#হৃদমাঝারে
#তৃতীয়_পর্ব
#দেবারতি_ধাড়া
ওখানকার সবার কথামতো খুব ভোরে টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে না বেরোলে নাকি ঠিকমতো সূর্যোদয় দেখা যাবে না। বহুলোক সূর্যোদয় দেখার জন্য ভীড় করে ওখানে। আগে থেকে না পৌঁছে গেলে ওখানে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াও নাকি খুব মুশকিল হবে। আর সূর্যোদয় হওয়াটাও অনেক সময় আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। কখনও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, আবার কখনও অনেক দেরিও হয় সূর্য উদিত হতে। তাই একটু আগেই ওখানে পৌঁছে যেতে হবে। সেই কারণেই জিয়া আর বাকি সবাই ভোরবেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ বেরিয়ে পড়েছিলো হোটেল থেকে। তারপর গাড়িতে উঠে সোজা টাইগার হিলের পথে পাড়ি দিলো ওরা। গাড়ি থেকে নেমে ধীরে ধীরে ওরা উঠে গেলো টাইগার হিলের ওপর। আকাশ অল্প কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় সূর্য দেবের দেখা পাওয়ার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো ওদের। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সূর্য উদিত হতে শুরু করলো। সূর্যের লাল আলোয় আলোকিত হতে শুরু করলো সাদা বরফে আবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হচ্ছে যেন কেউ কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর লাল রং ছড়িয়ে দিয়েছে। অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। একদিকে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা আর অন্যদিকে সূর্যের লাল আভা বিচ্ছুরণ। ওরা যে কোনদিকে দেখবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলো না! সূর্যের সোনালী আভায় চোখ জুড়িয়ে আসছিলো সবার। ধীরে ধীরে সেই সোনালী আভা পরিণত হলো রুপালি আভায়। বরফাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো সবার চোখের সামনে। সূর্যোদয়ের সেই প্রথম ক্ষণ থেকেই একের পর এক ছবি জিয়া বন্দী করলো নিজের ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোনে। তারপরই ও বললো,
-ওয়াও! দারুণ দারুণ! কী ভীষণ সুন্দর লাগলো সূর্যোদয়টা… সত্যি ভাগ্যিস বস্ আমাদের ট্রিপটা স্পনসার করে আমাদের ছুটি ঘোষণা করলেন, তা নাহলে তো এতো সুন্দর আর মনোরম দৃশ্য দেখাই হতো না আমাদের! কী বলো সুলেখাদি? আচ্ছা শোনোনা, আমি একটু ওদিকটা থেকে ফটোগ্রাফি করে আসছি…
কথাটা বলেই জিয়া এগিয়ে পাহাড়ের চূড়ার আর পাহাড়ের নিচের ছোটো ছোটো গ্রাম গুলোর ছবি তুলতে। তখনই সুলেখা অন্য একজন কলিগকে বললো,
-এটা কিন্তু একদম ঠিক বলেছে জিয়া! এই একটা মাত্র জিনিসের জন্য বসকে আমি সাপোর্ট করছি। তা নাহলে উনি সারা বছর যা খাটুনিটাই না খাটান আমাদের!
-আরে তুমি বুঝছো না কেন সুলেখা? বস নিজের স্বার্থেই আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা যদি কাজে মন না দিই, ঠিক মতো কাজ না করি, তাহলে তো ওনার কোম্পানিই লসে রান করবে! সেই জন্যই তো আরও আমাদের একটু ছুটি কাটাতে পাঠালেন। নাহলে ওনার মতো একটা কিপটে মানুষ আমাদের এতো জনের জন্য ট্রিপ স্পনসার করেন?
-এটা কিন্তু তুমি একেবারে ঠিক কথা বলেছো। স্বার্থ ছাড়া উনি এক পা-ও নড়েন না! তবে হ্যাঁ, জিয়ার জন্যই কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে। ও যদি বকিয়ে বকিয়ে বসের মাথা খারাপ না করতো, তাহলে আর আমাদের এই ছুটি কাটানো হতো না!
-যা বলেছো। জিয়া বকতেও পারে বটে!
পাহাড়ের চূড়ার ছবি তুলে জিয়া এগিয়ে এসে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-এই এই তোমরা সবাই মিলে একসাথে এবার দাঁড়াও তোহ! তোমাদের কয়েকটা ছবি তুলি… এই সুলেখাদি তুমি মাঝে দাঁড়াও, তিথি আর দিশা তোমরা সুলেখাদির দুপাশে দাঁড়াও, বুবুনদা আর অংশুদা তোমরা তিথি আর দিশার দুই পাশে দাঁড়াও! তবেই ফ্রেমটা ঠিকঠাক আসবে…
তখনই অংশু বললো,
-আর জিয়া তুমি? তুমি তো আসবে না ছবিতে! আচ্ছা তুমি দাঁড়াও, আমি আগে তোমাদের সবার কয়েকটা ছবি তুলে দিই, তারপর নাহয় আবার তুমি তুলে দিও!
-আরে বাবা অংশুদা তুমি দাঁড়াও। আমি ছবি গুলো তাড়াতাড়ি তুলে নিই। তারপর আমি ঠিক টাইমার অন করে ক্যামেরা স্ট্যান্ড করে দেবো। তখন সবাই একসাথে ফ্রেমে আসবো। আর ফোনে তো আমাদের সবার সেলফি তোলা হচ্ছেই।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তাই করো…
ওদের সবার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দেওয়ার পরে ক্যামেরাটা একটা জায়গায় টাইমার দিয়ে রেখে জিয়া গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সুলেখার পাশে। তারপরই জিয়ার ক্যামেরায় বন্দী হলো ওদের বেশ কয়েকটা ছবি। তারপর টাইগার হিল থেকে নেমে এসে ওরা একটা দোকানে চা আর বিস্কুট খেয়ে নিয়ে আবারও গাড়িতে উঠে রওনা হলো বাতাসিয়া লুপের উদ্দেশ্যে। বাতাসিয়া লুপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং চমৎকার দৃশ্য, যা দেখার ইচ্ছে অনেকেরই বহু কাঙ্ক্ষিত। হোটেলের ম্যানেজারের কথামতো টাইগার হিলে আকর্ষণীয় সূর্যোদয় দেখার পর এই বাতাসিয়া লুপ ভ্রমণ করা অতি আবশ্যক। বাতাসিয়া লুপে পৌঁছে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি সেলফি এবং ছবি তুলে নিলো সবাই। সাথে ট্রয় ট্রেনেও ভ্রমণ করলো ওরা সকলে মিলে। বাতাসিয়া লুপের ওপর থেকে নিচে তাকালে সমগ্র দার্জিলিং শহরটাকে দেখা যায়। তারপরই ওখানে সুস্বাদু মোমো খেয়ে ওরা ঘুম স্টেশনের পাশ দিয়ে ফিরে গেলো হোটেল স্নো হোয়াইটে।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লো ওরা সবাই। হোটেলে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হতে যায়। অবেলায় লাঞ্চ করার পর বিছানায় একটু শোয়া মাত্রই ওরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। আর জিয়ার মনেও ছিলো না যে, আগের দিন আয়ান ওকে বলেছিলো বিকেলে চায়ের দোকানে চা খেতে যাবে বলে। হোটেলে ফিরে ক্লান্ত হয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো জিয়াও। যখন ওর ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়িতে রাত প্রায় ন’টা বাজতে যায়। ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মায়ের আর বাবার মিলে মোট দশটা মিসড কল। মিসডকল গুলো দেখেই সঙ্গে সঙ্গে মায়ের নাম্বারটা ডায়াল করলো জিয়া। ফোনটা রিসিভ করেই শুক্লাদেবী বললেন,
-কীরে জিয়া? তোর ব্যাপারটা কী রে? হ্যাঁ? কখন থেকে তোর বাবা আর আমি কল করছি তোকে! ফোন তুলছিলিস না কেন তুই?
-সরি মা! আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি।
-সেকীরে? এই অসময়ে ঘুম? শরীর-টরীর খারাপ করলো নাকি তোর?
-উফ্ মা! শরীর খারাপ করবে কেন? আরে আজ সকাল থেকে অনেক জার্নি হয়েছিলো তো, তাই একটু টায়ার্ড ছিলাম। তোমাকে বলেছিলাম না, আজ আমরা টাইগার হিল দেখতে যাবো! জানো মা, কী দারুণ দৃশ্য! তুমি ভাবতে পারবে না! শোনোনা মা, আমি কলকাতায় ফিরে একদিন তোমাদের দার্জিলিংটা ঘুরিয়ে নিয়ে যাবো। তোমাদের খুব ভালো লাগবে দেখো.. আর বাবা কোথায় গো? বাবারও তো কতো গুলো মিসডকল দেখলাম!
-তুই থামলে তবে তো তোর বাবাকে দেবো! তুই তো কথা বলতে শুরু করলে আর থামিসই না! এক নিশ্বাসে সব কথা বলে যাস! এই নে তোর বাবা কথা বলতে চাইছে। বাবাকে দিলাম…
-হ্যালো!
-হ্যাঁ বাবা বলো? কেমন আছো তোমরা? জানো বাবা! দার্জিলিং জায়গাটা সত্যিই দারুণ গো! আমি এতো বছর ধরে দার্জিলিং-এর এতো কাছে থেকেও কোনো দিন দার্জিলিং আসিনি। সত্যিই খুব বড়ো ভুল করেছিলাম! ছোটোবেলার কথা তো আমার কিছু মনেই ছিলো না। ও বাবা কেমন আছো তুমি…?
-ভালো আছি রে মা। তুইও কিন্তু খুব সাবধানে থাকিস.. বিকেল থেকে তুই কল রিসিভ করিসনি বলে খুব চিন্তা হচ্ছিলো রে আমাদের।
-হ্যাঁ বাবা, তোমরাও সাবধানে থেকো কিন্তু! আর আমার জন্য চিন্তা করার কিচ্ছু নেই! আমি ঠিক আছি বাবা…
-হ্যাঁ থাকবো.. কিন্তু তোরা কবে শিলিগুড়ি ফিরবি?
-পরশু দিন.. আচ্ছা বাবা শোনো না, আমাকে আমার কলিগরা ডিনার করার জন্য ডাকছে মনে হয়! আমি এখন রাখছি কেমন? তোমরাও সময়মতো ডিনার করে নিও কিন্তু..
-হ্যাঁ মা, তুইও যা। খেয়ে নে… গুড নাইট!
-গুড নাইট বাবা!
তারপর ডিনার করে সেই যে রাতে ঘুমালো, তারপর এক ঘুমে একদম সকাল। আজ সারাদিন ঘোরার প্ল্যান রয়েছে ওদের। কারণ কাল সকালেই ওরা ফিরে যাবে। তাই ভোরে উঠেই ওরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক অর্থাৎ দার্জিলিং চিড়িয়াখানা এবং হিমালয়ান মাউন্টেরিয়ান ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যে। ফেরার সময় চা বাগান ঘুরে, শপিং করে ফেরার কথা জিয়াদের। আর কাল সকালেই আবার শিলিগুড়ি ফেরার জন্য রওনা হবে ওরা।
হোটেলের নিচে অনেকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছও বসানো রয়েছে। বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে মিলে একদল হয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু আলাপ আলোচনা করার পর এগিয়ে এলো আয়ানের দিকে। তার মধ্যে থেকেই পৌলমী নামে একটা মেয়ে একটু ভয়ে ভয়েই আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-গুড মর্নিং স্যার!
-হুম গুড মর্নিং পৌলমী।
-স্যার সবাই তো এখন চা খাচ্ছে, আর আপনি তো চা খান না, তাহলে কী আপনার জন্য কফি বানাতে বলবো?
-না না তার কোনো দরকার নেই! তুমি এক কাজ করো, ওদিক থেকে বরং এক কাপ চা-ই এনে দাও আমাকে।
-স্যার আপনি চা খাবেন? কিন্তু সব স্যার, ম্যামরা তো বলেন আপনি নাকি কলেজে চা খেতেই চান না। তাও আবার দুধ চা.. তাহলে কী আপনার জন্য ব্ল্যাক টী বানাতে বলবো?
-না না! আমি দুধ চা-ই খাবো। আর তাছাড়া তোমরা কেন আমাকে চা খাওয়ার কথা বলছো? চা দেওয়ার জন্য তো অন্য লোক আছে..
-হ্যাঁ স্যার জানি তো! কিন্তু আপনি কিছু না খেয়ে এখানে বসে আছেন, তাই…
-ওহ আচ্ছা!
পৌলমী আয়ানের সাথে কথা বলা কালীনই অন্য একটি মেয়ে এক কাপ চা নিয়ে আয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-এই নিন স্যার আপনার চা…
-থ্যাংকস! এই তো আমি চা পেয়ে গেছি। যাও পৌলমী তোমরা ওদিকে গিয়ে সব বন্ধুরা মিলে নিজেদের মধ্যে এনজয় করো।
-আচ্ছা স্যার!
যে মেয়েটি চা নিয়ে এসেছিলো তার দিকে একটু রেগে কটমট করে তাকিয়েই পৌলমী দৌড়ে চলে গেলো ওই ছেলেমেয়েদের দলটার দিকে। ওর পিছন পিছনই যে মেয়েটি আয়ানকে চা এনে দিলো, সেই মেয়েটিও এগিয়ে গেলো ওদিকেই। ওকে আসতে দেখেই পৌলমী বললো,
-তুই কেন আয়ান স্যারের চা নিয়ে গেলি? আমি তো স্যারকে জিজ্ঞেস করছিলামই চা খাওয়ার কথা! তুই এতো পাকামো করে আবার চা নিয়ে যেতে গেলি কেন হ্যাঁ?
-তো কী করবো? তোর কথা বলা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো নাকি? স্যার কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার হাতেই চা-টা খেলেন! তুই খুব বলছিলি, যে তুই স্যারকে চা খাওয়াবি!
-চুপ কর তুই! চা খাওয়ার জন্য তো আয়ান স্যারকে আমিই রাজী করালাম নাকি? আগে কখনও চা খেতে দেখেছিস ওনাকে?
ওদের দুজনকে এরকম কথা কাটাকাটি আর ঝগড়াঝাটি করতে দেখে পাশ থেকে একটি ছেলে বলে উঠলো,
-আচ্ছা আচ্ছা! তোরা এবার থাম তো! আয়ান স্যারকে নিয়ে আর কতোদিন তোরা এভাবে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করবি বলতো!
সেটা শুনে পাশ থেকে আরও একটি ছেলে বললো,
-সত্যি তোরা বাবা পারিসও বটে! কী যে আছে ওই আয়ান স্যারের মধ্যে কে জানে, যার জন্য আমাদের মতো এরকম হ্যান্ডসাম ছেলে গুলোর দিকে তাকাসই না! আমাদেরকে তো কোনো পাত্তাই দিস না তোরা! আমরা কী স্যারের থেকে কম হ্যান্ডসাম নাকি হ্যাঁ?
-চুপ কর তোরা! তোরা আয়ান স্যারের নখেরও যোগ্য নোস বুঝলি? আগে ওনার জায়গায় গিয়ে দেখা, তারপর ওনাকে নিয়ে কথা বলতে আসবি! যেমন স্মার্ট, যেমন হ্যান্ডসাম, তেমনই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী উনি। উফ! আমি তো জাস্ট ওনার প্রতি ফিদা…
-আর আমারও তো ক্রাশ উনি! কিন্তু উনি যা গম্ভীর আর রাগী, ওনার সামনে যেতেই আমার ভয় লাগে, আর কথা বলা তো অনেক দূরের কথা! তবে যাই বলিস, ওনার যিনি ওয়াইফ হবেন, সে কিন্তু খুব লাকী হবেন!
-হ্যাঁ তোদেরকে ওই দূর থেকেই দেখতে হবে আয়ান স্যারকে আর ওনার ওয়াইফকে! আমাদের তো খুব অযোগ্য বলছিলিস, তোরা যেন কতো আয়ান স্যারের যোগ্য পাত্রী! আবার আমাদের বলছিলি! একবার যদি আয়ান স্যার এসব জানতে পারেন না, তাহলে তোদের এই কলেজ থেকে একদম তাড়িয়েই দেবেন!
কথা গুলো বলেই ওখানে থাকা সব ছেলে গুলো হো হো করে হেসে উঠলো। ছেলে গুলোকে ওভাবে হাসি-ঠাট্টা করতে দেখে পৌলমী চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড়াতে শুরু করলো ওই ছেলে গুলোকে মারার উদ্দেশ্যে। ছেলে গুলোও পৌলমীর মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াতে লাগলো।
-এই তুই চুপ করবি? মারবো না এমন!
-আমরা ভুলটা কী বলেছি রে পৌলমী? তোরা কী স্যারের যোগ্য নাকি? হা হা হা…
-আবার? আবার এরকম বলছিস? দাঁড়া তোদের দেখাচ্ছি মজা…
ওদের মধ্যে এরকম হৈচৈ, ছোটাছুটি হচ্ছে দেখে আয়ান বলে উঠলো,
-কী হচ্ছেটা কী ওখানে? এতো চিৎকার চেঁচামেচি কীসের? এই পৌলমী তুমি ওদেরকে ওভাবে মারতে যাচ্ছো কেন? কী প্রবলেম তোমার? কী করেছে ওরা?
আয়ানের পুরুষসুলভ গম্ভীর গলায় কথা গুলো শোনা মাত্রই চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়লো পৌলমীসহ ওখানে উপস্থিত সমস্ত ছাত্রছাত্রী। পৌলমী ধীরে ধীরে আয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-কিছু না স্যার.. সরি! আমার ভুল হয়ে গেছে!
-ওহ! আমি তোমাদের আনন্দ, মজা করতে বলেছি ঠিকই, কিন্তু এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি, মারামারি এসব তো করতে বলিনি! নিজেদের মধ্যে হাসিমজা করো, গল্পগুজব করো, খেলাধূলা করো। তাই বলে এতো বড়ো বড়ো ছেলেমেয়েরা ঝগড়া-মারামারি করবে?! তোমরা এখন স্কুলে নয়, কলেজে পড়ো। সেটা কী ভুলে গেছো নাকি?
আয়ানের ধমক শুনে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো পৌলমীর চোখ থেকে। চোখে জল নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ও বললো,
-সরি স্যার! আর কক্ষণো এরকম ভুল হবে না আমার.. আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি!
-ওকে, আর যেন কোনো ঝগড়াঝাটি আর মারামারি করতে না দেখি। যাও! ওদিকে গিয়ে চুপচাপ একটা জায়গায় বসে গল্পগুজব করো, নয়তো এদিক ওদিক ঘোরো সবাই মিলে।
পৌলোমী সম্মতি জানিয়ে ঘাড়টা একটু নেড়ে, মুখ ভাড় করে দৌড়ে চলে গেলো ওখান থেকে। হোটেলের রুমে গিয়ে একা একাই চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে রইলো বহুক্ষণ।
আজ দুপুরে লাঞ্চের পরেই ওরা শিলিগুড়ি ফিরবে। কাল বিকেলে আয়ান গিয়েছিলো ওই চায়ের দোকানটায়। কিন্তু জিয়া ওখানে না আসায় জিয়াকে দেখতে পায়নি আয়ান। তাই ও একা একা আর চা খায়নি। আয়ানসহ বাকি সব প্রফেসররা ছাত্রছাত্রীদেরকে সমস্ত জিনিসপত্র ঠিকমতো গুছিয়ে নিয়ে ভালো করে রুম চেক করে নিতে বললেন। যাতে কোনো জিনিস যেন হোটেলে পড়ে না থাকে। পৌলমী সেই সকাল থেকেই মনমরা হয়ে রয়েছে তখন সবার সামনে আয়ান ওকে জোরে ধমক দিয়ে বকেছিলো বলে। মন খারাপ করেই নিজের সমস্ত জিনিসপত্র আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিলো ও। তখনের পর থেকে কারোর সাথে আর একটা কথাও বলেনি পৌলমী। সবাই সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ভালো করে রুম গুলো চেক করে বাসে গিয়ে উঠে বসলো। বাস ছাড়ার সময় হয়ে যেতেই ড্রাইভার বাসে স্টার্ট দিলেন শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে…
ক্রমশ…