#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ২২,২৩
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
২২
‘যার চরিত্র নিয়ে কথাটা বললে তার পরিচয় তুমি জানো? কোনো আইডিয়া আছে সে আমার কি হয়?কারো সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে তার সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখতে হয়। আমার বউ সে। আমার অর্ধাঙ্গী সে। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।’
বিস্ময়ে মেয়েটি সহ সবার মুখ হা হয়ে গেলো। প্রেমিক যুগল ভাবলেও স্বামী স্ত্রী ভাবেনি কেউ।
‘যাকে কবুল বলে আমি বিয়ে করেছি। জন্মলগ্ন থেকে সে আমার মামাতো বোন। বছর হতে চলল তাকে আমি বিয়ে করেছি। তোমার মনে প্রশ্ন জাগলে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পারতে। তাই বলে মাঝ রাস্তায় তুমি তার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে? তার সাথে তোমার কিসের এতো শত্রুতা? সে তো কখনো তোমার সাথে মিসবিহেভ করেনি, তাহলে? তোমাদের মতো বয়সের ছেলেমেয়েদের একটাই সমস্যা, কাউকে ভালো না লাগলে তাকে শত্রু মনে করো।তাকে পার্সোনাললি এ্যাটাক করো। কাল তোমার কথায় আমি তাকে ধমক দিয়েছি, বকেছিও। আজ পর্যন্ত আমি ধমক তো দূরের কথা চোখ রাঙানিও দেইনি কখনো। আমার জন্য তার চোখের পানি ঝরেছে। বাসায় সে হাজার পাগলামি করলেও আমি তাকে মুখের কথা অব্দি বলি না। আমি কেন আমার পরিবারের কেউ কিছু বলে না। তার পাগলামি আমার পরিতৃপ্তি, প্রশান্তি দেয়। সে ন্যূনতম অসুখবোধ করলেও আমার হৃদপিণ্ডে জ্বলন শুরু হয়। তার মনে মন খারাপ নামক মেঘেরা যেন জড়ো না হয় সেজন্য রোজ বিকেলে হাঁটতে বের হই। আমার দুইটা টিউশন অব্দি ছেড়ে দিয়েছি। আর তুমি তাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপমান করছো? এতো সাহস দিয়েছে তোমাকে? আজ তুমি ছেলে হলে বুঝতে এই তাহমিদ কি। দেখে নিতাম তোমার কতটুকু সাহস। তোমার বাবা মায়ের নাম্বার দাও।’
চমকে উঠে মেয়েটি। এতোক্ষণ যাবৎ নত মস্তকে দাঁড়িয়ে ছিলো সে। বাবা মায়ের নাম্বার দেওয়ার কথা বলায় আতংক গ্রাস করলো তাকে। করজোড়ে তাহমিদ কে বলল,
‘স্যার মাফ চাই। আমার বাবাকে কিছু বলবেন না।আমার বাবা এসব শুনলে আমাকে মে’রে’ই ফেলবে।ভুল হয়ে গেছে আমার।’
মেয়েটির কথা পাত্তা না দিয়ে তাহমিদ পুনশ্চ এক প্রকার চিৎকার করেই বলল,
‘তোমার বাবা মায়ের নাম্বার দাও। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই এসব করার জন্য এতো কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে তোমাকে বড় করছে কিনা।’
মেয়েটি তাহমিদ পায়ে ধরার জন্য উদ্যত হতেই দু’কদম পিছিয়ে গেলো তাহমিদ।
‘শুনো, জিহ্বা মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ আবার সবচেয়ে নিকৃষ্ট সম্পদও। এই জিহ্বার কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে আবার জাহান্নামেও যাবে। কাউকে কথার আঘাত দিও না। এই যে কথা গুলো বললে আমার কলিজায় আ’ঘা’ত করেছো। সরাসরি আমাকেও যদি কয়েকটা কথা বলতে আমার এতো খারাপ লাগতো না। যতটা না তুমি তাকে বলায় লেগেছে।’
‘তাহমিদ এতো হাইপার হইয়ো না,শান্ত হও। না বুঝে বলে ফেলেছে। আশেপাশে মানুষ দেখছে।’
‘না শাওন ভাই আমাকে বলতে দিন। আজ আমার কারনে আমার স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে। আমি বর্তমান থাকা অবস্থায় কেউ একজন মাঝ রাস্তায় তার চরিত্রে কালিমা লেপন করছে। স্বামী হিসেবে আমি ব্যর্থ। আপনি নাযীফাহ’র ছেলেমানুষীর কথা শুনে এখানে ভর্তি করতে বললেন। আমি নিষেধ করেছিলাম শাওন ভাই। কারন কেউ যখন জানতে পারবে সে আমার বউ তাহলে সবাই মনে করবে আমি তাকে এক্সট্রা কেয়ার করতেছি। আপনি বললেন কি? সে তোমার বউ এটা বলার দরকার কি? এখানে এলে তুমি টিচার আর সে স্টুডেন্ট। আজ কি হলো দেখলেন? নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে।’
তাহমিদ কে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে এক নাগালে ফুঁপিয়ে চলেছে নাযীফাহ। একহাতে প্রেয়সী কে সযত্নে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে তাহমিদ। অন্যহাতে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো।
‘সরি! আমার আরো আগে বলে দেওয়া উচিৎ ছিলো। তাহলে আর আজ এসব হতো না।’
নিস্তব্ধতায় আচ্ছাদিত হয়ে গেলো চারপাশ। মনে হচ্ছে এতোক্ষণ প্রলয় বয়ে যাওয়া পরে প্রকৃতি ঠান্ডা হয়েছে। উপস্থিত সবাই যেন নির্বাক। মেয়েটি নিঃশব্দে কাঁদছে। তাহমিদ পুনশ্চ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘তোমরা সবাই তো একসাথে ক্লাস করো। কখনো বলতে পারবে আমি নাযীফাহ কে আলাদা ট্রিট করেছি বা তোমাদের কম বুঝিয়েছি বা তাকে বেশি বুঝিয়েছি? আমাদের সম্পর্কের কথা কখনো তোমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। কারন আমিও প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা স্বামী স্ত্রী বাসায় কিন্তু কোচিং সেন্টারের এরিয়ায় পা দিলে সে স্টুডেন্ট আর আমি টিচার। তাছাড়া এখানে আমি পড়াতে আসি পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আলোচনা করতে আসি না। প্রিয়জন সম্পর্কে কেউ কটু কথা বললে এটা ঠিক কতটা পীড়াদায়ক বুঝবে না। বিয়ের মাস দুয়েক পরে নাযীফাহ দুইদিন নিখোঁজ ছিলো। আমি রাত দুইটায় আমার ভাইকে নিয়ে গ্রামে রওনা দিয়েছি। পুরোটা রাস্তা শুধু দোয়া করেছি ওর যেন কিছু না হয়। সেই দুইদিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে। বলতে পারো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে সে।’
অতীতের সেই বি’ষাক্ত, তিক্ত, কণ্টকাকীর্ণ দিনগুলোর কথা মনে পড়তেই শিউরে উঠলো নাযীফাহ’র শরীর। সেই দু’টো দিন তার কাছে মনে হয়েছে সে জাহান্নামে আছে। তৃষ্ণায় এক ফোঁটা পানির জন্য কাতরেছে সে। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাযীফাহ তাহমিদ কে। দিন গুলোর ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো তার। তাহমিদ আবারও বলতে লাগলো,
‘হারিয়ে ফেলার ভয় থেকে নিজের কাছে এনে রেখেছি। নিজের বাবা মা থেকে দূরে আছে সে। তোমাকে জব্দ করা নাযীফাহ’র কয়েক সেকেন্ডের ব্যপার। শুধু আমি বলেছি বলে সে এখনো চুপ করে আছে। কারণ এখানে আমার একটা সম্মান আছে।’
চুপ করে রইলো তাহমিদ। কিছু ভালো লাগছে না তার। অসহ্য লাগছে আশপাশের পরিবেশ। মনে হচ্ছে বি’ষাক্ত হয়ে গেছে সেই পরিবেশের হাওয়া । হাওয়ায় যেন বি’ষ মিশে আছে। শাওন সাহেব তাহমিদের কাঁধে হাত রাখলেন।
‘এসব নিয়ে মন খারাপ করো না তাহমিদ। তোমাদের তো পবিত্র সম্পর্ক। কেউ কিছু বললে তো আর অপবিত্র হয়ে যাবে না। নাযীফাহ কে নিয়ে বাসায় যাও। মেয়েটা অসুস্থ হয়ে যাবে।’
তাহমিদ মলিন হাসলো।
‘ব্যপারটা তা না। আসলে আমি আমার স্ত্রীকে সেভাবে প্রটেক্ট করতে পারিনি। এখানেই আমার ব্যর্থতা।’
মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘আজ পড়ার জন্য তোমাকে বকেছি বলে কি সেই রাগটা ওর উপর দেখালে? বলতে পারবে কোনটা ভুল বলেছি? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করো না বাবা মা এতো কষ্ট কার জন্য করে, কিসের জন্য করে? পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার জন্য? জীবন এতো সোজা না। সফলতা এভাবে আসে না। কাল তোমাদের দু’জনের কথোপকথনও শুনেছি। কিছু বলেছি বলো? আজ ইচ্ছে করলেই আমি তোমার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে পারতাম। কিন্তু নিবো না। নিজেকে শুধরাও।এখনো সময় আছে। এতো নেগেটিভিটি নিয়ে বাঁচা যায় না । পজিটিভলি সবকিছু ভাবতে শুরু করো জীবন সুন্দর হবে। সবার সাথে মিশার চেষ্টা করো দেখবে ভেতরের হিংসাত্মকতা কমে যাবে।’
নিজের বক্ষ থেকে নাযীফাহ কে আলগা করলো তাহমিদ। মুখোমুখি নাযীফাহ কে দাঁড় করিয়ে তার আনন নিজের হাতের আঁজলায় নিলো। নিস্তেজ হেসে, শান্ত, ধীরস্থির গলায় বলল,
‘কখনো ভাবিনি নিজের অনুভূতি গুলো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনসম্মুখে ব্যক্ত করতে হবে। আমি আমার হৃদয়ের সকল আবেগ আর অনুরাগ আমার আর তোর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা হয়তো আল্লাহ চায় না।’
অতঃপর নাযীফাহ’র কপাল থেকে এলোমেলো ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে সেখানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ালো।
‘ভালোবাসি তোকে আমি। নিজের থেকেও বেশি। ঠিক যতটা ভালোবাসলে নিজের মৃত্যুর থেকেও বেশি প্রিয় মানুষ কে হারানোর ভয় হয় ঠিক ততটাই ভালোবাসি। ভালোবাসা এক অদৃশ্য অস্পর্শনীয় অনুভূতি যা বলে কয়ে হয় না। হুট করেই হয়ে যায়। অনুভূতিরা হঠাৎ করে কড়া নারে মনের দ্বারে।’
কয়েকটা ছেলে শিস দেয়া শুরু করলো। হাত তালিও দিলো অনেকে।নাযীফাহ চারপাশে চোখ বুলালো একবার। সবার চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় মুখ লুকালো তাহমিদের বুকে। ভাগ্যিস ব্যপারটা কোচিং সেন্টারের সাথে ফাঁকা জায়গাটায় ঘটেছে। যদি মেইন রোডের পাশে হতো তো কি হতো? তাহমিদ সকলকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় বলল,
‘আরো একটা ব্যপার তোমাদের এনসিউর করতে চাই। তোমরা ভাবতে পারো হয়তো আমাদের আগে প্রণয় তারপর পরিনতি। আসলে না আগে আমাদের পরিনতি ঘটেছে তারপর প্রণয়। আমরা হলাম সরকারি সনদ প্রাপ্ত হালাল প্রেমিক যুগল। তাই না নাযীফাহ?’
কথাটা কর্ণগোচর হতেই সবার অলক্ষ্যে নাযীফাহ খামচি দিলো তাহমিদের পিঠে।
‘এই যে তোমাকে বলছি।’
মেয়েটি তাকালো তাহমিদের দিকে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের নাজেহাল অবস্থা। ফুঁপাচ্ছে সে। এতোগুলা মানুষের সামনে আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। তাহমিদ বলল,
‘একজন বড় ভাই হিসেবে বলছি। কখনো কারো চরিত্র, সম্ভ্রম নিয়ে কথা বলো না। আঙুল তুলো না। নারী বলো আর পুরুষ উভয়ের কাছে তার চরিত্র সবকিছুর উর্ধ্বে। আমি ছেড়ে দিয়েছি বলেই যে অন্য কেউ ছেড়ে এমন কিন্তু নয়।’
নাযীফাহ রিনরিনে গলায় বলল,
‘আমি বাসায় যাবো। এখানে আর ভালো লাগছে না।’
বেলা নামতে শুরু করেছে। পশ্চিমাকাশে দেখা যাচ্ছে গোধূলির রক্তিম আভা। পক্ষিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে। নাযীফাহ’র আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে হাঁটতে শুরু করলো তাহমিদ। পিছু ডাকল জান্নাত। দাঁড়িয়ে পড়লো দু’জন। জান্নাত ওদের কাছে গিয়ে দুজনের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে কামড় দিলো।
‘নজর না লাগুক আমার দেখা বেস্ট কাপলের উপর।’
প্রতিত্তোরে হাসলো দু’জন।
____________________________________________
ওরা চলে যেতেই শাওন সাহেব মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘তোমার নাম নূর রাইট? তুমি আজ আমার ক্লাসেও পড়া দিতে পারোনি।তাহলে আমার রাগটা কার উপর দেখালে? ওই মেয়েটার উপর? নিজের বিকৃত চিন্তাভাবনার জন্য মা বাবার শিক্ষার দিকে আঙুল তুলতে কাউকে বাধ্য করো না। কোনো বাবা মা চায় না তার সন্তান খারাপ হউক। ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে হয়। এখনো সুযোগ আছে। তাহমিদ কিন্তু তোমার শিক্ষক। শিক্ষকের মনে আ’ঘাত দিয়ে কেউ কখনো সফল হয়নি। নত স্বীকার করে মাফ চেয়ে নিও। আবার লোক দেখানো মাফ চাইতে হবে না। যদি ভেতর থেকে অনুতপ্ত হও তবে। এখন সন্ধ্যা হতে চলেছে।সবাই বাসায় যাও।’
অনবরত কেঁদে চলেছে সে। হয়তো উপলব্ধি করতে পারছে নিজের ভুল গুলো। ভিড় থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
‘প্রথম প্রথম তো তুমি আমার পিছনেও লাগতে। তোমার সমস্যা একটাই কেউ রেগুলার ক্লাসে পড়া বলতে পারলে তোমার তা সহ্য হয় না। শুধু তোমার কারনে আমি পড়া শিখলেও বলি না। আমার মাঝে কতটুকু জ্ঞান শুধু আমি জানি। এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি ক্রোধানলে রেষারেষি করতে না।’
ওর সাথে থাকা সেদিনের মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘তোকে সেদিনই নিষেধ করেছিলাম, শুনিসনি। আজ তো আমাকে কিছু না বলেই নিজের রাগ ক্রোধ মিটাতে এলি। কি হলো? নিজের ফাঁদে নিজে পা দিলি। হয়তো আমার পিছনেও লাগতি। তোর সাথে চলি বলে লাগিস না। নিজের ভেতরে হিংসা নামক বস্তুটাকে আর পুষিস না। বাসায় যা এখনি মাগরিবের আযান দিবে।’
____________________________________________
‘রিক্সায় যাবি নাকি হেঁটে যাবি?’
তাহমিদের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না নাযীফাহ। অনুভূতিহীন হয়ে দৃষ্টি স্থির রেখে হাঁটতে লাগলো সে।
তাহমিদ পুনশ্চ প্রশ্ন করলো,
‘আইসক্রিম খাবি নাকি ফুচকা খাবি?’
এবারও নিশ্চুপ, নিরোত্তর নাযীফাহ। মুখে কুলুপ এঁটেছে সে। নাযীফাহ’র নির্জীবতা দেখে বক্ষঃস্থল থেকে নির্গত হলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস। আশপাশটা একবার চোখ বুলালো সে। মোটামুটি নীরব আর কোলাহল মুক্ত। মাঝে কয়েকটা রিক্সা যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়লো সে। তাহমিদ দাঁড়িয়ে যেতেই পা থেমে গেলো নাযীফাহ’র। প্রাণহীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তাহমিদের পানে। তাহমিদ এক পা এক পা করে তার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। দু’জনের মাঝে কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব। তাহমিদের গরম শ্বাস আছরে পড়ছে নাযীফাহ’র কায়ায়। এতোটা কাছাকাছি আসায় হৃদপিণ্ড তড়িৎ গতিতে লাফাতে শুরু করলো। কিছুক্ষন আগেও তো তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব ছিলো না। নাযীফাহ তো একেবারে মিশে ছিলো তাহমিদের সাথে তখন তো এমন অনুভব হয়নি। তাহমিদ এই অতর্কিত কাছে আসায় নাযীফাহ’র মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তাহমিদ যখন আরো একটু দূরত্ব ঘুচালো লজ্জায় মিইয়ে গেলো সে। অধর কোণে লাজুক হাসি। তাহমিদ তার অধর জোড়া নাযীফাহ’র গাল বরাবর নামাতেই পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো সে। অনেক্ক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর যখন তাহমিদের আবেগ মিশ্রিত কোনো ছোঁয়া পেলো না চট করে চোখ মেলে তাকালো সে। সাথে সাথে,,
#চলবে
বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
#হৃদয়াবেগ
#পর্বঃ২৩
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
চোখ মেলেই সে দেখতে পেলো তাহমিদ কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে হাত ভাঁজ করে ক্রূর হাসছে। নাযীফাহ ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহমিদের দিকে। তাহমিদ হাসতে হাসতে বলল,
‘ আমার চু’মু খাওয়ার জন্য মনে হচ্ছে মরিয়া হয়ে আছিস। কাছে যেতেই আদুরে ছোঁয়া নেওয়ার একেবারে চোখ বন্ধ করে ফেললি। তুই কিন্তু চালাক আছিস। আমার দেহের সকল ভিটামিন হরণ করে নিজের বেলায় বুড়ো আঙুল দেখাস। আচ্ছা যা চু’মু দিবো তবে তোর ঠোঁটে। দিবো কি?’
তাহমিদের এমন অসংযত, লাগামছেঁড়া কথা শ্রবণেন্দ্রিয় হতেই লজ্জা যেন গ্রাস করলো নাযীফাহ’র সমস্ত কায়া। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে। লজ্জায় লাল হলো তার গাল। কয়েক পা এগিয়ে এসে তাহমিদ নাযীফাহ’র গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। তাহমিদ কে পুনশ্চ কাছে আসতে দেখে ত্রপায় একেবারে নু্য়ে যায় নাযীফাহ।
‘এইতো আমার লজ্জাবতী নাযীফাহ। নিষ্প্রাণ, নির্জীব, নিস্তেজ আননে আমার নাযীফাহকে একদম মানায় না। একদমই না। আমার নাযীফাহ তো প্রানবন্ত, প্রাণোচ্ছল । যার মাথায় দুষ্টুমি খেলা করে সারাক্ষণ। আর ঠোঁটে থাকে বাঁকা হাসি। কাউকে নাস্তানাবুদ করার আনন্দে সে হাসতে থাকে অবিরত।’
চারিদিকে আবছা আলোয় আবছা অন্ধকার। মাথার উপর জ্বলে উঠলো সোডিয়ামের আলো। চারিদিকে সুনশান নিরবতা।সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই নিস্তব্ধ পরিবেশ কোলাহলপূর্ন হয়ে যাবে। অফিস ছুটি হবে। কেউ হাঁটতে বের হবে। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে নাযীফাহ আর তাহমিদ। নাযীফাহ হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে রিনরিনে গলায় বলল,
‘কি অদ্ভুত না? নাযীফাহ দুনিয়া মানে ছিলো, গাছে চড়া, পাকা ফল চুরি করা, বাচ্চাদের সাথে খেলা, কাউকে নাস্তানাবুদ করা। হুট করেই নাযীফাহ’র বদলে গেলো। একেবারেই বদলে গেলো। তার পুরো দুনিয়াটা এখন তাহমিদময়। নাযীফাহ’র হৃদয় এখন তাহমিদের দখলে। সমস্ত মন জুড়ে শুধু তাহমিদের বসবাস। ভালোবাসা সুন্দর তাই না?’
নাযীফাহ’র মুখে ভাই সম্বোধন ছাড়া নাম শুনে হাত শক্ত করে ধরলো নাযীফাহ’র। ‘তাহমিদময়’ এই শব্দটিতে যেন তার সকল আবেগ ঢেলে দিয়েছে। তাহমিদের মনের মধ্যে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করলো। বড় প্রশান্তির এই হাওয়া।যে হাওয়া হুট শুরু হওয়া ঝড়কে একেবারে শান্ত করে তুলে।আসলেই ভালোবাসা সুন্দর। যা কখনো বর্ণনা করা যায় না।
‘নাযীফাহ?’
তাহমিদের স্নিগ্ধশীতল গলার ডাক শুনে চকিত হয় নাযীফাহ।
‘তুই পনেরো আর ষোলো বছরের মাঝামাঝি বয়সের এক কিশোরী। তোর এখন বাস্তবিক জ্ঞান খুব কম। আবেগটাই বেশি কাজ করবে। দু’চার বছর পরে এই আবেগ কেটে যাবে। দেখা যাবে তখন তোর আমাকে ভালো লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। হয়তো ভালোবাসাও ফিঁকেও হয়ে যাবে। তখন কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?’
নাযীফাহ মলিন, নিস্তেজ হেসে বলে উঠলো,
‘মনের এই পরিবর্তনটা আমার না হয়ে আপনারও তো হতে পারে?’
নাযীফাহ সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘আমার যে আর এখন আবেগের বয়স নেই। আমার সবটাই অনুরাগ, মায়া। মায়া কাটানো যায় না কখনো। আর না মায়া কখনো নিঃশেষ হয়। আর যদিও আমার আবেগ কাজ করে তাহলে বলবো এই আবেগ আমার অনন্তকাল, অবিনশ্বর থাকুক। আমি চিরকাল বেঁচে থাকবো না তবে অমরত্ব পাক আমার আবেগ।’
নাযীফাহ মনে মনে কুটিল হেসে তাহমিদ কে বলে,
‘আচ্ছা যদি আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই কি করবেন?
‘ম’রে যাবো।’
তাহমিদের সোজাসাপটা কথায় পা চলা থেমে গেলো নাযীফাহ’র। এই উত্তর সে আশা করেনি।সে তো মজা করেই বলেছে তাই বলে এমন কথা বলবে? নিস্তব্ধ, নীরব গভীর রাতের ন্যায় তমসাচ্ছন্ন হয়ে গেলো তার আনন। হাস্যোজ্জ্বল মুখে নেমে এলো প্রগাঢ় আঁধার। কোনো কথা না বলে আবারও হাঁটতে লাগলো দু’জন। নাযীফাহ’র এমন নিস্তব্ধতা দেখে উচ্চ শব্দে হাসলো তাহমিদ।
‘যেই প্রশ্নের উত্তর হজম করতে পারবি না সেই প্রশ্ন করিস কেন?’
এবারও কোনো কথা না বলে নৈঃশব্দ্যে পা ফেলে হাঁটতে লাগলো সে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার। নাযীফাহ’র এমন নিরবতা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে।
‘হয়তো দেহের মৃ’ত্যু ঘটবে না। মনের মৃ’ত্যু ঘটবে আমার। আমার আবেগ আর ভালোবাসার মৃ’ত্যু ঘটবে। শ্বাস প্রশ্বাস সচল থাকলেও পরিনত হবো জীবন্ত লা’শে।’
নাযীফাহ আকস্মিক তাহমিদের বাহু জড়িয়ে বলে,
‘আপনি এমন কেন তাহমিদ ভাই। বয়সে আপনার থেকে ছোট হতে পারি তাই বলে কি ভালো মন্দ বুঝিনা? আপন ভালো তো পা’গলেও বুঝে।আমার সকল সুখ যে আপনাতেই নিহিত।’
‘আমি এমন কারণ তুই আমাকে ভাই বলে ডাকিস। একটু আগেই তো নাম ধরে ডাকলি। আহা! আবেগ মিশ্রিত নাম শুনেই কর্ণ দ্বয় একেবারে শান্ত হয়ে গেছিলো।’
নাযীফাহ জিভে কামড় দিয়ে বলে,
‘আসতাগফিরুল্লাহ্, নাউজুবিল্লাহ। ওটা তো কথার কথায় মুখে নিয়েছি। আপনি আমার কত বড় আপনাকে নাম ধরে ডাকবে? আমার দ্বারা সম্ভব না। আমি আপনাকে আমি তাহমিদ ভাই বলেই ডাকবো।’
তাহমিদ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,
‘কি বলছিস? ভবিষ্যতে আমার বাচ্চাকাচ্চা তো কনফিউজড হয়ে যাবে, বাবা ডাকবে নাকি মামা। পরে তো বাবা ডাকার বদলে বাবা আর মামা মিক্স করে ডাকবে।’
তাহমিদ পুনশ্চ নাযীফাহ কে লজ্জা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বুঝতেই নাযীফাহ প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলল,
‘আপনি নূরকে এভাবে না বললেও পারতেন।মেয়েটা কিভাবে কাঁদছিলো।’
চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো তাহমিদের।
‘কি করা উচিত ছিলো,আদর? ওর তো কপাল ভালো ছেলে হলে গাল দুইটা আস্তো থাকতো না।’
‘ফুচকা খাবো।’
‘ফুচকা খাওয়ার অফার সীমিত সময়ের জন্য ছিলো। অফারের মেয়াদ শেষ।’
খুনসুটিতে মত্ত হয়ে একসাথে পা ফেলে চলতে লাগলো দু’জন। এইতো একসাথে জীবনের পথচলা শুরু।
____________________________________________
‘নাযীফাহ’র ঢাকা যাওয়ার পরে নাযীফাহ’র মতিগতি খেয়াল করেছো? কতটা পরিবর্তন ওর মাঝে। তাহমিদ পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালে লজ্জায় মিইয়ে যায় সে। কত কৌশলে তাহমিদের পছন্দ অপছন্দের সবকিছুর কথা জেনে নিলো আমার কাছ থেকে।’
মাত্রই কাপে চুমুক দিয়েছিলো ফাহমিদা বেগম। ননদের কথায় মুচকি হাসলো সে। মেয়ের পরিবর্তন তিনিও লক্ষ্য করেছেন।হুট করেই যেন উনার মেয়ে বড় হয়ে গেলো। ওয়াহিদা পুনশ্চ বলল,
‘দু’টোকে এবার তাহলে এক করা উচিৎ। কি বলিস ভাই।’
জামান সাহেব ফোঁড়ন কে’টে বলেন,
‘তোমার ছেলেকে মানাতে পারবে? তাহমিদ তো নাযীফাহ’র প্রাপ্ত বয়স হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এসব করতে গেলে তোমার ছেলে কিন্তু রেগে যাবে ওয়াহিদা। পরে হিতে বিপরীত হবে।’
‘জামান ঠিক বলেছে ওয়াহিদা।’ খালেদ মোশাররফের কথায় ওয়াহিদা মুচকি হেসে বলেন,
‘দেখো না আমি কি করি।’
____________________________________________
কলিংবেল চাপতেই গোমড়া মুখে দরজা খুললেন আমেনা বেগম। তাহমিদ হেসে কিছু একটা বলতেই আমেনা বেগম বলেন,
‘আর এসেছিস কেন বাসায়? রাস্তায় থেকে গেলেই পারতি। বুড়ো একটা মানুষ যে বাসায় একা সে নজর তো কারো নেই।নাতি নাতনিদের সাথে থাকার লোভে এখানে এলাম।আর কেউ আমাকে সময়ই দেয় না।’
দাদির অভিমানী কথা শুনে তাহমিদ মৃদুস্বরে হেসে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
‘আজ অনিচ্ছাকৃত দেরি হয়ে গেছে দাদি আর হবে না।’
নাযীফাহ আমেনা বেগমের একটা হাত ধরে বলল,
‘তুমি কিন্তু তোমার আর দাদুর প্রেম কাহিনীতে আঁটকে আছো।আর কিন্তু বলোনি। আজ তোমার কোলে মাথা আবার তোমাদের গল্প শুনবো।’
আমেনা বেগম কপাল কুঁচকে বলেন,
‘এক গল্প মানুষ কয়বার শুনে।’
‘কিছু কিছু গল্প কালজয়ী হয় না কখনো।সর্বদা সবসময় নতুন থাকে।’
____________________________________________
পরদিন কোচিং-এ আসতেই সবাই ঘিরে ধরলো নাযীফাহ কে। একেকজনের একেক রকম কথায় যেমন ভালো লাগছে তেমনি লজ্জাও লাগছে।
‘স্যার তোকে খুব ভালোবাসে তাই না রে?’
‘ইশ! কালকে স্যার কি কিউট করে তোকে প্রপোজ করলো।’
‘আমাদের গম্ভীর স্যার এতো রোমান্টিক নিজ চোখে না দেখলে জীবনেও বিশ্বাস করতাম না।’
‘বাসায় মনে তোকে আরো কেয়ার করে ভালোবাসে তাই না?’
এমন আরো অনেক কথা নাযীফাহ’র শ্রবনগ্রন্থিতে পৌঁছাতেই লজ্জা আর ত্রপায় মাথা অধঃকৃত করে ফেলে সে। জান্নাত খোঁচা দিয়ে বলল,
‘কি রে নাযু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস? তোকে লজ্জা পেলে একেবারে নতুন বউয়ের মতো লাগে।’
আরো মিইয়ে গেলো নাযীফাহ। সবাই এটাসেটা বললেও শুধু একজন কর্ণারে চুপচাপ বসে রইলো।
ক্লাস টাইম শুরু হতেই যে যার জায়গায় গিয়ে বসল। তাহমিদ প্রবেশ করলো শ্রেণিকক্ষে। আজকের টপিক বোর্ডে লিখে পশ্চাতে ফিরতেই দেখলো নূর দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদ স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোনো সমস্যা? কালকের টপিক বুঝো নি? আবার বুঝাই দিতে হবে?’
নিরুত্তর সে।হঠাৎই সে ফোঁপাতে শুরু করে। তাহমিদ পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
‘শরীর খারাপ লাগছে?’
মাথা তুলে তাকায় নূর। চক্ষুূদ্বয়ে পানি টইটম্বুর।
‘আমাকে মাফ করে দিন স্যার। আমাকে বদদোয়া দিবেন না। আমি জীবনে কিছু একটা করতে চাই স্যার। আমি আমার বাবার ভরসার হাত হতে চাই। আপনি আমার প্রতি নারাজ হলে আমি জীবনে সফল হবো না। আমার মা নেই স্যার।ভাইকে জন্ম দেওয়ার সময় মা-রা গেছে। ভাইও স্পেশাল চাইল্ড। আমাদের কথা চিন্তা করে বাবা আর বিয়ে করেনি। আমার কাছে মনে হতো কেউ যদি রোজ পড়া শিখে আসে তাহলে সে আমার থেকে এগিয়ে যাবে। আর আমি পিছিয়ে যাবো। সেজন্য আমি পিছু লাগতাম। আর এমন করবো না স্যার। হিংসা কাজ করে আমার বেশি। হিংসা আমাকে দাবিয়ে রেখেছে। আমার বাবার অনেক আশা স্যার আমাকে নিয়ে।’
ক্লাসের সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল তাহমিদ। মার্কার পেনেট মুখটা আঁটকে বলল,
‘কারো সফলতা কেউ নিয়ে যায় না। কারো রিজিকও কেউ নিতে পারেনা। আমাদের ভাগ্য আগে থেকেই ফিক্সড। তুমি আমার ছোট বোনের মতো তোমাকে বদদোয়া দিবো কেন? মানুষ ভুল করে না? তুমি অনুতপ্ত হয়েছো এটাই অনেক।’
নূর চোখের পানি মুছে ক্লাসের সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
‘যাদের যাদের মনে হবে আমি তাদের সাথে অন্যায় করেছি আমাকে মাফ করে দিও। আমার বাবা আর ভাইয়ের জন্য দোয়া করো।’
তাহমিদও সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘এই বিষয়টা এখানেই ক্লোজ। এসব বলে আর ওকে কেউ পিঞ্চ মে’রে কথা বলবে না। এখন সবাই ক্লাসে মনযোগ দাও।’
সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছে নাযীফাহ। জান্নাতের সাথে কথা বলার ফাঁকে মনে হলো সে কাউকে দেখেছে কিন্তু ঠাহর করতে পারেনি। তার কিছুক্ষন পরে একজন মহিলা পুরো শরীর বোরকায় ঢেকে নাযীফাহদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। নাযীফাহ’র বেশ পরিচিত মনে হলেও পাত্তা দিলো না। কারণ এখানে তার পরিচিত কেউ নেই। মহিলাটি নাযীফাহ’র মুখোমুখি দাঁড়াতেই আপাদমস্তক চোখ বুলালো সে। অতঃপর নাযীফাহ,,
#চলবে
বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।