হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ৬)

0
358

#হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ৬)
নুসরাত জাহান লিজা

“আপনি প্রেমিক পুরুষ, তাই না? আমরা বেস্ট কিউট কাপল? আমরা কাপল কবে হইলাম? হিরো হইতে ইচ্ছা করসে? সব হইসে আপনার জন্য।”

নওমীর গলা রীতিমতো চড়া। মিফতার মনে হচ্ছিল কানের মধ্যে কেউ হুইসেল বাজাচ্ছে।

সে এতক্ষণ কিঞ্চিৎ ভয় পাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে পুরো দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিতে সে নারাজ।

মিফতা ফোঁড়ন কেটে বলল, “সব আমার জন্য হইসে? আমি অলিখিত মৌলিক অধিকারের গল্প শুনাইসি? আপনিই তো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলেন আমারে। সব দোষ আপনার।”

“আমি বলায় সব হইসে? আপনি যদি না ডাকতেন, আমি আজ বের হতাম না। বের না হইলে ভাইয়ার চোখেও পড়তাম না, স্যান্ডেলও ছিঁড়ত না৷ বাসায় মিথ্যাও বলার প্রয়োজন হইত না।”

মিফতা বলল, “একটা গল্প শুনবেন? ছেলেবেলায় শোনা বা পড়া।”

“ফাজলামো করেন? আমার সাথে বিটলামি করে পার পাবেন না।”

“বিটলামি কী? কীভাবে করে?”

“আপনি তো সদ্য ভূমিষ্ট শিশু। আপনার এখন ক্যা ক্যা করে মায়ের কোলে শুয়ে থাকার কথা।”

মিফতা নাছোড়বান্দা গল্পটা বলার জান্য, নওমীর কথাকে সে আমলে নিল না। বলল,

“শুনুন না, একবার এক রাজ্যে একটা চোর গেল চুরি করতে৷ কিন্তু ঘটল অঘটন। জানালায় উঠতেই তা-সহ ভেঙে পড়ে গিয়ে চোরের পায়ের দফারফা হয়ে গেল। সে বিচার চাইতে গেল রাজ দরবারে। এমন নিম্নমানের কাজ যে করছে সে কাঠমিস্ত্রীকে রাজার সামনে তলব করা হলো। তো কারিগর এসে বলল, সে যখন জানালার কাজ করতেছিল, তখন একজন লাল জামা পরা সুন্দরী মেয়ে তার সামনে দিয়ে যাওয়ায় তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে, তাই এমন হইসে। তলব করা হলো, সেই লাল জাম পরা তরুণীকে।”

ওকে থামিয়ে দিয়ে নওমী বলল, “আমি গল্পটা শুনেছিলাম। মেয়েটা এসে বলল, এতে তার দায় নেই। কারণ লাল জামা সে বানায় নাই। বানাইসে তাঁতি। তখন রাজার আদেশে তাঁতিকে ধরে এনে শূলে চড়ানো হলো।”

মিফতা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলল, “দেখেন তো, চোর চুরি করে পার পেয়ে গেল, কাঠমিস্ত্রী দায়িত্বে অবহেলা করেও নির্দোষ। বলির পাঁঠা হলো কিনা একেবারে নিরপরাধ তাঁতি৷ আপনি তো ওই গবেট রাজার মতোই অবিবেচক।”

“নিজেকে বেশি চালাক ভাবার চেষ্টা করবেন না। বুঝলেন? ওই ফটোগ্রাফারকে আপনি নিশ্চয়ই চেনেন। নইলে টাইমিং কী করে এতটা মিলে গেল?”

“অদ্ভুত তো! ফটোগ্রাফারকে আমি চিনব কোত্থেকে? সে আমার শালাও না.. থুড়ি মুখ ফস্কে..”

মিফতার শুরু করতে যাওয়া দীর্ঘ অপ্রয়োজনীয় কথা থামিয়ে দিয়ে নওমী বলল, “না চিনলে, চেনার চেষ্টা করুন। সে যা করেছে তা ক্রাইম। অনুমতি ছাড়া ছবি তুলে সেটা সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়াইয়ে দিসে। আমাদের প্রাইভেসি হ্যাম্পার হইসে। সবচাইতে বড় কথা, মিথ্যাচার করসে। আপনার সাথে আমার নাম এত রোমান্টিকভাবে আসছে। কী বিশ্রী ব্যাপার।”

মিফতা এবার ক্ষ্যাপা গলায় বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ক্ষতি তো আপনার একলার হইসে। আমার তো কোনো ক্ষতি হয় নাই। সবাই জানত আমি সিঙ্গেল। এখন সবাই কী কী বলতেসে জানেন? আপনার সাথে বিয়ে ভাঙার পর ভালো মেয়ে পাইতাম৷ এখন সেটা কই পাব? মেয়েরা বলবে না যে ‘আপনার গার্লফ্রেণ্ডের সাথে এত দারুণ কেমিস্ট্রি, তারে বিয়ে না করে আমাকে কেন বিয়ে করতে আসছেন। আরও ভালো পাইলে আমারেও ছাড়তে পারেন।’ এই ক্ষতি আমি কেমনে পূরণ করব? আপনার সেই মৌলিক অধিকারের চক্করে আমার নামে কতবড় বদনাম রটল। বিয়ের বাজারে এমন বদনাম রটলে কী বিশাল সর্বনাশ, আপনি জানেন?”

এমনভাবে বলল যেন মিফতার সত্যি সত্যি বিশাল বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে, এই দুর্বিপাক থেকে সন্তরণের পথ ওর জানা নেই।

নওমী গলার তেজ বাড়িয়ে বলল, “যত নাটক করার চেষ্টা করেন লাভ নাই। আমাকে গলানো এত সোজা না। এসব মেলোড্রামা আমার সাথে বিয়ে ভাঙার পরে যার সাথে গাঁটছড়া বাঁধবেন তার জন্য জমাইয়ে রাইখেন। ওই পেইজ কারা চালায়, তাদের বের করেন। ওদের ট্রু লাভের কাঁথায় আগুন দিয়ে ঝাঁঝরা করে ওই ছাই যদি ওদের চোখে মুখে না ঘষে দিসি তো আমার নাম নওমী না।”

“আপনি যে গু ণ্ডা সেটা আমি ভালোমতো বুঝতে পারছি এই কয়দিনে।”

“সে আর বলতে।”

“আপনার গলার পাওয়ারটা যদি সামর্থ্যেও থাকে, তাইলে নিজেই বাইর করেন। আমার উপরে চেঁচামেচি করেন কেন? আমি আপনার বর না।”

“সেটা ভাবার দুর্দিনও আমার এখনো আসে নাই।”

নওমীর কথাটা খুট করে মিফতার ইগোতে ধাক্কা মারল। সে বিয়েতে রাজি না। কিন্তু এত ফেলনাও নিশ্চয়ই না। ওকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার জন্য নওমীকে কঠিন শাস্তি দিতে সে দৃঢ়প্রত্যয়ে বুক বাঁধল।

তবে সমস্যা হলো শুধু কথায় কিংবা বুদ্ধিতে ওই ডাকাবুকো মেয়েকে টেক্কা দেয়া ভীষণ কঠিন। সে মনে মনে স্বীকার না করে পারল না, ওই মেয়ে বুদ্ধিতে ওর সমকক্ষ।

তবে এই মুহূর্তে মিফতা ফ্রন্টফুটে আছে। কৈ’য়ের তেলে কৈ ভাজতে হবে। নওমীর বুদ্ধিতেই ওকে কুপোকাত করতে হবে।

বিয়েটা করতে যতটা অনীহা, তাতে এই বিয়েটাই নওমীর জন্য শাস্তিস্বরূপ এটা বোঝার জন্য অতি বুদ্ধি ধারণ না করলেও চলে।

বিয়েতে অবশ্য মিফতারও পুরোপুরি লোকসান। তবুও নিজের নাক কেটে হলেও সে ওই ভ্রাম্যমাণ জ্ঞানভাণ্ডারের যাত্রা ভঙ্গ করে তবে দম নেবে। বিদ্যুৎ চমকের মতো এই ভাবনা মাথায় আসতেই মনে মনে নিজেকে বিজয়ী ভেবেই সুখ সুখ তৃপ্তি অনুভব করল সে।

নওমীর বিয়ে ভাঙার বুদ্ধির সাথে সে ঠিকই সঙ্গ দেবে, এটাই ট্রাম্প কার্ড। এরপর বিয়ে ভেস্তে দেবার প্ল্যান শুনে সেটাকেই বরং ভেস্তে দেয়া যাবে।

এত বুদ্ধি সে এতদিন পায়নি কেন? মস্তিষ্কে এমন অভিসন্ধির অনুপ্রবেশে নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে দিতে ইচ্ছে করল মিফতার।
……..
(ক্রমশ)
(মিফতা কি ওর প্ল্যানে সফল হবে নাকি বুমেরাং হয়ে যাবে? কী মনে হয়?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here