হৃদয়ের_শুভ্রতা?? #অন্তিম_পর্ব

0
665

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
#অন্তিম_পর্ব
#ফাবিহা_নওশীন

??
শুভ্রা আলমারিতে জামাকাপড় ভাজ করে রাখছে।হৃদ অফিস থেকে ফিরে রুমের দরজার সামনে এসে শুভ্রাকে দেখে পা টিপে টিপে রুমে ঢুকে শুভ্রাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে।
হটাৎ এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরায় চমকে চিতকার করে উঠে।

—–হিশশশ আমি।চিতকার করছো কেন?আমি তোমার একমাত্র বর।
হৃদ শুভ্রার কানের লতিতে চুমু খেয়ে বললো।

—–তো একমাত্র বর ভয় দেখালেন কেন?

—–কই ভয় দেখালাম আমি তো বউকে ভালোবাসছি।বউ ভীতু হলে আমার কি দোষ?

শুভ্রা কটাক্ষ করে বললো,
—–কি আমি ভীতু?ছাড়ো আমাকে।
শুভ্রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।

—–আচ্ছা প্রমাণ করো তুমি ভীতু না।

—–কি করতে হবে ছাদ থেকে লাফ দিতে হবে?

—–কি বলছিস এসব আমার একমাত্র বউ মরে গেলে তোর একমাত্র বরের কি হবে?

শুভ্রা ভেংচি কেটে বললো,
—–কি আর হবে?একমাত্র বর বিয়ে করে দুইমাত্র বউ ঘরে আনবে।

হৃদ মেকি হাসি দিয়ে বললো,
—–তা ঠিক বলেছো আরেকটা বিয়ে করবো ভাবতেই ভালো লাগছে।উফফ একটা কিউট দেখে বিয়ে করবো।

শুভ্রা রণমুর্তি ধারন করেছে।চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–তাইনা?আরেকটা বিয়ে করবে?দাড়াও তোমাকে বিয়ে করাচ্ছি।

শুভ্রা হৃদের বুকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো।
——ও বউ এভাবে মারলে মরে যাবো।আরেকটা বিয়ে করবো কিভাবে?

শুভ্রা মারা বন্ধ করে নেকা কেদে বললো,
—–তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।

হৃদ মুচকি হেসে শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
—–বাসি নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।আমি তো মজা করছিলাম।

শুভ্রা হৃদের বুকে কামড় দিলো।
হৃদ চিতকার করে উঠে।
—–ওমাগো!!

—–এমন মজা করলে মেরে দেবো।

—–শোনো এভাবে টর্চার করলে বর পালিয়ে যাবে।বরকে আদর-সোহাগ করতে হয়।

—–আচ্ছা কাছে এসো আরেকটু আদর সোহাগ করি।

—–দরকার নেই তোর সোহাগের।আবার কামড়ে দিবি।কি দিয়ে দাত মাজিস রে,,দাতে কি ধার,ডাইনি একটা।

হৃদ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
শুভ্রা পেছনে থেকে হাসছে।

হৃদ ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই শুভ্রা পেছনে থেকে হৃদকে জড়িয়ে ধরলো।পিঠে একটা চুমু খেয়ে বললো,
—–ভালোবাসি!!

হৃদ মুচকি হেসে শুভ্রার হাতের উপর হাত রাখলো।

.
.

বাড়িতে রোজের এংগেজমেন্টের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে।আগামীকাল রোজের এংগেজমেন্ট।বাড়িতেই প্রোগ্রাম হবে।বাড়িতে ডেকোরেশন লাইটিং এর কাজ চলছে।
তখনই বাড়িতে লাগেজ নিয়ে এক ভদ্রলোক ঢুকলো।সাথে মধ্যবয়সী মহিলা ও ১০-১১বছরের ছেলে।

রোজের মাম্মা ঘুরে ঘুরে সাজানো দেখছে তখনই সেই বাচ্চা ছেলেটা পেছনে থেকে বললো,
—–ফুপিয়া!!

রোজের মাম্মা ঘুরে রীতিমতো শকড।খুশিতে চোখ ছলছল করছে।কতদিন পর ভাইয়ের ছেলেকে দেখছে।
—–তানভীর!!

রোজের মাম্মা এগিয়ে এসে মাথায় গালে হাত বুলিয়ে আবেগে আপ্লূত হয়ে বললো,
—–আমার বাবাটা কেমন আছে?কতদিন পরে দেখলাম।কতবড় হয়ে গেছিস।

—–আপু ভাইকে তো একটু দেখো।
রোজের মামা বললো।

রোজের মাম্মা ভাইকে দেখে খুশিতে হেসে ফেললেন।
—–হুম তুহিন।।তোর সময় তাহলে হয়েছে?হৃদের বিয়েতে এলিনা।

—–আপু তুমি জানো আমি কতটা ব্যস্ত ছিলাম।

—–আচ্ছা থাক থাক আর বলতে হবেনা।
মুন(ভাইয়ের বউ)যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।সার্ভেন্টকে দিয়ে ব্যাগ পাঠিয়ে দিচ্ছি।

মুন বললো,
—–তার আগে বলো রোজ কোথায়?আর বাকি সবার সাথে দেখা করে নেই।
মা আর বাবার রুম থেকে আগে দেখা করে আসি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

—–হ্যা যাও।তোমাদের জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছে।

রোজ এসে হাজির।
—–মামা,মামি!!
রোজ মেহেদী হাতে দৌড়ে এলো।

আরে এসে গেছে রাজকন্যা।নাক টেনে দিয়ে রোজের মামা বললো,
—–কি খবর? এতো বড় কোনদিন দিয়ে হয়ে গেলি?

—–তুমি যে দিক দিয়ে বুড়ো হচ্ছো সেদিক দিয়ে।হিহি।

—-ওরে পাকুনি!!
সবাই হোহো করে হেসে দিলো।
তারপর ওরা বাড়ির সবার সাথে মিট করে নিলো।

তুহিনের মা বাবা এতোদিন পর ছেলেকে পেয়ে অনেক খুশি।মা তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেদেই দিলেন।বাবা অসুস্থ তেমন হাটা চলা করতে পারেন না।

রাতে পুরো ফ্যামিলি একসাথে ডিনার করে আড্ডা দিলো।অনেক দিন পর সবাই একসাথে হয়েছে।আজ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে ফ্যামিলিটা কে।

~এংগেজমেন্ট ডে~
শুভ্রা নেভি ব্লু রংয়ের শাড়ি পড়েছে।চুলগুলো খোপা করে ফ্লাওয়ার লাগিয়েছে।দুহাত ভর্তি স্টোনের চুড়ি, গর্জিয়াছ অলংকার,গর্জিয়াছ মেকাপ।
হৃদ ব্লু কালার কমপ্লিট স্যুট পড়েছে।চুলগুলো স্পাইক করা,হাতে নীল বেল্টের ওয়াচ,চোখে গ্লাস।

শুভ্রা রেডি হয়ে হৃদকে খোজছে।কিন্তু কোথাও ওকে খোজে পাচ্ছেনা।
অবশেষে এংগেজমেন্ট স্টেজে হৃদকে দেখতে পেলো।শুভ্রা এক প্রকার দৌড়ে হৃদের কাছে এলো।তারপর হাপাতে লাগলো।

হৃদ শুভ্রাকে দেখে বললো,
—–আরে আস্তে দৌড়াচ্ছো কেন?পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাংবে?কি হয়েছে?

শুভ্রা হৃদের কথার উত্তর না দিয়ে হৃদের হাত নিজের হাতে পুরে বললো,
—–তুমি আমাকে ছাড়াই চলে এসেছো?

—–আরে তোমার দেরি হচ্ছিলো তাই ভাবলাম নিচটা একটু দেখে আসি সব কিছু ঠিক আছে কিনা।তারপর গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।

শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বললো,
—–হুম বুঝি বুঝি সব বুঝি।সুন্দরী মেয়েদের দেখতে একা একা চলে এসেছো।

—–সবসময় এক কথা বলো কেন বউ?আমার বউ কি কম সুন্দর নাকি?আমার বউয়ের কাছে কেউ টিকবে না।একদমই না।

—–আচ্ছা তাই যদি হয় আমার হাত ধরে রাখো।হাত ছাড়বেনা।

—–সারাক্ষণ হাত ধরে হাটলে মানুষ কি বলবে?

—–যা খুশি বলুক।হু কেয়ারস? হাত ধরো নয়তো মার খাবে।

—–পাব্লিক প্লেসে বউয়ের হাতে মার ক্ষেতে চাইনা।তারচেয়ে হাত ধরাই ভালো।

—–হুম।(নাক ফুলিয়ে)

—–পাগলি।(মৃদু হেসে)

—–পাগল।(ভেংচি কেটে)

অপর দিকে অরিত্র ক্রিম কালার কমপ্লিট স্যুট পড়েছে।হোয়াইট কালার ওয়াচ,চুলগুলো কপালের উপর এসে পড়েছে।একদম কিউটের বস্তা লাগছে।

হলের লাইট অফ হয়ে গেলো।সিড়িতে গিয়ে হালকা শেডের আলো পড়েছে।রোজ বান্ধবীদের সাথে নিচে নেমে আসছে।সবার দৃষ্টি সেদিকে।রোজ ক্রিম কালার গ্রাউন পড়েছে।চুলগুলো কার্লি করা।গলায় কানে ডায়মন্ডের গহনা।গর্জিয়াছ মেকাপ।
রোজকে একদম ফুটন্ত ফুলের মতো লাগছে।অরিত্র মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার রোজ কুইনকে।

শুভ্রা রোজকে দেখে বললো,
—–রোজকে কত সুন্দর লাগছে।মাশাল্লাহ।

হৃদ শুভ্রাকে বললো,
—–দেখতে হবেনা বোনটা কার?

—–একটা ছাগলার।
লাইট অন হয়ে গেলো।শুভ্রা হৃদের হাত ছেড়ে রোজের দিকে এগিয়ে গেলো।
দুজনকে রিং এক্সচেঞ্জ করার জন্য স্টেজে নিয়ে গেলো।রোজ অরিত্র একজন আরেকজনের দিকে একবার চেয়ে মুচকি হেসে রিং এক্সচেঞ্জ করে নিলো।

রোজের মাম্মা আর পাপা একসাথে দাড়িয়ে আছো।রোজের মা খুশিতে কেদে ফেলেছে।চোখ মুছতে লাগলো।
সবাই তালি দিতে লাগলো।তালির ধ্বনিতে বাড়ি মুখরিত।
তারপর আবার লাইট অফ হয়ে হালকা শেডের আলো জ্বলে উঠলো।
স্লো সং ছাড়া হয়েছে।কাপল ড্রান্স হচ্ছে।শুভ্রা হৃদ,অরিত্র রোজ আরো অনেকে ড্রান্স করছে।

অরিত্র রোজ একে অপরকে দেখছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে।অরিত্র রোজের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—-আধা মেরি বাংগায়ি।

শুভ্রা হৃদের কাধে হাত রেখে ড্রান্স করছে।হৃদ মাঝে মাঝে শুভ্রার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিচ্ছে।

হটাৎ করে ড্রান্স করা অবস্থায় শুভ্রার অস্থির অস্থির লাগতে শুরু করলো।অনেকক্ষন ড্রান্স করার চক্করে মাথা ঘুরছে।শুভ্রা থেমে গেলো।হৃদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–কি হয়েছে??

শুভ্রার পা কাপছে।মাথায় হাত দিয়ে বললো,
—–মাথাটা কেমন ঘুরছে।শরীরের ব্যালেন্স রাখতে পারছিনা।
কথাটা শেষ করেই পড়ে যাচ্ছিলো তখনই হৃদ ওকে ধরে ফেলে।শুভ্রার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।

হৃদ চিতকার করে বললো,
—–কেউ লাইট অন করো।

লাইট অন করে শুভ্রাকে হৃদের বুকে ঢলে থাকতে দেখে সবাই দৌড়ে এলো।
হৃদ বারবার বলছে,
—–শুভ্রা চোখ খোলো।মাম্মা পাপা কিছু করো।
মামি কোথায়?

.
.

শুভ্রাকে বেডে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।শুভ্রার মাম্মা,হৃদের মাম্মা শুভ্রার হাত-পায়ে মালিশ দিচ্ছে।হৃদের মামি মুন একজন গাইনি চিকিৎসক।তিনি শুভ্রাকে দেখছে।
ওর মামা তুহিন হার্ট সার্জন হলেও কিছু একটা অনুমান করতে পারছেন।

বাকিরা ঘরজুড়ে পাইচারি করছে।রোজের পাশে অরিত্র দাঁড়িয়ে আছে।মুন শুভ্রাকে চেকাপ করে হেসে দিলো।সবাই হা করে থাকলেও ওদের মামা বুঝতে পেরে হেসে দিলো।
তারপর হৃদের মাম্মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—–আপু গ্রেন্ডমা হওয়ার জন্য রেডি হও।বাড়িতে অতিথি আসছে।

হৃদের মাম্মার চোখ চকচক করছে।তিনি বললেন,
—–মুন শুভ্রা…

—–হ্যা আপু শুভ্রা প্রেগন্যান্ট।

রোজ নিউজটা শুনে ইয়েস বলে চিতকার করে লাফিয়ে উঠলো।সবাই রোজের দিকে চেয়ে আছে।রোজ চুপ হয়ে গেলো।অরিত্র শুভ্রাকে ফিসফিস করে বললো,
—–রোজকুইন তুমি নও শুভ্রা প্রেগন্যান্ট।

রোজ অরিত্রের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো।তারপর মিনমিন করে বললো,
—–আই নো।

সবাই খুশিতে একে অপরকে কংগ্রাচুলেট করছে।হৃদের পাপা আর শুভ্রার পাপা কোলাকুলি করছে।
—–ভাই তুমি দাদা আর আমি নানা হতে চলেছি।

হৃদ সবার কান্ড দেখে বললো,
—–আরে আমাকে কেউ কংগ্রাচুলেশন দেও।আমিও তো কিছু হচ্ছি।

সবাই হৃদের কথা শুনে হেসে দিলো।
আর তখনই শুভ্রার জ্ঞান ফিরলো।
শুভ্রা নিজেকে বেডে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করলো।কিছুক্ষণের আগের ঘটনা মনে পড়লো।আর সবার হাসির শব্দ কানে এলো।
শুভ্রা এক লাফে উঠে বসলো।তারপর সবার দিকে চেয়ে কাদো কাদো হয়ে বললো,
—–আমি অসুস্থ আর তোমরা হাসাহাসি করছো??

শুভ্রা বেড থেকে নামতে যাবে তখনই হৃদ দৌড়ে গিয়ে বললো,
—–আরে নামছো কেন?শুয়ে থাকো।

—–না আমি থাকবোনা কেউ আমাকে ভালোবাসেনা।

রোজ বললো,
—–আপু আমাদের এতো খুশি হওয়ার রিজন জানতে পারলে তুমিও খুশি হবে।

শুভ্রা অভিমানী মুখে বললো,
—–দরকার নেই।যারা আমার অসুস্থতার সময়ে হাসাহাসি করতে পারে তাদের গুড নিউজে আমি হ্যাপি হতে চাইনা।

সবাই শুভ্রার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে।
হৃদের পাপা বললো,
—–চলো আমরা যাই।ওর বউকে ও সামলাক।
তারপর সবাই এক এক করে বেরুতে লাগলো।
রোজ নিচু স্বরে বললো,
—–কিন্তু সিন তো আবি বাকি।

অরিত্র আস্তে করে বললো,
—–এই সিনে তুমি এলাও না বেবি।

রোজ আবারো লজ্জা পেয়ে গেলো।রোজ তখন থেকে বোকার মতো কথা বলে যাচ্ছে আর অরিত্র লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে।
রোজ বললো,
—–আমি বলতে চাইছি যে শুভ্রাপু নিউজটা শুনে কেমন রিয়েক্ট করে সেটা দেখতে চাই।
তারপর মুখ ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো।

সবাই চলে যাওয়ার পর হৃদ শুভ্রাকে শুইয়ে দিয়ে বললো,
—-একদম নড়বেনা।শুয়ে থাকো।

হৃদ দরজা বন্ধ করতে গেলো।শুভ্রা ভাবছে,
—–সবাই এমন করছে কেন?আমি কি খুব বেশী অসুস্থ?বড় কোনো রোগ হয়েছে? তাহলে সবাই হাসছে কেন?
সবাই হাসলেও মাম্মা আর পাপা।তারা কেন হাসছে?
আমি তাদের একমাত্র মেয়ে।ডাল মে কুচ কালা হে।

শুভ্রা ভাবতে ভাবতে হৃদ শুভ্রার কাছে এসে ওর কপালে চোখে গালে চুমু খাচ্ছে।সব শুভ্রার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
হৃদ তারপর শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্রা হৃদের ভার নিতে পারছেনা।শুভ্রা উসখুস করতে করতে হৃদকে সরানোর চেষ্টা করছে।
—–হৃদ ছাড়ো আমাকে।আমাকে মেরে ফেলবে নাকি?

—–হুম মেরে ফেলবো।তোমাকে মেরে ফেলবো।

শুভ্রা আবারো নেকা কান্না জুড়ে দিলো।
—–তুমিও আমাকে ভালোবাসো না।

—–আরে কে ভালোবাসেনা?বাসি তো।অনেক ভালোবাসি।এখন আরো বেশি ভালোবাসবো।

—–কেন?হটাৎ?

হৃদ উঠে বসলো।শুভ্রাও জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি নিয়ে উঠে বসে হৃদের মুখের দিকে চেয়ে আছে।
হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—–কারণ আজ তুমি আমাকে আমার লাইফের সেরা গিফট দিয়েছো।

শুভ্রা হৃদের কথার আগামাথা বুঝতে পারছেনা।মনে করার চেষ্টা করলো
কি এমন বলেছে বা দিয়েছে আজ হৃদকে কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।

হৃদ শুভ্রাকে চিন্তিত দেখে ফিক করে হেসে দিলো।তারপর কানের কাছে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
—–তুমি মাম্মা আর আমি পাপা হতে যাচ্ছি।তুমি প্রেগন্যান্ট।
হৃদের কথা শুনে শুভ্রার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে।ও স্তব্ধ হয়ে গেছে।সবটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেলো।তারপর শুভ্রার মুখে হাসি ফুটলো।ও মা হতে যাচ্ছে?ওর বেবি হবে?ছোট্ট গুলুমুলু একটা বেবি হবে।
হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে ভ্রু নাচালো।শুভ্রা লজ্জা পেয়ে হৃদের বুকে মুখ লুকালো।
—–আমি মা হবো!!আমাদের বেবি হবে।

?

পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে।সবকিছু নতুন করে সাজানো হচ্ছে।পেইন্ট করা হচ্ছে,ফার্নিচার,পর্দা সবকিছু চেঞ্জ করা হচ্ছে।নতুন অতিথিকে নতুনভাবে শুভেচ্ছা জানাবে।
হৃদের পাপা আর শুভ্রার পাপা ছুটাছুটি করছে নতুন অতিথির আগমনে।

শুভ্রার মাম্মা হৃদের মাম্মার পাশে বসে বললো,
—-আপু দুই ভাই খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।আমার তো মনে হচ্ছে শুভ্রার বাচ্চা হওয়ার আগেই এদের পাগলাগারদ পাঠাতে হবে।

হৃদের মাম্মা হেসে বললো,
—-যা বলেছিস।

হৃদের মাম্মা উঠে গিয়ে দাড়িয়ে পুরো বাড়ি দেখছে।দুজনের ছুটাছুটি দেখে মুচকি হাসছে।রোজ আর অরিত্র অনলাইনে বাচ্চাদের জিনিসপত্র দেখছে।হৃদের মাম্মা এসব দেখছে আর মুচকি হাসছে।

—–কি দেখছো মাম্মা?
হৃদ পেছনে থেকে বললো।

—–তোর পাপা আর কাকাইকে দেখছি।আর সেইদিনের কথা মনে করছি।তুই যখন পেটে এলি আর এই খবর সবাই জানতে পারলো সেদিন তোর নানা ভাই আর দাদাই কি যে পাগলামি শুরু করেছিলো।লিভিং রুম মিষ্টির গোডাউন বানিয়ে দিয়েছিলো।তোর আসার খুশিতে পুরো পাড়া,আত্মীয়স্বজন,ফ্রেন্ড।যার যতো ফ্রেন্ড ছিলো,পরিচিত মুখ,চেনাজানা যত মানুষ ছিলো মিষ্টি বিলিয়েছে।তোর দাদাইকে খুব মনে পড়ছে।তোকে খুব আদর করতো। বংশের প্রথম সন্তান হওয়ায় একটু বেশিই।তোর জন্মের পর আমি তোকে কোলে নেওয়ার চান্সই পাইনি।সবাই কাড়াকাড়ি শুরু করে দিতো।তুই খুব আদুরি ছিলি আর তোর বেবিও সেইম।ও সবার আদরের হবে।

—–দোয়া করো মাম্মা।

হৃদের মাম্মা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।
—-শুভ্রার খুব খেয়াল রাখবি।তোর পাপা আমার খুব খেয়াল রাখতো।

—–আমিও রাখবো।

?
?

~৫বছর পর~
হৃদ অফিস থেকে ফিরে দেখে ওর মেয়ে শুভেচ্ছা কাদছে আর শুভ্রা তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।
হৃদ মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
—–কি হয়েছে আমার মামনি কাদছে কেন?

শুভেচ্ছা কান্নার জন্য কিছুই বলতে পারছেনা।হৃদ শুভ্রার দিকে তাকালো।
—–তোমার মেয়ে রুহানের(রোজের ১বছরের ছেলে) কাছে যাবে।ওর সাথে খেলবে।এই সন্ধ্যা বেলায় খেলার কথা মনে পড়েছে।

হৃদ বললো,
—–আচ্ছা এই কথা আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।

শুভেচ্ছা কাদতে কাদতে বললো,
—–চলো।

হৃদ মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—–পাপাই অফিস থেকে এসেছে।কাপড়,শরীর কত নোংরা।তুমি দাদিয়ার সাথে গিয়ে খেলো আমি ফ্রেশ হয়ে তারপর নিয়ে যাবো।

শুভেচ্ছা কান্না থামিয়ে দিলো।তারপর বললো,
—–আচ্ছা।

হৃদ শুভেচ্ছাকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই খেলতে চলে গেলো।

শুভ্রা হৃদের টাই খোলতে খোলতে বললো,
—–তুমি কি সত্যিই নিয়ে যাবে?

—–হ্যা অবশ্যই।দেখছো না কাদছে।

—–প্রতিদিন বায়না করবে আর তুমি মেয়ে নিয়ে বোনের বাড়ি হাজির হয়ে যাবে।ওদেরও তো একটা ব্যাপার আছে তাই না।

হৃদ চিন্তিত ভংগীতে বললো,
—–হুম ঠিক বলেছিস।তাহলে এক কাজ করি?

শুভ্রা হৃদের কোর্ট খোলে দিয়ে বললো,
—–কি কাজ?

হৃদ শুভ্রার কোমড় জড়িয়ে কাছে এনে নাকে নাক ঘষে বললো,
—–আমরা শুভেচ্ছাকে একটা ছোট রুহান এনে দেই।

শুভ্রা মাথা নিচু করে নিচুস্বরে বললো,
—–হুম।

হৃদ ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—–তারমানে বউ রাজি??

শুভ্রা জানিনা বলে লজ্জায় হৃদের বুকে মুখ লুকালো।

হৃদ শুভ্রার মুখ তুলে বললো,

“ওগো মায়াবতী লাজুক লতা
তুমি আমার হৃদয়ের শুভ্রতা ”

The End

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here