হৃদয়ের_শুভ্রতা?? পর্ব~২১,২২

0
423

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব~২১,২২
#ফাবিহা_নওশীন
২১

??
পুরো ফ্যামিলি প্ল্যান করেছে দুদিনের জন্য কক্সবাজার যাবে।
নাস্তার টেবিলে বসে খাবার রেখে সবাই প্ল্যানিং করছে।রোজ খাচ্ছে আর মাঝে মধ্যে হু হা করছে।
হৃদ খাচ্ছে আর শুভ্রার দিকে বারবার আড়চোখে দেখছে।শুভ্রা প্ল্যানিং করায় ব্যস্ত।হৃদের দিকে তার নজর নেই।
হৃদ সবার উদ্দেশ্যে বললো,
—-তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলি?
হোটেল বুক করে ফেলি,তোমরা গোছগাছ করে নেও।

সবাই হৃদের কথায় সায় দিলো।
বিকেলেই ওরা বের হবে।সবাই গোছগাছ করে বেরিয়ে গেছে।হোটেলে পৌছাতে পৌছাতে অনেক রাত হয়ে গেছে।ওরা ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে যে যার রুমে রেস্ট নেওয়ার জন্য গেলো।

হৃদ ফ্রেশ হয়ে এসে শুভ্রাকে দেখে বললো,
—–আর কত মুখ ফুলিয়ে থাকবে?গতকাল থেকেই মুখ ফুলিয়ে আছো।তোমার কি মুখ ব্যথা করে না?

শুভ্রা ভ্রু কুচকে হৃদের দিকে তাকালো।
—–তুমি কি খোচা না মেরে কথা বলতে পারোনা?

হৃদ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে না বুঝার ভান করে বললো,
—–খোচা!! এই আমি তোমাকে কখন খোচা মারলাম?তুমি তো অনেক মিথ্যে কথা বলো।

শুভ্রা নাক ফুলিয়ে কপাল কুচকে হৃদের দিকে তাকালো।তারপর হাতের কাছে থাকা কুশনগুলো হৃদের দিকে ছুড়ে মারলো।
হৃদ সবগুলো কুশন এক এক করে ক্যাচ ধরে ফেললো।তারপর নিজের কাধে নিজেই চাপকে বললো,
—–আরে হৃদ ব্রাভো।কি সুন্দর ক্যাচ ধরলি।কেন যে ক্রিকেটার হলাম না।তাহলে বউ আজ গর্ব করে বলতো আমি ক্রিকেটারের বউ এসো কে কে সেল্ফি নিবে?

শুভ্রা উঠে দাড়িয়ে রাগে পা দিয়ে ফ্লোরে আঘাত করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।হৃদ মুখ টিপে হাসতে শুরু করলো।শুভ্রার পেছনে পেছনে বারান্দায় গেলো আরেকটু বিরক্ত করতে।
হোটেলের বাগানে আলো জ্বলছে।বিভিন্ন জায়গায় বসে একেকজন এই রাতের বেলায়ও আড্ডা দিচ্ছে।কোথায় গানের আসর জমেছে গিটারে টুং টাং শব্দ তুলছে।বারান্দা থেকে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।হোটেলটা সমুদ্রের পাশে হওয়ায় সমুদ্রের জলস্রোত দেখা যাচ্ছে।
শুভ্রা মুগ্ধ হয়ে রাতের পরিবেশ উপভোগ করছে।
হৃদ শুভ্রার কাধে হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো।শুভ্রা পেছনে ঘুরে কাউকে দেখতে পেলো না।তারপর বা পাশে ঘুরে হৃদকে দেখতে পেলো।শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—–তুমি এখানেও?একটু কি শান্তি দিবে না?

হৃদ মুখ বাকিয়ে বললো,
—–তাহলে কোথায় যাবো?এক কাজ করি নিচে যাই ওইযে দেখো ওখানে ওরা কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছে।গান মুটামুটি ভালো গাইতে পারি।ওদের একটা গান শুনানোর অফার করলেই আড্ডায় আমাকে নিয়ে নিবে।মেয়েগুলো কত সুন্দর।

শুভ্রা দেখলো মেয়েগুলো আসলেই নজরকাড়া।এক একটা কৃত্রিম সুন্দরী।আধুনিক ড্রেসাপ।হৃদ ঘুরে যেতে নিলেই শুভ্রা দ্রুত বললো,
——কোথায় যাচ্ছো?এই রাতের বেলায় কোথাও যাবেনা।আর যদি যাও আমি এক্ষুনি বাবাইকে ডেকে নিয়ে আসবো।ইশশ শখ হয়েছে আড্ডা দিবে।জীবনে আড্ডা দেয়নি।সুন্দর মেয়ে দেখেনি।

হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—-ওয়েট ওয়েট,,,তোমাকে কে বললো আমি বাইরে যাচ্ছি?আমি রুমে যাচ্ছি ঘুমাতে।মাথার তার কি ছিড়েছে?তারছিড়া।

শুভ্রা চোখ পাকিয়ে তাকালো।
—–কি বললে তুমি?

—–কানে কি শুনোনা?হায় আল্লাহ কেমন মেয়ে বিয়ে করলাম কানেও শুনেনা।

শুভ্রা হৃদের কথা শুনে রাগে ফুসছে।ওর ইচ্ছে করছে হৃদের মাথা ফাটিয়ে দিতে।শুভ্রা কাদো কাদো হয়ে দুহাতের আংগুল ছড়িয়ে বলল,
—–ইউ আর সো ইরিটেটিং।

শুভ্রা বিছানায় এসে ধপ করে শুয়ে পরলো।হৃদ হাসতে হাসতে শুভ্রার পাশে এসে শুতেই হৃদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পাশ কাটিয়ে শুয়ে পরলো।হৃদের ইচ্ছে করছে শুভ্রাকে আরো বিরক্ত করতে কিন্তু হৃদ নিজেকে নিজেই কড়াভাবে শাসন করলো মনে মনে।বেচারিকে অনেক জ্বালানো হয়েছে আগামীকালের জন্য কিছু জমা থাক।এখন ঘুমানো যাক।

রোজ বারান্দায় দাড়িয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছে।অনেকগুলো ছেলেমেয়ে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।রাত প্রায় ১২টা বাজছে কিন্তু তাদের হুশ নেই।তারা আড্ডা দিচ্ছে।রোজের অরিত্রের কথা মনে পড়ছে।
রোজের কাধে কেউ হাত রাখতেই বড় করে একটা শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে বললো,
——মাম্মা,তুমি ঘুমিয়ে পড়।জার্নি করে এসেছো অনেক টায়ার্ড নিশ্চয়ই।

—-তুই এখানে কি করিস?ঘুমাবি চল আমার সাথে।

—–নিচে কতগুলো ছেলেমেয়ে গল্প করছে ওদের দেখছিলাম।চলো ঘুমিয়ে পড়ি।

~~~~

সারাদিন ওরা প্রচন্ড ঘুরাঘুরি করেছে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।কিছুক্ষণ পর সূর্য ডুবে যাবে।সমুদ্রের তীরে অসংখ্য মানুষ দাড়িয়ে আছে,কেউবা ছবি তুলায় ব্যাস্ত।ওরা সূর্যাস্ত দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।হৃদ ক্যামেরা হাতে ছবি তুলছে।শুভ্রার অগোচরে শুভ্রার ছবি তুলেছে অনেকগুলো।
শুভ্রার মনে হচ্ছে কেউ ওদের ফলো করছে।সকাল থেকেই মনে হচ্ছে কেউ একজন সবসময় ওদের উপর নজর রাখছে।শুধু নজর নয় কেউ ওদের পেছনে পেছনে সব জায়গায় যাচ্ছে।শুভ্রার গভীর অনুসন্ধানও সেই ব্যক্তিকে খোজে বের করতে পারেনি।কিন্তু শুভ্রা হাল ছাড়েনি।

রোজ সমুদ্রে পা ভিজিয়ে দাড়িয়ে আছে।তীব্র বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে।রোজ বারবার সেগুলো আগলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।সূর্য অস্ত যাচ্ছে।সবার দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে।একজনের দৃষ্টি রোজের দিকে।সে দূর থেকে অপলক রোজকে দেখছে।

রোজ চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিলো।তারপর বললো,
—–আমার খারাপ সময়ের সূর্যাস্ত ঘটেছে।আগামীকাল নতুন সূর্যদয়ের সাথে সাথে রোজ নতুন করে বাচবে।নতুন উদ্যমে,নতুন করে।

শুভ্রা আনমনে হাটছে আর চারদিকে অতি সাবধানে চোখ বুলাচ্ছে।হটাৎ এক জায়গায় ওর চোখ আটকে যায়।একটা ছেলে লাল টিশার্ট পড়ে দাড়িয়ে আছে।শুভ্রার মনে হচ্ছে ওটা অরিত্র।শুভ্রা বুঝার জন্য আরেকটু কাছে গেলো।অরিত্র সেখানে থেকে সরে গেছে।শুভ্রা হাটছে আর অরিত্রকে খোজছে।
হটাৎ দেখে অরিত্র ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠছে।
শুভ্রা আরেক পা আগাতে যাবে তখনই পেছনে থেকে কেউ ওর নাম ধরে ডাকলো।সে হলো হৃদ।শুভ্রা আর আগালোনা।শুভ্রা বুঝতে পারছেনা অরিত্র এখানে কেন?তাহলে কি অরিত্রই ওদের ফলো করছিলো?কে করছিলো?হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

হৃদ শুভ্রার কাছে এসে বললো,
——শুভ্রা!!

শুভ্রা ভাবনার মধ্যে হৃদের কন্ঠ শুনে চমকে গেলো।হৃদ শুভ্রার চমকে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
—–কি হয়েছে তোমার?এমন দেখাচ্ছে কেন?আর একা একা এখানে কি করছো?

শুভ্রা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
—–না মানে এমনি এসেছিলাম।

হৃদ সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে বললো,
—–এমনি?
এমনি এমনি একা এখানে চলে এলি?

—–হ্যা।

হৃদ শুভ্রার হাত ঝাকিয়ে বললো,
—–সত্যি করে বলতো কেন এসেছিস?মনে হচ্ছিলো কাউকে খোজছিস?

শুভ্রা হৃদকে অরিত্রের ব্যাপারটা না বলার
সিদ্ধান্ত নিলো।যেখানে ও নিজেই কিছু শিওর না সেখানে হৃদকে বলে আরো ঝামেলা বাধাতে চায়না।
তাই আমতা আমতা করে বললো,
—–না মানে আমি একজনকে দেখে আমার এক ফ্রেন্ডকে মনে করেছিলাম।তাই এসেছিলাম শিওর হতে কিন্তু দেখলাম যে না সে না।

হৃদ শুভ্রার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকালেও কিছু বললো না।
—–চলো যাওয়া যাক।

হৃদের মন খচখচ করছে।শুভ্রা কাকে দেখেছে?কে ছিলো? শুভ্রা কি কিছু লুকাচ্ছে?
রাতের বেলায় হৃদ শুভ্রা পাশাপাশি শুয়ে আছে।হৃদ বিষয়টি মাথা থেকে বের করতে না পেরেই শুভ্রার দিকে ঘুরে বললো,
—–শুভ্রা ঘুমিয়ে পড়েছো?

শুভ্রার ঘুমঘুম পাচ্ছে।হৃদের কথায় ঘুরে বললো,
—–না কেন?

—–তুমি কি তখন আসলেই তোমার এক ফ্রেন্ডকে মনে করে ভুল করেছিলে না অন্য কিছু?

শুভ্রা কাচুমাচু করে বললো,
—–হুম,আমি আমার পরিচিত একজনকে ভেবেছিলাম।দূর থেকে তেমনই মনে হচ্ছিলো কিন্তু শিওর না।কেন বলোতো?

—–না এমনি।

শুভ্রা আবারও ঘুরে গেলো।মনে মনে ভাবছে,
—–আমার মনে হচ্ছে ওটা অরিত্রই ছিলো।আমি ভুল দেখিনি।কিন্তু তোমাকে না বলার কারণ তুমি জানতে পারলেই হাংগামা শুরু করে দিবে।রোজকে যেকারণে আনা হয়েছে তোমার জন্য সেড়াও ভেস্তে যাবে।ওর মন খারাপ হয়ে যাবে।
আগে ঢাকা ব্যাক করি তারপর আমি তোমাকে দেখছি অরিত্র।জানতে চাই তোমার সমস্যাটা কোথায়?কি চাই তোমার?

রোজ এখন অনেকটাই ঠিক আছে।আগের মতো মুখ ভার করে চুপ করে থাকেনা।এখন সবার সাথে কথা বলে,হাসে।
ওরা আজ ঢাকা ব্যাক করবে।রোজ গার্ডেনে বসে চিপস খাচ্ছে।কতদিন পর চিপস খাচ্ছে।
কেউ একজন রোজকে দেখছে দূর থেকে।

রোজের মাম্মা এসে রোজকে নিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর ওদের বের হতে হবে।

অবশেষে ওরা ঢাকা ব্যাক করেছে।
আজ থেকে রোজ আবার ভার্সিটি যাবে।রোজ রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নাস্তা করতে এসেছে।
সবাই রোজকে এভাবে দেখে অনেক হ্যাপি।শুভ্রার ফোন বাজতেই শুভ্রা ফোন হাতে নিয়ে উঠে গেলো।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে আছে।তারপর উঠে ওর পেছনে পেছনে গেলো।

শুভ্রা ফোন রিসিভ করে বললো,
—–হ্যা অনি বল।

অনি অপরপাশ থেকে বললো,
—–কতদিন হলো ড্রান্স স্কুলে আসিস না।কবে আসবি?

—-এই বিয়ের ঝামেলা মিটতে না মিটতে আরেকটা সমস্যা হয়েছিলো।অনেক দিন হলো যাই না।দেখি আজ একবার আসবো।

অনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
—–সত্যি তাহলে আয়।জিজুকে নিয়ে আসিস।

শুভ্রা বললো,
—–জিজুকে দিয়ে কি হবে?তোরা লুচু মেয়ে যদি আমার হাসব্যান্ডের দিকে নজর দিস?আনবোনা।

অনি মন খারাপের ভান করে বললো,
—–এতো বড় অপমান?

তারপর শুভ্রা অনি দুজনেই হোহো করে হেসে দিলো।
ফোন রেখে ঘুরতেই শুভ্রা চমকে যায়।বুকে হাত দিয়ে বলে,
—–মাগো…. তুমি? তুমি কখন ভূতের মতো এখানে উদয় হলে?

হৃদ কথার জবাব না দিয়ে বললো,
—–কার সাথে কথা বলছিলে?

শুভ্রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।তারপর বললো,
—–ফ্রেন্ড।

—–কেমন ফ্রেন্ড?ফ্রেন্ডের সাথে কেউ এতো সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলে?

শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—–তাহলে কি খারাপ ভাবে কথা বলে?
সুন্দর ভাবে কার সাথে কথা বলে প্রেমিকের সাথে?তাহলে তাই।আজাইরা।

শুভ্রা বিরবির করতে করতে চলে গেলো।
হৃদ ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবছে।
শুভ্রা বিয়ের পর আজ প্রথম বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।
নীল শাড়ি,নীল চুড়ি,কানে স্টোনের এয়ারিং,চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক,খোলা চুল।সাজ কমপ্লিট।

শুভ্রাকে ব্যাগ নিয়ে বেরুতে দেখে হৃদ শুভ্রাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,
—–কোথায় যাচ্ছো?

শুভ্রা বেরুতে বেরুতে বললো,
—–ফ্রেন্ডদের সাথে মিট করতে।

হৃদ কিছু একটা ভেবে বললো,
—–চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দেবো।

শুভ্রা নিজের গাড়ির চাবি নিয়ে বললো,
——ধন্যবাদ বাট দরকার নেই।আমি একাই যেতে পারবো।

হৃদ শুভ্রার হাত থেকে চাবি নিয়ে বললো,
—–ড্রাইভার নিয়ে যাও।

শুভ্রার দেরি হয়ে গেছে তাই আর কথা বাড়ালো না।শুভ্রা ড্রাইভারের সাথেই যাচ্ছে।

শুভ্রা গাড়ির সিটে বসে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে।হটাৎ বাইরে ওর চোখ আটকে গেলো।কানের হেডফোন খোলে গ্লাস খোলে বাইরে ভালো করে দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো।গাড়ি থামতেই শুভ্রা দ্রুত পায়ে নেমে গেলো।
অরিত্র একটা শপে ঢুকছে।

শুভ্রা বিরবির করে বলছে,
“আজকে তোমাকে পেয়েছি অরিত্র।আজ আমি সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই তবে ছাড়বো।”

অরিত্র সিড়ি দিয়ে উঠছে।শুভ্রাও পেছনে পেছনে যাচ্ছে।অরিত্রের ফোন বেজে উঠলো।অরিত্র পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো।
অপরপাশ থেকে কিছু একটা বললো যার কারণে অরিত্রের মুখে হাসি ফুটলো।
—–তাহলে রোজ ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছে,গুড।

অরিত্রের মুখে কথাগুলো শুনে শুভ্রা থমকে যায়।তারপর দ্রুত পায়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো।
অরিত্র শুভ্রাকে দেখে চমকে যায়।
——তুমি!(সেইম ক্লাসে পড়াশোনা করায় একে অপরকে তুমি করে বলে)

শুভ্রা দুহাত ভাজ করে অরিত্রের সামনে দাড়িয়ে বললো,
—–তোমার ব্যাপারটা কি বলোতো?
তুমি তো রোজের সাথে ব্রেকাপ করে ফেলেছো তবে ওর খোজ কেন নিচ্ছো?

অরিত্র দৃষ্টি লুকিয়ে বললো,
—–আমি কেন রোজের খোজ নেবো?আমাকে একজন জাস্ট ফোন করে জানালো আমি উত্তর দিলাম।এই,,আর কিছু না।

শুভ্রা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—–আচ্ছা তাই!! তবে কক্সবাজার কেন গিয়েছিলেন?আমাদের মানে রোজকে কেন ফলো করছিলেন?
ওয়েট ওয়েট এটা বলোনা যে এটা কাকতালীয়।কারণ আমি বিশ্বাস করবোনা।

অরিত্র কাচুমাচু হয়ে বললো,
—–আমি এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইনা।আমার একটা কাজ আছে।

অরিত্র চলে যেতে নিলেই শুভ্রা অরিত্রের হাত ধরে ফেলে।অরিত্র অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়ে।
শুভ্রা বললো,
—–বোন হিসেবে ভাইয়ের হাত ধরে অনুরোধ করছি প্লিজ আমাকে একটু সময় দেও।একটু কথা বলতে চাই।

অরিত্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।ওরা শপের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।অরিত্র রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে।
শুভ্রা বললো,
——তোমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে বাট ইভেন তুমি রোজের কেয়ার করো।কেন?
তুমি কি রোজকে এখনো ভালোবাসো?যদি ভালোই বাসো তবে ব্রেকাপ কেন করলে?
রোজ এখনো কষ্ট পাচ্ছে।হয়তো তুমিও পাচ্ছো।

অরিত্র ঘুরে বললো,
—–দেখো অনেক লাভ কাপল থাকে কিন্তু তাদের পরিনতি বিয়ে পর্যন্ত যায়না।আমাদেরটাও তাই।আমি রোজের কেয়ার করি,রোজ ভালো থাকুক এটা চাই কিন্তু আমি রোজের সাথে থাকতে চাইনা।আমি রোজের সাথে অন্যায় করেছি এটা মানছি কিন্তু আমার কিছু করার ছিলোনা।আর এজন্য আমি জাস্ট সরি বলতে পারি আর প্রে করতে পারি যাতে রোজ ভালো থাকে।এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।

শুভ্রার প্রশ্ন,
——কেন নেই সেটাই তো জানতে চাই।

—–এর উত্তর আমি দিতে পারবোনা।তবে তোমরা চেষ্টা করো রোজ যাতে আমাকে ভুলে যায়,নতুন করে সবটা শুরু করে।

—–এত সহজ?

—–কঠিনও নয়।জীবন আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয় তাই বলে কি আমরা উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করিনা?রোজও পারবে।

——তোমার কি রোজের জন্য কোনো ফিলিংস নেই,?তুমি কি রোজের সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবে?

অরিত্র আবারো রেলিঙের দিকে ঘুরে গেলো।কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললো,
—–জানিনা,,আর জানতেও চাইনা।যদি জানতে চাও কেন রোজের সাথে ব্রেকাপ করেছি তবে বলবো আমি রোজের সাথে থাকতে পারছিলাম না তাই ব্রেকাপ করেছি।
রোজের খেয়াল রেখো।

অরিত্র চলে গেলো শুভ্রা আর চেষ্টা করে নি অরিত্রকে থামাতে।শুভ্রা বুঝে গেছে অরিত্রের মুখ থেকে এর বেশি কিছুই বের করা সম্ভব না।
অরিত্র তোমার সাথে কথা বলে এটা তো শিওর হয়েছি তুমি রোজকে ভালোবাসো।তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো।কিন্তু কি?

“শুভ্রা”
শুভ্রার ভাবনার ছেদ ঘটলো হৃদের কথায়।

শুভ্রা হৃদকে দেখে চোখ কপালে।হৃদ এখানে কি করে এলো?
শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তখনই হৃদ শুভ্রার হাত চেপে ধরে।এতটা জোরে চেপে ধরেছে যে মনে হচ্ছে মাংসভেদ করে হাড্ডি ভেঙে যাবে।
শুভ্রা হৃদকে ভালো করে দেখে ঘাবড়ে গেলো।
হৃদকে আহত লাগছে।দেখে বুঝাই যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে।ওর চুল উসকো খুসকো,চোখ রক্তলাল হয়ে আছে।যেনো জ্বলন্ত আগুন।মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।রাগে ওর শরীর কাপছে।

শুভ্রা বুঝতে পারছেনা হৃদ এমন রিয়েক্ট কেন করছে??

চলবে…..

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??

পর্ব-২২

#ফাবিহা_নওশীন

???
অবশেষে গাড়ি থামলো একটা বাংলোর সামনে।শুভ্রা গাড়ির গ্লাস ভেদ করে বাইরেটা দেখে চমকে উঠে।হৃদ ওকে বাড়িতে না এনে ওকে একটা বাংলোতে কেন আনলো।।
এতক্ষণ হৃদের রণমুর্তি দেখে চুপ থাকলেও আর চুপ করে থাকতে পারছেনা।
শুভ্রা মুখ খোলে নিচুস্বরে বললো,
—–আমরা এখানে কেন এসেছি?

হৃদ কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ির দরজা খোলে বের হয়ে শুভ্রার পাশের দরজা খোলে বললো,
—–নাম।

শুভ্রা নামছেনা তাই হৃদ শুভ্রাকে টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে।শুভ্রার পড়নের শাড়ি পায়ে বেধে বারবার পড়ে যেতে নিচ্ছে কিন্তু হৃদের টানার গতি সে সুযোগ দিচ্ছে না।

হৃদ শুভ্রাকে ভিতরে নিয়ে একপ্রকার ছুড়ে মারে।শুভ্রা তাল মেলাতে না পেরে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে যায়।এতে করে দু’হাতে পায়ে প্রচন্ডভাবে ব্যথা পায়।শুভ্রার চোখে পানি চলে এসেছে।উঠার শক্তি পাচ্ছেনা।

হৃদ টেবিলে একটা লাথি মারে টেবিল বিকট শব্দে ভেঙে যায়।
তারপর চিতকার করে বললো,
—–ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি,,এই তোর ফ্রেন্ড? অরিত্র? যে কিনা আমার নিষ্পাপ বোনের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
ছিহ ছিহ শুভ্রা!!ছিহ!!

শুভ্রা উঠে হৃদের বরাবর দাড়িয়ে বললো,
—–আমি ওর সাথে দেখা করতে যাইনি।আর না ও আমার বন্ধু।

হৃদ দাতে দাত চেপে বললো,
—–রাইট ও তোর বন্ধু না।ও তোর বিশেষ কেউ তাই তো?

শুভ্রা চিতকার করে বললো,
—–হৃদ!!

হৃদ শুভ্রার গলা চেপে ধরলো।
—–আবার চিতকার করিস?তুই কি করে এটা করতে পারলি?
আমার ভালোবাসার এই মূল্য দিলি?এত ঘৃণা করিস আমাকে?এতটাই যে আমার সাথে সাথে আমার বাচ্চা বোনটাকেও ছাড় দিলিনা।আমি নাহয় তোর শত্রু তোর কাছে অপরাধী কিন্তু রোজ কি করেছে?ওকে কেন এভাবে কষ্ট দিলি?ও তো তুই বলতে জান।ও যখন জানবে কি হবে জানিস?
জানিস তুই?

হৃদ শুভ্রাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।শুভ্রা গলায় হাত দিয়ে কাশতে শুরু করলো।ওর নিশ্বাস আরেকটুর জন্য বের হয়ে যেতো।

শুভ্রা হৃদের কথা শুনে কাদতে লাগলো।শুভ্রার কান্না দেখে হৃদের মাথায় আগুন ধরে গেলো।
হৃদ শুভ্রাকে তুলে ধরে দাড় করিয়ে দুবাহু চেপে ধরলো।তারপর বললো,
—–নেকা কান্না কেন করছিস?কেন হ্যা?
এই অরিত্রই তোর সেই প্রেমিক তাইনা?এর সাথে মিলেই তোর ভিতরে জমানো প্রতিশোধ নিয়েছিস তাই না?শান্তি পেয়েছিস? বল শান্তি পেয়েছিস?

শুভ্রা হৃদকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।তারপর বললো,
—–তুমি হার্টলেস এটা জানতাম কিন্তু এতটা নিচ মানসিকতার মানুষ এটা জানতাম না।তুমি আমার সম্পর্কে এসব ভাবছো কি করে?হ্যা তোমার প্রতি আমার একটা ক্ষোভ আছে তাই বলে আমি রোজের লাইফ নিয়ে খেলবো?

—–তুই তাই করেছিস।এতটাই যখন ঘৃণা করিস তাহলে আমাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলতি শান্তি পেতাম কিন্তু এখন,,,
এখন আমার ভিতরের সব জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।কিন্তু মারা যাচ্ছিনা।এর চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয় শুভ্রা।তুই আমাকে মেরে ফেলতি।আমি কি করে মেনে নেবো তুই…
না আমি মানতে পারছিনা।
হৃদ মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে এদিক সেদিক পাগলের মতো দেখছে আর হাটছে।শুভ্রা নিজেকে সামলে নিচ্ছে।হৃদ যে রাগের মাথায় বড়সড় গন্ডগোল পাকাবে বুঝতে পারছে।
হৃদ কিচেনে গেলো।শুভ্রা হৃদের পেছনে পেছনে যাচ্ছে।হৃদ কিচেনের সব ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে।
কিছু একটা খোজছে।
শুভ্রা বারবার হৃদ হৃদ বলে চিতকার করছে।
হৃদ অবশেষে মাছ মাংস কাটার একটা বড় ছুরি খোজে পেলো।
শুভ্রা হৃদের হাতে ছুরি দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
—–হৃদ কি করছো?

হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—–ভয় পাস না তোকে কিছু করবোনা।আর না তোকে ফাসাবো।আমি জাস্ট আমার আর রোজের অবস্থা মেনে নিতে পারছিনা।আমি এটা জেনে বাচতে পারবো না যে তুই আমাকে ভালোবাসিস না।তুই পুরো পরিবারের উপর বদলা নিতে চাস।আমি মানতে পারছিনা তুই এসব করেছিস।আমি এই শুভ্রাকে চিনিনা,জানিনা।শুভ্রা এমন হতে পারে না।কিছুতেই না।

শুভ্রা অনুনয়ের সুরে বললো,
—–হৃদ আমি আসলেই এমন নই।তুমি ভুল বুঝেছো আর ভুল করে রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছো।তুমি ওটা ফেলো তারপর আমার কথাগুলো শুনো।তাহলে তুমি সব বুঝতে পারবে।

—–নাহ,শুভ্রা।তোর আর নতুন করে কিছু বলার থাকতে পারে না।

—–আছে,বলার আছে।তুমি অরিত্রকে নিয়ে ভুল ভাবছো।ঘটনা অনুযায়ী ভাবাটা স্বাভাবিক।কিন্তু সবসময় চোখের দেখা ঠিক হয়না।চোখের দেখাতেও,শুনাতেও ভুল থাকে।আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেও।প্লিজ হৃদ প্লিজ।

—–অরিত্রের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই,,তাহলে তুই কেন ওর হাত ধরেছিস?হাত ধরে কি গল্প করছিলি?

শুভ্রা চোখ বন্ধ করে চিতকার করে বললো,
—–স্টপ!হৃদ অনেক হয়েছে।আমি আর নিতে পারছিনা।আমি ওকে ভাই ডেকে এসেছি।
ওর সাথে আমার রোজ আর তোমার যে পরিত্র সম্পর্ক আমারও তাই।

হৃদ শুভ্রার কথা শুনে থমকে গেলো।শুভ্রা হৃদের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ছুরি নিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,
—–তুমি যা ভাবছো তার কিছুই নয়।তুমি আমাকে আরো একবার ছোট করেছো হৃদ।আমি বন্ধুদের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিলাম।পথে আমি অরিত্রকে দেখতে পাই।তারপর ওর সাথে কথা বলার জন্য গাড়ি থেকে নেমে ওর পিছু নেই আর রোজের ব্যাপারে কথা বলি।

শেষের কথা শুনে হৃদ আবারো রেগে গেলো।চোখ ছোট ছোট করে দাতে দাত চেপে বললো,
—–ওই স্কাউন্ডারের সাথে তুই রোজের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিস? কি বলতে গিয়েছিস হ্যা?রোজের লাইফে ব্যাক করতে? নাহলে আমার বোন মরে যাবে।রোজ ওর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে?

——আমি এসব কেন বলবো?আমি ওকে কক্সবাজার দেখেছিলাম।ও রোজকে ফলো করছিলো ইভেন এখনো ও রোজের ব্যাপারে খোজখবর নেয় তাই বলতে গিয়েছিলাম কেন করছে এসব?ওর মোটিভ জানতে গিয়েছিলাম।

—–ওই কুকুরের বাচ্চা এখনো রোজের পেছনে পড়ে আছে?ওকে এবার আর আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবেনা।
আর তুই..কক্সবাজারে ওকে দেখেছিস?আমাকে জানাস নি?কেন বলিস নি তুই হ্যা?

—–হৃদ কারণ আমি ব্যাপারটা শিওর হতে চেয়েছিলাম।আমার একটা ডাউট ছিলো।আর আজকে কথা বলে সেটা দূর হয়েছে।অরিত্র আজো রোজকে ভালোবাসে।

হৃদ তাচ্ছিল্য করে বললো,
—–এটা তোকে অরিত্র বলেছে?

শুভ্রা মাথা নিচু করে ফেললো।তারপর বললো,
—–না তবে আমি বুঝেছি।আমি ওর চোখ দেখে বুঝেছি।

—–বাহ!!আজকাল মানুষের চোখ দেখে এতোকিছু বুঝতে পারে শুভ্রা!ইন্টারেস্টিং।

শুভ্রা হৃদের দিকে তাকাতেই হৃদ বললো,
—–তুই ওর সাথে আজকের পর আর কথা বলবিনা।আর না এই ব্যাপারে কোনো ইন্টারফেয়ার করবি।

—–আমি সত্যি বলছি অরিত্র কিছু একটা লুকাচ্ছে।ও এখনো রোজকে ভালোবাসে।

—–হ্যা আর এটা তুই ওর চোখ দেখে বুঝেছিস!
হৃদ শুভ্রার দুবাহু চেপে ধরে কাছে এনে বললো,
—–নে দেখ,,আমার চোখ দেখ।দেখ কিছু বুঝতে পারছিস কিনা।
শুভ্রা হৃদের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।

হৃদ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–কি বুঝতে পারলিনা তো?পারবিওনা।তুই যদি চোখের ভাষা বুঝতে পারতি তাহলে আমার চোখের ভাষা কেন বুঝিস না।কেন বুঝিস না তুই আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।কেন বুঝতে পারছিস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?যদি বুঝতে পারতি তাহলে তুই কিছুতেই আমার সাথে এতবড় গেম খেলতে পারতিনা।আমাকে না ভালোবেসে থাকতে পারতিনা,কিছুতেই না।
ভালোবাসার কাছে তোর রাগ, অভিমান, ক্ষোভ হেরে যেতো।

শুভ্রা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো হৃদের থেকে।তারপর বললো,
—–আমি তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারি কিন্তু তুমিই আমাকে বুঝতে পারোনি।আমি কি চাই সেটা তুমি কখনো বুঝেছো?বুঝার চেষ্টা করেছো?সবসময় নিজের মতো সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছো।
হ্যা আমি ভালোবাসি,,ভালোবাসি তোমাকে।আজো ভালোবাসি আগামীতেও বাসবো কিন্তু অতীত আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা না আমার জীবনের কেটে যাওয়া ভুমিহীন সাতটি বছর।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা আর না একসেপ্ট করতে পারবো।

হৃদ জোরপূর্বক মলিন হেসে বললো,
—–সব মেনে নিলাম।তুই যাতে খুশি।বাট আমি এটাই বলবো যে আমি তোর সাথে কোনো অন্যায় করিনি।

শুভ্রা রেগে গিয়ে হৃদের বুকে ধাক্কা মেরে বললো,
——অন্যায় করোনি?জন্মের পর থেকেই তোমার কাছে অবহেলিত হচ্ছি।ছোট থেকেই খেলার সাথী হিসেবে তোমাকেই চিনেছি,কিন্তু এর বদলে পেয়েছি অবহেলা,বকুনি আর মার।
তারপর যখন বুঝতে শিখেছি ১২বছর বয়স থেকে তোমাকে ভালোবেসেছি।কিন্তু কি পেয়েছি অপমান, অবহেলা, লাঞ্চনা,মার।
এগুলো অন্যায় নয়,,শুধু বলে দিতে ভালোবাসো না এসবের কি দরকার ছিলো?
এগুলো অন্যায় নয়?

শুভ্রা হৃদকে আবারো ধাক্কা দিলো।হৃদ কয়েকপা পিছিয়ে গেলো।তারপর বললো,
—–তুই তো জানিস কেন করেছি?

—–হ্যা জানি।তবে সেটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবার পর জেনেছি।২২বছর বয়সে জেনেছি।
আমি তো সারাজীবন জেনে এসেছি হৃদ নামের ব্যাক্তিটি আমাকে একবিন্দুও ভালোবাসেনা,আমাকে সহ্য করতে পারেনা।এটাই জেনেছি,মেনেছি,কষ্ট পেয়েছি কিন্তু তুমি আজীবন ইনফ্যাক্ট বিদেশে গিয়েও এটা জেনেছো শুভ্রা নামের এক সহজ সরল বোকাসোকা মেয়ে আছে যে তোমাকে ভালোবাসে,তুমি বলতে পাগল।
আমি কি পেয়েছি?
এই যে দেখো রোজের অবস্থা।ওর পাশে সবাই আছে,ওর জন্য কত কি করছে।ও অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে।কিন্তু আমি?আমার পাশে কে ছিলো?আমি দীর্ঘ ৭দিন ঘরবন্দী ছিলাম তারপর নিজের পাশে নিজেই থেকেছি।

হৃদ শুভ্রার দিকে এগিয়ে বললো,
—–তুই জানিস তুই কতটা অবুঝ ছিলি।তোকে দূরে রাখতেই এসব করেছি।

—–আমি কি দূরে ছিলাম?আমাকে দূরে রাখতে পেরেছিলে?

—–না হাজার চেষ্টা করেও পারিনি তাই তো একেবারে দূরে চলে গিয়েছিলাম।

—–বেশ করেছিলে।তাহলে কেন ফিরে এলে?
শুভ্রা কাদতে কাদতে বসে পড়ল।

—–না ফিরে এলে খুশি হতি?

শুভ্রা অভিমানে বলে ফেললো,
—–হ্যা,হ্যা।

হৃদ শুকনো হেসে বললো,
—–তোকে একটা কথা বলি,
তুই তখন অনেক ছোট ৩বছর বয়স,আমিও খুব বড় না মাত্র ৬বছর বয়স।মাম্মা বেষ্ট বিজনেস ওমেন অফ দ্যা ইয়ার এওয়ার্ড পেয়েছিলো।আমরা সবাই গিয়েছিলাম ওই প্রোগ্রামে।মাম্মা সেখানে ছোট্ট একটা বক্তব্য রেখেছিলো যার পুরোটা জুড়ে পাপা ছিলো,তার স্বপ্নের কথা ছিলো।আমার সবকিছু মনে নেই।তবে এর সারসংক্ষেপ ছিলো এই যে,
“মাম্মা অনেক অবহেলিত ছিলো কিন্তু তার চোখজুড়ে স্বপ্ন ছিলো।যেখানে সে ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিলো আর সেটা পাপার জন্য সম্ভব হয়েছিলো।পাপা শুরু মাম্মার ভালোবাসার মানুষই ছিলো না,মাম্মার চোখে সবচেয়ে সম্মানিত পুরুষ ছিলো।”
আমি বুঝতে পেরেছিলাম সব মেয়ের একটা স্বপ্ন থাকে সংসারের বাইরেও একটা জগৎ চায়।স্বামী,বাবার পরিচয়ের বাইরেও একটা পরিচয় চায়।নিজের পরিচয়।তাই আমি চেয়েছিলাম তোর একটা নিজস্ব স্বপ্ন থাকুক।সেই স্বপ্নের জগৎ জুড়ে তোর বিচরণ থাকুক।লাভ ইজ দ্যা পার্ট অফ লাইফ।নট লাইফ।তুই লাইফে কিছু একটা কর।কিন্তু তুই এতটা পাগল হয়ে পড়েছিলিস যে ঘরকুনো হয়ে পড়েছিলি,,আমার ঘর তোর দুনিয়া ছিলো।৪০এর বেশি নাম্বার তোর আসতোই না।আর যত উল্টো পাল্টা আবদার।
এই যে সেদিনের পর থেকে তুই ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড কখনও হোস নি।নাচের জগতে এত নাম করেছিস,ড্রান্স স্কুল খোলেছিস,মডেলিং করছিস।এসব কিভাবে হলো?এগুলো তোকে তৃপ্তি দেয়না?
এমন নয় আমি তোকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দিয়েছি।আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেছি।তোর পড়াশোনা শেষ হয়েছে,ফিরে এসেছি,বিয়ে করেছি।
মনে রাখিস আমি তোর জন্য সব ছেড়েছি কিন্তু তুই আমার জন্য তোর রাগ,অভিমান,ক্ষোভ ছাড়তে পারিস নি।
তোর জন্য এতকিছু করেও তোর চোখে অপরাধী হয়েই রইলাম।কি আর করা?

হৃদ কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বাইরে চলে গেলো।শুভ্রা ওভাবেই বসে আছে।হৃদের বলা কথাগুলো ভাবছে।

কিছুক্ষণ পর শুভ্রার ফোনে একটা মেসেজ এলো।শুভ্রা দেখলো হৃদের ভয়েস মেসেজ,,
“শুভ্রা তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সরি।আসলে অরিত্রের সাথে তোকে ওভাবে কথা বলতে দেখে ভুল ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম।এর জন্য আমি লজ্জিত।পারলে ক্ষমা করে দিস।ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসছে তোকে বাসায় পৌছে দেবে।”

~~~~

শুভ্রা বাসায় ফিরে আর রুম থেকে সারাদিন বের হয়নি।খায়নি।রুমে শুয়ে শুয়ে হৃদের বলা কথা গুলো ভাবছে।
“ভালোবাসা ভালোবাসা করে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।পুরো দুনিয়া ভুলে গিয়েছিলাম।ভালোবাসার বাইরেও কিছু আছে ভুলেই গিয়েছিলাম।যে মানুষটার জন্য আমি দুনিয়া চিনেছি তাকেই কষ্ট দিচ্ছি?আমি ভুল করেছি।রাগ,জেদে অন্ধ হয়ে গিয়েছিস শুভ্রা।”
শুভ্রা ফোন বের করে হৃদকে ফোন করলো কিন্তু হৃদের ফোন বন্ধ।রাত হয়ে এসেছে কিন্তু বাড়িতে ফিরেনি।শুভ্রা হৃদের অফিসে ফোন করে জানতে পারলো অফিসে আজ যায়নি।

শুভ্রা ভয় পেয়ে গেলো।ওর হৃদের জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে।শুভ্রা আবারো হৃদকে ফোন করছে কিন্তু অফ বলছে।
শুভ্রা তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে হৃদের বাড়িতে না ফেরার কথা জানালো।অফিসে যায়নি এটাও জানালো।
সবাই শুভ্রার মতো অস্থির হয়ে পড়েছে।বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছে কিন্তু হৃদের খবর কোথাও পাচ্ছেনা।

রাত১টা।
সবাই এখনো হৃদের জন্য অপেক্ষা করছে।শুভ্রা কেদে কেদে চোখ ভাসাচ্ছে হৃদের মাম্মা শুভ্রাকে প্রশ্ন করলো,
—–তোর সাথে কি হৃদের কিছু হয়েছে?

শুভ্রা চোখের পানি মুছে কাচুমাচু করে বললো,
—–সকালে একটু ঝগড়া হয়েছিলো।

হৃদের মাম্মা বুঝতে পারলো হৃদ রাগ করেই বাড়ি ফিরছেনা।রাগ কেটে গেলে বাড়িতে ফিরে আসবে।কিন্তু তবুও নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা।এতো রাত হয়ে গেছে যদি কোনো বিপদ হয়।
অপরদিকে শুভ্রা কেদেই যাচ্ছে।
ওর ভয় হচ্ছে।হৃদ শেষের কথাগুলো যেভাবে বলেছিলো,কেন জানি ওর মনে কু ডাকছে।

শুভ্রা পিটপিট করে চোখ খোলে দেখে সকাল হয়ে গেছে।সোফায় মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছে।শুভ্রা কখন ঘুমিয়ে গেছে হুশ নেই।শুভ্রা উঠে বসে পড়ল।ওর ব্রেইন ওকে একটা কথাই জানান দিচ্ছে সেটা হৃদ।
শুভ্রা হৃদের নাম ধরে ডেকে উঠলো।
—–হৃদ!! হৃদ!!

শুভ্রার মাম্মা শুভ্রার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
—–কি হয়েছে?

শুভ্রা বিচলিত হয়ে বললো,
—–হৃদ ফিরেছে মাম্মা?

শুভ্রার মাম্মা মাথা নিচু করে বললো,
—–না,,তোর বাবাই,পাপা হৃদকে খোজতে গেছে।

শুভ্রা আবারো কেদে দিলো।
—–হৃদ তুমি কোথায় চলে গেলে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here