হৃদয়াবেগ #পর্বঃ১৪,১৫

0
1124

#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ১৪,১৫
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
১৪

তাহমিদের বাহুডোরে আবদ্ধ নাযীফাহ। যাকে বলে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। নাযীফাহ চোখ মেলে দেখতে পেলো তাহমিদের প্রশস্ত বুক। নিজের অবস্থান তাহমিদের বুকে দেখে লজ্জায় মিইয়ে গেলো সে। হাসফাস করতে লাগলো। তাহমিদ দেখলে আর সে তাহমিদের সামনে আসতে পারবে না। এক সময় হাসফাস করতে করতে একেবারে চুপ হয়ে গেলো সে। এতো নড়াচড়া করলে নির্ঘাত ঘুম ভেঙে যাবে তাহমিদের। খুব সতর্কতার সাথে তাহমিদের বাঁধন থেকে নিজেকে আলগা করলো। যেন জেগে না যায়। নিজেকে ছাড়ানোর পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পৌনে ছয়টা বাজে। ওই রুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। বসার ঘরে দেখলো ফাহিম শুয়ে আছে।

নাযীফাহ চলে যেতেই চট করে চোখ মেলে তাকায় তাহমিদ। তারপর মুচকি হাসলো সে। তার ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই। নাযীফাহকে নিজের বুকে দেখে চুপচাপ ঘুমের ভান ধরে ছিলো সে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটা মূহুর্তটাকে অনুভব করছিলো সে। হয়তো এভাবে কাছে আসতে আরো দেরি। তাই ঘুমের ভান ধরে নাযীফাহকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার প্রয়াস চালাতেই ঘুম ভেঙে গেলো নাযীফাহ’র। ভাগ্যিস বুঝতে পারেনি।

____________________________________________

ফ্রেশ হয়ে ঝাল করে নুডলস রান্না করতে রান্নাঘরে এসেছে নাযীফাহ। রান্নার মধ্যে এটাই একটু পারে। তাও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।

রান্না শেষ করে তাহমিদের কাছে গেলো সে। নুডুলসের বাটি টা একপাশে রেখে তাহমিদ কপালে হাত দিলো জ্বর আছে কি দেখার জন্য। জ্বর ছেড়ে শরীর ঘাম দিয়েছে। নাযীফাহ মৃদু,শীতল গলায় ডাকলো,

‘শুনছেন? জ্বর কমেছে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি নুডলস রান্না করেছি। কিছু একটা খেয়ে তারপর ঔষধ খাবেন।’

নাযীফাহ’র ডাকে শুয়া থেকে উঠে বসলো তাহমিদ। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই নাযীফাহ বলল,

‘একা একা যেতে পারবেন? নাকি আমি ধরতে হবে?’

তাহমিদ মলিন হেসে জবাব দিলো,

‘এতোটাও অসুস্থ হয়নি আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। আমাকে তোর উপর এভাবে নির্ভরশীল করিস না। বিপদে পড়ে যাবি তুই। পরে চব্বিশ ঘণ্টা এই পাঁজি মানুষটার সেবা করতে হবে।

তাহমিদ ফ্রেশ হয়ে আসতেই নাযীফাহ তোয়ালে টা বাড়িয়ে দিলো হাত মুখ মোছার জন্য। তারপর নুডলসের বাটি টা তাহমিদের হাত দিলো খাওয়ার জন্য। তাহমিদ এক চামচ নুডলস মুখে নিয়ে থম মে’রে রইলো। কোনো রকম গিলে বলল,

‘এগুলো রান্না করেছিস?’

নাযীফাহ হাসি মুখে জবাব দিলো,

‘আমি কালকে খেয়াল করেছি আপনি ভাত খাওয়ার সময় কেমন যেন করছিলেন। নিশ্চয়ই মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ঝাল ঝাল করে নুডলস রান্না করেছি। আপনার ভালো লাগবে।’

‘সেজন্য ঝাল দিয়েছিস বুঝলাম কিন্তু এক গামলা লবন কেন দিয়েছিস আমাকে মে’রে ফেলার জন্য?’

নিজের মাথায় চাটি মে’রে জিভে কামড় দিলো সে।

‘ইশ! বেশি লবন দিয়ে দিয়েছি।দাঁড়ান দাঁড়ান এটা খেতে হবে না। আমি আবার বানিয়ে নিয়ে আসছি।’

‘কোনো দরকার নেই। আমি এটাই খাবো।’

নাযীফাহ অসহায়, বিবশ গলায় বলল,

‘দিন না এটা খেতে হবে না।এমন করছেন কেন? রান্না করতে বেশি সময় লাগবে না তো?

তাহমিদ ধীরস্থির, অব্যাকুল গলায় বলল,

‘তুই তোর আনাড়ি হাতে আমার জন্য সযত্নে রান্না করেছিস।সামান্য লবন বেশি হয়েছে বলে খাবো না? জীবনে করা প্রথম যে কাজ গুলো হয় সেগুলোতে আবেগ একটু বেশি কাজ করে। আর আমার বউ আমার জন্য প্রথমবার রান্না করেছে।যেমনই হউক না কেন এটা আমার জন্য অমৃত। একদিন লবন বেশি খাইলে নিশ্চয়ই আমি ম’রে যাবো না।’

তাহমিদের কথা শুনে শীতলতায় ছেয়ে গেলো নাযীফাহ’র অন্তঃস্থল। পরিতৃপ্ততায় প্রসারিত হলো অধর কোণ।

____________________________________________

সোফায় আঁটসাঁট হয়ে শুয়ে আছে ফাহিম। এপাশে ফিরলেই ফ্লোরে পড়ে যাবে সে। মোবাইল ফোন বেজে উঠতেই নিদ্রা হালকা হয়ে এলো তার। চোখ বুঁজেই হাতরে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই তন্দ্রাভাব কে’টে গেলো ফাহিমের। এই সাত সকালে ফোনের ওপাশে মায়ের গলা শুনে পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলল সে। নিজেকে বড্ড তৃষ্ণার্ত অনুভব করলো। ফোনের ওপাশে ওয়াহিদার ভয়ার্ত, আতংকিত, তটস্থ কন্ঠস্বর,

‘তোরা সবাই সুস্থ আছিস তো বাবারা? তাহমিদের ফোনে কল দিলাম মোবাইল বন্ধ। তোদের চিন্তায় সারারাত ঘুমোতে পারিনি। সারা শরীর আমার জ্বালাপোড়া করেছে।’

কান্না পেয়ে গেলো ফাহিমের। বক্ষঃস্থল কেঁপে উঠলো। এতো মাইল দূরে থাকার পরও কি করে বুঝে গেলো সন্তানের অসুস্থতার কথা। হয়তো এটাই নাড়ীর টান। নয়নবারিতে টলমল করছে চক্ষুদ্বয়। পলক ফেললে নিম্নমুখী হবে নোনতা বারি। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ফাহিম,

‘কাল থেকে ভাইয়ার জ্বর। সারাদিন শুয়া থেকে উঠতে পারেনি। নাযীফাহ কিছুক্ষণ বাদে বাদে জলপটি দিয়েছে।’

ছোট ছেলের কথা শুনে একেবারে থম মে’রে গেলেন ওয়াহিদা।কি বলবে ভাষা খোঁজে পেলো না। ফাহিম অপরাধী গলায় মাকে ডাকলো,

‘মা?’

ওয়াহিদা অনুভূতিশূন্য, অচৈতন্য গলায় জবাব দিলেন,

‘হুম?’

‘কিছু বলছ না যে?’

ওয়াহিদা মলিন শান্ত গলায় বললেন,

‘আসলে ভাবতেছি, তোদেরকে পড়াশোনার জন্য ঢাকা পাঠিয়েছি বলে কি তোরা আমাকে পর করে দিলি নাকি তোরা খুব বড় হয়ে গেছিস।’

ফাহিম মিনমিনে, নত গলায় বলল,

‘এভাবে কথা বলছো কেন মা?’

ওয়াহিদা বিদ্রুপের সুরে বললেন,

‘তাহলে বাবা আমার কিভাবে কথা বলা উচিৎ। মা হয়ে ছেলের অসুস্থতার কথা আমি জানি না। সারারাত ছটফট করেছি এই ভেবে যে তোদের কোনো বিপদ হলো কিনা। তোর বাবা বলল সকাল হলে ফোন দিবে।রাতের বেলা ফোন দিলে তোরা টেনশন করবি। আমি শুধু সেকেন্ড গুনেছি কখন রাত পোহাবে।আমি যা ভেবেছি তাই হলো।’

‘আমি বলেছিলাম তোমাকে ফোন দেওয়ার জন্য। ভাইয়া নিষেধ করলো বলল তুমি নাকি টেনশন করবে।ভাইয়ার সাথে কথা বলবে?’

‘কারো সাথে কথা বলার দরকার নাই আমার। ফোন রাখ।’

কল কে’টে ওয়াহিদা জামান সাহেব কে বললেন,

‘আপনার ছেলেরা বড় হয়ে গিয়েছে। নিজের অসুস্থতার মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে যায়। মা টেনশন করবে বলে।’
____________________________________________

ফাহিমকে রুমে আসতে দেখেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নাযীফাহ। ড্রয়িং রুমে পা দিতেই কলিংবেলটা বেজে উঠলো। গুটি গুটি পায়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো বুয়া এসেছে। নাযীফাহ মুচকি হেসে বলে,

‘আজ আপনি রান্নার সময় আমি পাশে থাকবো। দেখবো আপনি কিভাবে রান্না করেন।’

প্রতিত্তোরে বুয়াও মুচকি হেসে জবাব দিলো,

‘আইচ্ছা আফামনি।’

‘মা সকালে ফোন দিয়েছিলো ভাইয়া।’

ফাহিমের মুখ নিঃসৃত বাক্য কর্ণকুহরে পোঁছাতেই চমকিত হয় তাহমিদ। আঁতকে উঠে বলল,

‘তুই কি বলে দিয়েছিস?’

ফাহিম অসহায় গলায় বলল,

‘জানি না ভাইয়া মা কি করে বুঝে গেলো। সত্যিটা না বলে পারেনি। মা রেগে আছে তুমি একটা ফোন দাও।’

তাহমিদের অন্তঃস্থল নির্গত হল দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

‘এখন ফোন দিলে আরো রেগে যাবে। আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হউক তারপর।’

কিয়ৎকাল চুপ থেকে পুনরায় তাহমিদ বলল,

‘কাল কি যেন বলছিলি? কোথাও চান্স পাসনি না কি জানি? জানিস কিছু কিছু জিনিস ভাগ্যের উপরও নির্ভরশীল। তুই তো চেষ্টা করেছিস না আসলে তো কিছু করার নেই। পাবলিক ভার্সিটি তে পড়েই যে মানুষ সফল হয় এমন তো না।ভেতরে পুঁজি হিসেবে জ্ঞান থাকলে যেকোনো জায়গায় পড়াশোনা করেই সফল হওয়া যায়। এসব নিয়ে মন খারাপ করবি না। ওটা ভাগ্যে ছিল না। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে বার বার চেয়েও যদি না পাস তাহলে ভেবে নিবি ওটা তোর জন্য কল্যানকর ছিলো না। কয়দিন পর সাত কলেজের পরীক্ষা মন দিয়ে পড়। আগের সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।’

ভাইয়ের কথা শুনে বুক থেকে যেন পাথর সরে গেলো।

‘তুমি সবকিছু কত সহজেই বোঝে যাও।’ নাযীফাহ’র রুমে আসার আভাস পেয়ে ফাহিম কুটিল হেঁসে বলল,

‘ভাগ্যিস ওই বাঁদরটার তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে। নাহলে গুনে গুনে চার বেলা স্বামীর মা’ই’র খেতো।’

নাযীফাহ দাঁত কটমট করে বলল,

‘ফাহিম্মাআআআআ।’

‘আজইরাল চলে আসছে ভাইয়া।’ বলেই তাড়াতাড়ি চলে গেলো। মৃদু শব্দে হাসলো তাহমিদ।

রুমে ঢুকেই কপাল কুঁচকে এলো নাযীফাহ’র।

‘আপনি সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছেন?’

চুল চিরুনি করতে করতে তাহমিদ বলল,

‘ওমা কোচিং-এ যেতে হবে না। কাল গেলাম না আজও যাবো না?’

নাযীফাহ রেগে বলল,

‘কোথাও যাবেন না আপনি। চাকরি থাকলে থাকবে না থাকলে নাই। আগে নিজের শরীর।’

ভ্রু জোড়া কুটি করে তাহমিদ বলল,

‘গিন্নী হওয়ার চেষ্টা করছিস মনে হচ্ছে? এতো তাড়াতাড়ি গিন্নী হওয়ার কোনো দরকার নাই। আগে মন দিয়ে পড়াশোনা কর।’

‘বেশি কথা বলবেন না আপনি।কাল রাতে যেই পরিমাণে জ্বালিয়েছেন জানেন আপনি? এতো পাগলামি করে মানুষ। জানেন কত ভয় পেয়েছি আমি।’

কপালে ভাঁজ পড়লো তাহমিদের। মস্তিষ্কে চাপ দিলো রাতের কথা মনে করতে। ব্যর্থ হলো সে। নাযীফাহ’র দিকে সূঁচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘কাল রাতে কি করেছি আমি?’

লজ্জায় লাল হয়ে গেলো নাযীফাহ। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো তার। তাহমিদ পুনশ্চ বলল,

‘আজব এভাবে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছিস কেন? কি করেছি সেটা তো বলবি?’

নাযীফাহ নতমস্তকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘কে বললো লজ্জায় লাল হচ্ছি। আমার গরম লাগছে।’

‘মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে তারপরও তোর গরম লাগছে?’

নাযীফাহ’র দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো তাহমিদ। নাযীফাহ’র থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে কিছু একটা ভাবলো সে। নাযীফাহ’র গা ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। তারপর বাঁকা, কুটিল হেসে বলে উঠলো,

‘অবচেতন মনে তোকে খুব গভীরভাবে ছুঁয়েছি বুঝি? ইশ! সজ্ঞানে থাকলে তোর লাজুক মুখখানা দেখে তৃপ্তি পেতাম। প্রথমবার বউয়ের এতো কাছাকাছি গেলাম আর বউয়ের তখনকার লজ্জায় মোড়ানো আনন দেখতে পেলাম না। এই আফসোস নিয়ে আমার সারাজীবন বাঁচতে হবে।’

লজ্জায় লাল হয়ে পা বাড়ালো দরজার দিকে। নাযীফাহ কে আরো লজ্জায় ফেলার জন্য তাহমিদ ডেকে বলল,

‘তোর গায়ে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আছে। যা একেবারে মাতা,,,,?

কথা শেষ করতে দিলো না নাযীফাহ। সম্মুখে চাহনি স্থির রেখেই বলল,

‘আপনি একটা যা-তা তাহমিদ ভাই। আমি আর আপনার কাছে আসবো না।’ বলে আর এখানে দাঁড়ালো না সে। দৌড়ে চলে গেলো রান্নাঘরে। নাযীফাহ চলে যেতেই শব্দযোগে হাসলো তাহমিদ। রাতের সব কথা মনে না থাকলেও আবছা আবছা কিছু মনে আছে তার। জ্বরের ঘোরে ছিলো বলে হয়তো এতো পাগলামি করেছে সজ্ঞানে থাকলে কখনো এমন করতো না সে। মনে মনে ভাবলো,

‘আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে কোনো একদিন হয়তো আমরা এক ঘরে ঘুমাবো।তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দু’জন এতো কাছাকাছি থাকার মুহূর্তটা কখনো আমি ভুলবো না। আকস্মিক ব্যপার গুলো আসলেই হৃদগহীনে দাগ কে’টে যায়। কাল এবং আজ আমি অন্য রকম এক নাযীফাহ কে দেখেছি।’

____________________________________________

নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছে সবাই। তাহমিদ আমেনা বেগম কে বলল,

‘সকালে তুমি একবার আমার কাছে গেলে না দাদি। আমার জ্বর কমার বদলে বাড়তেও তো পারতো?’

কোনো জবাব দিলো না আমেনা বেগম। নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে। তাহমিদও আর কথা বাড়ালো না। খাওয়া শেষ নাযীফাহ এবং ফাহিমের। ফাহিম পা বাড়ালো রুমের দিকে। নাযীফাহ নিজের আর ফাহিমের প্লেট টা নিয়ে কিচেন রুমের দিকে গেলো। এদিক ওদিক তাকালেন আমেনা বেগম। তারপর ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,

‘দরজাটা ভেতর থেকে আঁটকে নিলেই পারতে দাদুভাই। আমরা কিছু মনে করতাম না। তোমার বিয়ে করা বউই তো।’

কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো তাহমিদ।

#চলবে

#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ১৫
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

লজ্জায় মাথা কা’টা যাচ্ছে তাহমিদের।এই জীবনে এতোবড় লজ্জা সে আর কখনো পায়নি। কেন যে যেচে কথাটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল আল্লাহকে মালুম। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’র’ল সে। দাদি নিশ্চয়ই ওই অবস্থায় দেখেছেন। ইশ! কি লজ্জা কি লজ্জা। লজ্জায় দিক বেদিক দিশা না পেয়ে একের পর এক রুটি টুকরো টুকরো করে অনবরত মুখে দিতেই লাগলো তাহমিদ। নত মস্তক উপরে তোলার সাহস আর হচ্ছে না তাহমিদের। নাতির এমন দিশেহারা অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে আমেনা বেগম। অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন তিনি। তা যে একেবারে নিশানায় লাগবে বুঝতে পারেনি। মূলত উনি দু’জনকে কোনোরকম আপত্তিকর অবস্থায় দেখেননি। রাতে ঘুমানোর আগে ফাহিমকেও বলেছিলেন নাযীফাহ ডাকা না অব্দি যেন ওই রুমের ধারে কাছে না যায়। একে তো ওরা স্বামী স্ত্রী। তার উপর ঘুমের ঘোরে মানুষ কত কিছুই করে। ওরা যে লজ্জায় দরজা বন্ধ করবে না এটা উনার অজানা নয়।

মাথা নত করে একের এক রুটির টুকরো মুখে দেওয়াতে এক পর্যায়ে কাশতে কাশতে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো তাহমিদের। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন আমেনা বেগম। কাশির শব্দে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসলো নাযীফাহ। দ্রুত পায়ে তাহমিদের কাছে এসে পিঠ মালিশ করতে লাগলো। নাযীফাহ কে নিজের কাছে দেখে ছিটকে দূরে সরে গেলো তাহমিদ। বিস্ময়ে মুখ আপনা-আপনি হা গেলো তার। সে কাশছিল বলেই তো নাযীফাহ পিঠ মালিশ করতে এলো। তাহমিদ কাশতে কাশতে বলল,

‘দূরে যা৷ আমার কাছে আসবি না একদম।’

তাহমিদের কথা শুনে নাযীফাহ’র কপালে সূক্ষ্ম রেখার ভাঁজ পড়লো। যে মানুষ কাছে ঘেঁষার বাহানা খুঁজে আজ বলছে দূরে যেতে। চিন্তা করে কোনো কূলকিনারা করতে পারলো না সে। ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘আরে আপনি কাশি দিচ্ছেন বলেই তো পিঠ মালিশ করছি। কাশতে কাশতে চোখমুখের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।’

মিটিমিটি হাসছেন আমেনা বেগম। নাতির নাজেহাল অবস্থার মজা নিচ্ছেন তিনি। তার গম্ভীর নাতি যে মেয়েদের মতো লজ্জাও পায় উনার জানা ছিলো না। তাহমিদ নাযীফাহ’র দিকে না তাকিয়ে পুনশ্চ বলল,

‘লাগবে তোর পিঠ মালিশ। কাশি এমনে চলে যাবে। আপাতত তুই এখান থেকে যা।’

অভিমান হানা দিলো নাযীফাহ’র হৃদগহীনে। রাতের আধাঁরের ন্যায় তমসাচ্ছন্ন হয়ে গেলো মুখ। তাহমিদ নাযীফাহ কে দূরে যেতে বলায় কান্না পেয়ে গেলো তার। বিমর্ষ, বিষাদগ্রস্ত গলায় বলল,

‘ঠিক আছে আমি আর আপনার আশেপাশে আসবো না।’

আর দাঁড়ালো না নাযীফাহ। খুব দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো সেখান থেকে। নাযীফাহ’র অভিমানী কন্ঠস্বর শুনে আপনা-আপনি কাশি বন্ধ হয়ে গেলো তাহমিদের। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো নাযীফাহ’র যাওয়ার পানে। তার দোষ কি? দাদির লজ্জার হাত থেকে বাঁচতেই তো নাযীফাহ কে দূরে যেতে বলল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে। এক বিপদ থেকে বাঁচতে আরেক বিপদ কাঁধে নিলো। আমেনা বেগম ব্যঙ্গ করে বললেন,

‘আহারে দাদু ভাই বউ রাগ করে চলে গেলো? এখন কি করবে? এক কাজ করো আবার জ্বরের বাহানায় বিছানায় শুয়ে থাকো। আবারও বউকে কাছ পাবে রাতে।’ তাহমিদের অসহায় চাহনি দেখে হাসি বন্ধ হচ্ছে না আমেনা বেগমের।

অনাকাঙ্খিত ভাবে কাছে আসায় দাদির দেওয়া লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে দুই কথা বলেছে বলে বউ গাল ফুলিয়ে চলে গেছে। আরেক রাত বউয়ের কাছাকাছি থাকলে বউ পাশের বিল্ডিংয়ে গিয়ে বাসা ভাড়া নিবে। টেবিলের উপর থেকে পানি পূর্ণ গ্লাসটা কয়েক ঢুকে শেষ করে ফেলল সে। দাদির দেওয়া লজ্জার জবাব দিতে বলল,

‘আমি তো আমার বউকে কিছুই করলাম না। তোমাকে তো দাদা আরো গভীর ভাবে ছুঁয়েছে। আরো কাছাকাছি ছিলে তোমরা। আমার দাদু বংশ এগিয়ে নিয়েছে, তাহলে? আমাকেও আমার বংশ এগিয়ে নিতে দাও। নিজের টা ষোলো আনা তাই না।’

তাহমিদের দেওয়া লজ্জা যেন বয়োজ্যেষ্ঠ আমেনা বেগমকে স্পর্শ করতে পারলো না। পাত্তাই দিলো না তাহমিদের কথাকে। ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো,

‘আমরা তো আরো কতকিছুই করেছি। তবে বদ্ধ কামরায়।’

তাহমিদ দাদিকে জব্দ করতে না পেরে, ‘ধ্যাৎ’ বলেই রুমে চলে গেলো। এবার শব্দযোগে হাসতে লাগলেন আমেনা বেগম। তাহমিদের দাদার মৃত্যুর পরে নিজেকে একা একা লাগলেও এখন আর তেমন একা একা লাগে না। নাতি নাতনিদের সাথে বেশ চলে যাচ্ছে দিন। ড্রয়িং রুমে পা দিয়ে দাদিকে একা একা এমন হাসতে দেখে ফাহিম দাদিকে বলল,

‘তুমি এমন একা একা হাসছো কেন?’

‘ওসব তুই বুঝবি না।’

ফাহিম বেক্কলের মতো দাদির দিকে তাকিয়ে রইলো।

____________________________________________

মায়ের নাম্বারে ডায়াল করে তাহমিদ দোয়া পড়তে লাগলো। একবার, দুইবার রিং হওয়ার পর মোবাইল রিসিভ করলেন ওয়াহিদা। কোনো কথা বলছেন না উনি। তাহমিদ নিরাধার, বিবশ গলায় বলল,

‘কথা বলছো না কেন মা?’

ওয়াহিদার অভিমানী গলা,

‘আমি কারো মা না। আমি যদি মাই হতাম তাহলে সন্তানের অসুস্থতার খবর আমার কানে আসতো। মা না বলেই তো কেউ কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি।’

মায়ের অভিমানী গলা শুনে হাসলো তাহমিদ। সন্তানের জন্য মায়ের কত উচাটন। সামান্য জ্বরের খবর না দেওয়াতে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

‘সামান্য জ্বরের খবর দিয়ে সন্তান যে তার মাকে টেনশনে রাখতে চায়নি। সামান্য জ্বর কি পুরুষ মানুষকে কাবু করতে পারে নাকি।’

কাঁদতে লাগলেন ওয়াহিদা।কান্নার প্রকোপে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওয়াহিদার শরীর।

‘কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না। আমি তোর মা।আমি জানি তোর জ্বর উঠলে তুই জ্বরের ঘোরে কতটা পাগলামি করিস। তুই যখন একা ছিলি তখন অসুস্থ হলে এভাবেই বিছানায় পড়ে থাকতি, তাই না রে? ছোট বাঁদরটা ছিলো বলে জানতে পারলাম। না হলে তো জানতেও পারতাম না।’

পাগলামির কথা বলতেই গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে তাহমিদের। সকালের নাযীফাহ’র লাজুক মুখ চোখে ভাসতেই হেসে ফেলল সে। হাসির নিনাদ শুনে ভ্রু কুঞ্চিত হলো ওয়াহিদার।

‘তুই হাসছিস?’

‘ভালোবাসি মা। খুব ভালোবাসি।’

ওয়াহিদা বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বললেন,

‘এই একটাই অস্ত্রই তো জানিস। এই কথা শুনলে যে মায়ের রাগ মাটি হয়ে যায় ভালো করেই জানা আছে, হুম?’

‘মাকে ভালোবাসি তো বলবো না? কতদিন তোমাকে দেখি না।ঢাকা আসবে কবে তোমরা?’

ছেলের সাথে কথা বলে রাগ কমে গেলো ওয়াহিদার। উৎফুল্ল, প্রসন্ন, আনন্দদায়ক গলায় বললেন,

‘এই তো ধানের কাজ শেষ হলো বলে। সপ্তাহ খানেক পরে আমরা সবাই যাবো। কতদিন হলো তোর দাদিকে দেখি না। উনি ঠিকমতো ঔষধ খায় তো?’

‘তোমার যেই ডানপিটে ভাইঝি দাদি ঔষধ না খাওয়া অব্দি সামনে সরে না।’

ওয়াহিদা হাসতে হাসতে বললেন,

‘তাহলে তোর দাদির সাথে নাযীফাহই ঠিক আছে।’

____________________________________________

গোমড়া মুখে বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে নাযীফাহ। সকাল গড়িয়ে ভরদুপুর এখন। রুম থেকে আর বের হয়নি সে। আমেনা বেগম নাযীফাহ বিরস, বিষাদভারাতুর মুখশ্রী দেখে মৃদু হাসলেন উনি। প্রণয়ের আগেই অনুমতি প্রাপ্ত প্রেমিকের সামান্য কথায় এতো অভিমান।পরবর্তীতে মনে হয় চোখ গরম করে তাকালেও প্রলয় বয়ে যাবে।

আমেনা ধীরস্থির পায়ে ছুটলেন তাহমিদের রুমের দিকে। তাহমিদ দাদি দেখে লাজুক হাসলো। আমেনা বেগম নাতির কাছে গিয়ে নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তাহমিদ আলতো হেসে দাদির ভাঁজ পড়া হাতে চুম্বন করলো।

‘দাদি তুমি যে গ্রাম ছেড়ে, স্বামীর ভিটা ছেড়ে আমাদের সুবিধার জন্য এই কোলাহলপূর্ণ, যানজটের ঢাকা শহরে পড়ে আছো,তোমার গ্রামের জন্য মায়া লাগে না?’

নাতির কথায় মলিন হাসলেন উনি,

‘আগে মানুষের কাছে শুনতাম, নাতি নাতনি হলে নাকি সন্তানের মায়া টা নাতি নাতনির উপর চলে যায়। আসলেও কথাটা সত্যি। পড়াশোনার জন্য যখন তুই ঢাকা চলে এলি? আমার বুকের একপাশ কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতো। তারপর চলে এলো তোর গুনধর ভাই। তোদের শূন্যতায় বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ করতো।তাই তো শূন্যতা ঘুঁচাতে একা একা চলে যেতাম তোর মামুর বাড়ি। গিয়ে তোর বউয়ের সাথে নানা বাহানায় ঝগড়া করতাম। আমি আমার নাতি নাতনিদের মাঝে ভালো আছি। গ্রামের জন্য তো মন কেমন করবেই, তাই না। সেখানে কিন্তু কেউ আমাকে আদর করে দাদি বলে ডাকে না।আমার ভাঁজ পড়া দু’টো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয় না।’

চুপ হয়ে গেলেন উনি। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে পুনরায় বললেন,

‘দাদু ভাই সকালের কথায় মেয়েটা ভালোই অভিমান করেছে। যাও অভিমান ভাঙাও। প্রণয়ে অভিমান, অনুরাগ থাকবে না তা হয় নাকি। অভিমানে ভালোবাসা আরো গাঢ় হয়।’

দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তাহমিদ নাযীফাহ কে শান্ত, ঘোর লাগা কন্ঠে ডাকলো।নীরব, নিঃশব্দ, নিসাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নাযীফাহ। কোনো প্রকার উত্তর দিলো না। জবাব না পেয়ে তাহমিদ কুটিল হেসে বলল,

‘সেদিনের মতো করবো কি? তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। বউকে ছুঁইলে শরীর চাঙা হয়। দরজার ছিটকিনি দিলাম কিন্তু?’

চমকিত, বিস্মিত হয়ে পশ্চাতে ফিরে তাকায় নাযীফাহ। নাযীফাহ’র ভয়ার্ত, আতংকিত চেহেরা সশব্দে হাসলো তাহমিদ। নাযীফাহ বিষন্ন, গোমড়া মুখে উত্তর দিলো,

‘আপনিই তো আপনার কাছে যেতে নিষেধ করেছেন।এখন আবার আমার কাছে এসেছেন কেন?’

নাযীফাহ’র দিকে এগোতে এগোতে তাহমিদ বলে উঠলো,

‘সেজন্য খুব অভিমান হয়েছে বুঝি? তা এই অধম তার অর্ধাঙ্গিনীর অভিমান ভাঙাবে? ওই ঘর্মাক্ত কপালে আমার অধরের উষ্ম স্পর্শ দিয়ে নাকি অধরে অধরে মিলিয়ে? নাকি অন্য,,,,’

লজ্জায় তাহমিদের দিকে তাকাতে পারছেনা নাযীফাহ। নত মস্তকে বলল,

‘আপনি খুব অসভ্য তাহমিদ ভাই।’

বলেই জিভে কামড় দিলো সে। ঝোঁকের একি বলে ফেলল সে? উচ্চশব্দে হাসতে লাগলো তাহমিদ।

‘বউয়ের কাছে সভ্য হয়ে থাকা যায় নাকি বর সব সময় বউয়ের কাছ অসভ্যই থাকে। খাওয়ার সময় হয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে আয়।খুব খিদে পেয়েছে। আর সকালে বিশেষ কারনে ওই কথা গুলো বলেছি।’

____________________________________________

সবকিছু টেবিলে এনে মাত্রই খেতে বসল সবাই। সেই মুহূর্তে কলিং বেল বেজে উঠলো। নাযীফাহ এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলেই দেখল নিতুর মাকে। উনি নাযীফাহকে দেখেই মৃদু হাসলেন।

‘ সবাই খেতে বসেছো বুঝি?’

মাথা নাড়ে নাযীফাহ। নিতুর মা মুখে হাসি বজায় রেখে বলল,

‘তাহলে ঠিক টাইমে এসেছি।’

একটা বাটি এগিয়ে দিয়ে পুনশ্চ বললেন,

‘নিতুর বাবা সকালে একটা কাতল মাছ এনেছিল। মাথাটা দিয়ে মুড়িঘন্ট করেছি।ভাবলাম তোমাদেরও দিয়ে যাই।’

‘ভেতরে আসেন না।’

‘আজকে না অন্য কোনোদিন আসবো।আগে এটা নাও।’

চলে গেলো নিতুর মা। নাযীফাহ দরজা আঁটকে বাটি হাতে টেবিলের কাছে আসতেই তাহমিদ বলল,

‘কে এসেছিলো?’

‘নিতুর মা।’

‘ভেতরে আসতে বললি না?’

‘বলেছিলাম, কিন্তু আসেনি।মুড়িঘণ্টর বাটিটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো।’

তাহমিদ লোভাতুর মুখে বলল,

‘ওয়াও মুড়িঘণ্ট। আমার প্রিয়। অনেকদিন হলো খাওয়া হয় না।’

তাহমিদের ভ্রূদ্বয় কুঁচকে তাকালো নাযীফাহ।

‘আপনার মুড়িঘণ্ট প্রিয়?’

আমেনা বেগম ফোঁড়ন কে’টে বললেন,

‘কেন তুই জানিস না? দাদু ভাইয়ের তো এগুলো হলে আর কিছু না লাগে না।’

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নাযীফাহ বলল, ‘না।’

____________________________________________

ফুটপাত ধরে হাঁটছে দু’জন। তাহমিদ ফোনে কথা বলতে বলতে বড় বড় কদম ফেলে সামনে চলে গেলো। জুতোর বেল্ট খুলে যাওয়ায় সেখানে বসেই বেল্ট আটকাচ্ছিলো নাযীফাহ। বেল্ট আঁটকে মাথা তুলে দেখতে পেলো বেপরোয়া গতিতে একটা বাস তার দিকে ধেঁয়ে আসছে। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেলো সে। ত্রাস, ভয়, আতংক গ্রাস করলো তাকে।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো সে

#চলবে

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here