হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৩,১৪

0
411

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৩,১৪
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩

প্রায় দুই ঘণ্টা পেরোনোর পর যখন প্রিয়ার রুম থেকে বের হচ্ছে না তখন ইফা ওর রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নক করলো। প্রিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুললে ইফা বলে,

“তোর মাথায় কী বুদ্ধি হবে না? ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছিস কেনো? সেই সাড়ে পাঁচটায় ঘরে ঢুকলি এখন সাতটার বেশি বাজে। উনারা তিনটার দিকে এলো তারপর তোকে রেডি করতেই কতো সময় চলে গেছে। জারিফের ভাবি, বোনকে এখানে আনব। ওরা তোর সাথে ভালো করে কথা বলার সুযোগই পেলো না। একটু কথা-টথা বল।”

প্রিয়া দরজা দিয়ে উুঁকি দিয়ে বলে,
“কই উনারা? আচ্ছা আজকে কি থাকবে?”

ইফা ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“ভাবি আর ফিহা এখানে আসতে চাইছে। উনারা তো চলে যাবেন ঘণ্টা খানেক পর। তবে তোর বর…!”

প্রিয়া গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে বলে,
“কি? সে কি?”

“সে থাকবে কী-না বলতে পারিনা। হিসেব মতে আজ তো তোদের বাসর!”

ইফার কথায় প্রিয়া হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালো। জারিফ স্যার তার বর এটা মানতেই তার কেমন ভ্রম ভ্রম লাগছে। আবার নাকি বাসর! প্রিয়ার ভাবনার মাঝেই তামান্না ও ফিহা এসে হাজির। ফিহা প্রিয়ার হাত ধরে বলে,

“আজকে তোমাদের বাসায় থাকতে চেয়েছিলাম ভাবী। কিন্তু ভাইয়া না থাকলে তো আমারও থাকা হবে না। কী আর করা বলো।”

প্রিয়ার চোখ চকচক করে উঠলো। কন্ঠে উৎসুকতা প্রকাশ করে বলে উঠে,

“সত্যি! সত্যি আজ সে থাকবে না?”

ইফা প্রিয়াকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে বেফাঁস কথা বলাতে। তামান্না হেসে উঠে বলে,
“তোমার কথা ভেবেই দেবর আমার কাজের বাহানা দিচ্ছে। তার নাকি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে! আচ্ছা? বলো তো? কী এমন কাজ আছে? কাল তো ছুটি তার। সে কালকেও কাজটা করতে পারতো। তাই না?”

প্রিয়া হুট করে লাজুকলতার ন্যায় লাজরাঙা হলো। লোকটা কি তবে সত্যি তার কথা চিন্তা করে বাহানা দিচ্ছে? প্রিয়ার মুখশ্রীতে লাজরাঙা দেখে তামান্না ও ফিহা মিটমিট করে হাসছে। ফিহা বলে,

“তুমি যদি ভাইয়াকে বলো আজ থেকে যেতে তবে আমিও থাকব। আমার তো সহসা সুযোগ হবে না এখানে আসার। তাই না বলো?”

প্রিয়া দোটানায় পরে যায়। ফিহার কিউট ফেস দেখে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না আবার চাইছে না আজ জারিফ এখানে থাকুক। প্রিয়া বলে,

“উনার কাজ আছে আর আমি কিভাবে বলব বলো? আমি যে উনার স্টুডেন্ট তা তো জানোই। কেমন আনইজি লাগছে। তুমি থেকে যাও না। তোমার কথা আমি বলতে পারি।”

“দিবে না গো ভাবী। আম্মু ব*কবে। তবে সমস্যা নেই। তোমাকে যখন বউ করে নিয়ে যাবে তখন থাকব তোমার সাথে।”

প্রিয়া হাসে। ওরা আরও আড্ডা দেয়। ঘণ্টা খানেক পর রাতের খাবার খেয়ে জারিফরা চলে যায়। জারিফকে থাকতে বলার পরেও সে কাজের বাহানায় চলে যায়।

________

রাত দশটা বাজে। প্রিয়া কফি হাতে ব্যালকনিতে বসলো। রাহা ওরা ড্রয়িংরুমে কি যেনো করছে। প্রিয়া ওদের কাছ থেকে উঠে এসে এক একা বসে আছে। সেই প্রথমদিনের বাসের কাহিনী থেকে সবকিছু মনে পরছে। যেই লোকটার থেকে লুকাতে এতোকিছু করেছে আজ সে প্রিয়ার স্বামী। প্রিয়ার ঠোঁটের কোনে অজান্তেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। প্রিয়া এক দৃষ্টিতে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের ফিলিংস আজ নিজের কাছেই অজানা। মিশ্র অনুভূতি তার। দরজার খটখট শব্দে দরজা খুলে দেখে রাহা দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া সাইড দিলে রাহা হাতের ফোনটা প্রিয়ার দিকে বাড়ায়। আচমকা স্ক্রিনে নজর দিয়ে জারিফকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। জারিফ ল্যাপটপে কি যেনো করছে। কেউ একজন ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে জারিফের দিকে ধরে রেখেছে। জারিফের কানে হেডফোন। কাজ করছে নাকি মুভি দেখছে বোঝা দায়।

রাহা ফিসফিস করে বলল,

“এটা জায়ান ভাইয়া ফোন ধরে রেখেছে। ভাইয়া কি একটা কাজের বাহানায় জিজুর রুমে গেছিলো তারপর আবার আসবে বলে আমাদের ভিডিও কল করেছে। এসবের পেছোনে আসল হাত তামান্না ভাবি ও ফিহার। ওদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তুমি যে জিজুর বিরহে একা একা রুম আটকে দুঃখ বিলাশ করছিলে তা আমার এটুকু হৃদয়ের সহ্য হচ্ছিলো না। তাই তো জিজুকে দেখানোর ব্যাবস্থা করলাম।”

প্রিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“আমি কখন বিরহে দুঃখ বিলাশ করছিলাম? এই তোর মা*থা ঠিক আছে? না গেছে?”

“আরে আমি বুঝি তো! আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়? আমি আমার আপুর পছন্দ সব জানি।”

প্রিয়া রাহার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে কেটে দিলো। তারপর ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় অতঃপর রাহাকে ধাওয়া করে বলে,

“তোর জন্য! শুধু তোর জন্য আমি এমন একটা পরিস্থিতে পরলাম। এখন আমি রবিবার স্যারের ক্লাস কী করে করব? উনার দিকে তাকানোটাই আমার জন্য দূরহ হয়ে গেছে। একবার বাসে তারপর ক্লাসে এখন বিয়ে।”

রাহার প্রিয়ার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে বলছে,

“দেখো আপু, এই ব্যাপারে আমি সত্যি কিছু জানতাম না। বিশ্বাস করো। তুমি যখন জানলে তখনই আমি জানলাম। সরি সরি। আর শোনো, প্রিয়ম ভাই জিজুকে বাসের কাহিনী জিজ্ঞেস করেছিল।”

প্রিয়া কথাটা শোনা মাত্রই থম মে*রে দাঁড়িয়ে গেলো। অবাক হয়ে বলে,

“মানে! তুই আবার কি করছিস? আমাকে বাঁশ না খাওয়ালে তোর হয় না?”

রাহা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
“বিশ্বাস করো আপু, আমি বুঝিনি। বুঝলে বলতাম না। কিন্তু জিজু নাকি অনেক হেসেছে বাসের কাহিনী শুনে। তুমি যে প্রথমদিন ক্লাসে এই কারণে লুকিয়ে থাকতে তা সে বুঝে গেছে।”

প্রিয়া ধপাস করে বিছানায় বসে পরে নিজের কপাল চাঁ*পড়ে বলে,
“বিদায় পিতিবি!”

রাহা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কা*টতে ইনোসেন্টের মতো তাকিয়ে আছে।

_________

জারিফ তার বড়ো ভাই আর ভাবীর কাণ্ডকারখানা বুঝে হাসছে। সে মুভি দেখছিল সেটা পজ করে তার ভাই-ভাবী লুকিয়ে যে ফিসফিস করে কি করছে তা বোঝার চেস্টা করছিল। যখন বুঝতে পারলো প্রিয়াদের বাড়িতে যোগাযোগ করছে আর ফোনটা নিশ্চয়ই প্রিয়ার কাছে নিয়ে গেছিলো। প্রিয়া ফোন কে*টে দেওয়াে পর জায়ান ভাইয়ার আফসোস সূচক শব্দে জারিফ শিউর হয়ে গেছে। এরপর জায়ান আর তামান্না দরজার কাছে দাঁড়িয়েই ফিসফিস করে এটা সেটা বলছে। জারিফ ডাক দিলো,

“ভাইয়া! স্পাইগিড়ি করা শেষ? তাহলে নিজের ঘরে যাও। আমি ঘুমাব।”

জায়ান জিহ্বায় কা*মড় দিয়ে সুরসুর করে কে*টে পরে। জায়ানের পিছু পিছু তামান্নাও। জারিফ উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর প্রিয়মের তখনকার বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। প্রিয়ম বলেছিল,

“আমার বোনের মধ্যে বাচ্চামিটা একটু বেশি। সে তোকে ভয় পায়। আর তুই হলি গম্ভীর্যতা পূর্ণ। দুটোর মধ্যে নিরবতা মনে হয় বেশিই থাকবে। মানিয়ে নিস হ্যাঁ!”

কথাটা মনে পরতেই জারিফ আলতো হাসলো। প্রিয়ার ক্যাম্পাসে করা কিছু দুষ্টুমিগুলো যা জারিফের নজরে পরেছে তা ভাবে। প্রিয়ার হুট করে গ্রাউন্ডের মাঝে গিয়ে বসে পরা তারপর বন্ধুদের সাথে খেলা। এসব ভেবেই হাসে। এক সপ্তাহ এসবই দেখেছে জারিফ। প্রিয়ার হাসিমাখা মুখ আর আজকের বাচ্চাদের মতো অসহায় মুখটা মনে পরতেই জারিফ স্বগোতক্তি করে,

“ছোট্ট বিড়ালছানা! ছটফটে তুমি সাথে ভীতু!”

জারিফ নিজেই হেসে শুয়ে পরে। আজ আর লেট নাইট জাগবে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
আবারও ব্যাস্ত জীবন। শনিবারটা প্রিয়ার পুরো অলস কেটেছে সবসময়কার মতোই। তরুণীমা বেগম, তামান্না, ফিহা ও তুতুলের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল একবার। জারিফ চাচ্ছে প্রিয়ার এই সেমিস্টারটা শেষ হলে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হবে। আজকে জারিফের ক্লাস আছে তা ভাবতেই প্রিয়ার শরীরে শীতল হাওয়া দোল দিয়ে যায়। অস্বস্থিতে ক্লাস কি করে করবে তাই বুঝে আসছে না। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর একটা ক্লাসের পর অর্ষা, নিশি, মিমরা ওকে ঝেঁকে ধরেছে। প্রশ্নের বাহারে অতীষ্ঠ হয়ে প্রিয়া বলে,

“আমি কি জানতাম নাকি? ভাইয়া এসবের পিছনে। যদি কেউ জানতো তবে সেটা জারিফ স্যার। আমি তো বাবা-মায়ের পছন্দে হ্যাঁ বলেছি মাত্র।”

“রেগে যাচ্ছিস কেনো দোস্ত? আমরা একটু ফান করছিলাম।”

প্রিয়ার রূঢ় শব্দের বিপরীতে অর্ষার নরম স্বরে শান্ত হলো প্রিয়া।

“সরি। আসলে আজকের ক্লাসটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে। আমি দেড় ঘণ্টা কিভাবে ক্লাসটা করব বুঝতে পারছি না।”

মিম এসে প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
“ক্লাসের সময় স্যারের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট করবি না। কি কি পড়াচ্ছে সব নোট করবি। দেখবি দেড় ঘণ্টা নিমিষেই পেরিয়ে যাবে। আমরা বাদে আর কেউ বিষয়টা এখন না জানাটাই বেটার। যেহেতু সেমিস্টারের পর ফাংশন করবে তাই তখন নাহয় সবাই জানুক।”

নিশি বলে,
“কতোদিন আড়াল থাকবে তাই দেখার বিষয়। তবে স্যার যে তোর হাসবেন্ড আবার তোর ক্লাসও নেয় এটাতে অন্যরা ভাবতে পারে স্যার তোকে কারচুপি করে হেল্প করবে। তাই এখন বিয়ের ব্যাপারটাই আড়াল থাকা দরকার।”

প্রিয়া দুশ্চিন্তায় পরে যায়। প্রিয়াও ভাবে তিনটা মাস এড়িয়ে গেলেই হবে।

জারিফের ক্লাসে প্রিয়া একটু কর্নার ও পেছোনের দিকে বসেছে। জারিফ ক্লাসে ঢুকে সবার দিকে নজর বুলিয়ে প্রিয়াকে পেছোনে বসতে দেখে মনে মনে হাসে। তারপর ক্লাসে মনোযোগ দেয়। আজকে ক্লাসে আর সে প্রিয়াকে অধিক অস্বস্থিতে ফেলল না। প্রিয়াও জারিফের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট অনেকটা এড়িয়ে গেছে শুধু একবার চোখে চোখ পরে যাওয়াতে প্রিয়া থতমত খেয়ে গেছিলো। ক্লাস শেষে জারিফ চলে গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এতক্ষণ একটা গুমোট অনুভূতি বিরাজ করছিল প্রিয়ার হৃদয় জুড়ে।

জারিফ নিজের অফিসরুমে যেতে যেতে প্রিয়মকে মেসেজ করলো,

“তোর বোনের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিস।”

মেসেজ করেই পরের ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। এখন প্রিয়মের লাঞ্চটাইম তাই মেসেজটা দ্রুত দেখবে জানে জারিফ। হলোও তাই। প্রিয়ম বিপরীতে একটু হাসি-ঠাট্টা করে মেসেজ করে,

“আমার বোনের কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে তুই কী করবি? সে ম্যারিড তাই তার সাথে চান্স নেওয়ার চেষ্টা করিস না!”

জারিফ মেসেজটা দেখে হাসলো অতঃপর লিখলো,

“ওকে বন্ধু। তোর বোনের সাথে কেউ চান্স নিবে না। এবার কি নাম্বার পাবো?”

“নে দিয়ে দিলাম। এতো ইনসিস্ট করছিস যেহেতু!”

জারিফ নাম্বারটা নিয়ে সেভ করে নিলো।

________

সব ক্লাস শেষে প্রিয়া বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আছে। আজকে আয়ান নেই। ছেলেটা ক্লাস মিস দেয় না। নিশি রাদকে জিজ্ঞাসা করে,

“কীরে? আয়ানটা কই আবার? সে তো ক্লাস মিস দেয় না। হুট করে আজকে ক্লাসে এলো না। শরীর খারাপ নাকি?”

রাদ মলিন হাসে। আয়ান যে কেনো আসেনি তা সে আর সাদ জানে। আয়ান গতকাল রাতে একা একা সাজেক ট্যুরে গেছে। রাদ বলে,

“আয়ান সাজেক গেছে।”

মিম অবাক কন্ঠে বলে,
“আমাদের বলল না! আর একা গেলো?”

সাদ রাদের দিকে তাকিয়ে তারপর মিমকে বলে,
“ওর কাজ পরেছে। জানিসই তো ওর বাবার সাজেকে একটা হোটেল আছে। যেহেতু কাজে যাব। তাই একটু ট্যুর দিয়ে আসবে। হুট করে প্ল্যানিং তাই তোদের জানায়নি। আমরাও সকালে জেনেছি।”

“ওহ। ”

এবারের মতো কথা কে*টে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ওরা। হাঠাৎ প্রিয়ার ফোন বেজে উঠলে স্ক্রিনে আননোওন নাম্বার দেখে কল কে*টে দেয়। আবারও কিছুক্ষণ পর কল আসলে প্রিয়া আবারও কা*টে। তৃতীয়বার ফোন আসলে প্রিয়া এবার কটমট দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকায় তারপর রিসিভ করে বলে উঠে,

“কে ভাই আপনি? কে*টে দিচ্ছি তাও কল করেই যাচ্ছেন!”

জারিফের হাসি পেলেও কন্ঠে গম্ভীর্যতা প্রকাশ করে বলে,

“আমার অফিসরুমে এসে দেখা করো। কুইক।”

প্রিয়া মুখ বাঁকায় তারপর ফোনটা চোখের সামনে ধরেও নাম্বারটা চিনতে অসমর্থ হয় কিন্তু গলার স্বর চেনা চেনা ঠেকছে। প্রিয়া বলে,

“কে আপনি? আপনার অফিসরুমে আমি যাবো কেনো? আজব!”

“তো কি বে*ডরুমে যাবে?”

চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায় প্রিয়ার। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক। মেয়ের ভয়েস শুনেই বাজে কথা শুরু! বাড়িতে কি মা-বোন নাই?”

জারিফ নিরব হাসলো তারপর বলল,
“মা আছে। কাজিন বোনও আছে। নতুন বিয়ে করলাম তাই বউও আছে। আর এই মূহুর্তে আমি আমার বউয়ের সাথেই কথা বলছি আর সে আমাকে অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক বলছে!”

প্রিয়া হতবাক হয়ে যায়। ফোনটা কে*টে দেয়। তারপর কিয়ৎ ভেবে বলে,

“তোদের কারও কাছে জারিফ স্যারের নাম্বার আছে?”

সাদ বলল,
“আছে। কেনো?”

“দেখা তো।”

সাদ কল লিস্ট থেকে নাম্বারটা দেখালে প্রিয়া একটু আগের নাম্বারের সাথে মিলিয়ে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বলে,

“ইশ! উনি আমাকে ফোন করেছিল আর আমি তাকে কতোকিছু বলে দিয়েছি। এখন কি করব!”

অর্ষা বলে,
“স্যার তোকে ফোন করেছিল? আর তাকে তুই অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক এসব বলছিস! বোকা নাকি তুই! কন্ঠ শুনেও বুঝিস নি?”

“নারে ভাই। বুঝলে কি বলতাম নাকি। কেমন ভরাট কন্ঠস্বর লাগছিল। সে আমাকে তার অফিসরুমে যেতে বলল।”

“তো যা। দরকার আছে বলেই বলেছে।”

নিশির প্রতিউত্তরে প্রিয়া চুপ করে গেলো। যেতে বলেছে তো না গেলে কেমন দেখায়! প্রিয়া গেলো। এদিকে জারিফ কলম হাতে নিয়ে প্রিয়ার রিয়াকশনগুলো ভেবে নিঃশব্দে হাসছে। মিনিট দশেক পর প্রিয়া এসে জারিফের অফিসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে। যা বলেছে ওসব বলা ঠিক হয়নি। সরি বলে দিবে। প্রিয়া দরজায় নক করলে ভেতর থেকে জারিফ ওকে আসতে বলে। প্রিয়া রুমে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বলে,

“সরি! আমি বুঝতে পারিনি ওটা আপনার নাম্বার।”

“ইটস অকে। অচেনা কারও সাথে এমন বিহেভ হবে আমি বুঝি। সো কুল। তোমাকে যে জন্য ডাকা, প্লিজ সিট।”

প্রিয়া বসলে জারিফ বলে,
“দেখো, লেকচারার হিসেবে জয়েন করার আগে আমি বা তুমি কেউ জানতাম না আমাদের ভাগ্য এভাবে বদলাবে। এমনকি তোমাদের ক্লাস নেওয়ার আগেও না। আমার পরিবার যে তোমাদের বাড়িতে যাবে তাও জানতাম না। তুমিই যে প্রিয়মের বোন তাও জানতাম না। সব যখন ধাপে ধাপে হলো তখন নিমিষেই মানা করলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হতো। আমি চেয়ারপার্সন ও কয়েকজন সিনিয়র ফ্যাকাল্টির সাথে কনসাল্ট করেছিলাম। তারা আমাকে পজেটিভ বলেছে বলে আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু এই সেমিস্টারে বিয়ের খবর ভার্সিটিতে না ছড়ানোই ভালো। শুধু শুধু বাকি স্টুডেন্টদের মধ্যে কনফিউশন হবে। এরপরের মেমিস্টার থেকে আমি তোমার কোনো ক্লাস নিবো না। আশাকরি তুমি বুঝবে। আর ক্লাসে নরমাল বিহেভ করবে। ক্লাসে আমি জাস্ট তোমার কোর্স লেকচারার। নাথিং এলস।”

প্রিয়া মন্ত্রমুগ্ধের মতো জারিফের কথা গুলো শুনছিল। লোকটার যে সবদিকে খেয়াল আছে প্রিয়ার কিছুটা বুঝে আসছে। প্রিয়া মৌন সম্মতি দিলে জারিফ বলে,

“ঠিক আছে। তাড়া থাকলে যেতে পারো নয়তো আমার সাথেও ফিরতে পারো।”

“না না স্যার। আমি যেতে পারব। ধন্যবাদ।”

প্রিয়া বিদায় নিয়ে চলে আসে। কিছুটা শান্তি শান্তি লাগছে ওর কাছে। জারিফের এই সাইলেন্ট কেয়ার গুলো প্রিয়ার মনে বেশ প্রভাব ফেলছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here