#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-১১,১২
#ফাবিহা_নওশীন
১১
??
রোজ বাড়িতে গিয়ে সারাদিন অরিত্রের কথা ভেবেছে।না চাইতেও বারবার অরিত্রের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।অরিত্রের প্রপোজ করার স্টাইল মনে হতেই রোজ হেসে যাচ্ছে।
রোজ যখন চিপসের কথা বলে চলে এলো তখন অরিত্রের মুখটা দেখার মতো ছিলো।রোজের চোখের সামনে ওর ক্যাবলাকান্ত মুখটা ভেসে উঠছে।
রোজ ফেসবুকে অরিত্রের নাম লিখে সার্চ করে অনেক সময় ব্যয় করে অরিত্রের আইডি পেতে সক্ষম হলো।
“অরিত্র মাহমুদ খান” নামের আইডিতে রোজ অতি সাবধানে এক ঘন্টা যাবত ঘাটাঘাটি করলো।
অরিত্রের স্ট্যাটাস,পিক সবকিছু দেখছে,কিছু কিছু পোস্টের কমেন্টও চেক করছে।
অরিত্রের কথা ভাবতে ভাবতে রোজ ঘুমিয়ে পড়েছে।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই অরিত্র রোজের সামনে এসে দাড়ালো।চোখের সানগ্লাস খোলে বললো,
—–রোজ তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে।
রোজ বললো,ওয়েট ওয়েট।
নিজের হাতের চিপসটা ব্যাগে রেখে বললো,
—–পাপা আমার চিপস খাওয়া আর মাম্মার আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্সিটিতেই একটু খাই তাও পাপাকে নজরে রেখে অতি সাবধানে।আর আপনার সাথে কথা বলতে গিয়ে যদি তাও পড়ে যায় তবে আমার মতো পিচ্চি মেয়ের উপর জুলুম করা হবে।তাই চিপসকে আগে সেইটি দিলাম।নাও টেল মি হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ফ্রম মি?
রোজের চিপস কাহিনি দেখে যে এনার্জি নিয়ে অরিত্র এসেছিলো সেই এনার্জি গায়েব।
অরিত্র পিছনে থেকে একটা চিপস বের করে বললো,
তোমার জন্য।
রোজ চোখ বড়বড় করে বললো,
—–দেখুন মি.আপনার কি আমাকে ৫-৬বছরের বাচ্চা মনে হয়?আমাকে একটা চিপস দিয়ে বশ করে ফেলবেন?
হ্যা এটা ঠিক যে আমি চিপস অনেক পছন্দ করি তারমানে এই না যে একটা চিপস দিবেন আর আমি খুশিতে গদগদ হয়ে আপনার প্রেমে তরতর করে পড়ে যাবো।হুহ।
—–আরে বাবা আমি কি তাই বলেছি?আমি কি তোমাকে বশ করার জন্য কিংবা প্রেমে পড়ার জন্য চিপস দিয়েছি জাস্ট ভদ্রতা বশত দিয়েছি বাট তোমার যদি খারাপ লাগে তাহলে সরি।নিতে হবেনা তোমার।
রোজ মুখ ভেংচি কেটে বললো,
—-জ্বি,আপনিই খান আপনার চিপস।
অরিত্র বাকা হেসে বললো,
—-হ্যা খেয়ে অভ্যাস করি।এমনও হতে পারে বিয়ের পর চিপস খেয়েই থাকতে হলো।বউ যেই হারে চিপস খায়।
রোজ চোখ বড়বড় করে বললো,
—–বউ!!
—–ইয়ে মানে,,
তারপর অরিত্র কন্ঠকে আবেদনময়ী করে বললো,
—–রোজ আই রিয়েলি লাভ ইউ।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।
রোজ গলা খাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
—–মানে কি?আপনি একটা চিপস নিয়ে এসে বললেন আমাকে ভালোবাসেন আর আমি নাচতে নাচতে আপনার প্রেমে পড়ে যাবো?চিনিনা,জানিনা।আমি তো জাস্ট আপনার নামটাই জানি আর কিছুনা।
অরিত্র বললো,
—–তাহলে জেনে নেও।আমি অরিত্র মাহমুদ খান সন অফ বিজনেস টাইকু আয়মান মাহমুদ খান।আমি বাবামায়ের একমাত্র ছেলে।তোমার ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।দেখতে শুনতে ভালো সবাই বলে।আল্লাহর রহমতে হাত-পা সব আছে।
আর বাকিটা তুমি জেনে নেও।আমার আচার আচরণ তুমি জেনে নেও।
রোজ অরিত্রের কথা শুনে শুকনো একটা ঢুক গিলে বললো,
—–ইয়ে মানে আমি বাচ্চা মেয়ে প্রেম ট্রেম আমি করবোনা।বায়।
রোজ কথাটা বলে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো।
অরিত্র রোজের আচমকা এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেনা।
শুভ্রা হৃদের কেবিনে যাচ্ছে।হৃদের কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে থমকে যায়।ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।হৃদ এমনটা কি করে করতে পারে? শুভ্রার গাল বেয়ে পানি পড়ছে অঝোর ধারায়।শুভ্রা আর এক মুহূর্ত সেখানে দাড়ালো না।তাড়াতাড়ি করে সে জায়গা ত্যাগ করলো।চোখ মুছতে মুছতে গাড়ির দিকে গেলো।
শুভ্রা নিজের ড্রান্স রুমে পায়ে ঘুঙুর
পড়ে নাচছে।সর্বোচ্চ শক্তি ব্যায় করছে।ঘুঙুরের শব্দ পেয়ে হৃদ ড্রান্স রুমে আসে।দরজার সামনে এসে দেখে শুভ্রা চোখ বন্ধ করে দুহাত নাড়িয়ে অনবরত ঘুরছে।হৃদের মনে হচ্ছে শুভ্রা এখনি ছিটকে পড়ে যাবে।
হৃদ শুভ্রাকে আটকাতে চাইছে কিন্তু আবার মনে হচ্ছে এটা হয়তো ওর কোনো ড্রান্সের প্যাকটিস হবে।শুভ্রা যদি বিরক্তবোধ করে কিংবা রেগে যায়।কেননা ক্ল্যাসিক্যাল ড্রান্স সম্পর্কে হৃদের কোনো আইডিয়া নেই।
ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে শুভ্রার পায়ের ঘুঙুর পা থেকে ছুটে গিয়ে ছিটকে পড়ল।তবুও শুভ্রার হেলদোল নেই।হৃদ তাই ভাবছে শুভ্রা সিরিয়াস কোনো ড্রান্স প্যাকটিস করছে।
হটাৎ শুভ্রা ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ফ্লোরে পড়ে গিয়ে শুভ্রা চোখ বন্ধ করেই রেখেছে।ওর এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।কপালে মৃদু ব্যথা অনুভব করছে কিন্তু তবুও ওর কিছুই মনে হচ্ছে না।মনের ব্যথার থেকে শরীরের ব্যথা তুচ্ছ।ওর মন যে ব্যথায় জর্জরিত।শুভ্রা চোখ বন্ধ করে ওভাবেই ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।হৃদ দৌড়ে শুভ্রার কাছে গেলো।তারপর মাথা তুলে বললো,
—-শুভ্রা তোমার লাগেনি তো?
শুভ্রা চোখ মেলে হৃদকে দেখে।অপলক দেখছে।হৃদ শুভ্রার মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরাতেই কপাল থেকে রক্ত পড়তে দেখছে।
কপালে হাত দিয়ে বললো,
—-কপাল তো কেটে গেছে।রক্ত পড়ছে।
হৃদ কপালে হাত রাখতেই শুভ্রা ঝাড়া মেরে হৃদের হাত সরিয়ে দিয়ে আস্তে-ধীরে উঠে দাড়ালো।হৃদ সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেলে শুভ্রা ওয়ার্নিং করে যেনো ওকে ছোয়ার চেষ্টা না করে।শুভ্রার কপাল ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছে।পায়েও ব্যথা পেয়েছে।
শুভ্রা নিজে নিজেই উঠে রুমে চলে গেলো।হৃদ বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কি?
রোজ ভাবছে অরিত্রের কথা।ছেলেটা দেখতে শুনতে ভালো।আচার-আচরণও ভালো কিন্তু প্রেম?তাও পাপার ভার্সিটিতে?ইম্পসিবল!!
রোজের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে হৃদ ওর রুমে ঢুকে বললো,
—-রোজ মাই ডিয়ার সিস্টার,প্লিজ হেল্প মি।
রোজ ভ্রু কুচকে বললো,
—–আবার কোন অকাজ করেছো?
হৃদ বললো,
—–অকাজ কেন করবো?কিছুই করিনি কিন্তু শুভ্রাকে কেমন অস্থির লাগছে।ও আমাকে কিছুই বলবেনা ইউ নো।তাই প্লিজ।
—–তাই এখন আমার আপির পেট থেকে কথা বের করতে হবে।আর কতকাল তোমাদের দুজনের সেতু হয়ে থাকবো?
হৃদ অনুনয়ের সুরে বললো,
—–প্লিজ প্লিজ লক্ষী বোন আমার।
—–যাচ্ছি।
রোজ শুভ্রার রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রা কপালে ব্যান্ডেজ করছে।রোজ ব্যান্ডেজ করছে দেখে বিচলিত হয়ে দৌড়ে তাড়াতাড়ি শুভ্রার কাছে যায়।
—–শুভ্রাপু এসব কি করে হলো?দেও আমি করে দিচ্ছি।
রোজ শুভ্রার হাত থেকে তুলো,ওষুধ নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।শুভ্রা কেমন চুপ মেরে আছে।কোনো কথা বলছেনা।রোজ শুভ্রার মুখ দেখে বুঝতে পারছে গুরুতর কিছু হয়েছে।
রোজ শুভ্রার কাধে হাত রেখে বললো,
—–শুভ্রাপু কি হয়েছে? মন খারাপ?
শুভ্রার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শুভ্রা রোজের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।
—–শুভ্রাপু কাদছো কেন?কি হয়েছে?
শুভ্রা কাদতে কাদতে বললো,
—–হৃদ আমাকে ধোকা দিয়েছে রোজ।ও অনুর সাথে…
রোজ অবাক হয়ে বললো,
—–অনুর সাথে কি?ভাইয়া কি করেছে?কেন এমন বলছো?
~~~
রোজ হৃদের রুমে গিয়ে হৃদের হাত থেকে ফোন নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।হৃদ অবাক হয়ে বোনকে দেখছে।রাগে ফুসফুস করছে যেনো রণমুর্তি ধারন করেছে।হৃদ হকচকিয়ে গেলো এটা ভেবে যে ও কি করেছে।
হৃদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।।
—–ভাইয়া তুই এটা কি করে করলি?
(রোজ সাধারণত তুমি করে বলে কিন্তু রাগলে তুই)
হৃদ বুঝতে পারছে তার বোন রেগে গেছে।
—–রোজ আমি কি করেছি?
—–তুই নাকি ওই অনুকে কিস করেছিস?ছিহ!
হৃদ রোজের কথা শুনে নাক মুখ ছিটকে বললো,
—–কি বললি তুই?কিস!।
এটা কি ধরনের মজা?
—–তোর মনে হচ্ছে আমি মজা করার মুডে আছি?
—–তোকে এসব আজেবাজে কথা কে বলেছে?
—–শুভ্রাপু।আর শুভ্রাপু নিজের চোখে দেখেছে।
হৃদের মনে হচ্ছে অন্য দুনিয়ায় আছে।মঙ্গল গ্রহ কিংবা চাদে।আর নয়তো কানে উল্টো পাল্টা শুনছে আর নয়তো নির্ঘাত স্বপ্ন দেখছে।
—–ভাইয়া!!
রোজের চিতকারে ভিনগ্রহ থেকে ফিরে এলো।
—–শুভ্রা এতো চিপ মজা কি করে করতে পারে?
—–শুভ্রাপু মজা করছে?নেভার।শুভ্রাপু সিরিয়াস আর খুব রেগে আছে।শুধু তাই নয় অনেক হার্ট হয়েছে তোমার এই কাজে।
হৃদ বললো,
—–রোজ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমি তোর ভাই,আমাকে বিশ্বাস করিস না?শুভ্রা কি দেখেছে কি বলেছে জানিনা।বাট আমি রাইসান হৃদয় আজ পর্যন্ত কাউকে কিস করিনি অনু তো দূরে থাক।
রোজের মাথা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।ওদিকে শুভ্রাপু কেদে কেটে একাকার আর এই দিকে ভাইয়াও কনফিডেন্টলি বলছে তাহলে কাহিনি কি?
—-রোজ কোথায় হারালি?
—–ভাইয়া সব গুলিয়ে যাচ্ছে।তুমিও কনফিডেন্সের সাথে বলছো আর শুভ্রাপুও।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
নিজের জ্বালায় বাচিনা।লে এখন আবার এদের ঝামেলায় ফেসে গেছি।(মনে মনে)
রোজ যেতে যেতে বললো,
—–আমি কিছু জানি না।তোদের প্রব্লেম তোরা বুঝে নে।তবে ফ্রিতে একটা এডভাইস দেই আপুর আশেপাশে আপাতত যাসনা তোকে চিবিয়ে খাবে।
হৃদের মাথাও এখন গুলিয়ে যাচ্ছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
কিছু না করেও আজ অপরাধী।এই মাসুম বাচ্চার উপর এতো বড় অপবাদ।সহ্য করা যায়না।
হৃদ এখন ভাবছে শুভ্রা এসব কেন বলছে?এজন্য শুভ্রা এমন অস্থির ছিলো।কপালে আঘাত পেয়েও কোনো রিয়েক্ট করছিলোনা।ধরতে গেলে এমন রিয়েক্ট করলো?
ডাল মে কুচ কালা হে।
হৃদ ফোন বের করে শুভ্রার পিক দেখছে।
“ছোবড়া তুই বোকাই রয়ে গেলি।তুই কি করে ভাবলি আমি অন্য কাউকে..।বাট ওয়ান থিং ক্লিয়ার তুই আমার জন্য এখনো ফিল করিস কিন্তু হাইড করার চেষ্টা করিস।অযথাই এমন করিস।”
শুভ্রা অফিসে যেতেই হৃদ আচমকা শুভ্রার হাত ধরে টেনে নিজের কেবিনে নিয়ে যাচ্ছে।শুভ্রা চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারেনি আর অফিস হওয়ার কারণে চেচামেচি করতে পারে নি।
হৃদ শুভ্রাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।শুভ্রা উঠতে চাইলে হৃদ বলে,
—-ডোন্ট!ডোন্ট মুভ।
চুপচাপ বসে থাকো নয়তো তোমার কপালে শনি আছে।চেয়ারের সাথে বেধে রাখবো।এখন তোমাকে যেটা দেখাচ্ছি চুপচাপ দেখে যাও।
এটা বলেই শুভ্রার সামনে ল্যাপটপ রাখলো।শুভ্রা বুঝতে পারছেনা ল্যাপটপে কি দেখাবে।একটা সিসি টিভির ফুটেজ।অনু আর হৃদের।অনুর হাতে ফাইল।দুজন বরাবর চেয়ারে বসে আছে।অনু হৃদের দিকে ঝুকে কিছু একটা বলছে আর হৃদও ফাইলের দিকে ঝুকে কিছু একটা বলছে আর বারবার মাথা নাড়াচ্ছে।
শুভ্রা মনে মনে বলছে,
“আরে এটা তো সেই সময় যখন কিন্তু এটা কি?শুভ্রা তো ভেবেছিলো হৃদ অনুকে…।পিছনে থেকে তো ডিস্টেন্স মনে হয়নি কিন্তু সামনাসামনি অনেক ডিস্টেন্স।তাহলে আমি ভুল ভেবেছি?ছিহ কি লজ্জা কি লজ্জা? ”
শুভ্রা একবার হৃদের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলে,
—–এসব কি?আমাকে এসব দেখানোর মানে কি?
হৃদ শুভ্রার থুতনি ধরে মুখ উচু করে বললো,
—–ইউ নো ভেরি ওয়েল হোয়াট দিস ইজ!
শুভ্রা আমতা আমতা করে বললো বললো,
—–ইয়ে মানে…
শুভ্রা থুতনি থেকে নিজের হাত সরিয়ে বললো,
—–ভার্সিটিতে আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে যেতে হবে।
শুভ্রা ব্যাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো।সামনে এগুতেই হৃদ ওর সামনে দাড়িয়ে গেলো।
“এভাবে তো যেতে পারবে না,এতোবড় ঘৃণ্য অপবাদ কি করে দিলে?কি করে আমাকে এমন ভাবলে?আমি তো ভাবতে পারিনা।তুমি আমাকে ঘৃণা করো এটা আমি মানতে পারলেও এটা কখনো ভাবতে পারিনা শুভ্রা অন্য ছেলের সাথে জড়াবে।তবে তুমি কেন?হোয়াই?”
শুভ্রার কাছে এর কোনো উত্তর নেই।শুভ্রা হৃদের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-চোখের দেখায় অনেক সময় ভুল থাকে।হয়তো আমারো হয়েছে।এর চেয়ে বেশি আর কি বলতে পারি?
শুভ্রা দরজার সামনে যেতেই হৃদ দরজার সামনে দাড়িয়ে গেলো।
“এত তাড়া কিসের?যে ছেলেকে বিশ্বাস করে সারারাত তার ঘরে থাকতে পারো আর তাকে আজ,,,?”
হৃদ শুভ্রার দুবাহু চেপে ধরে বললো,
—-যদি তেমন কিছু হয় তবে তোর কি?তোর কেন জ্বলছে?তুই তো আমাকে ঘৃণা করিস,ভালোবাসিস না তাই না?তবে নিজেকে কেন আঘাত করেছিস?কেন কষ্ট দিয়েছিস?
উত্তর দে।
শুভ্রা মনে মনে বলছে,
—–কিসের উত্তর চাইছো তুমি?তুমি আমার সাথে যা করেছো তার পরেও উত্তর চাইছো?ভালো তো তুমিও বাসো কিন্তু তুমি তো আজও বলোনি ভালোবাসো।সবসময় আমাকেই কেন বলতে হবে?ছোট থেকে হাজার বার বলেছি কিন্তু তুমি একবারও বলোনি।না ক্ষমা চেয়েছো,না কোনো কৈফিয়ত দিয়েছো।আমি চাইও নি।তবে হৃদ এইবার তোমাকেই আগাতে হবে।আমি আগাবোনা।আমিও মানুষ,আমারও কষ্ট হয়।হৃদয় ভাংগার কষ্ট।
হৃদ শুভ্রাকে চুপ দেখে বাকা হেসে বললো,
—-না ব্যাপারটা অন্য কিছু।
—–মামা…নেহ?
—–এই যে ছোটবেলার মতো তোর ইচ্ছে করছে কিস করতে।তাই অন্যকে দিয়ে বলেছিস।
শুভ্রা চোখ বড়বড় করে বললো,
—–নাহহ,,
হৃদ চোখ সরু করে দুষ্ট হাসি হেসে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বললো,
—–সব বুঝি এটা তো শুধু বাহানা।অনুর নাম ভাংগিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছিস।
তবে তুই চাইলে আমি না করি কি করে বল?এখন আমরা যথেষ্ট ম্যাচুয়েড।কি বলিস।
শুভ্রা ভয় পেয়ে গেলো।
—–ছিহ!আমি কিছু চাইনা।আমি এখন এখান থেকে যেতে চাই।
শুভ্রার কাছে হৃদের ভাবসাব ভালো ঠেকছেনা।শুভ্রা দু’হাতে পুরো মুখ ডেকে নিলো।আংগুলের ফাক দিয়ে চোখ বের করে হৃদকে পর্যবেক্ষণ করছে।পাশাপাশি রুমটা,দরজার এপাশটা বাইরে থেকে দেখা যায়না।কিন্তু বেশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে পারলো না।হৃদ ওকে আচমকা নিজের জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে একটানে দুহাত সরিয়ে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।শুভ্রার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।আস্তেআস্তে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।
.
হৃদ শুভ্রাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে।শুভ্রা চুপ মেরে গেছে।কোনো কথা বলছেনা।
হৃদ ফিসফিস করে শুভ্রার কানের কাছে বললো,
“হৃদের ফার্স্ট কিস শুভ্রার নামে করে দিলাম।”
চলবে…
#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-১২
#ফাবিহা_নওশীন
??
শুভ্রার নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে হৃদ কিন্তু শুভ্রা না নড়াচড়া করছে আর না কোনো কথা বলছে।হৃদের মতে শুভ্রার এখন চিতকার চেচামেচি করা উচিত।শুভ্রা হৃদের মাথা ফাটিয়ে দিলেও হৃদ অবাক হবেনা।
শুভ্রার নীরবতা দেখে হৃদ মজা করে বললো,
—–কিরে ডোজ নিতে না পেরে মরে গেলি নাকি?
হৃদের কথা শুভ্রার কানে যেতেই শুভ্রা ছিটকে সরে গেলো।দুম করে দরজা খোলে বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় মনে মনে যত প্রকার গালি জানে হৃদকে দিয়ে ফেলেছে।
শুভ্রা খাবার টেবিলে খেতে আসেনি।ওর আপাতত হৃদের সামনে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।হৃদ শুভ্রাকে না দেখে কিছুটা চিন্তিত।ডিনার শেষে শুভ্রার রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলো।ভিতর থেকে লক করা।
শুভ্রার ফোনে একটা মেসেজ এলো।
“কি গো একটা চুমু খেয়ে পেট ভরে গেছে?”
শুভ্রার কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।আননোন নাম্বার থেকে কে এমন মেসেজ করতে পারে?
শুভ্রা রিপ্লাই করলো কে আপনি?
“তোমার চুমুপুরুষ”
মেসেজ দেখে শুভ্রা লাফিয়ে উঠলো।
শুভ্রার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
হৃদকে মেসেজ করলো,
“আমি তোর মুখ থিতলে দিয়ে চুমু খাওয়ার শখ মিটিয়ে দেবো।”
মেসেজ দেখে হৃদের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
অপর দিকে শুভ্রা বিরবির করে বলছে,
“প্রপোজ করার নাম নেই চুমু খেয়ে এসেছে।”
??
এভাবে অনেকদিন কেটে গেছে।অরিত্র প্রতিদিন রোজকে নানা ভাবে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রোজ কিছুতেই অরিত্রকে পাত্তা দিচ্ছেনা।অরিত্র এ নিয়ে অনেক আপসেট।তবে রোজ ফিল করতে পারছে ও অরিত্রকে ভালোবাসে।
কিন্তু কোথাও একটা বাধা পাচ্ছে।
আজকেও ফটোসেশান আছে।সামনের সপ্তাহে ফাইনাল শো।
শুভ্রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের মেকাপ দেখে নিচ্ছে।
পিছনে থেকে কেউ দু কাধে হাত রেখেছে।খোলা কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে শুভ্রার মেজাজ বিগড়ে গেলো।কাধে থেকে হাত সরিয়ে ইশানকে দেখে ওর মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ইশানের গালে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠালো।
ইশান অবাক হয়ে গেলো শুভ্রার এমন কান্ড দেখে।
—–আরে আরে কি করছো?
শুভ্রা নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
—–ইয়ে মানে,, সরি।হটাৎ করে গায়ে হাত দেওয়ায়…
যাইহোক,আমার পারমিশন ছাড়া আমার গায়ে কখনো হাত দিবেনা।
—–ওকে ওকে আ’ম সরি।তুমি অন্যদের থেকে আলাদা ভুলেই যাই।আসলে তুমি দেখতে এত হট যে…
শুভ্রা চোখ পাকিয়ে তাকালো।
—–শাট আপ।শুভ্রা নট এ চিপ গার্ল।ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি নেক্সট টাইম।
শুভ্রার নিজেকে উপরে স্বাভাবিক রাখলেও ভিতরে ভিতরে রাগ হচ্ছে।
শুভ্রা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
শুট শেষে শুভ্রা বসে আছে।ইশান শুভ্রার পাশে এসে বসে বললো,
—-এখনো রেগে আছো?কাম অন শুভ্রতা,ইটস নট ফেয়ার।প্লিজ ফরগেট দিস এন্ড টেক দিস ইজিলি।
—–ইশান লিভ মি এলোন।তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
—–ওকে ওকে আ’ম সরি।প্লিজ।
(কান ধরে)
শুভ্রা ইশানের কান ধরার দিকে চাইতেই হৃদকে দেখলো।হৃদ বরাবর দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে।সেটা দেখে শুভ্রা বললো,
—-ওকে,ওকে ইটস ওকে।এখন কান ছাড়ো।
তারপর দুজনে কথা শুরু করে দিলো।শুভ্রা হৃদকে দেখিয়ে দেখিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।
হৃদের আর সহ্য হচ্ছে না।হৃদ ভেবেছিলো সেদিনের পর শুভ্রার সাথে ওর সম্পর্ক অনেক বদলে যাবে।ওদের সম্পর্কের উন্নতি হবে।শুভ্রা নিজের ফিলিংস আর লুকাবে না।কিন্তু না শুভ্রা আগের মতোই বিহেভ করছে।হৃদ হটাৎ করে শুভ্রার সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে দাড় করালো।ওর কান্ডে ইশান,শুভ্রা দুজনেই হতবাক।
—–কি করছেন?
হৃদ ইশানের দিকে একবার তাকিয়ে শুভ্রার দিকে তাকালো।তারপর দাতে দাত চেপে বললো,
—–কথা আছে।
তারপর শুভ্রাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে নিজের কেবিনে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে ওর হাত ছেড়ে দিলো।শুভ্রার আপাতত হৃদকে ভয়ানক লাগছে।আরো বেশি ভয় পাচ্ছে কেননা হৃদ কেবিন পাল্টে ফেলেছে।বাইরে থেকে ভিতরটা দেখা যায়না।তাই হৃদ যা খুশি করতে পারে।
হৃদ শুভ্রার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
—–সমস্যা কি তোর?
—-কোনো সমস্যা নেই।
—–তাহলে ইশানের সাথে কি করছিলি?
শুভ্রা স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–ফ্লার্ট করছিলাম।
শুভ্রার এহেন উত্তরে হৃদের শরীর রাগে কাপছে।হৃদ ওয়ালে একটা লাথি মেরে বললো,
—–তুই ওর সাথে কেন ফ্লার্ট করছিলি?
শুভ্রা নির্ভয়ে উত্তর দিলো।
—–কেন আবার?আমি সিংগেল।আমি ফ্লার্ট করতেই পারি।তাছাড়া এখনই বয়স ফ্লার্ট করার।এখন ফ্লার্ট করবোনা তো বুড়ো হলে করবো?আমি চাইলেও তখন কেউ আমার সাথে ফ্লার্ট করবেনা।একদমই না।
—-তুই সিংগেল?
—–ইয়েস।এনি ডাউট?
শুভ্রার কথা শুনে হৃদের নিজের চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে।হৃদ সামনে যা পাচ্ছে তাই ভাংছে।রুম অলরেডি তছনছ করে দিয়েছে।কেবিনের উপরের জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলছে।
শুভ্রা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে।হৃদকে থামানোর চেষ্টা করছে না।শুভ্রার চোখে পড়লো হৃদের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে।শুভ্রা হৃদের কাছে গিয়ে হৃদের হাত ধরে বললো,
—-একি!তোমার হাতে রক্ত।
হৃদ ঝাড়া মেরে বললো,
—-থাকুক রক্ত।ছুবি না আমায়।
শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে বললো,আচ্ছা।ছুবোনা।
তারপর আবার যেখানে দাড়িয়ে সেখানে গিয়ে দাড়ালো।দাড়িয়ে দাড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে।
হৃদ শুভ্রার এমন আচরণের কোনো মানে খোজে পাচ্ছেনা।শুভ্রাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি।
হৃদ শুভ্রার কাছে গিয়ে বললো,
—-তুই কি চাস বলতো আমার কলিজা কেটে তোকে দিয়ে দেই?
শুভ্রা স্বাভাবিক ভাবেই বললো,উহু।তোমার কলিজা দিয়ে আমি কি করবো?
হৃদ শুভ্রার কথায় হতাশ হলো।তারপর ক্লান্তস্বরে বললো,
—–তাহলে কি চাস আমি মরে যাই?
এবারো শুভ্রা স্বাভাবিক।মুখ থেকে নখ সরিয়ে বললো,
—–সেটাও চাইনা।
হৃদ নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারছেনা।
চিতকার করে বললো,
—–তাহলে কি চাস?জাস্ট টেল মি হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট,ডেম ইট?
শুভ্রা হৃদের কাছে গিয়ে নরম কন্ঠে বললো,
—–আসলেই কি তুমি জানোনা আমি কি চাই?তুমি নাকি শুভ্রার নারি নক্ষত্র সব জানো?তাহলে?
হৃদ শুভ্রার চোখের দিকে চেয়ে আছে।শুভ্রার গলা ভারী হয়ে আসছে।শুভ্রা আর কথা বলতে পারছেনা।শুভ্রার ছলছল চোখে হৃদের কেবিন ত্যাগ করলো।হৃদ শুভ্রাকে আটকায়নি।
শুভ্রা দিকবিদিকশুন্য হয়ে অফিস থেকে বের হচ্ছে।হটাৎ করে ওর সামনে ইশান এসে দাড়ালো।শুভ্রা একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে পাশে কাটিয়ে হাটা ধরলো।
পেছনে পেছনে ইশান গিয়ে বললো,
—–শুভ্রতা দাড়াও।
শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে দাড়ালো।
ইশানের দিকে বিরক্তি নিয়ে চেয়ে বললো,
—–হোয়াট??
ইশান রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
—–সেটা তো আমি জানতে চাই।নিজেকে বাইরে স্বতী দেখাতে চাও,গায়ে হাত দিলে এমন ভাব করো যেনো শরীর খসে পড়বে।
আর সেখানে স্যার যখন তোমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো কিছুই বলছিলে না,আর না বাধা দিয়েছো।স্যারের সাথে তার কেবিনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাও।আর আমি গায়ে হাত দিলেই দোষ।আসলে অন্য মডেলদের মতো তুমিও চিপ গার্ল,আমাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ডিমান্ড বাড়াচ্ছো আর স্যারের কেবিনে ঘন্টার পর ঘন্টা সার্ভিস দিচ্ছো।
শুভ্রা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ইশানের গালে থাপ্পড় মেরে বললো,
—–এই থাপ্পড়টা তোকে আরো আগে মারা উচিত ছিলো।তখন না মেরে ভুল করেছি,তাহলে এখন এমন বাজে কথা বলার সাহস পেতি না।তুই জানিস আমি কে?
আমি শুভ্রতা খান।এই যে কোম্পানি,অফিস দেখছিস এটা আমাদের।আমি টাকার জন্য এখানে মডেলিং করতে আসিনি।জাস্ট একটা প্রব্লেম হয়েছে তাই শখের বশে কোম্পানির প্রেজেন্টেশন করতে এসেছি।আর যাকে স্যার বলেছিস ও আমার কাজিন।আমরা এক বাড়িতে থাকি।যত্তসব ফাউল লোক।লাই দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি।সামান্য একজন এমপ্লয়ি হয়ে আমার দিকে আংগুল তোলার সাহস কি করে হলো?
ইশান শুভ্রার কথা শুনে নির্বাক,নিস্তব্ধ।
শুভ্রা যে এই কোম্পানির মালিকের কেউ হয় ভাবতেই পারেনি।
হৃদ শুভ্রার চেচামেচি শুনে ওর সামনে এসে দাড়ালো।
—-হোয়াটস গোয়িং অন হেয়ার?
ইশান হৃদের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো।তারপর শুভ্রার দিকে তাকালো।শুভ্রা হৃদকে বললো,
—–আমি এই ষ্টুপিডের সাথে কাজ করবোনা।হি ইজ লাইক এ ব্লাডি বিচ।
হৃদের সন্দেহ হচ্ছে।যার সাথে এত ভাব।কিছুক্ষণ আগেও হেসে হেসে আড্ডা দিচ্ছিলো।তার সম্পর্কে এসব কথা বলছে।
—–কি হয়েছে শুভ্রা?
ইশান আমতা আমতা করে বললো,
—–ইয়ে স্যার..
হৃদ হাত উচু করে ইশানকে থামিয়ে দিলো।
—–শুভ্রা কিছু জিজ্ঞেস করছি?
শুভ্রা বললো,
—–ও আমাকে বাজে কথা বলেছে।আমি নাকি তোমার কেবিনে গিয়ে সার্ভিস দেই।
শুভ্রার কথা শুনে হৃদের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।হটাৎ করে চোখ মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করলো।যার দরুন ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেলো।
হৃদ ইশানকে কিছু বলতে যাবে তখনই শুভ্রা হৃদকে থামিয়ে দিলো।শুভ্রা হৃদের হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে ছেড়ে দিলো।
হৃদের সারা শরীর তখনো রাগে কাপছে।
শুভ্রা হৃদকে বললো,
—–বাড়ি যাওয়া যাক।
শুভ্রা গাড়িতে গিয়ে বসলো।হৃদের ইচ্ছে করছে ইশানকে পুতে ফেলতে কিন্তু শুভ্রার জন্য পারছেনা।হৃদ ইশানকে পরে দেখে নিবে।গাড়িতে উঠে বসে চুপচাপ ড্রাইভ করছে।শুভ্রাও হৃদের সাথে আর কোনো কথা বলেনি।
রোজের ভার্সিটির সামনে দিয়ে ওদের গাড়ি যাচ্ছে।
রোজ বান্ধবীদের সঙ্গে ফুচকা খাচ্ছে রোডসাইডে।হটাৎ করে অরিত্র এসে রোজের প্লেট থেকে একটা ফুচকা নিয়ে মুখে পুড়ে দিলো।
রোজ রেগে বললো,
—–আমার ফুচকা!!আপনি আমার ফুচকা নিলেন কেন?অসভ্য ছেলে।
অরিত্র আরেকটা ফুচকা নিয়ে হেসে বললো,
—-আমার বউয়ের ফুচকা আমি খেয়েছি তাতে কার কি?
সাথে সাথেই অরিত্রের গালে একটা থাপ্পড় পড়লো।
সবার দৃষ্টি থাপ্পড়দাতার দিকে।
রোজ অবাক হয়ে বললো,
—-ভাইয়া!!
শুভ্রা তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে এলো।
হৃদ রোজের কথা পাত্তা না দিয়ে অরিত্রকে বললো,
—-তোর এতো বড় সাহস আমার বোনকে ডিস্টার্ব করছিস?
হৃদ এমনিতেই ইশানের কাহিনির জন্য রেগে আছে।আর এখন অরিত্রকে রোজের সাথে এমন বিহেভিয়ার করতে দেখে আরো রেগে যায়।অরিত্রকে এলোপাথাড়ি মেরেই যাচ্ছে।রোজ বারবার বলছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।শুভ্রা কি করবে বুঝতে পারছেনা।রোজ কাদতে কাদতে বললো,
—–শুভ্রাপু কিছু করো।
শুভ্রা হৃদের কাছে গিয়ে ওকে থামানোর চেষ্টা করছে।হৃদের হাত ধরে টেনেও সরাতে পারছেনা।রোজ হৃদের কাছে গিয়ে কাদতে কাদতে চিতকার করে বললো,
—–ভাইয়া ওকে ছেড়ে দে প্লিজ।আমি ওকে ভালোবাসি।
হৃদ রোজের কথা শুনে থমকে গেলো।একবার বোনের দিকে তাকিয়ে আরেকবার অরিত্রের দিকে তাকালো।ছেলেটার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে।হৃদ ওকে ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসলো।মাথায় দু’হাত চেপে নিজেকে শান্ত করছে।
শুভ্রা রোজকে বললো,
আগে বলবি তো।
রোজ বললো,
—–আপু আমি বুঝতে পারিনি।আর ভাইয়া এতোটা রেগে গেছে যে কিছুই শুনছিলো না।
শুভ্রা অরিত্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-ভাইয়া,সরি।ওর ভাইয়ার পক্ষ থেকে আমরা দুঃখীত।আর খুবই লজ্জিত।ও আসলে বুঝতে পারেনি আর তাছাড়া একটা ব্যাপার নিয়ে খুব রেগে ছিলো।আর মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।তাই,,
অরিত্র হেসে বললো,
—–ইটস ওকে।প্লিজ আপনারা লজ্জিত হবেন না।আমি কিছু মনে করিনি।আমি আজ অনেক বড় কিছু পেয়ে গেছি।
(রোজের দিকে তাকিয়ে)
হৃদ জোরে জোরে গাড়ির হর্ণ বাজাচ্ছে।
শুভ্রা বললো,
—-আমাদের এখন যেতে হবে।আপনি প্লিজ ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিবেন।
—–জ্বী।
রোজ অরিত্রের দিকে একবার চেয়ে গাড়িতে উঠে বসে।অরিত্র ইয়েস বলে সেখান থেকে চলে যায়।কখন থেকে কেদেই চলেছে।শুভ্রা রোজকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে বললো,
—–স্টপ ক্রায়িং।আরে বাবা ভালোই তো বেসেছিস মার্ডার তো করিস নি।বেশ করেছিস।তোর পাশে কেউ না থাকলেও আমি আছি।ছেলেটা যথেষ্ট ভদ্র দেখেই বুঝা যায়।কত সুন্দর করে কথা বলে।তোর ভাইয়ের মতো খারুস না।আর দেখতেও মাশাল্লাহ।
হৃদ সামনে থেকে বললো,
—–মুখ বন্ধ।
শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তখনই রোজ শুভ্রার মুখ চেপে ধরলো।ফিসফিস করে বললো,
—–আপু আপাতত মুখ বন্ধ রাখাই ব্যাটার।নয়তো ভাইয়া যে পরিমাণ রেগে আছে তাতে এক্সিডেন্ট করে আমাদের মুখ আজীবনের মতো বন্ধ করে দেবে।
শুভ্রা বললো,
—–অনলি ফর ইউ।নয়তো কথা দিয়ে তোর ভাইকে চ্যাপ্টা করে দিতাম।
চলবে…