হৃদয়ও_মাঝারে-১৬,১৭

0
834

#হৃদয়ও_মাঝারে-১৬,১৭
তন্বী ইসলাম
১৬

তিথী নিজের ব্যাগের কাছে গেলো। ব্যাগটা খুলতেই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে লাগলো সেই পুতুলটা। দু সেকেন্ড পুতুলটার দিকে নিরবে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণে সেটি হাতে নিলো তিথী। মনে হলো, এই বুঝি তার প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্যে সে চলে এসেছে। তিথীর চোখ বেয়ে পানি পরছে। পুতুলটাকে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো সে। মনে মনে অজানা আতংক কাজ করছে। প্রিয় মানুষটার সাথে কি তার কখনোই দেখা হবে না? সে তো খোঁজ করতে গিয়েছিলো, পেলো না তো। এখন সে কোথায় আছে তাও তার অজানা, তাহলে পাবে কি করে তাকে? এ জীবনে কি তাকে পাওয়া হবে না?

“এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি করছো তিথী?

ফারিনের কথায় ধ্যান ভাংলো তিথীর। নিঃশব্দে চোখের পানি মুছে পুতুলটাকে আবারও ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো সে। এরপর ব্যাগের চেইন আটকে ফারিনের দিকে ফিরে তাকালো। ফারিনের চোখ মুখে বিষাদ, বেচারির আজ মন ভালো নেই। তার নিজের মনেও আজ বিষন্নতা বিরাজ করছে। তিথী নিজেকে সামলে নিয়ে ফারিনের কাছে এগিয়ে গেলো। ওর বাহুতে আলতো করে ধরে মৃদু গলায় প্রশ্ন করলো
“মন টা কি বেশি খারাপ?
ফারিন ঠোঁট উল্টিয়ে বললো
“হুম।
তিথী মুচকি হেসে ফারিনকে জড়িয়ে ধরলো। শান্তনা দিয়ে বললো
“মন খারাপ করে থেকো না, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা পরীক্ষা মাত্র। এ পরীক্ষায় সফল হও, সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।

ইদানিং তিথীর মনটা ভালো যাচ্ছেনা, সারাক্ষণই মনে হচ্ছে কিছু একটা পেয়েও হাতছাড়া করছে সে। মনের ভেতর ঝর বইছে তিথীর। মন জানান দিচ্ছে তাকে, তার প্রিয় মানুষটা তার অতি নিকটে, কিন্তু কে সে? তিথী তো কাউকে চিনতে পারছে না? ইনামের ব্যাপারেও এখনো ভালো করে জানতে পারেনি কিছু। যদিও ভালো একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে, ইদানিং সম্পর্কের সূত্রটা আগের চেয়েও এগিয়ে এসেছে। তবে ব্যক্তিগত বিষয়ে অজানা তার। সবচেয়ে বড় কথা, এই ইনামের ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আর ইনামের মিল সে পায় না। তবে নামের ক্ষেত্রে ১০০% মিল। কিন্তু নামে মিল তো থাকলেই তো হয় না, এ দুনিয়ায় এক নামে কত কত মানুষ আছে তার হিসাবের বাইরে৷ তিথী দ্বিধায় আছে, কি করে তার প্রিয় মানু্ষটার দেখা সে পাবে?

বিকেলে ইভানাকে পড়িয়ে এসে সন্ধ্যায় আবার কোচিং এর জন্য বেরিয়ে পরে তিথী। ইভানার পরিবার থেকে শুনে এসেছে ইনাম কিছুদিন তাদের বাসাতেই থাকবে। সবেমাত্র কিছুদিন হলো বাবাকে হারিয়েছে, এখন তারা চাইছে না খালি বাসায় সে একা থাকুক। যদিও ইনাম সেখানে সাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। ইভানাকে পড়ানোর ফাকে তিথীর সাথে খানিক সময়ের জন্য কথা হয়েছে তার। বাবাকে হারিয়ে ছেলেটা সত্যিই মানসিক ভাবে ভেংগে পরেছে। এই মুহূর্তে ইনামের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার সঙ্গীর। তিথী এখন মানসিক ভাবে পণ করেছে, ইনামের একাকিত্ব খুব শীঘ্রই সে ঘুছাবে।

কোচিং ক্লাস শেষ হতে হতে রাত প্রায় আট’টা ছুইছুই। তিথী সাইড ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে কোচিং থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুটা দূর এগিয়ে যেতেই তার থেকে খানিক দূরে একটা বাইক তার নজরে পরে। বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রবিন। মুখ দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে তার, বোধহয় সিগারেট টানছে। তিথী নিজের মতো হাঁটা শুরু করলো। রবিনকে পাশ কাটিতে যাওয়ার পথে হঠাৎ রবিন তার হাত টেনে ধরলো। তিথী চমকে উঠলো। আকস্মিক রবিনের এমন বিহেভে তিথী অবাক। সে বিস্মিত চোখে রবিনের দিকে তাকালো। খেয়াল করলো, একজোড়া আকুতিভরা নজরে রবিন তাকিয়ে আছে তার দিকে। এ নজরে কুনজরের ছায়াটাও তিথীর চোখে পরলো না। মাদকতায় ভরপুর এমন ঘায়েল করা নজরে তিথী গুটিয়ে নিলো নিজেকে। রাতের বেলায় রাস্তার মাঝখানে বখাটের মতো হাত টেনে ধরায় তিথী কিছু সময়ের জন্যও রেগে গিয়েছিলো, ভেবেছিলো শুনিয়ে দিবে দু’টো কড়া করে কথা। কিন্তু ও চোখের ঘায়েল করা আক্রমণে তিথী কিছুটা দুর্বল অনুভব করলো। কন্ঠস্বর নরম করে সে বললো
“হাতটা ছাড়ুন।
রবিনের হুশ নেই। তিথী হাতটা নিজে থেকেই ছাড়ানোর চেষ্টা করল এবার। তবে সে ব্যার্থ হয়ে আবারও বললো
“হাতটা ছাড়ুন প্লিজ, আমাকে হোস্টেলে ফিরতে হবে। দেরি হলে ম্যামের কাছে কথা শুনতে হবে।

রবিনের হুশ ফিরলো, তিথীর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় দেখে সেও অবাক হলো কিছুটা। ঝট করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো
“আই এম স্যরি তিথী। আমি হয়তো কোনো ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।
তিথী দু’পা পেছনে গিয়ে শান্ত গলায় বললো
“ইট’স ওকে।
আবারও নিরবতা। দুজনের কেউই কিছু বলছে না। রবিন সিগারেটে টান দিলো আবারও। তিথীর বিরক্ত লাগে এই সিগারেটের গন্ধ। তবে অন্যের ব্যাপারে কিছু বলার অধিকার তো তার নেই। তিথী যাবার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গেলো হঠাৎ। রবিনের দিকে ফিরে তাকাতে দেখতে পেলো রবিনের নজর সেই আধপোড়া সিগারেট টার দিকে। তিথীর কেন যেনো মনে হলো রবিনের আজ মন ভালো নেই।

“মন খারাপ থাকলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান, সিগারেট খাওয়া কখনোই সমাধান নয়। এটা বাইরে থেকে যেমন পুড়ায়, ভেতর থেকে তারচেয়েও বেশি পুড়ায়৷

তিথীর কথার রবিন সামনে তাকালো। রবিন জোরপূর্বক হাসি হেসে বললো
“আমার ভেতর টা তো কবেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। যেটুকু বাকি ছিলো, ভেবেছিলাম কেউ একজন এসে সেটাকে ঝালাই দিয়ে ঠিক করে নিবে। কিন্তু নাহ, সেটা বোধহয় আর হবার নয়। বাকিটা তিলে তিলে জ্বালিয়ে শেষ করার চেয়ে নাহয় একবারেই জ্বালিয়ে শেষ করে দেই৷
রবিন আবারও সিগারেট টায় টান দিতে যাবে ঠিক তখনই চিলের মতো থাবা দিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে নেয় তিথী। রবিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে তিথীর দিকে। তিথীর চোখেমুখে রাগ, সে সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে পেলে। রবিন কিছুক্ষণ সেদিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে। এরপর হঠাৎ শব্দ করে হাসে রবিন। তিথী বিস্ময়ে বলে উঠে
“হাসছেন কেন আপনি?

রবিন বুকপকেট থেকে সিগারেটের পুরো প্যাকেট টা বের করে তিথীর সামনে ধরে। নেশাতুর গলায় বলে
“এই নাও, পুরোটা নষ্ট করো। তা নাহলে আমি এক্ষুনি আবারও খাবো।
তিথীর এবার সত্যিই মায়া হলো ছেলেটার জন্য। হঠাৎ কি হলো তার! যে কারণে আজ হঠাৎ এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে? জানতে ইচ্ছে করলো তিথীর। বার বার চেষ্টা করেও তার জিজ্ঞাসু মনকে দমাতে পারেনি তিথী। এক সময় প্রশ্ন করেই বসে সে।
“কি হয়েছে আপনার? আজ হঠাৎ এমন করছেন কেন?
রবিন নিঃশব্দে হাসলো। বললো
“অন্তরে মরিচা ধরেছে।

তিথী বুঝতে পারলো না তার কথা। এদিকে তিথীর হোস্টেলে ফিরতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ তিথী রবিনকে উদ্দেশ্য করে বললো
“আমার আজ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। আমি চলে যাচ্ছি, আপনিও চলে যান। এমন অবস্থায় রাস্তাঘাটে থাকাটা রিস্ক। আশা করছি নিজের ভালোটা আপনি বুঝবেন।
তিথী চলে গেছে। আগের যায়গায় বসে আছে রবিন। তিথী চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই হাসলো রবিন, সে হাসি তাচ্ছিল্যের হাসি। কোথায় যাবে সে? নিজের বাসাটাও এবার নরক মনে হচ্ছে তার কাছে। এর চেয়ে এখানেই ঢের ভালো আছে সে।

বাসায় গিয়ে ফোনে ইনামের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো তিথীর। ইনামের মনের কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। আগের তুলনায় যথেষ্ট স্বাভাবিক হয়ে গেছে সে। ব্যাপারটায় তিথী বেশ খুশিই হলো। ইনাম এখন নিজের বাড়িতে চলে এসেছে। ইনামের সাথে বেশ কিছুক্ষণ ফোনালাপ করে এরপর নিজের কাজে মন দেয় তিথী। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রাতের ডিনার শেষ করে নেয়। ভার্সিটির কিছু পড়া বাকি ছিলো, সেগুলো কমপ্লিট করা প্রয়োজন। তিথী বইটা হাতে নিয়ে নিজের বেডে গিয়ে বসে। বালিশে আধশোয়া হয়ে বসে বইয়ে চোখ বুলায় সে। এক ফাঁকে তার চোখে যায় ফারিনের দিকে। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে সে ফোনে কথা কথা বলছে। ওকে খুশি দেখে তিথীর মনটাও আনন্দিত হয়। এক পশলা খুশির ঝলকানি তার মনেও দেখা দেয়। তিথী আবারও বইয়ে চোখ ফেরায়।

খুব সকালে উঠে আবারও তার নিত্যদিনের কাজ ইভানাদের বাসায় চলে যায় তিথী। রিয়ানাকে বেশ হাসিখুশিই দেখা গেলো আজ। তিথী বুঝে নিলো সে হাসির কারণ অবশ্যই রবিন, হয়তো রবিনকে সে পেয়ে যাবে তাই এতটা খুশি। পরের খুশি দেখতেও ভালো লাগে। তবে এই মানুষটাই ইনামকে কষ্ট দিয়েছিলো, ইনাম মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেছিলো এটা মনে হতেই কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করে তার ভেতর। যদিও ইনাম যথেষ্ট ম্যাচিউর একটা ছেলে, খুব সহজেই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। অন্য আট দশটা ছেলের মতো দেবদাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে না। ইভানাদের বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা ভার্সিটিতে চলে যায় তিথী। এভাবে রুটিনমাফিক চলছে তার দিনকাল।

কষ্ট হচ্ছে খুব, তবে ভালোও লাগছে। জীবনে চ্যালেঞ্জ না থাকলে সে জীবনটা কেমন রশকষহীন হয়ে যেতো। তিথীর জীবনটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। প্রতিনিয়ত তাকে জীবনের সাথে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

টিউশন, ভার্সিটি, আবারও টিউশন, কোচিং, নিজের পড়াশোনা আর খাওয়া সবমিলিয়ে দিনকাল ভালোই কাটছে তিথীর। সারাদিন ব্যস্ততা থাকার একের পর এক দিন যে কিভাবে চলে যাচ্ছে তা টেরই পাচ্ছে না সে। তবে মাঝে মাঝে ফারিনকে বড্ড মিস করে তিথী। ফারিন এখন তার বরের সাথে থাকে। কিছুদিন আগেই তার বর তাকে নিয়ে গেছে এখান থেকে। যদিও ভার্সিটিতে ফারিনের সাথে রেগুলারই দেখা হয়, ফোনে কথা হচ্ছে নিয়মিত। তবে আগে হোস্টেলে থাকাকালীন দুজনের মধুর মুহুর্তটা বেশ মনে পরে তিথীর। সেদিন বিকেলে ইভানাকে পড়াতে যায় তিথী। ইভানা পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে, তবে মিথীলা এখনো আসে নি। তার জন্য অপেক্ষায় আছে তিথী। এ অবসর সময়টাতে রিয়ানা তিথীকে ডেকে নিয়ে যায় নিজের রুমে। তিথী মুচকি হেসে রিয়ানার সাথে যায়। রিয়ানার মুখে এখনো খুশির হাসি।

তিথী রিয়ানার রুমে গিয়ে বসে। চারপাশটায় চোখ বুলায়। এ বাসায় সে অনেক দিন ধরেই পড়াতে আসে, তবে এর আগে কখনো রিয়ানার রুমে আসা হয় নি তার। রিয়ানার রুচিবোধের তারিফ করতে হয়। কারণ, রুমটা দারুন সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে সে। যদিও বড়লোকদের ঘরদোর এমনিতেই পরিপাটি আর ঝকঝকে হয়ে থাকে সর্বদায়। তবে রিয়ানার রুমটা তুলনামূলক বেশিই ভালো দেখাচ্ছে। রিয়ানা কি করছে বুঝা যাচ্ছেনা। তিথী মুচকি হেসে রিয়ানাকে প্রশ্ন করলো
“আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে রিয়ানা?
রিয়ানা হাসিমুখে উত্তর দিলো
“দেখতেই তো পাবে। আমি আসছি।
“তবে ইভানাকে পড়ানোর টাইম যে হয়ে গেছে। আমাকে তো ওদের কাছে যেতে হবে।

রিয়ানা হাতে করে কিছু গহনার বাক্স নিয়ে এগিয়ে এলো তিথীর কাছে। তিথীর সামনে সেগুলো রাখতে রাখতে বললো
“ওদের কথা ছাড়ো তো। একদিন কম পড়াতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আগে এগুলো দেখো।
“কি এগুলো?
“আমার বিয়ের গহনা।
সোজাসাপটা উত্তর দিলো রিয়ানা। তিথী খেয়াল করলো, মেয়েটা প্রচন্ড খুশি। নিজের ভালোবাসাকে কাছে পাওয়ার আনন্দটা বোধহয় এমনই হয়। তবে কেন যেনো তিথীর ভালো লাগছে না। রিয়ানার হাসির আড়ালে যে সুখটা আছে সেটা মোটেও সহ্য হচ্ছেনা তিথীর। এর কারণ কি? কারণটা বোধহয় অজানাই। নিজের কাছে নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হতে লাগলো তিথীর। এতটা স্বার্থপর তো সে কখনোই ছিলো না! তবে আজ হঠাৎ এমন হলো কেন? রিয়ানার আনন্দ কেন তার ভালো লাগছে না। নিজের উপর নিজেরই বিরক্ত লাগছে তার। বার বার নিজের ভেতরে বর্তমানে বিরাজ করা অমনুষ্যত্বের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চাইছে তিথী। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সেদিনকার রবিনের মলিন চেহারাটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কেন যেনো মনে হচ্ছে, রবিনকে এ বিয়ের মাধ্যমে ঠকানো হচ্ছে।।

তিথী নিজের মাথায় দুহাতে চেপে ধরলো। এ কিসব আজগুবি ভাবনা তার মাথায় চলে আসছে? আর কেনই বা আসছে? রবিন সুখী হোক কিংবা অসুখী, তাতে তার কি? সে কেন এতো ভাবছে এটা নিয়ে?

তিথীকে এমন করতে দেখে অবাক হলো রিয়ানা। গহনার বক্সগুলো দূরে সরিয়ে রেখে তিথীর কাধে হাত রাখলো। রিয়ানার কপালেও চিন্তার ভাজ। সে চিন্তিত গলায় বললো
“এমন করছো কেন তিথী? তুমি কি অসুস্থ?
তিথী মাথা থেকে হাতদুটো সরিয়ে রিয়ানার দিকে তাকালো। ইতোমধ্যে ওর চোখদুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। নিজেকে ধাতস্থ করে ওড়নার মাথা দিয়ে কপালে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো তিথী।। জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো
“আমি ঠিক আছি রিয়ানা।
“তুমি মোটেও ঠিক নেই তিথী। আমি বলছি, তুমি মোটেও ঠিক নেই।

চলবে…..

#হৃদয়ও_মাঝারে-১৭
তন্বী ইসলাম

“আমি ঠিক আছি রিয়ানা।
“তুমি মোটেও ঠিক নেই তিথী। আমি বলছি, তুমি মোটেও ঠিক নেই।
তোমাকে দেখেই বুঝা যায় তুমি অসুস্থ। আচ্ছা, দুপুরে তুমি খেয়েছিলে তো? নাকি না খেয়েই চলে এসেছো? নিশ্চয়ই খাও নি কিছু, যে জন্যই এ অবস্থা। আমার সাথে এসো, আগে খাবে কিছু।

রিয়ানার ব্যতিব্যস্ত দেখে তিথী নিজেকে দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। ঠোঁটের কোনে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো
“আহ রিয়ানা, এত ব্যস্ত হইয়ো না। আমি ঠিক আছি, সম্পুর্ন সুস্থ আছি। দুপুরে খাওয়াও হয়েছে আমার।
“তাহলে এমন করছিলে কেন?
“এ কিছু না। তবে এখন আমি সম্পুর্ন সুস্থ।
“রিয়েলি?
“হুম।
তিথী উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। ইভানা আর মিথীলা অপেক্ষা করছে তার জন্য। কিছুক্ষণ আগেই মিথীলা চলে এসেছে। পড়ানো যখন প্রায় অর্ধেক বাকি ঠিক তখনই রিয়ানা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। ইভানাকে মিষ্টি গলায় বলে
“ইভু, আজ তোর ম্যাম অসুস্থ। আজ আর তোদের পড়তে হবে না।
ইভু ডাকটা শুনে তিথীর বুকের ভেতরটায় কেঁপে উঠলো। খুব কাছের একটা ডাক সেটা। ইভানা চোখমুখ ভাজ করে বলে উঠলো
“খালামনি, তোমাকে আর কতদিন বলবো চাচ্চু এ ডাকটা ডাকতে বারণ করেছে তোমায়।
রিয়ানা হেসে বললো
“এখন থেকে আর বারণ করবে না মামনি। এখন থেকে তো তোমার চাচ্চুই আমার কথায় উঠবস করবে। আমি হবো তোমার বাচ্চুর বস।
রিয়ানা দুষ্টু হাসলো আবারও। তিথী নিজেকে আবারও ধাতস্থ করে বললো
“আহ রিয়ানা, তুমি কি পাগল! আমি বলছি তো ঠিক আছি। পড়াতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না আমার।

তিথীর কথা শেষ হওয়া মাত্রই রুমে এসে প্রবেশ করলো ইভানার মা। মুচকি হেসে ইভানার পাশে বসলেন তিনি। স্নেহময় কন্ঠে বললেন
“তুমি কি সত্যিই অসুস্থ তিথী? অসুস্থ হলে পড়ানো বাদ দাও আজ।
“আরে নাহ ভাবি, আমি সত্যিই ঠিক আছি।
“অসুস্থ না হলেই ভালো। তা আসবে তো আমার বোনের বিয়েতে?
ইভানার মায়ের কথা শোনে তিথী চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। রিয়ানা হেসে বললো
“তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে আমার বিয়েতে। মানা করবে না বলে দিলাম।
তিথী এবার ইভানার মায়ের দিকে তাকালো। বললো
“দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে?
“হ্যাঁ। সামনের মাসে দশ তারিখ। এখন মুখে বলছি, সময় মতো তোমার হোস্টেলে কার্ড পৌঁছে যাবে। তিথী হাসলো। তবে আর কোনো কথা সে বললো না।

সেদিন শুক্রবার হওয়ায় কোচিং আর টিউশন কিছুই ছিলো না। হাতে যথেষ্ট অবসর সময় ছিলো তাই। সবুজ রঙের একটা সুতি থ্রিপিস গায়ে দিয়ে সাইড ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পরলো তিথী। গন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট যায়গা নয়। পুরোনো দিনের কিছু স্মৃতি এখনো মাথায় আছে। কিছু পরিচিতি যায়গার ঠিকানাও তার মনে আছে। মনের মানু্ষটিকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় আবারও পথে বেরোলো সে। সারাটা দিন এদিক ওদিক, এখানে ওখানে খুব খুঁজাখুঁজি করলো সে। কোত্থাও তাদের কারোরই অস্তিত্বের সন্ধ্যান মিলেনি। মলিন মুখ নিয়ে বিকেল বেলা বাসায় ফিরে তিথী। সারাটা দিনে জার্নিতে প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ব্যাথা অনুভুত হওয়ায় তিথী বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ভালো লাগছে না কিছুই। শরীরের ক্লান্তি তাকে ততটাও কাবু করতে পারেনি যতটা না তাকে খুঁজে না পাবার ফলে হয়েছে। তিথী আবারও উঠে বসে। বিছানাতেও মন টিকছে না তার। আজ মনটা বেশ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে আছে তিথীর। কিছুতেই মনকে স্থির করতে পারছেনা সে।।

তিথী রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। বিকেলের মৃদু আলো গায়ে ঠেকছে, ফুরফুরে বাতাস গা ভেদ করে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্য মানসিক যন্ত্রণার কথা বেমালুম ভুলে গেলো তিথী। প্রকৃতির বিশুদ্ধ হাওয়া মুহুর্তেই তার মনে এক অজানা প্রশান্তি এনে দিলো। তিথী হাঁটতে হাঁটতে একসময় সেই বস্তিটার কাছে চলে এলো, যেখানটায় সে আগে থাকতো। তিথী ভাবলো এবার ফিরে যাওয়া যাক হোস্টেলে, অনেক তো হাঁটা হলো। ফিরে আসার জন্য তিথী পা বাড়ালো ঠিকই, কিন্তু বস্তির ভেতর থেকে সামান্য হট্রগোল তিথীকে আর সামনে এগুতে দিলো না। মনে মনে বুঝতে পারলো সে, বস্তিতে কিছু একটা হচ্ছে। তিথী একবার ভাবলো ওখানে যাবে না। পরক্ষণে ভাবলো একবার গিয়ে দেখাই যাক কি হচ্ছে ওখানে। এ বস্তির মানুষগুলো যেমনই হোক না কেন, তিথীর পরিচিত তো।

তিথী এগিয়ে চললো বস্তির দিকে। অনেকগুলো মানুষ একটা জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিলার ঘরের সামনে। কিছু মানুষকে তিথী দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলো, কিন্তু কিছুজনকে বেশ অপরিচিতই মনে হলো তিথীর কাছে। ময়নার বাবার গলা শুনতে পাচ্ছে তিথী, বেশ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে যাচ্ছেন তিনি। জমিলার আওয়াজও টুকটাক কানে আসছে। তিথীর মনে খটকা দেখা গেলো। কি হয়েছে সেটা জানার জন্য জটলার ধারে এগিয়ে গেলো তিথী। জটলা ভেদ করে কিছুটা সামনে এগুতেই তিথী দেখতে পেলো বস্তির মাটিতে ময়না হাত পা ছড়িয়ে ছন্নছাড়া হয়ে বসে আছে। দেহটা থাকলেও দেহের ভেতরে যেনো প্রাণ নেই মেয়েটার। তিথী খেয়াল করলো মেয়েটার চোখমুখ মলিন হয়ে আছে, চোখের নিচে কালি পরে গেছে। ময়নার শরীরটা বেশ তুলতুলে ছিলো আগে, কিন্তু এখন হাড্ডিসার দেহ ছাড়া আর কিছুই নেয়। ময়নার এরুপ অবস্থা দেখে তিথী চমকে গেলো, খানিক সময়ের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলো সে। এ’কি হাল হয়েছে মেয়েটার? মাত্র কয়েক মাস হলো মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। লোকেমুখে শুনতো, বিয়ের পর নাকি মেয়েদের শরীরের উন্নতি হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তো পুরোই উলটো।

তিথী বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে ময়নার দিকে। ময়নার নজর এতক্ষণে তিথীর দিকে এলো। তিথীকে দেখেই যেনো সে ধরে প্রাণ ফিরে পেলো। এক দৌড়ে তিথীর কাছে এসে তিথীকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদের স্বরে বলে উঠলো
“তিথী আপা’গো, আমারে বাঁচাও তুমি।
তিথী বিস্মিত গলায় ময়নাকে ধরে সামনে দাঁড় করালো। আতংকিত গলায় বললো
“তোমার কি হয়েছে ময়না? এভাবে কাঁদছো কেন? আর শরীরের এ’কি হাল করেছো?
ময়না আবারও তিথীকে জড়িয়ে ধরলো, কাঁদতে কাঁদতে বললো
“ওরা আমারে যৌতুকের লাইগা মারে, উঠতে বসতে কথা শোনায়। সহ্য করতে না পাইরা এখানে আইসা পরছি আমি। কিন্তু আমার বাপ কয় চইলা যাইতে। বউ পেটানি, যৌতুক চাওয়া এগুলা নাকি পুরুষ মাইনষের দোষের কিছু না।
তিথী রাগ ও বিস্ময়ে ময়নার বাবার দিকে তাকালো। তিনি এখনও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেই যাচ্ছেন। জমিলা তিথীর দিকে এগিয়ে এলেন।
“এই মাইয়া, তুমিতো মেলা শিক্ষিত মানুষ। এই মানুষটারে একটু বুঝাও, ময়না আমার ঐ বাড়ি ভালো নাই। ময়নার বাবার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললেন জমিলা।

তিথী আবারও ময়নার দিকে তাকালো। মেয়েটার উপর সত্যিই অত্যাচার চলছে, তা না হলে কারো শরীরের হাল কিভাবে এতটা খারাপ হতে পারে।
ময়না কাঁদছে। ময়নার বাবা বাজখাঁই গলায় বললেন
“তোরা বেশি বুঝিস না কইলাম। আমি যা কইতাছি তাই কর, ময়নারে ঐ বাড়ি পাঠা, নইলে আমার ঘর ছাড়।
“ওই নেশাখোরের ঘরের নেশাখোর, মাতালের ঘরের মাতাল.. তুই কারে ঘর ছাড়াই লাইগা হুংকার করস? তুই আমাগো রে পালস নাকি আমি তোরে পালি? গিলন ছাড়া আর কিছু বুঝোস তুই?
হুংকার করে বলে উঠলো জমিলা। মাতাল ময়নার বাবা এবার বেশ ক্ষেপে গেলেন। হাতের কাছে থাকা রডটা হাতে নিয়ে ধেয়ে আসলেন জমিলাকে মারতে। জমিলা তার পরনে থাকা সুতি কাপড়ের আচলটা শক্ত করে কোমড়ে গুজে ক্ষিপ্ত গলায় বললেন
“আয় আমার কাছে, আইজ এই রড দিয়া তোরেই মারমু। পেট দিয়া ঢুকাইয়া পিঠ দিয়া বাইর করমু। মনের শান্তি চাই আমার।

তিথীর সহ্য হচ্ছে না এইসব। এইসব ঝগড়াঝাটি তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। আর এক মুহূর্ত এখানে থাকলে হয়তো সে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে। তিথী আসার আগে ময়নার মাথায় হাত বুলালো। নরম গলায় বললো
“কারো চাপে পরে কিছু করতে যেও না ময়না। নিজের কাছে যা ভালো মনে হয়, তাই করো। জীবনটা তোমার, তাই এ ছোট্র জীবনের ভালো মন্দের চিন্তা তোমাকেই করতে হবে। নিজেকে স্বাবলম্বী করো, চেষ্টা করো নিজে কিছু করার। দেখবে ভাগ্য বদলে যাবে। তোমার ব্যপারে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার অধিকার আমার নেই, এমন কোনো ক্ষমতাও নেই, যেটার দ্বারা তোমার কোনো উপকার হতে পারে। শুধু পরামর্শটাই দিতে পারবো আমি, তাই দিলাম।
তিথী আর দুই মিনিট দাঁড়ালো না সেখানে। যতই ময়না তার কাছে সাহায্য চাক, আদৌ সে তাকে সাহায্য করতে পারবে না। যার নিজের কোনো শক্ত ভীট নেই, সে কিভাবে অন্যের ভীটটাকে মজবুত করবে।

বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। প্রচন্ড পরিমাণে মাথায় যন্ত্রণা থাকায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে গেলো সে। শোয়ার পরেই তিথীর মাথায় নানা ধরনের কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো। দুদিন আগ নাগাদও ময়নার মায়ের বেশ অহংকার ছিলো মেয়ের এ বিয়েটা নিয়ে। তিথী চোখ বুঝলো।। কপালের উপর হাতটা রেখে একা একা বিড়বিড় করে বললো
“মানুষের জীবনটা বড্ড অদ্ভুত। জীবনের টানাপোড়েনে মানুষের জীবনের মোড় কখন কোনদিকে ঘুরে যায় বুঝা মুশকিল।

দিন এগিয়ে যাচ্ছে নিজ গতিতে। রবিন আর রিয়ানার বিয়ের দিনটাও ঘনিয়ে এসেছে। সেদিন তিথীর হোস্টেলে রিয়ানা নিজে এসে বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। তিথী কার্ডটা গুছিয়ে রেখেছিলো তার ব্যাগের ভেতর। যেহেতু বিয়ের ডেট তার জানা, আর পাত্রপাত্রীও তার পরিচিত, তাই নতুন করে কার্ডে চোখ বুলানোর প্রয়োজন মনে করেনি তিথী। বিয়ের দিন বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে। যেহেতু বিয়ে তাই টিউশন ছিলো না। সন্ধ্যার কোচিং টা থেকেও ছুটি নিয়েছে সে। তিথী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে হালকা কিছু নাস্তা করে নিলো। এরপর নিজের যা আছে তা দিয়েই বেশ সাধাসিধে ভাবে তৈরি হলো সে। বাসা থেকে বের হবার আগে কার্ডটা হাতে নিলো তিথী। ইনভাইটেশন কার্ডটা সে সাথে করে নিয়ে যেতে চায়। যেহেতু বড়লোকের বিয়ে, এর আগে কোনো বড়লোকের বিয়েতে সে এটেন্ট করেনি তাই তিথীর অবচেতন মন ভাবলো হয়তো সেখানে ইনভাইটেশন কার্ড দেখিয়েই ভেতরে ঢুকতে হবে। তিথী কার্ডটা পার্সে ঢুকানোর সময় হঠাৎ একটা নাম দেখে চমকে উঠলো। বেশ ভালো করে বিস্ময়ে সে তাকিয়ে রইলো কার্ডটার দিকে। তিথীর হার্টবিট বেড়ে গেলো হঠাৎ। এতটা বছর পর সে প্রিয় মানুষটার নাম চোখের সামনে ভেসে আসবে ভাবতেই পারেনি। এখানে তো রবিনের নাম থাকার কথা ছিলো!!

তিথী তারাতাড়ি করে পার্স থেকে ফোনটা বের করলো। ইনামকে কল দেওয়ার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো। তিথী বললো
“আপনি কোথায় আছেন এখন?
“বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তুমি আসছো তো?
“আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাই।
“হ্যাঁ করবে। বিয়ে বাড়িতে তো দেখা হচ্ছেই আমাদের।
“এভাবে না, আমি আলাদাভাবে আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
ইনামের কপালে ভাজ পরলো।
“তুমি ঠিক আছো তো তিথী? কোনো সমস্যায় পরো নি তো আবার!
“আমি সম্পুর্ণ ঠিক আছি। প্লিজ আপনি আপনার বাসার এড্রেস টা দিন, আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।

ইনামের দেওয়া এড্রেস মতো খুব জলদি করে তিথী পৌঁছে গেলো। বাসার ভেতরে ঢুকেই তিথী আরেকটা বড়সড় শক খেলো। তিথীর আসার শব্দ পেয়ে ইনাম বেরিয়ে এলো রুম থেকে। দেয়ালে টাঙানো নিজের বাবার ছবিটার দিকে তিথীকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো সে। বললো
“এভাবে কি দেখছো তুমি?
“উনাকে। উনি কি হয় আপনার?
“আমার বাবা।
“আপনার বাবা? বিস্ময়ে বললো তিথী।
“হ্যাঁ, কিন্তু তুমি এতো চমকে যাচ্ছো কেন? আমার বাবাকে কি তুমি আগে থেকেই চিনো?

তিথীর চোখের কোনে পানি চলে এলো হঠাৎ। ইনাম ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো
“কি হলো, কাঁদছো কেন তুমি? কাঁদার মতো কি এমন বললাম আমি তোমায়?
“নিজের বাজে শৈশব টা হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো ইনাম ভাইয়া৷ তাই কাঁদছি।।
ইনাম হতবাক। সে বিস্ময়ে বলে উঠলো
“তিথী!!
তিথীর চোখের পানি গড়িয়ে পরছে। সে ভেজা চোখে ইনামের দিকে তাকালো। কান্নাজড়িত গলায় বললো
“হ্যাঁ ইনাম ভাইয়া, আমিই সেই তিথী। তোমার বাবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যে তিথীকে রাজকন্যা হয়েও এতিম খানায় বড় হতে হয়েছে, সেই ছোট্ট তিথীটাই আমি। মনে আছে তোমার আমার কথা? মনে আছে এই ছোট্র তিথীটার হারিয়ে যাবার কথা?

ইনাম হঠাৎ ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার, চোখদুটো লাল হয়ে আছে। সে নিজেকে ধাতস্থ করলো। তিথীর দিকে ফিরে তাকালো, তিথী কাঁদছে, ইনামেরও কান্না পাচ্ছে। প্রিয় বন্ধুটা তার বাবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এতিম খানায় বড় হয়েছে এটা তার অজানা ছিলো।
ইনাম বললো
“বাবার কাছে শোনেছিলাম তুমি তোমার কোনো এক আত্মীয়ের সাথে বিদেশ চলে গিয়েছিলে।
“ষড়যন্ত্র তো এমনই হয় ভাইয়া।

তিথীর হঠাৎ হুশ হলো। সে বিস্ফোরিত চোখে ইনামের দিকে তাকালো। আতংকিত গলায় বললো
“আমার ইভান! আমার ইভান কোথায় ভাইয়া? এ কার্ডে ইভানের নাম কেন লেখা? বলো ভাইয়া আমার ইভান কোথায়?

ইনাম মেঝে থেকে উঠে দাড়ালো। তিথীর দিকে বিষন্নতার চোখে তাকিয়ে অপরাধীর গলায় বললো
“রিয়ানার সাথে আজ যার বিয়ে, সেই রবিনই তোমার ইভান।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here