#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব~২৩,২৪
#ফাবিহা_নওশীন
২৩
??
সকাল পেড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে।মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে।পুলিশ সবরকম চেষ্টা করছে।
হৃদ আর শুভ্রার পাপা হৃদকে এদিক সেদিক খোজছে।তারা কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে ফিরেছে।শুভ্রা রোজের কাধে হেলান দিয়ে বসে আছে।খাওয়া নেই, টেনশন করার কারনে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে।
হৃদের মাম্মা,দাদি,নানি,বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।
রোজ হটাৎ বলে উঠে,
—–ভাইয়া!!!
সবাই দরজার দিকে চোখ দিলো।হৃদ দাড়িয়ে আছে।ওকে বিধ্বস্ত লাগছে।চুল এলোমেলো,মুখ ফ্যাকাসে শুকিয়ে গেছে,শার্টের দুতিনটা বোতাম খোলা,এক হাতা উঠানো আরেকটা নামানো, হাতে গায়ের কোর্ট ফ্লোর ঘেষে আছে।শুভ্রা ঢলতে ঢলতে উঠে দাড়িয়ে হৃদের কাছে গিয়ে হৃদকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিলো।তারপর বিরবির করে কিছু একটা বলছে।
কান্নার কারণে কথা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না।
শুধু বুঝা যাচ্ছে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে?
হৃদের মনে হাজারো অভিমান জমে থাকলেও শুভ্রার কান্নার কাছে হার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।হৃদের মন গলে যাচ্ছে।একহাত শুভ্রার পিঠে রাখে।পুরো পরিবার প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে হৃদের দিকে চেয়ে আছে।
হৃদ সবার দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে নিলো অপরাধীর মতো।হটাৎ শুভ্রা শরীর ছেড়ে দিলো।হৃদ শুভ্রাকে দু’হাতে ধরে ফেললো।
সবাই দৌড়ে এলো।
হৃদ শুভ্রাকে কোলে তুলে নিলো।শুভ্রার পাপা মাম্মা বিচলিত হয়ে পড়লো।
হৃদের পাপা বললো,
—–রিলেক্স এভ্রিওয়ান।অতিরিক্ত টেনশনে সেন্স হারিয়েছে।হৃদ ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দে।তারপর ফ্রেশ হয়ে নে।
বাকি কথা পরে হবে।
হৃদ শুভ্রাকে উপরে নিয়ে গেলো।বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।
শুভ্রা তবুও চোখ খোলছেনা।হৃদ ফ্রেশ হয়ে এলো।শুভ্রার পাশে বসতেই শুভ্রা চোখ মেললো।শুভ্রা চোখ খোলে হৃদকে পাশে বসে থাকতে দেখে উঠে বসতে চাইলেই হৃদ হাতের ইশারায় বাধা দেয়।
—–একদম উঠবিনা।শুয়ে থাক।আমি রুমে এসে যেনো দেখি এভাবেই আছিস।
শুভ্রা কিছু বলতে চাইলে হৃদ আংগুল নিজের ঠোটে রেখে বললো,
—–শিসসস..কোনো কথা নয়।
হৃদ ধীরপায়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।সবাই হাজার প্রশ্ন নিয়ে ওকে ঘিরে ধরবে।
হৃদ নিচে যেতেই শুভ্রার পাপা ওর সামনে এসে দাড়ালো।হৃদ সবার উদ্দেশ্যে বললো,শুভ্রার জ্ঞান ফিরেছে।
শুভ্রার পাপা বললো,
—–ব্যাপার কি তোমার হৃদ?বাড়ির সবাইকে টেনশনে ফেলে সারারাত কোথায় ছিলে?এমন ছেলেমানুষী তোমার কাছ থেকে আশা করি নি।শুভ্রার সাথে এমনটা কি করে করতে পারলে?মেয়েটা আমার শেষ হয়ে যাচ্ছিলো তোমার চিন্তায়।গতকাল থেকে একটা দানাপানি মুখে নেয়নি।আমি অনেক ভরসা করে শুভ্রাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি আর তুমি এই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলে?
হৃদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রার মাম্মা সামনে গিয়ে বললো,
—-আহ চুপ করো তো।এসব পরে বলতে পারবে।
আপু(হৃদের মাম্মা)হৃদকে খেতে দেও।
হৃদের মাম্মা ছেলেকে টেবিলে নিয়ে বসালো।হৃদ টেবিলে বসে বললো,
—–তোমাদের সবাইকে টেনশনে ফেলার জন্য দুঃখীত।কিন্তু আমি অনেক অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম ইনফ্যাক্ট এখনো আছি।কি হয়েছে এটা কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করোনা আমি বলতে পারবোনা।ফেসে গেছি।এর থেকে বেরুতে পারছিনা।এ নিয়ে প্লিজ কেউ আমাকে প্রশ্ন করোনা।আমার সমস্যা আমাকে বুঝে নিতে দেও।
আর হ্যা কাকাই আমি শুভ্রাকে কষ্ট দেইনি।আমি ওর সবকিছুর যথেষ্ট কেয়ার করি।যা কষ্ট দেওয়ার ছোটবেলায় দিয়েছি।
ছোটমা শুভ্রার জন্য খাবার পাঠাও।
শুভ্রার মাম্মা মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে গেলো।
হৃদকে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করে নি।হৃদের পাপা প্রশ্ন করতে চাইলেও হৃদের মাম্মা ইশারায় না করে।
~~~~~
হৃদ গার্ডেনে বসে আছে।ওর পাপা ওর
কাছে গিয়ে বসলো।তারপর কাধে হাত রেখে বললো,
—–জানিনা কি প্রব্লেমে আছিস।জানতেও চাইনা।শুধু বলবো সব সমস্যার সমাধান আছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করে ফেল।যদি শুভ্রার সাথে কোনো সমস্যা হয় তাহলে দুজনে একসাথে বসে সমস্যা নিয়ে কথা বল।
দু’জন দু’জনের ইগোকে একদিনের জন্য অন্যপাশে রেখে মন খোলে কথা বল।
হৃদ পাপার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে শায় দিলো।
হৃদের পাপা মুচকি হেসে হৃদের চুল এলোমেলো করে দিয়ে উঠে গেলো।
.
.
হৃদ সন্ধ্যায় রুমে গিয়ে শুভ্রাকে রুমে পায়নি।শুভ্রাকে ঘরে না পেয়ে হৃদ কিছুটা টেনশনে পড়ে যায়।তারপর ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।
ছাদে ঠান্ডা বাতাস বইছে।হৃদের পাতলা শার্ট ভেদ করে ঠান্ডা বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে।
—–বাবারে এত ঠান্ডা কেন?
শুভ্রা রেলিঙ ধরে চোখের পানি ফেলছিলো।হৃদের কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলো।
শুভ্রার জামা ওড়না তীব্র বাতাসে উড়ছে।হৃদ শুভ্রার পাশে গিয়ে দাড়ালো।তারপর দুজনের মধ্যে নীরবতা।শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দও যেনো বাতাসের শব্দের কাছে হার মানছে।
শুভ্রা ঘুরে হৃদের মুখোমুখি হয়ে বললো,
—-তুমি সব ইচ্ছে করে করেছো তাইনা?আমাকে টেনশন দেওয়ার জন্য,কষ্ট দেওয়ার জন্য?
হৃদ ডান হাতে ব্রু চুলকে বললো,
—–নাহ,,তোমার তো টেনশন করার কথা না,কষ্ট পাওয়ার কথাও না।
—–আচ্ছা,তাহলে কার কষ্ট পাওয়ার কথা?পাশের বাড়ির মেয়ে বা বউয়ের?
হৃদ চুপ করে রইলো।শুভ্রার এমন প্রশ্নের উত্তর নেই।
শুভ্রা হৃদের নীরবতা দেখে হৃদকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর আবারো কেদে দিলো।শব্দ করে কাদছে।
হৃদ বিচলিত হয়ে বললো,
—–শুভ্রা কাদছো কেন?
শুভ্রা কাদতে কাদতে বললো,
—–তুমি অনেক খারাপ।আগের মতোই খারাপ রয়েছো।একটুও ভালো হওনি।আমাকে তুমি মানুষ মনে করোনা?আগের মতোই কষ্ট দিচ্ছো।আমার কি কষ্ট হয়না?কেন এমন করো আমার সাথে?তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?
হৃদ শুভ্রার পিঠে হাত রেখে বললো,
—–তুমি তো বললে আমি ফিরে না এলেই খুশি হতে।
শুভ্রা হৃদকে ছেড়ে বললো,
—–আমি তো রাগের মাথায় বলেছি।কোনটা মনের কথা আর কোনটা রাগের কথা সেটা কি তুমি কখনো বুঝবে না।
—–জানিনা,,
তবে আমার খুব কষ্ট লেগেছিলো তোমার ওই কথা শুনে তাই ভেবেছিলাম দূরে চলে যাবো কিন্তু পারিনি তাই আবার ফিরে এসেছি।
নিজের জন্যই ফিরে এসেছি।আমি আসলে আর পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে।
শুভ্রা আবারো কেদে হৃদকে জড়িয়ে ধরলো।
—–আমিও পারবোনা।গতকাল আমি বুঝেছি তোমাকে ছাড়া আমার একটা দিনও চলবে না।আমি থাকতে পারবোনা।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।
হৃদ শুভ্রাকে ছাড়িয়ে চিলেকোঠার ছাদে নিয়ে গেলো।
তারপর শুভ্রাকে ওর বরাবর বসালো।
—–দেখ শুভ্রা এখন এখানে আমরা দুজন আছি।এখন আমরা কিছু সময়ের জন্য আমাদের ইগো একসাইডে রেখে মনের ভিতরের জমানো কথাগুলো বলবো।একে অপরের প্রতি যত অভিযোগ,রাগ,ক্ষোভ আছে সব একে একে বলবো।
লেডিস ফার্স্ট।
শুভ্রা প্রথমেই বললো,
—–সরি বলো।
হৃদ শুভ্রার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো,
—–সে নাহয় বলবো কিন্তু কিসের জন্য সেটা বল।
শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–তুমি আমাকে একবারো সরি বলোনি।আমি তোমার কাছে একটা সরি আশা করেছিলাম।আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে বলো ছোট বেলায় তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি এর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দে।
কিন্তু তুমি একবারো সেটা বলোনি।সরি না বলেই প্রপোজ করে দিলে।আর এইজন্য আমি তোমাকে একসেপ্ট করতে পারছিলাম না।
হৃদ বসে বসেই আরেকটু এগিয়ে বললো,
—–আরে আগে বলবি তো সরির বন্যা বানিয়ে দিতাম।
—–কেন বলবো?তুমি তো ঢং করে বলে বেড়াও আমাকে রগে রগে চিনো?
——তোর রগে একটু সমস্যা আছে তাই কিছুকিছু বুঝা যায়না।
শুভ্রা হৃদের এই কথাটা শুনে হৃদকে আবারো মারতে শুরু করলো।
.
.
হৃদ বাম হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।শুভ্রা হৃদের বুক বালিশ বানিয়ে শুয়ে আছে।শুভ্রার ওড়না দিয়ে যতটুকু পেরেছে দুজনের শরীর ঢেকে নিয়েছে।হৃদের ডানহাত শুভ্রার পিঠের উপরে।
দীর্ঘ সময় একে অপরের প্রতি জমে থাকা রাগ,অভিযোগ সব প্রকাশ করেছে।একে অপরকে সরি বলেছে।মিটিয়ে নিয়েছে সব রাগ, অভিমান, ক্ষোভ।
দুদিনের ক্লান্তি নিয়ে ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকার প্রশান্তি নিয়ে দুজন নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে।
.
.
রোজ শুয়ে শুয়ে অরিত্রের ফেসবুক প্রফাইল চেক করছে।প্রোফাইল পিকচার আগেরটাই আছে।এতদিনেও চেঞ্জ করে নি।ওর প্রতিটি ছবিতে হাত বুলিয়ে দেখছে।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রোজ ফোন রেখে চোখের পানি মুছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো।
“হৃদ তোমাকে একটা কথা বলার আছে।”
শুভ্রা হৃদের টাই লাগাতে লাগাতে বললো।হৃদ এতক্ষণ শুভ্রাকে দেখায় ব্যস্ত ছিলো।
—–হ্যা বলো।
শুভ্রা টাই লাগানো শেষ করে বললো,
—–জানি কথাটা শুনে রাগ করবে তবুও বলছি।প্লিজ রাগ করোনা।আমার পুরো কথাটা শুনো।
হৃদের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।
রোজ ভালো নেই।ও শুধু ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে।আগের চেয়ে নরমাল হয়েছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে এখনো কষ্ট পাচ্ছে।আমি বলছি কি…
হৃদ শুভ্রার কথা শেষ হওয়ার আগেই বললো,
——ডোন্ট টেল মি আমাদের অরিত্রের সাথে কথা বলা উচিত।
——একবার বললে কি এমন ক্ষতি হবে?রোজের খাতিরে অন্তত একবার কথা বলায় যায়।জাস্ট একবার।
হৃদ কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো,
—–ওকে।আমি ওর সাথে কথা বলবো।
—–তুমি একা কথা বলবেনা।আমিও তোমার সাথে যাবো।
হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে বললো,
—–ওকে ফাইন।
সবাই একসাথে নাস্তা করছে।হৃদ রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
——ভার্সিটি যাবি?
রোজ উত্তর দিলো।
—–না ভাইয়া,আজকে ক্লাস নেই।
—–তাহলে আমার সাথে অফিসে চল।অনেকদিন অফিসে,ওয়ার্কশপে যাস না।পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা শিখে রাখা ভালো।
সবাই শায় দিলো।রোজ বললো,
—–আচ্ছা,আমি রেডি হয়ে আসছি।
হৃদ শুভ্রাকে বললো,
—–তুমি যাবে?
শুভ্রা মুচকি হেসে বললো,
—–হ্যা যাবো।
তারপর রোজকে বললো,
—–দাড়া আমাকেও রেডি হতে হবে।
সবাই হৃদ আর শুভ্রাকে দেখে আস্বস্ত হলো।পাশাপাশি রোজকে অফিসে নেওয়ার বিষয়টিও ভালো লাগলো।
হৃদ শুভ্রাকে ডেস্কে ডেকে পাঠালো।
—–শুভ্রা অরিত্র এখন লেকের পাশে আছে।ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলি চল।
দুজনেই অরিত্রের সাথে কথা বলার জন্য বেরিয়ে পড়লো।
অরিত্র একাই পা ভিজিয়ে বসে আছে।ওর সাথে কেউ নেই।দৃষ্টি ওর অন্যমনস্ক।
শুভ্রা আর হৃদ ওর পাশে গিয়ে দাড়ালো।
শুভ্রা ডেকে উঠলো।
—–অরিত্র!!
অরিত্র চমকে শুভ্রার দিকে চেয়ে আরো একবার চমকে গেলো হৃদকে দেখে।অরিত্র উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–শুভ্রা তোমার আবার কি চাই?
শুভ্রা বললো,
—–আমার না হৃদের।
অরিত্র হৃদের দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।হৃদ বললো,
—–তোমাকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো ভাবতাম।কিছুদিন আগেও আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো।রোজের সাথে ব্রেকাপ করেছে,ওর ইমোশন নিয়ে খেলেছো এস এ ব্রাদার আমি তোমাকে কিছুই বলিনি।আর এর কারণ ছিলো রোজ।কিন্তু তুমি এখন যেটা করছো তার জন্য আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কথা বলবোনা।আমার বোনকে ফলো কেন করছো?
শুভ্রার ভাষ্যমতে তুমি এখনো রোজকে ভালোবাসো বাট আই ডোন্ট থিংক সো।কিছু ছেলের ক্যারেক্টারই এমন থাকে।কয়েকদিন পর পর গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে তারপর যখন ফ্রি থাকে এক্সদের ফলো করে মন ভরায়।তুমিও ঠিক ওই ক্যারেক্টারের ছেলে।মেয়েদের টিস্যু মনে করো?তোমাকে দেখে তো এতটা বাজে ছেলে মনে হয়নি কিন্তু তুমি তো গিরগিটি।মুহূর্তেই রং পাল্টে ফেললে।ব্রেকাপ হয়েছে ভালো কথা ওর পেছনে পেছনে ঘুরছো কেন?বাজে নজর কেন দিচ্ছো আমার বোনের উপর? কি উদ্দেশ্য তোমার? কি চাইছো?
অরিত্র চুপচাপ হৃদের কথাগুলো হজম করে নিলো।তারপর শান্তকন্ঠে বললো,
—–আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই।আর না আমি রোজের উপর বাজে নজর দিচ্ছি আর না আমি রোজকে ফলো করছি।
——শাট আপ,একদম মিথ্যা বলবেনা।আমার বোনের দিকে যদি কোনো কুনজর দেওয়ার চেষ্টা করো আমি তোমাকে ছাড়বোনা।
শুভ্রা ভাবছে,, হায় আল্লাহ একে আমি কেন আনলাম।প্যাচ লাগাতে না খেলাতে?
—–কুনজর! তখন থেকে কি বলছেন?কি বলতে চাইছেন?আমার দ্বারা রোজের কোনো খারাপ হবেনা।নিশ্চিত থাকুন।
—–যা খারাপ করার তো করেই দিয়েছো।আর এখন কি চাইছো বুঝতেই পারছিনা।
তুমি আমার বোনের ইমোশন নিয়ে খেলেছো।আমার বোনটা বদলে গেছে।চুপচাপ হয়ে গেছে।ওকে আমরা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি আর তুমি আবার ওর পেছনে লেগেছো।কি চাও তুমি ও মরে যাক?তাহলে শান্তি পাবে?
—–ভাইয়া!! (আতংকিত হয়ে)
হৃদ অরিত্রের কলার চেপে ধরলো,
—–তোমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন ওর মরার কথা শুনে? ও তো মরেই গেছে।মেরে ফেলেছো তুমি।কেন ওর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছো?
অরিত্র আর সহ্য করতে না পেরে বললো,
—–আমি কোনো অভিনয় করিনি।সত্যিকারের ভালোবেসেছিলাম।আজো বাসি।রোজ একা মরেনি আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছি।
শুভ্রা আর হৃদ দুজনেই শকড।
হৃদ অরিত্রের শার্টের কলার ছেড়ে দিলো।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে অরিত্রকে জিজ্ঞেস করলো,
—–তাহলে কেন এ লুকোচুরি?
হৃদের দিকে চেয়ে অরিত্র চিতকার করে বললো,
—–আপনার মায়ের জন্য।আপনার ফ্যামিলির জন্য।আপনার মা আর ফ্যামিলির অন্যায়ের জন্য আমরা দুজন কষ্ট পাচ্ছি।
হৃদের মাম্মার নামে অরিত্রের মুখে এমন কথা শুনে হৃদের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।হৃদ অরিত্রের দিকে তেড়ে গেলে শুভ্রা হৃদকে আটকে দেয়।
—-শুভ্রা তুই শুনিস নি ও কি বললো আমার মাম্মাকে নিয়ে?
ওকে আমি…
শুভ্রা হৃদকে গাড়ির দিকে ঠেলে নিয়ে গেলো।
——হৃদ তুমি গাড়িতে বসো।অরিত্রের সাথে তোমার কোনো কথা বলতে হবেনা।যাও।
হৃদ হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর মাম্মা কোনোদিন কারো সাথে অন্যায় করতে পারেনা।
—–হৃদ আমি অরিত্রকে দেখছি।
—–তুই কি দেখবি এর পরে ওর সাথে কোনো কথাই থাকতে পারেনা।
—–থাকে।ও আমাদের ফ্যামিলির উপর এত বড় অপবাদ দিয়েছে তার প্রুফ দিতে হবেনা।এমনি এমনি ওকে ছেড়ে দেবো?
শুভ্রা অরিত্রকে বললো,
—–দেখো তুমি আমার মামনি আর আমার ফ্যামিলির উপর যে কালি লাগালে তার প্রুফ তোমাকে দিতেই হবে।তোমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করতে হবে।তুমি বাধ্য।এর সেটা পুরো পরিবারের সামনে হবে।এমনও হতে পারে কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং চলছে।সবটা ক্লিয়ার করা দরকার।আর রোজেরও রিজন জানা দরকার ব্রেকাপের।অধিকার আছে ওর।
আমরা ছোট থেকে মামনিকে দেখে আসছি সে কারো সাথে অন্যায় করতে পারেনা।লিখিত দিয়ে দেবো তোমাকে।
চলবে…..
#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-২৪(রহস্যভেদ)
#ফাবিহা_নওশীন
??
শুভ্রা বিছানার মাঝখানে বসে গভীর ভাবনায় বিভোর।অরিত্রের সাথে কথা বলার পর ওর মাথা ভনভন করছে।কি হতে পারে, কি এমন ঘটনা,ওদের পরিবারের সাথে কি অরিত্রের কি সমস্যা।হটাৎ শুভ্রার খেয়াল হলো ও এতটাই ভাবনায় বিভোর যে ভাবতে ভাবতে নলহ কামড়ে ওর এত সুন্দর নখটা এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে।
শুভ্রা অসহায় ভাবে নখের দিকে চেয়ে আছে।
হৃদ হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসে পড়ল।এতক্ষণ সে বারান্দায় পাইচারি করে ভাবতে ভাবতে ব্রেইন আর পা ফুটোই ক্ষয় করে ফেলেছে।
—-শুভ্রা কি এমন হতে পারে বলতো ভাবতে ভাবতে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।পা অলরেডি ব্যথা হয়ে গেছে।
শুভ্রা নখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
—–আর আমি ভাবতে ভাবতে নখ ক্ষয় করে ফেলেছি।দেখো কি হয়েছে?
(নখ দেখিয়ে)
হৃদ শুভ্রার কান্ড দেখে হতবাক।
—–ওই আমি ভাবতে ভাবতে মাথা ফাটিয়ে ফেলছি,পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুই নখ দেখাচ্ছিস?
উফফফ,পাগল হয়ে যাচ্ছি।
শুভ্রা বললো,
—–এই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছো?আমার একমাত্র স্বামী পাগল হয়ে যাচ্ছে।এখন কি হবে আমার?তোমাকে তো মানসিক হসপিটাল আই মিন পাগলাগারদ পাঠাতে হবে আর এর জন্য পাবনার চেয়ে ভালো জায়গা আর হতেই পারে না।কিন্তু ওখানে কি সিট খালি আছে।দাড়াও আমি যোগাযোগের চেষ্টা করি।সবটা ডিটেইলস জানতে হবে।(চিন্তিত ভংগীতে)
হৃদ মুখ বাকিয়ে বললো,
—–সো ফানি!!!
ড্রামা কুইন।
শুভ্রা শব্দ করে হেসে দিলো।হাসি যেনো থামছেই না।হাসি থামিয়ে বললো,
—–আরে এত চিন্তা করোনা।মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও।আগামীকাল সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।তারপর আমি ওই অরিত্রকে দেখে নিবো।
(ওর জন্য আমার শখের নখের বারোটা বেজেছে মনে মনে)
হৃদ শুতে শুতে বললো,
—–আমিও ওকে দেখে নিবো ওর জন্য আমি…
এটুকু বলেই থেমে গেলো।
শুভ্রা হৃদের পাশে শুয়ে বললো,
—-ওর জন্য কি?
—–কিছুনা।
হৃদ শুভ্রার কাধে মুখ গুজে ওকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।তারপর মনে মনে বললো,
—–বউয়ের সাথে এতদিনে সব মান অভিমান ভেংগেছে,কই একটু ভালোবাসার কথা বলবো,একটু রোমান্স করবো তা না এখন মাথা ভো ভো করছে।
.
রোজ লিভিং রুমে বসে বসে টিভি দেখছে।তখনই হৃদ,শুভ্রা বাড়ির ভিতরে ঢুকলো ওদের পেছনে পেছনে অরিত্র।অরিত্রকে দেখে রোজের চোখ কপালে।
রোজ বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।তারপর হৃদ আর শুভ্রার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।অরিত্র রোজকে একবার দেখে চোখ নামিয়ে নিলো।
হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—–মাম্মা,পাপাকে ডেকে আন।
রোজ কোনো কথা না বাড়িয়ে উপরে পা বাড়ালো।
শুভ্রা অরিত্রকে বসতে দিয়ে কিচেনে গেলো।সার্ভেন্টকে চা,নাস্তা দিতে বললো।তারপর বাকি সদস্যদের ডাকতে চলে গেলো।
.
.
.
পুরো ফ্যামিলি একজায়গায় জড়ো হয়েছে।অরিত্র সেখানে বসে কাচুমাচু করছে।
শুভ্রা বললো,
—-অরিত্র আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য আমাদের কাছে খোলা বইয়ের মতো।আমরা একে অপরের সাথে অনেক ফ্রি।তাই আমাদের সবার সামনে তুমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো।আমাদের সবার সবকিছু জানার অধিকার আছে।
অরিত্র বললো,
—–আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চায়না বলে জানিয়েছে।
সবকিছু রোজের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।তাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।
অরিত্র তারপর মুখ খুলল।
—–হৃদ ভাইয়ার বিয়ের দিন আমার মামা আমেরিকা থেকে আমাদের বাড়িতে আসে।আমার মামা ছোট থেকেই আমাকে অনেক আদর করে।খুব ভালোবাসে।ছোট থেকেই আমি মামার বাদুক ছিলাম।মামা বলতে পাগল ছিলাম।আমদের বাড়িতে আসলে আমি সর্বক্ষণ তার সাথে থাকতাম।মামাকে এতটা ভালোবাসি যে সে আমার কাছে আমার বাবা-মায়ের চেয়ে বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে উঠছিলো।সেদিন বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় তাই আর দেখা হয়নি।সকালে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে সারপ্রাইজ হই।পাশাপাশি প্রচুর খুশি হই।
তারপর মামা জিজ্ঞেস করলো,
—-ভাগনে রাতে কোথায় গিয়েছিলে?
আমি বলেছিলাম বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়েতে।বাবা নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হতেই মামাকে ফিসফিস করে বললাম,
—–মামা একচুয়ালি গার্লফ্রেন্ড মানে আমার হবু বউয়ের ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম।
মামা গার্লফ্রেন্ড কথাটা শুনে এতটা এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিলো যে জোরেই বলে ফেলে,
——গার্লফ্রেন্ড!!!
দেন মমের চোখ আমার দিকে।মামা শত চেষ্টা করেও টপিক ঘুরাতে পারেনি।তারপর দুজন মিলে আমাকে জেকে ধরলো মেয়ের নাম কি,কি করে,কোথায় থাকে,বাবার নাম কি বাগেরা বাগেরা।
আমি যখন বলি রোজের বাবার নাম রেদোয়ান রোদ্দুর আমাদের ভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের হেড তখন দুজনের মুখ কালো হয়ে যায় পাশাপাশি শকড।মামা চেয়ার টেনে চুপ করে উঠে যায়।
আমি মমকে কারণ জিজ্ঞেস করলে মম বলে,
—–বাবা অরিত্র তুমি ও মেয়েকে ভুলে যাও।ও মেয়ে না এ বাড়ির বউ হতে পারবে আর না ওদের পরিবারের সাথে আমাদের কোনো আত্মীয়তা হবে।তাই ভুলে যাওয়াই ব্যাটার।
আমি মমের কথার কোনো মানে বের করতে না পেরে মামার কাছে গেলাম।
মামাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও উত্তর দিচ্ছিলো না।তারপর তিনি বলতে শুরু করেন।
অরিত্র রোজের মাম্মার দিকে চেয়ে বললো,
—–আন্টি আপনার অন্য একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো,
এনগেজমেন্ট হয়েছিলো এমনটা আমি রোজের কাছেও শুনেছি।
রোজের মাম্মা অস্বস্তিতে পড়লেও স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–হ্যা হয়েছিলো অনেকেই জানে।আর এটা লুকানোর মতো বিষয় না।
—–জ্বি আন্টি এটা ফ্যাক্ট না।
অরিত্র কিছুক্ষণ থেমে বললো,
—–আমার মামার নাম রিশাত।(অরিত্রের বাবার নাম আয়মান মাহমুদ খান)
সবাই অরিত্রের কথা শুনে চমকে যায়।সবার মুখ অটোমেটিক হ্যা হয়ে গেলো।সবটা সামলে রোজের পাপা বললো,
—–তো কি বলেছে রিশাত মানে তোমার মামা?
অরিত্র আবার বলতে শুরু করলো,
—–ভার্সিটিতে প্রথম দেখায় মামা আন্টিকে পছন্দ করে ফেলে।আন্টির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় আর সবাই রাজিও হয়ে যায়।বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়।এনগেজমেন্টও হয়।মামা খুব খুশি ছিলো।আন্টি নাকি মামার সাথে ঘুরতেও গিয়েছিলো তারপর হুট করে তার কাজিন মানে আংকেলকে বিয়ে করে নেয়।
এই নিউজ শুনে মামা খুব কষ্ট পায়।আর আন্টির সাথে কথা বলতে এবাড়িতে আসে কিন্তু এবাড়ির সবাই মামাকে মারধোর করে অপমান করে বের করে দেয়।
ভার্সিটিতে আপনারা দুজন মামাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসাহাসি করতেন মামার খুব কষ্ট হতো আপনাদের একসাথে দেখে।মামা রাগে আন্টির সাথে মিসবিহেভ করে ভার্সিটিতে আর আপনারা নারী নির্যাতন কেইসে মামাকে ফাসিয়ে দেন।
মামার ৭বছরের জেল হয়।সাতটা বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যায়।তার পড়াশোনা ক্যারিয়ার লাইফ সব শেষ হয়ে যায়।জেল থেকে বেরুনোর পর অনেক বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনরা মামাকে ত্যাগ করেছে,পাড়াপ্রতিবেশি কটুক্তি করতো।
মামা এসব সহ্য করতে না পেরে সুসাইট এটেম্প করে।
কিন্তু বেচে যায় তারপর সবাই মামার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু অতীত জানার পর আর কেউ বিয়ে করতে চায়না।
তারপর মামা দেশের সব পাট চুকিয়ে বিদেশে চলে যায়।
মামার এই দুর্বিষহ জীবনের কাহিনি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না কিন্তু এর শাস্তি আমি রোজকেও দিতে পারছিলাম না।
মামা আমাকে বলেছে,,
——রোজ যেদিন এবাড়িতে পা রাখবে সেদিন থেকে মামা আর আমাদের বাড়িতে পা রাখবেনা।
মম আমাকে বলেছে যাদের জন্য আমার ভাইয়ের এই অবস্থা তাদের বাড়ির মেয়েকে আমি কিছুতেই মেনে নিবোনা।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি বুঝানোর।এতে রোজের কি দোষ।কিন্তু মমের এক কথাই সে কিছুতেই মেনে নিবেনা।
তারপর আমাকে শর্ত জুড়ে দেয় হয় ফ্যামিলি নয়তো রোজ।যেকোনো একদিক বেছে নিতে।
আমি রোজকে ভালোবাসি কিন্তু ২৩বছরের ভালোবাসা আমি কি করে ছাড়তে পারি আমার বিবেক সায় দেয়নি।আমি অনেক প্রেশারে ছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তাই রোজের সাথে ব্রেকাপ করি।
অরিত্রের কথা শুনে শুভ্রার পাপা রাহাত বলে,,
—–বাহ!কি সুন্দর স্টোরি?সবাই চুপ করে আছো কেন তালি দেও?
সবাই রাহাতের দিকে চেয়ে আছে।
রাহাত অরিত্রকে বললো,
—–এই ঘটনার সাথে আমিও জড়িত আছি।আমার কাছে শুনো তোমার মামার আসল রুপ।
তোমার মামা তানহাকে(রোজের মাম্মা)প্রথম দিন থেকেই বিরক্ত করতো।ওকে পছন্দ করে এটা সেটা।তানহা এভয়েড করতো তারপর একদিন সরাসরি বলে দেয় ওর বিয়ে ঠিক।তারপর আমাকে আর ভাইয়াকে একদিন ভার্সিটি নিয়ে যায়।ভাইয়া আর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তারপর আর বিরক্ত করে নি।কিন্তু আমাদের বাড়িতে মা আর দাদি বাধা হয়ে দাড়ায়।মা আর দাদি তানহাকে ভাইয়ের বউ হিসেবে মানেনি।তানহা বাড়িতে যেনো এ নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয় তাই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।ভাইয়া ভার্সিটিতে ওর সাথে কথা বলতে যায়।কিন্তু তানহা ভাইকে আবারো ফিরিয়ে দেয় আর এটা তোমার মামা শুনে নেয়।
অনেক চেষ্টার পর তানহাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই,ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়,ওদের মধ্যে সব মিটমাট হয়।
আর তখনই তোমার মামা বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।আর বলে যেকোনো শর্তে তানহাকে বিয়ে করতে চায়।এটা শুনে তো আমার মা দাদি তো হাতে আকাশের চাদ পায়।
ভাইয়া অসুস্থ।ঘর থেকে বেরুতে পারেনা।আর এই সুযোগে মা তানহাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে মেহমানদের সামনে বসিয়ে দেয়।আর ওরা হাতে আংটি পড়িয়ে যায়।ওর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।
তানহা তোমার মামার সাথে ঘুরতে যায়।আর সেখানে এটাও বলে ও তোমার মামাকে বিয়ে করবেনা।কিন্তু তোমার মামা জেদ ধরে বসে ওকেই বিয়ে করবে।একটা মেয়ে বিয়ে করতে চায়না এটা জেনেও তাকে বিয়ে করতে চাওয়া জেদ ছাড়া আর কিছুই না।
ভাইয়া যখন সবটা জানে মেনে নিতে পারেনা।প্রচন্ড রেগে যায় আর একদিনের মাথায় রেজিস্ট্রি পেপার রেডি করে ঘরভর্তি লোকের সামনে সাইন করে বিয়ে করে ফেলে।
আর তোমার মামা কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সবার চোখ ফাকি দিয়ে তানহান বেডরুমে ঢুকে ওর সাথে মিসবিহেভ করে।তানহার চিতকার চেচামেচিতে সবাই ছুটে আসে।ভাইয়া ওকে দেখে অনেক রেগে যায় আর রাগের মাথায় ওর গায়ে হাত তুলে।
বাসার সবাই ওদের ছাড়িয়ে রিশাতকে তানহান ঘরে ঢুকার কারণ জিজ্ঞেস করে।সবাই ওকে চলে যেতে বলে।আর তুমি বলছো মারধোর করে অপমান করে বের করে দিয়েছি।একটা মেয়ের বেডরুমে ঢুকে মিসবিহেভ করবে তার হাসব্যান্ড তালি বাজাবে?
আর কি বললে কি কেসে ফাসানো হয়েছে?তোমার মামাকে এটেম্প টু মার্ডার কেসে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।তোমার মামা আমার ভাই আর তানহাকে মারার চেষ্টা করেছে।
মারার চেষ্টা কথা শুনে রোজ,হৃদ,শুভ্রা,অরিত্র সবাই চমকে উঠে।এ বাড়ির বাচ্চারে কেউ এ বিষয়ে জানেনা।
অরিত্র বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–কি বলছেন এসব?মামা,,নো মামা এটা করতে পারেনা।
—–তোমার মামা এটাই করেছে।আমি সবেমাত্র ভার্সিটিতে জয়েন করেছি।আমি আর আমার ওয়াইফ একসাথে বাসায় ফিরছিলাম।তোমার মামা গাড়ির ব্রেকফেইল করে দেয় আমাদের দুজনকে মারার জন্য।কিছুদূর যাওয়ার পর বুঝতে পারি গাড়ির ব্রেইক কাজ করছেনা।হাজার চেষ্টা করেও গাড়ি থামাতে পারছিলাম না।কিন্তু মনোবল ভাংগিনি।কোনোমতে ফুলকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই দেন আমিও লাফিয়ে পড়ি।গাড়ি ব্রিজের পাশ কেটে নদীতে পড়ে ব্রাস্ট হয়ে যায়।আল্লাহর রহমতে বেচে যাই।(রোজের পাপা)
শুভ্রার পাপা বললো,
—–এমনও হতে পারতো তোমার মামা সেদিন সাকসেসফুল।
তাহলে আজ সে দুজন মানুষের খুনী হতো।কাউকে মারা আর মারার চেষ্টা করা সেইম ক্রাইম।সেদিন ছোট খাটো এক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু বেচে আছে।তাই তোমার মামা সহিসালামত আছে।সাতবছর শাস্তি তোমার মামার জন্য খুব কম হয়ে গেছে।
অরিত্র তবুও বিশ্বাস করছেনা।
—–আপনারা কিভাবে শিওর হলেন মামা করেছে?অন্য কেউ করতে পারে।
—–সেটা পুলিশ বের করেছে।আমরা ওকেই একাজের জন্য সন্দেহ করেছিলাম।দেন পুলিশ সব প্রুফ বের করেছে।তোমার মামা কোর্টে শেষে স্বীকারও করেছেন।
এখনও বিশ্বাস না হলে থানায় যোগাযোগ করো।আমাদের কাছে সেই কেইসের কাগজপত্র সব আছে।তোমার ফ্যামিলি বিশেষ করে রিশাতকে জিজ্ঞেস করো।
দেখো আমরা যদি জানতে পারতাম তুমি রিশাতের বোনের ছেলে তবুও তোমার আর রোজের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আপত্তি করতাম না।কিন্তু তোমার ফ্যামিলির মন-মানসিকতা দেখে বলছি তোমরা রোজকে ডিজার্ভই করোনা।
রোজ উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–রাইট কাকাই।ওরা আমাকে ডিজার্ভই করেনা।
রোজ নিজের রুমে চলে গেলো।
অরিত্র মাথা নিচু করে বসে আছে।
রোজের পাপা বললো,
—–তুমি রোজকে ছেড়ে তোমার ফ্যামিলিকে চুজ করেছো এটা দেখে আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছি।এমনকি রোজও।কেননা ফ্যামিলি সবার আগে।আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা ফ্যামিলির মূল্য বুঝে।কিন্তু তুমি সত্যতা না যাচাই করে রোজকে আমাদেরকে অপরাধী বিবেচনা করেছো এটা ঠিক করোনি।তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান শিক্ষিত একটা ছেলে তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।তোমার সবটা যাচাই করা উচিত ছিলো।
অরিত্র দাড়িয়ে গিয়ে বললো,
——আপনাদের কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আমি কতটা অস্থিরতা,ধোকার মধ্যে আছি আপনাদের বুঝাতে পারবোনা।আমার মামা একজন ক্রিমিনাল বিষয়টা আমি হজম করতে পারছিনা।তবে আমি মম আর মামার কাছে এর জবাবদিহি চাইবো।কোনো ধোকায় থাকবোনা।আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।এখানে না আসলে মুদ্রার অপর পিঠ দেখতে পারতাম না।
আর পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন।যদিও আমি এর যোগ্য না।আসছি।
অরিত্র বেরিয়ে গেলো।অরিত্রের কাছে সবকিছু এলোমেলো লাগছে।ওর ভিতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে।
গাড়ি চালাচ্ছে আর ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এতবড় ধোকা মেনে নিতে পারছেনা।ওর সব জবাব চাই।
চলবে……