#হৃদয়ও_মাঝারে-০২,০৩
তন্বী ইসলাম
০২
রাগে তিথীর শরীর কাপছে। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে যেনো। ওর এরুপ ব্যবহারে ছেলেগুলো কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। বটি হাতে থাকায় ভয়ের মাত্রাটা কিছুটা বেশি।
তবুও ছেলেগুলো নিরাপদ দুরত্ব রেখে বললো..
— ওই মাইয়া, আমগোরে ডর দেহাস? আমাগোরে বডি দেহাস? জানোস আমরা কার লোক? আমরা রবিন ভাইয়ের লোক। রবিন ভাই কেডা জানোস? এই এলাকায় বস। যা করলি আমগো লগে, ফল ভালা হইবো না কইলাম।
— সামনে আয় ভীতুর দল৷ পিছাস কেন? কি রবিন ভাই রবিন ভাই করিস, আমি কোনো রবিন ভাইরে ভয় পায় না। তোগো রবিন ভাইরে বইলা দিস, এই তিথীর সাথে যদি মাস্তানি করতে আসে তবে ওর মাথা কেটে হাতে ধরাই দিমু।আর কি ফল দেখাবি তোরা আমারে? তোগোর ফল তোগোরেই খাওয়ামু। এইটা দেখছোস? চিনোস এইটারে? এইটার কতো ধার জানা আছে তোদের? বটিটা উচু করে দেখাতে দেখাতে বললো তিথী।
তিথীর চিল্লানোরে জমিলাসহ আরো কয়েকজন এগিয়ে এল এদিকে। জমিলাকে দেখে ছেলেগুলো আস্তে আস্তে চলে গেলো সেখান থেকে। রবিন যদি সামনে না থাকে তাহলে জমিলাকে ওরা বাঘের মতো ভয় পায়। তিথী এখনো রাগে কাঁপছে।
জমিলা ওর কাছে এগিয়ে এসে হাত থেকে বটিটা কেড়ে নিলো। বললো..
— শান্ত হো মাইয়া। তুই তো কামাল কইরা দিলি। তোর তো বহুত সাহস দেখতাছি।
তিথী আড়চোখে তাকালো জমিলার দিকে৷ কিছু বললো না। জমিলা আবারও বললো..
— একলা থাকতে গেলে এইরকম সাহসেরই দরকার লাগে। নইলে মাইয়াগো লাইগা বিপদ সবসময় উঁকি মাইরা থাহে। তই শুধু সাহসে কাম হইবো না। ওরা খারাপ পুলাপান। একবার যহন তোরে ওগো নজরে পরছে তই আবার তোরে বিরক্ত করার লাগবো। সাবধাইনে থাকিস। একলা একলা বেশি সাহস দেখাইস না। আমারে ডাকিস।
..
মাঝরাতে ঘরের চালে বিকট একটা শব্দ হলো। সেই শব্দে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো তিথী৷ শরীর ঘামছে ওর। আবারো সেই শব্দ। কেউ যেনো ওর ঘরের চালে ঢিল ছুড়ছে।
কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো তিথী। কে এমন করছে বুঝতে পারছেনা ও। কিছুক্ষণ ঢিল ছুড়া বন্ধ থাকলো। ভয় কিছুটা কেটেছে। এমন সময় ওর ঘরের ঠিক পিছনটাতে দাড়িয়ে কেউ এক জন বলছে…
— তোর তো মেলা সাহস তাই না মাইয়া। একবার দরজাটা খোল। তোর সাহসটা একটু দেখতে চাই।
তিথী একটু দমে গেল। রাতের ওই ছেলেগুলাই যে এমন করছে ও সেটা বেশ ভালো করেই বুঝে গেলো এতোক্ষণে। দরজাটা ভিতর থেকে লাগানো ছিলো আগে থেকেই। তিথী আরো বেশি সেইফটির জন্য ভিতর থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো। যতই সাহসী হোক না কেন, দিন শেষে ওও তো একটা মেয়ে। এই মাঝরাতে ওদের সামনে পড়া মানে এই জীবন থেকে ওর সুন্দর স্বপ্ন টা মুছে যাওয়া।
ছেলেগুলো খুব বাজেবাজে কথা বলছে বাইরে থেকে৷ তিথী টু শব্দটা পর্যন্ত করছেনা। ঘুমের ভান ধরে পরে আছে। কোনোমতে রাত টা কেটে গেলেই যেনো বাচে।
==
পরেরদিন রান্নাবান্না করে খেয়েদেয়ে আবারও বেরিয়ে পরলো তিথী। দুপুর নাগাদ ফিরে এলো বাসায়। নাহ, আজো কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি ও।
গোসল সেড়ে রুমে এসে বসা মাত্রই একটা মেয়ে এসে ঢুকলো ওর ঘরে। তিথী অবাক হলোনা, কিন্তু তাকিয়ে থাকলো মেয়েটির দিকে। মেয়েটি হেসে ওর পাশে এসে বসলো। বললো…
— তুমিই তিথী?
— হ্যাঁ। আপনি কে?
— আমি ময়না। এই মহল্লার মাইয়া আমি। ওইযে, আমাগো ঘর। জমিলার ঘর টা দেখিয়ে বলল মেয়েটি।
— আপনি জমিলা খালার মেয়ে।
— হ। বেড়াইতে গেছিলাম খালার বাসায়। আইজ আইসা মায়ের কাছে হুনলাম একটা সাহসী মাইয়া আইছে আমগো মহাল্লায়। তাই দেখবার আইলাম তোমারে৷
তিথী মেয়েটিকে দেখছে। মেয়েটির গায়ের রং কালো। চুলগুলো লালচে আর বেশ লম্বা। বয়সে তিথীর ছোট বই বড় হবেনা।
মেয়েটি আবারো হাসতে হাসতে বললো…
— কি দেখো এমনে?
তিথী হাসলো। বললো…
— তোমাকে দেখি।
— আমারে দেখার কি হইলো। আমি কি তোমার লাগান সুন্দর নি যে আমারে দেখবা?
— তুমি আমার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর ময়না।। দুজনেই হেসে দিলো। তিথী সহজে হাসেনা। তবে হাসলে কেউ ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারেনা। হাসলে ওর গালে টুল পরায় হাসিটা সহজেই সকলেই চোখে পরে৷
…
বিকেলে বাজারে গেলো তিথী। বাজার করতে হবে। বাজার থেকে ফেরার পথে তিথী দেখলো রাস্তার একপাশে গতকালের ছেলেগুলো বসে তাস খেলছে। ওদের সাথে আজ আরেকটা ছেলে আছে। চোখে কালো চশমা পরে হাতে একটা সিগারেট নিয়ে একটা কাঠের টুকরোর উপর বসে আছে৷ পাশেই একটা ছোট্ট পিচ্ছি ওর হাত আর ঘাড় মালিস করে দিচ্ছে৷ দেখে মনে হচ্ছে দলের লিডার ছেলেটা। এই ছেলেটাকে গতকাল দেখেনি তিথী। তিথী চোখ সরিয়ে নিলো। দ্রুত সেখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। তিথীকে দেখামাত্রই ছেলেগুলো কালো চশমা পরা ছেলেটাকে উদ্দেশ্যে করে বললো..
— ভাই দেখেন, এই মাইয়াডার কথায় আপনেরে কইছিলাম সকালে। মাইয়া তো না, যেন জলন্ত আগুন৷ দেখন ভাই দেখেন। চইলা গেলো মাইয়াডা।
কথাটা শোনামাত্রই তিথীর গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো৷ একমত দৌড়াতে লাগলো সে। লিডারমতো ছেলেটা হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিলো। চশমাটা মাথার উপর চুলের সাথে আটকে দিলো। আড়চোখে তাকালো তিথীর দিকে। পিছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা পালাচ্ছে। বসা থেকে উঠে দাড়ালো ছেলেটা। চটজলদি করে তিথীর সামনে গিয়ে দাড়ালো। থমকে গেলো তিথী। এই বুঝি ওর প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। তিথীর মাথাটা ওড়না দিয়ে মোড়ানো ছিলো। সে মাথার ওরনাটা আরো সামনে নিয়ে এসে মুখটা প্রায় ঢেকে ফেললো।
ছেলেটা কিছুক্ষণ তিথীর সামনে দাড়িয়ে থেকে একটা বাকা হাসি দিলো। বললো..
— ওদের কাছে যতটুকু শুনছি, তুমি খুব সাহসী মেয়ে। খুব সাহস দেখাইছো নাকি কালকে।তো আজ কি হলো? আমারে দেখে সাহস কি ফুরুৎ করে উড়ে গেলো নাকি?
তিথী কথার কোনো জবাব না দিয়ে ছেলেটাকে পাশ কেটে চলে যেতে নিলো। তখনই তিথীর ওড়নাটা ধরে হ্যাচকা টান দিলো ছেলেটা। যার দরুন ওড়নাটা তিথীর শরীরে আর থাকেনি। পুরোটাই ছেলেটার হাতে চলে গেছে। ছেলেটা ওড়নাটা হাতে পেচাতে পেচাতে তিথীর সামনে এসে দাড়ালো। তিথী হাতদুটো শক্ত করে মুঠো করল। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। ছেলেটা বাকা হেসে ওর সামনে দাড়াতেই আচমকায় আঘাত করে বসলো তিথী। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছেলেটার গালে দিলো ঠাটিয়ে চড়। আকস্মিক থাপ্পড় খাওয়ায় ছেলেটি একটু নড়ে গেলো, কিন্তু পড়লো না৷ মাথায় আগুন ধরে গেছে ছেলেটির। চট করে তিথীর মাথার চুলে মুঠি করে ধরে ফেললো ছেলেটি। কষে কয়েকটা থাপ্পড় দিবে সে এমন সময় তিথী চোখদুটো খিচে বন্ধ করে ফেললো।
ছেলেটি থমকে গেলো। এই প্রথম সে তিথীর মুখটা দেখছে। কিছুক্ষণ আগেও মুখ না দেখেই সে ওর সাথে কথা বলেছে।
কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিথী আস্তে আস্তে চোখদুটো খোললো। ছেলেটি একভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তিথী একটু নড়েচড়ে উঠলো। ছেলেটি ইতস্ততভাবে ওর চুলের মুঠিটা ছেড়ে দিলো। ওর দলের সাঙ্গপাঙ্গ অবাক, ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলো….
— ভাই, ওই মাইয়া আপনেরে অপমান করছে, এর মোক্ষম জবাব দেন। ওই মাইয়ার দেমাক ভাইঙ্গা দেন৷
আরেকজন বললো…
— রবিন ভাই, প্রতিশোধ নেন। আপনেরে অপমান করার ফল হাড়ে হাড়ে বুঝাইয়া দেন। বুঝাইয়া দেন আপনে কি জিনিস ।
তিথী বুঝলো এটাই সেই রবিন, যার কথা বলে ছেলেগুলো গতকাল থ্রেট করেছিলো ওকে।
ছেলেগুলো উস্কানি দিয়েই যাচ্ছে রবিবকে। কিন্তু রবিন নড়ছেনা৷ একভাবে তাকিয়ে আছে তিথীর দিকে। বাকিদের মুখ দিয়ে যেনো খই ফুটছে৷ তিথী বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো৷ বিরক্তমাখা মুখে তিথী এইবার মুখ খোললো..
— বাহ, আপনার উস্তাদ কে থাপ্পড় দিছি, তাই আপনাদের জলতেছে। এইটা উনার জন্য বেশ অপমানিত বিষয়। আর উনি যে এই ভরা বাজারে আমার শরীর থেকে উড়না টেনে নিলো সেটাকে আপনারা কি বলবেন? সেটা কি খুবই ভদ্রতা?
কাল সারারাত আপনাদের জালায় আমি ঘুমাতে পারিনি। সেটাকে কি বলবেন?
আপনি বলুন কি বলবেন সেটাকে? ছেলেটিকে বললো তিথী। বেশ তো উস্তাদ সেজে বসে আছেন, ওস্তাদ এর কাজ কি জানেন? নিজের সাঙ্গপাঙ্গকে মেইন্টেইন করা। আপনার ওই সাঙ্গপাঙ্গর জন্য কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পারি নাই। সারারাত আমার ঘরের চালে ঢিল ছুড়ছে। আর আজ আপনি এসে আমার ওড়না টেনে নিলেন। একটা মেয়ের সাথে এইরকম আচরণ করতে রুচিতে বাধলোনা একটুও? কিভাবে পারেন আপনারা?
আজ আমার জায়গায় আপনাদের নিজেদের ঘরের মা বোন ও থাকতে পারতো। তখন কি করতেন আপনারা?
ছেলেগুলো দমেনি। অকথ্য কথা বলে যাচ্ছে। রবিন ওদেরকে হাতে ইশারা করলো থামতে। সবাই চুপ করে গেলো। তিথী অবাক হলো বেশ। ছেলেটি চোখমুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো….
— আপনি যান বাসায়৷ ওরা আপনাকে আর কখনো বিরক্ত করবে না।
পাশের ছেলেগুলোরে উদ্দেশ্যে করে বলল..
— এই চল এইখান থেকে।
ছেলেটি চলে গেলো। তিথী বুঝতে চেষ্টা করলো কি হচ্ছে৷ কিছুক্ষণ আগেই যে ছেলেটি ওকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিলো, বাজে ব্যবহার করেছিলো হঠাৎ ই তার কি হয়ে গেলো? পরক্ষণেই মাথা থেকে সব ঝেড়ে বাসার দিকে ছুটলো তিথী।
..
চাকরি খোজাখুজি করতে করতে কয়েকটা দিন কেটে গেলো তিথীর। সেদিনের পর থেকে ওই ছেলেগুলো আর বিরক্ত করেনি তিথীকে। সামনে পরলেও কিছু বলেনি৷ লিডারমতোন ছেলেটাকেও আর দেখেনি তিথী।
সেদিন সকালে ময়নাকে নিয়ে একটু হাটতে বেরিয়েছে তিথী। এই কয়দিনে ময়নার সাথে বেশ সখ্যতা হয়ে গেছে ওর।
ময়না ওর পরিচিত জায়গাগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে তিথীকে৷ ময়নার জন্ম এই মহল্লাতেই। তাই বেশ ভালোভাবেই চিনে সে সবকিছু । তিথীতো কয়েকদিন আগে এসেছে এখানে৷ তাই তেমন কিছুই চিনেনা৷ কিছুদূর যেতেই সামনে একটা দেওয়ালে চোখ আটকে গেলো তিথীর। দেওয়ালে একটা কাগজ লাগানো। সেটাতে একজন প্রাইভেট টিচার চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। পোস্টারে এও উল্লেখ আছে যে টিচার অবশ্যই কোনো মেয়ে হতে হবে৷ ফোন নাম্বার দেওয়া আছে সেখানে।
তিথী ফোনটা বের করে চট করে নাম্বারটা টুকে নিলো। কিন্তু কল করলো না। বাসায় ফিরে কল করবে৷ এই মুহুর্তে কোনো চাকরি না পাওয়ায় টিউশনি টা করলে খুব ভালোই হবে৷
.
বাসায় ফিরে রুম টা পরিষ্কার করতে লাগলো তিথী। বস্তির রুম, যতই পরিষ্কার করুক না কেন, অপরিচ্ছনই লাগে। আশেপাশেও বাজে দুর্গন্ধ। একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলেন এখান থেকে চলে যাবে তিথী। রাতের কাজকর্ম সেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বসলো তিথী । নাম্বারটায় কল করবে এমন সময় বাইরে হট্রগোল শোনা গেলো। দিন আর রাত বলতে কিছুই নেই। সারাক্ষণ বস্তিতে হট্রগোল লেগেই থাকে। তিথী সেই চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। কিন্তু নাহ, বাইরে চেচামেচির আওয়াজ বেড়েই চলেছে। ফোনটা বিছানায় রেখে বাইরে বেরোলো তিথী। জমিলার রুমের সামনে বেশ বড়সড় একটা জটলা। কেউ একজন আর্তনাদ করে কাদছে। কন্ঠটা পরিচিত মনে হতে লাগলো তিথীর কাছে৷ আরেকটু সামনে এগুতেই দেখলো জমিলা বিলাপ করে কাদছে৷ আশেপাশের মানুষ গুলো কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে বাজে বাজে কথা বলছে। তিথী বুঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে। পাশে দাড়িয়ে থাকা একজন অর্ধবয়স্ক মহিলাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলো জমিলার মেয়ে ময়না সেই দুপুরের আগে বাইরে গিয়েছিলো, এখনো ফিরেনি। বেশ অবাক হলো তিথী। আজ সকালেই সে ময়নাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে।
অজানা কোনো ভয়ের আশংকায় জমিলা নিজের মেয়ের জন্য কাদছে। অনেকেই অনেক কথা বলছে, কেউ আবার ময়নার চরিত্র নিয়েও কথা তুলছে।
..
রাত প্রায় এগারোটা ছুইছুই। ময়না এখনো ফিরেনি৷ ময়নার জন্য বড্ড খারাপ লাগছে ওর। সে চিন্তাতেই আর টিউশনির ফোনটা করা হয়ে উঠেনি।
আরো প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেলো। তিথী জমিলার মাথায় পানি ঢালছে। বেচারি হেচকি তুলে কাদছে, কিছুক্ষণ পর পর প্রায় বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। বস্তির অনেকেই ময়নাকে খুজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেউই এখনো কোনো খবর পায়নি।
একটা বাইকের শব্দে সামনে তাকালো তিথী। সেই রবিন নামের ছেলেটা এসেছে। আশ্চর্য ব্যপার হলো বরিনের বাইকের পিছন থেকে ময়না নামছে। মাথাটা নিচু করে সামনে এগুতে লাগলো ও। ময়নাকে নামানো পর্যন্তই যেনো রবিনের কাজ ছিল। ময়নাকে নামিয়ে আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না সে। চলে গেলো সাথে সাথেই। জমিলা মেয়েকে দেখে যেন প্রাণ পেলো। দৌড়ে গিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। তিথীর দৃষ্টি তখনও রবিনের যাওয়ার দিকে। খুব রাগ লাগছে ওর রবিনের প্রতি। ও নিশ্চয়ই কিছু করেছে ময়নার সাথে। ওরা হচ্ছে সমাজের ভাইরাস। ওরা কখনো মানুষের ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু করতে পারেনা।
আশেপাশের মানুষ গুলো কানাকানি শুরু করে দিয়েছে৷ একটা ছেলের সাথে এতো রাতে ময়না ফিরেছে, ব্যাপারটা সুবিধার না।
জমিলা ময়নাকে সামনে বসিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে..
— কই গেছিলি মা? এতো রাইত করলি কেন? তোর লাইগা আমার কত চিন্তা হইতাছিলো তোরে কেমনে বুঝাই আমি। আবারও হু হু করে কেঁদে দিলো জমিলা।
ময়না কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই একজন রোগা পাতলা মাঝ বয়সী লোক এসে ময়নার চুলের মুঠি ধরে ময়নাকে আচমকায় হ্যাচকা টান মারলো। টানের বেগ এতোটাই ছিলো যে, ময়না গিয়ে ছিটকে পরলো তিথীর পায়ের সামনে।
.
To be Continue…..
#হৃদয়ও_মাঝারে-০৩
তন্বী ইসলাম
তিথীর পায়ের সামনে পরে ময়না অস্ফুটে গুঙ্গাচ্ছে। তিথী সেটা সহ্য করতে না পেরে ময়নাকে টেনে তুলতে লাগলো। সেই লোকটা আবারও এসে হ্যাচকা টানে ময়নাকে নিয়ে গেলো। এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো ময়নাকে। ময়না কেঁদেই যাচ্ছে। তিথী কি করবে বুঝতে পারছেনা।
জমিলা দৌড়ে এসে ময়নাকে টানতে টানতে বললো…
— কি করতাছেন আফনে? মাইয়াডারে এমনে মারতাছেন কেন?
— জিগা তোর মাইয়ারে, কই গেছিলো আইজ? কার লগে ঢলাঢলি কইরা এই নাপাক শইল নিয়া ফিরছে। ওই পুলার লগে কি কি কইরা আইছে জিগা তোর মাইয়ারে?
ময়না আশ্চর্য হয়ে নিজের বাবার দিকে তাকালো। অস্ফুটভাবে বললো..
— কি কইতাছো আব্বা?
— চুপ কর হারামজাদি। তোর ওই নাপাক মুখে আমার বাপ কইবি না। বলে আবারো তেড়ে গেলো ময়নার দিকে।
জমিলা মেয়েকে নিজের পিছনে আড়াল করতে করতে বললো….
— পাগল হইয়া গেছেন আপনে। এই যে কই, মদ ডা একটু কম গেলেন, কথা ঢুকেনা কানে। আইজ নিজের মাইয়ারে নিয়া কিসব কইতাছেন ধারণা আছে আপনের?
— কি কইলি মাতারী? আমি মদ গিলি? গিলি ভালো করি, তাতে তোর বাপের কি? মদ খামু, গাঞ্জা খামু, যা ইচ্ছা তাই খামু, তোর অতো জ্বলে কেন?
ওই মাইয়ারে জিগা কইত্তে আইছে?
জমিলা রক্তবর্ণ চোখে একবার নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই নিজের মেয়ের দিকে ফিরলেন। রেগেই মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন..
— কই ছিলি সারাদিন? এত্তো রাইতে ওই পুলারে নিয়া আইলি কেন? কি আকাম করছোস?
মায়ের কথায় ময়না কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো..
— ওই রবিন ভাই ই আইজ আমারে বাচাইছে মা। নাইলে আমার মরা লাশটাও বোধয় কোনোদিন খুইজা পাইতা না তোমরা।
মেয়ের কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলো জমিলা আর ওর স্বামী। তিথীর ও যেনো অবাক হওয়া চুড়ান্ত সীমায় পৌছে গেলো।
পরেরদিন সকালে খাওয়া দাওয়া শেষে ফোনটা হাতে নিলো তিথী। কল দিবে কি দিবেনা, এই ভেবে কলটা দিয়েই দিলো।
রিং হতে হতে একসময় কেটে গেলো। কেউ ধরলো না। আবারও ডায়াল করলো তিথী। দুবার রিং বাজতেই ফোনটা রিসিভ করলো কেউ।
সামান্য কেশে ধীরে ধীরে তিথী বললো…
— হ্যালো..
— জ্বি কে বলছেন আপু?
একটা সুরেলা মিষ্টি কন্ঠধারী একটা মেয়ে জবাব দিলো। তিথী ভনিতা না করে বললো
— আসলে আমি একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, আপনাদের হয়তো কোনো প্রাইভেট টিচার চাই। সেজন্যই কল দিয়েছি।
— ওহ আচ্ছা, আপনি অপেক্ষা করুন, আমি আপুকে ডেকে দিচ্ছি।
তিথী অপেক্ষা করলো। কিছুক্ষণ পর কেউ একজন এসে ফোনটা ধরলো।
— আপনি পড়াতে চান প্রাইভেট?
— সে জন্যই তো ফোনটা দেওয়া।
— আচ্ছা, ফোনে কথা না বলে আমরা সরাসরি কথা বলি?
— কিভাবে?
— আপনাকে আমি আমার বাসার এড্রেস দিচ্ছি। এই ঠিকানায় চলে আসুন বিকেলে। তখনই কথা হবে।
— আচ্ছা।
একটা ভালো থ্রিপিস পরলো তিথী। ব্ল্যাক আর ব্লু কম্বিনেশন এর জামাটা। মাথাটা সুন্দর করে বেধে হিজাব করে নিলো। মুখে একটুখানি ক্রিম দিয়ে ঠোটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক দিয়ে চোখে কাজল টেনে নিলো। ছোট আয়নাটাতে আরেকবার পরখ করে নিলো নিজেকে। একদম পারফেক্ট লাগছে নিজেকে। সাইড ব্যাগটা হাতে নিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরলো তিথী।
ওই মহিলার দেওয়া এড্রেস মতো সামনে এগুচ্ছে তিথী। কিছুদুর যেতেই দেখলো ওই রবিন নামের ছেলেটা রাস্তার পাশে বাইকের উপর শুয়ে আছে। কারো পায়ের শব্দে চোখ মেলে তাকালো রবিন। তিথীকে দেখতে পেয়ে তারাহুরো করে উঠে পরলো বাইক থেকে। তিথীর দিকে তাকিয়ে খুবই গভীরভাবে কিছু একটা পর্যবেক্ষন করতে লাগলো সে। যেটা খুবই অসহ্য লাগলো তিথীর কাছে। বিরক্ত নিয়ে চোখ সরিয়ে আরো জোরে হাঁটা শুরু করলো সে। কিছুটা এগিয়েই রিক্সা পেয়ে গেলো তিথী। সেটাইতেই উঠে পরলো। রবিন পিছু নিয়েছে কিনা দেখার জন্য পিছনে তাকালো সে। এইসব বখাটে ছেলেদের বিশ্বাস নেই। নাহ, রবিন আগের জায়গাতেই বসে আছে। তবে দৃষ্টি তিথীর দিকে।
বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে বিদায় দিলো রিক্সাওয়ালাকে। বড় একটা গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো তিথীর। এতোবড় বাসা! সামনেই দুপাশে দুটো ফুলের বাগান। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাগানটাই খুব যত্ন নেওয়া হয়। বাসার একপাশে অনেকগুলো ফলের গাছ ও আছে। সাড়িবেধে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো। তিথী এক পা একপা করে এগুতে লাগলো সামনে। এমন সময় কোত্থেকে একটা কুকুর এসে তিথীর সামনে এসে দাড়িয়ে হুংকার করতে লাগলো। তিথী ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। তিথীর অবচেতন মন শুনতে পাচ্ছে কুকুরটা ওকে বলছে..’কোন সাহসে এইখানে আসছোস তুই? আমার কাছ থেকে অনুমতি না দিয়া কেমনে ঢুকলি বাসায়? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। তোরে আজ আমি আমার কুত্তাবন্ধুদের নিয়া একসাথে আহার করমু। আমাগো কুত্তাসমাজে তোরে আজ বলি দিমুহ। ‘
কুকুরটি এখনো ঘেউঘেউ করেই যাচ্ছে। তিথী ঢোক গিলে এক পা একপা করে পিছাচ্ছে। কুকুরটি তেড়ে আসতে লাগলো ওর দিকে। তখনই একটা বাচ্চা মেয়ের মিষ্টি গলা ভেসে আসলো। সে বললো..
— হেয় টমি, She’s our guest. ওকে ছেড়ে দাও। গেস্টদের সাথে বাজে বিহেভ করলে আমাদের বদনাম হবে। যাও এখান থেকে।
কুকুরটি কি বুঝলো কে জানে, মাথাটা নিচু করে সেখান থেকে চলে গেল।
তিথী যেনো হাফছেড়ে বাচলো। শান্তির নিশ্বাস নিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকালো তিথী। বয়স বড়জোর ১০ হবে। তিথীর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে দুহাত বেধে তীক্ষ্ণ ভাবে তিথিকে দেখছে সে। কত্ত কিউট লাগছে মেয়েটাকে তিথীর কাছে৷ তিথী কিছু না ভেবেই মেয়েটার গালে ধরে টেনে দিলো। মেয়েটি বিরক্তি নিয়ে বললো..
— উফফ, গাল ছিড়ে দিবে নাকি? কে তুমি?
তিথী ভ্রু কুচকে মেয়েটিকে বললো..
— আমাকে চিনোনা৷ তাহলে কুকুরটিকে মিথ্যে কেন বললে যে আমি তোমাদের গেস্ট?
— সেটা না বললে ও তোমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলতো।
তিথী হেসে বললো
— নাম কি তোমার মিষ্টি মেয়ে?
— ইভানা।
নামটা শুনে তিথীর বুকে একটা ধাক্কা লাগলো। এই নামটা ওর কাছে বেশ পরিচিত মনে হলো।
মেয়েটি তিথীকে কিছুক্ষণ দেখে বললো
— মাম্মি বোধহয় তোমার কথায় বলছিলো। তুমিই কি মাম্মির সাথে দেখা করতে এসেছো?
— কে তোমার মাম্মি?
— আমার মা-ই তো আমার মাম্মি।
তিথী হাসলো। বললো..
— আমি হয়তো তোমার মাম্মির সাথেই দেখা করতে এসেছি।
মেয়েটি গম্ভীরমুখে বললো..
— হুম্মম্ম। চলো ভিতরে৷
তিথীকে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসতে বলে মেয়েটি ভিতরে চলে গেলো।
তিথী সোফায় বসে আড়চোখে তাকালো চারপাশটায়। বেশ গুছানো বাসা। অনেক দামী দামী শোপিচ দিয়ে সাজানো চারিদিকটায়। প্রচন্ড রকমের ধনী ওরা, বাসা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
.
কিছুক্ষণ পর মেয়েটির মা আর একজন তিথীর বয়সী মেয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। তিথী ওদের দেখে দাড়িয়ে পরলো।
— আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম। হালকা হেসে জবাব দিলো মেয়েটির মা। তিথী উনাকে পলকহীন ভাবে দেখতে লাগলো। বেশ সুন্দরী মহিলা। ৯/১০ বছরের একটা মেয়ে আছে উনার দেখে বুঝাই যাচ্ছেনা।
তিথীকে নিরব থাকতে দেখে মহিলা বললেন৷
— নাম কি তোমার?
— তিথী।
— শুধুই তিথী? আগেপাছে কিছুই নেই?
তিথী হাসলো। বললো..
— যার আগেপাছে কোনো শক্ত খুটি নেই, তার নামের আগেপাছে কিছু থাকলেই কি আর না থাকলেই কি।
— মানে? অবাক হয়ে বললেন মহিলাটি।
— তিথী মেহবুব।
পাশে থাকা মেয়েটি বললো..
— তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি আমার বয়সীই হবে। পারবে পড়াতে?
— কাকে পড়াতে হবে?
— আমার মেয়ে ইভানার জন্যই টিচার খোজছিলাম। ও এবার ক্লাস ফাইভে পড়ে। ও অবশ্য আরো কয়েক জায়গায় প্রাইভেট কোচিং করে, কিন্তু এই বছরটা খুবই ইম্পরট্যান্ট ওর জন্য। তাই আমরা এক্সট্রাভাবে ওকে সময় দিতে চাচ্ছি আরো। মেয়েটির মা বললো।
— আমি আগেও অনেককে প্রাইভেট পড়িয়েছি৷ আশা করছি পারবো।
— ও কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ওর পড়াটা আলাদা৷
তিথী হাসল। মহিলাটি বলল..
— তুমি কিসে পড়?
— অনার্সে এডমিশন নিয়েছি এইবার। ক্লাস শুরু হয়নি এখনো।
— আমার বোন রিয়ানা ও অনার্সে পড়ে। সেও পারতো ওকে পড়াতে৷ কিন্তু নিজের আন্টির কাছে সে পড়তে চায়না৷ তাই আমরা বিজ্ঞাপন দিয়েছি বাইরে।
ওকে দুইবেলা পড়াতে হবে তোমায়। সকালে একবার আর বিকেলে একবার।
সপ্তাহে একদিন তো বন্ধ থাকবেই। তোমার প্রয়োজন মতো ছুটিও পাবে। মাসে ৬০০০ টাকা দিবো বেতন বাবদ। যদি রাজি থাকো তবে আগামীকাল থেকেই পড়াতে পারো।
এইমুহূর্তে তিথীর কাছে এই অফার টা যেনো মেঘ না চাইতেও বৃষ্টির মতো মনে হলো।
আরো কিছুক্ষণ আলোচনা পর্ব সেরে ঠিক হলো প্রথম শিফট সকাল ৬.০০-৭.০০ আর দ্বিতীয় শিফট বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত পড়াবে। আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে এলো তিথী।
— এই তিথী, ওই বউ পুতুলটা আমাকে দে।
— না, এইটা আমার পুতুল। আমি দিবোনা কাউকে। মুখ বাকা করে বললো তিথী। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে আবারও বললো, যদি তোমার ওই বর পুতুলটা আমাকে দাও, তাহলেই আমি তোমাকে এই বউ পুতুলটা দিবো।
ছেলেটি কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলো। তারপর হেসে বললো..
— শোন, তোর ওই বউ পুতুলটার সাথে আমি আমার বর পুতুলটার বিয়ে দেই চল।
— বিয়ে দিলে কি হবে? অবাক হয়ে বললো তিথী।
— ওদেরকে বিয়ে করাবো আমরা, তারপর আমার বর পুতুলটা তুই নিবি, আর তোর বউ পুতুলটা আমি নিবো। বুঝলি।
তিথী হেসে বললো…
— আচ্ছা।
অবশেষে পুতুলের বিয়ে সম্পন্ন করে নিজেদের মধ্যে পুতুল বদল করে নিলো ওরা।
ছেলেটি বললো..
— তুই বড় হলে তোর তো বিয়ে হয়ে যাবে, আমিও বিয়ে করবো। তখন কি হবে?
অবাক হয়ে তিথী বললো
— কি হবে?
— শোন, আমরা যদি অন্যকাউকে বিয়ে করি, তখন ওরা যদি আমাদের পুতুলটা কেড়ে নেয়? আর যদি কখনো ফেরত না দেয়?
নিজেদের প্রিয় পুতুল হারনোর ভয় জেকে বসলো দুজনের মাথায়।
তিথী একটা বুদ্ধি বের করে বললো..
— শুনো, আমরা অন্যকাউকে বিয়ে করবোনা। তুমি আমারে বিয়ে করবা, আর আমি তোমারে বিয়ে করবো। তাইলে আর কেউ আমাদের পুতুল আমাদের কাছ থেকে নিতে পারবোনা।
ছেলেটি একটা মিষ্টি হাসি হেসে বললো…
— ঠিক বলছিস।
পুরো শরীরটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে তিথীর। এতোক্ষণ স্বপ্নের শহরে ঘুরে এসেছে সে। প্রায়ই রাতে সে নিজের হারানো দিনগুলো দেখতে পায়। অতীতে ফিরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। যতক্ষণ স্বপ্নে থাকে ততক্ষণ যেনো সবই ঠিক থাকে, ঘুমটা ভেংগে গেলেই মনটা ব্যাথায় ভরে যায় তিথীর। পুরোনো সেই বন্ধুটাকে বেশ মনে পরে তিথীর। সেই বন্ধুটি ওর অস্তিত্বে মিশে আছে। কিন্তু এই অস্তিত্বের খোজ কি তিথী কখনো পাবে?
কেন হারিয়ে ফেললো ওর প্রাণপ্রিয় বন্ধুটাকে? কেন একটা ঝড় এসে সবটা উলট পালট করে দিলো?
চোখদুটো ভিজে গেছে তিথীর। ঘরের লাইটটা জালিয়ে নিজের বিশাল ব্যাগটার কাছে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগটা খোলে বের করবো সেই পুতুলটা৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে এই পুতুলটার দিকে। এই পুতুলটাই ওর প্রাণপ্রিয় বন্ধুর একমাত্র স্মৃতি। বন্ধুটাকে তো ও হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু প্রাণ থাকতে এই পুতুলটাকে সে হারাতে দিবেনা।
পুতুলটায় কিছুক্ষণ হাত বুলালো তিথী। চোখ থেকে পানিগুলো এক ফুটা দুই ফুটা করে ঝরছে।
পুতুলটাকে পরম আবেশে ছুয়ে দিয়ে ভেজা গলায় বললো…
— তোমার দেওয়া পুতুলটা আমি এখনো নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। শুধু তোমাকে রাখতে পারলাম না। তুমি কোথায় আছো? কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে সেদিন? আমার কথা কেন ভাবলেনা একটুও? আচ্ছা, আমার কথা কি তোমার মনে আছে? ভুলে গেছো আমায়? আমি তোমায় ভুলি নি বিশ্বাস করো। ভুলতে পারিনা। মনে পড়ে তোমাকে, খুব মনে পড়ে৷
পুতুলটাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে তিথী। এইটা ওর অভ্যাস। পুরোনো সেই প্রিয় বন্ধুটিকে এই পুতুলটার মাঝেই খোজে পায় সে।
To be Continue….