটুকু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দে।আমি আসছি এখনি।
জয়া রিতির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো,এমন জ্বর গায়ে নিয়ে চুপচাপ রইলি রিতি?আমারই ভূল হয়েছে রাতে তোর খবর না নিয়ে ঘুমিয়ে পরা।ভাগ্যিস ভাই দেখেছিলো তোকে বেহুঁশ হয়ে পরে থাকতে।না হলে কি যে হতো?
দাঁড়াও বৌদিদি।কি বললে তুমি? তোমার ভাই দেখেছে মানে কি?(নিশ্চিত হয় রিতি রাতের দেখাটা তবে অন্য রাতের মতো স্বপ্ন ছিলো না)
শুধু কি দেখেছে? রান্নাঘর থেকে বাটিতে জল এনে কপালে জলপট্টি দিয়ে যেই দেখলো কাজ হয়না তখন বাড়ির সবাই কে ডেকে উঠালো।তবে যাই বলিস লক্ষণ কিন্তু ভালোই।সে কি অস্থিরতা ছেলের ?মুচকি হাসছে জয়া। বিস্ময়ে হতবাক রিতির গা জ্বলে ওঠে বৌদিদির এমন হাসি দেখে।
ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে দরজায় দেখা দিলো রঘুনাথ,
কিরে বুড়ি।তোর নাকি অসুখ বিসুখ হয়না? সেদিন তো খুব বড়াই করে বললি, দাদাভাই তোমাদের মতো এঁদো শরীর আমার নয় ওসব জ্বর জারি আমার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবেনা।নে নে এবার এগুলো খা তো।

এ মা দাদাভাই তুমি এসব আনতে গেলে ক্যানো?ধীরে সুস্থে বললো রিতি।গলাটা ক্যামন এটে আছে।

এত আকাশ থেকে পরছিস ক্যানো?ছোট বেলায় যখন কোলে বসে খেতি আর গায়ের জামায় এঁটো লাগিয়ে শেষ করতি তখন কিছু হয়নি আর আজ একটু খাবার আনলাম বলে জিভ কাটছিস? আগেও ছোট বোন ছিলি এখনো আমার ছোট বোনটিই আছিস।বয়স বেড়েছে বলে কি সেই ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক থাকবে না?

দাদাভাই আমি কি বললাম আর তুমি কি কি বলছো?

এই তোদের দুই ভাইবোনের নাটকবাজি বন্ধ হলে এবার দুধটুকু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নে ।ধমকে ওঠে জয়া।

দেখলি বুড়ি? এইজন্যই তো বলে,পরের মেয়ে ঘড়ে আনতে নেই।আপন জনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়।জয়াকে রাগাতে কথাগুলো বলে রঘুনাথ।মুখটিপে হাসছে রিতি।জয়া ফোঁস করে ওঠে,তোমাকে মামিমা কি বলেছেন মনে নেই?বিধু মাঝিকে খবর দাও।যাও।

ওহ্ তাইতো । একেবারে ভুলে গিয়েছি। সচকিত হয়ে ওঠে রঘুনাথ।রিতির কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরে।

বিধু মাঝিকে আবার কি দরকার পরলো বড়মার? শুধোয় রিতি।

বহুদিন বাদে চৌধুরী বাড়ির পুকুরে জাল ফেলা হবে।বড় চিতল,রুই মাছ ডাঙায় উঠবে। পরশু মহালয়া তার পরতো আর দশমীর আগ পর্যন্ত নিরামিষ।তোরা দুটিতে এক জায়গায় হয়েছিস ,এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায়? খুশিতে ঝলমল করে ওঠে জয়ার মুখমন্ডল।

বৌদিদি তুমি বসো।আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি। ফুল তোলা হয়নি না?

এখন ফুল দিয়ে কি হবে?তোর গোপালকে খাওয়ানোর দায়িত্ব আজ আমার। তুই খেয়ে নে।
না গো বৌদিদি ও দায়িত্ব আমি কাউকে দিতে পারবোনা।
তাই বলে তুই এই জ্বর গায়ে এখন চান করবি?আঁৎকে ওঠে জয়া।

কোথায় জ্বর? দেখো বরফের মতো ঠান্ডা আমার হাত, পা, কপাল। নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে বললো রিতি।

যতই বরফ কুচি হোক আর আগুনের ফুলকি উঠুক তোমার চান করতে হবে না।নিজে বাঁচলে ঠাকুর দেবতার নাম সব হবে।এই মামিমাকে ডাকছি আমি।জয়া ভয় দেখায়।
রিতি উৎকন্ঠায় নিজের তপ্ত হাতে প্রাণপনে জয়ার মুখটা বন্ধ করে ধরে,
দোহাই বৌদিদি ,বড়মাকে ডেকোনা।আমি স্নান করছি না।শুধু বাসি কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে ফেলবো।সকালে পূজা না করতে পারলে দিনভর শান্তি পাবোনা।রিতির কন্ঠে মিনতি ঝরে পরে।

জয়া নিজের মুখটা ওর হাত থেকে মুক্ত করে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,কি দস্যি মেয়েরে বাবা,, ভাইয়ের আবার বিয়ে দেয়ার শখ হয়েছে তোর?

নিজের ভুল বুঝতে পেরে সংকুচিত হয়ে বলে রিতি,সরি বৌদিদি,, নিজের দুই কানে হাত দেয় ।
জয়া শব্দ করে হেসে ওঠে,,,
এই দৃশ্যটা যদি তোর ছাত্র ছাত্রীদের দেখাতে পারতাম।কি অবস্থা হতো বল?ভাবা যায়, তাদের ডাকসাইটের রিতি দিদিমনি কান ধরে ক্ষমা চাইছে?হি হি হি।
রিতি কর্ণদুটিকে অঙ্গুলি মুক্ত করে কপট অভিমান দেখিয়ে বলে,,,

বৌদিদি,,একটা সত্যি কথা বলোতো,তুমি কি আমার শত্রু পক্ষের কিছু হও?
হ্যা তো।তুই জানিস না ।আমি রূপের বড়দার অন্নে প্রতিপালিত।সে তো তোর এহকাল, পরকাল, আজন্মকালের শত্রু।

রিতির মুখাবয়ব থেকে অভিমানের পর্দা সরে এক বিষন্নতার অমানিশা স্পষ্ট হয়।সে মুখ দেখে জয়ার ভেতরটা মুচড়ে ওঠে এক স্নেহ বাৎসল্যতায়।রিতিকে বুকে টেনে নিয়ে বলে আদ্র কন্ঠে, দুঃখ করিস না দিদি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ভগবানে যার অবিচল বিশ্বাস। মানুষের প্রতি যার এমন দরদ।তাকে কোনো দিন ঈশ্বর চিরদুঃখী করে রাখেন না।
ভালো মানুষের পরীক্ষা যে অনেক বেশী নেন উপরওয়ালা। পরীক্ষা তোর চলছে সাফল্য একদিন আসবেই।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর বাসভবনের মূল দরজা দিয়ে বের হচ্ছিল রিতি। হাঁটুর ব্যাথাটা কমেছে একটু। শাড়ির আঁচল টা কাঁধের উপর ঠিক করতে করতে ডেকে বললো বড়োমা আমি মন্দিরে যাচ্ছি তুমি এসো।যখনি দরজার বাইরে একপা রাখলো ধাক্কা খেতে গিয়েও খেলোনা একটুর জন্য। পেছনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে সামলে নিলো নিজের দূর্বল শরীরটাকে। সামনের মানুষটার সাথে চোখাচোখি হলো নিমেষেই। জগিং করে ফিরছে সে। নির্ঘুম রাত্রি যাপনের ফলে অক্ষিযুগল রক্ত জবার সৌন্দর্য ধারন করেছে তার। কিন্তু ও চোখের মায়াময় চাহুনি খর্ব হয়নি তাতে। রিতি অস্বস্তিতে কাঁচুমাচু হয়ে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই বিরূপাক্ষ তার দিকে একঝলক অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে পাশকাটিয়ে অন্দরে প্রবেশ করলো।পেছন ফিরে শুধু একবার দেখলো,খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা রিতির সদ্যভেজা চুল থেকে জল গড়িয়ে পরনের শাড়িটা ভিজছে।ড্রইং রুমে এসেই চিল চিৎকার শুরু করল সে,মা,,,মা,,,, বৌদিদি,,,বলছি এ বাড়ির সব নিয়মকানুন গুলো ধুয়ে মুছে গিয়েছে নাকি? যার যা খুশি করছে আর বাইরের মানুষের জন্য বাড়ির মানুষগুলোর হেপা পোহাতে হচ্ছে ক্যানো?
রিতি ভেতরে রূপের উচ্চস্বরে বলা কটুকথা গুলো স্পষ্টই শুনতে পারলো।রাতের বেলা জ্বরের ঘোরে পরে থাকার সময় দু একবার চোখ খুলে সে উদ্বিগ্ন একটা মুখই নিজের মুখের উপরে দেখেছিলো আর তাতে যে ভালোলাগা টুকুর জন্ম হয়েছে সেটুকুও আর অবশিষ্ট রইলো না।
অন্নপূর্ণা দেবী গরম জলে স্নান শেষে সবে কাপড় পাল্টাচ্ছিলেন। ছেলের চিৎকার শুনে কোনরকমে শাড়িটা জরিয়ে বেরিয়ে এলেন নিজের কক্ষ থেকে। বিরূপাক্ষ ততক্ষনে উপরে উঠে গিয়েছে,,

কি হলো কি খোকা সকাল সকাল বাড়ি মাথায় তুলেছিস ক্যানো?

কি হয়নি সেটা বলো মা?

এত না পেঁচিয়ে সোজা কথাটা বলতো?কি হয়েছে?

একটু চোখ কান খোলা রাখো বুঝতে পারবে।আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় উঠিয়েছো দোষ গুলো দেখবে কি ভাবে?

নিজের ঘড়ে ঢুকে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে বিরূপাক্ষ। ছেলের উপর বিরক্ত হয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন অন্নপূর্ণা দেবী।ছোট বেলাকার চিৎকার চেঁচামেচি করার অভ্যাসটা ছাড়তে পারলো না ছেলেটা।

শিউলি তলায় ফুল কুড়াচ্ছে রিতি কিন্তু দেহের সাথে মনটাও বড়ো অশান্ত তার।এমন অশান্ত মনে গোবিন্দ পূজা করবে কি প্রকারে।
রূপ ঘড়ে ঢুকেই ছুটে গিয়েছে ব্যালকনিতে। কিসের টানে জানে না। চোখদুটো আপনা আপনিই চলে গেলো শিউলি তলায় উপুড় হয়ে ফুল কুড়ানো রমনীর দিকে। মেজাজ টা এখনো খিচে আছে তার ।যে ব্যক্তি রাতে প্রবল জ্বরের ঘোরে ভুল বকেছে সে ভোরেই চুলে শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করার ঔদ্ধত্ত্ব দেখায় কিভাবে?

ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়েই পেছন ফেরে বিরূপাক্ষ,,
ও তিতলি । ঘুম ক্যমন হলো তোর?

তুই যা শুরু করলি আর ঘুম,,,

ওহ্ সরি রে,,আই এম এক্সট্রিমলি সরি ফর মাই বিহেবিয়ার।

ইটস্ ওকে রূপ।দরকারী কথাটা বলি শোন।

হ্যা বল?তোকে একটুও সময় দিতে পারিনি বলে দুঃখিত আমি।আর তুইই তো সবার সাথে মিশে গিয়েছিস তাই আর,,,,

এই থামতো তুই,,,বাবা কল করেছিলেন।প্যারিস থেকে সোজা তোর সাথে চলে এসেছি তাঁরা খুব কষ্ট পেয়েছেন। আমার ও মন টানছে খুব।আমাকে যেতে হবেরে!পারলে আজই,,
প্লিজ দোস্ত রাগ করিস না। আজকের দিনটা থেকে যা,,তিতলির গালে নিজের ডান হাতটা রেখে খুবই অনুরোধের সুরে বললো বিরূপাক্ষ।
রূপের এমন অন্তরঙ্গ ব্যবহারে তিতলির তপ্ত হৃদয়টা শীতল হয়ে আসে।অন্য দিকে দূর থেকে কেউ একজন তাদের এমন দৃশ্য দেখে নিজের অজান্তেই তপ্ত অশ্রু হাতের তালুতে মুছে নিলো সেটা কারোরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে কি?
কথায় আছে নারীদের এমন একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে যার মাধ্যমে সে অন্য মানুষের দৃষ্টি দেখে বলে দিতে পারে তার মনের ভাবগতি। অন্নপূর্ণা দেবী তিতলির চোখে তাঁর খোকাকে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা দেখেছে। ‌দেখেছে বিরূপাক্ষের প্রতি ভালোবাসা।তাইতো তিনি বিলম্ব না করে গতকাল রাতে তিতলিকে নিজের শয়নকক্ষে একান্তে ডেকে খোলাসা করেছেন রিতির সাথে রূপের সম্পর্কটা।কথাটা শুনে তিতলির সমগ্র জুড়ে যেনো অন্ধকার নেমে এসেছিল কিন্তু সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সত্বায় ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পেলো তখনি যখন শুনলো রূপ রিতিকে কোনোদিন ই মেনে নেয়ইনি। তারপরেও একটা খটকা থেকেই যায়,রূপ তাকে এতকিছু বললো আর এতবড় একটা ঘটনা চেপে গেলো কিন্তু ক্যানো?গত দু’দিন ধরে রিতিকে যেমন দেখেছে তাতে যে কোনো পুরুষের আরাধ্য রমনী হিসেবে সে পারফেক্ট।রুপ গুন কোনোটারই কমতি নেই মেয়েটার।যদি রূপের মনটা ঘুরে যায়?কাল রাতে যেভাবে জ্বরাক্রান্ত রিতির সেবা করতে দেখেছে রূপকে তাতে এমন পরিবর্তন ঘটে যাওয়া কঠিন কিছু নয়।ভাবতেই নিজের মনটা অব্যক্ত ব্যথায় টনটন করে উঠলো তিতলির।

গতকাল রাতে যখন ক্রোধের বশে রিতির হাতটা চেপে ধরল বিরূপাক্ষ তখনি টের পেয়েছিলো ওর শরীরে টেম্পারেচার অনেক বেশি।নিজে ঘুমানোর বহু চেষ্টা করেও যখন ঘুমের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি তখন মৃদু পায়ে রিতির ঘড়ের দিকে এগিয়ে যায়।দরজাটা একটু খোলা ছিলো। উঁকি দিয়ে যা দেখলো তাতে হঠাৎ করেই বিরূপাক্ষের ললাটে চিন্তাযুক্ত কুঞ্চন রেখা দেখা যায়। বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে রিতি। পরনের শাড়ি ঠিক নেই, হাঁটু পর্যন্ত তোলা।ক্ষত স্থানে লাল হয়ে ফুলে আছে,হয়তো ঘুমের মধ্যে যন্ত্রণায় নিজেই শাড়ি গুটিয়ে নিয়েছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে নাকে মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে। বিরূপাক্ষ কাছ থেকে কয়েক বার নাম ধরে ডাকে।কোনো সাড়া শব্দ নেই। কাঁপা কাঁপা হাতে চট করে রিতির একটা হাত ছুঁইয়েই চমকে ওঠে সে।এত জ্বর। পুনরায় কয়েক বার ডাকে কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে কোলে তুলে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে গায়ে পাতলা কাঁথাটা টেনে দিয়ে ছুটে যায় রান্নাঘরে। অতঃপর জলপট্টি দিতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। অবশেষে কোনো কূল কিনারা করতে না পেরে ডেকে তুলেছিলো বাড়ির সবাইকে।আর নিজে সরে গিয়েছিলো।সেই থেকে এখন পর্যন্ত জ্ঞানহীন রিতির ঐ নিষ্পাপ অপূর্ব মুখশ্রীখানি মাথার মগজ থেকে সরাতে পারেনি বিরূপাক্ষ।এমন একটি অপ্রত্যাশিত ব্যাপার সে দেখেছে যেটা কখনোই কল্পনাও করেনি।

চলবে,,,

উপন্যাস :হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে: চন্দ্রা।

পর্ব:০৯
রিতি যে আজ বুটিক হাউস বা তাঁত কলের ওখানে যেতে পারবে না সেটা আগেই ফোন করে বলে দিয়েছে।রিতির অবর্তমানে যাতে তাঁত কলে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য রঘুনাথ এর নিজের বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে সর্বদা।প্রথম থেকেই তাদের থাকা খাওয়া সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ছোট অফিসরুমের পাশে টিনের বেড়া দেওয়া বড়ো ঘড়টায়। ওদের যে প্রধান তাকে সবাই সর্দার বলেই ডাকে।ছোট বড়ো সকল শ্রমিকদের ইকবাল সর্দার তিনি।ইকবাল তার মনিবের কথানুযায়ী এসে আজকের সমস্ত দিনের হিসাবের খাতা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে সুমির কাছে।

বুটিক হাউস থেকে দরকারি কিছু খাতা-পত্তর বয়ে নিয়ে সুমি চলেছে চৌধুরী বাড়িতে।রিতিকে এগুলো হস্তান্তর করে তবে রেহাই মিলবে তার। দায়িত্ব পালনের এক বিষম বাতিকগ্রস্ত মেয়ে রিতি। অসুস্থতার কারণে স্কুল বা অন্য কাজের জায়গায় উপস্থিত হতে পারেনি ঠিকই কিন্তু রাত জেগে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাঁহাতে কপাল চেপে ডান হাতে ল্যাপটপের কাজটা শেষ করে তবে ছাড়বে। অসুস্থতার জন্য আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখার মধ্যে নেই সে।তার কর্মস্থলে অযুহাতে কর্মে ফাঁকি সে মেনে নেয়না কখনো।যে যোগদান করবে তাঁকেও এই বাক্য শিরোধার্য করতে হবে নইলে আগাম একমাসের মাসোহারা সহ আজীবনের ছুটিটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হবে।
সুমি দ্রুত পা চালায়।একেতো আশ্বিনের শেষ ভাগ তাতে আবার সূর্য পশ্চিমে ঢলেছে।বেলা ছোট হয়েছে বেশ খানিকটা।সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচে সে।
প্রদীপ তার নতুন কেনা মোটর বাইকটা নিয়ে সুমির পাশ ঘেঁষে তার পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছে।এতে যে পাশের মেয়েটির বিরক্তি বাড়ছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রদীপের‌। রাস্তায় পরিচিত কেউ সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এই চলমান যুবক যুবতীর পানে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে হাঁটার গতি বাড়িয়ে চোখের আড়াল হচ্ছে।
হঠাৎ করেই অত্যধিক বিরক্তি নিয়ে সুমি থমকে দাঁড়ায়,,,
ভ্রুদ্বয় নাচিয়ে প্রশ্ন করে,কি ব্যাপার? তুমি তোমার শখের সখী (মোটর সাইকেল) নিয়ে আমার পাশে হাটতেছো ক্যানো?এতে মবিল নেই?নাকি চালাতে পারো না?

প্রদীপ দাঁত সিঁটকায়,,
থাকবে না ক্যানো? দুপুরে চৌধুরী বাড়িতে খুব খাওয়া হলো।তাই হাটছি হজমটা ভালো হবে।

তোমার সখীও কি খুব খেয়েছে?আর আমার পাশেই হেটে হেটে তোমার হজম বৃদ্ধি করতে হবে?এতই যখন হাঁটার শখ তাহলে লাখটাকা খরচ করে এটা কিনেছো ক্যানো হ্যা? চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলে সুমি।

এত রাগ করছিস ক্যানো?একটু বোস না আমার বাইকে।তোকে পৌঁছে দেই ‌।আমি কি শুধু নিজের জন্য এত টাকা খরচ করে কিনলাম? করুন শোনায় প্রদীপের স্বরটা।

সুমির এবার অভিমান বাড়ে।মুখ ঝামটি মেরে বলে,,
উঠবো না তোমার বাইকে। আমার পছন্দের কালো রং এর টা না কিনে বন্ধুর পছন্দের লাল ক্যাটকেটে রঙের টা নিয়েছো।কখনো আমাকে চড়তে বলবে না ওতে। হেঁটে হেঁটে খোড়া হয়ে গেলেও চড়বো না ওতে।

প্রদীপ পরে মহা বিপাকে,,
শোননা লক্ষিটি,এমন করিস না। দুই মাস পরে এটা বিক্রি করে তোর পছন্দের টা কিনবো।বুঝিসইতো সোনা,রূপ বললো এটা নিতে।

তো যাওনা তোমার ঐ রূপের সাথে তার গার্লফ্রেন্ড কে ও উঠিয়ে ঘুরে বেড়াও।কি আমার রঙিন মনের রঙিলা হয়েছেন তোমার বন্ধু?লাল রঙ পছন্দ তার, নিজের মনটা তো একদম কড়াইয়ের তলার কালির মতো।বিয়ে করা বৌ দিনের পর দিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য নেই,,উনি সারাদেশে অন্য মেয়ে নিয়ে রঙ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।একদমে কথাগুলো বলে থামলো সুমি।
সুমির ক্ষোভের জায়গাটা এবার ধরেছে প্রদীপ ।বন্ধুর নামে এমন কটুক্তি শুনে মনে মনে রাগ হয় প্রদীপের‌। কিন্তু সুমিকে ঘাটাতে ইচ্ছা করে না।

তুই যেটা ভাবছিস সেটা ঠিক না।তিতলি শুধু ওর ভালো বন্ধু।আর কিছু নয়।দ্যাখ প্রায় চলে আসলাম এবার তো উঠে বোস।

পারবোনা আমি। আর কতবার বলতে হবে আমার সাথে তুই_তুকারী করবে না। পুনরায় গর্জে ওঠে সুমি।

বোকার মতো হাসি দিয়ে বলে প্রদীপ,,,
কি করবো বল?একটু আদর- টাদর যদি করতে দিস তাহলে না হয় প্রেম প্রেম ভাব আসে মনের মধ্যে আর সাথে তুমিটাও আসে। কিন্তু এমনভাবে পাড়াতো বোনের মত দুরছাই দুরছাই করলে সে ভাব আসে বল?।

আবারো দাঁড়িয়ে যায় সুমি চোখ ছোট করে তাকায় প্রদীপের কাঁচুমাচু মুখের দিকে,,

খুব আদরের শখ হইছে তোমার তাইনা?আসো একটু আদর করো ,,রঘুদাদা কোনভাবে দেখলে হয়, তোমার গর্দান সহ ঐটাও নিয়ে নেবে।বংশে বাতি জ্বালানোর শখ ঘুচে যাবে চিরতরে।সুমি প্রদীপের দিকে এগুতেই সে একটু পিছিয়ে যায়।সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,,যাক বাবা কেউ দেখেনি।
রঘুনাথ ভীষণ কড়া। মেয়েদের সাথে এতাল বেতাল যে করবে তার কোন ছাড় নেই।

প্রদীপের ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখে ভীষণ হাসি অনেক কষ্টে চাপিয়ে নেয় সুমি।কোথা থেকে কি ভেবে খানিক লজ্জা এসে ছুঁয়ে দেয় সমস্ত অবয়ব।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে সামনের ভীষণ ভালো মানুষটাকে যে কিনা আর কয়েকদিন বাদেই তার একান্ত নিজস্ব ধন হবে শুধু এজনমে নয় আগামী সাত জনমের জন্য।

চৌধুরী বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকতেই জয়া হইহই করে ওঠে,,এই রিতি দ্যাখ তো কে এসেছে? হাজার বলেও টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়না মেয়ের।সখি একদিন চোখের পলক হয়েছে তো তিনিও সুড়সুড় করে চলে এলেন?
সুমি বুঝলো কথাগুলো তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা। এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করে জয়াকে,,
ক্যামন আছেন বৌদিদি??
জোড়ায় এসে বেজোড়ে প্রণাম করলে কি চলবে?নাকি তার ফল ভালো হবে?
জয়ার কথায় প্রদীপ অদূরে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকায়।
রিতি আর তিতলি মিলে বড়ো একোরিয়ামটায় খাবার দিচ্ছিলো।ওরাও এগিয়ে আসে হাস্যোজ্জল মুখে।জয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় ভীষণ লজ্জায় পরে সুমি।
বিরূপাক্ষ ফোনস্কিনে চোখ রেখে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো। প্রদীপের কাছে গিয়ে নিজের ওয়ালেট থেকে হাজার টাকার একটা নোট বের করে প্রদীপের হাতে গুজে দেয়।সবাই অবাক হয়ে দেখছিলো ব্যাপারটা। বিরূপাক্ষ বন্ধুর হা করা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,তোর বাইকের তেল মবিল কিনবি।এমনি হাঁটলে ঠিক আছে, কিন্তু তুই বন্ধু মানুষ তেল কেনা পয়সার অভাবে বাইক ঠেলে হাটবি সেটা আমি কি করে সহ্য করি বল?মুচকি হেসে চোখ মারে বিরূপাক্ষ। থতমত খেয়ে যায় প্রদীপ,,ওদিকে সুমি বাদে সবার প্রশ্ন বিদ্ধ চাহনি উপেক্ষা করে প্রদীপের হাত টেনে বাগানের দিকে এগিয়ে যায় বিরূপাক্ষ।রিতির সামনে সে থাকতে চায়না।

***
এবাড়িতে চিলেকোঠার ছাদটা বিরূপাক্ষের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।ছোট বেলায় যখন খুব মন খারাপ হতো বা কোনো কারনে মনটা খুব ভালো থাকতো তখনই ছুটে আসতো এই চিলেকোঠার ছাদে।এখান থেকে প্রায় পুরো গ্রামটাই পর্যবেক্ষণ করা যায়। দূরের আবাদী জমিতে ধান নাকি পাট স্পষ্ট বোঝা যায়না ঠিকই কিন্তু সবুজের সমারোহ টের পাওয়া যায় রিতিমত।বড়ো রাস্তাটা আরো বেশী করে বুঝা যায় এখান থেকে।দেখে মনে মোটা কালো রঙের বিশাল দেহী সাপটা এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলেছে সবুজ ক্ষেতের মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় যখন নদীতে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা স্পিড বোটের শব্দ শুনতো তখন মায়ের শত বাঁধা অতিক্রম করে ছুটে যেতো চিলেকোঠার ছাদে।গাছ গাছালির ফাঁক ফোকর দিয়ে যেটুকু দেখতে পেতো তাতে মন ভরতো না তার। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতো একদিন আমিও ঐরকম একটা স্পীডবোট কিনবো। আবার দৌড়ে নিচে নেমে গিয়ে প্রতিবেশীর বাগান থেকে কলা গাছের খোলা কেটে নৌকা বানিয়ে তাতে বাগানের ফুল সাজিয়ে নিজেদের শানবাঁধানো পুকুরে ভাসিয়ে তবে ক্ষান্ত হতো।আর কিছু না হোক দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো হতো।আর এসব কাজে সবসময় তাকে সাথ দিয়ে এসেছে পাড়ার বন্ধুরা সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকায় ছিলো প্রদীপ।আকাজ করে বিরূপাক্ষের জায়গায় চরটা,কিলটা,বকুনিটা খেয়েছে প্রদীপ। বিরূপাক্ষ ভোলেনি কিছুই।জীবনে সাফল্যের সাথে সাথে অনেক বন্ধু বান্ধব সে পেয়েছে কিন্তু প্রদীপের জায়গাটা কেউ নিতে পারেনি।আজ বিকালেও চিলেকোঠার ছাদে উঠেছিলো সেখান থেকে দেখেছে প্রদীপ আর সুমির পথ চলতে চলতে থেমে যাওয়া, তর্কাতর্কি, খুনসুটি।নিজে মিটমিটিয়ে হেসেছে শুধু।এই মেয়েটাকে নিয়ে বছরখানেক আগে কি ঝড়টাই না বয়ে গেলো প্রদীপের জীবনে।তখন একজন মানুষ প্রথমবারের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ফোন করেছিলো বিরূপাক্ষের প্যারিসের সিম নাম্বারে।
সেদিন,
রাত নটার দিকে অফিস থেকে সবে ফিরে কাউচে গা এলিয়ে দিয়েছে বিরূপাক্ষ।দেহে রাজ্যের ক্লান্তি আর মনে অসীম বিষন্নতা। প্রদীপের সাথে কন্টাক্ট করতে পারে না তিন দিন। নিজের ব্যাস্ততায় গায়ে লাগেনি ব্যাপারটা। ফোনের পরিচিত রিং টোন বাজতেই চোখ পরে স্কিনে।সেখানে ভাসছে বাংলাদেশী কোডের একটা আনসেভ নম্বর।
রিসিভ করে কানে ধরতেই একটা সুমধুর মেয়েলী স্বর ভেসে আসে,,
হ্যালো,,,,বিরূপাক্ষ রায় চৌধুরী বলেছেন?আমি রিতি।
অপর প্রান্তে টানা বাংলা শুনে সোজা হয়ে বসে বিরূপাক্ষ,,,
হ্যা বলছি‌।কোন রিতি?

আমি ত্ররিতি হালদার। আপনার কাছে বিশেষ দরকারে ফোন করেছি।একটু সময় হবে? দেখুন আমার নিজের মোবাইলটার চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে।কারো ফোন নম্বর পাচ্ছিনা,তাই আপনার কথাই মনে হলো না হলে বিরক্ত করতাম না।

চিনতে পেরে ক্রোধে বিরূপাক্ষের শিঁড় দাড়া বেয়ে এক উষ্ণ উত্তাপ বয়ে যায়।এতো স্পর্ধা মেয়েটার?ফোন নম্বর জোগাড় করে কল করেছে?তাও নিজের প্রয়োজনে?এসব ভাবনায় যখন ডুবছে বিরূপাক্ষ তখন ই ফোনের স্পিকারে শোনা যায় রিতির অধৈর্য গলা,,,
এত ভাববার সময় দিতে পারবোনা না আপনাকে।কথাটা খুব,,,
রিতির বাক্য শেষ হওয়ার আগেই তা ধামা চাপা পরে বিরূপাক্ষের অসহিষ্ণু কন্ঠস্বরে,,,,
এই কে বলেছে তোকে আমায় ফোন দিতে?
যা দিয়ে এসেছি ওতে মন ভরেনি? আবার প্রয়োজন,এত সাহস কোথায় পাস তুই?যদি কোনদিন সামনে পাই মেরে পুঁতে রেখে দেবো।

আমাকে মেরে পুঁতে রাখবেন ঠিক আছে কিন্তু আপনার প্রাণের বন্ধুর যে শ্রাদ্ধ খাওয়ার ব্যবস্থা চলছে সেটাও শুনবেন না?সে সময়টুকুও হবেনা?স্পষ্ট তাচ্ছিল্য ফুটে ওঠে রিতির কন্ঠে।বিরূপাক্ষ একটু থমকায়।তার ভেতরে থাকা ক্রোধ যেন তার উন্নত শির হঠাৎ করেই নত করে ফেলে,
স্তম্ভিত হয়ে বলে বিরূপাক্ষ,,,কি হয়েছে প্রদীপের?আমি ওর সাথে তিনদিন কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।
অতঃপর রিতি যখন একয়দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ননা করলো বিরূপাক্ষের কাছে তখন বিরূপাক্ষের মনের কোথাও যেনো এই হেয় মেয়েটির প্রতি এক অমোঘ শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা বোধ উদয় হলো।
সেদিন বিরূপাক্ষ রঘুনাথকে ফোন করে একরাতের মধ্যেই সকল বিরূপ পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলো।
বেকার বাউন্ডুলে প্রদীপের সাথে সুমির গড়ে ওঠা সম্পর্ক টা জানাজানি হলে সুমির পরিবার সহায়সম্বল হীন প্রদীপকে মেনে নিতে চায়নি। প্রদীপের মা সাবিত্রী দেবী অনেক হাত পা ধরেছে সুমির মা-বাবার শুধুমাত্র একমাত্র ছেলের মুখের দিকে চেয়ে। সুমির মা বাবা গোপনে মেয়ের জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছিলো শুধু কিছু করতে পারছিলো না রিতির জন্য। সেদিন কি একটা কাজে বাগেরহাট যায় রিতি। সেখানেই বাস এক্সিডেন্ট করে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।আর এই সুযোগে সুমির মা বাবা সুমিকে নিয়ে ওর মামা বাড়িতে গিয়ে একরাতের ব্যবধানে বিয়ের আয়োজন করে ফেলে।প্রদীপ সেটা টের পেয়ে বাঁধা দেওয়ায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর রিতির নম্বরে ফোন করে সব বলে। ততক্ষনে রিতির মোবাইলের চার্জ শেষ।এক কর্তব্যরত নার্সের কাছ থেকে মোবাইল টা চেয়ে কল করে বিরূপাক্ষের নম্বরে।এই মুহূর্তে এই একটা মানুষকেই তার ভরশা করতে ভীষণ ইচ্ছে জাগে।বিরূপাক্ষের কল পেয়ে নিজের কিছু লোকজন নিয়ে রঘুনাথ ছুটে গিয়েছিলো সুমির মামা বাড়িতে।
তারপর যা হয়েছিলো তা আর বর্ণনার প্রয়োজন নেই আশা করি।
অন্নপূর্ণা দেবী নিজে গিয়ে সুমিকে প্রদীপের ভাবী বধু হিসেবে আশির্বাদ করে এসেছিলেন পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে।
প্রদীপ মুরগীর খামার করেছে । চারপাশে শাক, সবজির বাগান।রিতির কাজেও সাহায্য করে সামর্থ্য মতো।এখন আর বেকার নেই। বিরূপাক্ষ দেশে ফিরেছে এবার ওদের বিবাহ কার্যটা ধুমধাম করেই সম্পন্ন হবে।
রিতি দ্বিতীয় এবং শেষ বারের মতো ফোন করেছিলো বিরূপাক্ষকে, ঐ ঘটনার চারদিন পরে।সেটাও শুধুমাত্র ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য।আর কিছুই নয়।
তখন বিরূপাক্ষ নিজের ব্যবহার স্মরণ করে মনে মনে হয়তো একটু ছোটই হয়েছিলো।
******
সন্ধ্যাহ্নিকের কাজ সেরে সবে মন্দিরের বাইরে পা রেখেছেন সুমিতা দেবী।মনের মধ্যে তাড়াহুড়ো। টর্চ লাইট টা নিয়ে রাস্তায় বেরোতে হবে।শশীশেখর বাবু সামনের রাস্তায় একটু হাঁটা চলা করার উদ্দেশ্যে গিয়েছেন সেই বিকেলে।সেইসুযোগে সমবয়সী কাউকে পেলে মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারবেন। নিশ্চয়ই বনমালীর চায়ের দোকানে গল্পে মেতেছে। অন্ধকার পথে আলো না হলে আসতে পারবেনা। বড়ঘড়ে মোবাইলটা তারস্বরে চিৎকার করে উঠতে সুমিতা দেবী আগ্রহভরে এগিয়ে যায় সেদিকে।রিতির নামটা উঠেছে, রিসিভ বাটনে চাপ দেয় সুমিতা দেবী,,,

হ্যালো মনি,,তোর শরীলডা ভালো অহন??

হ্যা পিসি,, তুমি ভালো আছো? দাদুভাই ক্যামন আছে?

হ মা আমরা ভালো আছি,,তোর জ্বরডা গ্যাছে?সুমি কইলো শুকাইয়া গেছোস?

পিসি,,এসব কি বলো তুমি। মাত্র দু’দিন এলাম এর মধ্যে শুকিয়ে শুঁটকি হয়ে গেছি?লোকে শুনলে কি বলবে?

ক্যামনে জ্বরখান বাঁধাইলি ক তো মা?শুনচি থেইক্কা মনডায় খালি আনচান আনচান করতেছে।আদ্র কন্ঠস্বর সুমিতা দেবীর।

ভালো হয়েছে।আর পাঠাবা আমায় শশুর বাড়ি?এখন কাজকাম শেষ হইছে তো বসে বসে কাঁদো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো রিতি।

এমন করো ক্যা মা,,,কত আদর করি তোমারে পরানডা পুড়বো না?গলা ধরে আসে সুমিতা দেবীর।রিতি টের পায়।

ও পিসি।মন খারাপ করোনা।দেখি কাল আসবো একবার।বৌদিদি ডাকছে।এখন রাখি পরে আবার কথা বলবো।টুট,,টুট শব্দে লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়। ওপাশেও যে মনভারী হওয়ার নিঃশ্বাস পরে।
সুমিতা দেবী কিছুক্ষণ স্কিনের আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে। শাড়ির আঁচলে চোখ মোছে।সেই কবে স্বামী হারিয়ে সন্তানহীন বক্ষে তুলে নিয়েছিলো রিতিকে। নিজের সন্তানের চেয়ে বেশী স্নেহ মমতা দিয়ে এতটুকু করেছে যাকে সে তো নাড়িছেঁড়া ধনের চেয়ে কম নয়।মা না হলেও মায়ের মতো তো?দূরে গেলে কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।ফোনটা আগের জায়গায় রেখে টর্চ লাইট টা নিয়ে ভারাক্রান্ত মনে বাড়ির বাইরে পা রাখেন সুমিতা দেবী।

*****
সন্ধ্যার জল খাবারের আয়োজন চলছে কিচেনে।বড়োসড়ো রন্ধনশালায় প্রয়োজনীয় সব জিনিস আসবাবপত্র রেখেও আরো বেশ খানিকটা জায়গা ফাকা পরে থাকে।সেখানেই বড়ো মাদুর বিছিয়ে বসেছে ক’জন। রিতি লুচির জন্য ময়দার খামি তৈরী করছে একপাশে। অন্যদিকে অভি এবং তিতলি আলু পটলের খোসা ছাড়িয়ে নিচ্ছে।সরলা পিসি শীল-নোড়া দিয়ে মসলা বাটছেন আর ওদের বিভিন্ন কথায় আমোদ বোধ করছেন।
এই তোদের হলো?দুজনে আর কতো সময় নিবি বলতো? আমার হালুয়া প্রায় হয়ে এলো।
কড়াইতে সুজির হালুয়া নাড়তে নাড়তে বললো জয়া।
এই তো বৌদিদি হয়ে গেছে।বললো তিতলি।অভি সাথে তাল দিলো।

দরজা থেকে গলা খাঁকারি দিলো বিরূপাক্ষ,,অন্যান্য সবাই সেদিকেই দিকপাত করলেও রিতি ফিরলো না।

বলছি কি বৌদিদি,, দাদাভাই কে একটু সার ভূষি আনতে বলোতো রাতে।

কথাটা যেনো বুঝতে পারেনি এমনভাবে তাকায় জয়া,
আমাদের বাড়িতে যারা শুকিয়ে শুঁটকি হয়ে যাচ্ছে তাদের সকাল-সন্ধ্যা দুবেলা করে দিও ওগুলো।না হলে চৌধুরী বাড়ির অপবাদের আর শেষ থাকবেনা।লোকে বলবে এখানে লোকজনকে না খাইয়ে রাখা হয়। রহস্যময় হাসিতে আড়চোখে রিতির দিকে তাকায় বিরূপাক্ষ।রিতি ঘাড় ঘুরিয়ে অগ্নি চোখে তাকায় বিরূপাক্ষের দিকে।জয়া যা বুঝার বুঝে নিয়েছে।

বৌদিদি এক কাপ কফি যদি পাই তাহলে ভস্ম হওয়ার আগে এখান থেকে যাই,,,

সেতো পেতেই পারো। তোমাকে কফি দেওয়ার দায়িত্বে লোক লাগিয়েছেন মামিমা। তুমি ঘড়ে যাও কফি একটু পরে যাচ্চে।শব্দ করে হাসে জয়া।

আচ্ছা আচ্ছা আবার ভূলে যেওনা কিন্তু।

কফি বানিয়ে রিতিকে বলতেই সে সহাস্যমুখে বললো,তিতলি দি আমার হাতে তো ময়দা,তুমিই নিয়ে যাও না কফিটা।তিতলির এতক্ষনের থমথমে মুখে এক ঝলক রক্ত ছুটে আসে।কফিটা নিয়ে চলে যায় কিচেন থেকে।তিতলির মুখের হঠাৎ উজ্জ্বলতার রংটা যে আরেক জনের মনে প্রগাঢ় কালিমা লেপে দিলো অভি,সরলা পিসি এমন কি বৌদিদির চোখেও ধরা পরলো না সেটা।

তিতলি নিজের কাপড় চোপড় গুলো গুছিয়ে ব্যাগে ভরছিলো।কাল সকাল সকাল রওনা দিতে হবে নাহলে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। এমনিতেই দিন কাল ভালো নয়। বিরূপাক্ষ যাবে ঢাকা পর্যন্ত। সেখান থেকে টাংগাইল এর দূরত্ব নেহায়েৎ কম নয়।একা মেয়ে মানুষ এদেশে চলাফেরা করা খুব মুসিবতের ব্যাপার।হঠাৎ করে ঘড়ে প্রবেশ করলো রিতি,,তিতলি দি খাবে চলো।নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।একি তুমি সবকিছু গোছগাছ শুরু করে দিয়েছো?

হ্যা রিতি।যেতেই যখন হবে তখন দেরী করে লাভ কি বলো?
রিতি এসে তিতলির হাত থেকে টপটা টেনে নিয়ে বলে,
যেতেই হবে ঠিক আছে কিন্তু দিদি কাল মহালয়া।অন্তত পক্ষে এইদিনে আমাদের সাথে থাকো।সবার ভালো লাগবে।

সত্যি রিতি! সবার ভালো লাগবে?তোমার ভালো লাগবে?
এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলে রিতি,
হ্যা দিদি,সবার না লাগুক কারো কারো তো ভালো লাগবে।আর আমার কথা যদি বলো,তো তুমি যদি এ বছর পূজাটা আমার সাথে কাটাও তাহলে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পূজা হবে এটাই। বিশ্বাস করো মন থেকেই বলছি।

তোমাকে না আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।কখনো মনে হচ্ছে তোমার ভেতর বাহির একদম কাঁচের মত স্বচ্ছ আবার কখনো মনে হচ্ছে তোমার বাইরের সাথে ভেতরের কোন মিল নেই।আসল সত্যটা কি বলোতো রিতি?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তিতলি।
রিতি চোখ নামিয়ে ম্লান হেসে বললো,,
এত সত্য জেনে তুমি কি করবে?তোমাকে যে দিদি মেনেছি এটাতো মানো?নাকি তাতেও তোমার সন্দেহ আছে?

না গো বোনটি সে সন্দেহ থাকলে এসব কথা তুলতে সাহস পেতাম না।তবে একটা সত্য বুঝেছি আমি,পরকে সল্প সময়ে আপন করার এক শক্তি আছে তোমার মধ্যে। কিন্তু রূপটা যে ক্যানো এমন করছে কে জানে?ভাবুক স্বরে বললো তিতলি।

সবার সাথে মানিয়ে চলা কি একজনের পক্ষে সম্ভব বলো?থাক সে কথা,
তুমিও অনেক মিশুকে তিতলি দি। অনেক মনে পরবে তোমাকে।আমি অনুরোধ করব,এই পূজাটা অন্তত আমাদের সাথে থাকবে ,কথা দাও।

তিতলি নিজের হাতে রিতির দুহাত টেনে নিয়ে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,, তুমি কি ভাবছো?আমি এখানে না থাকলে রূপ ও থাকবে না? আমার সাথে থাকবে?সে ভুল করোনা রিতি,সব সৌভাগ্য সবার হয়না বোন।
তিতলির দুহাতের মধ্যে রিতির হাত দুটো হালকা নড়ে ওঠে অব্যক্ত সত্যটা শুনে।দৃষ্টি অবনত করে বলে রিতি,তিতলি দি তোমার ভাবনাগুলো পুরোটা ঠিক নয় বিশ্বাস করো।আমি চাই পূজায় তুমি এবাড়িতেই থাকো।

রিতি আমি অনেক দেশ ঘুরেছি তোমার মতো এতটা স্বার্থত্যাগী হয়ত আমি হতে পারবো না কিন্তু মানুষ চেনার একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে আমার মধ্যে। মানুষ দেখে তার মনের ভাব কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারি।তুমি মিথ্যা বলা বা ছলচাতুরি করা মেয়ে নও।করবেও না কখনো কারো জন্য না, এইটুকু অনুরোধ তোমার প্রতি।
রিতির মুখে কথা জোগায় না।তিতলি রিতির থুতনীতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে,,
এমন চাঁদপনা মুখশ্রীতে গ্রহণ যেনো না লাগে।
তবে হ্যা আমি কিন্তু আমার স্বার্থ ছাড়তে পারবো না।আমি আমার দিক থেকে আর তুমি তোমার দিক থেকে লড়াই চালিয়ে যাবো দেখি কে জিতে?হাসছে তিতলি ।

না গো তিতলি দি লড়াইয়ে যা ক্ষোয়া যায় তাতো আর ফিরে আসে না।আমি কোন দ্বন্দ্ব চাই না।যা আমার তা আমারি থাকবে।ছিনিয়ে ক্যানো নেবো?

অত সহজ না বুঝলে?সেই কলেজ থেকে পরে আছি ওর পেছনে। নিজে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ফ্যাশন ডিজাইনিং এ। তারপরেও ক্ষান্ত হইনি ,মা বাবার একমাত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও সব ছেড়ে ছুড়ে চলে গিয়েছিলাম প্যারিসে। কিন্তু কি বলবো তোমার বরটা এমন জিনিস ওটা বাগে আনতে পারিনি। তাইবলে আশা ছাড়িনি কিন্তু। শব্দ করে হাসে তিতলি সাথে যোগ দেয় রিতি,,

আচ্ছা ঠিক আছে আশায় বেঁধে রাখো হিয়া।এখন খেতে চলো নাহলে বৌদিদি এসে বেঁধে নিয়ে যাবে।

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষে ঘড়ের দরজা এটে বসেছে রিতি। আলমারিতে রাখা ল্যাপটপটা সন্তর্পণে বের করে বিছানার উপর রাখলো।সুমির আনা খাতাপত্তর গুলো গুছিয়ে নিয়ে বসলো আর কাজ সেরে তবেই উঠবে।অনেক কাজ জমে আছে তিন দিনের মধ্যে নতুন মাল গুলো ডেলিভারী দিতে হবে।আজ প্রদীপকে বলেছে নতুন লোক লাগাতে। প্রদীপ একটু আগে ফোনে কনফার্ম করেছে নতুন পঁচিশ জনের মতো নারী পুরুষ দুই জায়গায় কাজ করবে পূজা চলাকালীন সময়েও।
বসার ঘড়ের দেওয়াল ঘড়িতে রাত একটার ঘন্টা বাজলো।রিতি সব কিছু গুছিয়ে রেখে ছুটে গেলো কিচেনে।
কিছুক্ষণ পর,,
গরম ধোঁয়া উঠা কফির মগ হাতে বিরূপাক্ষের দরজায় টোকা দিতেই,ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,দরজা খোলাই আছে।কথা শুনে মনে হলো যেনো ভেতরের মানুষটা দিনদুনিয়া ভুলে এই টোকা পরার শব্দটা শোনার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো।
আলতো করে ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়,রিতি অপলক দেখতে থাকে অনতিদূরে পেছন ফিরে বসে থাকা মানুষটার পৃষ্ঠদেশ। চুলগুলো বেশ বড়ো বড়ো হয়তো এমন করেই রাখে কালো পাতলা টাইট টিশার্ট ভেদ করে মাংস পেশি যেনো বেড়িয়ে আসছে।সামনে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে মনোযোগ সহকারে।রিতি এগিয়ে গিয়ে কফির মগটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,, আপনার কফি।বলেই হাঁটা শুরু করে। গত রাতের মতো আজো ডাক আসে পেছন থেকে।কিন্তু স্বরে পরিবর্তন আছে অনেক,,এই শোন!

রিতি দাঁড়াতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো বিরূপাক্ষ,,,
কে দিয়েছে এই দায়িত্ব তোকে? প্রতিদিন আমাকে কফি দেওয়ার জন্য রাত জেগে থাকিস ক্যানো?তাও অসুস্থ শরীরে? আমার জন্য কেউ অসুবিধায় পরুক আমি চাই না।এসবের দরকার নেই আর।

আপনি চিন্তা করবেন না।আমি এমনিতেই এতরাত অব্দি জেগেই থাকি।তাও নিজের জন্য আপনার জন্য নয়।রিতির কথার উষ্মা গায়ে লাগে বিরূপাক্ষের খটখটে কন্ঠে বলে ওঠে,,কি বলছিলি বিকালে,,আমারা তোকে না খাইয়ে রেখে শুকিয়ে ফেলছি?আছিস তো হাড় আর চামড়ার পাতাবাহারী ,এর আবার শুকাবে কোথায়?রিতির সত্যিই মেজাজ খারাপ হয়। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,অন্যের ঘড়ে আড়িপাতা কোনো ভদ্রলোকের কাজ নয়।আর আড়িপেতে শোনা কথাগুলো অন্যের কাছে ডাল পালা ছড়িয়ে বানিয়ে বলা আরো বড়ো অভদ্রতা।

বিরূপাক্ষ ক্রুব্ধ হয়,,
এই মুখ সামলে কথা বল।আমি অভদ্র?

আপনিও আমার সাথে তুই তুকারি করবেন না।ওটা আমার একান্ত কাছের এবং আপন জনের সম্মোধন।সবার নয়। শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে বললো রিতি।

ওহ্ আমাকে তাহলে তাদের লিষ্টে রাখিস না? চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলে বিরূপাক্ষ।

স্বপ্নেও না।দৃঢ় উত্তর রিতির।

এমন স্পষ্ট প্রত্যাখানে আপাদমস্তক রাগে জলে ওঠে বিরূপাক্ষের।তবে কি সে মনের কোথাও এখনো রিতির প্রতি অধিকারবোধ রাখে?হুট করে রিতির ডানহাতটা চেপে ধরে,,
এই তোর ভয় নেই?আমার ঘড়ে সেধে এসে আমাকেই অপমান করছিস?কি ভেবেছিস এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?রিতি বিরূপাক্ষের দৃষ্টির সম্মুখে নিজের অগ্নিদৃষ্টি বর্ষন করে শান্ত স্বরে বলে,রাত দুপুরে একজন অনাত্মীয় নারীর হাত চেপে ধরা কোনো ভদ্রলোকের কাজ বলে কি মনে হয় আপনার?
কি বললি তুই আমার অনাত্মীয় নারী?

বিয়ে করে যাকে কখনো স্ত্রী বলে স্বীকারই করেন নি তার সাথে আপনার সম্পর্কটা কি তবে? নিজের মনের কাছে জিজ্ঞেস করুন উত্তর টা পেয়ে যাবেন। আমাকেও জানাবেন আপনার মনের উত্তরটা।
থমকে যায় বিরূপাক্ষের পৃথিবী, এত এত অপমান? কিসের এত অহংকার কিসের?

চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here