হৃদয়ও_মাঝারে-০৮,০৯

0
1096

#হৃদয়ও_মাঝারে-০৮,০৯
তন্বী ইসলাম
০৮

..
জীবনের গতি কখন কোন দিকে ঘুরে সেটা কেউ আগাম ধারণা করতে পারেনা। কখনো মানুষ খারাপ সময় পার করে কখনো বা ভালোভাবে দিন কাটায়।
খারাপ দিনগুলো কখন কাটবে সেটা কেউ বলতে না পারলেও মানুষ অনেক আশা রাখে, একদিন না একদিন খারাপ দিনগুলো ওর কাটবেই। সুখের নাগাল পাবে কিনা সে জানেনা, কিন্তু এতোটা কষ্ট হয়তো ওকে করতে হবেনা। সেই আশাতেই এগিয়ে যাচ্ছে তিথী।
সকালে ইভানাদের বাসা থেকে ফিরে সোজা অনামিকা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে পৌছায় তিথী। তখন প্রায় ৮ টা ছুইছুই। প্রথম দিনেই দেরিতে আসার জন্য অনেকগুলো কথা শুনতে হয় তিথীকে।
উনার বলা প্রতিটা তিক্ত কথাকে অগ্রাহ্য করে মুখ বুঝে হজম করে কাজে মন দেয় তিথী।
টাকার জন্য কাজ করে সে। কথাতো শুনবেই।
কয়েক পদের রান্না সাড়তে সাড়তে ১০ টা বেজে যায় তখন। এখনো যদি এখান থেকে বেরোতে পারে তাহলে শুধু প্রথম ক্লাসটাই মিস যাবে। বাকিগুলো ঠিকই করতে পারবে। সেই আশা নিয়েই ভদ্রমহিলার রুমে ঢুকে তিথী।
ভদ্রমহিলা কারো সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছিলেন, তিথীকে দেখে আঁড়চোখে তাকায় ওর দিকে। ফোনটা কান থেকে কিছুটা দুরে সরিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে তিথীকে বলে।
– কি চাই?
– আসলে আমাকে এখন যেতে হবে। চোখদুটো অন্যদিকে ফিরিয়ে নরম গলায় বললো তিথী।
মহিলা ঝাঝালো গলায় হুংকার দেওয়ার মত করে বললো
– যেতে হবে মানে? এসেছো তো দেরি করে, তারউপর এখনই চলে যেতে চাইছো মানেটা কি?
– আমাকে কলেজে যেতে হবে। এখন গেলেও ক্লাসে এটেন্ট করতে পারবো।
মহিলা তিথীর কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিথীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। আচমকায় হু হু করে অট্রহাসিতে মেতে উঠলেন তিনি। তিথী অবাক হয়ে তাকালো মহিলার দিকে। এভাবে হঠাৎ হাসার কারণ তিথীর অজানা। তিথীকে অবাক করে দিয়ে মহিলা বাকা স্বরে বললো
– করো তো বুয়ার কাজ, ফুটানি করে আবার কলেজেও পড়তে চাও। ফানি না বিষয়টা?
– ফানি হতে যাবে কেন। বুয়ার কাজ করি বলে লেখাপড়া করা যাবেনা এটা কোন বইয়ে লেখা আছে?
— শাট আপ। আমার মুখে মুখে কথা বলার সাহস পেলে কোথায়? মাত্র তো রান্না সাড়লে, ঘর গুছাও, মেঝে ক্লিন করো। এরপর দেখা যাবে, তুমি কখন যাবে।
— কিন্তু ম্যাম,
— আর কোনো কথা নয়। টাকা দিয়ে রেখেছি তোমায়। এমনি এমনি কাজ করে দিচ্ছো না তুমি। সো, টাকাটাকে হালাল করতে চাইলে লেখাপড়ার চিন্তা ঝেড়ে কাজে মন দাও।
তিথী বেশ রেগে গেলো এবার। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো..
— ঠিক আছে ম্যাম।

অনামিকার বাসার কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। এতো বেলা অবদি এক গ্লাস পানি পর্যন্ত পেটে পড়েনি তিথীর। বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে দ্রুত খেয়ে নেয় তিথী। খিদেয় পেট চো চো করছিলো এতোক্ষণ।
কলেজ যাওয়া হলোনা আর। খানিকটা মন খারাপ হলেও সেটাকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলোনা তিথী। ক্লাস সে রেগুলার করতে পারবেনা সেটা সে আগেই অনুমান করেছিলো। কিন্তু তাও মনটা মানছেনা ওর।
খেয়ে গোসল সেড়ে নেয় তিথী। এরপর লম্বা একটা ঘুম দেয়। যদিও ঘুমটা লম্বা হবেনা সেটা সে জানে। কারণ ৩ টায় আবার উঠে রেডি হয়ে চলে যেতে হবে ইভানাদের বাসায়।
.
দুপুরে শাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথার চুল ঠিক করছে রবিন। টিশার্ট টা গায়ে জরিয়ে হাতে ঘড়িটা নিয়েছে সবেমাত্র।
রিয়ানা প্রথমে উঁকি দিয়ে দেখলো রবিন কি করছে, ঘড়ি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে দেখে হুট করে রবিনের রুমে চলে গেলো সে। রিয়ানাকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো রবিন। চোখমুখ কুচকে বললো
— কি চাই?
রিয়ানা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বসতে বসতে বললো..
— চাই তো অনেক কিছুই। পাবো কিনা সেটা জানিনা।
— সোজাসাপটা বলো এখানে কেন এসেছো?
— তুমি করলার মতো এতো তেতো কেন বলোতো? রস কষ বলতে কিচ্ছু কি নাই তোমার মধ্যে?
— আমি করলার মতো তেতো হয় বা রস মলাইয়ের মতো মিষ্টি, কি এসে যায় সেটাতে তোমার? রিয়ানার দিকে সামান্য ঝুকে গম্ভীরমুখে বললো রবিন।
— আমার আসবে যাবেনা তো কার আসবে যাবে? দুদিন পর বউ হবো আমি তোমার। আমাকেই তো দেখতে হবে সবটা। হেসে হেসে বললো রিয়ানা।
রবিন আকস্মিক রেগে গেলো। ঝাঝালো গলায় বললো
— হোয়াট রাবিশ! আমার বউ হবে মানে?
— তোমারই তো বউ হবো। এবার দুলাভাই আসুক। সোজা বলে দিবো, আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই। তাহলেই দেখবে দুলাভাই কেমন নেচে নেচে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিবে।
রবিন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো..
— জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো। এই আমি এতোটাও বেহুশ হইনি যে যার তার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিবো।
রিয়ানা দমে গেলো রবিনের কথায়। চোখদুটো পানিতে ভরে গেছে মুহুর্তেই।
রবিন রুম থেকে বের হতে হতে বললো
— এই চোখ ভর্তি পানি অন্য কাউকে দেখাও। কাজে দিবে। এই সামান্য পানিতে আমি গলবোনা কখনই।

ঘুম থেকে উঠে মোবাইল টা হাতে নিয়ে চোখ কপালে উঠলো তিথীর। অলরেডি ৩ঃ২০ বেজে গেছে। মানে আর ১০ মিনিট! এই ১০ মিনিটে কিভাবে কি করবে তিথী?
তারাহুরো করে ড্রেসটা চেঞ্জ করে এসে চুলগুলো একটা কাটা দিয়ে আটকে দৌড় লাগানো তিথী। রাস্তায় রিক্সার কোনো হুদিশ নেই। যেন সবগুলো রিক্সাওয়ালা একসাথে ধর্মঘট করেছে। তিথী কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলে টাইম দেখছে আর সামনে দিকে ছুটছে। আশেপাশে কি আছে না আছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ওর।
আচমকায় কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে রাস্তায় পরে যায় তিথী। পায়ের ব্যাথায় কিছুটা ককিয়ে উঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে রবিন নামের সেই বখাটেটা একভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, নিঃশব্দে হাসছে মাঝে মাঝে। রাগ উঠে গেলো তিথীর। ব্যথা পাওয়া পায়ের দিকে তাকিয়ে রবিনের দিকে তাকালো আবার। রেগে আগুন হয়ে বললো
— রাস্তাটা কি আপনার নামে উইল করে দিয়েছে কেউ? এভাবে রাস্তার মাঝখানে বাইক নিয়ে কেউ বসে থাকে?
— সামনে পিছে কিছু না দেখে আন্ধার মতো দৌড়াও কেন? চোখ গুলো আল্লাহ কেন দিছে?
— একেতো চুরি, তারউপর শীনাজুরি। পাইছেন কি হ্যা? আপনার দোষে ব্যাথা পেলাম আমি, কোথায় সর‍্যি বলবেন তা না করে আমাকেই দোষারোপ করছেন।
– এই ওয়েট! চুরি মানে? কি চুরি করেছি আমি? খানিকটা রেগে বললো রবিন।
– এটাতো কথার কথা। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো তিথী।
কিছুক্ষন চুপ থেকে একা একাই বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
– এমনিতেই আজ দেরি হয়ে গেছে, এখন আবার পায়ে ব্যাথা ও পেলাম।
– কিসের দেরি হয়েছে তোমার?
– আমার টিউশনির দেরি হইছে। সবটা আপনার জন্য। প্রায় কেঁদে দিবে তিথী।
পা টা কে নিয়ে উঠতেই পারছেনা সে। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে লাগলো তিথী।
রবিন অবাক হয়ে বললো
– এভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি? হাঁটতেই পারছোনা দেখছি।
– আপনাকে কেন বলবো কোথায় যাচ্ছি?
– বলো বলছি..
এবারে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো..
– জাহান্নামে যাচ্ছি বুঝছেন। হইছে এইবার? এখন আমাকে যেতে দেন প্লিজ।

রবিন বাইকটা নিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে তিথীর কাছাকাছি এলো। তিথী আঁড়চোখে একবার রবিনের দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে হাটা শুরু করলো।
রবিন তিথীকে অবাক করে দিয়ে বললো
– বাইকে উঠো।
– হোয়াট? বাইকে উঠবো মানে?
– বাংলা কথা বুঝো না? বাইকে উঠতে বলেছি, আমার ঘাড়ে নয়।
– আমি উঠবো না কোনো গুন্ডার বাইকে।
– আমি গুন্ডা? কপাল কুচকে তিথীর দিকে তাকিয়ে বললো রবিন।
– যে বাজারের মাঝখানে একটা মেয়ের উড়না কেরে নিতে পারে, সে আর যাইহোক, আমার চোখে গুন্ডাই।
– ওহ৷ একটা ভুলই না করেছিলাম, এই মেয়ে দেখছি, এটা নিয়ে সারাজীবন খোটা দিয়ে মারবে আমায়।
-হুহ। ঠোঁট বাকা করে সামনের দিকে এগুতে লাগলো তিথী।
– তোমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে বললে, এসো আমি তোমায় পৌছে দেই। আর এই পা নিয়ে হাঁটলে ৫ মিনিটের রাস্তা যেতে তোমার মিনিমাম ৩০ মিনিট লাগবে। এরচেয়ে ভালো, রাগটা তোলা রাখো, পরে দেখিও।
তিথী ভাবলো, আসলেই অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে, এভাবে হাঁটলে আজ আর গিয়ে পড়াতে হবেনা, দেখা করেই চলে আসতে হবে।
তিথীকে চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখে ওর সামনে তুড়ি বাজালো রবিন।
– কি ম্যাডাম? কি এতো ভাবছেন? ভাবনা চিন্তাগুলো এক সাইডে রেখে বাইকে বসুন। আমাকে উদ্ধার করুন।
তিথী আর কোনো কথা বাড়ালো না। রবিনের পিছনে গিয়ে বাইকে বসে পরলো।
রবিন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর তিথী লোকেশন বলে দিচ্ছে।
বাসার সামনে আসতেই তিথী বললো
-রাখুন এখানে।
রবিন অবাক হয়ে বললো
-এখানে কেন? এখানে কি দরকার?
-এই বাসাতেই আমি যাবো। এই বাসার মেয়েকেই আমি পড়াই।
-আচ্ছা! অবাক হয়ে বললো রবিন।
-আজ্ঞে হ্যাঁ।
তিথী বাসার ভিতরে এগুতে নিলে পিছন থেকে রবিন জোরে বলে উঠলো
-এইটা কিন্তু মোটেও জাহান্নাম নয়।
তিথী রাগী চোখে ফিরে তাকালো রবিনের দিকে। রবিন হাসতে হাসতে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো উল্টোদিকে।
তিথী রেগেমেগে আগুন হয়ে বিড়বিড় করে বললো
-গুন্ডা একটা।

______

– এই মেয়ে, সমস্যা কি তোমার? কাজ করতে আসছো কি তুমি? সকালে লেইট করে আসছো, এখনো লেইট। এভাবে বার বার লেইট করলে আমি তোমাকে রাখতে পারবোনা বলে দিচ্ছি।
অনামিকার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। তিথী অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বললো
– সর‍্যি ম্যাম, আর হবেনা এইরকম। আসলে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম, তাই দেরি হয়ে গেলো।
– ঠিক আছে, এইবারের মতো আর কিছু বললাম না। এরপর থেকে দেরি করলে কিন্তু আমি সহ্য করবো না বলে দিলাম।
অনামিকা রেগেমেগে হনহন করে চলে গেলো নিজের রুমে।
তিথী একটা নিশ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে এগুলো। ইভানাকে পড়িয়ে সোজা অনামিকার বাসায় চলে এসেছে তিথী। পায়ে ব্যাথা থাকায় টাইমমতো আসতে পারেনি বলে অনামিকা এতোগুলা কথা শুনালো তিথীকে।

রাতের খাবার রান্না করে ডাইনিং টেবিলে খাবারগুলো সাজালো তিথী। কিচেন টা ক্লিন করে নিলো পরক্ষণেই। হাত ধোয়ার পানি থেকে শুরু করে সবকিছু এনে রেডি করে রেখেছে সে।
অনামিকার সাথে আরেকটা মহিলাকেও দেখা যাচ্ছে। সকালে এই মহিলাকে দেখে নি তিথী। অবশ্য এই বাসায় আর কেউ আছে কিনা, সেটাও জানেনা তিথী। অনামিকা মহিলাটির সাথে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে এলো।
মহিলাটি তিথীকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিলো। অনামিকার দিকে তাকিয়ে বললো
– এইটাই তোর নতুন সার্ভেন্ট?
– হ্যাঁ আপা।
তিথী নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললো
– আমি কি এখন যেতে পারি ম্যাম?
– হ্যাঁ, যাও। কাল সকাল সকাল চলে এসো।
– জ্বি আচ্ছা।
তিথী চলে যেতে গিয়েও দরজার কাছাকাছি এসে থমকে দাড়ালো।
অনামিকার পাশের মহিলাটি অনামিকাকে বলছে..
– তোর গয়নাগাটি সামলে রাখিস রে অনু, সাথে টাকা পয়শাও। এইসব গরিবের বাচ্চারাই কিন্তু ভালো মানুষ সেজে চুরি করে বসে। এইসব গরিবের বাচ্চাদের একদম বিশ্বাস করতে নেই।
– যা বলছো আপা। আমি আগেই সব গুছিয়ে রাখছি। তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা৷
তিথীর চোখগুলো টলমল করতে লাগলো। এই বুঝি তিথীকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে গভীর অতিলে।
মনের কষ্ট মনে চেপে দ্রুত বের হয়ে এলো তিথী। দমটা বুঝি আটকে আসছে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে খুব।

রিয়ানার হাস্যোজ্জ্বল ছবিটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে ইনাম। ছবিটার দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্যে হেসে উঠছে একা একাই। হাত বুলাতে বুলাতে ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলছে
– এই, তুমি এতোটা মিষ্টি কেন বলোতো? তুমি কি জানো, তোমাকে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা আমি। নানান বাহানায় তোমাকে কাছাকাছি রাখতে ইচ্ছে হয় শুধু।
আর তুমি! তুমি শুধু পালাতে চাও আমার কাছ থেকে৷ কেন এমন করো তুমি? তুমি কি বুঝতে পারোনা আমার এই চোখের ভাষা?
কেন বুঝোনা তুমি? নাকি বুঝেও না বুঝার মতো থাকো?
রাতের আকাশে হাজার তারার মেলা বইছে, চাঁদের একফালি কোটি কোটি তারাকে পাশ কাটিয়ে উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর পানে। বেলকনিতে বসে প্রিয় মানুষটার মুখপানে তাকিয়ে সেই উঁকিঝুঁকি মারা চাঁদটার আলো গায়ে মাখিয়ে জোছনা বিলাশ করছে ইনাম।

To be Continue……

#হৃদয়ও_মাঝারে-০৯
তন্বী ইসলাম

— এই তিথী, তুইও চল আমার সাথে। তুই না গেলে আমি যাবোনা।
— তুমি যেওনা, তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে খেলবো? কে আমাকে বিয়ে করবে? আমি অন্যকাউকে বিয়ে করবোনা, অন্যকাউকে বিয়ে করলে আমার বর পুতুলটাকে কেড়ে নিবে সে। আমি আমার পুতুলটা কাউকে দিবোনা। গাল ফুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো তিথী।
ছেলেটি তিথীর চোখ থেকে পানিগুলো মুছে দিলো। মন খারাপ করে বললো
— তুই রেডি হো তিথী। আমার সাথেই তোকে নিয়ে যাবো।
তিথীর চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো
— সত্যি বলছো? আমাকে নিয়ে যাবা তুমি?
— হ্যাঁ, যা রেডি হয়ে আয়।
— যাচ্ছি, বলে এক ছুট দিলো তিথী।

— তিথীইইইইইইইইই
একটা আর্তনাদের মতো আওয়াজ আসলো তিথীর কানে৷ তিথী স্পষ্ট বুঝতে পারলো, ওর প্রাণপ্রিয় বন্ধুটিই এভাবে ওকে ডাকছে। কিন্তু এভাবে কেন ডাকলো? ভালো করেও তো ডাকতে পারতো। ছোট্ট তিথী সেই ডাকটাকে এতোটাও গুরুত্ব দিলোনা
নতুন একটা জামা পরে চুলের দুইপাশে দুইটা ক্লিপ লাগালো সে। নিজের ছোট ব্যাগটায় জামাগুলো ঢুকিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে এলো তিথী। কিন্তু একি, ওরা কোথায়? আর সেইবা কোথায়?
দরজার পাশেই একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পেপার পড়ছে এহসানুল হক।
তিথীকে এই সাজে দেখে কপাল কুচকালেন তিনি। তিক্ত গলায় বললেন..
— এমন ঢং কইরা আইছোস কেন? এই ব্যাগে কি? ব্যাগ নিয়া যাস কই?.
— ওরা কই চাচাজান? আমারে তো বললো সাথে নিয়ে যাবে। চাচার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো তিথী।
— উহ, সাথে নিয়া যাইবো। মগের মুল্লুক নাকি? পুলাডারে আমার বোকা পাইয়া ফান্দে ফালাইবার চাস এই বয়সেই?
চাচার এমন কথায় ছোট্ট তিথী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো শুধু।
লোকটি বললো
— পুলা আমার গেছেগা। পুলা বুঝবার পারছে তুই ওরে ফান্দে ফালতে চাস, হের লাইগাই গেছে গা।
ওর কথা মাথা থেইকা ঝাইরা ফেল। যা রুমে যা বলতাছি। ধমক দিয়ে বললেন এহসানুল হক।
তিথী নিজের রুমে ফিরে এলো কাঁদতে কাঁদতে।
..
— তিথিইইইইইইইইইই
আবারও কানে বাজলো ডাকটা। ধরফরিয়ে উঠে বসলো তিথী । আবারও সেই স্বপ্নটা দেখেছে তিথী। এই স্বপ্নগুলো দেখা যেন ওর প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। প্রচন্ডভাবে ঘামছে তিথী। পানির জগটা নিয়ে ঢকঢক করে সবটা পানি নিমিষেই শেষ করে ফেললো ও। জগটা পাশে রেখে মাথাটা চেপে ধরলো তিথী। কেন সে বারবার এই স্বপ্ন গুলো দেখে? কেন ভুলতে পারেনা সেই দিনগুলো? কেন বড্ড বেশি মনে পরে তাকে?
ছোট্ট তিথী সেদিন বুঝতে পারেনি চাচার চালাকি। বুঝতে পারেনি, তিথীইইই বলে চিৎকার করা সেই গগনবিদারী আর্তনাদ কিসের জন্য ছিলো। কিন্তু এখন ঠিকই সে বুঝতে পারে সবটা, সেই আর্তনাদ অন্য কিছুর নয়, বরং তিথীর কাছ থেকে ওকে আলাদা করার মুহূর্তে এই ভয়ংকর আর্তনাদ করেছিলো সেই ছেলেটি। সেদিন যদি এই চিৎকারের মানেটা বুঝতে পারতো তিথী, তাহলে হয়তো সব সাজগোছ ছেড়ে, ব্যাগ গুছানো ছেড়ে চলে যেত ওর কাছে। হয়তো এই ছোট্ট মেয়ে ওর চাচার মতো দানবের সাথে লড়াই করে ওর সাথে যেতে পারতো না, শেষ চেষ্টা তো করতে পারতো।
তবুও তিথী ছোট্ট তিথী দিন গুনেছে, অপেক্ষা করেছে ওর আবারও ফিরে আসার। কিন্তু নিয়তি চায়নি সেটা। ছোট্ট তিথীকে কয়েকদিন পরেই জোর করে এতিমখানায় রেখে আসা হয়। তাই আজ দুজন দু’প্রান্তে। কেউ জানেনা কারো খবর । চাচার এমন জঘন্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিথী আজ এতিমখানায় বড় হয়েছে। আর এখন তো সে বস্তিবাসী। হুহ, সেই চাচার কথা মনে হতেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তিথী। পরক্ষণেই আবার মনটা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো ওর। আচ্ছা, সেই ঠিকানায় গেলে কি ওকে পাবে? চাচা তো নিশ্চয়ই ওকে চিনবে না। তাহলে যেতে সমস্যাটা কি।
পরক্ষণেই তিথী আবার ভাবলো
— আমিও কি যা তা ভাবছি, ওকে কিভাবে পাবো ওখানে। ওও তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। ও কি আর এখন ওখানে থাকবে? ও তো..
আর কিছু ভাবতে পারলোনা তিথী।
ঝিমঝিম করছে মাথাটা। ঝিমানো মাথাটাকে শান্ত করতে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো তখনই।
.
আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এর মধ্যে তিথী আরেকটা টিউশনি পেয়েছে। মেয়েটা ইভানার বান্ধবী। মুলত ইভানার মায়ের মাধ্যমেই ওই টিউশনিটা পাওয়া। ইভানাদের বাসায় এসেই ওই মেয়েটা ইভানার সাথে পড়ে। দুজনকে একসঙ্গে পড়ানোতে সময়টা মেইনটেইন করা সহজ হয়ে উঠে তিথীর। আসলে ইভানার সেই বান্ধবীটাও ইভানার মতোই চুপচাপ, শান্ত আর বেশ মেধাবী। দুজন মেধাবী মেয়েকে পড়াতে খুবই ভালো লাগে তিথীর।
সামনের মাসেই হোস্টেলে গিয়ে উঠবে তিথী। হোস্টেলটা ওর ভার্সিটির কাছেই। ফারিন থাকে সেই হোস্টেলে। ওর সাথে যোগাযোগ করেই একটা সিটের ব্যবস্থা করেছে তিথী। এই মাসটা কোনোমতে পার হলেই সে চলে যাবে এই জঘন্য পরিবেশ থেকে।
ভাবতেই একটা প্রশান্তি আসে মনের মধ্যে।

— আচ্ছা ম্যাম, আপনি এতো কম কথা বলেন কেন? কম কথা বলা মানুষ আমার খুব পছন্দ। আমার আগের ম্যাম খুবই বকবক করতো। ভালো লাগতো না আমার।
ইভানার কথায় কিছুটা অবাকই হলো তিথী। দুপুরের খাবার খেয়েই চলে এসেছে ইভানাদের বাসায়। এই নাগাদ ইভানাকে পড়া ছাড়া অন্য কোনো ব্যপারে কথা বলতে দেখেনি, বিশেষ করে তিথীর সাথে। আজ এইরকম একটা প্রশ্ন করায় তিথী অবাক না হয়ে পারলো না। পাশে বসে থাকা মিথীলা বললো…
— আমারও খুব ভালো লাগে আপনাকে ম্যাম।
তিথী হাসলো। বললো.
— ধন্যবাদ আমার ছোট্ট সোনামনিরা। এইবার পড়। পড়ার সময় অন্য কোনো ব্যাপারে কথা বলতে নেই। বলেই দুজনার গাল টেনে দিলো তিথী।
ইভানা গাল ফুলিয়ে বললো..
— আগের ম্যামকে অপছন্দ করার এইটাও একটা কারণ ছিলো।
তিথী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। থতমত করে বললো
— ওহ স্যরি মামনী, আর হবেনা এমন।
ইভানা মিষ্টি করে হাসলো। সাথে তিথীও।
বিকেলে পড়ানো শেষে অনামিকার বাসায় চলে গেলো তিথী। অনামিকা চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে সোফায় বসে পেপার পরছিলো। মুখে মেকাপের কমতি ছিলোনা তাও।
তিথীর আসার শব্দে অনামিকা আড়চোখে তাকালো একবার। তিথী সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে ঢুকে গেলো। অনামিকার চোখের সামনে থাকাটা বেশ অস্বস্তি লাগে ওর কাছে। সন্ধ্যার দিকে রান্নাবান্না শেষ করে কিচেন ক্লিন করলো তিথী। অনামিকার রুমটা আবারও ভালো করে ঝাড় দিলো। যদিও সকালে একবার ক্লিন করেছিলো।
অনামিকার কাছ থেকে বিদায় নেয়ে ফিরতে গেলেই অনামিকা বাধ সাধলো।
— পরে যাও, ওখানে কিছু কাপড় রাখা আছে, সেগুলো দ্রুত ধুয়ে দিয়ে যাও।
— কিন্তু ম্যাডাম, এই রাতে কাপর ধুলে ভেজা থাকবে। কাপড় বেশি সময় ভেজা থাকলে নষ্ট হয়ে যায়।
— তোমার কাছ থেকে নিশ্চয়ই আমি কোনো জ্ঞান বাক্য শুনতে চাইনি। যেটা বলেছি সেটা করো। ঝাঝালো গলায় কথাগুলো বলে রুমে চলে গেলো অনামিকা।
একরাশ বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে কাপড়গুলোর কাছে গিয়ে দাড়ালো তিথী। কিছুক্ষণ সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। কয়েক সেকেন্ড বাদেই কাপড়গুলো হাতে নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায় তিথী।

________

দিন ছুটছে আপন গতিতে। তিথীরও দিন পার হচ্ছে রুটিনমাফিক।
সকালে টিউশন, টিউশন শেষে অনামিকার বাসায় কাজ। নিজের রান্নাবান্না, ভার্সিটি, আবার টিউশন, অন্যের বাসায় কাজ করা, রাতে অতীতে ফিরে যাওয়া.. এইভাবেই যাচ্ছে দিনগুলো।
আর একদিন পরেই হোস্টেলে গিয়ে উঠবে তিথী। তাই জিনিসপত্র গোছগাছ করছে সে। এই জায়গা থেকে যত তারাতাড়ি যেতে পারবে, ততোই স্বস্তি পাবে সে। একটা বস্তায় জিনিসপত্র ভরে নিলো ঝটপট। বড় ব্যাগটাকে নিজের কাপড়চোপড়, বইপত্র আরো কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ঢুকিয়ে নিলো তিথী। থাকার মধ্যে শুধু বিছানাটাই বাইরে রয়েছে। সেটাতেতো রাতটা পার করতে হবে। সকালে উঠেই সেগুলো ব্যাগে ভরে নিবে এটাই ভেবে নিলো মনে মনে। রান্নাবান্নার ঝামেলায় যাবেনা সে। হোটেল থেকে কিছু আনিয়ে খেয়ে নিবে। এই ভেবেই হাড়ি পাতিল গুলো বস্তায় ঢুকিয়ে নিয়েছে। সবকিছু গোছগাছ করতে করতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেলো।
খেয়ে নিয়েছিলো আগেই। খেয়েদেয়ে হাড়ি পাতিল ধুয়ে তা শুকনো ন্যাকড়া দিয়ে মুছেই বস্তায় ভরেছে তিথী।
সবকিছু গুছানো শেষে হাতমুখ ধুতে চলে গেলো গোসলখানায়।
পাশ থেকে কয়েকটা বখাটে ছেলে ইশারা ইংগিতে ওকে নানান ধরনের বাজে কথা বলে যাচ্ছে। তিথী একবার আঁড়চোখে সেদিকে তাকালো। ছেলেগুলো বিশ্রীভাবে কিছু বলছে।
তিথী চোখ ফিরিয়ে নিলো সাথে সাথে। মনে মনে বললো..
–যা বলার বলে নে বেটারা। আজ কিছু বলবোনা আমি। সব হজম করবো। এরপর আমাকে আর চশমা দিয়ে খোজলেও পাবিনা। হুহ।
হনহন করে চলে গেলো তিথী।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আগে ফজরের নামাজ সেড়ে নিলো তিথী। নামাজ থেকে উঠে রেডি হয়ে ইভানাদের বাসায় ছুটলো সে। যদিও ভেবেছিলো ফোন করে বলে দিবে আজ যেতে পারবেনা, কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো, কি দরকার শুধু শুধু, হোস্টেলে তো নিজের কাজগুলো শেষ করেও যেতে পারবে। তাই আর বেশি কিছু না ভেবেই চলে গেলো সেখানে।
হাসিমুখে ঢুকলো ইভানাদের বাসায়। ইভানার মা এখনো বিছানা ছেড়ে উঠেনি। রিয়ানা বারান্দার রেলিং ঘষে দারিয়ে আছে ব্রাশ নিয়ে। তিথীকে হাসিমুখে ঢুকতে দেখে একটু ভ্রু কুচকে তাকালো ওর দিকে। তিথীর দৃষ্টিতে সেই ভ্রু কুচকানো মাথা মুখটা পরতেই হেসে দিলো ও। রিয়ানা এগিয়ে গেলো তিথীর দিকে। দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে বললো
— কি ব্যাপার? আজ এতো খুশি খুশি? ব্যাপার কি? কোনো বিশেষ কারণ আছে বুঝি?
— বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া হাসতে বুঝি মানা আছে? ঠোঁটের কোনে হাসিটা রেখেই উত্তর দিলো তিথী।
— নাহ! কাউকে সচরাচর এভাবে হাসিমুখে থাকতে দেখিনা তো, তাই মনের মধ্যে প্রশ্নটা উঁকিঝুকি মারছে।
তিথী আবারও হাসলো। বললো
— বিশেষ কোনো কারণ না, তবে আজ আমি ভীষণ খুশি।
— আচ্ছা, সেই খুশির কারণটা কি আমি জানতে পারি? উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়ানা।
— আজ আমি বস্তি ছেড়ে দিচ্ছি। হোস্টেলে গিয়ে উঠছি। সেজন্যই খুশি আমি।
— ওমা রিয়েলি? সেটা তো খুব ভালো কথা। আসলে বস্তিটা তোমার জন্য নয়। তোমাকে মানায় না সেখানে।
তিথীর মুখ কালো হয়ে গেলো। বিমর্ষ মুখেই বলল
— এতিমখানাটাও আমার জন্য ছিলোনা, আমাকে সেখানেও মানাতো না।
— প্লিজ তিথী, মন খারাপ করোনা৷ এখন এই খুশির মুহূর্তে যদি মন খারাপ করো, তাহলে আমি নিজেকে অপরাধী ভাববো প্লিজ।
তিথী আঁড়চোখে তাকালো রিয়ানার দিকে। এই বুঝি মেয়েটা কেঁদে দিবে। মুহুর্তেই ফিক করে হেসে দিলো তিথী। রিয়ানাও সেখানে শামিল দিলো সমানে।

অনামিকার বাসায় গিয়ে যেন বড় বিপাকে পরলো তিথী। এমনিতেও অনামিকার বাসায় রান্নাবান্না, ঘর গুছানো ছাড়াও বাড়তি কাজ করতে হয় ওকে, যা শর্তে ছিলোনা। এরউপর আজ পুরো বাসার কাজ দিয়ে দিয়েছে অনামিকা তিথীকে।
তিথী বারবার বলছে ওকে আজ ফিরতে হবে তারাতাড়ি। কিন্তু অনামিকার এক কথা, আজ কোনোমতেই ছাড়াছাড়ি নেই। অনামিকার বাসায় আজ মেহমান আসবে। সেইজন্য পুরো বাসাটা গোছগাছ করতে হবে তিথীকে। অগত্যা তিথীকে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা পেতে মেনে নিতে হলো সবকিছু।
কিচেনে গিয়ে আগে রান্না চাপালো চুলোয়। চুলার আচঁ টা কমিয়ে দিয়ে অনামিকার রুমে গিয়ে রুমটা ভালোকরে পরিষ্কার করে নিলো ঝটপট। ফাঁকে ফাঁকে কিচেনে এসে রান্নার তদারকিটাও করে নিতে ভুলছেনা।
ঘরের আসবাবপত্র গুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে বাসার পর্দাগুলোও চেঞ্জ করে নিলো তারাতাড়ি।
ওদিকটায় অনামিকার খাওয়ার টাইম হয়ে যাওয়ায় উনাকেও খাবার সার্ভ করে দিতে হলো।
অনামিকার খাওয়া শেষ হলে পুরো বাসাটা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে বলে তিথীকে। তিথী হতাশ হয়, কিন্তু মানা করেনা। এক বালতি পানি এনে পরিষ্কার একটা ন্যাকড়ার সাহায্যে পুরো বাসাটা মুছে নেয় তিথী। পুরো বাসাটায় এখন চেঞ্জ। তিথী এবার অনামিকার কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে অনামিকার তিক্ত গলা তিথীকে ভড়কে দেয়।
অনামিকা তিথীর দিকে হাত নেড়ে নেড়ে বলতে লাগে
— মাত্র তো বাসাটা ক্লিন হয়েছে। রান্নাবান্না তো এখানো বাকি। রান্না বাকি রেখেই যাওয়ার জন্য এতো লাফাচ্ছো কেন?
তিথী অবাক হয়ে বললো
— রান্নাবান্না তো বাকি নেই। রান্না তো আগেই করে নিয়েছি।
অনামিকা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বললো
— কি মনে হয় তোমার? নতুন মেহমানকে আমি ওই সাধারণ খাবার খাওয়াবো? আমার বিজনেস পার্টনারের ছেলে আসবে আজ। যা তা দিয়েই আমি ওকে আপ্যায়ন করাবো?
তিথী দম নিলো। শান্ত গলায় বললো
— কি কি রান্না করতে হবে বলুন।

রান্না শেষ করতে করতে প্রায় দুপুর একটা বেজে গেছে। না হলেও প্রায় ১০/১২ পদের খাবার রান্না করতে হয়েছে ওকে।
পোলাও, মাংস, রেজালা, কাচ্চিবিরিয়ানি, সরষে ইলিশ, চিংড়ি মালাইকারি, কাচকলার কুফতা, কোরমা, কালিয়া এইরকম আরো অনেক ধরনের আইটেম করেছে সে।
রান্না শেষে প্রায় হাপিয়ে গেছে তিথী। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অনামিকার রুমে গেলো সে। অনামিকা আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত তখন।
তিথী নক করে দরজায়। অনামিকা দরজার দিকে তাকিয়ে বললো..
— কি বলবে দ্রুত বলো..
— আমার কাজ শেষ।
— ওহ, খাবারগুলো টেবিলে এনে সাজিয়ে রেখেছো তো?
— জ্বি ম্যাম, সবকিছুই কম্পলিট করা হয়ে গেছে।
— তাহলে আর কি, আসতে পারো এখন।
— কিন্তু ম্যাম, আজ আমি আর আসতে পারবোনা বিকেলে।
মহিলা তিক্ষ্ণভাবে তাকালো তিথীর দিকে। বললো
— আসতে পারবেনা কেন?
তিথী করুনভাবে বললো
— আজ সত্যিই আমার কাজ আছে ম্যাম। আমি সকালেই বলেছিলাম আপনাকে।
মহিলা কি যেনো ভাবলো। বললো।
— ঠিক আছে, আজ আর আসতে হবেনা তোমায়, যা রেধেছো, তা দিয়েই আমার রাতে চলে যাবে।
— ধন্যবাদ ম্যাডাম।
বিনিময়ে অনামিকা কিছু আর বললো না।

তিথী বাসা থেকে বের হতে গিয়েই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো কারো সাথে, মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো একটা সুদর্শন যুবক দাড়িয়ে আছে ওর সামনে। মুখে বিরক্তির রেখা ফুটে আছে তার। তিথী আমতাআমতা করে বললো
— স্যরি, আমি দেখতে পাইনি।
— চোখ থাকে কোথায়? নেক্সট টাইম দেখেশুনে পা ফেলবে। কড়া গলায় কথাটা বলে পাশ কেটে ভিতরে ঢুকে গেলো ছেলেটা।
তিথী পা বাড়ালো সামনের দিকে ঠিক সেই মুহূর্তেই শুনতে পেলো অনামিকার গলা। ছেলেটিকে আহবান করে বলছে
— আরে, ইনাম বাবাজি যে, চলে এসেছো? রাস্তায় কোনো অসুবিধা হয়নি তো তোমার?
তিথী থমকে গেলো। “ইনাম” এই ডাকটা কানের কাছে বাজতে থাকলো বারবার। এইটা যে খুব পরিচিত আর চেনা একটা নাম।

To be Continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here