হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৫,১৬

0
397

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৫,১৬
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
জারিফের বিয়ের কথা শুনে মুন্নি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। দুপুরে কোচিং থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে মাকে চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে থাকতে দেখায় জিজ্ঞাসা করেছিল আর তখনি জানতে পারে জারিফের বিয়ের কথা। জমিলা বেগম নিজেও জারিফের বিয়ের খবর কিছুক্ষণ আগেই জেনেছেন। নিজে স্বেচ্ছায় ফোন দিয়ে আপডেট জানতে চেয়ে জানতে পারেন। এখন একমাত্র মেয়ের পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে। তিনি মনে মনে ঠিকই জানেন মেয়ের মনের খবর। মুন্নি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। জমিলা বেগম মেয়ের কাণ্ডে হতভম্বি হয়ে দেখলে মনে কিঞ্চিত শঙ্কার উপস্থিতি এলে মেয়ের রুমের দিকে ছুটেন। দরজায় কয়েকবার করাঘা*ত করলে ভেতর থেকে কান্নাজরিত কন্ঠে জবাব আসে,

“প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দেও। প্লিজ!”

জমিলা বেগম মেয়ের কান্নামাখা কন্ঠ শুনে অস্থির হয়ে পরেন। আরও দুয়েকবার করাঘা*ত করে ভেতর থেকে ফোঁপানো শব্দে জবাব শুনে তিনি মেয়ের রুমের সামনে থেকে সরে যান। মুন্নি ঢুকরে কাঁদতে থাকে। ছোটো থেকে দেখা সব থেকে কাঙ্খিত স্বপ্ন এক লহমায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কাঁচ ভাঙা তীক্ষ্ম ফলার মতো হৃদয়ে বিদীর্ণ করে র*ক্তপাত করছে। জড়ানো কন্ঠে ফোঁপাতে ফোঁপাতে মুন্নি নিজে নিজেই বলে,

“কেনো জারিফ ভাই? কেনো আপনি আমার মন বুঝলেন না? আমার ভালোবাসাটা কেনো বুঝলেন না? কী কমতি পরেছিল আমার ভালোবাসায়? কেনো আমার হৃদয় এভাবে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলেন? কেনো?”

আবারও হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণ কেঁদে কে*টে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ফ্লোরে বসে পরে। শাওয়ারের পানির সাথে অশ্রুধারা পালাক্রমে বয়ে চলেছে। শাওয়ারের নিচে নিরব দুঃখ বিলাশ চলছে তার।

জমিলা বেগম তার ভাইকে আবারও ফোন করেন।

“কেনো করলে ভাই? আমার মেয়েটের কথা একবারও মনে হলো না? ছোট্ট মেয়েটা আমার কতোটা ভেঙে পরবে কোনো ধারণা ছিল না তোমার? তোমারই তো ভাগ্নি। তোমার ছেলেকে সে ভালোবেসেছিল নিশ্চয়ই বিয়ে করার আশায়! আত্মীয়র মধ্যে সম্ভাবনা দেখেই তো মনে ঠাই দিয়েছিল। সেই আমার মেয়েটাকে এভাবে কস্ট দিলে!”

জাবেদ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেন। বোনের কথার বিপরীতে কী জবাব দিবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এখন মনে হচ্ছে স্ত্রী ও পুত্রবধূ এই কারণেই জমিলাকে না জানিয়ে জারিফের বিয়েটা দিয়েছেন। জারিফ যেখানে মুন্নিকে বোন ছাড়া কিছু ভাবে না সেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে জোর করাটা বেমানান। জাবেদ সাহেব বললেন,

“দেখ বোন, তোর মেয়েকে আমার ছেলে বোনের নজরে দেখে। অন্য নজরে দেখে না। ছেলে আমার তোর মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না তাই আমার মনে হয়েছে ছেলেকে জোর করে প্রতিটা সম্পর্কে তিক্ততা না আনাটাই ভালো। মুন্নির এখন উঠতি বয়স। কিছুদিন পর মন ডাইভার্ট করতে পারবে। তুই মুন্নিকে একটু বুঝা। জোর করে বিয়ে করলে কেউ ভালো থাকতো না। এমন তো না যে ছেলে আমার দুঃখে ছিল যার দরুন তাকে ওর পছন্দের বাহিরে বিয়ে দিব! একটু বোঝার চেষ্টা কর। তুই বুঝালে মুন্নিমা বুঝবে দেখিস। মা’থা ঠান্ডা করে ভাব। রাখছি।”

জাবেদ সাহেব ফোন রেখে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ‘মানুষ তার সব চাওয়া পায় না!’ কথাটা বড্ড ভারী। খনিকের জীবনে কেউ অপার সুখে থাকে কেউ দুঃখের সাগরে সাঁতরে বেরায়। যার অপার সুখ আছে সেও দেখো জীবনে কিছু না কিছু হারিয়েছেই। সুখ-দুঃখ মিলেই জীবন।

____________

জারিফ বাড়িতে এসে ব্যাগটা রেখে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে সবে বিছানায় বসলো তখনি দরজায় নকের শব্দে দরজা খুলে নিজের বাবাকে দেখে হালকা হাসে। জাবেদ সাহেব ছেলের হাস্যজ্বল মুখশ্রী দেখে নিজেও হাসে। ছেলের মুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই দেখে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করল। জারিফ তার বাবাকে ভেতরে আসতে বলে। জাবেদ সাহেব ভিতরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করেন,

“কেমন গেলো দিন? প্রিয়া মায়ের সাথে দেখা হয়েছে?”

“তার ক্লাস নেই তো আমি। সে খুব নার্ভাস ছিল আজকে। ক্লাস শেষে তাকে ডেকে শান্ত থাকতে বলে দিয়েছি। ওর সেমিস্টারটা শেষ হলে যা করার করো। তার আনইজি লাগাটা স্বাভাবিক।”

জাবেদ সাহেব ছেলের প্রাণোচ্ছলতা দেখে হালকা হাসলেন। সে যে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বুঝতে পারছেন। মুন্নির জন্য খারাপ লাগলেও মুন্নি জারিফের জীবনে আসলে হয়তো জারিফ আজ এতোটা প্রাণোচ্ছল হতো না। জাবেদ সাহেব বলেন,

“হ্যাঁ। সেটাই করব। একে অপরকে আরও জানবে বুঝবে। তোমাকে হাসি খুশি দেখে মন থেকে একটা বোজ নেমে গেলো।”

জারিফ তার বাবার হাত ধরে বলে,
“তোমাদের কনসার্ন আমি বুঝি বাবা। পিএইচডি আমি পরেও করতে পারব। তোমাকে আমি দোষ দিচ্ছি না। অন্য সংস্কৃতির কোনো মেয়েকে মানতে সবাই পারে না। তাছাড়া মারিয়া আমার গুড ফ্রেন্ড। সে একটু খোলামেলা ধরনের। তুমি নিজেকে দোষ দিও না।”

জাবেদ সাহেব স্বস্থি পান। ছেলের কাঁধে হাত বুলিয়ে চলে যান। জারিফ বাবার গমনপথে তাকিয়ে তারপর উঠে নিজেই ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এনে দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে।

________

প্রিয়া ভার্সিটি থেকে এসে নামাজ আদায় করে বিকেলে একটু গাছে পানি দিয়ে সন্ধ্যার নামাজের পর পড়তে বসেছে। ফোনটাকে দশ হাত দূরত্বে সুইচঅফ করে রেখে পড়ছে। প্রিয়ার মা এসে অবাক চোখে দেখে গেছেন। তার বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়ে তার এতো মন লাগিয়ে পড়ছে। সামনের সপ্তাহে মিড১ পরীক্ষা জানেন কিন্তু সবসময় পরীক্ষার আগেরদিন এভাবে পড়তে দেখেছেন। আজকে ভীন্নতা দেখে নিজেই নিজের চোখ-মুখের জলের ছিঁটা দিচ্ছেন যদি সবটা ভ্রম হয়ে থাকে!
প্রিয়া মন দিয়ে পড়ছে। তাকে এই সেমিস্টারের সব সাবজেক্টে ভালো করতে হবে। স্যারের বউ হয়েছে এখন খারাপ রেজাল্ট করলে তার সহ স্যারেরও মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। পড়ালেখার দুশমন ওই ফোনটাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। প্রিয়ার মা আবার এসে দেখে গিয়ে খুশি মনে প্রিয়ার জন্য চকলেট হরলিক্স বানাতে গেছেন। প্রিয়ার খুব পছন্দের চকলেট হরলিক্স।

_______

আয়ান রিসোর্টের রুফটপে উঠে একা একা চন্দ্রবিলাশ করছে। আজকে পূর্ণচন্দ্র না তবে মৃদু জোৎসনা আছে। আকাশে তারকারাজি জ্বলজ্বল করছে। আয়ান কানে হেডফোন গুঁজে ‘শ্রেয়া ঘোষালের’ একলা আকাশ গানটা শুনছে। ইদানীং এই গানটা তার বড্ড প্রিয় হয়ে গেছে। নিজেকে খুঁজে পায় গানের মাঝে। আজকে সারাদিন হোটেলেই শুয়ে বসে ছিল। আগামীকালকে ঘোরাঘুরি করবে। একদিন ঘোরাঘুরি করে পরশু সকাল সকাল রওনা হবে। মনটাও ভালো হবে। একা একা ঘোরাঘুরির একটা আলাদা মজাই আছে। আয়ান নিজ মনে হাসে। প্রিয়া ভালো থাকুক এটাই চায়। ছয়টা সেমিস্টার শেষ হলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এব্রোডে চলে যাবে। তবে এই ছয়টা সেমিস্টার তো কম সময় না। প্রিয়াকে প্রতিনিয়ত নিজের চোখের সামনে দেখবে সাথে জারিফ স্যারকেও। নিজের ধৈর্যশক্তি আরও বাড়াতে হবে। পড়ালেখাতেই ফোকাস করতে হবে।

——–
জারিফ রাতের খাবার খেয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছে তখন প্রিয়ার আইডি সামনে এলো কারণ প্রিয়ম বাসায় গিয়ে মায়ের মুখ থেকে প্রিয়ার পরিবর্তনের কথা শুনে প্রিয়াকে ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে যে,

“আমার বোনটা রাতারাতি বদলে গেলো! এই পরিবর্তনের পেছোনে মূল হোতা কে? জানতে চোখ রাখুন আমার আইডিতে।”

বিকেলেই জারিফ প্রিয়মকেও মানা করেছে বিয়ের ব্যাপারটা সামনাসামনি এখনি না আনতে। এমনকি জারিফের পরিবারও প্রিয়ার পরিবারকে বলেছিল আকদের দিনই। জারিফ প্রিয়মের পোস্ট দেখে হাসলো। প্রিয়ার অ্যাকাউন্ট লক করা। রিকুয়েস্ট পাঠাবে কি পাঠাবে না করে আর পাঠালো না। প্রিয়াই নাহয় আগে দিক। মারিয়া নক করে। মারিয়া জানায় সামনের মাসে জেমসের সাথে মারিয়ার বিয়ে ঠিক। জারিফ যদি পারে তবে আসতে। জারিফও মারিয়াকে বিয়ের কথাটা জানায় সাথে সবকিছু ডিটেইলসে বলে। মারিয়া এখন নিজের বিয়ের থেকে তিন মাস পর জারিফের বিয়ের জন্য এক্সাইটমেন্ট দেখাচ্ছে। সে তখন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসবে জেমসকে নিয়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সকালে আয়ান হেলিপ্যাড থেকে কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা করে। পথিমধ্যে একটা মেয়ের হাসি বারবার কানে আসছিল। যা আয়ানকে কিছুটা বিরক্ত করছিল। সেই মেয়েটার সাথেই আবার দেখা কংলাক পাহাড়ে উঠার সময়! দেখা হবেই না বা কেনো? গন্তব্য তো একই। মেয়েটা পাহাড়ের ধার দিয়ে যেমন ভাবে চলছে যেনো পাহাড়ের পথে কোনো আঁকাবাঁকা পথ নেই! একদম সরু মসৃণ কন্টকহীন পথ! মেয়েটা নিজের কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলে দুই বেনী করেছে সেগুলো নাড়তে নাড়তে লাফিয়ে চলছে। আয়ানকে পাশ কাটিয়ে আয়ানের সামনে গেলো। পেছোন থেকে মেয়েটার বয়সি কিছু ছেলেমেয়ে ওকে বারবার বলছে, “পরে যাবি লাফাস না!” কিন্তু মেয়েটার নাম বলছে না। আয়ান কানে এয়ারফোন লাগিয়ে নিলো। এসব তার বিরক্ত লাগছে। এসেছে শান্তির খোঁজে কিন্তু এক অশান্তি পিছু নিয়েছে। কিছু পথ হাঁটার পর দেখলো মেয়েটা হুট করে পা পিছলে পরে গেলো। পাহাড়ের ধারে একটা সরু গাছ ধরে ঝুলছে। আকস্মিক ঘটনাতে আয়ান হতবাক হয়ে গেলো। এয়ারফোনের দরুন কানে মেয়েটার চিৎকার আসছে না কিন্তু মেয়েটা যে চিৎকার করছে তা বুঝা যাচ্ছে। কান থেকে এয়ারফোন নামিয়ে মেয়েটার কাছে গেলো। মেয়েটার ফ্রেন্ডরা পেছোন থেকে ছুটে আসছে। তারা অনোকটাই দূরে। আয়ান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে বলে,

“আর লাফালাফি করবে? সরি তুমি করই বললাম। কারণ তোমাকে দেখে নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বিই মনে হয়! উড়নচণ্ডী নিব্বি!”

মেয়েটা একে তো ভয়ে আছে তারউপর আয়ানের অসহ্যরকমের কথাবার্তা সাহায্য না করে! কান গরম হচ্ছে তার। কখন হাত পিছলে যায়! নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। চোখ-মুখ খিঁচে নিয়ে বলে,

“আমাকে প্লিজ তুলুন। আমার ভয় করছে খুব।”

“আগে আমার কথার জবাব দেও।”

মেয়েটার আরও মা*থা গরম হচ্ছে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“সাহায্য করার জন্যই এসেছেন? নাকি আমার ব্যাবহার শোধরাতে! বেঁচে থাকলেই না নিজেকে শোধরাবো। দয়া করে আমাকে তুলুন তারপর আপনার কথার জবাব দিচ্ছি।”

আয়ান বাঁকা হেসে বলে,
“বা*ন্দ*রকে ঝুলন্ত অবস্থায়ই মানায়! তোমাকেও দারুন মানাচ্ছে।”

মেয়েটার এবার কান্না পাচ্ছে। গলা ছেঁড়ে কাঁদতে পারলে শান্তি লাগতো তার।

“আপনাকে তুলতে হবে না। তাও আমাকে অযথা কথাগুলো বলবেন না। আমি এখান থেকে টুকুস করে পরে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাব! আপনি যান এখান থেকে।”

“না না। আল্লাহর প্রিয় হতে হবে না। আমি জাস্ট আমার বিরক্তির লেভেল যাতে আর না বাড়ে সেটারই বন্দোবস্ত করছিলাম। তোমাকে টেনে তুলব তার বিনিময়ে তুমি শান্তি বজায় রেখে চলাফেরা করবে সাথে কাউকে বিরক্ত করবে না।”

মেয়েটাকে রাগে ফুঁসতে দেখে আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে হাত এগিয়ে দেয়। মেয়েটা হাত এগুনো দেখেও ধরছে না। আয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,

“কী হলো? হাত ধরো?”

“না। আপনি আমায় ফেলে দিবেন। ওইযে রাহাত, সাইফরা আসছে। ওরাই উঠাবে।”

আয়ান তাকিয়ে দেখলো, দুইটা বাচ্চা দেখতে ছেলে! ওগুলোকে বাচ্চাই লাগে দেখতে। আয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

“ওকে! বেস্ট অফ লাক!”

আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। এক কদম এগিয়ে আবার পিছিয়ে বলে,

“বাই দা ওয়ে, কোন ক্লাসে পড়ো?”

মেয়েটা আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে ভাবলো, ‘একটু আগে না নিজেই বললি আমি নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বি! এখন কেনো জানতে হবে আমি কিসে পড়ি! হা*রা*মি বেটা। আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। তোকে বলব কেন? বলব না হুহ্! আচ্ছা বলি! তোর চিন্তা ভাবনার মধ্যে এক বালতি পানি তো পরবে!’

“ইন্টার প্রথম বর্ষ।”

“ওহ! দেখতে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে। তোমার বন্ধুরাও নিশ্চয়ই ইন্টার প্রথম বর্ষেই পড়ে?”

“হুম।”

আয়ান কয়েক কদম বাড়ানোর পরপরই মেয়েটার বন্ধুরা এসে হাজির। এক মেয়ে অস্থীর কন্ঠে বলছে,

“রাহাত! সাইফ! পিহুকে উঠা দোস্ত।”

আয়ান এবার মেয়েটার নাম জানতে পারলো। প্রিয়াকে আয়ান মাঝে সাঝে ‘পিয়ু’ বলে ডাকতো। পিহু আর পিয়ু নামটা অনেক কাছাকাছি। আয়ানের মায়া হলো। পিহুর দুই ছেলে বন্ধু পিহুর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করেও বিফল। পারছে না তুলতে। পিহু মিডিয়াম স্বাস্থ্যের। আর ছেলেগুলা শুকনো। ওরা পিহুকে উঠানোর চেষ্টা করছে তন্মধ্যেই আয়ান গিয়ে ছেলেগুলার সাথেই পিহুকে ধরে টান দেয়। তিনজনে মিলে পিহুকে উঠাতে সক্ষম হয়। ছেলেগুলোর মধ্যে রাহাত নামের ছেলেটা বিনয়ের সাথে বলে,

“অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।”

আয়ান বিনিময়ে হেসে নিজের পথে হাঁটতে থাকে। কংলাক চূড়ায় উঠে আয়ান মন খুলে শ্বাস নেয়। মন শান্ত শান্ত লাগছে।
এদিকে পিহু রাহাত ও সাইফকে কতেগুলো কি*ল, ঘু*ষি লাগালো কারণ তারা আয়ানের থেকে সাহায্য নিয়েছে। তনিমা বলে,

“তোকে বারবার আমরা মানা করছিলাম লাফালাফি করিস না। শুনছিস আমাদের কথা? তোর বাড়িতে যে আমরা কিভাবে রাজি করিয়েছি তা আমরাই জানি। আঙ্কেল আন্টি তোর এই স্বভাবের কারণেই একা ছাড়তে চাননা। যদি কিছু হয়ে যেতো!”

পিহু তনিমার কাঁধে কনুই রেখে বলে,
“চি*ল বেবস! কিছু হয়নি তো।”

নাইমা বলে উঠে,
“হতে কতক্ষণ? ভাইয়াটা হেল্প না করলে আমরা তোকে তুলতাম কি করে? আমার তো তোর চিৎকারে হৃৎপিন্ড বেরিয়ে যাওয়ার দশা হয়েছিল।”

রাখি বলে,
“শুধু শুধু ওকে বুঝিয়ে শব্দের অপচয় করছিস। সে কি বুঝবে!”

পিহু মুখ ভাড় করে বলে,
“তোরাও আমাকে ব*কবি! ওই লোকটাও ব*কে গেছে। আমি কি বুঝেছিলাম যে পরে যাবো!”

সাইফ ধ*মকে বলে,
“তা বুঝবি কেন! তুই কি কিছু বুঝিস? এখন যদি লাফালাফি করিস তো তোরে আমি নিজে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”

পিহু ঠোঁট উলটে ধপাধপ পা ফেলে হাঁটতে থাকে।

_________

প্রিয়াকে ব্রেকটাইমে পড়তে দেখে ওর বন্ধুরা অবাক হয়ে গেছে। অর্ষা প্রিয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে গালে হাত দিয়ে বলে,

“প্রিয়ুটার যে কোন ভূ*তে ধরলো! কোনোদিন দেখেছিস ওকে এমন সময় পড়তে?”

মিম বলে,
“স্যারকে বিয়ে করে সে পড়ার প্রতি ঝুঁকেছে।”

সাদ বাধ সেঁধে বলে,
“কালকে যে স্যার ওকে ডেকেছিল না? তখন মনে হয় পড়তে বলেছে।”

রাদ সাদকে চা*টা মে*রে বলে,
“আরে না! প্রিয়া তো এসে আমাদের সবই বলল। মনে হয় প্রিয়ু নিজেকে স্যারের সাথে তাল মেলাতে পড়াতে মনোযোগী হচ্ছে। আফটারঅল স্যারের বউ বলে কথা!”

কথাটা বলে রাদ তাচ্ছিল্য হাসলো। নিশি সেটা দেখে বলে,
“যেমনই হোক। পড়ছে তো। আর এটা কিন্তু ঠিক যে স্যারের মান-সম্মানের কিঞ্চিত দায়িত্ব প্রিয়ুরও। আর রাদ তুই দুইদিন ধরে কেমন করে যেনো কথা বলিস। কী হয়েছে তোর?”

রাদ চুপ করে থাকে। সাদ কথা কা*টাতে বলে,
“মনে হয়, প্রিয়ু স্যারের বউ আর এখন প্রিয়ু আমাদের সাথে মিশবে না এই কারণে। বাদ দে।”

প্রিয়া এবার ওদের কাছে এসে বসে তারপর বলে,
“কী হয়েছে?”

অর্ষা গালে হাত দিয়েই বলে,
“তোর নতুন রূপে আমরা অভিভূত। জারিফ স্যার তোকে কি থেকে কি বানিয়ে দিলো!”

প্রিয়া হেসে বলে,
“দেখ, আমি চাইনা আমার কারণে উনি লজ্জিত হোক। মোটামোটি একটু ভালো করতে পারলেও হবে। আগে দেদারসে তোদের খাতা দেখতে পারলেও এখন অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে হবে। উনার মান-সম্মানের বিষয়।”

নিশি, মিম, অর্ষা ও সাদরা সম্মতি প্রকাশ করে। রাদকে চুপ থাকতে দেখে সাদ ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,

“একজনের জন্য অন্য বন্ধুত্বগুলো নষ্ট করিস না। আয়ান নিজেও প্রিয়ার সাথে নরমালি কথা বলবে দেখিস। জানি তোর আয়ানের জন্য বেশি খারাপ লাগছে কিন্তু এতে প্রিয়ুর কি দোষ বল? নিয়তিতে ছিল এটাই। বি নরমাল দোস্ত।”

রাদের মৌন সম্মতি পেয়ে সাদ ওকে নিয়ে আবার আড্ডাতে ফিরে আসে।
এদিকে জারিফের আজ টানা তিনটা ক্লাস। সে তিনটা ক্লাস করে খুব ক্লান্ত। প্রিয়ার সাথে আজ দেখাও হয়নি। গ্রাউন্ডে প্রিয়া বাদে বাকিদের দেখেছে কিন্তু প্রিয়াকে দেখেনি। ভাবলো প্রিয়াকে মেসেজ করবে। কিন্তু আবার ভাবছে করবে না। পরে আর করলোই না। লাঞ্চ শেষ করে চেয়ারপার্সনের সাথে কথা বলে বাড়ির জন্য রওনা করলো। যাওয়ার পথেও প্রিয়াকে দেখেনি। প্রিয়া হয়তো আজ আসেনি এটাই ভেবে নিলো। শেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে টেক্সট করেই ফেলল,

“কোথায় তুমি?”

প্রিয়া তখন বাসে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। মেসেজটা সে আর দেখলো না। কারণ প্রিয়া সব কল ও মেসেজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছে গান শোনার জন্য।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here