হৃদয়ের_শুভ্রতা? পর্ব-১৭,১৮

0
423

#হৃদয়ের_শুভ্রতা?
পর্ব-১৭,১৮
#ফাবিহা_নওশীন
১৭

??
রাত তিনটা।হৃদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।তাছাড়া আগামীকাল বিয়ে।সারাদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হবে।
আস্তে আস্তে দরজা ফাক করে শুভ্রা হৃদকে একবার দেখে নেয়।হৃদের রুমের দরজা খোলে ভিতরে প্রবেশ করে।
শুভ্রা হৃদের বেডের পাশে বসে হৃদের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।হৃদ একটা কুশন জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।

শুভ্রা হৃদের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
—–গত সাতটা বছর হয়তো এভাবেই শান্তিতে ঘুমিয়েছো।আমি যেমন আজ ঘুমাতে পারছিনা তেমনি সাতটা বছরও পারিনি।রাতের আধারে অপমান, অবহেলার স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো।এই অপমান অবহেলা, আমাকে ঘুমাতে দেয়নি।আমি চাইলেও ভুলতে পারিনি।তুমি আমার ক্ষতস্থানে মলম দিতে পারোনি।এ তোমার ব্যর্থতা।আর এ ব্যর্থতার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে হৃদ।

শুভ্রা চোখে মুখে রাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো।শুভ্রা দরজা খোলে বাইরে চলে গেলো।
.
.
.

সকাল বেলা।রোজ সকাল সকাল শুভ্রার রুমে গিয়েছে শুভ্রাকে ঘুম থেকে তুলতে।কিন্তু শুভ্রা রুমে নেই।ওয়াশরুম,বারান্দা সব চেক করে নিয়েছে।
রোজ ভাবছে,
আপি গেলো কই?

রোজ পুরো বাড়ি খোজে নিয়েছে শুভ্রা কোথাও নেই।ওকে ফোন করেও পাচ্ছেনা।কথাটা বাড়ির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে গেলো।সবাই মিলে খোজাখুজি করেও শুভ্রাকে পাচ্ছেনা।আর শুভ্রা কোথায় যেতে পারে এমন কোনো ক্লু পাচ্ছেনা।কাকে বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।বিয়ের দিন সকালে বিয়ের কনে মিসিং এটা নিশ্চয়ই ভালো কথা না।

হৃদ নিচে নেমে দেখে বাড়ি পুরো থমথমে।বিয়ে বাড়ি এতটা থমথমে হয় সেটা হৃদ এ জন্মেও দেখেনি।হৃদ মাম্মার কাছে গিয়ে বললো,
—-হোয়াটস গোয়িং অন মাম্মা? সবাই এতো চুপচাপ কেন?

হৃদের মাম্মা হৃদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।কোনো উত্তর পেলোনা।হৃদ রোজের কাছে গিয়ে বললো,
—–কি হয়েছে রে রোজ?

রোজ সবার দিকে একবার তাকালো।তারপর মাথা নিচু করে নিলো।হৃদের রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।হৃদ চিতকার করে বললো,
—–সামওয়ান টেল মি হোয়াট গোয়িং অন।

রোজ আমতা আমতা করে বলছে,
—–শুভ্রা আপু বাড়িতে নেই।কোথায় গেছে কেউ জানেনা।ফোন অফ আসছে।

রোজের কথা শুনে হৃদের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।নিজেকে সামলে নিয়ে কাপা কাপা গলায় বললো,
—–হোয়াট!!

—–হ্যা ভাইয়া।জানি না কোথায় গেছে।

—-কে কোথায় গেছে?
দরজার সামনে থেকে শুভ্রা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
সবার দৃষ্টি শুভ্রার দিকে।শুভ্রাকে দেখে সবার কলিজা ঠান্ডা হলো।এ যেনো কাঠফাটা রোদের মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি।
বিশেষ করে হৃদের মনে হচ্ছিলো হার্ট এটাক করবে।এখন শুভ্রাকে দেখে শ্বাস নিতে পারছে।

শুভ্রা এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
—–সবাই এভাবে চেয়ে আছো কেন?

শুভ্রার মাম্মা শাওরিন বললো,
—–তার আগে বলো কাউকে না জানিয়ে সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলে?তোমার জন্য সবাই টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।

—–মাম্মা আমি জগিংয়ে গিয়েছিলাম।

শুভ্রার পাপা বললো,
—–বিয়ের দিন সকালে জগিং?জগিংয়ে না গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?আর গিয়েছিলে জানিয়ে যাবে তো।ফোন অফ, সবাই আমরা কি পরিমাণ টেনশনে ছিলাম।

—–পাপা ফোনের ব্যাটারি ডেড।চার্জে বসিয়েছি।আর সবাই ঘুমাচ্ছিলো তাই বিরক্ত করিনি।
ওয়েট ওয়েট তোমরা কি ভেবেছিলে আমি পালিয়ে গিয়েছি?

শুভ্রা সবার দিকে একে একে তাকালো।তাদের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে তারা এটাই ভেবেছিলো।
—–হাও চিপ থিংকিং ইট ইজ ইয়ার!

শুভ্রার মামনি এগিয়ে এসে বললো,
—-ফরগেট ইট।যা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে।তারপর একটু ঘুম দে।গতকাল অনেক লেট করে ঘুমিয়েছিস।আজকেও সকাল সকাল উঠেছিস।বিকেলে পার্লার থেকে সাজাতে চলে আসবে।বিশ্রামের প্রয়োজন।

শুভ্রা হাই তুলতে তুলতে বললো,
—–হুম আমারও অনেক ঘুম পাচ্ছে।

.

শুভ্রা রুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়ালো।তারপর চোখ বন্ধ করে হাসতে লাগলো।
সবাই ভাবছে পালিয়ে গিয়েছিলাম।কি অদ্ভুৎ!!
(আপনারাও ভেবেছেন শুভ্রা পালাবে)
.
.
.
শুভ্রা পার্পেল কালার লেহেঙ্গা,ভারী মেকাপ,ভারী জুয়েলারি দিয়ে অপরুপ রুপসী বউ সেজে বসে আছে।

হৃদের মাম্মা নীল-কালোর মিক্সড করা শাড়ি পড়েছে।অনেক দিন শাড়ি পড়া হয়না।আগে প্রায়ই বরের খুশির জন্য পড়া হতো।ব্যস্ততার কারণে তেমন পড়া হয়নি গত কয়েকমাস।আজ হটাৎ করেই হৃদের মাম্মা ফুলের সেইসব দিনের কথা মনে পড়ছে।বরের পাগলামোর জন্য বেশিরভাগ সময় ব্লাক শাড়ি পড়েছে।আর ওর জন্য এত্তো এত্তো ব্লাক কালার শাড়ি এনে দিয়েছে।যেখানেই গিয়েছে উপহার হিসেবে ব্লাক শাড়ি এনেছে।
হৃদের পাপা রোদ যখন রাগ করতো রাগ ভাংগানোর টোটকা হিসেবে ব্লাক শাড়ি পড়ে সামনে এসে দাড়ালেই সব রাগ শেষ।
এসব ভেবে ঠোঁট কোনে অজান্তেই হাসি ফুটলো।তখনই শাড়ির কুচিতে টান অনুভব করলো।

রোদ শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বলছে,
—–এভাবে একা একা হাসছিস কেন?

ফুল চমকে উঠে।তারপর বলে,
—–ভাবছি সেই সব দিনের কথা।কত সুন্দর মুহূর্ত ছিলো।স্মৃতির পাতায় সেগুলো আওড়াচ্ছিলাম।

রোদ মুচকি হেসে ফুলের আঁচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে হাত দিয়ে থুতনি উচু করে বললো,
—–ইশশ,আমার বউটা কত সুন্দর।যত দেখি ততই প্রেমে পড়ে যাই।
তারপর কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।

—–চল আর কিছুক্ষণ পর আমরা শ্বশুর-শাশুড়ী হতে যাচ্ছি।

—–হ্যা।আমার পাগল ছেলেটার স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে চলেছে।
.
.
.
শুভ্রার মাম্মা রেডি হতে দেরী করে ফেলেছে।মেহমান সব আশা শুরু করে দিয়েছে আর উনি মাত্র রেডি হচ্ছেন।তাড়াতাড়ি করে কানে দুল পড়ছে আর বলছে,
—–মেহমান সব চলে এসেছে আর আমি মেয়ের মা হয়ে এখনো রেডি হতে পারিনি।

শুভ্রার পাপা দরজার সামনে থেকে বললো,
—–এত না ভেবে নিজের সাজে ফোকাস কর।মেয়ের বিয়ে রোজ রোজ হবেনা।আর না আমাদের দু’চারটে সন্তান আছে।তাই ঠান্ডা মাথায় রেডি হ।

শুভ্রার মাম্মা চুল গুছাতে লাগলো কিন্তু তাড়াহুড়ায় বারবার খোলে যাচ্ছে।এইবার খোলে যাবে তখনই শুভ্রার পাপা রাহাত ধরে ফেললো।
—–চল তোকে হেল্প করে দেই।

তারপর রাহাতের সাহায্য নিয়ে চুলটা বেধে নিলো।
.
.
রোজ লাল-গোল্ডেল কালার মিক্সিং লেহেঙ্গা পড়েছে।ওকে ফুটন্ত তাজা লাল গোলাপ মনে হচ্ছে।শুভ্রাকে নিয়ে রোজ স্টেজে আসছে।সবাই ওদের দিকে চেয়ে আছে।হৃদ ব্রাউন কালার শেরোয়ানী পড়েছে।ওদের পাশাপাশি বসানো হলো।সবার চোখ ওদের উপরে।
অবশেষে বিয়ে পড়ানো শেষ হলো।দুজন স্বামী স্ত্রীর স্বীকৃতি পেলো।

রোজ বেশিরভাগ সময় অরিত্রের সাথে কাটাচ্ছে।ওর সাথে গল্প করছে,সেল্ফি নিচ্ছে।
বিষয়টি রোজের পাপার চোখে পড়ছে বেশ কিছুক্ষণ যাবত।তিনি মেয়েকে বারবার আড়চোখে দেখছে।কেমন ঘাপলা লাগছে ওদের দেখে ওদের সম্পর্ক নরমাল লাগছেনা।ছেলেটা যে রোজের স্পেশাল কেউ সেটা তিনি শিওর।
—–বিয়ের ঝামেলা শেষ হোক এ নিয়ে রোজের সাথে কথা বলতে হবে।ছেলেটা কে জানতে হবে।

.
.

ফুলে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে শুভ্রাকে রোজ আর কয়েকজন মিলে রেখে গেছে।শুভ্রা পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।তারপর বেডে বসে পা ঝুলিয়ে।
—–কি সুন্দর বাসরঘর ফুলে ফুলে সাজানো।আমার পছন্দের প্রতিটি ফুল। বাট বেচারা হৃদ!
শুভ্রা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার সামনে দাড়ালো।বিছানা পুরো গোলাপের পাপড়িতে ঢাকা।শুভ্রা বিছানা থেকে সব ফেলে দিলো।

হৃদ রোজকে টাকা দিয়ে তবেই বাসরঘরে ঢুকতে পেরেছে।কিন্তু বাসরঘরে ঢুকে হৃদের চোখ চড়কগাছ।
শুভ্রা চাদর মুড়ি দিয়ে খাটের একপাশে ঘুমিয়ে আছে।মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো।

হৃদ মনে মনে ভাবছে,
এসবের মানে কি?শুভ্রা আমার জন্য অপেক্ষা করলো না।ঘুমিয়ে পড়েছে।আজকের দিনে অন্তত দুটো কথা তো বলতে পারতো।হয়তো অনেক টায়ার্ড।তবুও…
হৃদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।বিছানার পাশে এসে আশ্চর্য হলো।কেননা শুভ্রা মাঝখানে অনেকগুলো কুশন দিয়ে বর্ডার বানিয়ে রেখেছে।
ব্যাপারটা হৃদ সহজ ভাবে নিতে পারছেনা।ওদের এরেঞ্জ ম্যারেজ নয়।দুজন অপরিচিত নয়,কিংবা অমতে বিয়ে দেওয়া হয়নি।দুজন দুজনকে ছোট থেকে ভালোবাসে।ভালোবেসে ওদের মতেই বিয়ে হয়েছে।তবে?
হৃদের মনে হচ্ছে কোনো ঘাপলা আছে আর এ বিষয়ে শুভ্রার সাথে কথা বলতে হবে।
হৃদ শুভ্রার পাশে গিয়ে বসে।শুভ্রা ঘনঘন শ্বাস ফেলছে।এর মানে শুভ্রা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হৃদ শুভ্রাকে ডাকতে চেয়েও পারলোনা।ও শুভ্রার ঘুম ভাংগাতে চায়না।ওর এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে হৃদয় ভাংগুক তবুও যেনো শুভ্রার ঘুম না ভাংগে।
হৃদ বিছানা থেকে কুশন গুলো নিচে ছুড়ে ফেলে দেয়।তারপর অতি সাবধানে শুভ্রাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।পুরো ঘরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো।বিভিন্ন আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

মাঝরাতে শুভ্রার মনে হচ্ছে কেউ ওকে জড়িয়ে রেখেছে।ওর ঘাড়ে গরম নিশ্বাস ফেলছে।নিশ্বাস ওর ঘাড় আচ্ছন্ন করে যাচ্ছে বারাবারে।শুভ্রা আস্তে আস্তে চোখ মেললো।ওর শরীরের উপর হৃদের হাত।শুভ্রার বুঝতে দেরি হলো না যে হৃদ ওকে ঘেষে শুয়ে আছে।আর ওর নিশ্বাস বারবার শুভ্রার ঘাড়ে পড়ছে।শুভ্রা হৃদের হাত সরিয়ে উঠে বসে।শুভ্রা হৃদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর আর হৃদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।আর না আছে কুশনগুলো।
শুভ্রা ফ্লোরে কুশনগুলো ছড়ানো দেখতে পেলো।হৃদ নড়েচড়ে উঠলো।চোখ মেলে শুভ্রাকে বসে থাকতে দেখে উঠে বসে।

চোখ ডলতে ডলতে বললো,
—–শুভ্রা কি হয়েছে?

শুভ্রা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
—–তুমি কুশনগুলো কেন ফেলেছো?আর আমার উপর হাত-পা দিয়ে কেন শুয়েছো?

হৃদ শুভ্রার কথায় অবাক হয়ে বললো,
—–এভাবে বলছো কেন?কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?

—–হ্যা সমস্যা।আমার উপর কেউ হাত-পা দিলে আমার ঘুম আসেনা।তাই মাঝে কুশন রেখে ঘুমিয়েছি আর তুমি সেগুলো ফেলে আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছো?স্ট্রেঞ্জ।

শুভ্রা বিছানা থেকে নেমে কুশনগুলো তুলে আনে।তারপর বিছানার মাঝে সেগুলো সাজাতে শুরু করে হৃদ অবাক হয়ে ওর কান্ড দেখছে।শুভ্রা হৃদকে পাত্তা না দিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর হৃদের দিকে তাকিয়ে বললো,
—–প্লিজ ডিস্টেন্স বজায় রাখবে।গুড নাইট।

হৃদ ওভাবেই বসে রইলো।

?
?

শুভ্রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভেজা চুল আচড়াচ্ছে।পড়নে ডার্ক গ্রিন কালার শাড়ি।দুহাত ভর্তি কাচের চুড়ি।চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে হৃদের ঘুম ভেঙে গেলো।হৃদ আধো আধো চোখে শুভ্রার দিকে তাকালো।গতকাল যাকে বাচ্চা মেয়ে লেগেছে আজ তাকে একদম বউ বউ লাগছে।
হৃদ আস্তে করে উঠে শুভ্রাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্রা এক ঝাটকায় হৃদকে সরিয়ে দিলো।হৃদ অবাক হয়ে শুভ্রার মুখের দিকে চেয়ে আছে।
—–শুভ্রা!!!

শুভ্রা কটাক্ষ করে বললো,
—–শুভ্রা কি?বিয়ে করে আমাকে নিজের সম্পত্তি ভাবতে শুরু করেছো?

হৃদের মুখ কালো হয়ে গেলো শুভ্রার কথা শুনে।আমতা আমতা কন্ঠে বললো,
—–সম্পত্তি কেন মনে করবো?তুমি আমার বিয়ে করা বউ।তোমাকে ছোয়ার অধিকার আমার আছে।

শুভ্রা আংগুল তুলে কিছু একটা বলতে যাবে তখনই দরজায় নক পড়লো।শুভ্রা হৃদের দিকে একবার চেয়ে দরজা খোলতে চলে গেলো।
দরজা খোলে দেখে রোজ দাঁড়িয়ে আছে।ওর সারামুখে মিষ্টি হাসি।রোজ দুষ্টুমির হাসি হেসে শুভ্রাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে বললো,
—–ভাবী তোমাকে দারুণ লাগছে।

শুভ্রা অবাক হয়ে বললো,
—–ভাবী!!

—–হিহি জ্বি ভাবি।আপনাদের কি হয়েছে?সবাই নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে।যদি লেট হয় তবে আমরা নাস্তা শুরু করে দেই।পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।তোমাদের পেট তো এখন সব সময় ভরা থাকবে।

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—–ফাজিল মেয়ে,আমারও খুধা পেয়েছে।আমরা আসছি।

রোজ চলে গেলো।শুভ্রা আয়নার সামনে গিয়ে নিজের একবার দেখে হৃদের দিকে না চেয়েই বললো,
—–আমি নিচে যাচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।

হৃদ গভীর ভাবনায় বিভোর।শুভ্রা ওর সাথে এমন কেন করছে,হিসেব কিছুই মিলাতে পারছেনা।তবে মনে হচ্ছে ওর সুখময় স্বপ্নে ঝড় আসতে চলেছে।

“যতই দূরে তুই থাকনা
তোর মনেরি কাছে রাখনা।
কাছাকাছি তোকে না পেলে
থেমে যায় আমার সব ভাবনা।”

হৃদ নিচে নামতেই শুভ্রার পাপা এগিয়ে এসে বললো,
—–আরে জামাই এসো এসো।

হৃদ শুভ্রার পাপার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
——চাচু আমি হৃদ,,আমাকে এতো সমাদর করতে হবেনা।

সবাই নাস্তা করছে।হৃদ বারবার আড়চোখে শুভ্রাকে দেখছে।কিন্তু শুভ্রা নিজের মতো খেয়ে চলেছে।

—–ভাবী আজ তো শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন।কি রান্না করছো?
রোজ খেতে খেতে হাসি মুখে বললো।

শুভ্রা অবাক হয়ে বললো,রান্না!!!

—-হ্যা,আমার জন্য স্পেশাল কিছু করবে প্লিজ।

শুভ্রা বাকা হেসে বললো,
—–অবশ্যই,আমার একমাত্র ননদী বলে কথা।তোর জন্য ইদুর-চিকা ফ্রাই,টিকটিকি ভুনা,তেলাপোকার স্যুপ,মশার ফ্রাই,মাছির চপ,কেচোর নুডলস,কাকড়ার ঝুল খাওয়াবো।

রোজ নাক ছিটকে বললো,
—–ইয়াক!!

চলবে….?

#হৃদয়ের_শুভ্রতা??

পর্ব-১৮

#ফাবিহা_নওশীন

রোজ বই খোলে পড়তে বসেছে।ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে অনেক পড়া জমে গেছে।রোজ কলম কামড়ে ধরতেই দরজায় নক পড়লো।
রোজ ঘুরে দরজার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,
—–পাপা,এসো এসো।

রোজের পাপা ভিতরে এসে রোজের পাশের চেয়ার টেনে বসলো।রোজের বইখাতার দিকে একবার নজর দিয়ে বললো,
—–কি করে আমার প্রিন্সেস রোজ?

রোজ বইয়ের পাতা বন্ধ করে বললো,
—–এইতো একটু পড়াশোনা করছিলাম।ভাইয়ার বিয়ের জন্য ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি,পড়াশোনা হয়নি।অনেক কিছু পেন্ডিং হয়ে আছে।

—–ওহ,,গুড।

রোজ খেয়াল করলো ওর পাপা হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে।কিন্তু ফ্রি হতে পারছেনা।
—–পাপা কিছু বলবে?

রোজের পাপা মুচকি হেসে বললো,
—–বাহ,,আমার মেয়ে তো বুঝে ফেলেছে।তা প্রিন্সেস তুমি তোমার পাপার কাছ থেকে কি কিছু লুকাচ্ছো?

রোজ না বুঝতে পেরে বললো,
—–মানে?

—–মানে তোমার লাইফের গুরুত্বপূর্ণ কিছু।যা হয়তো আমাকে বলা উচিত ছিলো কিন্তু তুমি বলছোনা।হয়তো ইচ্ছে করে বলছোনা অথবা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছো।কোনটা?

রোজের বুঝতে বাকি নেই পাপা কি বলছে।ছোট থেকে দেখছে তার পাপা মাম্মার চেয়ে যথেষ্ট ইন্টিলিজেন্ট।
রোজের মুখ ছোট হয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,
—–ইয়ে মানে পাপা…

রোজের পাপা রোজকে সহজ করার জন্য রোজের কাধে হাত রেখে হাসি প্রসারিত করে বললো,
—–টেক ইট ইজি।ছেলেটা কে তুমি ভালোবাসো?

রোজ মাথা নিচু করে হাতের সাথে হাত ঘষছে।ওর বুকে ঢিপঢিপ করছে।
তারপর মাথা তুলে বললো,
—–হ্যা পাপা।

রোজের পাপা রোজের কাধ থেকে হাত সরিয়ে বললো,
—–কতদিনের চেনাজানা? কি নাম ওর?

রোজ একে একে সব ঘটনা খোলে বললো।
—–আরেবাসস,,,আমার মেয়ে আমার ভার্সিটিতে প্রেম করছে আর আমি তার ছিটেফোঁটাও জানিনা।হাও দিস পসিবল?
আর কে কে জানে?তোমার মাম্মা নিশ্চয়ই জানেনা।জানলে অবশ্যই আমাকে জানাতো।

—–না মাম্মা জানেনা।ভাইয়া আর শুভ্রাপু জানে।সেটাও একটা ঘটনার জন্য জেনেছে।পাপা অরিত্র খুব ভালো ছেলে।তুমি চাইলে খোজ নিতে পারো।গ্রাজুয়েশন শেষ।পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে পাপার বিজনেস দেখবে।

—–খোজ তো অবশ্যই নিবো।আমার মেয়ের লাইফ বলে কথা।আমার প্রিন্সেসকে কোন প্রিন্স চায় দেখতে হবেনা।সে কতটা ভালো রাখতে পারবে সেটাও জানতে হবে।

—–অবশ্যই।তোমাদের অমতে কিছু হবেনা।

রোজের পাপা উঠে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,
—–আমি যাচ্ছি।ভালোভাবে পড়াশোনা করো।পড়াশোনায় যেনো কোনো গাফলতি না হয়।ওকে?

—–হুম।

~~~

শুভ্রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়ে বেনী করছে আর গান গাইছে।সারাদিন হৃদের সামনে আসেনি আর না কথা বলেছে।হৃদ ডিনার করে রুমে ঢুকে শুভ্রাকে দেখতে পেলো।হৃদ শুভ্রাকে একটানে আয়নার সামনে থেকে সরিয়ে এনে দাড় করালো।তারপর চোয়াল শক্ত করে রাগী কন্ঠে বললো,
—-কি চলছে এসব?

শুভ্রা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বললো,
—–কি চলছে?

হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–তুমি বুঝতে পারছো না?গতকাল রাত থেকেই তুমি আমার সাথে অদ্ভুৎ আচরণ করছো।বিয়ের পর কেমন বদলে যাচ্ছো।আমি জানতে চাই এসবের মানে কি?জাস্ট টেল মি।

শুভ্রা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—-কেনো তুমি কি ভেবেছো আমি বিয়ের পর তোমায় দিনরাত আদর-সোহাগ করবো?

হৃদ বিরক্ত হয়ে বললো,
—–শুভ্রা জাস্ট শাট আপ।আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।আমার সাথে কেন এমন করছো?

শুভ্রা হৃদের কাছে আস্তে আস্তে এগিয়ে ধীরে ধীরে ওর বুকে হাত রেখে চোখে পাপড়ি ঘনঘন নাড়িয়ে বললো,
—–কেন গো খুব কষ্ট হচ্ছে?
কোথায় কষ্ট হচ্ছে এখানে?কেমন কষ্ট হচ্ছে?

হৃদ শুভ্রার এমন কথায় ঘাবড়ে যাচ্ছে।ওর ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।শুভ্রা কি চাইছে,কি বলছে,অদ্ভুত আচরণ কেন করছে।

হৃদ শুভ্রার দুবাহুতে হাত রেখে বললো,
—–শুভ্রা কি হয়েছে তোমার?তুমি….

শুভ্রা হৃদের হাত সরিয়ে কটাক্ষ করে বললো,
—–আমি কি?তুমি কি ভেবেছো আমি সেই সহজ সরল,বোকা শুভ্রা রয়ে গেছি?নো মিস.হৃদ।জাস্ট লুক এট মি আমি সেই শুভ্রা নেই।
আমি বদলে গেছি।তুমি বদলে দিয়েছো।তুমি আমার অনুভূতি গুলো খুন করেছো।বলবে যা করেছো আমার ভালোর জন্য করেছো?তবে আমি ভালো ছিলাম না কেন?কেন সাতটা বছর আমি চোখের জলে ভাসিয়েছি।কেন কষ্ট পেয়েছি?এখনো পাচ্ছি।তুমি কি ভেবেছো সাতবছর পর এসে দুটো ভালোবাসার কথা বললে আমার মন গলে যাবে?আমি তোমাকে ভালোবাসায় ভড়িয়ে দেবো।নো।

হৃদ কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।তবুও বললো,
—–শুভ্রা তুমি আমাকে ভালোবাসো।

শুভ্রা হৃদের কথায় হেসে বললো,
—–ভালোবাসা! উহু আই ডোন্ট লাভ ইউ মি.হৃদ।

শুভ্রার এই কথাটা শুনে হৃদের বুক কেপে উঠলো।মনে হচ্ছে ওর কলিজা কেউ কুচিকুচি করে কেটে ফেলছে।প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে।
হৃদ বসে পড়লো তারপর নিচুকন্ঠে ভারাক্রান্ত মনে বললো,
—–তাহলে বিয়ে কেন করেছো রিভেঞ্জ নিতে?

শুভ্রা শাড়ির আচল নাড়িয়ে বললো,
—–রিভেঞ্জ কিনা জানিনা।মনের শান্তির জন্য বিয়ে করেছি।এন্ড ট্রাস্ট মি অনেক শান্তি পাচ্ছি।

হৃদ হাত দিয়ে মুখ মুছে বললো,
—–ফ্যামিলির কথা ভাবলেনা।ওরা জানলে কতটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারছো?

শুভ্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—-হো কেয়ারস?ভারমে যাক ফ্যামিলি?সবাই মিলে আমাকে ধোকা দিয়েছে।কেউ আমার পাশে থাকেনি।কেউ আমার হাত ধরে নি।কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়নি।কেউ বলেনি শুভ্রা কষ্ট পাসনা।ওরা জানতো না আমি কতটা নাজুক।শুধু বলেছে শুভ্রা লাইফে ফোকাস করো,পড়াশোনায় ফোকাস করো।
আমার কষ্টটা কেউ বুঝেনি।কেউ দেখেনি আমি কিভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।
যাইহোক আমি কাউকে কিছু বলতে যাচ্ছিনা।তোমার ইচ্ছে হলে বলতে পারো আমি কি করেছি তোমার সাথে।

শুভ্রা কথাগুলো শেষ করে আড়চোখে হৃদের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে হৃদ কাউকে কিছু বলবে কিনা।

হৃদ মাথা তুলে বললো,
—–আমি এসবে ফ্যামিলিকে ইনভলভ করতে চাইনা।

হৃদের কথা শুনে শুভ্রা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো।একচুয়েলি শুভ্রাও চায়না ফ্যামিলি ইনভলভ হোক।

হৃদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
——তুমি যদি এতে খুশি থাকো তবে তোমার খুশিতেই আমি খুশি।কিন্তু কতদিন?কতদিন তুমি এভাবে আমাকে কষ্ট দিবে?সারাজীবন?

শুভ্রা বললো,
—–সারাজীবন? আমি তোমার জন্য আমার সারা জীবন ওয়েস্ট করবো? ইম্পসিবল।আমার মনের শান্তি মিটে গেলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।

ডিভোর্স শব্দটা হৃদের কানে যেতেই ওর চোখমুখ রক্তবর্ণ ধারণ করলো।শুভ্রার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ছুড়ে দিলো।শুভ্রা হৃদের দৃষ্টি দেখে নেতিয়ে গেলো।ভয়ে ওর মুখ শুখিয়ে যাচ্ছে।
এ যেনো আহত বাঘকে ক্ষেপিয়ে দেওয়া।শুভ্রা এখন নিজেকে নিজেই মনে মনে বকে যাচ্ছে।

“একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না?শুভ্রা কে বলছে তোকে ডিভোর্সের কথা বলতে।এখন তোকে কে বাচাবে?হৃদ তোকে খেয়ে ফেলবে এখন।”
শুভ্রার নিজের চুল নিজেরি ছিড়তে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে সুযোগ আর পেলোনা।

হৃদ হুট করে উঠে দাড়িয়ে শুভ্রার গাল চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো,
—–কি বললি তুই?ডিভোর্স দিবি?তোর সব আচরণ মেনে নিয়েছি বলে ডিভোর্স মেনে নেবো?কক্ষনো না।ডিভোর্সের কথা ভুলেও মনে আনবিনা?তবে তোকে আমি খুন করতে দুবার ভাববোনা।তুই মুভি পেয়েছিস?বিয়ে করেছিস তুই।তাই বিয়ের সব দায়িত্ব তোকে পালন করতে হবে।তুই আজীবন আমার হয়ে আমার কাছে থাকবি।ভালোবাসলেও থাকবি না বাসলেও থাকবি।জাস্ট থাকবি।মাথায় ঢুকিয়ে নে।নয়তো হৃদের ভয়ংকর রুপটা দেখবি।

হৃদ শুভ্রাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।
শুভ্রা দু’হাতে গাল ঢলছে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে দেখছে নিজেকে।
“এক দিনেই এই অবস্থা?বাকি জীবন কপালে কি আছে আল্লাহই জানে?”

হৃদ ছাদের রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে।ভাবছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা যা স্বপ্নেও ভাবেনি।ভেবেছিলো ওদের জীবনের সুন্দর পথচলা শুরু হবে।প্রতিটি মুহুর্ত ভালোবাসা,ভালোলাগায় ঘিরে থাকবে।

“শুভ্রা তুই বড় তো হয়েছিস কিন্তু আগের মতোই অবুঝ হয়েই আছিস।নয়তো এসব বাচ্চামি করতিনা।এমন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতিনা।”

হৃদের পাপা ফুরফুরে মেজাজে ঘরে ঢুকছে।হৃদের মাম্মা ফুল বিছানা রেডি করছে ঘুমের জন্য।হৃদের পাপা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।হৃদের মাম্মা লাইট অফ করে ব্লু শেডের হালকা আলো জ্বালিয়ে দিলো।তারপর তার শান্তির জায়গায় মাথা রাখলো শান্তির ঘুম দিতে।
হৃদের পাপা রোদ হৃদের মাম্মা ফুলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
—–হৃদের বিয়ে দিলাম।দেখতে দেখতে আমাদের ছোট্ট রোজও বড় হয়ে গেলো।

—–হুম।
হুম বলেই ফুল সন্দেহের দৃষ্টিতে মাথা তুলে বললো,
—–কি ব্যাপার বলোতো?হটাৎ রোজের কথা বলছো?ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তাই রোজ আর বাচ্চা নেই।কিন্তু বাবা-মায়ের কাছ সন্তান সবসময়ই বাচ্চা থাকে।আমার কাছেও তাই।

—–হুম।তোর এই বাচ্চা মেয়ে প্রেম করছে।তিনমাস যাবত আমার ভার্সিটিতে প্রেম করছে অথচ আমি তার বিন্দুমাত্র জানিনা।

ফুল উদগ্রীব হয়ে বললো,
প্রেম?রোজ প্রেম করছে কি বলো?

—–এত বিচলিত কেন হচ্ছিস?তুই ওর বয়সে বিয়ে করতে পারলে ও প্রেম করতে পারবেনা?

ফুল শান্ত গলায় বললো,
—–হ্যা কিন্তু আমার ভয় হয়।তুমি চিনো ছেলেটাকে?

—–না,তবে ওর নাম অরিত্র।অনার্স ফাইনাল দিয়েছে।রোজের থেকে সব ইনফরমেশন নিয়েছি।ভার্সিটি গিয়ে খোজ নেবো।

——হুম তাই করো।
.
.
.

রোজ হৃদের বিয়ের তিনদিন পর আজ ভার্সিটিতে এসেছে।কিন্তু ওর ভালো লাগছে না।ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না।রোজ ভার্সিটিতে এসে অরিত্রের সাথে দেখা করা,কথা বলা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।কিন্তু আজ অরিত্র নেই।কেননা অরিত্রের পরীক্ষা শেষ ওর ক্লাস নেই।
হৃদের বিয়ের পর ওদের আর দেখা হয়নি।আর না তেমন কথা হয়েছে।
রোজ কিছুক্ষণ চুপচাপ ক্যাম্পাসে বসে থেকে ফোন বের করে অরিত্রকে ফোন করলো।রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কিন্তু অরিত্র ফোন তুলছেনা।রোজ অরিত্রকে মেসেজ করলো।
ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ায় রোজ ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো।

ক্লাস শেষ।ভার্সিটি ছুটি।রোজ ফোন বের করে স্কিন অন করে হতাশ হলো।শুধু হতাশ নয় অনেক কষ্ট পেলো।ও ভেবেছিলো অরিত্র ওকে হয়তো ফোন মেসেজ দিয়ে ভরে ফেলবে কিন্তু একটা কলও করেনি।রোজের মনে অভিমানেরা ভর করেছে।
কিন্তু হটাৎ করেই বাজে চিন্তা ভর করলো।যদি অরিত্রের কোনো সমস্যা হয়ে থাকে?
রোজ অরিত্রের নাম্বারে ডায়েল করে ফোন কানে দিলো।রিং হয়ে কেটে গেলো।দুবারের বেলায় ফোন রিসিভ হলো।

রোজ হন্তদন্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই অরিত্র বললো,
“রোজ আ’ম বিজি নাও।আই উইল কল ইউ লেটার।বায়।”
কথা শেষ করে ফোন কেটে দিলো।

রোজের খুব কান্না পাচ্ছে।যে ছেলে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও রোজের ফোন তুলতে ভুলেনা,রোজের ফোন পেলে পুরো দুনিয়া ভুলে যায় সে আজ ব্যস্ততা দেখাচ্ছে?
কিসের ব্যস্ততা এত রোজের জানতে ইচ্ছে করছে।
অনুভূতিরা দলা পাকিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।দুচোখ ভরে গেছে পানিতে।এখনি মনে হচ্ছে উপচে পড়বে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here