হৃদয়ের_শুভ্রতা?? পর্ব-৭,০৮

0
626

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-৭,০৮
#ফাবিহা_নওশীন❤
০৭

??
শুভ্রা কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সোফায় পা তুলে শুয়ে আছে।হৃদ অফিস থেকে ফিরে শুভ্রাকে এভাবে দেখে ওর মেজাজ বিগড়ে গেলো।।
—-যখনি দেখো কানে হেডফোন লাগানো।কানের বারোটা বাজাবে নাকি।ওর এই হেডফোনে আগুন যদি না দিয়েছি আমার নাম হৃদ না।

সবাই মিলে ডিনার করছে।শুভ্রা চেয়ার টেনে বসতে গিয়ে হৃদের চোখে চোখ পড়ায় চেয়ার জায়গা মতো রেখে বললো,
—–মাম্মা আমি খাবোনা।ক্ষিদে নেই।

শাওরিন শুভ্রার হাত ধরে বললো,
—-চুপচাপ বস।বা খেয়ে এক পা নড়বিনা।

শুভ্রা জানে বলেও লাভ হবেনা।ওর পেয়ারি মাম্মা না খেয়ে যেতে দিবেনা।ওর বারবার এটা ভেবে রাগ হচ্ছে শুভ্রা অনুর সাথে ভাব কেন জমাবে?
শুভ্রা নিজের প্লেটে পানি ঢেলে উঠে গেলো।
হৃদ রোজকে বললো,
—–রোজ ছোবড়ার কি হয়েছে রে?

রোজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—-আমি কি জানি?মেবি পুড়ছে?

হৃদ বিচলিত হয়ে বললো,পুড়ছে মানে?

—–আগুন আগুনে পুড়েছে।কেন গন্ধ পাচ্ছোনা?

হৃদ রোজের কথার আগামাথা খোজে পাচ্ছেনা।
—–খোলাসা করে বলতো কি হয়েছে?কিসের আগুন?কিসের গন্ধ?

রোজ মনে মনে বলছে,হ্যা এখন আমি তোকে বলি তারপর তুই আমার চুল ছিড়ে ফেল।নেভার।

রোজ বললো,আমি কি করে বলবো।আমি যেটুকু জানি সেটুকুই বলেছি।

হৃদ বোনের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।তারপর বললো,
—-দুটোই গেছে।কি সব ভুলভাল বলছে।

শুভ্রা নিজের হেডফোন পুরো রুম,পুরো বাড়ি খোজেও পায়নি।বেচারি আজ আর গান শোনা হবেনা।মাথা ঠান্ডা কিভাবে হবে?ঘুম কিভাবে আসবে?

ফুল আর রোদ কিছু নিয়ে কথা বলছিলো রোজ ওদের বেডে পা ঝুলিয়ে চিপস খাচ্ছে।
রোজ চিপস শেষ করে বললো,
—-রোজ ইজ হেয়ার টু সলভ ইউর প্রব্লেম মাম্মা।

রোজের মাম্মা পাপা দুজনের দৃষ্টি রোজের দিকে।
—–বাড়িতে মডেল থাকতে তোমরা মডেল খোজছো।ওই মেয়ে র‍্যাম শো করবেনা তো কি।আমাদের চোখের সামনে তো মডেল আছে।

দুজনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যখন রোজের দিকে তখন রোজ বললো,
—-ওয়েট ওয়েট আমি নিজের কথা বলছিনা।আমি তো শুভ্রাপুর কথা বলছি।শুভ্রাপু তো এসব বিষয়ে এক্সপার্ট।তাছাড়া শুভ্রাপু আর ভাইয়া একসাথে কাজ করলে কিছু হলেও হতে পারে।

দুজনেই মেয়ের বলা কথা নিয়ে ভাবছে।রোজ কথাটা খারাপ বলে নি।শুভ্রা আর হৃদ একসাথে থাকতে পারবে।রোদ বললো,
—-না,,শুভ্রার উপর চাপ পড়ে যাবে।সামনে ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম তাছাড়া নাচের স্কুল নিয়েও বিজি আছে।ওকে এতো প্রেশার দেওয়া উচিত হবে না।ওকে অফিসে বারবার যেতে হবে,প্যাক্টিস করতে হবে।

শুভ্রা দরজার সামনে দাড়িয়ে বললো,
—–তোমরা আমাকে নিয়ে কথা বলছো?

রোজ সুযোগ বুঝে শুভ্রার কাছে গিয়ে হাত ধরে ভিতরে এনে বললো,
—-হুম তোমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে।একচুয়ালি আমাদের কোম্পানির বায়ারদের জন্য একটা র‍্যাম শো করা হবে।সেখানে একজন শর্ট।আমি তোমার কথা বলেছি।পাপা বলছে তোমার উপর চাপ পড়ে যাবে,বারবার অফিসে যেতে হবে।ধরো প্রায়ই তোমাকে অফিসে যেতে হতে পারে,অফিসে কিছুক্ষণ থাকতে হতে পারে।কাজ করতে হবে।মানে অফিসে প্যাক্টিস।
রোজ ইচ্ছে করেই বারবার অফিস শব্দটা উচ্চারণ করছে।

শুভ্রা কিছু একটা ভেবে বললো,
—-বাবাই আমি করতে চাই।আমার কোনো সমস্যা হবে না।

—-আর ইউ শিওর?

—-২০০%।

রোজ ভাবছে,
—–কেয়া বাত হে রোজ।তুনে তো কামাল কার দিয়া।ইউ আর জিনিয়াস।
আব মে লাইভ টম এন্ড জেরি দেখবো।হাও সুইট।বাট রোজ আগামীকাল থেকে তো ভার্সিটির ক্লাস শুরু।তুই কি করে টম এন্ড জেরি দেখবি।তোর কপালটাই খারাপ।
রোজ গালে হাত দিয়ে অসহায় ফেস করে চিপস খাচ্ছে।

হৃদ নিজের কেবিনে কাজ করছে।শুভ্রা জিন্স,শর্ট টপস,গলায় স্কাপ পড়া,হাতে হ্যান্ড ব্যাগ,খোলা চুল,চোখে সানগ্লাস পড়ে অফিসে গিয়ে হাজির।

হৃদ একটা ফাইল দেখছিলো।হটাৎ ওর চোখ আটকে যায় বাইরে।হৃদ ফাইল রেখে উঠে দাড়ালো।গ্লাস দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শুভ্রাকে।শোর দায়িত্ব যার উপরে তার সাথে কথা বলছে।মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলছে।হৃদ ভাবছে,
—-এই ছোবড়া এখানে কি করছে?অফিসে ওর কি দরকার থাকতে পারে?রোজের কাছে এসেছে?কিন্তু রোজ তো ভার্সিটিতে।আর রোজকে খোজতে এখানে কেন আসবে?তাহলে কেন এসেছে?

স্যার,,
হৃদের পিএ ইউসুফ হৃদকে ডাকলো।হৃদের দৃষ্টি বাইরে শুভ্রার দিকে দেখে বললো,
—-স্যার উনি নিউ মডেল শুভ্রতা।

ইউনুস ৬মাস যাবত অফিসে এসেছে আর শুভ্রাও অফিসে তেমন আসেনা তাই শুভ্রাকে চিনেনা।পুরনো কিছু স্টাফ মাত্র শুভ্রাকে চিনে।

হৃদ ওর পিএর কথা শুনে অবাক হলো।
শুভ্রা আমাদের মডেল?কই বাড়িতে কেউ আমাকে কিছু বললো না কেন?মাম্মাও কিছু বলে নি।আর রোজ ভাংগা রেডিও সারাদিন কানের কাছে এসে বকবক করে অথচ এটা বলে নি।
যাক ভালো হয়েছে।শুভ্রার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।এ মেয়ে চায় কি?

শুভ্রা কথা শেষ করতেই হৃদকে চোখে পড়ে।চোখাচোখি হতেই শুভ্রা চোখ ফিরিয়ে নেয়।তারপর নিজের মতো ওর গন্তব্যে এগিয়ে যায়।
হৃদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-তুই কি চাস শুভ্রা?সত্যিই কি তোর মনে আমার জন্য আর জায়গা নেই।

শুভ্রার চোখ শুধু অনুকে খোজছে।অনুকে দেখতে চায় ও।কিন্তু না শুভ্রা অনুকে চিনে আর না কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছে।যেসকল ইয়াং মেয়ে দেখছে তাকেই অনু মনে হচ্ছে।
শুভ্রা বসে বসে কফি খাচ্ছে আর আড়চোখে সব মেয়েদের উপর চোখ বুলাচ্ছে।একটা মেয়েকে দেখে বললো,
—-এই যে আপু শুনছেন?

সাদা ড্রেস পড়া মেয়েটি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বললো,
—-জ্বি মেম বলুন।

—-মেম বলবেন না প্লিজ।আমার নাম শুভ্রতা।আপনার নামটা কি?

—–আমার নাম রাফিয়া ইসলাম।

শুভ্রা আমতা আমতা করে বললো,
—–একচুয়ালি আমি অনুকে খোজছিলাম।ও কোথায় বলতে পারবেন?

মেয়েটা ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে পিংক কালার ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে দেখে বললো,
—-ওই তো অনু।

শুভ্রা বললো,কোথায়?

—-ওই যে পিংক ড্রেস।

শুভ্রতার চোখ চকচক করে উঠলো।
টেবিলে কফির মগ রেখে বললো,
—-ধন্যবাদ আপু।

শুভ্রা অনুর দিকে এগিয়ে গেলো।অনুকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নিলো।মেয়েটি বেশ সুন্দরী।তারপর মনে মনে মেয়েটিকে গালাগাল করলো।
মেয়ে তুই যদি হৃদের দিকে হাত বাড়াস তবে আমি তোর হাত কেটে ফেলবো নয়তো আমার নাম শুভ্রতা না।
শুভ্রা অনুকে ভালো করে দেখে ব্রেইনে সেইভ করে নিলো।
তারপর বিরবির করে বকতে বকতে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
আজকে আপাতত কোনো কাজ নেই।

রোজ ভার্সিটি গিয়ে ক্লাশের দিকে যাচ্ছে।এ ভার্সিটি নতুন করে দেখার কিছু নেই।পাপার সাথে অনেক বার এসেছে।
রোজ ক্লাসের দিকে যেতেই ওড়নায় টান পেলো।
রোজ ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে একটা ছেলে কুৎসিত দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর এক হাতে ওড়না ধরে রেখেছে।
রোজের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
—-কি হলো ওড়না ধরে রেখেছেন কেন?

—-নিউ নাকি?

—-তো!!

—–আমরা তোমার সিনিয়র।

রোজ ওড়না টেনে নিজের হাতে নিয়ে নিলো তারপর বললো,
—-সিনিয়রা ওড়না ধরে টানাটানি করে বুঝি?এমন বেয়াদব হয়?

রোজের কথা শুনে ছেলেটা রোজের দিকে হাত বাড়াতেই রোজ ভয় পেয়ে ঘুরে যায়।তখনই ঠাস করে থাপ্পড়ের শব্দ পায়।রোজ ঘুরে দাড়িয়ে দেখে ছেলেটি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর সাথের ছেলেগুলো মাথা নিচু করে আছে।
পাশেই একটা সুদর্শন যুবক রক্তচক্ষু নিয়ে দাড়ালো।রোজ কিছুই বুঝতে পারছেনা। ও কিছু বুঝার আগে সুদর্শন যুবকটি ওই ছেলেটার গলা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর রোজকে বললো,
—-ফলো মি।

রোজ বুঝতে পারছেনা ফলো করবে কিনা।

রোজ,বখাটে ছেলেটা আর সুদর্শন ছেলেটি ডিপার্টমেন্ট হেড এর রুমে দাড়িয়ে আছে।

—–স্যার নিউ ইয়ার তাই র‍্যাগ দিচ্ছিলাম।মেয়েটা ত্যাড়ামি করছিলো,,

রোজ খপ করে দাঁড়িয়ে বললো,
—-একদম মিথ্যে বলছে স্যার।আমাকে কোনো র‍্যাগ দেয়নি।আমি ক্লাসে যাচ্ছিলাম আর আমার ওড়না টেনে ধরেছে।ওড়না ধরে টানাটানি করা কোনো র‍্যাগের আওতায় পড়ে বলে মনে হচ্ছে না।

স্যার সুদর্শন ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-অরিত্র মেয়েটি ঠিক বলছে?

অরিত্র বললো,
—-জ্বি স্যার।দূর থেকে দেখলাম বেয়াদবি করছিলো তাই আমি থাপ্পড় মেরে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি।

বখাটে ছেলেটি বললো,
—-স্যার ভাইয়া দূর থেকে কি দেখেছে জানিনা,হয়তো বুঝার ভুল হবে।আমি ওড়না ধরে টানাটানি করিনি।

রোজের ইচ্ছে করছে থাপড়িয়ে তেলে ভাজতে।রোজ ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
—–আপনি বলতে চাইছেন আমি মিথ্যা বলছি?আমি কেন বলবো আপনি আমার ওড়না ধরে টানাটানি করছেন?আমি ভদ্র,সুশীল পরিবারের মেয়ে।আমার পাপা এই ভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের হেড।

স্যার অবাক হয়ে বললো,
—–তুমি রোদ্দুরের মেয়ে?

—-জ্বি স্যার।

—-আই সি।তুমি রোজ।

—-জ্বি স্যার রুহানি খান রোজ।

অরিত্র আড়চোখে একবার রোজকে দেখে নিলো।রোজ যেনো রোজের মতোই সুন্দরী।তারপর মুচকি হাসলো।

স্যার বখাটে ছেলেটিকে বললো,
—–রোজকে সরি বলো।মেয়েদের সাথে র‍্যাগিংয়ের নামে নোংরামি চলছে।

বখাটে ছেলেটি রোজকে বললো,সরি।আর এমন হবেনা।

রোজ ভ্রু কুচকে বললো,
—-আশা করি ভবিষ্যতে এমন করবেন না।মেয়েদের সম্মান দিয়ে চলবেন।

বখাটে ছেলেটিকে বলে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-স্যার পাপা যেনো না জানতে পারে।পাপা জানলে হয়তো স্যার হিসেবে ভদ্রতার খাতিরে দুচার কথা বলে ছেড়ে দিবে।কিন্তু ভাইয়া শুনলে হাংগামা হয়ে যাবে।প্লিজ স্যার।

স্যার মুচকি হেসে বললো,ওকে।ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।

—-থ্যাংক ইউ স্যার।আমি এখন যেতে পারি?প্রথম দিনই লেইট করতে চাইনা।

—-বেস্ট অফ লাক।ইউ ক্যান গো নাও।

রোজ মুচকি হেসে অরিত্রকে বললো,
—-থ্যাংক ইউ ভাইয়া।

অরিত্র রোজের মুখে ভাইয়া শুনে কিছুটা রেগে গেলেও বাইরে প্রকাশ করলো না।
—-ইটস মাই প্লেজার।প্রয়োজনে জানাবে।

—-অবশ্যই।

শুভ্রা নিউ হেডফোন নিয়েছে।সেটা কানে দিয়ে গান শুনছে।হৃদ শুভ্রার কানে নিউ হেডফোন দেখে রাগে ফুসফুস করছে।
—-ছোবড়ার বাচ্চা নিউ হেডফোন নিয়েছে।কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখা ছাড়া দুনিয়ায় আর কাজ নেই নাকি?এইবার হেডফোন না তোকে জ্বালাবো।

হৃদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে শুভ্রার সামনে গিয়ে ওর হেডফোন এক টানে খোলে নিলো।শুভ্রা চোখ মেলে দেখে হৃদের হাতে হেডফোন।চোখ বড়বড় করে বললো,
—-আমার হেডফোন আপনাকে কি করেছে?হেডফোন দিন।

হৃদ কোনো কথা না বলে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।শুভ্রা কিছুই বুঝতে পারছেনা হেডফোন নিয়ে কোথায় যাচ্ছে।শুভ্রা হৃদের পিছনে পিছনে যাচ্ছে।হৃদ কিচেনে গিয়ে চুলা অন করে তার উপরে হেডফোন রাখছে।শুভ্রা হা করে ওর কান্ড দেখছে তারমানে আগের হেডফোনটা হৃদ নিয়েছে।শুভ্রা হৃদের হাত থেকে হেডফোন ছু মেরে নিয়ে নিলো।হৃদ শুভ্রার হাত ধরে ফেললো।শুভ্রা অবাক হয়ে নিজের হাতের দিকে চেয়ে আছে।
এতবছর পর এই প্রথম হৃদের ছোয়া পেলো।শুভ্রা হাত ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
—-এই শুভ্রার হাত কেউ ধরতে পারেনা যতক্ষণ না শুভ্রা চায়।

হৃদ দাতে দাত চেপে বললো,
—-এই হৃদের কারো পারমিশনের প্রয়োজন নেই।হৃদ চাইলেই ধরতে পারে কিন্তু হৃদের মানসিকতা এতটা চিপ নয়।তার প্রমাণ আগেই দিয়েছি।

চলবে….

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??

(পর্ব-৮)

#ফাবিহা_নওশীন❤

??
শুভ্রা হৃদের কথা শুনে রাগে ফুসফুস করছে।এক কথা বলে বারবার অপমান করছে।শুভ্রা রাগে হৃদের দিকে হেডফোন ছুড়ে মারলো।হৃদের বুকে গিয়ে লাগলো।শুভ্রা তারপর উল্টো হাটা ধরলো।
হৃদ আউচ করে উঠলো।তারপর বিরবির করে বললো,
—-বুকে হেডফোন ছুড়ে মারলো না চাকু মেরে গেলো?

কাকতালীয়ভাবে হৃদ,হৃদের পাপা,কাকাই একসাথে বাড়িতে ফিরেছে।তিনজন একসাথে বাড়িতে ঢুকে দেখে শুভ্রা সোফায় পা তুলে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে ফোন টিপছে,রোজ টিপস খাচ্ছে আর ফোন টিপছে,রোজ আর শুভ্রার মা টিভি দেখছে।

রাহাত সবার দিকে চোখ বুলালো।হৃদের চোখ শুভ্রার দিকে।শুভ্রাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।
রাহাত বললো,হ্যালো লেডিস কি হচ্ছে?

রোদ বললো,কি আর হবে? এরা টিভি আর ফোন গিলছে।

রাহাত শাওরিনের মাথায় হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বললো,
—-কিরে বয়রি কিছু বলছি আমরা শুনছিস না?

শাওরিন টিভি থেকে চোখ সরিয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-তোমার ইচ্ছে হলে টিভির ভিতরে ঢুকে যাও,কে নিষেধ করেছে?

রাহাত বললো,
—-আমি কি তোর মতো বেকার লোক?

শুভ্রা হেডফোন খোলে বললো,
—-পাপা তুমি আবার মাম্মাকে তুই করে সম্ভোধন করছো?
ইটস নট ফেয়ার।

রোজ চিপস খেতে খেতে বললো,
—-শুভ্রাপু তোমার বরও তোমাকে তুই করে বলবে।

শুভ্রা কপাল কুচকে বললো,
আমি মার্ডার করে ফেলবো।

সবার দৃষ্টি হৃদের দিকে।সবাই ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে হৃদ ভরকে গেলো।
—–কি আজিব!সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন
টাই খোলতে খোলতে নিজের রুমে যাচ্ছে।
—–শুভ্রা তুই একবার আমার হয়ে যা,আমি তোর হাতে মার্ডার হতেও রাজি।

হৃদ ছাদের রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে।দৃষ্টি ওর এক জায়গায় স্থির।
হৃদের পাপা হৃদের পাশে এসে দাড়িয়েছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।রোদ ছেলের দৃষ্টি বুঝার চেষ্টা করছে।আকাশের দিকে চেয়ে আছে।রোদও সেদিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু সেখানে দেখার মতো কিছু নেই যা হৃদ এক দৃষ্টিতে বিস্ময় নিয়ে দেখবে।
রোদ ছেলের কাধে হাত রাখলো।
হৃদ কারো স্পর্শ পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পাপাকে দেখে অবাক।
—–পাপা তুমি এত রাতে এখানে?

রোদ পাল্টা প্রশ্ন করলো।
—–তুই এত রাতে এখানে কি করছিস?এত অস্থিরতা কিসের?

হৃদ আমতা আমতা করে বললো,
—-কই?আমি তো চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।

রোদ ছেলের পিঠে হাত চাপকে বললো,
—–আমি তোর বাপ তুই আমার না।তোর নীরবতার মাঝেও তোর ভিতরের অস্থিরতা আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছি।কি হয়েছে বল।

হৃদ রেলিঙের দুপাশে দুহাত ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বললো,
—–তাহলে এটাও জানো আমি কি নিয়ে অস্থির।

রোদ মৃদু হেসে বললো,
—–হুম জানি।বাট নতুন করে কি কিছু হয়েছে?

হৃদ নাক ফুলিয়ে বললো,
—–পাপা এই ছোবড়া কি চায় আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।এভাবে কতদিন?কিছু তো একটা হওয়া উচিৎ।

রোদ মুচকি হেসে বললো,কি ধামাকা?

—-পাপা??তুমিও মজা করছো?
দিন দিন সব কমপ্লিকেট হয়ে যাচ্ছে।

—–তোর মাম্মার আর আমার সিচুয়েশনের চেয়ে বেশি?আমাদের অবস্থার সাথে তোর অবস্থার তুলনা কর।সবকিছু আমাদের বিপক্ষে ছিলো।আর তোদের বেলায় সবাই ঠিক আছে শুধু দুজনের অভিমানের কারণে সবকিছু থেমে আছে।আরেকটু সময় দে।
সব ঠিকঠাক করে নিলে তোদের বিয়েতে আমরা দেরি করবোনা।

—-সেটাই তো প্রব্লেম।সব ঠিক কবে হবে?এই মেয়ের অভিমান কবে শেষ হবে।

—-বি পেসেইন্স মাই সান।

—–পাপা তুমি আমার বয়সে বিয়ে করে ফেলেছিলে।আর আমি প্রেমটাই করতে পারলাম না।হুহ।

—–যা শুভ্রাকে মানিয়ে নে।তুই আমার ছেলে হয়েও হবু বউকে মানাতে পারছিস না।

—–পাপা তুমি আমাকে অপমান করছো?আচ্ছা এইবার তোমাকে হৃদের কেলমা দেখাবো।

—-ওকে।আ’ম রেডি।

হৃদ অফিসে নিজের কেবিনে বসে একটা ফাইল নিয়ে অনুর সাথে কিছু একটা আলোচনা করছে।শুভ্রা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের দেখছে।শুভ্রার অনুকে সহ্যই হয়না।
শুভ্রা ওখান থেকে সরে পড়লো।হৃদের মনে হলো দরজার সামনে কেউ ছিলো।হৃদ কেবিন ছেলে দরজার সামনে এসে কিছুটা এগিয়ে এসে শুভ্রাকে দেখলো।শুভ্রা দ্রুত পায়ে হেটে যাচ্ছে।হৃদ মুচকি হেসে কেবিনে ফিরে এলো।অনু ফাইলে কিছু একটা চেক করছে।হৃদ অনুর দিকে একবার তাকিয়ে বাকা হেসে মনে মনে বললো,
—–শুভ্রা তুই নিজেকে নিজের তৈরি আগুনেই জ্বালাচ্ছিস।এখন আমি শুধু সেই আগুনে কেরোসিন ঢেলে দেবো।এতে আমার কি দোষ!

রোজ ভার্সিটিতে ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে যাচ্ছে চিপস খেতে খেতে।সবাই অদ্ভুত ভাবে রোজের দিকে চেয়ে আছে।রোজের বিরক্ত লাগছে।কি রে বাবা চিপস ই তো খাচ্ছি গাঞ্জা তো না।রোজ দাঁড়িয়ে গিয়ে কয়েকটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-কি খাবে,এভাবে চেয়ে আছো কেন?আমার পেটে ব্যাথা করবে।

মেয়েগুলো রোজের কথা শুনে ভরকে গেলো।

রোজ লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখে অনেকেই বসে বসে বই পড়ছে,কেউ দাড়িয়ে।সামনেই লিখা আছে বড় করে “জোরে কথা বলা নিষেধ”।

রোজ ভার্সিটিতে অনেকবার এসেছে কিন্তু লাইব্রেরিতে আসেনি।এতবড় লাইব্রেরী দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশী অবাক ফ্যাশন,ডিজাইন নিয়ে এতো এতো বই দেখে।ওর পছন্দের অনেক বই আছে এখানে।রোজের ইচ্ছে করছে পুরো লাইব্রেরী বাড়িতে নিয়ে যেতে।রোজ বেছে বেছে ৬টা বই নিলো।বইগুলো অনেক মোটা যার কারণে দুহাতে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে হাটছে যাতে পড়ে না যায়।কিন্তু কিছুদূর যেতেই ধপাস করে বইগুলো মেঝেতে পড়ে যায় যার দরুন প্রচুর শব্দ হয়।সবাই বই থেকে মুখ সরিয়ে রোজের দিকে বিরক্তি নিয়ে চেয়ে আছে।
কেউ কেউ চশমার ফাক দিয়ে দেখছে,কেউ চোখ মুখ সরু করে চেয়ে আছে।রোজ সবার দিকে ইশারা করে সরি বললো।তারপর মেঝে থেকে বইগুলো তুলে নিয়ে টেবিলের উপরে রেখে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলো।
রোজের মন কিছুটা খারাপ।ব্যাগ থেকে আরেকটা চিপস বের করে খেতে লাগলো।
দূর থেকে কেউ একজন রোজকে দেখছে।

রোজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে বসতেই একটা প্যাকেট দেখতে পায়।ড্রাইভার বলল,
—-মেডাম,একজন এসে রেখে গেলো,এগুলো নাকি আপনার বই।

রোজ তাড়াতাড়ি প্যাকেট খোলে দেখে ওর পছন্দের বইগুলো।রোজ বই দেখে খুশিতে গদগদ।বই খোলে পড়তে শুরু করে দেয়।গাড়ি চলছে নিজের গতিতে।
৫তম পৃষ্ঠা পড়া শেষে রোজের হুশ হলো এই বইগুলো কে দিলো?কে রেখে যেতে পারে?কে?রোজের মাথায় কিছুই আসছেনা।
দূরর যে খুশি রাখুক।আমার পড়া দরকার পড়ি।যে রেখেছে তাকে ধন্যবাদ।

রোজ ৬তম পৃষ্ঠা পড়া শুরু করলো।

আজ শুভ্রার শ্যুট আছে।ওকে ওর পার্টনারের সাথে মিট করিয়ে দেওয়া হয়েছে।পার্টনারের নাম ইশান।শুভ্রাকে আর ইশানকে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শুভ্রা আর ইশানের ফটোশেসন হচ্ছে।
শো তে যে ড্রেস পড়বে তার ডুব্লিকেট ড্রেস পড়ে,মেকাপ নিয়ে ফটোশেসন হচ্ছে।সাথে আরো কয়েকজনের ফটোশেসন হচ্ছে।
হৃদ বসে বসে সবকিছু তদারকি করছে।ওর পাশে ওর এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রা যে ড্রেস পড়েছে তাতে শুভ্রার ফর্সা একহাত,কাধ সম্পূর্ণ দৃশ্যমান।হৃদ আপাতত এ বিষয় নিয়ে প্রচন্ড ক্ষেপে আছে।ওর ইচ্ছে করছে শুভ্রাকে টেনে হেচড়ে নিয়ে দুগালে দু চড় বসিয়ে দিতে তবেই যদি একটু শান্তি পেতো।শুভ্রা আয়নার নিজেকে দেখে নিচ্ছে,চুলগুলো ঠিক করছে,মেকাপ চেক করছে।

শুভ্রার ড্রেসে হাত দিয়ে একজন শুভ্রাকে কিছু একটা বুঝাতে গেলেই শুভ্রা হাত উচু করে থামিয়ে দিলো।
—–আমি মডেল বাট কারো প্রাইভেট প্রোপার্টি না।যা বলার,বুঝানোর প্রয়োজন তা দূর থেকেই বলুন।না বুঝতে পারলে ফায়ার করে দিবেন তবুও গায়ে হাত দিবেন না।আই ডোন্ট লাইক দিস।

লোকটা মাথা নিচু করে বললো,
—সরি মেম।

হৃদ শুভ্রার কথায় খুশি হলেও হৃদের এসিস্ট্যান্ট খুশি হয়নি।সে বললো,
—-মডেলের এত দেমাক?মডেলিং করতে এসে সতি সাজতে আসছে।মডেলিং জগতে আসতে হলে কিভাবে আসতে হয় তা কি কারো জানা নেই নাকি।কজনের সাথে বেড শেয়ার,,

কথা শেষ করার আগেই গালে একটা চড় পড়লো।হৃদ চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
ম্যানেজার উনার সব পাওনা মিটিয়ে বিদায় করে দিন।

সবাই হৃদের এমন বিহেভ দেখে স্তব্ধ।হৃদ হনহন করে হেটে নিজের কেবিনে চলে গেলো।শুভ্রা দূর থেকে দাঁড়িয়ে হৃদের কান্ড দেখে অবাক।কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারলো না।
এসিস্ট্যান্ট হৃদের কাজের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।

ম্যানেজার বললো,
—-চলুন আপনার সব বুঝিয়ে দিচ্ছি।

—-কিন্তু ম্যানেজার স্যার আমি কি করেছি?আমার অন্যায়টা কি?কেন আমার সাথে এমন করা হচ্ছে?

—-আপনাকে যে আর কিছুই বলে নি সেটাই আপনার ভাগ্য।আপনি যাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছেন উনি স্যারের কাজিন সিস।সেই সুবাধেই এখানে মডেলিং করতে এসেছে।

—–কি উনি স্যারের কাজিন?

—-শুধু তাই নয় স্যারের উড বি শুনেছিলাম।এখন আপনার এখান থেকে চলে যাওতাই উত্তম।

এসিস্ট্যান্ট আর কিছুই বলতে পারলোনা।

হৃদ শুভ্রাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অনুর সাথে গল্প করছে আর কফি খাচ্ছে।শুভ্রা দূর থেকে ওদের দুজনকে দেখছে।কি করা যেতে পারে সেটা ভাবছে।ওদের দুজনের ভাব দেখে শুভ্রার গা জ্বলে যাচ্ছে।

শুভ্রা মামনির রুমে গিয়ে পাইচারি করছে।কিছু একটা বলার জন্য আমতা আমতা করছে কিন্তু বলতে পারছেনা।ফুল নিজে থেকেও কিছু জিজ্ঞেস করছে না।কারণ ফুল চায় শুভ্রা নিজের সমস্যার কথা নিজে বলুক।ফুল বই পড়ছে।শুভ্রা আড়চোখে মামনির দিকে তাকাচ্ছে তারপর বললো,
—–মামনি তোমার বই রাখো।গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।

ফুল বই রেখে চশমার খোলে বললো,বল কি বলবি?

শুভ্রা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-কিছু জানতে চাই।

—-কি জানতে চাস?

শুভ্রা জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
—-তোমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো অন্যজনের সাথে।তারপর বাবাই তোমার সাথে রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।তারপর হটাৎ কি এমন হলো যে সব রাগ,অভিমান ভুলে তোমাকে সবার সামনে জোর করে বিয়ে করে নিলো?আমি সেটাই জানতে চাই।

ফুল মনোযোগ দিয়ে শুভ্রার কথা শুনে মনে মনে হাসছে কিন্তু মুখে প্রকাশ করছেনা।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-কারণ আমি তখন ইচ্ছে করেই রিশাতের সাথে টাইম স্পেন্ড করছিলাম তোর বাবাইয়ের সামনে যেটা তার সহ্য হচ্ছিলো না।তাই হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।

শুভ্রা লাফিয়ে উঠে বললো,
—-ইউ মিন জেলাসি?

ফুল শুভ্রার গাল টেনে বললো,ইয়েস।

শুভ্রার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।শুভ্রা মনে মনে বলছে,
—–পেয়েছি চান্দু এইবার তোমাকে বুঝাবো জেলাসি কাকে বলে।

শুভ্রা যাওয়ার পর ফুল মনে মনে বললো,দুজনেই দুজনের জন্য উতলা হয়ে উঠছে কিন্তু স্বীকার করছেনা।এখন এই জেলাসি যদি নতুন মোড় আনে তবেই শান্তি।

শুভ্রা অফিসে গিয়ে জানতে পারলো ওকেও ফায়ার করা হয়েছে।

—-আমি কি জানতে পারি কেন এটা করা হয়েছে?
ম্যানেজারের উদ্দেশ্য বললো।

—-মেম সেটা তো স্যার বলতে পারবে।

—-কোন স্যার?

—-রাইসান হৃদয় স্যার।

—-ওকে আপনার হৃদয় স্যারকে আমি দেখাচ্ছি।

শুভ্রা নক না করেই হৃদের কেবিনের দরজা ঠাস করে খোলে ভিতরে ঢুকে গেলো।
হৃদ ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে শুভ্রাকে দেখে কড়া গলায় বললো,
—-মিস শুভ্রা এটা কোন ধরনের অভদ্রতা?দরজা নক করে ঢুকতে হয় এটুকু ম্যানার্স শিখেন নি?

শুভ্রা হৃদের কথায় দমে না গিয়ে টেবিল চাপকে বললো,
—–রাখুন তো আপনার ম্যানার্স।আমাকে কেন ফায়ার করা হয়েছে?

হৃদ উঠে দাড়িয়ে পকেটে হাত গুজে বললো,
—–আমার অফিস আমি যাকে খুশি রাখবো,ছাটাই করবো।

—–আচ্ছা,উইথআউট এনি রিজন?

—-নো,রিজন অবশ্যই আছে।

—-আমি কি জানতে পারি কি রিজন?

—-নো আমি বলতে বাধ্য নই।

শুভ্রা হৃদের কথা শুনে রেগে গেলো।
—–মামার বাড়ি আবদার নাকি?যা খুশি তাই করবেন আর আমরা রিজন জানতে পারবোনা।এটা অন্যায়।

—-আমার অফিস,,আমার ইচ্ছে।

—-দুদিন যাবত এসে আমার অফিস।নিজের বাবামায়ের অফিসে দুদিন ধরে বসে নিজেকে রাজা মনে করা হচ্ছে।পারলে নিজে কিছু করে দেখান।

হৃদ ভ্রু কুচকে বললো,
—–তো মেম,আপনার নাচের স্কুল কে তৈরি করেছে?টাকা কোথায় থেকে এসেছে?নিশ্চয়ই কাকাই দিয়েছে।পাপার টাকায় নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন আর আমি মাম্মার সম্পত্তি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবোনা?
যাইহোক বাসায় গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুম দিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

হৃদের এই উপহাস করে বলা কথা শুভ্রার সহ্য হলো না।শুভ্রা রাগে ফুসতে ফুসতে পানির গ্লাসের দিকে তাকালো।তারপর গ্লাস তুলে হৃদের মুখে ছুড়ে মারলো।মুখের পাশাপাশি কোর্ট,শার্ট ভিজে গেছে।আচমকা আক্রমণের জন্য হৃদ তৈরি ছিলো না।মুখের উপর হাত দিয়ে পানি মুছে শুভ্রার দিকে চোখমুখ শক্ত করে তাকালো।
শুভ্রা হৃদের ফেস দেখে ভয় পেয়ে গেলো।মনে মনে বলছে,
শুভ্রা রাগের মাথায় এটা কি করলি?এখন এই অসুর তোকে খেয়ে নিবে।

হৃদ হাতের মুঠো শক্ত রক্তচক্ষু নিয়ে শুভ্রার দিকে আগাচ্ছে।শুভ্রা ভয়ে ভয়ে পিছাতে লাগলো।
তবে বেশিদূর পিছাতে পারলো না।তার আগেই হৃদ শুভ্রার হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো।তারপর দুবাহু চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,
—–কি করলি তুই এটা?

হৃদ এত কাছে আসায় শুভ্রার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।কি বলবে কিছুই মাথায় আসছে না।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো,
—-বেশ করেছি।একশবার করবো।আমাকে ছাড়ুন,এটা কি ধরনের অসভ্যতা,গায়ে হাত দেওয়া?আপনাকে বলেছি আমাকে না ছুতে।লিভ মি।

শুভ্রার এমন কথায় হৃদের মাথায় যেনো আগুন ধপ করে জ্বলে উঠে।হৃদ শুভ্রার দুবাহু ছেড়ে দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে।শুভ্রার যেনো দুচোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
কাপা কাপা গলায় বললো,
—-কিহহহ…কররর…ছেন…??

হৃদ হটাৎ করে শুভ্রার গালে ঠোঁট ছুইয়ে শুভ্রাকে ছেড়ে দিলো।শুভ্রার হাত অটোমেটিক গালে চলে গেলো।পলক ফেলতে ভুলে গেলো।স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো।তারপর হটাৎ চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।ঢলে নিচে পড়ে যেতেই হৃদ শুভ্রাকে ধরে ফেলে।
শুভ্রা সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।হৃদ কিছুক্ষণ শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে ফেললো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here