হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,০৭,০৮

0
399

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,০৭,০৮
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭

প্রিয়ার মা এসে তড়িঘড়ি করে বলেন,
“প্রিয়া জলদি তৈরি হ। একটা শাড়ি পর নাহয় ভালো থ্রিপিস পর। তোকে দেখতে এসেছে।”

প্রিয়ার অক্ষিগোলক বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। হতবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে একবার রাহার দিকে তাকায়। রাহাও গোল গোল চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার মা নিজেই মেয়ের আলমারি খুলে একটা স্কাই ব্লু রঙের জর্জেটের থ্রিপিস বের করেন। প্রিয়ার হালকা ফর্সা বর্ণের সাথে খুব মানাবে আজকের দিনের জন্য। থ্রিপিসটা প্রিয়ার কাছে এনে বলল,

“এটা পরে নে। তোর ভাইয়ের বন্ধুর বাবা-মা, ভাবি এসেছেন। তাদের ছেলেতো এখন ট্যুরে আছে। ছেলে দেশে এসেছে এই এক মাসের মতো হলো। শুনেছি ভার্সিটির লেকচারার সে। ছেলেকে বিয়ে দিতে চায়। তারা এমনিতেই দেখতে এসেছেন। পরে ছেলে সহ আসবেন।”

প্রিয়া রাহার হাতে একটা চি*মটি কা*টলো। রাহা হালকা চিৎকার করে উঠলে প্রিয়ার মা ধ*মক দিয়ে উঠেন।
“যা তৈরি হ।”

“কিন্তু মা, ছেলে না দেখেই বিয়ে? আমারও তো একটা পছন্দ অপছন্দ আছে।”

“ছেলেরও একটা পছন্দ অপছন্দ আছে। তাই জন্যই ছেলে ট্যুর থেকে আসলে আবার ছেলেকে নিয়ে আসবেন।”

প্রিয়ার মা কথাটা বলে চলে যান। প্রিয়া মুখ লটকে বসে আছে। রাহা প্রিয়ার সামনে গোল হয়ে বসে বলে,

“আপু, তুমি না একটু আগে বললে যে এবার কোনো বিয়ের প্রস্তাব এলে মানা করবে না। তো এবার তোমায় বিয়ে করতেই হবে। আমি এখন থেকেই সব প্ল্যানিং করে ফেলব। ইয়ে!”

প্রিয়া রাহার কথায় বিরক্ত হয়ে ধ*মক দিয়ে বলে,
“চুপ! খালি পটরপটর। ছেলে কেমন না দেখে বিয়ে করব নাকি! ছেলে যদি বু*ড়ো হয়?”

রাহা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“একটু আগে না ফুপি বলে গেলো ছেলে প্রিয়ম ভাইয়ার ফ্রেন্ড!”

প্রিয়া দুঃখী কন্ঠে বলে,
“যদি পছন্দ না হয়? আমায় কি বিয়ে করতেই হবে? কতো শখ ছিল, বিয়ের প্রথমরাতে আমি তার দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে থাকব।”

রাহা কিছুক্ষণ ভেবে ভাবুক কন্ঠে বলল,
“এক কাজ করো। তুমি মনে মনে ভেবে নেও সে সুদর্শন। বিয়ের আগ পর্যন্ত তাকে দেখবে না।”

“এ্যাঁ! না দেখে বিয়ে করব নাকি? বিয়ের রাতে স্বপ্ন কাঁচের মতো ঠু*স করে ভেঙে যাওয়ার জন্য! আর মিছেমিছি ভাবব কেনো সে সুদর্শন!”

রাহা প্রিয়াকে বুঝানোর মতো করে বলে,
“আরে না। মানে আমার পছন্দে তোমার ভরসা আছে তো? এতোদিনে একটা মুভিও দেখার সময় কি তোমার আমার মতের পার্থক্য হয়েছে? আমরা একই নায়কদের ওপর ক্রা*শ খেয়েছি না?”

“হ্যাঁ তো?”

প্রিয়ার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেখে রাহা বলে,

“আরেহ! আমি দেখব জিজুকে। আমি যদি বলি পারফেক্ট তোমার জন্য তবে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নিও। আফটারঅল আমার বিয়ের সময়ও তোমাকে এমনি করতে হবে।”

প্রিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“যদি তোর পছন্দ বাজে হয়?”

রাহা সন্দেহের দৃষ্টিতে চাইলো।
“মোটেই না। দেখবে পরে আমাকে ধন্যবাদ দিবে। এটা করাতে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করবে।”

প্রিয়া হতাশ স্বরে বলে,
“যদি কোনো গণ্ডগোল হয় তো দেখিস….! থাক পরে বলবনে।”

প্রিয়া মায়ের বের করা থ্রিপিসটা পরে পরিপাটি হয়ে নিলো। রাহা প্রিয়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলো। প্রিয়া সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিলে উনারা সালামের জবাব দেয়। জারিফের ভাবি তামান্না এগিয়ে এসে প্রিয়াকে নিজের পাশে বসালো। জারিফের মা ও ভাবি তো প্রিয়ার ছবি প্রিয়মের ফোনেই গতকাল রাতে দেখেছিল। প্রিয়ম তখন প্রিয়ার আসতে না দেওয়ার কাহিনী বলার সময় জারিফের ভাবি কি মনে করে প্রিয়ার ছবি দেখতে চায়। তখনই প্রিয়াকে জারিফের মা ও ভাবির পছন্দ হয়ে যায়। তাই বুদ্ধি করে বাড়ির ঠিকানা রাখে। জারিফের মা বলেন,

“কেমন আছো মা?”

প্রিয়া লাজুক কন্ঠে জবাব দেয়,
“আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনারা কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ্‌ মা। তুমি কী ভয় পাচ্ছ?”

প্রিয়া ঘার না বোধক নাড়ায়। জারিফের ভাবি হেসে বলেন,
“ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আমাকে যখন দেখতে গিয়েছিল তখন আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। জায়ানকে চিনতাম তারপরেও। আর তুমি তো আমার দেবরকে চিনোই না। ওর নাম হলো..”

রাহা তামান্নাকে থামিয়ে হড়বড়িয়ে বলে উঠলো,
“না ভাবি! আপুকে এখনই জিজুর নাম বলবেন না। জিজুর নাম বললে তো ফেসবুক ঘেটে আইডি বের করে ফেলবে। আপু বিয়ের আগে তার বরকে দেখবে না বলেছে। আমি যদি দেখে পছন্দ করি তবেই হলো।”

প্রিয়া রাহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। প্রিয়া ক্যাবলা মার্কা হাসলো। জারিফের বাড়ির লোক রাহার কথায় হেসে উঠল। তরুণীমা বেগম প্রিয়ার মা পিয়ালি বেগমকে বলে উঠলেন,

“তবে তাই হোক। আপনার মেয়ের এই ইচ্ছে পূরণ করলাম। আগেকার দিনে এমন দেখা যেতো তাও কম। আমার ছেলেকে নাহয় প্রিয়ার ছবি দেখাবো।”

প্রিয়ার মা জোরপূর্বক হাসলেন। বাড়িতে প্রিয়ার বাবাও নেই। কী আর বলবেন তিনি? দুই মেয়ের কথাবার্তায় ভীষণ বিব্রতবোধ করলেন। তামান্না প্রিয়ার দিকে নিজের ফোন বাড়িয়ে বলে,

“এটা আমার স্বামী ও ছেলে। ছেলেকে রেখে এসেছি বাড়িতে আমার মায়ের কাছে। যাওয়ার পথে নিয়ে যাবো। আমার স্বামী যেমন সুন্দর আমার দেবরও তেমন সুন্দর।”

রাহা উচ্ছাসিত কন্ঠে জোরে বলে উঠে,
“তাহলে শিউর থাকো আপু! তোমার ঠিক জিজু পছন্দ হবে।”

পিয়ালি বেগম রাহাকে ইশারায় থামতে বলছেন। রাহার কথায় রুমে উপস্থিত বাকিরা হেসে উঠলো। প্রিয়া জোরপূর্বক হাসলো। রাহার পটরপটরে সেও এখন বিব্রতবোধ করছে।

সন্ধ্যার সময় জারিফের পরিবার চলে গেলো। প্রিয়া রুমে গিয়ে রাহাকে দৌঁড়ানি দিচ্ছে। রাহা পুরো ঘরময় দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,

“আরে আপু, জিজুর ভাইটা তো সুন্দর। তুমি নিশ্চিত থাকো জিজুও সুন্দর হবে।”

প্রিয়া দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“তাই বলে তুই ওখানে পটরপটর করবি? আরে ছেলের তো আমাকে পছন্দ নাও হতে পারে। তখন কী একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরব!”

রাহা এবার হাঁপিয়ে গিয়ে ফ্লোরে এক জায়গায় বসে বলে,
“আমার মন বলছে জিজুর তোমাকে ঠিক পছন্দ হবে। দেখো তোমাদের বিয়েটাও জলদি হবে।”

“ধ্যাত! আমার শান্তির জীবনে অশান্তির ছায়া নামবে। তখন তো আমি এখনের মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারব না। কিছু ভালো লাগে না।”

প্রিয়াকে মুখ ভাড় করে বসে থাকতে দেখে রাহাও মুখ ভাড় করে বসে।

রাতে প্রিয়ার বাবা এসে শুনেন। প্রিয়ার বাবা ছেলের ব্যাপারে ও ছেলের পরিবারের ব্যাপারে শুনে ছেলেকে দেখতে চান। প্রিয়ম ফিরলে দেখবেন বলে মনোস্থির করেন।

___________

সকালের বাসে করে ওরা রওনা করে সুন্দরবন থেকে। বিকেলে এসে ঢাকায় পৌঁছায়। লম্বা জার্নি শেষে যে যার বাড়িতে গিয়ে ক্লান্তিতে বিছানায় টান হয়ে শুয়ে পরেছে। রাতে খাবার টেবিলে প্রিয়ার মা-বাবা ও প্রিয়ম। প্রিয়া ও রাহা আগে খেয়ে চলে গেছে। প্রিয়ার বাবা মিস্টার শরিফ হাসান ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“তুমি কি শুনেছ? তোমার বন্ধুর পরিবার গতকাল এসে প্রিয়াকে দেখে গেছ।”

প্রিয়ম খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে চাইলো অতঃপর বলল,
“কোন ফ্রেন্ড?”

“যে কীনা কানাডা থেকে একমাস হলো দেশে ফিরেছে।”

প্রিয়ম আরও অবাক হয়ে গেলো।
“জারিফ? কই আমি তো জানিনা। জারিফও তো কিছু বলল না।”

শরিফ হাসান বলেন,
“হয়তো জারিফও তোমার মতো জানে না। গত পরশু নাকি তোমার কাছে প্রিয়ার ছবি দেখে তাদের পছন্দ হয়েছে তাই গতকাল এসে দেখে গেছেন। এখন তোমার বন্ধু কেমন তাতো তুমিই ভালো জানো।”

প্রিয়ম বলে,
“জারিফ খুব ভালো ছেলে। সে বই পড়ুয়া আর খুব বেশি একটা কথা বলে না। ব্যাবহারও খুব ভালো।”

“তাহলে কালকে তোমার অফিস ছুটির পর জারিফকে নিয়ে এসো বাসায় যদি তার প্রিয়াকে পছন্দ হয় তবে।”

“আচ্ছা।”

প্রিয়ম খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে দেখে তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। চার্জে রাখা ফোনটা। ফোনটা তুলে দেখে জারিফের তিনটা মিসডকল।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
প্রিয়ম ফোনটা হাতে নিতেই আবারও জারিফের কল এলো। কল রিসিভ করলে জারিফ অপর প্রান্ত থেকে বলছে,

“মা-বাবা ও ভাবি নাকি কাল তোদের বাড়ি গিয়ে তোর বোনকে পছন্দ করে এসেছে। জানিস তুই?”

“হ্যাঁ। বাবা খাবারের টেবিলে বলল। অবাক হয়ে গেছি আমি। কী থেকে কী হলো!”

জারিফ চিন্তিত সুরে বলল,
“মা যে হুট করে এমন করবে ভাবনায়ও আসেনি। কী করব এখন?”

প্রিয়ম জারিফের কথার ধাঁচ না বুঝে জিজ্ঞেস করে,
“তোর অন্যকাউকে পছন্দ আছে? থাকলে মানা করে দে। আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে যে তোকে বাধ্য হতে হবে এর কোনো কারণ নেই।”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আরে না। আমার কারও সাথে এসব প্রেমঘটিত সম্পর্ক নেই। না কানাডা যাওয়ার আগে ছিল আর না এখন আছে। ভাবি আমার ফোনে তোর বোনের ছবি দিয়েছে। এখনও দেখিনি কিন্তু তোর বোন নাকি আমাকে দেখতে চায় না। আমাকে তার পছন্দ না হলে তো পরে আফসোস করবে।”

“আমি এখনও ওকে জিজ্ঞেস করিনি। বাবা বলেছে তোকে কাল বাড়িতে নিয়ে আসতে। তোর যদি বিয়েতে অমত থাকে তাহলে বিনাসংকোচে মানা কর।”

“ভেবে দেখি।”

জারিফ ফোন রেখে ভাবির দেওয়া ছবিটা দেখছে। মেয়েটাকে তার ভালোই লেগেছে। আর বেস্টফ্রেন্ডের বোন। জারিফ তার মাকে গিয়ে জানায়,

“তোমাদের যদি ফারদার ভালো লাগে তবে আগাও। আমার অপছন্দ হয়নি।”

জারিফের মা বেজায় খুশি। সে খুশি হয়ে ছেলের কপালে চুমু দেন আর বলেন,

“তবে সামনের শুক্রবার গিয়ে তোকে নিয়ে দেখে আংটি পড়িয়ে আকদ করে আসব।”

জারিফ “আচ্ছা” বলে চলে যায়। প্রিয়ার ছবি দেখেও জারিফ চিনতে পারেনি কারণ জারিফ সেদিন বাসে বসা মেয়েটার চেহারা ভালো করে লক্ষ্য করেনি। আর ছবিতে দেখলেও অনেক সময় চেনা মানুষকেও চেনা যায় না।

_____________

প্রিয়ারা সকালের ক্লাসটা করে ক্যাম্পাসে বসেছে। নিশি আজ পুডিং বানিয়ে এনেছে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে কিন্তু প্রিয়া পুডিং অতোটা পছন্দ করে না। সর্বোচ্চ ছোটো এক পিস খেতে পারে কিন্তু আজ খেতে ইচ্ছেই করছে না। নিশি প্রিয়াকে কয়েকবার খাওয়ার জন্য বলেও লাভ হয়নি। প্রিয়া আনমনে কিছু একটা চিন্তা করছে। মিম ওকে ডেকে বলে,

“কীরে তুই কই হারালি?”

হকচকিয়ে উঠে প্রিয়া। আমতা আমতা করে বলে,
“কই? কোথাও নাতো!”

সাদ রম্য স্বরে বলে,
“মনে হয় জামাইয়ের দুঃখে বান্ধুবী আমার বৈরাগী হয়েছে।”

পুরো বন্ধুমহল হেসে উঠলো। অর্ষা উদাসী কন্ঠে বলে,
“কবে যে একটা জামাই হবে? আর কবে তার পকেট ফাঁকা করব! এই চিন্তায় আমি দিনরাত ঘুমাতে পারিনা কিন্তু তোর কী হলো রে প্রিয়া? তুই তো আমার মতো বিয়ে পা*গলী না।”

প্রিয়া ভাবলেশহীন কন্ঠে বলে,
“বিয়ে পা*গলী নই বলেই তো আমার বিয়েই আগে ঠিক!”

সবাই গোল গোল চোখ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া ওদের চাহনি দেখে লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,

“তোরা ঠিকই শুনছিস। পরশু ভাইয়ার বন্ধুর পরিবার এসে দেখে গেছে। তোদের জানাতে পারিনি কারণ তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না। রাতে ভাইয়া এসেছিল তার বন্ধুর ছবি দেখাতে কিন্তু রাহা আমাকে দেখতে দিলো না। রাহার ভাষ্যমতে, রাহার যদি পছন্দ হয় তবে বিয়ে হবে কারণ রাহার ও আমার সব ক্রা*শ সেম! এদিকে ভাইয়ার বন্ধু রাহার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ছেলের বড়োভাইকে দেখেছি। রাহা বলল, ছেলে তার বড়ো ভাইয়ের থেকেও সুদর্শন। ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড তো।”

হতবাক কন্ঠে মিম বলল,
“তো তুই দেখবি না?”

“না। আমার বিয়েতে আপত্তি নেই আর রাহার পছন্দেও না। রাহার কথামতো সত্যি একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। ছেলেকে না দেখে আজকাল কেউ বিয়ে করেনা কিন্তু আমি করব।”

সবাই প্রিয়াকে অভিনন্দন জানাচ্ছে আর হেসে হেসে কথা ও পিঞ্চ তো আছেই। কিন্তু একজনের মনে আষাঢ়ের কালোমেঘে ছেয়ে গেছে। রাতের অমানিশায় আচ্ছন্ন তার হৃদয় অন্তরিক্ষ। সেই কেউটা আয়ান। ভার্সিটির ফার্স্ট দিন থেকে প্রিয়ার প্রতি নিজের মনে দুর্বলতা অনুভব করে সে কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে সে সব চেপে গেছে কারণ প্রিয়া জীবনে রিলেশনশিপ নামক প্যারা নিতে চায় না। আয়ান প্রিয়ার মুখশ্রীতে এক আলাদা ভয়, এক্সাইটমেন্ট ও লাজুকতা দেখল। হৃদয়ের র*ক্তক্ষরণ সে আর কাউকে বোঝাতে পারবে না। সাদ ও রাদ আয়ানের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে। আয়ানের পাণ্ডুর মুখশ্রী তাদেরকে হৃদয়ের ভাঙন বুঝাচ্ছে। আয়ান ওদের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক মলিন হাসে। ওরাও বিনিময়ে হেসে আয়ানকে টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে রাদ হড়বড়িয়ে বলে,

“তুই বললি না কেনো? তুই তো প্রিয়াকে ভালোবাসিস।”

“নারে। আমার বাড়িতেও এখন বিয়ে মানবে না আর প্রিয়া আমাকে বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবে না। ওর চোখে-মুখে তোরা লাজুকতা দেখেছিস? ও সবসময় এরেঞ্জ ম্যারেজ প্রিফার করতো। নাহলে বল? ছেলের ছবি না দেখেও কতোটা লাজুক আভা ওর মুখাবয়বে।”

সাদ আয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সহ্য করতে পারবি? আমাদের ভার্সিটি লাইফ কিন্তু সবে শুরু। আরও সাড়ে তিন বছর প্রিয়া তোর চোখের সামনে ঘুরবে। সে খুশিও থাকবে। পারবি সহ্য করতে?”

আয়ান মলিন হেসে বলে,
“পারব। আমি অতোটা এক্সপ্রেসিভ না। যদি হতাম তবে প্রিয়া বুঝতো। আশাকরি তোরাও এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াবি না। আমি ভেবেছিলাম প্রিয়ার পরিবার ওকে অনার্সের পর বিয়ে দিবে। আমি এখানে দুই বছর পড়ার পর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এব্রোডে চলে যাবো। আমার রেজাল্ট ভালোই। সবই হবে প্রিয়াকে ছাড়া।”

বিষণ্ণতা ও খুশি দুইটাই ছোঁয়াচে। একজনের থেকে অন্যজনে বহন করে। প্রিয়ার লুকানো খুশিতে যেমন নিশি, মিম, অর্ষা খুশি তেমনিভাবে আয়ানের বিষন্নতায় সাদ, রাদ বিষন্ন।

________
জারিফ ক্লাসে এসে পড়ানো শুরু করেছে। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়াচ্ছে। পড়াতে পড়াতে স্টুডেন্টদের দিকে নজর যাবেই। সবাইকে বোর্ডের লেখাটা লিখতে বলে হঠাৎ নজর গেলো কর্নারের সারির চার নম্বর চেয়ারে। মেয়েটার চেহারা পরিচিত লাগছে কিছুটা। এই ক্লাসের স্টুডেন্ট যেহেতু পরিচিত হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু ক্লাসে দেখেছে বলে মনে পরছে না। প্রিয়া খাতায় লিখতে লিখতে জারিফের দিকে তাকালে ভয় পেয়ে যায়। জারিফ সরু দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকানো। প্রিয়া আজ মাস্ক পরেনি। ভেবেছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিশ্চয়ই জারিফ বাসের ঘটনাটা ভুলে যাবে। এখন জারিফের চাহনি দেখে প্রিয়া কাশি আসার ভান করে ব্যাগ থেকে দ্রুত মাস্ক বের করে পরে নেয়। জারিফও প্রিয়ার অস্থিরতা ও অপ্রস্তুত হতে দেখে নজর সরিয়ে আবার বোর্ডে মনোযোগ দেয়।

প্রিয়া এরপর এটেন্ডেন্সের সময়ও কোনোমতে এটেন্ডেন্স দিয়ে বাঁচে। জারিফ প্রিয়ার নামটা মনে রাখে। জারিফ ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবার পর প্রিয়া বলে,

“ধুর! কী হলো এটা!”

নিশি বলে,
“কী হলো?”

“আমি তো ভেবেছি এক সপ্তাহের মধ্যে বেটা ভুলে যাবে কিন্তু এখন দেখি সে সরু নজরে আমার দিকে দেখছিল। কেমন সন্দেহের দৃষ্টি ছিল স্যারের।”

মিম হাই তুলতে তুলতে বলে,
“সে কী এমনে এমনে টিচার হইছে? তাদের চোখ-কান সর্বদা খোলাই থাকে। যেহেতু সে তোকে কিছু বলেনি তাই নিশ্চিন্তে থাক। কিচ্ছু হবে না। সেও বুঝবে যে তুই না জেনে করেছিস।”

প্রিয়া চুপ করে বসে রইল। চিন্তা তার কিছুটা হলেও হচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here