হিয়ার মাঝে লুকোচুরি ৩য় পর্ব

0
2599

হিয়ার মাঝে লুকোচুরি
৩য় পর্ব
Musfikun Nesa Tanjin

দিন যেতে লাগলো, নীশির চান্স কুয়েটে হলো না। এটা নিয়ে নীশি যতটা ব্যথিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি ব্যথিত নীরব। তার খুবই খারাপ লাগছে তার স্বপ্নে পানি পরে গেছে,উপরের টেনশন অন্য। এতোদিন যাকে সুরক্ষা বলয়ে রেখেছে সে আজ উম্মুক্ত। ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে নীশি। নীশির ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে।

নীরব ৩য় বর্ষে, রোজার ছুটিতে বাড়ি এসেছে।একদিন নীশিদের বাড়িতে যেয়ে আক্কেল গুড়ুম নীরবের। নীশির সব বন্ধুরা এসেছে কিন্তু কোন মেয়ে বন্ধু নেই। নীরব আশ্চর্য একটাও কি নীশির মেয়ে ফ্রেন্ড নেই?
৫ জনের ৫ জন ছেলে। নীরব কিছু না বলেই বাড়ি চলে এলো। রাগে গা গিজগিজ করছে। ইচ্ছে করছে থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিতে। এতোদিন যত্নে রেখেছে আর মেয়ে এখন ছুট,ডানা গজিয়েছে। পরের দিন বিকেলে নীরব ছাদে দাড়িয়ে আসে,হুট করে নীশির আগমন দেখে নিজেকে সামলে নিল । ওর উপর রাগটা এখনো আছে। নিজ থেকে কথা বললো;
– তোর কি কোন মেয়ে বন্ধু নেই নাকি! শুধু ছেলে বন্ধুই কেনো তোর?
– কেন এই প্রশ্ন!! থাকবে না কেন? আছে। কিন্তু এরা আমার ভালো বন্ধু।
– এতো ছেলেদের সাথে না মিশে মেয়েদের সাথে তো মিশতে পারিস।
– বড় ভাই হিসেবে তোমার টেনশন আমি বুঝছি, কিন্তু তুমি টেনশন নিয়ো না।
– কিসের বড় ভাই!! ছেলেদের সাথে তোর এই ঢলাঢলি দেখতে খারাপ লাগে। তাই আমি কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। আগে তো খালি আমার সাথে করতি এখন তো দেখি সবার সাথে করিস।
– নীরব ভাইয়া মুখ সামলে কথা বল। ঢলাঢলি আবার কি কথা, তোমার কাছে যদি এই বন্ধুত্বটা এতো বাজে মনে হয় তাহলে আমার ধারণা তোমার মেন্টালিটি অনেক নিচ।

নীশি একমুহূর্ত না দাড়িয়ে বাসায় চলে যায়। নীরব রাগের মাথায় নীশিকে এভাবে হার্ট করবে বুঝতে পারে নি। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। বারবার বারবার ক্ষমা চাইতে গিয়েছিল কিন্তু নীশি তার সাথে কোনো ভাবেই কথা বলেনি।

দিন যেতে থাকে, নীরব পাশ করেছে। বাসায় চলে এসেছে, চাকরির খোঁজ করছে। নীশিকে নিয়ে ভাবছে না এখন আর। নীশি তার মতই দিন কাটাচ্ছে। কিছু মাস পর দুইটা চাকরির অফার পেয়েছে নীরব। একটি ঢাকায় আর একটি সিলেট। টেনশন কম,নীশির সাথে ম্যাটারটা সলভ করা দরকার। একদিন শালা সাহেবের সাথে প্লান করে ছাদে নীশিকে ডাকায় যাতে কথা বলতে পারে। নীশির তো রাগ হচ্ছে, এই লোকের কোন কাজ এখন? আবার ডাকছে নিশ্চয়ই আবার অপমান করতে।

– সরি, আর কত বার ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করবি??( নীরব)
-….(নীশি)
– আচ্ছা নরমাল ইস্যুকে কেন টানতেছিস?(নীরব)
– আমি টানতেছি? আর কোনো কথা বলছি না মানে এই না তুমি যা খুশি তাই বলবে? তুমি কি ভাবো আমি ছেলে দেখলেই ঢলাঢলি করি?? কি ভাবো নিজেকে? ছোট বেলায় তুমি আমার একমাত্র বন্ধু ছিলে, হ্যা আমি একটা মরিচীকার পেছনে দৌড়েছি, আমার ইমম্যাচুয়ারিটি ছিল ওটা। তোমাকে হারাতে চাই নি এটাই আমার দোষ ছিল,তোমার প্রতি আমার দুর্বলতাকে তুমি এত বাজে ভাবে ডিফাইন করেছো।
– আমার ভুল ছিল আমি সেভাবে বলতে চাই নি। আমায় ক্ষমা করে দে,প্লিজ।
– তোমার সাথে আমি কোনো কথাই বলতে চাই না,আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না।
– তুই বুঝে বলছিস?
– হ্যা, তোমাকে আমার অসহ্য লাগে।
কাদতে কাদতে নীশি দৌড়ে বাসায় চলে যায়। নীরব ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভালোবাসা ওকে সহ্য করতে পারছে না এর থেকে খারাপ কি হতে পারে? নীরব সিলেটের চাকরিটা করবে বলে ডিসিশন নেয়। কারন এখানে থেকে কি লাভ,নীশির ভুল ভাঙ্গাতে পারবে না। এর থেকে বেটার ওর কাছ থেকে দূরে যাওয়াটাই।

ছ মাস হয়ে গেছে, নীরব সিলেটে ওর এক বন্ধুর সাথে মেসে থাকে। ছ মাসে, বাসায় যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, আর নীশির কথা জানতে চায় না,থাক না ও ওর মত। একদিন হুট করে ফোন আসলো অনেকবার। নীরব কাজের ব্যস্ততায় ধরে নাই। রাতে ঘরে এসে ফোন চেক করে দেখে নীশির ফোন, ১৯ টা মিস কল। একটা মেসেজ দিয়েছে, মেসেজ টা অপেন করে দেখে,
– নীর আমার কাল বিয়ে, যদি ভালোবাসো ফিরে আসো।
মেসেজটা পরে মাথা ঘুরাচ্ছে নীরবের। কেমনে কি হলো,বাবা-মা না হয় জানায় নি কিন্তু মামুনি বা কাকুন কেউ কি একবার বলতে পারতো না আর কার সাথে নীশির বিয়ে? কি করবে বুঝতেছে না।
– কি রে এমনে খিঁজতি খাইয়া আসোস ক্যা?( সিয়াম,নীরবের বন্ধু)
– আমার বউ এর বিয়ে, কি করাম আমি?
– হ্যা?? তোর বউ কি সেকেন্ড বিয়ে করতাছে? আর তোর বিয়ে কবে হইলো?
সিয়ামকে সব বলে নীরব। সিয়াম অনেকক্ষন ভেবে বলে,
– তুই এখানে খিঁজতি খাইয়া বইয়ে থাকলে তোর বউয়ের বিয়া হইয়ে যাইবো,তারপর তোর বউয়ের বাচ্চারা তোরে মামা মামা কইয়া ডাকবো। এখন রওনা দিলে কাল সকালের মধ্যে পৌছাইয়া যাবো। এই রাত্রে টিকেট পাওয়া যাইবো না। আমার বাইক আছে চল বের হই।
নীরবের মনে হচ্ছিলো সিয়াম যেন কোনো ফেরেস্তা। জরিয়ে ধরলো ওকে। তারপর বেরিয়ে পড়লো বাসার উদ্দেশ্যে।

রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে বাইক উল্টে পড়লো, তারপর খুব কষ্টে উঠিয়ে আবার বাইক চালালো সিয়াম। হাতে, পায়ে ব্যথা আর সারাগায়ে কাদা দিয়ে পৌছালো বাসায় সিয়াম আর নীরব। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সারাবাড়ি সুন্দর করে সাজানো। দেখতে খুবি চমৎকার লাগছে।
দৌড়ে ভেতরে গেলো নীরব। নীশিদের বাসায় অনেক মেহমান তারমানে বিয়ে এখনো হয় নি। সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তার মাঝে ওর বাবা- মা ও। কিভাবে শুরু করবে বুঝে উঠছে না। শেষমেশ না পেরে হাটু গেরে বসে গেলো নীরব। সবার সামনে কেদে দিল আর বলতে লাগলো,
– আমার নীশুকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না, ভালোবাসি আমি ওকে। ওকে ছাড়া আমি পারবো না থাকতে, পারবো না।

সবাই যেন নাটক দেখছে। অনেকক্ষন চুপ করে থেকে হেসে উঠলো সবাই। নীরব ভাবলো ওকে কি পাগলের মতো লাগছে,নাকি কাদা মেখে আছে আর কাদছে বলে সবাই হাসছে। অনেকক্ষন পর বুঝলো, আসলে বিয়েটা ওরি সাথে। এই ফাযিল মেয়ে ওকে বোকা বানাইছে।

এক কোনায় নীশি দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে।
– এসব কি?
– কি আবার বিয়ে, তোমার আমার।
– তুই না আমাকে সহ্য করতে পারিস না। তাহলে?
– কি করবো বল, জ্যাঠুমনির তোমাকে নিয়ে টেনশনের শেষ নেই,তুমি নাকি বনবাসে আছো। তাই আমাকে বিয়ে করলে নাকি হিল্লে হবে তোমার।
– তা এভাবে দৌড় কেন করালি?
– শাস্তি দিলাম, আমাকে কাদানোর,ইগনোর করার, আর বাজে কথা বলার।
– তা শোধ তুলা শেষ?
– হু
– এবার আমি তুলবো, দেখ এবার সারাজীবন কেমনে শোধ তুলি।
বলেই নীশিকে হ্যাচকা টানে জরিয়ে ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্ত করে নিলো নীরব। এভাবেই চলতে থাকলো ওদের হিয়ার মাঝের লুকোচুরি।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here