#হৃদয়ের_একূল_ওকুল,পর্ব_৯
কাশেম মিয়া বহুক্ষণ যাবত আমার বিছানায় বসে আছে। আচ্ছা একটা বেহাইয়া বেটা । আর কিছু না হোক, নিজের বউয়ের টানে তার ঘরে যেতে পারে। তা না, আমার বিছানায় পা চ্যাগায়ে রঙ্গের আলাপ জোড়ায়েছে। লুৎফা ছিনালী যদি হয় ছয় আঙ্গুল, তাইলে কাশেইম্যার সাইজ হবে চার আঙ্গুল। চার আঙ্গুইল্লার জন্য এখন চুলায় নুডুলস আর লিকার চা বানাই। এর চায়ের কাপে আমি সত্য সত্য ছ্যাপ ফেলে দেব। ছ্যাপ দেয়ার আগে দিবো তিন চামুচ চিনি। ছ্যাপের স্বাদ চিনির স্বাদে কাটাকাটি হয়ে যাবে। বাইট্টা কাশেইম্যা চা খেয়ে বলবে, ‘ আহা, কি এক চা বানাইলেন ভাবী, ফাসটো কেলাস হইসে’। কাপের মধ্যে এক চিপায় যতটুকু সুগন্ধী লেবুর রস হয়, ততটা দিয়ে চিনি দিলাম। এবার ছ্যাপ ফালানোর পালা। আল্লাহর নাম নিয়া গলা পরিষ্কার করে ‘ইয়া আলী’ বলে এক দলা ছ্যাপ দিতে যাবো, ভুইত্তামারা আমার মুখ চেপে ধরলো।
— ছি, ছি মায়মুনা, মেহমান ঘরের আপনজন। তোমার খারাপ লাগলে আমারে বলতা, চা আমি বানাইতাম। তুমি যাও ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকো।
–বাইট্টা বইসা ঠ্যাং নাচায়, তার পাশে গিয়া শুইতাম? ওরে ঘরের থেকা বাহির করেন। তাদের কি স্বামী স্ত্রীয়ে মিল মোহাব্বত নাই? এত রাত হইছে, হে আপনের ঘরে কি করে।
আবদুল্লাহ মিয়া কুতকুত করে তাকিয়ে আছে। সাদা আলোতে তাকে লাগছে ধলা ইচার মতো। ধলা ধলা ইচা মাছ মরলে পরে চোখ উল্টায়ে ভেটকি দিয়ে থাকে। আবদুল্লাহ মিয়া এবার আমার মুখের কাছে গলা নামায় এনে বললো,
-আমাদের মধ্যে ও তো মিল মোহাব্বত নাই মুনা। তুমি আমাকে দেখা দূরে থাক সহ্য করতে পারো না। তাইলে, লুৎফাকে ছিনালী বললা কেনো। লুৎফা আমার সাথে হেসে হেসে কথা বললে, তোমার ভেতরে কোথায় আগুন জ্বলে মায়মুনা বেগম?
আবদুল্লাহ মিয়ার প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা নাই। দেয়ার ক্ষমতাও নাই। চা বানানো চুলায় যাক। এই ধলা চিংড়ির কুইচ্যা মারা প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে উল্টা পেচগী লেগে যাবে। কোনমতে পাকের ঘর থেকে দৌড়ায়ে বসার ঘরে আসলাম। কাশেম মিয়া দেখি এখানে লুঙ্গী গুটায় বসে আছে। ব্যাটার কালো কালো কাউয়ার ঠ্যাংয়ের মতো পা দুইটা দেখা যাচ্ছে। দাদী বলতো, ‘বন ও কালা শূয়র ও কালা,আগে পিছে সব কালা কালা।’ এদের ঘরের পোলাপানের মধ্যে মাইয়া ছেলে কাশেম মিয়ার মতো হইলে সারছে কাম। আর পোলার গুষ্টি লুৎফা বৈতালনীর মতো হইলে কাম সারব ডাবল। পোলাদের সোনার পালঙ্কে কইরা বিবাহ করতে নিয়া যাবে, আর কইন্যাদের ভাঙ্গা ঠেউটিন। দূরো মাইমুনা, এক বিবাহ করে তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। যাই দেখিস, তাতেই বিবাহ আইনা ঢুকাস।
— আপনেরে যানি কই দেখছি ভাবী। ফেস কাটিং খুব চেনা চেনা লাগে। আপনি আমার কোন ইমু ফেরেন্ড নাকি।
— ইমু আবার কোন বেডা। এক বেডাকে বিবাহ কইরা কূল কিনারা পাই না। দশ বেডা টোকাইতাম কন? আপনে তো মিয়া ভালা মানুষ না।
—আহা ভাবী রাগ করেন কেন। আপনের ফোন আছে, নম্বরটা দেন। আমি সেইভ করে রাইখা দেই। আপদে, বিপদে,যে কোন কাজে এই পাশের রুমে আমারে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা পাইবেন।
— আমার জামাই কি লুলা কানা? আমার দরকারে তারে চব্বিশ ঘন্টায় আটচল্লিশ বার ডাকবো। দরকারে তার কোলে বইসা থাকবো, আপনারে ডাকা লাগবে কেন।
চায়ের ট্রে হাতে ভুইত্তা রুমে ঢুকে বেয়াক্কল আলী হয়ে আছে। তার খাস জীন নফ্রালী থাকলে এতক্ষণে আমাকে বাইধা কাছে ধারে নদীর মধ্যে ভাসায় দিয়া আসতো। আবদুল্লাহ মনে হয় আগের কোন কথা শোনে নাই। পরেরে কথা শুনতে মিঠা, খাইতে গেলে তিতার তিতা। আমার পরের কথা গুলা সব আবদুল্লাহ শুনছে। শুনুক গিয়া, তাতে আমার কি। আমি ঘরে ঘুমাইতে গেলাম। আজকে পূর্ণিমা। পুরা চাঁন তার আলো নিয়া কানতে বসছে। ভরা পূর্ণিমার রাতে, চান আসলে তার মনের মানুষরে বাত্তি জ্বালায় কানতে কানতে খোঁজে। জোছনার আলো হইলো চান্দের কান্না, চুয়ায় চুয়ায় পরে। ঝলমল করে দুঃখের নদী, সেই নদীর টানে যদি একবার তার মনের মানুষ পা ভিজাইতে আসে! তাই চারদিক রূপালী কইরা, চান তার চান্দনীর জন্য অপেক্ষা করে। আমার ভরা পূর্ণিমায় একটা আপন মানুষের সাথে মাঝ দরিয়ায় নৌকায় বইসা জোছনা দেখতে ইচ্ছা করে।
— কাশেম ভাই চলে গেছে। তুমি সবার সাথে কথা বলা শিখবা মুনা। এটা একদম গ্রাম না,যেখানে তুমি স্বাধীন ছিলা। এইটা একটা কাজের জায়গা। আর এখানে সবাই কর্মচারী। আমার এই রুমে বিয়ের আগে আরো তিন জন লোক থাকতো। কাশেম ভাই বউ নিয়া আমাদের পাহারা দিতো। বিয়ের খবর জানল যেদিন, ভাইয়ের খুশী ধরে না। পরেপরে,ওরা ছোটখাটো কিছু জিনিস যা ছিলো, নিয়া অন্য মেসে উঠছে।
— আপনাদের পাহারা দেয়া লগব কেন। বুইড়া ধামড়া লোক সব।
–সবাই তোমার স্বামীর মতো সাফ দিলের না, মুনা। পরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করবা, এমন স্বামী পাইছো।
–আপনারে আমার কিছু কথা কওয়ার আছে। আপনে আমারে যে ইজ্জত দিয়া এখনো রাখছেন, আমি তাতেই বুঝি আপনে মানুষ ভালা।
আবদুল্লাহ মিয়া পাশ ফিরে নাক ডাকা শুরু করেছে। থাক শেষের কথা গুলা বলার জন্য অনেক সময় পরে আছে। ওগুলা না শোনাই ভালো। লুৎফা ছিনালনী বলে গেছে, আগামীকাল সক্কাল সক্কাল ওয়াসার খাওয়ার পানির গাড়ি আসবে। আগের দিনের ক্যান জমা দিয়া পরের দিন নতুন ক্যান পাওয়া যাবে। ঘুমানোর আগে আব্বা আম্মার কথা খুব মনে পরছে। আমার একটা ভুল, জীবনটারে কই থেকা কই আইনা ফেললো। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে খালি পানির ক্যান নিয়ে নিচে গেলাম। এক বিশাল লাইনের মধ্যে দুইশত লোক অপেক্ষায় আছে। বুড়া-ছুড়া, আন্ডা- বাচ্চা- গ্যাদা-গ্যাদী, সব হাতে পানির ক্যান নিয়া দাঁড়ায় আছে। লাইনের শেষে দাঁড়াইছি। পানির গাড়ির একটা লোক পাশ দিয়া হাইটা যাচ্ছে। সামনের একটা গোল পেটের খাসী খাসী চেহারার লোক, তার হাতে পঞ্চাশ টাক গুঁজে দিলো। সাথে সাথে খাসীটারে নিয়া সামনে গিয়ে পানি ভরে দিলো। মেজাজটা চরমের উপরে গরম রকম খারাপ লাগতেছে। পানির গাড়ির ছেলেটারে ডেকে নিয়া দুনিয়ার ঝগড়া ঝাটি বান্দায় দিলাম। বেশীর ভাগ লোক আমার পক্ষে। নিজেরে খুব ইম্পর্টেন্ট লাগতেছে। ওখানের একটা পাকনা শন মার্কা চুলের বুড়িরে দেখি সবাই মানে। সেই বুড়ি ঝগড়া থামায় লোকটারে যেতে বললো।
— নানী ও নানী, তোমার কি নাতিন জামাই লাগে? আমাদেরে পানি না দিয়া ঐ খাসীরে পানি দিলো আগে।
–তুই আমার নাতিন। টাকা দিলে তোরেও আগে পানি দিব। আমার জন্য টাকা দিয়া দুই ক্যান পানি লয়া আয় নাতিন। তোর খসমরে কইস, যাওনের কালে পান খাইয়া যাইতে।
–খসমের ঘরের খসম আমার, কি এত ত্বরা লাগছে রে। ওর পানি না নিলাম। চাপকল লাগায় পানি লাফায় লাফায় চাইপ্পা খামুনে। তোমারে এক ফোঁটা দিতাম না।
–জায়গাডা তোর বাপের নিহি, চাপকল লাগায় ফালায় ফালায় পানি লইবি। হেই দিন আর নাই গো নাতিন, বয়া বয়া মিডাই খাইতিন।
বুড়িকে একটা জুতসই উত্তর দেব। খাসীটা যাবার সময় আমাকে একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। এর পর লাইনে আসার আগে কাঁটা চামুচ নিয়ে আসতে হবে। খাসীর চোখ উঠায় ফেলব, হুমকী দেয়া দরকার। আবদুল্লাহ দেখি দুই ক্যান পানি একলা নিয়ে হাজির। তার কাছে বিচার দিব। সে উল্টা নানী বুড়ির হাতে একটা ঔষধের পাতা দিলো। ‘দিলদরিয়া সুলাইমান’ একখান জোটাইছে আল্লাহয় কপালে। যাক গিয়ে, আমার কি, টেকা তার পয়সা তার। আমার সব ঠিক থাকলেই হয়। পাশ দিয়ে কতগুলো মেয়ে কলেজের জামা পরে যাচ্ছে। ওদের দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি যদি ফেল না করতাম, আব্বা আমাকে বিয়ে দিতো না, এই কুত্তা বিলাইয়ের লাইনে দাঁড়ায় বুড়ি খান্ডারনীর সাথে ঝগড়া করতে হইতো না। এ রকম সাজগোজ করে পরিপাটি হয়ে কলেজ যেতাম সুন্দর একটা ছেলের সাথে প্রেম করতাম। বিকাল বিকাল রিক্সা দিয়া ঘুরতাম। টাউন হলে গিয়ে সিনেমা দেখতাম। আব্বার হাতে ধরা পরলে মাইর খাইতাম। হাত কাইটা তার নাম লিখতাম। আম্মার শাড়ি পইরা, লিবিস্টিক লাগায়ে প্রেমিকের সাথে ছবি তুলতাম। তা আর হইলো কই। এই খাটাইস এর ঘরের খাটাইস আবদুল্লাহ মাঝখান থোকা আইসা সব প্লানে পানি ঢাইলা দিলো। সব দোষ এউ ভুইত্তামারা শয়তানটার। আমার জীবন, যৌবন, আশা, ভরসা শ্যাষ, সব শ্যাষ, দি এন্ড।
— বাসায় চলো। গলির মোড়ে হোটেল আছে, চিনা নিবা। সকাল সকাল উঠে রুটি ভাজি করার দরকার নাই। আমি খেয়ে তোমারটা রতনরে দিয়া পাঠায় দেব। ওর কাছ থেকে নিয়া নিবা।
–রতন কি হোটেল ওয়ালী? দুনিয়ার সব বেডিয়াত আপনের কাছে আম্মা লাগে। সবার সুখে দুঃখে আপনে ফিরিশতা, ডালিম কুমার।
–ফেরেশতার নাম ডালিম কুমার এডা কে বলছে! দরজা খোলো, হাতের থেকা একটা ক্যান নিতে পারতা তো।
— আমি না নিলাম। ঝগড়াইট্টা বুড়িরে ডাকেন। হে তুইলা দিক।
–আব্বায় একটা আস্ত পাগল ছাগল জোটাইসে কপালে। মরার কপালে যে আর কত বাংলা সিনেমা দেখব তোমার।
কি! আমি বাংলা সিনেমা… বলে শেষ করতে পারলাম না। নিচের ফ্লাটের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘুরে দেখি, খাসীটা দাঁড়ানো। খাসীর হাতে একটা গোলাপ ফুল। নীচ থেকে এসে খাসীটা পড়েছে একটা লাল ছোট চাপানো ট্রাউজার, উপরে স্যান্ডো গেঞ্জি। তার ঠিক ভুড়ি বরাবর একটা গোল ছিদ্র। খাসী গেঞ্জী দুই পাশ টানতে টানতে আমাকে উপদেশ দিলো,
–আপুমনি, লক্ষী মনি
করে না আর রাগ
রাগ করলে নিজের ক্ষতি…. এ টুকু বলার পর ওরে আর আইতে দিলাম না। — খাসী, এবার তুই ভাগ, ভাগ শয়তান ভাগ, তোর জুলুমের দিন শ্যাষ, এলা ভাগ তুই ভাগ।
খাসী ডানে বামে মাথা নাড়ায় বললো,– আল্লাহ আপু, আপনি কি আমাকে খাসী বুলাইছেন?
–এখানে আপনে ছাড়া আর কেউ খাসী হওয়ার যোগ্যতা রাখে? জে আপনারেই বলছি। আর একদিন যদি দেখি, ফুল সহ উপরে আসছেন। তো এই ফুল দিয়া বাইড়ায়া আপনের নবাব আলিবর্দী খানের ভুত নামায় দিমু। ব্যাডা হইছে পুরুষ লোক, কথা কয় হিজরা।
–আহা ওনারে তাড়ালা কেন। কবি মানুষ ভাবে সাবে আলাদা। শুনছি, বাবার নাকি চিনির ব্যবসা আছে। প্রতি মাসে ওনার আম্মা আমাদের সবার জন্য এক কেজি করে চিনি নিয়ে আসে। গরুর গোস্ত দিয়ে এক ড্যাগ খিচুড়ী রান্না করে সবাইকে দেয়। সন্ধ্যার সময় ছেলেকে জড়ায় ধরে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নেয়।
–এ মাসের চিনি পাইছেন? কয় কেজি বেশী রাইখা দিবেন। বেইচা কটকটি খাবো। ফিরি ফিরি জিনিষের মজা আলাদা। আপনেরে দিয়ে হবে না। এরপর খাসীর আম্মা আসলে, আমি মহব্বত করে নিবো।
আবদুল্লাহ মিয়া হাসতে হাসতে দরজা বন্ধ করে অফিস গেলো। বাসায় রান্না বাটির ঝামেলা নাই। দুটা প্রাণী কত খাবে। ঘর দুয়ার অল্প। পরিষ্কার করে চারকোনা বাক্সো ছেড়ে রঙিন দুনিয়া দেখি। নায়ক নায়িকা নাচে গায়। হায়রে মায়মুনা, তোর উনিশ বছরের জীবনটা আন্ধা হয়া গেলো। কোকিল ডাকতে দরজা খুল্লাম। পনর -ষোল বছরের একটা ছেলে নাস্তার পোটলা নিয়ে আসছে। বুঝলাম, এটাই রতন।
–কি রতন মিয়া, খবর ভালো? খানাপিনা করসো? তোমাদের সাহেব যা যা খাইসে, তা তা আমার জন্য পাঠাইলো, নাকি কাইন্ঠামি করসে।
রতন ফিকফিক করে হাসতেসে। আমার খুব ভালো লাগছে রতনরে। শাহিনার ছোট ভাই এ বয়সী। আমাদের সাথে কত খেলা করতো। এক বিকালে গাঙে মাছ ধরতে গিয়া কুমিরে টাইনা নিয়া গেলো। রতনরে ঘরের ভেতর ডাকলাম।
–লও, তুমিও খাও, আমিও খাই। আমারে মায়মুনা আপা ডাইকো।
— আপনে আমার সাথে বসে খাবেন? আমি একটা হোটেলের পোলা। ময়লা ছয়লায় থাকি।
–মরলে তুমিও যা আমিও তা। এই টা আমারে আমার শ্নশুড় আব্বা শিখাইছেন।
–আল্লায় তারে বেস্ত নসীব করুক। জান্নাতী বান্দা হন তিনি।
–এ মা, আমার জ্যাতা শ্বশুড়রে মাইরা লাও কেন। উনি বাঁইচা আছে।
রতনের খাওয়া শেষ। ছেলেটা খুব খুশী হয়েছে। যাওয়ার সময় বললো, মালাই দেয়া চা খাইছেননি আপা। আমি বারোটার সময় নিয়া আসমু। আপনে বিস্কুট দিয়া খাইবেন।
রতন চলে গেলে আবার একা। লুৎফা আর কাশেম সকাল সকাল চলে গেছে। তাদের রুমের তালা বন্ধ। হুদাই ঘরটা আবার পরিষ্কার করলাম। আব্বারে ফোন দিলাম। ফোনে কাউরে পাই না। আবদুল্লাহ মিয়ার বই পত্র গুলার ধুলা পরিষ্কার করতেছি, এমন সময় কোমড়ের মধ্যে কারো হাতের ছোঁয়া পাইতেই কনুই দিয়া কারাতের এক গুতা দিলাম আল্লাহর নাম নিয়া। কোঁক কইরা শব্দ করে মাটিতে গড়ায় পরছে বদময়াইশটা। কাশেইম্যা পেট চাইপা কোঁকাইতেছে। রতন দুই কাপ চা নিয়া দরজায় ‘হা ‘ করে দাঁড়ায় আছে। কাশেমরে ডোজ দেয়া শেষ হয় নাই। ওরে চাইপা ধরতে যাবো, সে নিজে ক্ষমা চাইলো,
–ভাবী, আমি ভাবছি লুৎফা, ও আমার আগে বাহির হইছে। ঐ এক রঙের শাড়ি আবদুল্লাহ ভাই লুৎফারেও একটা জন্মদিনে দিসিলো। আমারে মাপ দেন। আবদুল্লাহ ভাই, লুৎফারে কয়েন না জানি এ কথা। আমি গলায় দড়ি দিমু।
কাশেইম্যা কোঁকাইতে কোঁকাইতে ঘরে ঢুকলো। রতন ভেতরে ঢুকে আমারে একটা কথা বলে দৌড়ায় সিড়ি দিয়ে চলে গেলো,
–আপা, আপনের সামনেই বিরাট আয়না। পিছের থেকা আপনে না হে বেঢার বউ কাম করে আয়নাত কিলিয়ার দেহা যায়। এর পরেও আপনে বিশ্বাস করবেন, এই খাচ্চরের পুতরে?
আমার হাত পা কাঁপতেছে। আবদুল্লাহ মিয়া এ কোন দোজখে আমারে আইনা তুললো?
(চলবে)