হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ১০.১)

0
360

#হৃদয়_পথে_এ_কার_ছায়া (পর্ব ১০.১)
নুসরাত জাহান লিজা

সেদিন পড়ন্ত বেলায় নওমীর সাথে ঝামেলার পরে ওর সাথে আর কথা হয়নি মিফতার। সেই পরশু থেকে আজ পর্যন্ত বহুবার ওর ইচ্ছে হয়েছে, একবার অন্তত কল করে ঝগড়া করতে। কয়েকবার নওমীর নম্বরটা বের করে ডায়াল করতে গিয়েও আর করা হয়নি প্রগাঢ় সংকোচে।

নওমী নিশ্চয়ই নাকে তেল দিয়ে ঘুরছে, নিশ্চিন্তে। এটাই মিফতার সহ্য হচ্ছে না। ওকে একটু না জ্বালিয়ে সে শান্তি পাচ্ছে না।

ওদিকে দিনে কতবার করে যে বাবা-মা ওকে এই বিয়ের ব্যাপারে বলতে বলতে মিফতার কানের চোদ্দোটা বাজিয়েছেন, নির্ভার জীবনের শান্তি বিঘ্নিত করেছেন, তারাও কেন যেন কথাটা আর তুলছেন না। বোধহয় ওদের সময় দেবার প্রয়াসেই।

হাজার হোক মিফতার জন্য বিষয়টা একটা প্রেস্টিজ ইস্যু। এতদিন সে সবসময় না না করে প্রবল আপত্তি জানিয়ে এসেছে, এখন আগ বাড়িয়ে সম্মতির কথা বলা যায় নাকি! মান-সম্মানের একটা ব্যাপার আছে না!

মা অবশ্যই হাসিঠাট্টা করবেন। পারলে নওমীকেও এই ঘটনা তেল মশলা মিশিয়ে সুস্বাদু করে ভ্যাকুয়াম প্যাকেটে ভরে সাপ্লাই দেবেন। তাতে ওই ঝাঁঝালো মেয়েটার কাছে ওর নাক কাটা যাবে। এটা সে কিছুতেই হতে দেবে না।

আবার নওমীকে যত তাড়াতাড়ি জব্দ করা যায় মনে মনে সেই ছক কষাও শেষ। কিছুতেই তর সইছে না। পুরনো কিছু ইরেজার দিয়ে ঘষেমেজে তুলে ফেলে নতুন কিছুও যুক্ত হচ্ছে অভিসন্ধিতে।

মিফতা যখন দেখল দু’দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও কেউ কথা তুলছে না, তখন ওর বাঁধ ভাঙল। সে নিজেই আজ রাতে খাবার টেবিলে ইনিয়ে বিনিয়ে মত প্রকাশ করবার জন্য সচেষ্ট হলো।

“মা, ভাবছি লন্ড্রিতে কাপড় কাচতে পাঠানো বিশাল ঝামেলা।”

মালা মিফতার প্লেটে ঢেঁড়স ভাজি তুলে দিতে দিতে বললেন, “তোর কাছে তো সবই ঝামেলা। জীবনে কোন কাজটা তোর ঝামেলা মনে হয় নাই?”

মিফতা হতাশ হলো, মা ওর ইঙ্গিত কেন ধরতে পারলেন না! অথচ কিছুদিন আগে নিজেই বলেছেন, বিয়েতে মত না থাকলে লন্ড্রি, রেস্টুরেন্টে অভ্যাস করতে!

সে ঢেঁড়স ভাজি দেখে নাক কুঁচকে বলল, “রেগুলার রেস্টুরেন্টে খেতেও ভালো লাগবে না। এসিডিটি হয়।”

এবার জামিল বললেন, “বাসা থাকতে তুই খামোখা রেস্টুরেন্টে প্রত্যেকদিন খেতে যাবি কেন? ট্রান্সফার হবার সম্ভাবনা আছে নাকি?”

মিফতা এবার অসহায়বোধ করল। এরা কেউ কি বুঝতে পারছে না!

“এমনি। শখ হইসিলো। এখন মিটে গেছে।”

“ভালোই। এসব অকাজের শখ থাকা কাজের কথা না।”

মিফতা এবার প্রবল ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ওর হাতে থাকা তুরুপের শেষ তাস প্রয়োগ করল। বলল, “আমি এখন একটু একটু দায়িত্ব নেয়া শিখতেসি।”

চামেলি পাশ থেকে বলে উঠল, “খালাম্ম, ভাইজান বিয়াত রাজি। হাজার হউক, বিয়ার কতা তো, শরমে মুখ ফুইট্যা কইবার পারতাসে না। নিজের বিয়ার বেলায় পোলা মাইয়্যা, হগলতেরই বুক ফাটত তয় মুক ফুটত না।”

মিফতা মাত্র চিংড়ীর ঝোল দিয়ে ভাত মুখে তুলেছিল, তা গলায় আটকে গেল। এভাবেই ওর এত বছরের অর্জিত ইজ্জত সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়ে গড়াগড়ি খাবে সে কোনোদিন কি ভাবতে পেরেছিল!

এমন দূর্বল চাল এসেছে ওর হাতে, ওরই বা কী করার আছে! চামেলি পর্যন্ত ওকে নিয়ে মজা করে! জীবনে আর কী-ই বা বাকি আছে! গলায় দড়ি বেঁধে আটলান্টিকে চৌষট্টিবার ডুব দেয়া উচিত বলে মনে হলো ওর।

ওই এক অদ্ভুত মেয়ে নওমীর জন্য সব শেষ। লজ্জায় মিফতার ইচ্ছে করল মাটি ফুঁড়ে মাটির গভীরে লুকোতে।

খাবার টেবিল জুড়ে হাসির রোল পড়ল। মালা মিফতাকে পানিসহ গ্লাস এগিয়ে দিলেন। ছেলে একটু সুস্থির হলে তিনি হেসে বললেন,

“কেমন দায়িত্ব নিতে পারিস তার নমুনা তো দেখলামই। এমন ঘুরাইয়ে প্যাঁচায়ে না বলে সরাসরি বললেই তো ঝামেলা হইত না। এমন তো না যে নিজের গোপন প্রেমিকারে প্রথমবার বাপ মায়ের সাথে পরিচয় করায়ে দিতেছিস।”

জামিল পর্যন্ত হাসতে হাসতে বললেন, “এত লুকোচুরির কী আছে বুঝলাম না।”

প্রথম থেকে সব বোঝেছে সবাই, কেবলই ওকে অপদস্ত করার জন্য বসে ছিল। নিজের বাড়িকেই মনে হচ্ছে শত্রুর ঘাঁটি। বশীকরণ বিদ্যা রপ্ত আছে কিনা ওই নাগিনীর কে জানে! সাপের ওঝা হয়ে বীণ বাজানোই শিখতে হবে আগে।
………..
(ক্রমশ)
এই পর্বের বাকি অংশ আগামীকাল। মিফতার এই ফুটো হয়ে যাওয়া প্রেস্টিজ নিয়ে কী করা উচিত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here