#হৃদয়ও_মাঝারে-০৬,০৭
তন্বী ইসলাম
০৬
ইভানাদের কিচেন রুমের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে তিথী। ইভানার মা মনোযোগ সহকারে রান্না করে যাচ্ছে। তখন তিথীকে থাকতে বলার পর তিথীর ওইরকম একটা নেগেটিভ উত্তর আশা করেন নি ইভানার মা। তিনি করুন দৃষ্টিতে তিথীর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন
— এতোদিন এখানে আসা যাওয়া করছো, তারপরও আমাদেরকে চিনতে পারলেনা তিথী? এই কথাটা কিভাবে বললে তুমি? আমরা এতোটাই খারাপ তোমার চোখে?
উনার কথায় তিথী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো কিছুটা। আসলে এভাবে কথাটা বলা তিথীর উচিত হয়নি। ওরা যে কতোটা ভালো, সেটা উনাদের কোনো দুশমন ও হয়তো অস্বীকার করতে পারবেনা।
তিথী নিজেকে সামলিয়ে হালকা হেসে দিলো। বললো..
— আহ ভাবী, মজা করছিলাম। আপনিও না সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন কথাটাকে? ভাবীর সাথে কি একটু রসিকতা করা যায় না?
ইভানার মা বেশ বুদ্ধিমতী মহিলা। তিনি তিথীর কথার মানে খুবই বুঝতে পারলেন। কিন্তু প্রতিউত্তরে তিনি শুধু হাসলেন। তিথী থেকে গেলো এ বাড়িতেই।
রাতে খাবার টেবিলে অনেক পদের খাবার দেখে অবাক হয়ে গেলো তিথী। এতো খাবার কখন রান্না করলেন তিনি?
তিথী অবাক হয়ে ইভানার মায়ের দিকে তাকালেন। উনি মুচকি মুচকি হাসছে তিথীর কান্ডকারখানায়। তিথী অবাক হওয়া ভঙ্গিতে উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন..
— এতো খাবার কখন রান্না করলেন ভাবী?
— কেন? তুমি তো রান্নাঘরেই ছিলে। দেখোনি?
— সিরিয়াসলি ভাবী? আমিতো জাস্ট অবাক। ওটুকু সময়ে আমি ভাত আর এক পদ তরকারি রান্না করতে পারতাম কিনা সন্দেহ।
তিথী আরেকটু দম নিয়ে আবারো বললো..
— এতো খাবার কে খাবে ভাবী?
— আমরাই খাবো। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন ইভানার মা। তিথী অবাক হওয়ার চরম সীমায় পৌছে গিয়ে বললো..
— এতো খাবার কিভাবে শেষ করবো আমরা?
ইভানার মা হেসে তিথীর দিকে তাকালেন। বললেন…
— আসলেই তুমি একটা পাগলি। আমরা যতটুকু খেতে পারি ততোটুকুই খাবো। খাবার বেশি থাকলে ফ্রিজে রেখে দিবো তিথী।
— ওহ!
— আচ্ছা, এখন খাও তো। খাওয়া শেষে সারারাত গল্প করবো আমরা।
তিথী মাথা নাড়িয়ে সম্মোধন জানিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
— আচ্ছা তিথী, তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
— এতিমদের আবার বাড়ি থাকে নাকি ভাবী? শান্ত গলায় জবাব দিলো তিথী।
— প্লিজ তিথী, তুমি এতিম বলে নিজেকে ছোট ভেবোনা প্লিজ। মানুষ জন্মগত ভাবে এতিম হয়না। জন্মের সময় তার ঠিকই একটা পরিবার থাকে। অনেক এতিমেরই সেই পরিবারের কথা মনে থাকে, মনে থাকে তার কাছের মানুষটির কথা। সে হিসেবেই তোমাকে কথাটা জিজ্ঞাসা করেছি।
তিথী কিছু বলছেনা। ইভানার মা উৎসুক হয়ে বসে আছে তিথীর উত্তরের অপেক্ষায়।
তিথী এখনো কিছু বলছেনা, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে।
ইভানার মা মুচকি হেসে বললো
— বলতে চাও না তো? আচ্ছা বলতে হবেনা। এবার তো একটি হাসো।
তিথী অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাসার চেষ্টা করলো।
রাত আনুমানিক বারোটা বা তারও বেশি। ইভানার মা আর তিথী এখনো গল্পগুজবে মশগুল। দুজন দুজনার কথা খুবই মনোযোগ সহকারে শুনতে ব্যস্ত। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠায় তিথী আচমকা চমকে উঠলো। আতংকিত গলায় ইভানার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো..
— এতো রাতে কে এলো ভাবী? চোরটোর নয়তো?
ইভানার মা অট্রহাসিতে মেতে বললো
— তুমি আসলেই পাগলী একটা মেয়ে তিথী।
তিথী অবাক হয়ে বললো
— কেন ভাবী? আমি আবার কি করলাম?
— চোর কি কখনো কলিংবেল বাজিয়ে আসে? ইভানার চাচ্চু এসেছে। এটাই তার নিত্যদিনের আসার সময়।
— ওহ।
ইভানার মা বাসার মেইন ডোরের কাছে গিয়ে ডোরটা খোলে দিলো। নিজের দেবরকে হেলেদুলে ভিতরে ঢুকতে দেখে খানিক রেগে বললো..
— একটা বিয়ে করলেই তো পারো, আমাকে মাঝরাতে উঠে আসতে হতোনা। যে কাজটা আমার নিজের স্বামীর জন্য করা উচিত ছিলো, সেটা আরেকজনের স্বামীর জন্য করতে হচ্ছে আমাকে হুহ। বলেই গাল ফুলালো ইভানার মা।
ছেলেটি হাসতে হাসতে বললো…
— আমাকেই নিজের স্বামী ভেবে নিলে কিন্তু আমি মাইন্ড করবো না।
— বয়েই গেছে একটা বখাটেকে আমার স্বামী ভাবতে।
— আমি কিন্তু মোটেই বখাটে নয়। কত্ত ইনোসেন্ট একটা ছেলে আমি ভাবতে পারো? তোমার বরেই চাইতেও বেশি কিউট আমি।
— নিজের ঢোল নিজে পিটানো বন্ধ করো এবার।
ফ্রেশ হয়ে এসো, খাবার দিচ্ছি।
— আসছি ভাবী। জাস্ট ফাইভ মিনিটস।
— হু
— বাহ, আজ এতো এতো সুস্বাদু খাবার। কি ব্যাপার? বাসা খালি পেয়ে বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছো নাকি? ডাইনিং টেবিলের সামনে বসে ভ্রু বাকা করে বললো ইভানার চাচ্চু।
— হ্যাঁ জুটিয়েছি, জামাই তো একটা কপালে জুটছে নিরামিষ মার্কা, বয়ফ্রেন্ড না জুটিয়ে উপায় আছে নাকি?
— বাহঃ তাইলে ডাকো দেখি তোমার বয়ফ্রেন্ড কে। আমিও একটু দেখি।
— তুমি দেখেবে আমার বয়ফ্রেন্ড কে? মাথা ঘুরে যাবে কিন্তু ওকে দেখলে?
— ওয়েট ভাবী! তোমার বয়ফ্রেন্ড দেখে আমার মাথা ঘুরবে কেন? আমি কি গে নাকি? আমার চরিত্র এতোটাও খারাপ না।
ইভানার মা হাসতে হাসতে বললো…
— আমার বয়ফ্রেন্ড কোনো ছেলে না বাছা, সেটা একটা মেয়ে।
হঠাৎ করেই ছেলেটা কাশতে শুরু করতে লাগল। ইভানার মা পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
— পানি টা খাও।
ছেলেটা ঢকঢক করে সবটা পানি নিমিষেই শেষ করে ফেললো। বড়সড় চোখ নিয়ে ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললো
— শেষ পর্যন্ত তুমি কিনা… নাহ না, আমি বলতে পারবো না।
ইভানার মা কপাল কুচকে দেবরের দিকে তাকিয়ে বললো
— কি বলতে চাইছিলে তুমি? তারাতাড়ি বলো। নয়লে খাবার জুটবে না কপালে বলে দিলাম।
ছেলেটি হাসতে হাসতে বললো..
— মেয়ে মেয়ে ভালোবাসা হলে তাদেরকে বাংলায় কি যেনো বলে.. বুঝো তো নাকি?
দেবরের মুখে এমন একটা কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ইভানার মায়ের। সাথে রাগে শরীরটা মরিচের মতো জ্বলছে। আচমকায় দেবরের পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বললো..
— কি বললা তুমি এইটা? ছিঃ তুমি এতোটা জঘন্য হুহ।
ছেলেটি হাসতে হাসতে আবারও বললো
— স্যরি ভাবী, ভুল হইছে৷ এই কান ধরলাম। এখন বলো তোমার ওই মেয়েরুপী বয়ফ্রেন্ডের পরিচয় কি?
— ইভানার প্রাইভেট ম্যাম। আমি আজ একা বাসায়, তাই রেখে দিছি ওকে।
— ভালো করেছো।
সব খুনশুটি একপাশে রেখে খাওয়ায় মন দিলো রবিন। হ্যাঁ, ছেলেটাকে রবিন নামেই তো জানে তিথী। যদিও তিথী এখনো জানেনা, রবিন এই বাসারই ছেলে।
সকালের নাস্তা শেষে তিথী ইভানার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। বাসায় এসে ঘরটা ঝাট দিলো ভালো করে। ইভানাদের বাসা থেকে খেয়ে আসায় রান্না করার প্রয়োজন পরলো না এই মুহুর্তে। নিজেকে ঝটপট রেডি করে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
ভার্সিটিতে এসে নিজের ক্লাসে গিয়ে চুপটি করে বসে পরলো তিথী। এক এক করে দুটো ক্লাস শেষ হলেই বাইরে বেরোলো তিথী, ক্যন্টিনে গিয়ে বসে এক কাপ কফি অর্ডার করলো সে। যদিও সচরাচর কফি বা চা সে খায়না। তবে আজ কেন যেনো খেতে ইচ্ছে করছে। কফি খাওয়ার মাঝেই কেউ একজন এসে ওর পাশের চেয়ারে বসে পরলো ফট করে। তিথী আঁড়চোখে একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আবারও কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মেয়েটি মিষ্টি কন্ঠ অথচ কড়া ভাবে বললো
— এই মেয়ে, তোমার সমস্যা কি?
— আমাকে বলছেন? অবাক হয়ে বললো তিথী।
— এখানে তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে শুনি?
তিথী হাসলো। বললো..
— আমার উপর এতো রেগে থাকার কারণ টা জানতে পারি?
— তুমি আমাকে ইগ্নোর করলা কেন?
— কখন?
— এইতো এখনই৷ আমি বসলাম তাও আমার সাথে কথা বললে না কেন?
— সর্যি ভুল হয়ে গেছে। বলেই মিষ্টি করে হাসলো তিথী।
– It’s Ok baby..
– আমি কিন্তু তোমাকে চিনতে পারিনি।
মেয়েটি ভ্রু নাচিয়ে ঝাঝালো গলায় বললো
— চিনবে কিভাবে? ক্লাসে মনোযোগ দিলেই দেখতে পেতে, আরো অনেকগুলো আত্মার বাস আছে সেখানে। তুমিতো সবাইকে এলিয়েনই ভাবো, সেজন্যই তো স্যারকে ছাড়া অন্য কোথাও চোখ ফিরাতে ভয় পাও।
— আচ্ছা, তাহলে সেই এলিয়েনদের মধ্যে তুমিও বোধহয় একজন তাইনা?
— আজ্ঞে হ্যাঁ।
আচ্ছা, তুমি এতো চুপচাপ থাকো কেন? সেদিনও দেখলাম একদম চুপচাপ, আজো তাই। পারো কিভাবে? বোর লাগেনা তোমার? আমিতো পারিনা মুখটা বন্ধ রাখতে।
— তুমি অনেক ফ্রেশ মাইন্ডের তো তাই। নাম কি তোমার?
— ফারিন। তোমার নাম?
— তিথী
— সুন্দর নাম।
— তোমার টার মতো নয়।
দুজনেই হেসে উঠলো একসাথে।
— ফ্রেন্ড? মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিলো তিথীর সামনে।
তিথী ওর হাতের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলো। বললো…
— আমার সাথে ফ্রেন্ড হলে হয়তো তোমার মান যেতে পারে। লোকে মন্দ বলতে পারে তোমায়?
— কেন? ভ্রু কুচকে বললো ফারিন।
— আমি বস্তির মেয়ে ফারিন।
মেয়েটি কিছুক্ষণ তিথীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। বললো..
— কোথায় দেখছিনা তো?
— কি দেখছো না?
— আমার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে তোমার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কোনো পার্থক্য দেখছিনা। তোমার ও দুটো করে হাত পা, আমারো তাই। তোমার ও একটা মাথা আমার সেইম। তোমার চোখ নাক কান আমার চোখ নাক কান সেইম সেইম।
তুমি বস্তির বলে কোনোদিক দিয়ে তোমার কিছু কম বা বেশি আছে, সেটা চোখে পরছেনা আমার।
তিথী অবাক হলো মেয়েটির কথায়। মেয়েটি বললো..
— কি ফ্রেন্ড হবেনা আমার সাথে তাইতো?
তিথী হেসে বললো
— এইরকম একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব না হলে যে জীবনটাই বৃথা যাবে।
তিথীর কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ফারিন নামের মেয়েটি।
বিকেলের দিকে বাইরে একটু হাঁটতে বেরোলো তিথী। ইভানার মাকে ফোন করে জানতে পেরেছে ইভানারা আসেনি আজ। তাই আর গেলো না ওদের বাসার। বাইরে হাঁটাহাঁটি করার এক ফাঁকে তিথী দেখলো রবিন নামের সেই ছেলেটি কিছুটা দুরে বাইকে হেলান দিয়ে বসে আছে। তিথী চোখ ফিরিয়ে নিলো সেদিক থেকে। রবিনও সেটা খেয়াল করলো। সেও পাত্তা দিলোনা ব্যাপারটাকে।
একটু ঘোরাফেরা করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্না চাপালো তিথী। রান্না বলতে ভাত, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজা করেছে সে।
রান্না শেষ হওয়া মাত্র হাতমুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসলো তিথী। জমিলা হাসিমুখ নিয়া তিথীর রুমে আসায় তিথী অবাক হলো কিছুটা। কারণ সেদিন রাতের পর থেকে উনি সচরাচর তিথীর রুমে আসেন না। জমিলাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভদ্রতাবসত তিথী বললো..
— রুমে আসেন খালা। দাঁড়িয়া আছেন কেন?
জমিলা হাসিমুখে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো..
— একখানা খবর দিবার আইলাম।
— কি খবর খালা?
জমিলা আবারও খুশির হাসি হাসলো। বললো
— আমার ময়নার বিয়া ঠিক করছি মাইয়া। কাইলকায় ওরা আইয়া আমার মাইয়ারে উঠাইয়া নিয়া যাইবো। পুলাডা খুবই ভালা। মনিহারি ব্যাবসা করে, নিজেগো একটা ছোট বাসা আছে। মা বাপ আর একটা বোইন। বোইনডার বিয়া হইয়া গেছে।
তিথী অবাক হয়ে বললো..
— এতো তারাতাড়ি ময়নার বিয়ে!! কিভাবে কি করলেন?
— আসলে আমার ভাই প্রস্তাবটা আনছিলো। হেরা আইজ আইয়া মাইয়ারে দেইখা গেছে। পছন্দ হইছে আমার ময়নারে ওগো। পুলার বোইন জামাই সাতদিন পর বিদেশ চইলা যাইবো। হে প্রবাসী আরকি।
তাই ওরা তারাতাড়ি বিয়েটা করাইতে চায়। বোইন জামাই দেশে থাকতে থাকতে।
তিথী কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। দম নিয়ে বললো..
— এভাবে হুটহাট করে বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে খালা? ময়নার বয়সই বা কত হবে? আমার ছোট মেয়েটা। কিই বা বুঝে এই বয়সে? হঠাৎ করে এইরকম হওয়ায় ওউ নিশ্চয়ই মানসিকভাবে দ্বিধাদ্বন্দে আছে।
— মাইয়া আমার রাজি আছে। হের মুখ দেইক্ষাই বুঝছি।
তিথী একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললো..
— আমাকে কি করতে হবে?
— কাইল মাইয়ার বিয়া, আর তুমি জিগাও তোমারে কি করন লাগবো? ভ্রু কুচকে বললো জমিলা। ক্ষানিক থেমে আবারও বললেন
— মাইয়া আমার তোমারে নিজের বড় বোইন মনে করে। তো তোমারে বড় বোইনের কামই করন লাগবো৷ আর কাইল মাইয়ারে নিয়া যাইবো, হের লাইগা আইজ একটু হলুদের বাও করছি। তুমি আমাগো রুমে আইয়ো। মাইয়ারে হলুন মেন্দি লাগান লাগবো।
তিথী হাসিমুখে জবাব দিলো
— আচ্ছা খালা, আপনি যান, আমি আসতেছি।
— দেরি কইরোনা কইলাম। যেতে যেতে বললো জমিলা।
এই কথার কোনো জবাব দিলোনা তিথী।
অজান্তেই এক জনের কথা মনে হতে লাগলো,
বিয়ে নামটা শুনেই মনটা সেই নাম জপ করতে থাকলো হঠাৎ। খেলার ছলে কত বার করে বলেছে ওরা দুজন দুজনাকে বিয়ে করবে, সেটা কি তার মনে আছে? নাকি নেই? আমার তো ঠিকই মনে আছে সেই সোনালী দিনগুলো।
ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে এলো তিথীর।
To be Continue…….
#হৃদয়ও_মাঝারে-০৭
তন্বী ইসলাম
..
ময়নাকে সামান্য হলুদ ছুইয়ে মেহেন্দি পড়াতে পড়াতে রাত প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। ওদিকটার এই কাজগুলো সেড়ে হাতমুখ ভালো করে ধুয়ে রুমে আসে তিথী। একটা প্লেট নিয়ে ভাত বেড়ে সেটাতে ডিম ভাজিটা নিয়ে ভাতগুলো মাখিয়ে নেয় ভালো করে। বড় বড় লোকমা নিয়ে খাওয়া শুরু করে তিথী। যদিও জমিলা বলেছিলো ওদের ঘরে খেয়ে নিতে। কিন্তু খায়নি তিথী। নিজের রান্নাকরা খাবারগুলো নষ্ট হতে দিবেনা সে।
পরেরদিন কলেজে আর যেতে পারেনা ও। ময়নার বিয়ে, কি করে যাবে সে। ময়না যে ওকে বড় বোন বানিয়ে দিলো।
বিয়ে বাড়ি হলেও তেমন জাকজমক নেই সেখানে। ঘরোয়াভাবে বিয়েটা পড়ানো হবে। সকাল থেকেই অনেক খাটাখাটুনি করে চলেছে তিথী, এই এদিকটায় রান্নার দিকটা সামলাচ্ছে, তো ওইদিকে ময়নাকে গোসল দিচ্ছে, ও কান্নাকাটি করলে ওকে বুঝাচ্ছে বড় বোনের মতোই। দুপুরের দিকে বরযাত্রী চলে আসে। বরযাত্রী বললে ভুল হবে, কারণ বিয়ের পাত্র বরের বেশে আসেনি। নরমাল ড্রেসে এসেছে একটা টেক্সি করে। সাথে আরো ৫/৬ জন পুরুষ আর একজন মহিলা। মহিলাটি নিশ্চয়ই বরের বোন হবে।
.
তিথী ময়নাকে সাজাচ্ছে মনের মতো করে। ওদিক থেকে তাড়া দিচ্ছে যেন তারাতাড়ি মেয়েকে রেডি করা হয়। রাত হবার আগেই ওরা বউকে নিয়ে বিদায় হতে চায়। তিথী ময়নাকে ভালো করে মেকআপ করলো। ময়না কাঁদছে। তিথী ওকে বারন করছে না কাঁদার জন্য। ও জানে, বারণ করলেও লাভ হবেনা। এরচেয়ে ভালো, কেঁদে মনটাকে হালকা করুক। ময়নাকে এতোটাও মেকাপ করানো হয়নি, যার দরুন কাঁদলেও তেমন ক্ষতি হবেনা।
বিয়েটা পড়ানো শেষ হতে যাবে, এমন সময় তিথীর চোখ গেলো বরের একপাশে বসা রবিনের দিকে। তিথী জমিলাকে বললো
— খালা, ওই ছেলে এইখানে কি করছে?
জমিলার চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে। মুখটা মলিনতায় ছেয়ে আছে। একমাত্র মেয়েটা বিদায় নেবে কিছুক্ষণ পর, সেই জন্যই কাঁদছে খুব। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বললো
— আমার মাইয়াডারে নয়া জীবন দিছে পুলাডায়। হেই পুলাডারে থুইয়া কেমনে মাইয়ার বিয়া দেই? তাই আমিই দাওয়াত দিছিলাম আইবার লাইগা।
— ওহ। তিথী আর কিছু বললোনা।
কনে বিদায়ের এই সময়টায় তিথী চলে যায় নিজের রুমে। এতো কান্নাকাটি, এতো হাহাকার ওর ভালো লাগেনা । আসলে নিজের জীবনটা জুরেই কান্নার ছড়াছড়ি, সেখানে অন্যের কান্নাকাটি দেখার সময় কই?
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। তিথী এখনো একটা চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। ক্লাসে বেশ অমনোযোগী হয়ে থাকায় একগাদা ঝাড়ি খেয়েছে ম্যাডামের। সেই তখন থেকেই ক্যম্পাসে মনমরা হয়ে বসে আছে তিথী। এক এক করে প্রত্যেকটি ক্লাস শেষ করে তিথীকে খোঁজার মিশনে নামলো ফারিন। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে ক্যাম্পাসে এসে পেয়েই গেলো তিথীকে।
তিথীর পাশে বসে ওকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে ফারিন বললো
— হোয়াটস হ্যাপেন্ড বেবি?
তিথী মুচকি হেসে বললো..
— কই, কিছুনা তো। ক্লাস শেষ?
— হুম। মন খারাপ কেন বলবে না আমায়? আমি না তোমার জানু, বলোনা কি হইছে?
— আরে কিছু হয়নি তো। এমনিই ভাল লাগছেনা।
— সিউর?
— অবশ্যই, চলো উঠা যাক।
— চলে যাবে এক্ষুনি?
— তো? কোনো দরকার আছে তোমার?
— নাহ।
ইভানাদের বাসায় এসেছে কিছুক্ষণ হয়েছে। ইভানা একমনে পড়াগুলো আওড়াতে লাগলো। তিথীর হুশ নেই এদিকে। রিয়ানা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে ইভানার রুমে। তিথীকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে ওর পাশে এসে বসলো রিয়ানা।
তিথীর কাধে হাত রাখায় হুশ এলো তিথীর। রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ বোকার মতো।
রিয়ানা হেসে বললো
— কিছু হয়েছে তোমার? অন্যমনস্ক দেখছি তোমায়।
— আসলে, বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। কোনোকিছুতেই মন দিতে পারছিনা আজ।
রিয়ানা কি যেনো ভাবলো। ইভানাকে বললো
— আজ তোকে আর পড়তে হবেনা ইভু। বইগুলো গুছিয়ে ফেল।
আকস্মিক রিয়ানার মুখে ইভু শব্দটা শুনে হতচকিত হয়ে উঠে তিথী। বিস্ময়ে একভাবে চেয়ে থাকে রিয়ানার দিকে। ইভানা বিরক্তিভাব নিয়ে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে
— উফফফ খালামনি, তোমাকে না চাচ্চু কতোদিন মানা করেছে, এই নামে আমাকে না ডাকতে। তাও কেন ডাকো? জানোনা, চাচ্চু খুব রেগে যায় আমাকে এই নামে ডাকলে?
— সর্যি মামুনি, আর হবেনা। এইবার বইগুলো গুছিয়ে নাও প্লিজ।
— বই গুছাবো কেন?
— দেখছোনা তোমার ম্যাডাম আজ অসুস্থ ফীল করছে। আজ তোমার ছুটি।
তিথী পাশ থেকে তারাহুরো করে বললো..
— এই না না, আমি একদম ঠিক আছি। আমি পড়াতে পারবো।
— কিন্তু আমি আজ তোমাকে দেবোনা পড়াতে। এসো আমার সাথে।
রিয়ানা এক প্রকার টেনেই বের করলো তিথীকে। ড্রয়িংরুমে এসে বসে বুয়াকে বললো দুইকাপ কফি দিয়ে যাবার জন্য।
— আমি এতোটাও অসুস্থ না যে ইভানাকে পড়াতে পারতাম না। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিলাম শুধু।
— ওহ, এতো এক্সকিউজ দিওনা তো। আমি কি তোমার কাছে এক্সকিউজ চেয়েছি?
তিথী আর কিছু বললোনা।
রিয়ানা প্রসঙ্গ পালটে বললো..
— অন্যমনস্ক থাকাতে তোমাকে কিন্তু অনেক বেশি মায়াবী লাগছিলো তখন। আমার যায়গায় কোনো ছেলে থাকলে নির্ঘাত হার্টফেইল করতো তখন।
তিথী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ওর এইরুপ দেখে রিয়ানা উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
কয়েকদিন ধরে চাকরি খোঁজে চলেছে তিথী। কিন্তু চাকরি যেনো ধরা-ছোয়ার বাইরে। এই একটা টিউশন দিয়ে কিচ্ছুটি হচ্ছেনা। বাসা ভাড়া, নিজের থাকা খাওয়া, কলেজের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সে। এই মুহুর্তে একটা চাকরি না পেলে একদম বাজে একটা অবস্থা হবে তিথীর।
প্রতি শুক্রবার আসলেই চাকরির পত্রিকাগুলো ঘাটাঘাটি করে তিথী। ইন্টার পাশে হাতে গুনা যত চাকরি পায় সবগুলোতেই এপ্লাই করে যাচ্ছে সমানে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আরকি।
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে রাস্তার পাশের দেওয়ালে একটা বিজ্ঞাপন দেখে দাড়ায় তিথী৷ একটা বাসার এড্রেস দেওয়া বিজ্ঞাপনটায়। এড্রেস দেওয়া বাসাটায় একজন মেইড সার্ভেন্ট দরকার। সে উদ্দেশ্যেই বিজ্ঞাপন টা দেওয়া। বিজ্ঞাপন টার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবছে তিথী। এই মুহুর্তে ওর একটা কাজ দরকার। কিন্তু তাই বলে ভার্সিটির একটা স্টুডেন্ট হয়ে কিনা মেইডের কাজ করবে? বাসার বুয়ার কাজটা কিভাবে করবে সে? নাহ, এ কাজ তার দ্বারা হবেনা।
তিথী চলে গেলো বাসায়। মাস শেষ হয়ে আরেক মাসের ৫ তারিখ চলছে। দুদিন আগে ইভানার মা মাসের বেতনের টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলো। সেই টাকা থেকে নিজের জন্য একটা জামা বানিয়েছে তিথী। ভার্সিটিতে পড়ে যাওয়ার জন্য ভালো জামা দরকার। যদিও একটা দিয়ে কিছুই হবেনা। কিন্তু বেশি কিনারওতো টাকা নেই ওর কাছে। কিছু বাজার ও করে রেখেছে তিথী। বিকেলে জমিলা এসে দেখলো তিথী চোখ বুজে শুয়ে আছে রুমে।
তিথীর রুমে কিছুটা শব্দ করে ঢুকলো জমিলা। তিথী চোখ মেলে দেখলো জমিলা ঢুকছে তিথীর রুমে।
জমিলাকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসলো তিথী।
জমিলা বিনা আমন্ত্রণেই বিছানায় তিথীর পাশে গিয়ে বসলো। তিথী জমিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো..
— কিছু বলবেন খালা?
— হ, কইবার লাইগাই তো আইছি। খামোকা আই নাই।
জমিলার জবাবে তিথী কিছুটা ভড়কে গেলো। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললো
— বলেন খালা কি বলবেন।
— কইতাছি যে, মাসের আইজ পাঁচ তারিখ হইয়া গেছে, ভাড়াডা তো দিলা না অহনো। পান চিবোতে চিবোতে বললো জমিলা।
নানা ধরনের চিন্তায় মগ্ন থাকায় বাসা ভাড়া দেওয়ার কথা একমত ভুলেই গেছিলো তিথী। তিথীকে চুপ থাকতে দেখে জমিলা বললো..
— চুপ কইরা রইলা যে? টাহা নাই? টাহা ছাড়া বাপু আমি কাউরে ঘরে রাখবার পারুম নাহ। এই টাহা দিয়াই আমার দিন যায়।
তিথী প্রচন্ড অবাক হচ্ছে জমিলার কথায়। যে কিনা কিছুদিন আগেও তিথীকে ময়নার বড় বোন বানিয়ে দিয়েছিলো, সে ব্যক্তিটিই আজ কত সহজে পর বানিয়ে দিচ্ছে। আসলে শহরের মানুষগুলোই এইরকম। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেনা। স্বার্থের সময় যেমন ওরা বিনা বাধায় আত্মীয়তা বাধিয়ে ফেলে, তেমনি স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ঠিক সেইভাবেই আত্মীয়তা ভুলে যায়। তিথী চুপচাপ উঠে গিয়ে সাইড ব্যাগটা হাতে নিলো। চেইন টা খোলে কচকচে দুটো হাজার টাকার নোট বের করে জমিলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো..
— এই তিথী না খেয়ে থাকতে রাজি আছে, কিন্তু কারো পাওনা পরিশোধ করতে পিছপা হইনা। আমি খুবই টেনশনে ছিলাম, তাই টাকাটা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। মনে থাকলে আপনাকে কষ্ট করে টাকার জন্য আমার এখানে আসতে হতোনা, আমি নিজেই গিয়ে দিয়ে আসতাম।
তিথীর কথায় জমিলার কোনো ভাবাবেগ হলোনা। টাকাটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো সোজা।
____________
তিথীকে চুপচাপ থাকতে দেখে অর্ধবয়স্কা মহিলাটা খিটখিটে গলায় বললো..
— কি হলো? পারবা তো কাজগুলো করতে? সকালে আর রাতে রান্না করবা আর ঘরটা গোছগাছ করে রাখবা৷ যদি পারো, তাহলেই তোমাকে কাজে রাখবো।
তিথী মহিলাটির দিকে তাকালো, মহিলাটিকে বয়সের তুলনায় যথেষ্ট শক্তপোক্ত দেখা যাচ্ছে। মেকাপের স্তর দিয়ে প্রলেপ দেওয়া মুখটা দেখেই বমি পাচ্ছে তিথীর। উদ্ভট সাজে বেশ বিশ্রী দেখাচ্ছে উনাকে। তিথী জবাব দিলো..
— স্যলারি কত দিবেন?
— ৪ হাজার।
— এতো কম?
— কাজ তো শুধু দুইবেলা রান্না, মাঝেমধ্যে একটু রুমটা ক্লিন করা, এতোটুকু কাজের জন্য ৪ হাজার যে দিতে চাচ্ছি সেটাই ভাগ্য। পোষালে করবে, না পোষালে করবেনা। ভাত ছিটালে কাকের অভাব নেই। কাজের লোকের অভাব পরবেনা। এইবার ভাবো, কি করবে। তারাতাড়ি ভাবো। আমার হাতে সময় কম। জলদি জানাও তোমার ডিসিশন। হাড়ি আপ।
মহিলাটি যথেষ্ট খিটখিটে হবে বুঝায় যাচ্ছে, তিথীর ইচ্ছে করছে মুখের উপর ফট করে না করে চলে যাক। বর্তমানে একজন কাজের লোক পাওয়া কতোটা টাফ সেটা তিথী এবং ওই মহিলা দুজনেই জানে। কিন্তু মহিলাটি এমন যে, ভাংবে কিন্তু মচকাবে না। কাজের লোক পাওয়া কষ্টসাধ্য, সেটা তিথীর সামনে প্রকাশ করা যাবেনা, তাহলে যদি মেয়েটি বেকে বসে, এইসব চিন্তাভাবনাই মহিলাটির মনে উদয় হচ্ছে। কিন্তু সেটা তিথীকে বুঝতে দিচ্ছেনা একটুও।
না করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সে উপায়টি নেই তিথীর। একটা চাকরী ও পাচ্ছেনা। চলতে হিমশিম খাচ্ছে ভীষণ, তাই এই মুহুর্তে এইটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তিথীর। মহিলাটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিথীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
— কাজ করার ইচ্ছা না থাকলে যেতে পারো তুমি। এভাবে আমার সময় লস হচ্ছে।
— আমি রাজি আছি । করবো আমি কাজ।
মহিলাটি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বললো
— বলেছিলাম তো, ভাত ছিটালে কাকের অভাব নেই। এতো সময় না নিয়ে আগেই বলে দিলেও পারতে।
মহিলাটির কথা তিথীর গায়ে কাটার মতো বিধছে। কিন্তু বিনা প্রতিবাদে সবটাই হজম করতে হচ্ছে তাকে।
— কবে থেকে আসবো কাজে?
— কাল থেকেই এসো।
মহিলাটি চলে গেলো রুমে। তিথীকে এমনভাবে অবজ্ঞা করলো যেনো তিথী মানুষের কোনো পর্যায়েই পরেনা।
.
গতকাল জমিলাকে বাসার বাড়া দেওয়ার পর তিথীর ব্যাগে মাত্র একটা পাচশ টাকা আর দুইটা একশত টাকার নোট পড়ে ছিলো। কিন্তু মাসের বাকি ছিলো পুরোটাই। এই পুরো মাসটা কিভাবে চালাবে সে এটা ভেবেই মাথা ব্যাথা উঠে গিয়েছিলো তিথীর। কলপাড়ে গিয়ে একা একাই অনেক্ষন মাথায় পানি দেয় তিথী। রুমে এসে ঠান্ডা মাথায় অনেক ভাবে, কি করা যায়.। কিন্তু কোনো উপায় খোজে পায়না তিথী। হঠাৎ ই সেই মেইড সার্ভেন্ট চাওয়া বিজ্ঞাপন টার কথা মনে পড়ে যায় ওর। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুম দেয় রাতে। সকালে উঠে নাস্তা সেড়ে সেই যায়গাটাতে যায় তিথী, যেখানে বিজ্ঞাপন টা দেখেছিলো আগেরদিন। সেখান থেকে বাড়ির এড্রেস টা নোট করে সেই এড্রেস মত চলে আসে তিথী।
রাতে বসে গভীর ক্যালকুলেশনে ডুব দেয় তিথী। কিভাবে টাইম মেইনটেইন করবে সেই ক্যালকুলেশন। ইভানাকে পড়িয়ে অনামিকা চৌধুরী নামের সেই মহিলার বাসায় কাজে যেতে হবে। এরপর আবার নিজের কলেজ।
ফজরের আযানের সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠে তিথী। ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে রান্না চাপিয়ে দেয় তারাতাড়ি। রান্না শেষ হওয়া মাত্রই ইভানাকে পড়ানোর টাইম হয়ে যায়। দ্রুত রেডি হয়ে চলে আসে ইভানাদের বাসায়। ইভানাকে পড়ানো শেষ হলে ওর মায়ের সাথে দেখা করে তিথী। ইভানার মা নিজের রুমেই শুয়ে ছিলেন। তিথীকে দেখে উনি ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে উঠে বসেন।
— আরে, এসো এসো। আজ আমার রুমে হঠাৎ?
তিথী সোফায় বসতে বসতে বললো
— আপনার সাথে একটা কথা বলতে এসেছি।
— বলো কি বলবে?
— আসলে বিকেলের টাইমটা একটু চেঞ্জ করতে হবে আমার। ৫ টা থেকে ৭ টায় না পড়িয়ে আমি ৩ঃ৩০ থেকে ৪:৩০ পর্যন্ত পড়াবো। যদি আপনাদের কোনো সমস্যা না হয়। ভনিতা না করে সরাসরিই বললো তিথী।
— সে ঠিক আছে, কিন্তু হঠাৎ টাইম চেঞ্জ কেন?
— আসলে সেই সময় আমাকে আরেকটা কাজ করতে হবে?
— পার্টটাইম জব?
তিথী কিছু বলল না। কি বলবে সে? অন্যের বাসায় বুয়ার কাজ করবে আজ থেকে এটা কিভাবে বলবে তিথী।
তিথীকে নিরব থাকতে দেখে ইভানার মা বললো..
— কোনো ব্যাপার না তিথী। বলতে না চাইলে থাক। তোমার যেভাবে সুবিধা হবে সেভাবেই এসো।
— ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে আমি ভাবিনি এতো সহজেই আপনি ব্যাপারটা মেনে নিবেন।
— তোমার পরিস্থিতি টা আমি বুঝি তিথী। তুমি যেভাবে স্ট্রাগল করে যাচ্ছো, তোমার জায়গায় আমি হলেও হয়তো সেটা পারতাম না। কিন্তু তোমাকে একটি সাহায্য তো করতেই পারি, কি বলো?
তিথী খানিকটা ইতস্তত বোধ করতে লাগলো। ইভানার মায়ের চোখে সেটাও ধরা পরলো। তিনি স্বাভাবিকভাবেই বললেন
— আরো কিছু বলতে চাও তিথী? কিচ্ছু বলার থাকলে নিরদ্বিধায় বলতে পারো।
— আসলে, সকালে শিফটটাও একটি চেঞ্জ লাগবে।
— কয়টা থেকে আসবে?
— ৫ঃ৩০ থেকে ৬ঃ৩০ হলেই আমার সুবিধা।
— ইভানাকে ঘুম থেকে উঠানো টা একটু টাফ হয়ে যাবে। সে যাইহোক, আমি ম্যানেজ করে নিবো। বলেই হাসলেন ইভানার আম্মু।
তিথী কৃতজ্ঞতার সাথে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
To be Continue…..