হৃদয়াবেগ #অন্তিম_পর্ব (প্রথমাংশ)

0
1181

#হৃদয়াবেগ
#অন্তিম_পর্ব (প্রথমাংশ)
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

পশ্চাতে দন্ডায়মান মানুষটাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে চট করে উঠে দাঁড়ায় নাযীফাহ। স্তম্ভিত নাযীফাহ শ্বাস আঁটকে এলো তার। মনে হচ্ছে সব যেন তার অচেতন মনের কল্পনা।অসাড়, অবশ সমস্ত কায়া। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না তাহমিদ এসেছে। চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। শুকনো ঢুক গিলে সে। অশান্ত মন শান্ত হলো। বিনা প্রস্তুতিতে তাহমিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাযীফাহ।

নাযীফাহ’র অতর্কিত অনুরাগ মিশ্রিত হামলায় অপ্রস্তুত হয়ে গেলো তাহমিদ। তার ধারণাতীত ছিলো নাযীফাহ তাকে জড়িয়ে ধরবে। আলতো হেসে তাহমিদও নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো নাযীফাহকে। এতোদিনের অন্তঃস্থলে বয়ে যাওয়া প্রলয় ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে গেলে মানসিক শান্তি বড্ড প্রয়োজন। এটাই হলো সেই শান্তি। অত:করনে রাজ করা মানুষ পাশে থাকলে বুঝি এতো সুখানুভব হয়?

‘আপনি আগের থেকে শুকিয়ে গেছেন। কালো হয়ে গেছেন। ঠিকমতো খান না নাকি?’

তাহমিদ নিজের বুক থেকে নাযীফাহ’র মাথাটা তুলে ললাটের এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে উষ্ম স্পর্শ দিলো।

‘সুখ পাখিটাকে ছেড়ে থাকি। তাই কোনো কিছুতেই মন বসে না।’

____________________________________________

গেইটের বাইরে পা ফেলার জায়গা নাই। যত না ছাত্র ছাত্রী তার থেকেও বেশি অভিভাবক। তাহমিদ শক্ত করে নাযীফাহ’র হাত ধরে রেখেছে। আর একটু বাদে বাদে বলছে,

‘একদম ভয় পাবি না। মাথা ঠান্ডা রাখ।ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিবি। মানুষের আক্কেল জ্ঞান কিছুই নেই। পরীক্ষা দিবে একজন পুরো পরিবার চলে আসছে। একজন আসলেই তো হয়। এজন্যই আমি বাবা আর মামুকে আসতে নিষেধ করেছি। অভিভাবকদের জন্য আসল পরীক্ষার্থীরাই দাঁড়াতে পারছে না।’

অতঃপর হলরুম খোঁজে বের করে নাযীফাহকে সিটে বসিয়ে তাহমিদ নাযীফাহ’র গালে হাত রেখে বলল,

‘আমি আশেপাশেই আছি। একদম ভয় পাবি না বলে দিলাম। পরীক্ষা শেষে আমি না আসা অব্দি কোথা যাবি না।’

নৈঃশব্দ্যে মাথা নাড়ে নাযীফাহ। তার থেকে দু’বেঞ্চ সামনে জান্নাত।

প্রথম দুইটা পরীক্ষার সময় তাহমিদ থাকলে তৃতীয় পরীক্ষার আগের দিন নিজ কর্মস্থলে ফিরে যায় সে। তৃতীয় পরীক্ষার দিনই ঘটে এক কান্ড। নাযীফাহ আর জান্নাত হলে বসে কথা বলছিলো। পরীক্ষা শুরু হয়নি তখনও। তখন একটা মেয়ে এসে নাযীফাহকে বলল,

‘কিছু মনে না করলে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’

মেয়েটির দিকে তাকায় নাযীফাহ। মেয়েটি আমতা আমতা করে বলল,

‘তোমার সাথে রোজ যে লোকটা আসে, আজ আসেনি?’

তাহমিদের কথা জিজ্ঞেস করায় কপাল কুঁজিত হয় নাযীফাহ’র। অতঃপর না বোধক মাথা নাড়ে সে।

‘উনি নিশ্চয়ই তোমার ভাই হয়। ভাই বলে সম্বোধন কর তাই বললাম। উনাকে দেখে ক্রাশ খাইছি। কি এটিটিউড উনার। কারো দিকে তাকালো না পর্যন্ত। যদি উনার নাম্বারটা দিতে?’

চোখেমুখে কাঠিন্যভাব দেখা দিলো নাযীফাহ’র। তার ইচ্ছে করছে সামনের মেয়েটাকে কষিয়ে দু’টো থা’প্প’ড় দিতে। পরীক্ষা দিতে এসেছিস পরীক্ষা দিবি এতো দিকে নজর কেন তোর? মিটমিট করে হাসছে জান্নাত। নাযীফাহ’র রাগান্বিত আনন দেখে এবার শব্দ করেই হেসেই দিলো।

‘কোনো লাভ নেই বোন। উনি অলরেডি বুকড। তাও কিনা প্রায় দু’বছর আগে থেকে। আর সেই বুকিং করা মানুষটা আর কেউ না তোমার সামনে যে বসে আছে।’

মেয়েটা নিজের মাথায় চাটি মে’রে বলল,

‘ওপস সরি, কিন্তু তুমি ভাই কেন ডাকো?’

‘আরে ওরা কাজিন ছিলো তাই।’

সেদিন নাযীফাহ পরীক্ষা শেষে বাসায় গিয়ে আগে তাহমিদকে কল করলো। দু’বার কে’টে দেওয়ার পর তৃতীয়বার কল রিসিভ করলো সে।

‘নাযীফাহ পাগলামি কেন করছিস। বাসায় গিয়ে কল দিবো তো।এখন অফিস টাইম।’

‘আপনি আর আমি যদি কোথাও যাই তবে যে যে আমাদের সাথে যে কোশল বিনিময় করবে তাদেরকে বলবেন আপনি বিবাহিত আর আমি আপনার বউ।’

হঠাৎ নাযীফাহ এমন আজগুবি কথা শুনে তাহমিদের কপালে সূক্ষ্ম রেখার ভাঁজ পড়ে।

‘পরীক্ষা শেষে রাস্তায় কিছু খেয়েছিলি? কিসব উল্টো পাল্টা বকছিস।’

নাযীফাহ কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘মানুষ আপনাকে আমার ভাই বলে কেন? আবার নাম্বারও চায় প্রেম করার জন্য।’

‘কি হয়েছে বলতো।’

তখনকার ঘটনা খুলে বলতেই শব্দযোগে হাসতে লাগলো তাহমিদ।

‘একদিন বলেছিলাম না এই ভাই বোন বলা নিয়ে তুইও একদিন জ্বলবি। মিলল তো? বেটার হাফকে এসব বললে রাগ হয় খুব রাগ। আমারও সেদিন এমন রাগ হয়েছিল। এবার আল্লাহ ওয়াস্তে ভাই ডাকা বন্ধ কর।’

____________________________________________

সময় কত দ্রুত চলে যায়। পলক ফেলার সাথে তা হয়ে যায় অতীত। নাযীফাহ’র পরীক্ষা শেষ রেজাল্টও দিলো। আবার এডমিশনের পর্বও শেষ। অথচ তাহমিদকে ছয়মাস পরে ঢাকায় ট্রান্সফারের কথা থাকলে আরো দুইমাস তাকে চট্টগ্রাম থাকতে হবে। বর্তমানে তার কোম্পানি একটা মেগা প্রজেক্টে হাত দিয়েছে। আর সেটা প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব পড়েছে তাহমিদের কাঁধে। তার কথা বলার ধরনে মুগ্ধ বস৷ সহজে যে কেউ আকৃষ্ট হয়ে যাবে। প্রজেক্টের ফাইলটা মাত্রই বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ জোড়ায় রাজ্যের ঘুম। ক্লান্তি জেঁকে বসেছে সর্বাঙ্গে। চোখ দু’টো যখন লেগে এলো রিংটোনের শব্দ শুনে চোখ তুলে তাকায় সে। রিসিভ করেই বলল,

‘এখনো ঘুমাসনি? শরীর খারাপ করবে তো।’

নাযীফাহ নিস্তেজ গলায় বলল,

‘ঘুম আসছে না আমার। ভালো লাগছে না কিছু।’

‘দাদি কি ঘুমিয়ে গেছে? আজ মা আসেনি তোর কাছে?’

‘দাদি ঘুমোচ্ছে। রোজ রোজ ফুপি এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে ঘুম পাড়িয়ে দিবে এসব ভালো লাগে না আমার। উনার বয়স হয়েছে। বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে বলেছি।’

‘মন কি বেশি খারাপ?’

অকস্মাৎ নাযীফাহ ফুপিঁয়ে উঠলো।

‘আমার আপনাকে খুব প্রয়োজন তাহমিদ ভাই। আপনার সান্নিধ্যে থাকতে চাই। চারিদিকের সবকিছু বি’ষাক্ত লাগে। নিজেকে পরাজিত সৈনিক মনে হয়। আমার তো কতো শখ ছিলো ঢাকা ইউভার্সিটিতে পড়বো। চেষ্টাও করলাম হলো না কেন?আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতেও অপারগ আর আপনারটাও। আমি ব্যর্থ তাহমিদ ভাই আমি ব্যর্থ।’

তপ্ত শ্বাস ফেলল তাহমিদ। এডমিশনের পর থেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে নাযীফাহ। এইচএসসিতে আশানুরূপ ফলাফল করলেও কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হয়নি তার। যেদিন ঢাকা ভার্সিটির রেজাল্ট দিলো, মেরিট লিস্টে নিজের নাম না দেখে সঙ্গে সঙ্গে মূর্ছা যায় নাযীফাহ।
নাযীফাহ শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে বলে উদ্ভ্রান্ত ও ক্লেশিত হয়ে ছুটে এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। সে যখন ঢাকায় পৌঁছায় তখন রাত্রিবেলা। ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা পঁচিশ। নাযীফাহ কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। নাযীফাহ যখন পিটপিট করে চোখের পাতা উন্মেষিত করেই দেখল তাহমিদ তার হাত ধরে বসে আছে। এলোমেলো চুল, আতঙ্কগ্রস্ত আনন।সবমিলিয়ে উন্মাদগ্রস্ত লাগছিলো তাকে। অক্ষিপটে তাহমিদ কে দেখে অবুঝের মতো কান্না শুরু করে দিয়েছিলো।

‘তাহমিদ ভাই, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্নটা আমার স্বপ্নই রয়ে গেলো।আমার এতোদিনের পরিশ্রম। আমি ব্যর্থ।’

ক্লান্ত অবসন্ন তাহমিদ তখন দু’হাতে আগলে নিয়েছিলো ভেঙে পড়া প্রেয়সীকে।

‘ঢাকা ইউভার্সিটিতে হয়নি আরো পাবলিক ভার্সিটি আছে তো। সেখানে হবে। এতো ভেঙে কেন পড়ছিস?’

না হয়নি আর কোথাও হয়নি নাযীফাহ’র। সেটা নিয়েই ডিপ্রেশড নাযীফাহ। সারাক্ষণ কেউ না কেউ থাকা লাগে তার সাথে।

ভাবনাচ্ছেদ হয় তাহমিদের। কতগুলো দিন চলে গেলো। হাসিখুশি নাযীফাহ হুট করেই বদলে গেলো। এখন আর তাকে সহজে হাসতে দেখা যায় না।

‘তোর এই ভেঙে পড়া আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। বললাম চাকরি ছেড়ে চলে আসি এখানেও তোর নিষেধাজ্ঞা। আমি তোর থেকে এতোটা দূরে তোর বিষন্ন, হতাশ, অপ্রফুল্ল গলা শুনলে আমার অন্তর পুড়ে। স্বামী হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয় কারণ তোর এই খারাপ সময়ে আমি তোর পাশে নেই। স্বামী হিসেবে আমি অযোগ্য। জীবনে সফল হতে হলে যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি বা বা অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটিতেই পড়তে হবে এমন তো না। ভেতরে যদি পুঁজি হিসেবে জ্ঞান আর বিদ্যা থাকে তো যেকোনো অবস্থান থেকেই সফল হওয়া যায়। মূলকথা হচ্ছে আমি শিক্ষা অর্জন করছি কিনা। ‘আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। যা আমার জন্য কল্যানকর তাই ঘটে আমার সাথে।’ এই একটা কথা যদি মানতে পারিস আর কখনো হতাশ হবি না। সন্তুষ্ট থাকবি আল্লাহর সকল সিদ্ধান্তের উপর। শুকরিয়া আদায় করবি। মনে থাকবে?’

নাযীফাহ ভাঙা গলায় বলল,

‘হুম মনে থাকবে।’

‘প্রতিটা শ্বাসে হতাশা না থেকে শুকরিয়া থাকে। শুননা বস কি বলেছে? বলেছে, যদি এই ডিল ফাইনাল হয়ে যায় তো বস আমাদের হ্যানিমুন প্যাকেজের সকল খরচ বহন করবে। পুরো সাতদিন কক্সবাজার ভাবা যায় বল? আমি তো শুধু ডিল ফাইনাল আর আমার নাযীফাহ’র আঠারো পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

সকল হতাশা বিলীন হয়ে নাযীফাহকে ঘিরে ধরলো লজ্জা আর ত্রপা। এইতো আর কয়েকটা দিন নতুন করে সংসার পাতবে সে।

____________________________________________

শপিংমলে সবগুলো ব্যাগ নিয়েছে কিনা গুনে নিচ্ছে ওয়াহিদা আর ফাহমিদা বেগম। বিয়ের শপিং বলে কথা। পাঞ্জাবি কিনার জন্য তাহমিদ আর নাযীফাহ জেন্টস কর্ণারে গেছে। বাবা আর মামুকে আশেপাশে না দেখে ফাহিম তার মাকে রোঁদন করে বলল,

‘ওমা মা, তোমার বড় ছেলেকে তো বিয়ে দিয়ে দিলে।এবার আমার জন্যও পাত্রী খুঁজো। যাতে ভাইয়ের রিসিপশনের দিন আমারও গতি হয়ে যায়। তাহলে তোমাদেরও খরচ বেঁচে যাবে। এভাবে সিঙ্গেল জীবন পার করা যায়।’

ওয়াহিদা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘তোর লজ্জা করে না মায়ের সামনে কিসব বলছিস? দিবো এক চড়।’

‘এতো লজ্জা রেখে কি হবে বলো।লজ্জা তো নারীর ভূষণ।’

‘অনার্স শেষ হলে তোরও বিয়ে দিবো।’

‘আহারে! আবারও অপেক্ষা। এই জীবনে অপেক্ষা শেষ হবে না।’

মা ছেলের কথায় মিটিমিটি হাসছে ফাহমিদা বেগম। পরিবার সুন্দর হতে মানুষের মন-মানসিকতাও সুন্দর হওয়া প্রয়োজন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলে তাহমিদ ফাহিম কে কল করে বলে যেন বাসায় চলে যায়। কারন বাসায় আমেনা বেগম একা।

নরম হয়ে এসেছে আমেনা বেগম। আগের থেকে শরীর দূর্বল। এতো অসুখ বিসুখ আর দূর্বলতার মাঝেও তার আনন্দের শেষ নেই। বড় নাতির বিয়ের অনুষ্ঠান বলে কথা।

রিক্সায় বসে আছে তাহমিদ আর নাযীফাহ। দুজনের হাতে চারটা শপিং ব্যাগ। দুই মায়ের জন্য লাল জামদানী শাড়ি আর দুই বাবার জন্য পাঞ্জাবি। দুই মাকে সাজাবে কনে রূপে আর বাবাদের বর রূপে। সেজন্যই কায়দা করে দুজন ওদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

রিক্সা বাসার কাছাকাছি আসতেই নাযীফাহ তাহমিদের দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলল,

‘বাকি পথটা হেঁটে যাই। কতদিন পরে দুজনের আবার রাত্রিবেলা হাতে হাত রেখে হাঁটার সুযোগ হয়েছে।’

‘সারাদিন এমন ছুটাছুটির পর পারবি হেঁটে যেতে? আগের বাসা কিন্তু নেই। এখন কিন্তু আরো একটু ভিতরে।’

‘ক্লান্ত হয়ে গেলে আপনি আছেন তো।বাকিটা পথ না হয় পাঁজা কোলে করে নিয়ে যাবেন।’

আবাসিক এলাকার আশপাশ একটু নিরবই থাকে। মাঝে মাঝে দুই একটা রিক্সা যায়।তাহমিদের হাতের ফাঁকে হাত গলিয়ে হাঁটছে নাযীফাহ।

‘তুই প্রথম ঢাকা আসার পর আমরা যেদিন প্রথম বের হলাম তোর মনে আছে সেদিনের কথা?’

নাযীফাহ মৃদু হেসে বলল,

‘হুম মনে আছে।’

‘সেসময় আমার অন্তরতম অঁচলে এক আকাশ পরিমাণ আবেগ আর অনুরাগ থাকলেও তোর ভেতরে এসবের ছিটেফোঁটাও ছিলো না। সেসময় তোর কাছে যেতে আমার ভয় হতো।তুই যদি আমাকে ভুল বুঝিস। ইচ্ছে করতো তোকে জড়িয়ে ধরি। আমার অন্তর্দেশ ঠান্ডা করি। আমি চাই এমন একটা রাত আবার আসুক।যখন তোর মনেও আমার জন্য আকাশ সমান ভালোবাসা থাকে।হয়তো সেই দোয়াটা আজ কবুল হয়েছে।’

‘আপনি কখন বুঝেছিলেন আপনি যে আমাকে ভালোবাসেন?’

‘যেদিন গ্রাম থেকে খবর পেলাম তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মনে হয়েছিলো আমি আর আমার মাঝে নেই। কেউ আমার হৃদপিণ্ডটা কে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে গেছে। সেদিনই বুঝেছি আমি আর আমার নেই।’

____________________________________________

প্রাইভেট কারের দরজা খোলে দাঁড়িয়েছে নাযীফাহ। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো সে। গ্রামের নির্মল বাতাস গায়ে মাখতেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো। তিন তিনটা বছর পরে সে গ্রামের মাটিতে পা রেখেছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। টিনের ঘরের জায়গায় দালান হয়েছে। কত পরিবর্তন। খালেদ মোশাররফ গাড়ি থেকে ব্যাগপত্তর নামাচ্ছেন। বিয়েটা গ্রামেই হবে। নাযীফাহ জোর করে জান্নাতকে সাথে নিয়ে এসেছে। নিতুর মা কথা দিয়েছে বিয়ের দিন আসবে। অন্তরসত্বা তিনি।নিতুর বাবার সাথে তুমুল ঝগড়ার পরে বাচ্চা নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন তিনি। তপ্ত শ্বাস ফেলে দু’কদম সামনে এগুতেই সে দেখতে পেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here