হৃদয়ের_একূল_ওকুল #পর্ব১১

0
947

#হৃদয়ের_একূল_ওকুল
#পর্ব১১

বড় একটা আঁশ বটি দিয়ে আইড় মাছের কল্লা কাটতে বসছি। আঁশ বঠিতে একদম ধার নাই। পাটা পুতা বিছায় তাতে ডলে ডলে বটির ধার কাটতেছি। এক টান দেই, ছড় ছড় করে বটির গা চকচকাইয়া ওঠে। আবদুল্লাহ মিয়া বেতন পেয়ে বড় এক আইড় মাছ এনে হাজির করছে। তাহার আব্বাজান এবং আমার আব্বাজান আসতেছে। সেই খুশীতে এই মাছের সাথে গরুর কলিজা, জোড়া দেশী মোরগ এনে সাত সকালে ভুইত্তামারা দাঁত কেলায় হাসতে হাসতে খবর দিসে।

— তোমার ও আমার, দুই জনের আব্বাজানেরা আজকে সন্ধ্যার পর আমাদের দেখতে আসতেছে। তাই দৌড়ায় বাজারে গেলাম। গতকালকে বেতন পাইছিলাম। মান সম্মানের সাথে আব্বাজানদের খাওয়াতে পারবো। তুমি কাটা বাছা করে রাখো। আমি অফিস থেকে এসে রান্না করবো।

— কেন আমার রান্না এত মাস খান না? আমি কি গু মুত রান্দি? ফাউল কথা বার্তা কইতে লাগছে। আপনের কিছু করা লাগত না। আমি ওয়ান টুর মধ্যে থিরি ফোর দিয়া রান্না শ্যাষ কইরা রাখবো।

–মশলা গুলা নতুন মেশিনে কইরো। তোমার হাত জ্বললে রাতে আর ঘুমান যাবে না। রাত ভর কাউকাউ করবা, আর আমার ঘুমের পনরোটা বাজাবা।

— পাটা পুতার মসলায় যে স্বাদ, ঐটা আপনের ঘুরান্টির মধ্যে হইতো না। পারলে কয়ডা মরিচ বাইটা দিয়া যান। কম ঝালের মরিচ, সুরুয়াতে দিলে যেই মজা আসে।

আবদুল্লাহ মিয়া দিলদার ঠিক ছিলো, কিন্তু সে যে টেলিসামাদ এইটা আমি বুঝি নাই। কালা কুলা বেডা, লুঙ্গী সামলায়ে পাটায় মরিচ বাটতেসে এইটা দশম আশ্চর্য। সে টের পায় নাই, মরিচের সাথে আমি বোম্বাই মরিচ দিয়া দিসি। দুই তিন ডলা দিয়া চান্দুর হাত জ্বলা শুরু হইলো। না পারে রাখতে না পারে বাটতে। দয়া কইরা পাটার থেকা ছুটি দিলাম। তারে দিয়া মরিচ বাটনের ইচ্ছা আইজ পূরণ হইছে। এবার ডাবল ডোজ। এই ডোজের পর জন্মে আমারে বেক্কল বানাইবি না ভুইত্তা। এক গামলা পেঁয়াজ দিলাম, ছোলাইয়া কুঁচি কুঁচি করতে। বেডা মানুষের চোখ টকটক্কা লাল হইয়া দরদর কইরা পানি পরতেছে। সে বড়ই আনন্দের সময়। বিয়ার সময় আমিও এমনে কানছিলাম, আর তুই বত্তিরিশটা দাঁতের চব্বিশটা বাইর কইরা ক্যালাইতে ছিলি। তুই কি ভাবসস, মায়মুনা বেগম সব ভুইলা গেছে। উহু, মায়মুনা বেগম হইলো বোয়াল মাছ। গিল্লা লাইব ঠাইত। আবদুল্লাহ মিয়া দশটা পেঁয়াজ কাইটা, মাপ চায়া অফিস গেছে। আজকে তার টিফিন বাক্সে খিচুড়ী, বেগুন ভাজা আর ডিমের রসা দিসি। সাথে আমার হাতের জলপুইয়ের আচার। খাইতে বইসা রাগ কষ্ট পানি হয়া যাবে।

নানী বুড়ি শিখাইছে, পুরুষ লোকের গলা থেকা নিচ, পুরাটাই প্যাট। এই প্যাটে যত খাওন দিতে পারমু, পুরুষ মানুষ হাতের মুঠায় আটকায় থাকবো। যেমন আটকায় থাকে খাঁচায় বান্দা পংখি। আমার আবদুল্লাহ মিয়ারে আটকায়া রাখার কোন ইচ্ছা নাই। লোকটা আমারে যেমনে কই তেমনে মানে। মাঝে মাঝে বেটা কুইচ্চা মাছের মতো শয়তানী করে। যেমন করছে আজকে সকালে বাজার গুলা আইনা। তবু ভালো, যাওয়ার সময়, পার্সেল গুলা নিয়া গেছে। কুরিয়ার করার কাজটা এই লোক না করলে, আমার পক্ষে সম্ভব হইতো না। কাঁথার অর্ডার পাই, দাম পাই না। যে দাম পাই, তাতে খরচ উঠে, লাভের বেলা ঠনঠন। আজকে আব্বারা আসুক। তাদের বুদ্ধি নিতে হবে। বুড়া মানুষের মাথায় বুদ্ধি পাকা হয়। মাছের সাইজ দেখে মনে হইতেছে, আবদুল্লাহ মিয়া আরেক খান বিবি নিয়া আসছে। বড়সড়, তাজা তুজা নয়া বিবিসাব। শালার বেটা আবদুইল্লাহ, তৌবা, তৌবা। আব্বা শ্বশুড়ের কোন দোষ নাই। সে নিষ্পাপ,তার প্রডাক্ট আবদুল্লাহ মিয়া একটা যা তা লোক।

বটি ধার দেয়া প্রায় শ্যাষ। এমন সময় কাশেইম্যা ঘর থেকা বাহির হয়ে আসছে। লাল টাই, নীল শার্ট, সাদা প্যান্টে কাশেইম্যারে লাগতেছে পুরান বাংলা সিনেমাায় ভিলেন ক্যারেক্টারে মিজু আহমেদ। সে ছিলো মস্ত বড় শয়তান। কাশেইম্যা তার চেয়েও বড় শয়তান, শয়তানের বরকন্দাজ। মিজু আহমেদ নায়িকাদের নিয়া যাইতে নিলে তারা চিক্কুর পাইরা কইতো, ‘তুই আমার দেহ পাবি, মন পাবি না শয়তান।’ আর আমি কমু, ‘তুই পাইবি ঘোড়ার আন্ডা, তার আগে মারমু তোর জায়গা মত ডান্ডা’। ‘শয়তানের বরকন্দাজ’ বকাটা বড়ই সুন্দর। এইটা শিখছি, নানী বুড়ির কাছে। বুড়ির সাথে আমার এখন পেটে পেটে পিরিতি হয়ে গেছে। বুড়ি আমারে ভীষণ ভালো পায়, আমিও বুড়ি নানী বলতে বলতে ফিট খাই। কাশেইম্যাকে দেখে ভটভটির মতো হাসি আসতেছে।

–এই বটির এক কোপে কল্লা ফেলানী যায় মতন ধার দিমু। আশে পাশে কুত্তা বিলাই পাইলে আগে ধার ঝালাই কইরা নিলাম, সমস্যা নাই। আয়রে মাছ, সোনার টুকরা, পিতলের টুকরা মাছ, তোরে পিস পিস কইরা কাইটা লবন দিয়া ধুই। ধুইয়া গরম গরম তেলে তোরে ছাইড়া দিলাম। মাঝে মাঝে চামড়ার উপ্রে মইচ ছিটামু।

কাশেইম্যা আর আগায় না। এতক্ষণ কেলকেলায় পা চাগায়ে হাইটা আসতেছিলো। এবার লুৎফারে কোমল গলায় ডাক দিলো। লুৎফা হুড়াহুড়ি করে আসছে। লুৎফারে দেখে ও না দেখার ভান করছি। কাশেইম্যা লুৎফারে পিছে রাইখা সামনে আগাইতেই, চিক্কুর পাইড়া ‘আল্লাহু আকবর’ কইয়া মাছের কল্লায় দিলাম এক রাম কোপ। কাঠ ভাঙ্গা হাত আমার, কারাতে ক্লাসে। সেই হাতের কোপ খায়া মুন্ডু বাবাজী উইড়া গিয়া কাশেইম্যার সামনে পরলো। রক্তের ছিটায় সাদা প্যান্টের অবস্থা খারপ। প্যান্ট দেইখা মনে হচ্ছে লাল মার্কার কলম দিয়া সারা প্যান্টে শাড়ির বল পিরিন্ট আঁকা হইছে। লুৎফা পিছন থেকা খুকখুক কাশি দিয়া হাসতেছে। পেটটা আমার হাসিতে ফাইটা যায়, হাসতে পারতেছি না। এ এক বড় অশান্তি। আবদুল্লাহ মিয়াকে হালকার উপর ঝাপসা করে কাশেইম্যার কুকীর্তি বলতে চাইসিলাম, সে মাছি তাড়ানোর মত উড়ায়া দিসে। হাসতে হাসতে শেষে বলছে, ‘ কি কও না কও, লুৎফা হইলো কাশেম ভাইয়ের কলিজার লহু। তাদের মিল মোহাব্বত তুমি বোঝ নাই। কি দেখতে কি দেখছো, কে জানে? মাছের পিস কইরা বলের মধ্যে রাখতেছি, বিলাই দেখি হাত চাটে। বিলাইরে পিড়ি ফিক্কা দিলাম,

— তরে হাতের নাগালে পায়া লই হারামজাদা। হাত ঠ্যাং ভাইঙ্গা হাতে হারিকেন ধরায় দিমু। বড় মাছ খাওনের শখ হইছে নারে? গরম পানি ফালায় দিমু গায়ে, বজ্জাত বিলাই।

লুৎফা দাঁতের নিচে আঁচল চেপে হাসি সামলায় বাহির হইলো, কাশেইম্যা তার পিছন পিছন। রান্না বাড়া শেষে পাখার নীচে বসছি, কোকিল ডাকলো। ওমা! নীচের তলার খাসী দেখি শাড়ি পইরা দাঁড়ায় আছে। চোখ কচলায়া দেখি,খাসী না খাসীর আম্মা মহিলা খাসী। আপাদমস্তক কালো বোরখায় ঢাকা হইলে কি হবে, ওনার চেহারাটাই ছেলের মুখে বসানো। সাথে হাতে চিনির পোটলা ফ্রি। দুইয়ে দুইয়ে পাঁচ মিলায়ে লম্বা করে সালাম দিসি মহিলারে। এর থেকা ফ্রি ফ্রি জিনিষ খাওয়ার আশা আছে। এরে বিগড়ানো যাইবে না।

–কবি ভাইজানের আম্মা না আপনে। আমার উনি বইলা গেছে, আপনি যে কোন দিন আসতে পারেন।

–খাদেম তোমারে কইছে আমি আমু? পোলাডারে কেউ দেখবার পারে না বইন।

— আয়হায়, সে আইতে যাবে ক্যান। আমার স্বামী কইছে।আপনে আমার খালাম্মা হইলে আমি আপনের বইন হইলাম কেমনে। কবি ভাইজানের নাম খাদেম, কি সোন্দর নাম। আপনে রাখছিলেন খালাম্মা।

মহিলা খাসী খুশিতে গেদগেদ করতে করতে বাসায় ঢুকছে। নীচের তলা থেকে তার ছেলের গলার আওয়াজ পাইলাম। খাসীকে ডাইকা এনে চা খাওয়াবো। তাইলে কেল্লা ফতে। মহিলা পয়সা টাকা ওয়ালা মনে হইতেছে। কয়টা কাঁথা হাতে ধরায়া দিব। এমন সোহাগ করব, বেটি না করতে পারতো না।

–তোমার ছইল পইল কই। ইস্কুল পাডাইছো? বাসাত আর কেউ নাই? জামাই আহে কহন। রানসো কিতা। দুপুরে খাইতে আইবো? তোমাগো ভিত্রে ঝড়গা ঝাটি হয়নি?

— আইয়াল্লা গো, খালাম্মা দেখি প্রশ্নের টেরেন ছুডাইছেন। দিমুনে আপনের সব উত্তর। আগে বসেন। চা খাই।

রতনরে ফোন দিয়া চপ সিঙ্গারা দিতে বলছি। ছেলেটার খুব কষ্ট। হোটেলের বেতন দিয়া পোষায় না। আমার বেচা বিক্রি ভালো না। হইলে রতনরে একটা কাজ কামে লাগাইতাম। চপ সিঙ্গারা দিতে আইসার রতন খাসীর আম্মারে দেইখা দম খিচা খাড়ায় আছে,

— কিরে টাকা বিকালে দিলাম, যা এখন। খালাম্মা কত জিনিষ পত্র নিয়া আসছে, দেখছস।
–আপা, জিনিষটা সুবিধার না। এক জাগার মাল অন্য জাগাত থুক্কু, এক জাগার কথা অন্য জাগায় পাচার করে। ঘরের কথা কিছু কয়েন না কইলাম।
— তোর আপা কি এতই আগাকুগা বেক্কল। তোর আম্মার হাতের কাজটা হইছে? আরেকটা অর্ডার পাইছি। তুই স্কুলে যাইতে পারবি। আল্লাহর নাম নিয়া কাস্টমার গুলা বাড়ায় নেই। তুই কাজ ছাইড়া দিস। রাইতের দিকে অন্য কাজ নিলি।

রতন চোখ মুছতে মুছতে নিচে নাইমা গেছে। আমি কবে এত বড় হইলাম, কে জানে। এখনো নিজের খরচটা চালাইতে পারলাম না। আর কান্ধে নেই অন্যের বোঝা। আল্লাহ তুমি দেইখো, মনের ভিতরে ডর লাগে। খালাম্মা চা চপ খায়া ফিনিস। বোরখার ভিতর থেকা লাল একটা পুটলী বাহির করসে। আমার হাতে কচকচা তিনটা হাজার টাকার নোট গুইজা নতুন বউ দেখনের পয়সা দিলো। হেরে আমার হাতের কয়টা কাজ চামে চামে দেখায় দিসি। খালাম্মা খুশী হয়া আরো দুই পিস কাথা কিনা নিলো। একটা খাসীকে দেবে, আরেকটা খাসীর আব্বাজানের জন্য। নগদে সাত হাজার টাকা লাভ হইয়া মনে মনে আবদুল্লাহ মিয়াকে স্মরণ করলাম। সকালে তো তার মুখ দেখাই উঠি। খালাম্মা গায়ে হাতে আদর মুইছা বিদায় নেবার কালে চোখ ফাইটা পানি আসলো। সব মায়ের গায়ের গন্ধ এক হয়। মায়েদের স্নেহ মমতা আলাদা হয় না। খালম্মার হাতে কবি ভাইজানের জন্য অল্প করে মাছ তরকারী দিসি। এত ইনকামের পর তারে এই মুহূর্তে খাসী ডাকা ঠিক না। বিবেক বইলা একটা কথা আছে, নাকি।

নানী বুড়ির কাছে এই বিল্ডিং এর এক গাদা পোলাপাইন আরবী পড়তে যায়। আমারেও নানী যাইতে বলছে। পোলাপাইনদের মধ্যে বসতে শরম করে। কথাটা নানী বুড়িরে বলতেই, বদ বুড়ি খ্যাঁক শিয়ালের মত হাইসা উঠছে।
আমার নাকি লজ্জা শরম থাকা মানায় না। তিন খান মোটা মোটা বাইম মাছের তেল নিয়া সারাদিন লাফাইন্না কইতর মায়মুনা বেগম মাথায় কাপড় দিয়া ভদ্র শান্ত হইয়া আমপারা পড়তেছে, কি আজুবা। মগরিবের আগ খান দিয়া আবদুল্লাহ মিয়া আইসা আমারে ডাইকা নিলো। আমার দুই আব্বা দরজার সামনে দাঁড়ায় আছেন। কাশেইম্যা দুই একবার উঁকি ঝুকি দিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিলো। আঁশ বটিটা শোয়ার ঘরের দরজার পাশে শান দিয়া খাড়া করায় রাখছিলাম। আব্বা দেখি আঁড়চোখে বটির দিকে চায়া আমার দিকে কুতকুত কইরা দেখতেছে। আমি কিছুই বুঝিনাাি ভাব কইরা পাকের ঘরে গেলাম। গরম ভাত, আইড় মাছের সালুন, দেশী রাতার ঝোলের মধ্যে গোল গোল লাল আলু আর কলিজা ভুনা, মাষের ডালে ডিম বাইড়ায়া দিসি দেইখা শ্বশুড় আব্বা খুব খুশী হইছেন।

–এইটা তেমার দাদী শ্বাশুড়ী রানত মা জননী। তুমি কেমনে জানলা।

–আমি মুনারে বলছি আব্বা। নয়ত সে নাদান মেয়েছেলে, কেমনে জানবে বলেন।

–বউ ছেলেরে এসব বলতে হয় না আবদুল্লাহ। তোমার চাকরীর ঝামেলাটা মিটলো? এবার কয়দিন বাড়ি আইসা থাকো। সুমনারো বেশী দিন নাই।

–আমি নিজে পাক করছি আব্বা। আপনের পোলা মিথ্যুক নম্বর একশ।

আব্বা আমারে চোখ পাকায়া না করলো, কথা বলতে। শ্বশুড় আব্বা হাসতে হাসতে ভাত খাচ্ছে। আবদুল্লাহ মিয়া আমার আব্বার পাতে বড় বড় রস ভরা মিষ্টি তুইলা দিসে। আব্বা খুশি, খুব খুশি। আমার মতো পাগলা ঘন্টি মাইয়া, এমন গুছায় তারে নিজ সংসারে ভাত খেতে দেবে, এইটা মনে হয় সে কোনদিন আশা করে নাই। খাওয়া শেষে আবদুল্লাহ তাদের দুইজনের কাছ থেকে আমারে কলেজ ভর্তির অনুমতি চাইলো। আব্বা চা খাইতে গিয়া নাকে মুখে উঠায় ফেলছে।

–হুদাই টাকা পয়সা নষ্ট। জমি রাখো কয় কানি বাপ। মায়মুনার মাথায় গু মুত। যত দূর পড়ছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি বাপ হয়া আশা ছাড়ছি। তুমি স্বামী। পরের পোলা ওরে নিয়া সংসার কইরো, মনে দুখ রাইখো না।

— তার পড়ার ইচ্ছা আছে আব্বা। পড়তে চায় পড়ুক। আমার সংসারে আখেরে লাভ। হায়াত মউত আল্লাহ পাকের হাতে। আমার কখন কি হয় কে জানে।

–ঢংগের কথা কইয়েন না। আব্বা পড়তে দেন আমারে। ফেল করতাম না শিউর। টেকা পয়সা নিয়া চিন্তা কইরেন না। আমার খরচ আমি চালামু।

শ্বশুড় আব্বা আমার মাথায় হাত রাইখা দোয়া দিসেন। আব্বা এখনো বিশ্বাস করতে পারে নাই, আমি লেখাপড়ার কথা নিজের থেকে বলছি। আবদুল্লাহ উপর হয়ত আস্থা আছে তাই চুপচাপ রইছে। তারা বিদায় নিলে নামাজ সেরে চা বানায় বিছানায় আয়েশ কইরা বসছি। আবদুল্লাহ ইশার নামাজ শেষে কুরআন পাঠ করতে বসে প্রতিদিন। সুন্দর কন্ঠের প্রার্থনা মানুষরে টাইনা নিয়া যায় আলোর দিকে। ভালো মানুষের সাথে থাকলে মন্দ ও একসময় ভালো পথে আসে। আবদুল্লাহ মিয়ারে যত দোষই দেই, তার সাথে বিবাহ হবার আমার দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান আসছে। ভালো মন্দ বুঝতে শিখছি। উচিত অনুচিত নিয়া ভাবতে পারি। নিজের বুঝটা ভালোর দিকে ভাইবা নিয়া সুন্দর একটা জীবনের স্বপ্ন দেখতে মন চায়। আবদুল্লাহ মিয়ারে ভালোবাসতে পারি না। ঐ একটা জায়গায় মনের পায়ে বেড়ি পরায় রাখা।

–আগামীকাল কলেজ যাবো। ভর্তি হয়ে আসবা। যে কলেজের নাম বলছিলা, খোঁজ বিয়া আসছি। টাকা পয়সা নিয়া খুব বেশী চিন্তা কইরো না। তোমার কাঁথা বেচার টাকা রাইখা দিও। আল্লাহর পরে তোমার আব্বা, তারপর এখন আমি তোমার ভরনপোষনের জিম্মাদার। মনে কোন দাগ রাইখা চিন্তা করবা না। স্বামী-স্ত্রীর ভিতর চুল পরিমান দূরত্ব থাকা উচিত না। কলেজটার কথা তোমারে জানি কে বলছে?

— নজমুল, ও আমার মত এক সাবজেক্টে ফেল। কাশেমের আত্মীয় লাগে। এদিক আইসিলো কাশেমের লগে দেখা করতে। আমার সাথে রতনের হোটেলে দেখা। হে ভর্তি হইছে, আমরা এক গ্রামের পোলা মাইয়া।

আবদুল্লাহ দেখি আর কোন কথা না কয়ে শুয়ে পরছে। ফ্লাটের এক চিলতা বারান্দায় কয়টা গেন্দা ফুলের চারা টোকায়া লাগাইছিলাম। হলুদ হলুদ গেন্দা ফুল ফুইটা আছে। হালকা হালকা শীত পরছে। আকাশ ভরা জোনাই পোকার লাহান তারার মেলা বইছে। হাওয়ায় হাওয়ায় কিসের জানি হাহাকার শুনি। বুকের ভিত্রে কান্দন মোচড়ায়। আমি কি কাউরে ঠকাইতেছি? কারে? আমারে না আবদুল্লাহ মিয়ারে। সে তো এ সম্পর্কে অখুশী না। তার সাথে কিলিয়ার কাট কথা হইছে। তাইলে এত দোটানায় মন কেন কোঁকায়। নিজের ঘরে পরবাসী হয়া আছি। এইডা ও কি আমার ঘর? কে জানে কার খবর।

নজমুল সে দিন কইছে, সে আমারে আগের মতো ভালোবাসে। আমার একটা সিগন্যাল পাইলে সে আমারে লয়া যাইবো। তার আগে পয়সা পাতি জমায়া ইন্টার পাশ করন লাগবো। নয়ত কোন জাগাত চাকরী পাইবো না। নজমুল কি সত্য কইছে, সে কি সত্যই আমারে ভালোবাসে? নাকি আামর সব মনের ভুল। বিছনায় ফিরা ঘুমাইতে আইসি, বালিশের পাশে তিন ডজন রেশমি চুড়ি একটা ভাঁজ করা কাগজের উপরে রাখা। চুড়ি গুলা সাবধানে হাতে দিলাম। কাগজটা খুইলা দেখি আবদুল্লাহ মিয়ার চিঠি,

” অপেক্ষার সময় শেষ হইলে ডাক দিও মুনা। তোমারে খুব ভালোবাসি”…

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here