#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-৯,১০
#ফাবিহা_নওশীন❤
০৯
??
শুভ্রা চোখ মেলেই ঘাবড়ে যায়।ওর পরিচিত মুখগুলো ওকে ঘিরে বসে আছে।শুভ্রা ঘাবড়ে গিয়ে উঠে বসে।তারপর চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো নিজের ঘরে,নিজের বেডে বসে আছে।
বেড থেকে নামার চিন্তা করার আগেই শাওরিন বললো,
—-শুভ্রা অজ্ঞান কিভাবে হয়েছিস?
শুভ্রা এর জবাব খোজে পেলো।ফ্যালফ্যাল করে মাম্মার দিকে চেয়ে আছে।
শুভ্রার চোখ গেলো সোফার দিকে।হৃদ পায়ের উপর পা তুলে নির্বিকার ফোন টিপছে।
হৃদকে দেখে শুভ্রার শান্ত মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু রিয়েক্ট করতে পারছেনা।শুভ্রা মনে মনে বলছে,এত মানুষের সামনে কিভাবে বলবো এই অসুরটা আমাকে কিস করেছে।
রাহাত বললো,কিরে কথা বলছিস না কেন?শরীর খারাপ লাগছে?
—-না পাপা,জানিনা কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছি।
রাহাত বললো,ভাগ্যিস হৃদ ছিলো।ও তোকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
হৃদ সবার দিকে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।
শাওরিন রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-আমার কথা তো তোমার বিশ্বাস হয়না।এবার দেখো।সারাদিন ফোন,ল্যাপটপ আর হেডফোন নিয়ে পড়ে থাকে ঠিকমতো খায় না।রাত জাগে যার দরুন শরীর দূর্বল হয়ে পড়েছে।আর অতিরিক্ত প্রেশারে এই অবস্থা।
রাহাত বললো,
—-হ্যা ঠিক বলেছো।শুভ্রা তুমি ২দিন ফুল রেস্টে থাকবে।শাওরিন ওর ফোন ল্যাপটপ নিয়ে তোমার কাছে রেখে দেও।দুদিনের আগে দিবেনা।
শুভ্রা চোখ বড়বড় করে বললো,
—-দুদিন!!
তারপর অসহায় ফেস করে কাদো কাদো হয়ে বললো,
—-পাপা প্লিজ।আমি এমনিতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি।আমার ফোন….
রাহাত কড়া গলায় বললো,
—-শুভ্রা যা বলেছি তাই।কেউ এমনি এমনি অজ্ঞান হয়না।
শুভ্রা বেড থেকে নামতে গেলে রাহাত বললো,
—-বেড থেকে নামবে না।রেস্ট নেও।
শুভ্রার ইচ্ছে করছে বেডে বসেই হৃদকে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিতে।
একে একে সবাই রুম থেকে চলে যাচ্ছে।শুভ্রা রাগে ফুসফুস করছে।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে বাকা হেসে বেরিয়ে গেলো।
সবাই যেতেই শুভ্রা কুশন ছুড়ে মারে।আমার আজকের দিনটাই খারাপ।প্রথমে অফিস থেকে ফায়ার,তারপর হৃদের বাচ্চার অসভ্যতামি,তারপর বাড়িতে সবার বকা,আমার ফোন,ল্যাপটপ মাম্মা নিয়ে গেলো।এখন নাকি শান্তিতে দুদিন বাড়িতে বসে থাকবো।হাও পসিবল।
রোজ শুভ্রার পাশে এসে বললো,
—-লেকতা হে ডাল মে কুচ কালা হে।
শুভ্রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—-তোর আবার কি হলো চিপস কন্যা?
—-আমার না তোমার।আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।কি হয়েছে শুভ্রাপু?অজ্ঞান কিভাবে হলে?
শুভ্রা দাতে দাত চেপে বললো,
—-তোর লুচু ভাই আমাকে কিস করেছে।
রোজ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে চোখ বড়বড় করে বললো,
—-কিহ!!!
শুভ্রা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বললো,
—-কি না জ্বি।তোর ভাই যে এতো লুচু জানতাম না।
রোজ তখনো বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
রোজ বললো,
—-শুভ্রাপু সত্যিই কি ভাইয়া? না মানে আমি বলতে চাইছি ভাইয়া হটাৎ করে তোমাকে কিস কেন করবে?তোমাদের তো ঝগড়া চলছে।
—-কারণ তোর ভাই একটা লুচু।
শয়তানটা আমাকে ফায়ার করে দিয়েছে।তাই আমি মুখে পানি ছুড়ে মেরেছি।আর তারপর আমার গালে কিস করেছে অসুরটা।এত অপমান এই শুভ্রা মেনে নিবেনা।
—–ভাইয়া তোমাকে ফায়ার কেন করেছে?
—–আমি কি জানি,তার ঢং হয়েছে।কোনো রিজন ছাড়া আমাকে ফায়ার করেছে।শালা ইতর,লুইচ্চা।
রোজ মুখ টিপে হাসছে।
শুভ্রা তাই দেখে ধমকে বলে,
—-ওই হাসছিস কেন?
রোজ জোরে হেসে দিলো।।
—-শুভ্রাপু তুমি গালে একটা কিস করায় অজ্ঞান হয়ে গেলে?হাস্যকর।ইতিহাসের পাতায় বড়বড় করে লিখে রাখা উচিত তোমার এই কিস কাহিনি।
শুভ্রা রোজের পিঠে মেরে বললো,
—-বেকুব,আমি শকড হয়ে অজ্ঞান হয়েছি।
আমি ভাবতে পারিনি হৃদ এমন কিছু করবে।কিন্তু এই ছেলে তো তেজ চলছে।ভদ্রতার আড়ালে একটা লুচু।আমাকে কিস করেছে।ছিহ!আমার কান্না পাচ্ছে।
কয়েকঘন্টা পর রোজ হৃদের রুমে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে।
হৃদ রোজকে বললো,কিছু বলবি?
রোজ কনফিডেন্সলি বললো,
—-অবশ্যই।তুমি এটা কি করেছো ভাইয়া?
রোজের কথা শুনে হৃদ ঘাবড়ে গেলো।শুভ্রা কি রোজকে বলে দিয়েছি।ছিহ ছিহ।শেষ পর্যন্ত বোনের কাছে এসব শুনতে হবে।শুভ্রার কি বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না।এভাবে লজ্জায় ফেলতে পারলো।
হৃদ আমতা আমতা করে বললো,
রোজ এখন আমি বিজি পরে কথা হবে।
রোজ ভ্রু কুচকে বললো,
—-না এক্ষুনি।তুমি কিভাবে শুভ্রা আপুর সাথে এটা করতে পারলে?কি দোষ ছিলো আপুর যে ফায়ার করে দিয়েছো?
ফায়ারের কথা শুনে হৃদ স্বস্তি পেলো।তারপর বললো,
—-কারণ শুভ্রাকে সবাই আজেবাজে কথা বলছিলো,বাজে নজরে দেখছিলো,যা আমার সহ্য হচ্ছিলো না।ও ওর নাচের স্কুল নিয়েই থাকুক।মডেলিং জগতটা অনেক খারাপ।সবাই ভালো নজরে দেখে না।
—-ভাইয়া আপু তো প্রফেশনাল মডেল না।জাস্ট একটা শো করতো আর কিছুনা।
—-হুম বাট ওর পাটনার ইশান একটা প্লে বয়।আমি খোজ নিয়েছি।
—-শুভ্রাপু কি ওর সাথে প্রেম করতে যাবে?জাস্ট কাজ করবে।তাছাড়া শুভ্রাপুর কাছে পাত্তা পাওয়া এতো সহজ না।আপু কাউকে পাত্তা দেয়না।আর না ওর সাথে প্রেম করতে যাবে।
—-তবুও আমার ভয় লাগে।
রোজ বিরবির করে বলছে,আমার প্ল্যানে আমি কামিয়াব হতে পারলাম না।এতকিছু করে শেষে উফফ,,ভাইয়াটা না।
—-কিন্তু ভাইয়া শুভ্রাপুর ভালো করতে গিয়ে নিজের খারাপ করে ফেলেছিস।নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছিস তার কি হবে?
—-মানে?
—-মানে হলো আপু অন্য কোম্পানি থেকে অফার পেয়েছে।আর তোমার উপর রাগ করে সব ওকে করে ওদের কনফার্ম করবে বিকালে।
তোমার কোম্পানিতে থাকলে তোমার নজরে থাকতো কিন্তু অন্য কোম্পানিতে কি হবে তুমি তো তা এখানে বসে বসে দেখতে পারবেনা।
—-কিহ! কোন কোম্পানি?
—-কোন কোম্পানি আমি জানিনা।এইটুকু বের করতে পেরেছি আর কিছু বলে নি।
আমি এখন যাই।
রোজ মনে মনে বলছে,খোদা,ভাইয়াকে সুবুদ্ধি দেও,ভাইয়া যেনো শুভ্রাপুকে ব্যাক করতে বলে।
শুভ্রা রুম থেকে বের হয়ে হৃদের রুমের সামনে গেলো।দরজা খোলে দেখতে পেলো হৃদ ঘুমাচ্ছে।
—-আমার ফোন আমার ঘুম কেড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে দেখো।
শুভ্রা পা টিপে টিপে হৃদের রুমে গিয়ে বেড থেকে ওর ফোন নিয়ে চলে এলো।তারপর নিজের রুমে গিয়ে লুকিয়ে রাখলো।
কিন্তু এতেও ওর শান্তি হলো না।হৃদ এত শান্তিতে ঘুমাচ্ছে,,সেটা মানা যায়না।
শুভ্রা আবার হৃদের রুমে গিয়ে এক বালতি পানি এনে ওর উপর ঢেলে দিলো।
হটাৎ মুখের উপর,শরীরের উপর পানি পড়ায় হৃদ হকচকিয়ে যায়।লাফিয়ে উঠে দেখে পুরো শরীর ভিজা,বিছানায় পানি।তারপর সামনে তাকাতেই দেখে শুভ্রা বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রা ভ্রু যুগল প্রসারিত করে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বালতি নিচে রেখে উল্টো হাটা দিতেই হৃদ পেছনে থেকে শুভ্রার চুল ধরে ফেলে।
তারপর বলে,
—-কোথায় পালাচ্ছিস?অফিসে পানি ছুড়ে শিক্ষা হয়নি?
শুভ্রার ছোট থেকেই চুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যথা।একারণে কাউকে চুল ধরতে দেয়না সেখানে হৃদ টেনে ধরে রেখেছে।শুভ্রা ব্যথায় কথা বলতে পারছেনা।চুলে হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই হৃদ আরো জোরে চেপে ধরে। শুভ্রা আহ করে উঠে বললো,
—–আমার চুলের গোড়ায় ব্যথা প্লিজ ছেড়ে দেও।
হৃদের কানে এই কথাটা বাজতে থাকলো মনে হচ্ছে কোথাও এর আগে শুনেছে।
ছোটবেলায় শুভ্রা উল্টো পাল্টা কিছু একটা করায় হৃদ ওর চুল টেনে ধরেছিলো।আর তখন শুভ্রা কেদে দিয়েছিলো আর বলেছিলো,
“আমার চুলের গোড়ায় ব্যথা প্লিজ ছেড়ে দেও।”
তারপর হৃদ আর কখনো শুভ্রার চুলে হাত দেয়নি।এত বছরে চুলের কথা ভুলে গেছে।হৃদ তাড়াতাড়ি চুল ছেড়ে দিলো।শুভ্রা চুলে হাত দিয়ে ডলছে আর ছলছল চোখে হৃদের দিকে তাকালো।
হৃদ কাচুমাচু করে বললো,
—-সরি আমার চুলের কথা মনে ছিলো না।আ’ম রিয়েলি সরি।
তারপর শুভ্রার চুলে হাত দিতেই শুভ্রা ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিলো হাত।
—–হয়েছে এত দরদ দেখাতে হবেনা।
সবাই ডিনার করছে।আর তখনই হৃদ এসে বললো,
—–শুভ্রা হয়ার ইজ মাই ফোন?
শুভ্রা কিছু না বুঝার ভান করে বললো,
—হোয়াট!ফোন? হাও ক্যান আই নো হয়ার ইজ ইউর ফোন?
হৃদ রেগে গিয়ে কিছু বলার আগেই রোদ বললো,
—-হোয়াট হ্যাপেন্ড হৃদ?
—-পাপা আমার ফোন খোজে পাচ্ছিনা।কেউ সরিয়েছে আর সেটা শুভ্রা।
সবাই শুভ্রার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই শুভ্রা বললো,
—-সবাই এভাবে তাকাচ্ছো কেন?আমাকে কি তোমাদের চোর মনে হচ্ছে? আমি কেন উনার ফোন নিবো?
—–অবশ্যই তুমি নিয়েছো।কারণ..
শুভ্রা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-কারণ কি?
—-আমি এত কিছু জানিনা,আমার ফোন আমার চাই।এক্ষুনি।
শাওরিন বললো,
—-শুভ্রা ফোন দিয়ে দেও যদি নিয়ে থাকো।
—-মাম্মা আমি কেন নিবো?
—-কারণ আমি তোমার ফোন নিয়েছি তাই।
—–আচ্ছা আমার ফোন নিয়েছো তাই আমি উনার ফোন চুরি করেছি?
আমার এতটাও খারাপ দিন আসেনি যে আমার ফোন নিয়ে যাওয়ায় আমি অন্যের ফোন চুরি করে চালাবো।
আমি চাইলেই একটা ফোন কিনে নিতে পারি।
এভাবে কারো উপর অপবাদ দেওয়ার আগে ভেবে নেওয়া উচিত।
ফুল বললো,
—-হৃদ ঘরে কোথাও আছে খোজে দেখ।
—-খোজেছি কোথাও নেই।
—-তাহলে হয়তো ভুলে কোথাও ফেলে এসেছিস।
—–সেটা অসম্ভব।বাড়িতে এসেও ফোন ইউস করেছি।ফোনে আমার প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আছে।
~~
রোজ চিপস খেতে খেতে বাইরে বের হচ্ছে ক্লাস থেকে।
হটাৎ করেই অরিত্রের সামনে পড়ে।অরিত্রকে দেখে রোজ মিষ্টি হেসে বললো,
—-ভাইয়া কেমন আছেন?
রোজের মুখে আবারও ভাইয়া শুনে অরিত্র রেগে গেলো কিন্তু রাগটা প্রকাশ করতে পারেনি।এখনো সময় আসেনি।
অরিত্র নরম কন্ঠে বললো,
—-গুড।তোমার কি খবর?
—-ভালো।
—-তুমি এত চিপস খাও কেন?
—-কারণ চিপস আমার অনেক পছন্দের।
—–শুনেছি মেয়েরা ফুচকা, চকলেট,আইসক্রিম খেতে বেশি পছন্দ করে কিন্তু তুমি তো দেখছি চিপস পাগলী।
—-ইয়াপ,কজ রোজ সবার থেকে আলাদা।
হিহি।টাটা।
রোজ যেতেই অরিত্র বললো,
—-আসলেই তুমি আলাদা।তাই তো তুমি এই অরিত্রের মন কেড়েছো।
তোমার এই হাসোজ্জল মুখটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা।
“প্রেমে পড়েছি,প্রেমে পড়েছি
যখন আমি তোকে দেখেছি
Oh god forgive me
Oh god forgive me ”
চলবে….
#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
পর্ব-১০
#ফাবিহা_নওশীন
??
শুভ্রা নিজের রুমে বেডে বসে বসে সন্ধ্যাবেলায় কার্টুন দেখছে আর পপকন খাচ্ছে।কোলের উপর কুশন রেখে টিভির দিকে চেয়ে বিরবির করছে।
“কি লাইফ আমার?ফোন নেই,ল্যাপটপ নেই,ভার্সিটি যাওয়া নেই,ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরাঘুরি,আড্ডা নেই।ঘরবন্দী করে রেখেছে আমাকে।এই টিভিটাও নিয়ে যেতো এটা কেন রেখে গেছে?বোর হতে হতে মরে যেতাম।”
হৃদ হন্তদন্ত হয়ে শুভ্রার রুমে এলো তারপর বেডের উপর ওর ফোন,ল্যাপটপ রাখলো।শুভ্রা ফোন,ল্যাপটপ পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা।ফোন হাতে নিয়েই ওয়াইফাই অন করে নিলো।ওয়াইফাই অন করতেই মেসেজ,নোটিফিকেশনে হৃদের কান যাওয়ার অবস্থা।হৃদ অবাক হয়ে শুভ্রাকে দেখেছে।
তারপর বেডে দুহাত চাপকে বললো,
—–হয়ার ইজ মাই ফোন?
শুভ্রার হুশ হলো কিন্তু ফোনে ব্যস্ত থেকেই বললো,
—–সোফার উপর থেকে লাভ সেপের কুশনটা নিয়ে আসুন।
হৃদ শুভ্রার কথা শুনে হতবাক।
—–হোয়াট দ্যা হেল!আমি কি তোমার চাকর?আমি কেন আনবো?আই কান্ট।
—–ওয়েল।ইউ ক্যান গো নাও ইফ ইউ ডোন্ট নিড ইউর ফোন।
হৃদ রাগ দেখিয়ে চেচিয়ে বললো,
—–শুভ্রা আমার ফোন দে।
—-আশ্চর্য আমি তো দিতেই চাইলাম।আপনিই তো নিতে চাইছেন না।সোফার মিডিলে যে কুশন সেটার ভিতরে ফোন।
হৃদ আর কথা না বাড়িয়ে কুশন চেক করে ফোন পেয়ে গেলো।তারপর ফোন অন করে চেক করছে।
শুভ্রা টিভি অফ করে বেডে গা এলিয়ে দিলো।তারপর ফোনে টাইপ করতে করতে বললো,
—-ডোন্ট ওরি।আমি আপনার ফোনের সাথে কিছুই করিনি।ইভেন লক খোলার ও ট্রাই করিনি।
শুভ্রার ফোনে হৃদের কোম্পানি থেকে ফোন এসেছে।শুভ্রা বিরক্ত হয়ে রোজের রুমে গিয়ে বললো,
—–তোদের কোম্পানি থেকে ফোন এসেছে।ওরা এপোলাইজ করেছে আর আমাকে আবার জয়েন করতে বলছে।তোর ভাই কি খেলা পেয়েছে?
রোজ শুয়া থেকে উঠে বসে।তারপর মনে মনে বলছে,
—–তারমানে আমার মেডিসিন কাজ করেছে।তাহলে মিথ্যা বলায় কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে।ভাইয়া ভয় পেয়ে শুভ্রাপুকে ব্যাক করতে বলেছে।
শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—–কিরে বোবা হয়ে গেলি?কথা বলিস না কেন?
—–এটা তো গুড নিউজ।
—–গুড নিউজ?এত অপমানের পর আমি আবার যাবো?ইম্পসিবল।আমি আর যাচ্ছি না।
—–আপু তোমাকে মাম্মা আর পাপা সিলেক্ট করেছে।তাদের কথায় গিয়েছো,ভাইয়ার কথায় নয়।আর তাছাড়া মাম্মা এখনো কোম্পানির হেড ভাইয়া নয়।
আর তুমি বলছিলে অপমান।তুমি তোমার অপমানের বদলা নিবেনা।আর সেটা অফিসে থেকেই সম্ভব।
শুভ্রা সন্দেহের দৃষ্টিতে রোজের দিকে তাকালো।
—-ব্যাপার কি রোজ?হটাৎ করে আমার পক্ষ নিচ্ছিস নিজের ভাইকে ছেড়ে।
রোজ আমতা আমতা করে বললো,
—–আমি কারো পক্ষ নিচ্ছিনা।তোমার ইচ্ছে না হলে যেওনা।
রাতে ডিনার করার জন্য সবাই ডাইনিং টেবিলে বসেছে।হৃদ,রোজ,শুভ্রা,শুভ্রার পাপা,মাম্মা,দিদা।হৃদের পাপা হৃদের মাম্মাকে জোর করে ডাইনিং টেবিলে আনছে।সবার দৃষ্টি সেদিকে।
হৃদের মাম্মা বারবার বলছে আমার হাত ছাড়ো তো আমার ঘুম পাচ্ছে আমি খাবোনা।
হৃদের পাপা ধমকে বলছে,
—–চুপ আর একটা কথাও না।ডিনার করেই ঘুম নয়তো নয়।
চেয়ার টেনে এক প্রকার জোর করেই বসালো।সবার দৃষ্টি সেদিকে।
—-আমি খাবোনা।(ঘুম ঘুম চোখে)
—-চুপ,এই বয়সে না খেয়ে উনি ক্যাটরিনা হবে।ভাত খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।ঠান্ডা লাগিয়ে বসে আছিস খেয়াল আছে?
তারপর এক প্রকার জোর করেই হৃদের মাম্মা খাবার খাচ্ছে।মাঝে মাঝে হৃদের পাপা ধমকে উঠছে খাওয়া বন্ধ করায়।
শুভ্রা খাওয়া রেখে গালে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।
শুভ্রার মামনি(হৃদের মা)বললো,
—-তোর আবার কি হলো?গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?খাবিনা?
শুভ্রা গালে থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—-তোমাদের প্রেম দেখেই পেট ভরে গেছে।আহা কি প্রেম!!
মামনি বাবাইয়ের মতো লাভিং কেয়ারিং একটা ছেলে দেখো তো আমার জন্য। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যাই।
সবাই শুভ্রার দিকে চেয়ে আছে।
—-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন কি এমন বললাম?বিয়ের বয়স হয়েছে তাই বললাম।
হৃদ পানির গ্লাস ঠাস করে টেবিলে রেখে উঠে গেলো।
হৃদ উঠে যেতেই মামনি বললো,
—–শুভ্রা কি করলি এটা?
—–আমি কি করেছি?
শুভ্রার মাম্মা বললো,
—–তোর জন্য ছেলেটা না খেয়ে চলে গেলো।
—–আজব!আমি কি কাউকে না খেয়ে চলে যেতে বলেছি?
শুভ্রা প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে গেলো।
শুভ্রার পাপা বললো,
—–এদের আবার কি হলো?
রোজ বললো,
—–কাকাই আমি বলছি।ভাইয়া আপুকে কোম্পানি থেকে ফায়ার করে দিয়েছে।আজ আবার ব্যাক করতে বলেছে তাই শুভ্রাপু রেগে আছে।
—–চিন্তার বিষয়।এদের কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না।এভাবে ঝগড়া করতে থাকলে এদের বিয়ে আর এ জীবনে দেখে যেতে পারবোনা।
পরেরদিন শুভ্রা অফিসে গেলো।নিজের ইগোকে এক পাশে রেখে অফিসে গিয়েছে শুধুমাত্র হৃদকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য।সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না।উদ্দেশ্য ইশানের সাথে বন্ধুত্ব করা।তারপর হৃদকে জেলাস ফিল করানো।
শুভ্রা অফিসে গিয়েই ইশানকে খোজছে।ইশানকে এতোদিন পাত্তা দেয়নি কিন্তু আজ নিজের প্রয়োজনেই ইশানের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে।
হৃদ তোমার জন্য কি কি করতে হচ্ছে।
শুভ্রা ইশানকে পেয়ে গেলো।ইশান মুচকি হাসছে আর ফোনে টাইপ করছে।শুভ্রা ওকে দেখে থেমে যায় আর মনে মনে বলে,
“শিওর কোনো মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে।”
শুভ্রা সামনে গিয়ে বললো,
—-হায় ইশান!
ইশান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
—-আরে শুভ্রতা যে!কি খবর? বসুন বসুন।
শুভ্রা অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।
ইশান বললো,
—-তা কি মনে করে?
শুভ্রা বললো,
—-আসলে একা বসে বসে বোর হচ্ছি।তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু আলাপ করি।আপনার সাথে তো আলাপ হয়নি।
ইশান নড়েচড়ে বসে বললো,ওয়েট একটা মেসেজ করে নেই।
—-শিওর।
ইশান তার ফোনের অপর পাশের তথাকথিত গার্লফ্রেন্ডকে রেখে শুভ্রার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ওদের আড্ডা জমে উঠেছে।
আর অপর পাশে আরেকজনের রাগ মাথায় চড়ে বসেছে।হৃদ ওদের দুজনকে অনেকক্ষন ধরে পর্যবেক্ষণ করছে।সেদিকে ওদের কারো খেয়ালই নেই।
“এজন্যই একে ফায়ার করেছিলাম আর ওর সাথেই গল্পে মেতে উঠেছে?রোজ তো বললো শুভ্রা নাকি ডিমান্ড নিয়ে চলে কাউকে পাত্তা দেয়না কিন্তু ও তো নিজ থেকেই পাত্তা দিচ্ছে।”
হৃদ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের কেবিনে চলে গেলো।
তারপর শুভ্রাকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠালো।
রোজ ভার্সিটিতে ঢুকেছে মাত্র।ব্যাগ থেকে মাত্র চিপসের প্যাকেট বের করেছে।তখনই অরিত্র ওর সামনে এসে দাড়ালো।
রোজ অরিত্রের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অরিত্র রোজের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো,
—–তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।তোমার সময় হবে?
রোজ ভদ্রতামূলক হাসি দিয়ে বললো,
—-হ্যা অবশ্যই বলুন।
অরিত্র আমতা আমতা করছে।রোজ সেটা দেখে চিপসের প্যাকেট খোলা শুরু করলো।
প্যাকেট খোলা শেষ।রোজ আবার অরিত্রের দিকে মনোযোগ দিলো।তারপর বললো,
—-এমন আমতা আমতা করছেন কেন?আর আপনাকে এতো নার্ভাস লাগছে কেন?
—–একচুয়ালি তুমি কথাটা কিভাবে নিবে সেটা ভেবেই নার্ভাস লাগছে।
রোজ হেসে দিয়ে বললো,
—–আপনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে প্রপোজ কররে যাচ্ছেন।
তারপর রোজ আবার হাসতে শুরু করলো।
অরিত্র রোজের কথা শুনে রীতিমতো শকড।তারপর কাচুমাচু করে বললো,
—–যদি বলি তাই!!
রোজ হাসি থামিয়ে চোখ বড়বড় করে বললো,
—–মানে?
অরিত্রের নার্ভাসনেস এক নিমিষেই গায়েব।
স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–মানে তোমাকে আমি পছন্দ করি প্রথম দিন থেকেই।
রোজ নার্ভাস হয়ে গেলো অরিত্রের কথা শুনে।
—-পছন্দ মানে?
—-পছন্দ মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অরিত্রের কথা শুনে রোজের হাত থেকে চিপসের প্যাকেট পড়ে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গেলো।রোজ অসহায় ভাবে সেদিকে তাকিয়ে আছে।
অরিত্র নিজেও চিপসের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
—–তুমি কি আমাকে তোমার জন্য সারাজীবন চিপস কিনার অধিকার দিবে?
রোজ অরিত্রের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
—–আপনার জন্য আমার চিপস পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর আপনি আসছেন সারাজীবন চিপস কিনে দেওয়ার অধিকার নিতে?তাহলে আর এ জীবনে আমার আর চিপস খাওয়া হবেনা।খাওয়া কেন এ জীবনে হয়তো আর চিপস চোখেও দেখবোনা।সরুন এখান থেকে আমার আবার চিপস কিনতে হবে।
রোজ অরিত্রের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।অরিত্র রোজের যাওয়ার দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
শুভ্রা হৃদের কেবিনে যেতেই হৃদ চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে টেবিলে দুহাত দিয়ে ভর করে শুভ্রাকে বললো,
—–ওই তোকে এখানে কেন আনা হয়েছে?
অফিসে হৃদের মুখে তুই তুকারি শুনে ভরকে গেলো।
শুভ্রা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-স্যার এটা অফিস,আপনার বাসা নয় যে আমার সাথে এমন ভাষায় কথা বলবেন।ভদ্র ভাবে কথা বলুন,তবেই ভদ্রভাবে উত্তর পাবেন।
হৃদ কোনো জবাব না দিয়ে চেয়ারে বসে পিছন ঘুরে গেলো।তারপর চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।বারবার আংগুল দিয়ে কপাল ঘষছে।কিন্তু রাগ কমাতে পারছেনা।
তাই শুভ্রাকে বললো,
—–লিভ নাও।
চলবে…