হৃদমাঝারে,পঞ্চম_পর্ব

0
608

#হৃদমাঝারে,পঞ্চম_পর্ব
#দেবারতি_ধাড়া

ক্যাফে থেকে ফিরে পৌলমীদের ক্লাসে আসতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিলো আয়ানের। তাই ও ক্লাসরুমে এসে প্রেজেন্ট করে কিছুক্ষণ ক্লাস করিয়েই চলে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই পৌলমী আয়ানের পিছন পিছন দৌড়ে এসে ওকে ডেকে বললো,

-স্যার? একটু শুনবেন?
-হ্যাঁ পৌলমী, বলো তুমি কিছু বলবে?
-স্যার আমি আসলে এই ম্যাথস গুলো সলভ করেছিলাম। আপনি যদি একটু চেক করে দেন তাহলে খুব ভালো হয়! আমি বুঝতে পারছি না এগুলো ঠিক আছে কিনা!
-আচ্ছা তুমি একটা কাজ করো, তুমি বরং কাল আমাকে দিয়ে ম্যাথস গুলো চেক করিয়ে নিও, কেমন? এখন তো ছুটিই হয়ে গেছে। সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে।
-কিন্তু স্যার..

পৌলমীকে কথাটা বলেই এগিয়ে গিয়েছিলো আয়ান। তাই পৌলমী কী বলতে চাইছিলো সেটা আর শোনা হলো না ওর। পৌলমী খাতাটা হাতে নিয়ে ক্লাসে ফিরে গিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।

আজ রবিবার। তাই জিয়া আর আয়ান ওই ক্যাফেটায় আয়ানের পছন্দের ব্ল্যাক কফি খেতে এসেছে।
-কী? কেমন লাগলো আমার পছন্দের ব্ল্যাক কফি?
-নট ব্যাড! বাট আমার পছন্দের মাটির ভাঁড়ে গরম গরম দুধ চায়ের মতো টেস্ট কিন্তু আপনার এই এসি ক্যাফের দামী ব্ল্যাক কফিতে পাওয়া যায় না!
-হ্যাঁ সেটা আপনি ঠিকই বলেছেন। তাই আমিও প্রেমে পড়ে গেছি…
-হোয়াট? কী বললেন আপনি? আপনিও প্রেমে পড়তে পারেন?

হো হো করে জোরে হেসে উঠলো জিয়া। জিয়াকে এভাবে হাসতে দেখে আয়ান বললো,

-একী আপনি এভাবে হাসছেন যে? আমি প্রেমে পড়ে গেছি আপনার পছন্দের রাস্তার ধারের দোকানের মাটির ভাঁড়ে গরম গরম দুধ চায়ের। আপনি তো তখন আমার কথাটাই পুরো শেষ করতে দিলেন না!
-ওহ তাই বলুন! আমি তো ভাবলাম আপনি এখানের কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছেন বোধহয়। তাকে দেখেই কথাটা বললেন! তা না করে আপনি চায়ের প্রেমে পড়ার কথা বলবেন সেটা আমি কী করে বুঝবো?
-কিন্তু আপনি ওভাবে হাসলেন কেন? আমি কী প্রেমে পড়তে পারি না নাকি?
-আপনাকে দেখলেই তো রাম গরুরের ছানা মনে হয়। আপনার মতো একজন রাগী, গম্ভীর ম্যাথ্স টিচারও প্রেমে পড়তে পারে?! সেটা শুনেই তো আমার হাসি পেয়ে গেলো!
-আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি কতো প্রেম করেছেন।
-এটাকে প্রেম বলে কিনা ঠিক জানি না। তবে যদি প্রেমই বলে থাকে, তাহলে হ্যাঁ করেছি তো! আমি অগুনতি প্রেম করেছি। কলকাতায় আমার কতো গুলো বয়ফ্রেন্ড ছিলো জানেন? এভরি সানডে এক একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং-এ যেতাম, রেস্টুরেন্টে খেতে যেতাম, ঘুরতে যেতাম। এখানেও মানে এই শিলিগুড়িতেই কতো গুলো প্রেম করেছি প্রথম দু’বছর!
-আর এখন?
-এখন? এখন তো আমি পিওর সিঙ্গেল! এখন আর কারোর সাথে ডেট করতে ভালো লাগে না! আর সময়ও পাই না কাজের চাপে। এখন আমার একটাই প্রেম, একটাই ভালোবাসা, সেটা হলো আমার ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফিই আমার একমাত্র ভালোবাসা। সারা সপ্তাহ কাজের পরে যে একটা দিন সময় পাই, সেই দিন গুলো আমি শুধু আমার ফটোগ্রাফি করাতেই দিই। আর আমি সারাজীবন এমন সিঙ্গেলই থাকতে চাই। আর অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করতে চাই…
-তারমানে? আপনি কী তাহলে কোনো দিন বিয়ে..

আয়ানকে থামিয়ে দিয়ে জিয়া বললো,

-মাথা খারাপ নাকি? ওসব বিয়ের চক্করে আমি কোনো দিন জড়াবোই না! আমার দ্বারা ওই বরের, তারপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের সেবা যত্ন করা হবে না!
-আর আপনার বাবা-মা যদি বিয়ের জন্য জোর করেন?
-না না, ওসব করবে না আমার বাবা-মা!

ঠিক তখনই জিয়ার ফোনটা বেজে ওঠাতে, ফোনটা রিসিভ করে ও বললো,

-হ্যালো! হ্যাঁ আমিই বলছি বলুন? সিলেক্ট হয়েছে? ওহ মাই গড! অ্যাম রিয়েলি গ্রেটফুল ফর দিস অপারচুনিটি! হ্যাঁ কবে হবে বললেন? ওকে ওকে, থ্যাংকস, থ্যাংকস আ লট! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি অবশ্যই আসবো সেদিন। অ্যান্ড থ্যাংকস এগেইন!

ফোনটা কেটে টেবিলে রাখার পর জিয়া বললো,

-হ্যাঁ মিস্টার প্রফেসর বলুন? কী যেন একটা বলছিলেন আপনি?
-সেসব কথা নাহয় এখন থাক জিয়া। কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এই ফোনটা পেয়ে আপনি খুব খুশি হয়েছেন? কার ফোন ছিলো?
-অ্যাকচুয়ালি আমি আমার তোলা কয়েকটা ছবি একটা ইন্টারন্যাশানাল ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনে মেইল করেছিলাম। সো এখন ওখান কল করে বললেন আমার তোলা ছবি গুলো নাকি সিলেক্ট হয়েছে। সেগুলোকে ওই এক্সিবিশনে প্লেস দেওয়া হবে। আমি সত্যিই ওনাদের কাছে ভীষণ গ্রেটফুল! আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে না, সেটা আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না!
-ওয়াও! দ্যাটস গ্রেট জিয়া। কংগ্র‍্যাচুলেশন্স! আমি কী আপনার ওই এক্সিবিশনে একজন অডিয়েন্সের স্থান পেতে পারি?
-ওহ! অফকোর্স! নিশ্চয়ই আসতে পারেন আপনি…
-কিন্তু আপনার এক্সিবিশনটা কবে কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
-সেটা ওখান থেকে আমাকে কল করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেছে। আর আমি জানতে পারলে আপনাকেও জানিয়ে দেবো। কিন্তু আপনার নাম্বারটাই তো নেই আমার কাছে!
-নেই তো কী হয়েছে? দিয়ে দিচ্ছি এখনই!
-হ্যাঁ বলুন তো?

আয়ান নাম্বারটা বলার পর জিয়া একবার ডায়াল করলো সেটা। আয়ান নিজের ফোনে জিয়ার নাম্বারটা সেভ করে নিলো ঠিকই, কিন্তু নাম্বারটা সেভ করতে গিয়ে জিয়া বললো,

-এই আপনার নামটাই তো জানা হয়নি! সেই প্রথম দিন থেকেই মিস্টার প্রফেসর আর নয়তো প্রফেসর বলে ডাকছি। আপনার আসল নামটা কী বলুনতো?
-আমার নাম আয়ান, আয়ান রায় চৌধুরী। তবে আপনার মুখে কিন্তু প্রফেসর বাবুটাই শুনতে বেশি ভালো লাগে। তবে আপনি আমাকে আপনার ইচ্ছে মতো নামেই ডাকতে পারেন।

আয়ানের কথা গুলো জিয়ার কানে ঢুকলো না। ও তখন নাম্বারটা সেভ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অনেক ভেবে চিন্তে জিয়া আয়ানের নাম্বারটা সেভ করলো প্রফেসর বাবু দিয়েই।

ক্যাফে থেকে বেরোনোর সময় জিয়া আয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

-এই আপনি বাড়ি ফিরবেন কীসে করে?
-দেখি! ও আমি ঠিক চলে যাবো যাইহোক একটা কিছুতে করে। কোনো ক্যাব নিয়ে নেবো নাহয়। আপনি বেরিয়ে যান, আর রাত করবেন না!
-এখন রাত কোথায়? সবে তো সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে!
-শিলিগুড়িতে এটাই অনেক রাত। দেখছেন না, এখনই রাস্তাঘাট কেমন ফাঁকা ফাঁকা আর শুনশান হয়ে গেছে।
-ও আমার অভ্যাস আছে! আমি এক একদিন কতো রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকি জানেন? যতোক্ষণ আমার এই স্কুটি ডিয়ার আমার সাথে থাকবে, ততোক্ষণ আমি সেফ থাকবো। আপনি চাইলে আমি আপনাকে বাড়িতেও ছেড়ে আসতে পারি!
-না না, তার কোনো দরকার নেই। আমি একা যেতে পারবো! আপনি বেরিয়ে যান প্লিজ…
-ভয় পাচ্ছেন নাকি? ভাবছেন যদি আপনাকে স্কুটি থেকে ফেলে দিই তাইতো?
-সেটা নয়!
-তাহলে লজ্জা?
-না, সেটাও নয়!
-তাহলে চুপচাপ আমার স্কুটিতে উঠে আসুন। আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি। আসুন আসুন, বসে পড়ুন তাড়াতাড়ি!

রাতে ডিনার করে শুতে যাওয়ার সময় একটা টুং করে ফোনের যান্ত্রিক শব্দ জানান দিলো জিয়ার ফোনে একটা মেসেজ ঢুকলো। চশমাটা টেবিলের একপাশে খুলে রেখে ফোনটা হাতে তুলে নিলো জিয়া। তারপর ইনবক্সটা খুলে দেখলো আয়ানের একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে, “কী ব্যাপার? আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে আপনার যে আমাকে জানানোর কথা ছিলো, কই জানালেন না তো? এতোক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন! তাই আর কল করে ডিস্টার্ব করছি না। শুধু একটা টেক্সটই করলাম… বাই, গুড নাইট!”

মেসেজটা পড়ার সাথে সাথেই জিয়া রিপ্লাই করলো, “হুম.. গুড নাইট!” সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো,

-একী! আপনি এখনও জেগে? আমি তো ভাবলাম আপনি ঘুমিয়েই পড়েছেন হয়তো!
-না! আমি এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাই না।
-তাহলে কী করেন?
-রুমমেটের সাথে গল্প করি।
-আজ করছেন না?
-না! আজ ও নিজের বাড়ি গেছে, তাই আমি একা একা আর কার সাথে কথা বলবো?
-আমি কী তাহলে আপনাকে কল করতে পারি? আই মিন এখন কী কল পসিবল?
-হুম!

সাথে সাথেই জিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। জিয়া কলটা রিসিভ করে বললো,

-বলুন? হঠাৎ কল করবেন বললেন?
-অন্য দিন আপনি আপনার রুমমেটের সাথে গল্প করেন, আর আজ উনি নেই বললেন, তাই আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য কল করলাম এই আর কী। আর এমনিতে অনেক আগেই কল করতাম আপনার বাড়ি ফিরতে কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য, কিন্তু আপনার রুমমেট আছেন, উনি কী ভাববেন সেসব ভেবে আর কল করিনি। যদি আপনি খারাপ ভাবেন!
-এই শুনুন! আমি এতো ফর্মালিটি করে কথা বলতে পারি না। আর কেউ আমার সাথে ফর্মালিটি করে কথা বললে সেটাও আমার কেমন একটা অড লাগে! আমি ঠিক ফ্রি হতে পারি না। এতো ঢং করেন কেন আপনি? আর আপনি আমাকে কল করলে আমার রুমমেট কিছু ভাবতেই বা যাবে কেন?
-আচ্ছা আচ্ছা। আর বলবো না এরকম। সরি সরি! আচ্ছা জিয়া, আপনি কী সোস্যাল মিডিয়াতে নেই?
-না আমি সেভাবে সোস্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ থাকি না। আমার প্রোফাইলটা ডিঅ্যাক্টিভেট করা আছে। আমার শুধু একটা পেজ আছে, সেটাতেই আমি মাঝে মাঝে অ্যাক্টিভ হই। আমার ফটোগ্রাফির পেজ।
-কী নাম আপনার পেজের?
-জিয়া’স ফটোগ্রাফি।

জিয়ার সাথে কথা বলতে বলতেই ফেইসবুকে জিয়ার পেজের নামটা সার্চ করলো আয়ান। বেশ অনেক গুলো পেজের মধ্যে থেকে ও খুঁজে বের করলো জিয়ার পেজটা। পেজের ডিপিতে আছে ডিএসএলআর ক্যামেরা হাতে নিয়ে ক্যামেরার লেন্সে চোখ রাখা জিয়ারই একটা সুন্দর ছবি। খেয়ালবশত নিজের অজান্তেই ছবিটায় লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে ফেললো আয়ান। তারপর আয়ান ফোটোস-এ গিয়ে বাকি সব ছবি গুলোও দেখতে শুরু করলো একে একে। আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে জিয়া বললো,

-কী হলো আপনি চুপ করে আছেন যে?
-কই না তো! আপনি বলুন না?
-আপনি কী করছেন বলুন তো?! এই শুনুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে! আমি এবার ঘুমাই। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। রাখছি, বাই, গুড নাইট!
-আরে বাবা গুড নাইটটা বলার জন্য আমাকে একটু তো সময় দিন! আর আপনি তো দেখছি বেশ ভালোই ফেমাস ফটোগ্রাফার। চল্লিশ হাজার ফলোয়ার্স আপনার। এবার তো দেখছি আপনার থেকে অটোগ্রাফটা নিয়ে রাখতে হবে! কোনদিন হয়তো আবার আপনার পাত্তাই পাবো না!
-ধুর! এই এতো ফ্যান ফলোয়ার্স থেকে কী হবে দিনের শেষে যদি তাদের পাশেই না পাই? আমার যতোই ফ্যান ফলোয়ার্স থাকুক না কেন, দিনের শেষে তো আমি শুধু আমার পরিবারের কাছের মানুষদেরই পাশে পাই, আর চাইও। তাই অনেক ফলোয়ার্স আছে বলে নিজেকে মহান কিছু ভাবতে হবে, এমন মানসিকতার মানুষ আমি নই। আর এমন কাউকে আমি পছন্দও করি না! যাইহোক আমি হয়তো আপনাকে অনেক জ্ঞানের জ্ঞানের কথা বলে ফেললাম! বাই দা ওয়ে গুড নাইট!

আয়ানের গুড নাইট শোনার অপেক্ষা না করেই কলটা কট করে কেটে দিলো জিয়া। ইয়ারফোনের যান্ত্রিক শব্দে আয়ান বুঝতে পারলো জিয়া কলটা কেটে দিয়েছে। জিয়ার পেজের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। পেজের সব ছবি গুলো দেখার পর আয়ান বিছানা থেকে নেমে ঘরের বড়ো আলোটা নিভিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।

কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। ওদের কথোপকথনটা এখন আপনি থেকে তুমিতে উন্নীত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কখনও না কখনও ওদের কথা হয় ফোনে। ভালোই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে ওদের মধ্যে। আজ জিয়ার ফটোগ্রাফির এক্সিবিশনটা অনুষ্ঠিত হবে, শিলিগুড়িরই একটা এক্সিবিশন হলে। তাই সেখানে জিয়ার সাথে আয়ানও এসেছে। অনেক বড়ো-বড়ো, নাম করা এবং বিশিষ্ট বিশিষ্ট ফটোগ্রাফারদের ছবির সাথে জিয়ার তোলাও অনেক গুলো ছবি টাঙানো হয়েছে দেওয়ালে। বহু ব্যক্তি সেগুলোকে দেখার জন্য এখানে এসেছে। এই বছরের সেরা ফটোগ্রাফারের অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য জিয়া সেনকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হলো। সাথে সার্টিফিকেট, মেমেন্টো, ফুলের বুকেসহ আরও অনেক উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হলো জিয়াকে। জিয়া যখন সব উপহার গুলো নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসে আয়ানের পাশে বসলো, তখন আয়ান বললো,

-কংগ্র‍্যাটস জিয়া! সত্যিই তুমি এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। তোমার ফটোগ্রাফি গুলো যেকোনো ভালো ভালো ফটোগ্রাফারকেও হার মানাতে বাধ্য। অনেক নামিদামী ফটোগ্রাফারের থেকে তোমার ফটোগ্রাফি গুলো কিন্তু কোনো অংশে কম নয়!
-থ্যাংকস প্রফেসর সাহেব! তবে এতোটাও কমপ্লিন্টের যোগ্য কিন্তু আমি নই!
-হ্যাঁ তুমি যোগ্য…
-বললাম তো না!
-আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে। এখানে আর ঝগড়া করতে হবে না! এখানকার লোকজনেরা কী বলবে?! এখানে তো একটু ঝগড়া করাটা বন্ধ করো তুমি!

আয়ানের কথা শুনে হেসে ফেললো জিয়া। তারপর ও চুপ করে গেলো। অনুষ্ঠান শেষ হতে ওরা হলের বাইরে গাড়ি পার্কিং-এর জায়গায় এলো। জিয়া আয়ানের হাতে ওর গিফ্ট ভর্তি ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে স্কুটিটা বের করে নিয়ে এসে ওটাতে উঠতে গেলো। আয়ান এগিয়ে গিয়ে বললো,

-তুমি আজ পিছনের সিটে বসো। আমি চালাচ্ছি…
-তুমি স্কুটি চালাতে পারো?
-হ্যাঁ, না পারার কী আছে?
-তাহলে এতোদিন বলোনি কেন? এতোদিন কেন আমার পিছনে বসে ঘুরেছো?
-আমার ভালোলাগে তাই!
-মানে?
-মানে আমার চালানোর থেকে পিছনে বসতেই বেশি ভালো লাগে!
-ওহ, তাহলে আজ কেন চালাবে বলছো?
-আজ তুমি এতো বড়ো একটা অ্যাওয়ার্ড পেলে, তারপর যদি আমি তোমার স্কুটির পিছনে বসে যাই, সেটা কেমন দেখায় না?
-বাবাহ! ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো নাকি? আমি কিন্তু এতো সহজে ইমপ্রেসড হবো না!
-তুমি সবসময় সবার মুখের ওপর এভাবে এসব কথা বলো কীভাবে?
-আমার এটাই ভালো লাগে! ওই লুকিয়ে-চুরিয়ে, লোকের পিছনে কথা বলা আমার একদম পোষায় না ভাই!
-ভাই? আমি তোমার ভাই?
-আমি আমার সব বন্ধুদেরই ভাই বলি। তুমিও তো আমার বন্ধুই হয়ে গেছো এখন। তবে হ্যাঁ, তুমি তো আবার কলেজের প্রফেসর! তার ওপর আবার ম্যাথের প্রফেসর! বাবাগো! তোমাকে ভাই বলাটা আমার একদম উচিৎ হবে না! না না, তোমাকে ভাই বলবো না। কোথায় আবার রেগে গিয়ে ম্যাথ সলভ করতে বসিয়ে দেবে আমায়!
-তো কী আছে? সলভ করবে!
-এই তোমার মাথা খারাপ নাকি? আমি আর ম্যাথ? সে তো সাপে-নেউলে সম্পর্ক!
-আচ্ছা আমি ম্যাথ সলভ করার সব সহজ উপায় দেখিয়ে দেবো তোমাকে।

আয়ানের কথা শুনে জিয়া নিজের দুটো হাত জোড়া করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

-থাক প্রফেসর স্যার! আপনি আপনার ওই আপনার ভয়ে ভীত, শান্ত, সুবোধ স্টুডেন্টদেরকেই ভালো করে ম্যাথ শেখাবেন। ওসব ম্যাথ-ট্যাথ আমার মাথার ওপর দিয়ে যাবে।

তারপর স্কুটির পিছনে উঠে বসে বললো,

-নাও এবার স্কুটিটা চালিয়ে আমাকে উদ্ধার করো! দেখো আমাকে যেন আবার ফেলে দিও না!
-নো টেনশন ম্যাডাম! আমি নিজে পড়ে যাবো, কিন্তু আপনাকে কোনোভাবেই পড়তে দেবো না!

ক্রমশ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here