হৃদয়াবেগ #অন্তিম_পর্ব (শেষাংশ)

0
1743

#হৃদয়াবেগ
#অন্তিম_পর্ব (শেষাংশ)
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

তপ্ত শ্বাস ফেলে দু’কদম সামনে এগুতেই সে দেখতে পেল তার ফেলে যাওয়া দিনের আনন্দগুলো একসাথে জড়ো হয়ে তাকে দেখতে এসেছে। তার সঙ্গীদের দেখে কান্না পেয়ে গেলো তার।কতশত সময় কাটিয়েছে এদের সাথে। কতটা বড় হয়েছে গেছে তিন বছরে এরা। হাতের ইশারায় কাছে ডাকতেই হাফিজ বলল,

‘না নাযুপ্পু তোমার গায়ে ময়লা লেগে যাবে। দেখো আমাদের সবার শরীর কাঁদা মাটি। সবাই মাছ ধরতে গিয়েছিলাম।তুমি আসবে শুনে সবাই ছুটে এসেছি।’

‘লাগলে লাগুক তাই বলে আমি তোদের ছুঁয়ে দেখবো না? কতদিন পরে তোদের সান্নিধ্য পেলাম বল?’

সবাই যেন হা’মলে পড়লো নাযীফাহ’র উপর। কতদিন পরে ওরা ওদের নাযীফাহকে পেলো।

‘কেমন আছিস তোরা?’

‘আমরা সবাই ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?’

জান্নাত নাযীফাহ’র কাঁধে রাখতেই নাযীফাহ চোখের পানি মুছে বলল,

‘এরা আমার সঙ্গী ছিলো।আমি সবথেকে বেশি এদের শূন্যতায় পুড়তাম।’

____________________________________________

পার্লারের মহিলা বউ সাজানোর পরই বাইরে হট্টগোলের আওয়াজ শুনতে পেলো নাযীফাহ। তাহমিদ বরবেশে এসেছে মনে করে চুপ করে রইলো সে। বুকের ভেতরে ধুকপুক করছে। আর মাত্র কিছু মুহূর্ত। তারপর সেই বহুল প্রতীক্ষিত রাত। মাথা নুয়িয়ে রাখলো সে। নাযীফাহ’র পাশে কেউ নাই। জান্নাত বরকে বরন করার সকল বন্দোবস্ত করছে। খালেদ মোশাররফ কক্ষে প্রবেশ করলেন তারেক সাহেব নিয়ে। সামনে দন্ডায়মান লোকটাকে দেখে আপাদমস্তকে ভয় গ্রাস করলো তাকে। অতীতের সেই আতঙ্ক। যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তারেক সাহেব বললেন,

‘পূর্বের করা কৃত কর্মের ফল আমি পাচ্ছি রে মা। মানুষের হায়াত-মউতের ঠিক নেই। আমি একেবারে নিঃস্ব। আমার যা কিছু ছিলো সব শেষ। মরণব্যাধি ক্যানসার আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমার কর্মের ফল আমার সন্তানরা পাচ্ছে। তোর সাথে অন্যায় করেছি আমি। শুধু তোর সাথে আরো অনেকের সাথেই করেছি। আমাকে মাফ করে দিস।আমি সবার কাছে মাফ চেয়েছি।মাফ করে দিস তোরা আমায়। তোকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমার কাছে শুধু দোয়া ছাড়া। জানি না এটাও আল্লাহ কবুল করবে কিনা। সুখি হ মা দোয়া করি।’

একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নাযীফাহ। ভয়ে পেয়ে গিয়েছিল সে।

____________________________________________

লজ্জায় রুম থেকে বের হচ্ছে না ওয়াহিদা আর ফাহমিদা বেগম। এই বয়সে বধূ বেশে লজ্জায় নেতিয়ে গেলো তারা। নাযীফাহ আর তাহমিদ যে কি করে না। বাহিরে এতো কাজ অথচ তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটু পরে কক্ষে প্রবেশ করলেন আমেনা বেগম। দুজনের দিকে তীক্ষ্ণধার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।

‘তোমরা এমন করছো কেন? লাল শাড়িই তো পড়েছো। তাহমিদের দাদা বেঁচে থাকলে দেখিয়ে দিতাম সাজ কাকে বলে যাও বাইরে যাও। সবাই তোমাদের খুঁজছে।’

লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে কক্ষ থেকে প্রস্থান নিলেন ওনারা। এই বয়সে এইসব সাজ সাঝে?’

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ। তাহমিদকে আর নাযীফাহকে একসাথে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ঠিক সেই মূহুর্তে নিতুর মা এলেন নিতুকে নিয়ে। বড় একটা রেপিং পেপারে মোড়ানো গিফট দিলো নাযীফাহ’র হাতে। এবং এটাকে এখানেই আনপ্যাক করতে বলল। আনপ্যাক করার সাথে একেবারে ‘থ’ হয়ে নাযীফাহ। এটা তো সেইদিনের ছবি। নিতুর জন্মদিন ছিলো। তাহমিদ নাযীফাহ কে হারানোর ভয়ে কেঁদেছিলো সেই ছবি। নিতুর মায়ের তাকাতেই উনি প্রশস্ত হেসে বলে উঠলেন,

‘আমার তরফ থেকে ছোট্ট উপহার এই মিষ্টি দম্পতির জন্য। দোয়া করি সুখে থাকো। আর তাহমিদ নাযীফাহকে ঠিক এভাবেই আগলে রেখো।’

জান্নাত নাযীফাহ মুখটা নিজের হাতের আঁজলায় নিলো। অশ্রু সিক্ত চোখে ঠোঁট ছুঁয়ালো নাযীফাহ’র কপালে।

‘বাবা মা কি দিয়েছি জানি না। বাবা তোকেও তার একটা মেয়ে মনে করে। তুই তো আমার বোন।আমার পক্ষ থেকে এটাই আমার ভালোবাসাময় উপহার। যেদিন নতুন অতিথির আগমন ঘটবে সেদিন তার খাম্মি তাকে বিশাল কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবে। বাট তোকে কিছু দিবো না।’

নাযীফাহ ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরলো জান্নাতকে। পিছন থেকে তাহমিদের এক বন্ধু বলল,

‘দুস্ত এদেরকে থামা। না হলে বন্যা নিশ্চিত।

টিকটিক করে বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলো নাযীফাহ’র। যদিও বিদায় হয়েছিল আরো আগে। আবারও হবে। তখন বাবার সাথে অভিমান করে কথা না বললেও এই বাবার বুকে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। পাশে ফাহমিদা বেগম দাঁড়িয়ে।

নিজের চোখের মুছে খালেদ মোশাররফ ভাগ্নের দিকে তাকালেন।

‘তোকে নতুন করে কিছু বলার আমার নাই। আমার মেয়েটা আমার থেকেও বেশি তোর কাছে সুরক্ষিত থাকবে। সুখে থাক বাবা।’

গাড়িতে উঠানো যাচ্ছে না নাযীফাহকে। বাবার পাঞ্জাবি শক্ত করে ধরে রেখেছে সে। নাযীফাহকে স্বাভাবিক করার জন্য ফাহিম বলল,

‘আশ্চর্য তুই কান্না করছিস কেন? কান্না করার কথা তো আমার ভুলাভালা ভাইটার। আহারে নাদান ভাই টা আমার। তোর মতো আ’জরাইলের জন্য আমার অল্প বয়সী ভাইয়ের কলিজাটা একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গেলো।’

নাযীফাহ রণমুর্তি ধারন করে কিছু একটা বলতে গেলেই তাহমিদ আড়ালে নাযীফাহ’র হাত ধরে ফেলে। তাহমিদের দিকে তাকাতেই সে চোখের ইশারায় বলে শান্ত হতে।

তাহমিদের গাড়ি ছেড়ে যেতেই ওয়াহিদা খালেদ মোশাররফ কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘যৌতুক নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নিবো না। তুই তো এমনি ফকির হয়ে গেছিস তোকে আর কি করবো।’

বোনের কথায় খালেদ মোশাররফ হাসলেন। তাহমিদের বাবার হাতটা ধরে বললেন,

‘আমার বাড়ির দুই রত্নের ঠাই হয়েছে তোমার বাড়িতে। আগলে রেখো ভাই। আর কিছু বলার নেই।’

জামান সাহেব খালেদ মোশাররফের হাত ধরে আশস্ত করলেন।

____________________________________________

ফুল সজ্জিত বিছানায় বসে আছে নাযীফাহ। অপেক্ষা তাহমিদের জন্য। কিছুক্ষন বাদে বাদে চোখ বুলিয়ে দেখছে রুমটা। এর আগেও বহুবার সে এই রুমে প্রবেশ করেছে। তখনকার আর এখনকার অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পা গুটিয়ে বসলো সে। ভেবেছে তাহমিদ এসেছে। মাথা তুলে দেখে আমেনা বেগম। এই বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। এই নারী মানে অন্যরকম এক আশ্রয়। এতোটা দিন কি সুন্দর আগলে রেখেছিলো তাকে। আমেনা বেগম কপট অভিমান করে বললেন,

‘এখন তো বর পেয়ে এই বুড়িকে ভুলে যাবি। আর মনেই থাকবে না।’

আমেনা বেগমের অভিমানী কথা শুনে নাযীফাহ মৃদুস্বরে হাসলো।

‘কিছু কিছু মানুষ কারণে অকারণে প্রিয় হয়ে যায়। তুমিও ঠিক তেমন। তোমাকে ভুলে মানে নিজের সাথে অন্যায় করা। আমার আমি কে আমিও এতোটা বুঝি না যতটা তুমি বুঝো। তুমি আমার সেই প্রিয়জন যার সান্নিধ্য আমাকে হাসায়, প্রশান্তি দেয়।

‘পাঁকা পাঁকা কথা আছে।’ বলেই এক লোকমা খাবার নাযীফাহ’র মুখের সামনে ধরলো। নাযীফাহ হতবিহ্বল তাকিয়ে রইলো এই অনন্যময়ী নারীর দিকে। চোখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বারিবিন্দু।

‘বুঝলে কি করে আমার যে খিদে পেয়েছে?’

‘ওই যে বললি না আমি তোর থেকেও তোকে বেশি বুঝি।’

অধর প্রসারিত হলো তার। আমেনা বেগমের হাতে চুমু এঁকে মুখে তুলে নিলো সেই খাবার।

____________________________________________

আমেনা বেগম চলে যেতেই তাহমিদ এলো।

‘এই গরমের মধ্যে আর এসব ভারী পোশাক গায়ে জড়িয়ে রাখতে হবে না। ঢিলেঢালা কিছু একটা পড়েনে। আমি বারান্দায় আছি।’

এসব শাড়ি গহনা ছেড়ে নাযীফাহ একটা সুতি থ্রি-পিস পড়লো। এখন অনেক হালকা লাগছে। এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল দম আঁটকে আসছে। নাযীফাহ ডাকলো তাহমিদকে। তাহমিদ রুমে আসতেই নাযীফাহ বলল,

‘সারা গা কেমন কুটকুট করছে। সারা শরীর কেমন পানি পানি করছে। হাত পা ধুইতে পারলে ভালো ছিলো।’

মোটামুটি সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তাহমিদ নাযীফাহকে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমে। গ্রামে শহরের মতো রুমে রুমে এটাচড ওয়াশরুম নেই। প্রায় মিনিট তিরিশ পরে সে বেরিয়ে এলো।

রুমে এসে ফ্যান চালু দিয়ে বসেছে। প্রচুর গরম লাগছে। তাহমিদ কিছুটা দূরে হাত ভাঁজ করে নাযীফাহকে দেখছে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে তাহমিদ এগিয়ে এলো নাযীফাহ’র কাছে। নাযীফাহ’র হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো নিজের হাতে।

‘জানিস এই একটা রাতের জন্য কত অপেক্ষায় ছিলাম আমি। কত কাতরেছি অপেক্ষা করতে করতে। চোখের পিপাসা মিটানোর জন্য রাতের কতটা সময় তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা আছে?’

বিস্ফোরিত চোখে তাকায় নাযীফাহ। নত মস্তকে মুচকি হাসে তাহমিদ।

‘আমি এমনে ম’রা’র মতো ঘুমাই? একটুও টের পেলাম না?’

এবার নাযীফাহ দিকে তাকিয়ে হাসলো সে।

‘আজ আমার অপেক্ষা শেষ হলো। মিসেস তাহমিদ প্রস্তুত তো তার বেটার হাফের পাগলামি সহ্য করার জন্য?’

লাজুক হাসলো নাযীফাহ।

‘অপেক্ষা এক মিষ্টি যন্ত্রণার নাম। প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেও ভাল্লাগে।’

নিস্তব্ধ পরিবেশ নীরবতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ। কক্ষ জুড়ে ড্রিম লাইটের আবছা আলো।

‘আমি তোকে এতোটা দিন আগলে রেখেছি। হয়তো বা রাখতেও পারিনি। কারণ মানসিক যন্ত্রণার সময় আমি তোর কাছে ছিলাম না। এটাই আমার জীবনের একটা আক্ষেপ। আজকে আমাদের জীবনের স্মরণীয় এই রাতে তোর কাছে আমার এক আবদার আছে।’

প্রশ্ন সূচক চাহনি নিক্ষেপ করে নাযীফাহ।

‘আমি আজকের আমাদের কাছে আসা তোর মাধ্যমে হউক। এতোদিন যাবৎ আমি আমার সকল আবেগ ঢেলে দিয়েছে। আর কিছুই নেই আমার কাছে। ফিরতি হিসেবে আমি কিন্তু তোর কাছ থেকে কিছুই পাইনি। আমি চাই আজ তুই এগিয়ে আসবি আমার দিকে।’

তাহমিদ কহন শ্রবণেন্দ্রিয় হতেই সমস্ত কায়া কেঁপে উঠলো নাযীফাহ’র। এটাও আদৌ সম্ভব? তাহমিদ কে এতোটা কাছে দেখেই তো তার হাঁটু কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। এখন নাকি তাকে আরো কাছে যেতে হবে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। ত্রপা গ্রাস করলো সর্বাঙ্গ। বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ হচ্ছে। ক্ষনে ক্ষনে মনে হচ্ছে এই বুঝি র’ক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। নিশ্বাস আঁটকে সে মা-রা যাবে।

তাহমিদ পুনশ্চ বলল,

‘নতুবা বুঝে নিবো তুই আমাকে ভালোবাসিস না।এসব তোর মোহ। যা এক সময় কেটে যাবে।’

বিদীর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় নাযীফাহ। মুখটা কেমন পাংশুটে হয়ে গেছে। মুখশ্রী নেমে এসেছে নিকষ কালো আঁধারি। নাযীফাহ তাহমিদের অভিমুখে দাঁড়িয়ে পা উঁচু করলো। শার্টের কলার ধরে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো তাহমিদের কপালে। নাযীফাহ কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়াতেই আবারও বলল,

‘কোনো ফিল পেলাম না। রেগে চুমু দিয়েছিস নাকি?’

নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো সে। মনের অন্তরীক্ষে জমেছে ধূলিজাল। তাহমিদ এগিয়ে গেলো সেদিকে।

‘রাগ করেছিস আমার কথায়’

নিশ্চুপ নাযীফাহ। তাহমিদ দু’হাতে জড়িয়ে নিলো অভিমানী প্রণয়িনীকে। ললাটের মধ্যিখানে চুমু এঁকে বলল,

‘ওই কথা বলেছি বলে তো কত দ্রুত আমার কাছে চলে গেলি।না হলে যেতি নাকি। জড়তার জন্য চুপচাপ বসে থাকতি। এখন জড়তা কে’টে গেছে। ভালো হয়েছে না?’

নাযীফাহ’র গুটিয়ে রাখা হাত দু’টো স্পর্শ করলো তাহমিদের পিঠ।

‘আপনি এমন কেন তাহমিদ ভাই?’

‘ভাই ডাকিস বলে।’

‘আপনিও তো আমাকে তুই বলে ডাকেন।’

‘তুই ভাই বলা ছেড়ে দিলে দেখবি আমিও ঠিক হয়ে গেছি। এখনো নিজেকে তোর ভাই মনে হয়। সেড লাইফ।’

‘নতুন কেউ আসার আগে মনে হয় না এই ভাই ডাকা শেষ হবে?’

‘মেহমান নিয়ে আসার জন্য মিশন শুরু করতে হবে?’

‘বিশের আগে নো বেবি আপনি বলেছেন।’

তাহমিদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

‘নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলাম।’

প্রশস্ত হাসলো নাযীফাহ। নাযীফাহকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তাহমিদ বলল,

‘এবার একটু লজ্জা লজ্জা ভাব করে একটা চুমু দে তো আগেরটা একেবারে নিরামিষ চুমু ছিলো।’

নাযীফাহকে নিসাড়া দেখে তাহমিদ মন খারাপের অভিনয় করে বলল,

‘দে না একটা। এমন করছিস কেন?’

নাযীফাহ শুকনো ঢুক গিলে। তাহমিদের পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে পুনশ্চ চুমু দিলো। ঝাঁকি দিয়ে উঠলো তাহমিদের শরীর।

‘ দেখ দেখ রিলোডেড হচ্ছে আবার আবেগ। এজন্য কারেন্টের মতো শক করলো। এখন আর তোকে এগিয়ে আসতে হবে না। আমিই সকল কাজ করে নিতে পারবো।’

লজ্জায় তাহমিদের বুকে মুখ লুকালো সে। তাহমিদের এই চাহনিতে নাম না জানা মাদকতা আছে। একেবারে ঘায়েল হয়ে যাবে সে। ফিসফিস করে বলল সে,

‘আপনি আমার হৃদয়ের সমস্ত আবেগ। যেই আবেগের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। অন্তহীন এক ‘হৃদয়াবেগ’। এই বাজে লোকটাকে ভালোবাসি, হুট করে রাগিয়ে দেওয়া লোকটাকে ভালোবাসি, বলিষ্ঠ হাতে অবুঝ মেয়েটাকে আগলে নেওয়া লোকটাকে ভালোবাসি, হারানোর ভয়ে কাতরানো লোকটাকে ভালোবাসি। ভালোবাসি, ভালোবাসি এবং ভালোবাসি।’

চোখ বুঁজে নিলো সে। শান্তি বিরাজ করছে তার চারিপাশে। অন্তর্দেশে বর্ষিত হচ্ছে প্রেম নামক বর্ষণ। আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে নাযীফাহকে।

‘তুই’ নামক আমার অনুরক্তি, মোহ মায়া যেন দিন গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রবল আকার ধারন করছে। আমার আমিকে আমি চিনতে পারি না।সে বিলীন হয়ে গেছে তোর মাঝে। সবটা জুড়ে শুধু তুই, তুই আর তুই। ‘তুই’ নামক ‘হৃদয়াবেগ’ আমার সেদিনই নিঃশেষ হবে যেদিন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন। যেদিন লব ডব বন্ধ করে হৃদপিণ্ড অবসরে যাবে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে তোর ভাঁজ পড়া হাতটা ধরে রাস্তা পাড়ি দিতে চাই। নাতি নাতনিদের সাথে তোর আর আমার প্রণয়ের গল্প করতে চাই। তোর সাথে বাঁচতে চাই হাজার বছর।

__________________সমাপ্ত____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here