হৃদয়ও_মাঝারে-০৪,০৫

0
958

#হৃদয়ও_মাঝারে-০৪,০৫
তন্বী ইসলাম
০৪

ভোরে ফজরের আযান কানে আসার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তিথীর। চোখদুটো ডলতে ডলতে বাইরে বের হয়ে শরীরটাকে টানা দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অযু করে নামাজ সেড়ে নেয় তিথী। নামাজ থেকে উঠে কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে ইভানাকে পড়ানোর উদ্দেশ্যে।
ইভানাদের বাসায় পৌছাতে দশ মিনিট লেট হয়ে যায় তিথীর। সবার সাথে সৌজন্যতামুলক ব্যবহার করে ইভানার রুমে গিয়ে ওকে পড়াতে শুরু করে।
ইভানা মেয়েটা খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে। আর দশটা বাচ্চাদের মতো ইঁচড়েপাকা নয় মোটেও। পড়ালেখাতেও বেশ ভালো মেয়েটা, একদিনেই বুঝে গেছে তিথী।
ইভানা পড়ার একফাকে তিথীর দিকে তাকায়। তিথী তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ইভানা বলে…
— কি দেখেন ম্যাম?
তিথী কিছুটা নড়েচড়ে বলে…
— কই, কিছু দেখিনা তো। তুমি পড়।
ইভানা আবারও পড়ায় মনোযোগ দেয়।

কিছুক্ষণ পর ইভানার মা একটা ট্রেতে করে এক বাটি বিস্কিট আর এক কাপ চা নিয়ে এলো। তিথী ভদ্রতার সহিত বললো…
— এগুলোর দরকার নেই ম্যাম।
— দরকার না থাকলেই কি খাওয়া যায়না? আমরা সবসময় যা করি, সবকিছুই কি দরকারের জন্যই করি?
তিথীর খুব ভালো লাগলো কথাটা৷ আসলেই মানুষ যা করে সবকিছু দরকারে করেনা, কখনো কখনো পরিস্থিতি বাধ্য করে।
ইভানার মা আবারও বললো…
— আর আমাকে ম্যাম ডাকবেনা, বুঝলে? তুমি আমার ছোট বোনের বয়সী। আমাকে আপু ডাকতে পারো, চাইলে ভাবীও ডাকতে পারো।
তিথী হাসলো। কিছু বললো না।
ইভানার পড়া শেষ করে ইভানার মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে চলে এলো তিথী। ব্রেকফাস্ট করে আসার জন্য জোরাজুরি করেছিলো মহিলাটি। কিন্তু তিথী ভদ্রভাবে সেটাকে উপেক্ষা করে চলে এসেছে।
বাসায় ফিরে সকালের রান্নাটা সেড়ে নিলো তিথী। খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারো বেরিয়ে পরলো চাকরির আশায়।
একটা কোম্পানির সামনে গিয়ে দাড়ালো তিথী। গেইটের কাছে দারোয়ান বসে ঝিমুচ্ছে। তিথীর পায়ের শব্দে ধরফরিয়ে উঠে দাড়ায় দারোয়ান। তিথী লোকটির সামনে দাড়ানো। তিথীকে দেখে ব্রু বাকা করে বললো..
.
— কি চাই?
— চাকরি। সরাসরি বললো তিথী।
লোকটি হু হু করে হেসে দিলো তিথীর কথায়। তিথী বিরক্তিভাবে লোকটির হাসি দেখছে। লোকটি হাসতে হাসতে বললো..
— আমারে কেডায় চাকরি দেয়। আমি নিজেই পরের চাকরি করি। আপনেরে কেমনে চাকরি দিমু আমি। লোকটি আবারও হাসলো। তিথী এবার বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো। বললো
— আপনার কাছে আমি কি চাকরি চেয়েছি?
— তয়? অবাক হয়ে বললো লোকটি…
— আমি ভিতরে যাবো।
— দুঃখিত আপা। ভিতরে যাওন যাইতোনা। আপনে আর দুইদিন আগে আইলে হয়তো চাকরি পাইতেন। দুইদিন আগে লোক নিছে ওরা। লোক নেওয়া শেষ। আমারে না করছে যেন বাইরের কাউরে ঢুকবার না দেই।
তিথী একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরে এলো সেখান থেকে।
আরো কয়েক জায়গায় চেষ্টা করলো তিথী। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, অভাগী যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়..
তিথীর ক্ষেত্রেও সেইরকম কিছুই হচ্ছে।

দুপুরের পরে বাসায় ফিরে তিথী। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাওয়া সেড়ে নেয় দ্রুত। বিকেলে আবার প্রাইভেট পড়াতে যেতে হবে। একটু রেস্ট নেওয়া দরকার এখন। শরীরটা বিছানায় এলিয়েছে কি তখনই ঘরে ঢুকলো ময়না। ময়নাকে দেখে তিথী বসতে বসতে বললো.
— আরে ময়না, এসো এসো।
ময়না এসে তিথীর পাশে বসলো। মুখটা ভার হয়ে আছে ময়নার। তিথী বললো…
— মন খারাপ তোমার?
— নাহ!
— তাহলে মুখটাকে এমন মলিন দেখাচ্ছে যে?
— আব্বায় বকছে।
তিথীর মুখটাও কালো হয়ে গেলো। ময়না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর তিথী বললো…
— সেদিন কোথায় গিয়েছিলে ময়না? আর এতো রাত করে ওই বখাটে ছেলেটার সাথেই বা ফিরলে কেন?
— রবিন ভাই বখাটে না আপা। বখাটে তো ওর ওই বন্ধুরা।
তিথী অবাক হলো।
— কিন্তু আমিতো জানি, ওই ছেলেটা বখাটেদের লিডার।
— রবিন ভাই কোনো লিডার ফিডার নাহ। রবিন ভাইয়েরা অনেক বড়লোক, ওগো পাওয়ার অনেক। হের লাইগা হের খারাপ খারাপ বন্ধুরা হের নাম বেইচ্চা খায়।
তিথী চোখমুখ শক্ত করে বললো..
— তুমি যতোই বলো ময়না, আমি একটুও বিশ্বাস করিনা, যে ওই ছেলেটা ভালো। ভালো ছেলেদের কিভাবে খারাপ বন্ধু থাকতে পারে? আর ভালো হলে কি সেইদিন আমার সাথে বাজারে এইরকম একটা জঘন্য কাজ করতে পারতো?
— কি করছে রবিন ভাই আপনের লগে?
— যা করেছে, সেটা খুবই জঘন্য কাজ। তোমার কি হয়েছিলো সেদিন?
ময়না মাথা নিচু করে ফেললো। বললো
— হেইদিন আমি দুপুরের দিকে দোকানে গেছিলাম, দোকান থেইকা যখন বাসায় আসমু তহন দেখি একটা লোক সাপের খেলা দেখাইতাছে৷ অনেক মানুষ খেলা দেখতাছিলো তহন৷ আমিও গেছিলাম খেলা দেখতে। বিকালে খেলা শেষ হইলো। আমি ফিরতে নিলে দেহি আমার হাত কেউ ধইরা রাখছে। অনেক টানাটানি কইরাও ছুটতে পারতাছিলাম না। যহনই চিতকার দিমু, তহনই ওই পুলাগুলা আমার মুখে রুমাল চাইপা ধরলো।
— পুলাগুলো মানে? অনেকগুলো ছেলে ছিলো?
— হো। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো ময়না। তিথী আঁৎকে উঠলো। বললো…
— তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তো ওরা? কি হয়েছিলো তারপর?
— আমার যহন জ্ঞান আইলো তহন দেখলাম রাইত হইয়া গেছে। একটা ঘরের মইধ্যে বন্দি আমি। আমি কানতে লাগলাম জোরে জোরে। কিন্তু কেউ আইলোনা আমারে বাচাইতে।
ময়না একটু থামলো, জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে আবারো বললো..
— একটু পরে হুনি, বাইরে থেইক্কা কয়েকজন বলাবলি করতাছে, আমারে নাকি আগে নষ্ট করবো এরপর আমারে মাইরা ফালাইবো। ময়না কেঁদে দিলো এইটুকু বলে।
তিথী আতংকিত চোখে তাকিয়ে আছে ময়নার দিকে। ময়নার চোখ দুটো ছলছল করছে।

— আমারে ওরা ঘরে বন্দী কইরা থুইছে তহন ভাংগা বেড়া দিয়া দেখলাম হুন্ডা নিয়া রবিন ভাই আইছে। রবিন ভাইরে দেইখা আমি ভাবলাম হেও মনই ওগো লগে আছে। আমি আরো ভয় পাইলাম। কিন্তু ওদের কথাগুলো শুইনা মনে হইলো রবিন ভাই কিছুই জানেনা, আর হেরাও রবিন ভাইরে এইখান থেইকা যাইনের লাইগা তাড়া দিতাছে। রবিন ভাই যখন যাইতে নিলো, আমার আত্মা কাইপা উঠলো। আমি জোরে চিল্লাইয়া ডাকলাম রবিন ভাইরে।
আমার ডাক শুইনা রবিন ভাই থাইমা গেল। বন্ধুদের সাথে ধস্তাধস্তি কইরা ঘরে আইসা দেখলো আমি কান্তাছি। আমি সব কইলাম ভাইয়েরে৷ পরে ওর বন্ধুরারে মাইরা আমারে ওইখান থেইকা নিয়া আইলো।
ময়না কাঁদছে। তিথী স্তব্ধ। কি শুনলো সে এতোক্ষন? রবিনকে কখনো তার কাছে এতোটা ভাল মনে হয়নি। কিন্তু ময়না যে বর্ণনা দিলো, তাতে তো মনে হয়না ছেলেটা খারাপ। তাহলে আমার সাথে কেন এমন করেছিলো সেদিন?
ময়নার জন্য খারাপ লাগছে বড্ড। মেয়েটা শক পেয়েছে অনেক।

বিকেলে ইভানাকে পড়ানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল তিথী। হেঁটেই যাচ্ছে সে। একটু আগে আগেই বেরিয়েছে তিথী। যেনো হেঁটে গিয়েও টাইমটা মেইনটেইন করতে পারে। রিক্সা করে গিয়ে টাকাগুলো খরচ করতে চাচ্ছেনা সে। ইভানাকে পড়ানো শেষে ফিরতে নিলে ইভানার মা তিথীকে বললো৷
— বসো তিথী। কথা বলি তোমার সাথে৷
— সন্ধ্যে হয়ে গেছে ভাবী। আমাকে ফিরতে হবে।
— কোনো সমস্যা হবেনা ফিরতে। অনেক রাত পর্যন্তই মানুষ এর যাতায়াত থাকে রাস্তায়। রিয়ানাও তাল মিলাল সাথে। অগত্যা বসতে হলো তিথীকে।

— তোমার কে কে আছে তিথী? শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করলো ইভানার মা।
তিথী একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো..
— আমার কেউ নেই ভাবী।
— কেউ নেই মানে?
— আমার এই দুনিয়াতে কেউ নেই। আমি এতিম।
বুকে ব্যাথা অনুভব করলো ইভানার মা।
— কার কাছে থাকো তুমি? রিয়ানা বলে উঠলো পাশ থেকে।
তিথী একটা মিষ্টি হাসি হেসে বললো..
— নয় বছর বয়স থেকে এতিমখানায় ছিলাম। কিছুদিন আগে ১৮ বছর পার হওয়ায় সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে আমাকে। সেখানে থেকেই ইন্টার পাশ করেছি, ভার্সিটিতেও এডমিশন নিয়েছি।
রিয়ানা আর ইভানার আম্মু দুজনেই বড় রকমের শক খেলো। তিথী একটা এতিমখানার মেয়ে? কেউ নেই দুনিয়াতে মেয়েটার? তবুও মেয়েটা কিভাবে এতোটা হাসিখুশি থাকে?
ইভানার মা ব্যাথিত কন্ঠে আবারও বললো..
— এখন কোথায় থাকো তুমি?
— বস্তিতে।

বাতাসের বেগ বেড়ে চলেছে, সেই সাথে মনের ঝড়টাও আস্তে আস্তে বাড়ছে। এই মনের ঝড়ের সাথে কেউ কখনো পেড়ে উঠে না। মনের ঝড়টা বড্ড বেসামাল। যখন তখন উঠে পরে। এই ঝড়টাকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা তিথী। কিছুক্ষণ আগে নিজের কষ্টের কথাগুলো ব্যক্ত করায় মনের কষ্টটা কিছুটা হালকা হয়েছে। কিন্তু ঝড়টা বেড়ে গেছে কিছু একটা না বলতে পারায়। তিথীর মনে কেউ আছে কিনা, সেটা ওরা জিজ্ঞেস করেনি, করলে হয়তো সেটা বলে মনটাকে হালকা করতো তিথী৷ কিন্তু না, এই ব্যাপারে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, তাই তিথীর মনটা ভারী হয়ে গেছে খুব।
প্রচন্ডরকম বাতাস বইছে বাইরে, এই বাতাসের মধ্যেই তারাহুরো করে আসছে তিথী। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে, তাই রক্সা নিয়ে নেওয়াটাই জরুরি। কিন্তু একটা রিক্সাও নেই আশেপাশে। তারাহুরো করে আসতে গিয়ে কিছু একটার সাথে বাড়ি খেলো তিথী। সামনে তাকাতেই দেখলো কেউ একজন দাড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে। মুহুর্তেই ময়নার বলা ঘটনাটার কথা মনে হয়ে গেলো তিথীর। অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো ওর। অন্ধকারে ভালো করে মুখটাও দেখা যাচ্ছেনা তিথীর। লোকটি নিরবতা ভেংগে বললো..
— এতো রাতে বাইরে থাকা, কোনো ভদ্র মেয়ের কাজ না। আর এতো রাতে বাইরে ঘুরাঘুরি করা কোনো ভদ্র মেয়ের জন্য সেইফ না। চলো, আমি তোমাকে পৌছে দিচ্ছি।
রেগে গেলো তিথী। ছেলেটার মুখে নিজের চরিত্র নিয়ে বলা কথাটা ঠিক হজম করতে পারলোনা সে। তাও চুপ মেরে গেলো। কোনো বাড়াবাড়ি করবেনা সে। যদি কিছু করে বসে। অজানা ভয় গ্রাস করলো তিথীকে। ছেলেটি তিথীর হাত ধরে বাইকে বসাতে নিলেই এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো তিথী। চেচিয়ে বললো..
— দুরে থাকুন, আমাকে টাচ করার সাহস দেখাবেন না। আমি নিজেই যেতে পারবো। বলেই হনহন করে হাঁটতে লাগলো তিথী৷ একটা ল্যাম্পপোস্ট এর কাছে আসতেই তিথী পিছনে ফিরে দেখতে পেলো, ছেলেটা বাইক নিয়ে এদিকেই আসছে। মুখটা দেখে অবাকই হলো সে। কারণ ছেলেটা আর কেউ না, রবিন।
.
তিথী মুখ ঘুরিয়ে আবারও হাঁটা ধরলো। ছেলেটা তিথীর পাশাপাশি এসেই বাইকের স্পিড কমিয়ে দিলো। তিথী রেগে গেলো।
ছেলেটি বললো..
— মেয়েদের এতো রাগ থাকতে নেই। এতো রাতে এই ঝরো হাওয়ায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে তো? তিথী কিছু বলছেনা। একমনে হেটেই যাচ্ছে। একসময় রবিন বিরক্ত হয়ে বললো..
— তোমাকে দেখে ভালো মেয়ে মনে হয়েছিলো, তাই সাহায্য করতে এসেছিলাম। আমাকে যদি মেয়েদের পিছনে ঘুরা ছ্যচড়া ছেলেদের মতো ভাবো তাহলে ভুল ভাববে।
তিথী দাঁড়িয়ে গেলো। চোখমুখ শক্ত করে বললো
— কে বলেছে আমাকে সাহায্য করতে? যান নিজের কাজে, আর আমাকে শান্তিতে যেতে দিন।
রবিন আকস্মিক রেগে গিয়েও কিছু বললোনা। চলে গেলো সেখান থেকে। তিথী যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।
নিজের গন্তব্যে পা বাড়ালো সে।

রাতের শেষ দিকে আবারও ঘুম ভেংগে গেলো তিথীর। তিথীর সেই বন্ধুটিকে হারানোর দৃশ্যটা চোখে ভাসছে এখনো। এতোক্ষণ স্বপ্নে এটাই দেখছিলো সে। যেদিন এই ছোট্ট দুটো বাচ্চাকে আলাদা করা হয়েছিলো, সেদিন কি হৃদয়বিদারক কান্নাই না কেঁদেছিলো দুজনে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি সেদিন।
তিথী আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ঘুম ধরা দেয়না তার দুচোখে।
উঠে পরে তিথী। কিছুক্ষণ পর ফজরের আযান দিবে। আজ খুব ব্যস্ত থাকবে তিথী। আজ থেকে কলেজ এ যাবে সে। ক্লাসে এটেন্ট করবে। যদিও তিথী জানে, সে রেগুলার ক্লাস করতে পারবেনা, তবুও তো একটা অন্যরকম অনুভূতি তো আছেই মনে।
সকালে ইভানাকে প্রাইভেট পড়িয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসে সে। গোসল সেড়ে হোটেল থেকে পরোটা আর ভাজি কিনে এনে খেয়ে নেয় আগে৷ রান্না করেনি আজ। সময় নেই রান্না করার মতো।
তিথী একটা পিংক কালারে থ্রিপিস পরে নেয়। পিংক কালারের হালকা লিপস্টিপ, চোখে গারো করে কাজল আর হিজাব করে বেরিয়ে পরে তিথী।
গন্তব্য তার ভার্সিটি যাওয়া। আজ তার প্রথম ক্লাস। ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই ভার্সিটি গিয়ে পৌছায় তিথী।

To be Continue……

[সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি ]

#হৃদয়ও_মাঝারে-০৫
তন্বী ইসলাম

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে একটা বইয়ের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে তিথী। দেখে মনে হচ্ছে খুব মনোযোগ সহকারে বই পড়ছে সে। কিছুক্ষণ আগে ক্লাসে এটেন্ট করেছিলো তিথী। একজন স্যার এসে সকলের সাথে পরিচয় পর্ব সেড়ে বিদায় নেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। প্রথম দিন হওয়ায় কোনো ক্লাস হবে না, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়।
তিথীর পরিচিত কেউ নেই এখানে। কাউকেই চিনেনা সে। যতক্ষণ ক্লাসে ছিলো, চুপচাপ বসে মনোযোগ দিয়ে স্যারের কথা শুনছিলো শুধু৷ এখনো চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকে উঠে পরলো বাসার উদ্দেশ্যে।
ভার্সিটির গেইট দিয়ে বের হয়ে ডানে মোড় ধরে এগুতে থাকলো তিথী। হেঁটেই বাসায় যাবে সে। হাতে যথেষ্ট সময় আছে। রিক্সা করে গেলে, বাসা পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া নেবে। শুধু শুধু টাকা খরচ করতে চায়না সে। বলা তো যায়না, কখন কি প্রয়োজন।
.
বাসায় এসে গোসল করার উদ্দেশ্যে বাথরুমে গেলো তিথী। বস্তির বাথরুম বলতে যা বোঝায় আরকি, পুরুষ, মহিলা একই সাথে অর্ধনগ্ন হয়ে গোসল করছে, একই সাথে অনেক মহিলা পুরুষ গিজগিজ করছে গোসলখানাটায়। দুপুরবেলা হওয়ায়, ভীরটা বেশিই হয়ে গেছে সেখানে। তিথীত গা ঘিনঘিন করছে দেখেই। গোসল না করেই রুমে চলে আসতে উদ্দত হলো তিথী। একজন বয়স্ক মহিলা তিথীকে ফেরত আসতে দেখে বললো…
— ও মাইয়া, যাও গা কে? আহো আমগো লগে। নাহায়া লাও আইয়া। কিচ্ছু হইবো না। বেটা মানুষ দেইক্ষা শরমের কিচ্ছু নাই। আমরা আমাই, আহো আহো।
তিথী বিনিময়ে কিছু বলল না। বিরক্তি ভাব নিয়ে ফিরে এলো রুমে। গা জ্বালা করছে ওর। বস্তির নামুষ গুলোর মধ্যে ন্যুনতম সেন্স বলতে নেই। কিভাবে অর্ধনগ্ন হয়ে পুরুষ মহিলা মিলে একসাথে গোসল করছে। আবার ওকেও ডাকছে কতোগুলো পুরুষের মাঝে দাঁড়িয়ে গোসল করতে, ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছে তিথীর। একটা চাকরি পেলে কবেই চলে যেত এখান থেকে।

বিকেলে গোসলখানা ফাকা হলে স্যালোয়াল কামিজ নিয়ে গোসল করতে ঢুকে তিথী। গোসল শেষ করে এসে ভাত খেয়ে রেডি হয় দ্রুত। এমনিতেই আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই রিক্সা নিয়ে চলে আসে ইভানাদের বাসায়।
ইভানাদের বাসাটা অনেক বড়, সে হিসেবে মানুষ খুবই কম দেখেছে তিথী। এতো বড় বাসা দেখে ওর মনে প্রশ্ন জাগে, এই বাসায় কে কে থাকে৷
ইভানাকে পড়ানোর এক ফাকে রিয়ানা আসে ইভানার রুমে। রিয়ানাকে দেখে একটা সৌজন্যতার হাসি হেসে তিথী বলে..
— বসুন প্লিজ।
রিয়ানা হেসে বলে..
— আমি তোমার বয়সীই হবো তিথী। আমাকে তুমি করেই বলতে পারো।
তিথী হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। রিয়ানা তিথীকে কিছুক্ষণ ভালো করে দেখে। তারপর শান্ত গলায় বলে..
— তোমাকে দেখে মনেই হয়না, তুমি এতিমখানার মেয়ে। মনে হয়, তুমি অনেক ভালো একটা ফ্যামিলির মেয়ে।
তিথী হেসে বলে
— এতিমখানায় বড় হলে কি কেউ ভালো ফ্যালিমির হয়না?
— সে হয়। কিন্তু..
এতটুকু বলে কিছু একটা চিন্তা করে রিয়ানা। তিথী হেসে কথা ঘুরিয়ে বলে..
— তুমি ইভানার খালা, তাইনা?
— ওহ তিথী, খালা বলোনা, প্লিজ। নিজেকে কেমন বুড়ি বুড়ি লাগে। চোখমুখ কুচকে বলে রিয়ানা।
তিথী হেসে দেয়। রিয়ানা বলে
— তুমি খুবই অদ্ভুত তিথী। তোমার এতো দুঃখ, এই দুনিয়াতে কেউ নেই তোমার, তাও কথায় কথায় কিভাবে হাসতে পারো তুমি। আমি খুবই অবাক।
এবারেও তিথী কিছু বললোনা। বিনিময়ে শুধু নিঃশব্দে হাসলো।
রিয়ানা প্রসঙ্গ পালটে বললো
— সে যাইহোক, তুমি ঠিকই ধরেছো। আমি ইভানার খালামনি। ওর মা আমার আপন বড় বোন। এটা আমার দুলাভাইয়ের বাসা।
— সেটা আমি বুঝতে পেরেছি রিয়ানা।
— আর কি কি বুঝতে পেরেছো তুমি?
তিথী কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, তারপর বললো৷
— আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।
নিজের প্রশংসা শুনে রিয়ানা খুশি হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো…
— কিভাবে বুঝলে?
— তোমরা এতোটা ধনী হয়েও আমার মতো একটা এতিমখানায় বড় হওয়া মেয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করছো, আমি বস্তিতে থাকি শুনেও আমাকে একটুও ঘৃণা করোনি, অবজ্ঞা করোনি, উল্টো আমার সাথে ফ্রেন্ডলি বিহেভিয়ার করছো, এর থেকে কি প্রমান হয়না, তুমি যথেষ্টই ভালো একটা মেয়ে।
রিয়ানা মুচকি হাসলো তিথীর কথায়। বললো..
— তোমার সাথে আমার একটা মিল আছে তিথী।
— আমার সাথে তোমার কি মিল থাকতে পারে? অবাক হয়ে বললো তিথী।
রিয়ানার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো, মুখটায় ঘন কালো মেঘ হানা দিয়েছে এই মুহুর্তে। থমথমে মুখ নিয়ে সে বললো
— তুমিও এতিম, আমিও এতিম।
তিথী অবাক হলো রিয়ানার কথায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিয়ানা আবারও বললো..
— পার্থক্য শুধু এটাই, তোমার মাথার উপর কোনো ছাদ নেই, আর আমার মাথার উপর ছাদ আছে, আর সেই ছাদটা হলো আমার বোন। মানে ইভানার মা।

বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় ৭:৩০ বেজে গেছে। পরনের কাপরগুলো পাল্টে দ্রুত রান্না চাপালো তিথী। রান্না সেড়ে বই নিয়ে বসে পরলো তিথী। কিছুক্ষণ বইয়ে মুখ গুজে আবারও বইটা রেখে দিলো আগের জায়গায়।
হাতের জমা টাকাগুলো প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। গতকাল তিনটে বই কিনেছে সে। ক্লাস করে বাসায় পড়তে না পারলে কিছুই মাথায় থাকবেনা ওর। বাকি বইগুলো ইভানার বেতনের টাকা পেলেই কিনে নিবে।
পড়া থেকে উঠে জগটা নিয়ে কলে গেলো পানি আনতে। একটা মধ্যবয়স্ক লোক কলপাড়ের সামনে বসে সিগারেট টানছে। তিথীকে দেখে আঁড়চোখে বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছে কিভাবে যেনো। ব্যাপারটা তিথীর চোখ এড়ালোনা। তবুও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো তিথী। পানি নিয়ে এসে রাতের খাওয়া সেড়ে নিয়ে মশারী টাঙ্গিয়ে শুয়ে পরলো ও।
আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটা কি পৌনে একটা, তিথীর ঘুম ভেংগে গেলো। তিথী নিজের গায়ের কারো উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করছে, কেউ তিথীর গায়ে বাজেভাবে স্পর্শ করিছে খুব। অজানা ভয় গ্রাস করলো তিথীকে। প্রচন্ড ঘামছে তিথী। ওইদিকে, গায়ের উপর চলা বাজে স্পর্শটা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমে। তিথী কি করবে না করবে ভাবতে পারছেনা । আচমকায় এক কাজ করে বসলো তিথী। শুয়ে থেকেই তিথীর পায়ের হাটু দিয়ে লোকটির মেইন পয়েন্টে দিলো এক লাথি। বেশ জোরেশোরেই লাথি দেওয়ায় অদ্ভুতভাবে শব্দ করতে করতে দুরে সরে গেলো।তিথী ধরফরিয়ে উঠে বসে জোরেশোরে একটা চিৎকার দিলো, সাথে রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো ও। যেনো লোকটি পালাতে বা পারে, এতোক্ষণে লোকটি তিথীর সাথে প্রায় লড়াই শুরু করে দিয়েছে বের হওয়ার জন্য। অন্ধকারে লোকটির মুখ দেখতে না পেলেও, ওর সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তিথী। যেভাবেই হোক, লোকটিকে বের হতে দিবেনা সে। এরই মাঝে আরো কয়েকবার জোরে জোরে চেচালো তিথী। জমিলা সহ আরো অনেকেই এসে উপস্থিত হলো ঘরের সামনে। এতো রাতে তিথীর রুম থেকে চিৎকার শুনে অনেকেই ভরকে গেছিলো। ময়না ঘরে ঢুকেই আগে লাইটটা জ্বালানো। লোকটির মুখ দেখে অবাক হয়ে গেলো তিথী। এটাতো সেই লোক, যাকে পানি আনার সময় দেখছিলো সিগারেট খেতে।
ঘরে এলো কিভাবে?
জমিলা লোকটাকে দেখে তেড়ে এসে বললো..
— কিরে কবিইররা, তুই এইহানে এতো রাইতে কি করস?
লোকটি উঁচু গলায় বলতে লাগলো
— আমি কিছুই করি নাই, যা করোনের এই মাইয়াই করছে। জমিলা অবিশ্বাসের সুরে কপাল কুচকে বললেন
— কি করছে তিথী?
লোকটি কিছু বলতে পারলো না। জমিলা তিথীর দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ঘামছে অনেক। চোখেমুখে ভয়ের রেশ এখনো কাটেনি। ভয়ার্ত ভাবে তাকিয়ে আছে কবিরের দিকে। জমিলা তিথীকে নিরব থাকতে দেখে বললো..
— কি মাইয়া? এই কবিইররা তোমার ঘরে কেন?
তিথী করুন চোখে তাকালো জমিলার দিকে। কিছুক্ষণ শান্ত থেকে পুরো ঘটনাটা খোলে বললো জমিলাকে। জমিলা চোখমুখ শক্ত করে বললো
— তোর তো খবর আমি নিয়াই ছারমু কবিইররা রে, এর আগেই তুই বহুত আকাম করছোস৷ বস্তির পুরান লোক দেইখা বহুত মাফ করছি তোরে, কিন্তু অহন তুই শেষ। খালি সকালডা অইতে দে, দেখ আমি কি করবার পারি।
তিথীর দিকে তাকিয়ে জোরে ধমকের সুরে বললো..
— ঘুমাও কেমনে মাইয়া? দরজাটা কেমনে লাগাও.? দরজা ভালো কইরা লাগাইয়া ঘুমান লাগে জানোনা হেইডা?
তিথী মাথা নিচু করলো। কিচ্ছু বলার মতো শক্তি ওর এই মুহুর্তে নেই। কিছুক্ষণ আগে ওর উপর দিয়ে কি হতে যাচ্ছিলো, সেটা ভেবে আঁতকে উঠছে বারবার। জমিলা সেটা বুঝতে পেরে ময়নাকে বললো..
— ময়নালো, তুই আইজ তিথীর লগে থাক। দরজাডা ভালা কইরা লাগাইয়া ঘুমাইবি। আমি গেলাম।
জমিলা চলে গেলো। যাওয়ার আগে কবিরকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো সাথে।

তিথী এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। যখনই মনে হচ্ছে আজ ওর সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছিলো তখনই কেঁপে কেঁপে উঠছে সে। ময়না সেটা লক্ষ্য করে বললো..
— ডরাইয়ো না তিথী আপা। আম্মা যহন কইছে, তখন এর একটা পথ কইরাই ছাড়াবো মায়। তুমি তো মায়রে চিনোনা, মায় আমার এক কথার মানুষ।
তিথীর ভাবাবেগ হলো না।
ময়না এক পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো কিছুক্ষণের মাঝেই।
সারারাত এপাশ ওপাশ করে পার করলো তিথী। ঘুম তার চোখের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ফজর আজানের কিছুক্ষণ আগে ঘুম এসে তার চোখে ধরা দিলো।
..
ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখতেই থতমত খেয়ে গেলো তিথী। ১২ঃ৪৫ বাজে। মানে কি? টাইমটা কি নষ্ট হয়ে গেছে?
চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে গেলো সে। দুপুরের কড়া রোদ দেখে মনে হচ্ছে মোবাইলের টাইম ঠিকই আছে। তাহলে এতোক্ষণ সে ঘুমিয়েছে? এও সম্ভব? আবার পরক্ষনেই ভাবলো তিথী সারারাত না ঘুমানোর ফল এইটা।
ইভানার প্রাইভেট সাথে নিজের কলেজ ও মিস হলো আজ।
ব্রাশটা হাতে নিয়ে গোসলখানার দিকে গেলো সে। সেখানে যাওয়ার পথে পাশে কিছু একটা দেখে থমকে দাড়ালো তিথী।
গতকালের সেই কবির নামের লোকটাকে হাত পা বেধে ফেলে রাখা হয়েছে একপাশে। শরীর দেখে বুঝাই যাচ্ছে বেধড়ক মার খেয়েছে লোকটা। মুখ দিয়ে অস্ফুট গোঙ্গানী বের হচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর।
ময়না কোত্থেকে এসে তিথীর পাশে দাঁড়িয়ে একগাল হেঁসে বললো
— কইছিলাম না, মায় আমার এক কথার মানুষ। যা কয় তাই করে।
তিথী কপাল কুচকে বললো
— জমিলা খালায় করছে ওর এই অবস্থা?
ময়না মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্বোধন জানালো। তিথী একরাশ ঘৃণা নিয়ে লোকটিকে আরেকবার দেখে চলে গেলো সেখান থেকে।

বিকেলে ইভানাদের বাসায় গিয়ে বিশেষ লাভ হলোনা তিথীর। ইভানার মা তিথীকে হাসিমুখে বসতে বলে ভিতরে চলে গেলেন তিনি।
তিথী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আবারও চারপাশটা দেখতে লাগলো। ইভানার মা হাতে একটা মিষ্টির বাটি নিয়ে তিথীর সামনে এসে বসে মিষ্টির বাটিটা রাখতে রাখতে বললেন…
— মিষ্টি গুলো খেয়ে নাও তিথী।
তিথী একগাল হেঁসে বললো
— কিসের মিষ্টি ভাবি?
— আমার এক দেবর আসছিলো আজ। সেই এনেছে মিষ্টিগুলো। ইভানা আর রিয়ানা ওর সাথেই গেছে ওদের বাসায় বেড়াতে।
তিথী হেসে একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে ওতে ছোট করে একটা কামর বসালো। মিষ্টি খেতে খেতে বললো..
— আসলে ভাবী, আমি স্যরি, আজ সকালে আসতে পারিনি।
ইভানার মা আবারও হেসে ফেললো। বললো..
— আরে কেঁদে দিবে নাকি মেয়ে? কোনো প্রব্লেম নেই। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি হয়তো কোনো প্রব্লেমে ছিলে, তাই আসোনি। তিথী অবাক হলো মহিলার কথায়। তিথীকে অবাক করে দিয়ে উনি আবারও বললেন..
— রিয়ানা তো বলছিলো তোমার খবর নেয়া দরকার, তুমি কোনো বিপদে পড়েছো কিনা সেটা ভেবেই অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলো ও। তোমার বাসার ঠিকানা আমরা জানিনা, জানলে রিয়ানা ঠিকই চলে যেতো তোমার খোজে।
তিথী অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেল। কোথায় প্রাইভেট মিস হওয়ায় বকাঝকা অথবা রাগ দেখাবেন, সেখানে উনারা এতোটা পজিটিভ চিন্তা পান কোথা থেকে?
তিথী আশেপাশে চোখ বুলালো কিছুক্ষণ। ইভানার মা সেটা খেয়াল করে বললেন
— কোনো সমস্যা তিথী? কিছু কি খোজছো তুমি?
তিথী মুচকি হেসে বললো..
— প্রায় একমাস হয়ে যাচ্ছে আমি এখানে পড়াচ্ছি, ইভানা, রিয়ানা আর আপনাকে ছাড়া তো আর কাউকে দেখলাম না? ভাইয়া কোথায়? আর কে কে থাকেন এই বাসায় আপনারা?

তিথীর কথায় কিছুটা হতাশার ভঙ্গিতে উনি বললেন.
— আর তোমার ভাইয়া, ও তো আছে ওর বিজনেস নিয়ে। বছরের বেশিরভাগ সে বিদেশেই থাকে বিজনেসের জন্য। আর আছে বলতে একটা দেবর আছে, সেও ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরে। অবশ্য স্টুডেন্ট হিসেবে বেশ ভালো। প্রতিবারই ফার্স্ট ক্লাস পায়। মাস্টার্স ফাইনাল দিয়েছে। এখনো রেজাল্ট হয়নি। সে রাতে আসে, ভোর হতেই বেরিয়ে যায়। বাসায় থাকার মধ্যে আমি, আমার বোন আর ইভানাই থাকি।
তিথী মন খারাপ করে বললো
— তাহলে আজ আপনি একা হয়ে গেলেন।
— হুম। তা ঠিক,
মহিলা কিছু একটা ভাবতে লাগলেন। এরই মাঝে তিথী বললেন
— আমি তাহলে আসি। ইভানারা আসলে আমাকে একটা ফোন দিয়েন ভাবী।
তিথী চলে যেতে নিলে ফট করে ইভানার মা বলে উঠলো…
— আজ থেকে যাও না তিথী।
তিথী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পিছনে তাকালো। ইভানার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমাকে বললেন কথাটা?
উনি ভ্রু কুচকে বললেন
— তুমি ছাড়া এখানে আর কেউ আছে নাকি?
তিথী স্বাভাবিকভাবেই বললো-
— আসলে আমার মতো এতিমখানায় বড় হওয়া মেয়ে, এর মধ্যে আবার বস্তিতে থাকি আমি, আপনাদের বাসায় থাকার কথাটা কিভাবে বললেন? কথাটা ঠিক হজম হচ্ছেনা আমার।

To be Continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here