হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ১২)

0
295

#হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ১২)
নুসরাত জাহান লিজা

“মিস করেন মানে? আপনার মতলবটা কী?” নওমী সরোষে বলে উঠল।

মিফতা কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেল ওর এমন প্রতিক্রিয়ায়। এরপর হৃদপিণ্ডের ঢিপঢিপ শব্দকে উপেক্ষা করে বলল,

“আরে বুঝলেন না! আপনি যে পরিমাণ ঝগড়াটে, যখন কথা বলেন, মনে হয় ব্রেইনের মধ্যে বুলডোজার চলে। আপনি আশেপাশে না থাকলে শান্তি শান্তি লাগে। ওই অশান্তি মিস করি আরকি।”

নওমী সরোষে বলে উঠল, “আমি বাচ্চা মেয়ে না। তলে তলে যদি পাল্টি খেয়ে মীরজাফর হওয়ার চেষ্টা করেন, আমি কিন্তু ছাড়ব না!”

“কী মুশকিল, আপনি কি নিজেরে নবাব সিরাজ উদ্ দৌলা ভাবেন নাকি? তাইলে আপনার সাথে মীরজাফরি করতে যাব কোন দুঃখে?”

“আপনার কীসের দুঃখ, সেটা আপনিই ভালো জানেন। আমার সাথে আঁ তা ত করে আমাকেই যদি ধোঁকা দিতে চান, আপনার কপালে…”

মিফতা মনে মনে আওড়াল, “আমার কপালে এমনিতেও ভোগান্তি আছে, ওমনিতেও আছে। আপনি আমার জীবনে এলেও দুর্গতি, না এলেও অপ্রাপ্তি। কোনদিকে যে যাই, আল্লাহ!”

এই কথাটা মুখে বলার জন্য যতটা সাহস সঞ্চিত থাকা প্রয়োজন ততটা মিফতার ভান্ডারে আজ ছিল না বলে বলা হলো না। সে বলল,

“আচ্ছা, এসব থাক নাহয়। সেদিন আপনার প্রিয় জায়গায় নিয়ে গেলেন। ঋণ রাখতে নেই। তাই আমার পছন্দের জায়গায় আপনাকে নিয়ে যেতে চাই।”

“আমার এসব বাহানা দিয়ে লাভ নাই, আপনার সমস্ত ঋণ মওকুফ করা হলো।”

“আপনি মওকুফ করলেই আমি মানবো কেন? আমার মাশাল্লাহ এত্ত বড় কলিজা দিসে আল্লাহ। ভিক্ষা নেব কেন?”

নওমীকে রাজি করাতে বেগ পোহাতে হবে সেটা মিফতা আগে থেকেই জানত। তবে হাল ছাড়ার মানুষ সে নয়। সে চাইছে আরেকটু চেনাশোনা হোক।

“কী আশ্চর্য! আমি বললাম তো, এসবের দরকার নেই। আপনার ভুজুংভাজুং আমি বুঝতে পারতেসি।”

“দেখেন, এত সন্দেহ বাতিক থাকলে তো হয় না, তাই না? আমরা জীবনের পথে কয়েক পা হলেও পাশাপাশি হাঁটছি। হয়তো আমাদের আর কখনো দেখা নাও হইতে পারে। আমার পক্ষ থেকে এই আবদারটুকু রাখুন প্লিজ।”

নওমী গভীর ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝড়ার আয়োজন চলছে। মিফতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সম্মতির জন্য। নিজেকে শেষ বার প্রমাণ করার জন্য শতভাগ চেষ্টা করতে পিছপা সে হবে না।

*
নওমী বুঝতে পারছে, মিফতার মন উল্টো পথে হাঁটছে। সে বোকা নয় যে এভাবে ঘুরতে যাবার আহ্বানের মানে ধরতে পারবে না। সে জানে এভাবে মিফতা নিজেকে প্রকাশ করবে না৷ নওমী রাজি হলো ওকে হাতেনাতে ধরার জন্য।

স্পষ্টবাদিতা ওর পছন্দ। এমন করে মুখে এক মনে আরেক, এধরণের কপটতায় ভারি রাগ হয়।

প্রথমে তো ঠিকই ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে বলেছে “আপনার যা মত, আমারও তাই। এই বিয়ে করব না।”

এখন এই সহসা মত পরিবর্তন একটা বার্তাই ওকে দিল, তা হলো ইগো। প্রত্যাখ্যান মানতে না পেরে মরিয়া প্রচেষ্টা। এছাড়া অন্যকিছু নয়। ওদের যে ধরনের কথাবার্তা হয়েছে তাতে, মিফতার মতো ছেলে টুপ করে প্রেমে পড়তে এটা সে ঘুণাক্ষরেও বিশ্বাস করে না।

এই কারণটা বাবাকে বললে, তিনি যেহেতু ওকে মতামত জানানোর সুযোগ দিয়েছেন, তিনি নিশ্চয়ই মানবেন।

*
“এবার বাসায় বলে যাব তাহলে।”

নওমীর সম্মতিসূচক এই কথায় মিফতার ভীষণ নির্ভার লাগল ভেতরটায়। নিজেকে ফিরে পেয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল,

“হ্যাঁ, বলাই আছে সবাইকে। আমার সাথে অভিসারে যাবার প্রস্তাব দিইনি কিন্তু।”

নওমী বলল, “ফালতু কথা না বললে খাবার হজম হয় না আপনার?”

“না। ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে গড়বড় আছে মনে হয়। একদিন হজমি খেতে বললেন না! মনে নাই? খাওয়া হয় নাই আর।”

“আমি কিনে দেবনে। তাও রোগশোক হেলাফেলা করতে নাই। পরে দেখা গেল খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আপনার!”

মিফতা একগাল হেসে বলল, “আমি ভাবলাম আপনি কিপ্টে, সাথে আমাকে নিয়ে একেবারে ভাবেন না! দুটো ধারণাই দেখি ভুল। জীবনে প্রথমবার প্রেডিকশনে ডাব্বা পাইসি।”

নওমী এতক্ষণে যেন ছন্দ ফিরে পেল। বলল, “প্রথমবার? আমি ভাবলাম হরহামেশাই বুঝি আপনি ডাব্বা মারেন।”

“আরে নাহ্! আমাকে নিয়ে এত উচ্চ ধারণা পোষণ করার জন্য ধন্যবাদ। এত ডাব্বা পাইলে ডাব্বার একটা ফ্যাক্টরি খুলতাম। জনে জনে বিলি করে কোটিপতি হইতে পারতাম।”

“সেইটাই আপনার জন্য স্যুইটেবল প্রফেশন হইত। ডাব্বার ফেরিওয়ালা।”

“আমার প্রফেশন নিয়েও ভাবতেসেন দেখে ভালো লাগল।”

“মাঝেমধ্যে জনসেবা করতে হয়। ধরে নিন এটা একটা জনকল্যাণমূলক ভাবনা।”

নওমীর কথার পাল্টা উত্তর দেবার জন্য মুখ খুলছিল মিফতা, কিন্তু প্রকৃতি সহায় হলো না। মেঘের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে, বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।

নীরব সিঁড়িতে এসে ডাকল ওদের। মিফতার মনে গড়ার প্রত্যাশা অন্যদিকে নওমীর মনে ভাঙার। ভিন্ন দুজন মানুষ সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন দুটো চাওয়ার সমীকরণ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছিল।

ভাঙা-গড়ার নেশায় মেতে থাকা দুটো হৃদয় প্রতীক্ষায় রইল শেষের কিংবা শুরুর। শূন্য ছাদটা ভিজছিল তুমুল বৃষ্টিতে।
……….
(ক্রমশ)
(প্রায় শেষের দিকে চলে যাচ্ছি গল্পের।)
আমি ভীষণ ক্লান্ত গত দু’দিন থেকে। অসুস্থও খানিকটা। তাই বেশি বড় হলো না। দোয়া করবেন আমার জন্য। কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন। ভালোবাসা রইল।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here