#হৃদয়াবেগ
#পর্ব_২৮
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
নাযীফাহ যখন আকুলতাপূর্ন দৃষ্টিতে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো, মাথা উঁচিয়ে তাহমিদও তাকিয়ে ছিলো। তবে তার চাহনিতে ছিলো রাজ্যের বিরক্তি। যেন ভুল করে সে উপরের দিকে তাকিয়েছে। তাহমিদের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে নাযীফাহ’র মুখ পাংশুটে আকার ধারণ করে। অভিমানের মাত্রাটা যেন তরতর করে আরো তীব্র হলো। তাহমিদের যাওয়ার পানে চক্ষু স্থির রেখে হাত ভাঁজ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নাযীফাহ নড়লো না একচুলও। সকালের মিষ্টি রোদ ধীরে ধীরে প্রখর, তিগ্ম রূপ ধারণ করলো।সূর্য উষ্ণতা ছড়াচ্ছে ধারালো ভাবে অসহ্য তাপমাত্রায়ও নাযীফাহ দাঁড়িয়ে রইলো অচলভাবে।
নাযীফাহ সম্বিত ফিরে পেলো ওয়াহিদার ডাকে। এইবার যেন তেজি সূর্যের উষ্ণ তাপ গাত্রে এসে বিঁধছে তীর্যকভাবে। ওয়াহিদা এসেই নাযীফাহকে গোসলের জন্য তাগাদা দিতে লাগলেন। কারন দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে।
সেদিন রাতেই গাঁ কাঁপিয়ে জ্বর এলো নাযীফাহ। জ্বরের মাত্রা এতোটাই বেশি ছিলো যে সারারাত উল্টো পাল্টা বকেছে সে। জ্বরের রেশ রয়ে গিয়েছিল দুইদিন। নাযীফাহ’র ধারণা ছিলো এবার হয়তো তাহমিদ তার সাথে কথা বলবে।কিন্তু তার ভাবনা মিথ্যে প্রমাণ করে তাহমিদ সবার সাথে কথা বললেও তার সাথে কথা বলেনি। রাগে অভিমানে ওয়াশরুমে গিয়ে চাপা কান্না করেছে সে। মনে মনে পণ করলো আর তাহমিদের সাথে আর কথা বলবে না। কিন্তু অবুঝ, পাগলাটে মন কি মানে? তাহমিদের গম্ভীর গলা শুনে যে একটু শান্ত হতে চায়। আচ্ছা তাহমিদেরও কি এমন অনুভব হয় নাযীফাহ’র জন্য? নিশ্চয়ই হয় না। নাযীফাহকে মিস করলে কথা না বলে থাকতে পারতো নাকি?তাহমিদের এই বিরহ সইতে না পেরে নাযীফাহ লাজ শরমের মাথা খে’য়ে একদিন ওয়াহিদা কে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
‘ফুপি তোমার ছেলে কি আমার কথা একবারও জিজ্ঞেস করে না? নিশ্চয়ই ওখানে গিয়ে কোনো চাটগাঁইয়া মেয়ের সন্ধান পেয়ে গেছে। তাই আমার সাথে আর কথা বলে না।’
ওয়াহিদা উষ্ণ শ্বাস ফেলে বললেন,
‘তোদের কি ঝগড়া হয়েছে? তুই কেমন আগের থেকে মনমরা হয়ে গেছিস।’
নাযীফাহ ভাঙা গলায় বলল,
‘কিছুই হয়নি। তবে তোমার ছেলে খুব খারাপ ফুপি খুব খারাপ।’
____________________________________________
নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাযীফাহ। পুরোদমে চলছে কোচিং। শ্বাস ফেলারও যেন সুযোগ নেই। সারাদিন টেস্ট পেপারের কুয়েশ্চন সলভ করতে করতে দিন পাড় হয়ে যায়। দিনের আলো মিলিয়ে গিয়ে যে কখন আঁধারি ঘনীভূতও হয় টেরই পাওয়া যায় না।
চুলগুলো কাঠি দিয়ে আঁটকে পড়তে বসেছে নাযীফাহ। একটা প্রশ্ন সমাধান করতে না পেরে ধারাঁলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে প্রশ্নের দিকে। আর একমনে কলম কামড়াচ্ছে। ওয়াহিদা রুমে এলেন। মোবাইল ফোন নাযীফাহ’র সামনে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘নে ধর কথা বল।’
বাবার কল মনে করে হাসি মুখে মোবাইল নিলো।
‘হ্যালো বা,,,,’৷ বলার আগেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলো,
‘আমি উত্তপ্ত মরুভূমি।
আর তুমি?
তুমি এক পশলা বৃষ্টি।
প্রণয়নীর স্নিগ্ধ হাসি,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।’
বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই কন্ঠ স্বর শ্রবণেন্দ্রিয় হতেই নাযীফাহ’র শিরদাঁড়া বেয়ে তরল স্রোত বইতে লাগলো। ঠিক কতদিন পরে এই আধান শুনতে পেলো? হিসেব করলো না নাযীফাহ। হিসেব করলেই যন্ত্রণা বাড়বে। এতোদিন বক্ষপিঞ্জরের বয়ে চলা ঝড়টা যেন এক লহমায় শান্ত হয়ে গেলো।যেন ঝড়ের তান্ডব এখানে কখনো হয়নি। অন্তঃস্থলে পুষে রাখা রাগ আর অভিমান যেন বরফের ন্যায় গলতে শুরু করলো। আনন্দবিহ্বল হয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো নাযীফাহ। অন্তর্দেশে বর্ষিত হচ্ছে প্রশান্তির বর্ষন। আর বর্ষনের প্রতি ফোঁটায় আছে প্রেম।
‘এক সেকেন্ড আধা সেকেন্ড করে রোজ সময় জমিয়েছেন বুঝি? সেই সেকেন্ড যখন মিনিটে পরিণত হলো তখন মনে পড়লো নাযীফাহ’র কথা?’
প্রণয়িনীর অভিমানী গলা শুনে অট্ট হাসলো তাহমিদ।
‘ওপাশের অভিমানের মাত্রাটা কি খুব বেশি? অভিমান কি একেবারে গভীরে চলে গেছে?’
চুপ রইলো নাযীফাহ। কথার ঝুড়ি যেন শূন্য তার। উদোম গায়ে তাহমিদ। পরনে শুধু টাউজার। ঘন্টা খানিক আগেই অফিস থেকে এলো। ক্লান্তি নিবারনের জন্য কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।
‘আজ মরুভূমির উত্তপ্ততা বেশি ছিলো? হঠাৎ করে বৃষ্টি সন্ধান যে? আমি তো ভেবেছি মরুভূমির আর কখনো বৃষ্টির প্রয়োজন হবে না।’
নৈঃশব্দ্যে এক গাল হাসলো তাহমিদ।
‘প্রণয়িনীর বিরহে মরুভূমির উত্তপ্ততা দিনকে দিন বাড়ছে। যতক্ষণ এপাশের মানব তার প্রণয়ীকে গভীর আলিঙ্গন না করবে ততক্ষণ এই উত্তপ্ততা বাড়বে বৈ কমবে না।
অতঃপর দুজনে চুপ। শুধু শোনা যাচ্ছে দুজনের নিঃশ্বাস ফেলার আধান। ভারী শ্বাস যেন ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছে। আচমকা নাযীফাহ ফুপাতে শুরু করলো। তাহমিদ কফির কাপটা রেখে তটস্থ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘তুই কি কাঁদছিস?’
নাযীফাহ চাপা আর্তনাদ করে বলল,
‘আপনি খুব খারাপ তাহমিদ ভাই খুব খারাপ। আপনি মানুষের মন বুঝেন না। আপনি পাষাণ। আপনি এপাশের বিরহের কান্না শুনতে চাননি। কেউ মরিয়া হয়ে আছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য সেটা বুঝেও বুঝতে চাননি। আপনার কাছে আপনার রাগটা বড়। কেউ যে বিরহ যন্ত্রণায় তিল তিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছিল আপনি তা দেখতে চাননি।’
‘কাঁদবি না একদম। তোর কান্না আমার বুকে জ্বলন হয়। অসহ্য যন্ত্রণা হয় হৃদগহ্বরে। চট্টগ্রামে এসে বুঝতেছি প্রিয়জন থেকে দূরে থাকা ঠিক কতটা যন্ত্রণা।’
‘তাহলে এতোদিন যে কাঁদিয়েছেন?’
‘ভালোবাসার গভীরতা মাপার ব্যর্থ চেষ্টা। বিয়োগ ব্যথায় ওপাশের মানুষটা ঠিক কতটা কাতরায় সেটাই দেখতে চাইলাম। ভালো না বাসলে কারো শূন্যতায় কেউ কাঁদে না। হাহাকার করে না মানুষটার জন্য। মরিয়া হয়ে থাকেনা একটু দেখার জন্য বা একটু যোগাযোগের জন্য।’
‘ভালোবাসার গভীরতা মাপা শেষ হলো?’
‘না, শেষ করতে পারেনি।’
‘কেন কেন?’
‘কারণ, এটা খুব গভীরে চলে গেছে। প্রণয়নীর ভালোবাসা অতল স্পর্শ করেছে। সেই পর্যন্ত গেলে নিশ্চিত মৃ’ত্যু।’
‘আমি দুটো দিন জ্বরে কাতরেছি। ভাট বকেছি। কিন্তু আপনি একবারও আমার সাথে কথা বলেননি।’
‘আচ্ছা আমি কি অজ্ঞান মানুষ কে ডেকে বলবো, যে ভাই আপনি কি অজ্ঞান হয়ে গেছেন? নাকি ঘুমন্ত মানুষকে বলবো আপনি কি ঘুমোচ্ছেন? আমি সারাক্ষণই খোঁজ নিয়েছি। এই যে আমি এতোদিন এতো বড় মুখ করে বলতাম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি হেনতেন।বিশ্বাস কর তোর থেকে সাময়িক দূরত্বে আসার পর বুঝতে পারলাম আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য আমার তোকে প্রয়োজন। এনার্জি রিলোডেড করার জন্য তোমার শরীরের স্পর্শ প্রয়োজন। এই তো সময় হয়ে এসেছে এক বালিশে মাথা রাখার। আচ্ছা, কেউ কি প্রস্তুত একজন পাগলাটে প্রেমিকের পাগলামি সহ্য করার জন্য? কেউ কি জানে তাকে একবার আলিঙ্গন করার জন্য কেউ একজন উতলা হয়ে আছে। তাকে কাছে পাওয়ার জন্য ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে একটা একটা করে দিন গুনছে। সে আগেভাগে যেন প্রস্ততি নেয় একজন অপেক্ষারত, অধৈর্য্য, পাগল প্রেমিকের প্রনয়াসক্ত স্পর্শ নেওয়ার জন্য। প্রমিক পুরুষ যে উদ্রিত,উন্মত্ত, আবেগকম্পিত হয়ে আছে প্রেয়সীকে গভীরভাবে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য।’
তাহমিদের এমন প্রলয়ঙ্কারী উক্তি শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো নাযীফাহ। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার।
‘তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?’
দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে সে। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের করতে পারছে না সে। ইশ! মানুষ এতো দুর্বিনীত আর ঠোঁট কাটা কেন? হুট করে মন খারাপ হয়ে গেলো নাযীফাহ’র।
‘আপনি সেদিন আমার থেকে বিদায় নেননি তাহমিদ ভাই। আমি আগ্রহে বসে ছিলাম আপনি আসবেন। আমার সাথে একটু কথা বলবেন।’
তাহমিদ নির্লিপ্ত, উদাসীন গলায় বলল,
‘ইচ্ছে করেই বলেনি। তোর সামনে গেলে হয়তো আর চট্টগ্রাম আসা হতো না। বাসা থেকে বের হয়ে যখন মাথা তুলে উপরে চাইলাম তখন আমার চক্ষু শীতল হলো। প্রফুল্ল হলো মন। কিছুক্ষন আগেও তোর কাছে যেতে ভয় পেয়েছি কিন্তু সেসময় তোকে দেখে পূর্ণপরিতুষ্ট হয়েছিলো অন্তর। তোর বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের নিচে হাত দে।’
কপাল কুঁচকে নাযীফাহ বলল,
‘কেন?’
‘হাত দিয়ে দেখ না।’
‘এখানে তো একটা চাবি।’
‘আমার রুমে যা। যদি রুমে বাবা অথবা মা থাকে তো মায়ের কাছে দিবি মোবাইল।’
তাহমিদের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো নাযীফাহ। গিয়ে দেখল কেউ নেই। হয়তো জামান সাহেব নিচে গেছে। ওয়াহিদা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে। আমেনা বেগম নিশ্চয়ই নিতুদের বাসায়।
‘কেউ নেই।’
‘তাহলে দরজা আঁটকে দে।’
দরজা আঁটকানোর কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়ে নাযীফাহ’র।
‘দরজা কেন আটকাবো?’
‘তোকে যা বলছি তাই কর।’
অগত্যা বাধ্য হয়ে নাযীফাহ দরজা বন্ধ করলো।
‘চাবি দিয়ে আমার ড্রয়ারের লক খোল।’
ড্রয়ার খোলে নাযীফাহ চোখমুখ চকচক করে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে হালকা চিৎকার করে বলল,
‘এত্তগুলা চুড়ি আর কালো শাড়ি? কবে কিনেছন? আমার সবগুলো তাই না?’
‘ হুম সব তোর। কাঠগোলাপ গুলো শুকিয়ে গেছে তাই না?’
নাযীফাহ মন খারাপ করে বলল,
‘হুম।’
‘আচ্ছা ঢাকায় এলে আবার কিনে দিবো। দেখ একটা বিছা আছে। এই বিছা পরিয়ে দেওয়া এবং খোলার দায়িত্ব শুধু আমার। ওটা তোর তবে হাত লাগানোর অধিকার নেই। এই বিছা যতবার তোর কটিতে শোভা পাবে ঠিক ততবারই আমার ঠোঁট তোর কটি,,,,। লজ্জা পাচ্ছিস?’
একেবারে নীরব নাযীফাহ। তাহমিদের অপরিমিত কথা কর্ণগোচর হতেই লজ্জা মাত্রা যেন তরতর করে বাড়ছে।
‘এগুলো হলো একজন প্রেমিকের দেওয়া উপহার। এখন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কিছু উপঢৌকন দিবে।’
নাযীফাহ চোখ বড় বড় করে বলল,
‘আরো উপহার?’
‘হুম, এগুলোর নিচে দেখ একটা বক্স আছে। খোলে দেখ পছন্দ হয় কিনা।’
বক্স খোলার পরে নাযীফাহ’র মুখ দিয়ে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো, ‘আসতাগফিরুল্লাহ্।’
মিটমিট করে হাসছে তাহমিদ।
‘আপনি দিন দিন অসভ্য আর বজ্জাত হয়ে যাচ্ছেন। এসব কি। ছি!’
‘এরকম একটু আধটু অসভ্য বউয়ের কাছে হতে হয়। এখন বল জিনিসপত্র পছন্দ হয়েছে কিনা? প্রতি মাসে তোকে নতুন নতুন মডেল এনে দিবো। যদি এসব আমি সযত্নে নিজের হাতে,,,,,।’
‘এই আপনি চুপ করবেন? যত্তসব লাগামছাড়া কথাবার্তা।’
‘আচ্ছা ভুল কই বললাম। তুই আর আমি যখন একসাথে থাকবো তখন তো,,।’
নাযীফাহ রাগান্বিত স্বরে বলল,
‘আবার?’
‘আচ্ছা তুই কি জান্নাতের নাম্বার আমার মোবাইলে সেভ করিসনি?
‘হুম করেছি।’
‘তাহলে আমি সেদিন পেলামনা কেন?’
‘কি নাম দিয়ে সার্চ করেছেন?
‘জান্নাত লিখে।’
‘শাঁ’ক’চু’ন্নি লিখে সার্চ করলে সবার আগে পেয়ে যেতেন।’
আহাম্মক হয়ে গেলো তাহমিদ।
‘আচ্ছা শুননা, চট্টগ্রামের মেয়েরা কি যে সুন্দর। মনে হয় সারাদিন তাকিয়ে থাকি।’
হুট করে নাযীফাহ কল কেটে দিলো। টুট টুট শব্দে কান থেকে মোবাইল নামিয়ে হাসলো সে।
‘মন খারাপ না করে পড়তে বস গিয়ে। আর কয়েকদিন পরে পরীক্ষা। মনযোগ দিয়ে পড়। তাহমিদ একজনের মায়ায় আঁটকে আছে। এই মায়া কাটানোর সাধ্য না তাহমিদের আছে আর না অন্যকারো। তুই এক নামহীন প্রমত্ততা। তোর উন্মাদনা ঠিক এতটাই গভীর যে সেখান থেকে উঠে আসা আমার পক্ষে সম্ভব না। তেঁতুল পানি খাইয়ে নাকি নে’শা কাটানো হয়। কিন্তু আমি তোর নে’শা কাটাতে চাই না। ‘তুই’ নামক আসক্তিটা যেন আমার শেষদিন পর্যন্ত থাকে। ভালোবাসি একজনকেই। আর তাকেই ভালোবাসতে চাই। মেসেজ পড়ে ডিলিট করে দিস না হলে মা দেখলে লজ্জা পাবি।’
মেসেজ দেখে নাযীফাহ’র রাগ পড়ে অধর কোণে ফুটে উঠলো মৃদু হাসি।
রাতে ঘুমানোর সময় নাযীফাহকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে আমেনা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। চোখে মুখে আজ অন্য রকমের ঔজ্জ্বল্যতা। নাযীফাহ’র চোখ মুখ দেখলে যে কেউ নিমিষেই বলে দিতে পারবে যেন তার অনেক দিনের আশা পূরণ হয়েছে। কপাল কুঁজিত করে আমেনা বেগম বলেন,
‘ঘটনা কি? এই ঘোর অমাবস্যার মাঝে হঠাৎ করে পূর্ণিমার আলো ঝলক দিচ্ছে কেন? আমার নাতি আসবে নাকি?’
‘পূর্ণিমার আলোর জন্য তোমার নাতির আসার প্রয়োজন হয়না গো। সে দূর থেকেও আমাকে ঘায়েল, অভিহত করতে সক্ষম।’
____________________________________________
বাসায় রমরমা পরিবেশ। সবাই এখন ঢাকায় কারণ কাল বাদে পরশু নাযীফাহ’র এইচএসসি পরীক্ষা। সবাই আছে শুধু নেই তাহমিদ। ছুটি নাকি পাবে না সে। সেজন্য মন খারাপও নাযীফাহ’র। মন খারাপ করে বসে থাকলে তো চলবে না পড়তে হবে প্রচুর পড়তে হবে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। নিজের জন্য না হউক অন্তত বাবা মায়ের জন্য করতে হবে।
একঘেয়েমি দূর করার জন্য নাযীফাহ পা বাড়ালো ড্রয়িংরুমের দিকে। ফাহিম খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। নাযীফাহ ফাহিমকে খোঁচা দিয়ে বলল,
‘শুনলাম তুই নাকি প্রেম করিস? তোর প্রেমিকা নাকি তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়?’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফাহিম।
‘ভেবেছিলাম ভাইয়ের শালিকার সাথে প্রেম করবো।কিন্তু সেই কপাল কি আছে? কেন মামাতো বোন বিয়ে করলো এই নিয়ে ভাইয়ের সাথে আমার একদিন মা’রা’মা’রি হবে। মিলিয়ে নিস আমার কথা। আমার হক থেকে আমাকে সে বঞ্চিত করেছে। ভেবেছি মতিঝিল শাপলা চত্বরে আমার মতো অসহায় যুবকদের নিয়ে একটা আ’ন্দো’ল’নে’র ডাক দিবো।এতো অ’ন্যায় এতো অ’বিচার আর মানা যাচ্ছে না।’
নাযীফাহ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘দূরে গিয়া ম’র।’
ফাহিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। নাযীফাহ পুনশ্চ চলে এলো পড়ার জন্য। ঘন্টা খানিক পরে ড্রয়িং রুম থেকে কোলাহলের আওয়াজ এলে পাত্তা দিলো না সে। নিশ্চয়ই ফাহিম পাগলামি করছে। পড়তে পড়তে হঠাৎ অনুভব করলো কেউ তার পিছে এসে দাড়িয়েছে। ফাহিম মনে করে নাযীফাহ বলল,
‘দেখ ফাহিম্মা ভয় দেখাবি না। পড়তে দে আমাকে।’ফাহিমের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিছু ফিরে তাকায় নাযীফাহ। পিছু ফিরে চমকে উঠে সে। নাযীফাহ অনুভব করলো সিক্ত তার আঁখিপল্লব।
#চলবে