হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,২৩,২৪

0
387

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,২৩,২৪
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩

বাড়িতে যাওয়ার পর প্রিয়া জারিফকে বসার ঘরে রেখেই দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে গোঁছগাছ শুরু করেছে। অগোছালো রুমটা দেখলে কেউ বলবে না এটা কোনো মেয়ের রুম! জলদি করে দশ মিনিটের মধ্যে রুমটাকে একটু গুঁছিয়ে প্রিয়া বসার ঘরে যায়। এদিকে প্রিয়ার মা অনেক খাবার দিয়ে টেবিল সাঁজিয়ে ফেলেছে। কিছু বানিয়েছে আবার কিনেও এনেছে। দুই পদের সেমাই, পায়েস, চিকেন রোল, নুডুলস, পাকোড়া, হালিম আর কিনে এনেছে, ছানা মিষ্টি ও কালোজাম। প্রিয়া বসার ঘরের টেবিলের উপর খাবারের পদ দেখে ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থায়। এই একা ব্যাক্তি এতো খাবার খাবে কিভাবে! আকদের দিন খাবারের পদ আরও থাকলেও তখন মানুষও সেরকম ছিল। প্রিয়া ভাবলো জারিফের সাথে একটু ফা*জ*লামি করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। জারিফের সামনে গিয়ে খাবারের প্লেটগুলো এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। জারিফ প্রিয়ার দিকে এক পলক তাকালো। দৃষ্টিতে তার অসহায়ত্ব। প্রিয়ার কেনো জানি হাসি পাচ্ছে। সে বলে,

“স্যার আর কিছু লাগবে? হালিমটা নিন।”

জারিফ পায়েস খাচ্ছিলো। প্রিয়া জোর করে জারিফের হাতে হালিমের বাটি তুলে দেয়। বেচারা জারিফ দুপুরে লাঞ্চ করেই ভরপেট ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছিল। এখন তার অবস্থা “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!”। প্রিয়া মুখ টিপে হাসছে।

________

মুন্নি সেই দুপুর বারোটা থেকে জারিফের রুমের সামনে এক ধ্যানে বসে আছে। নাওয়া খাওয়া সব তার আজ আকাশে! সবাই বলে গেছে কিন্তু তার হেলদোল নাই। এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তামান্না মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে মুন্নিকে সেই স্থানেই বসে থাকতে দেখলো। তামান্না ভেবে পেলো না, মেয়ে কী করে এভাবে বসে আছে! একগুঁয়েমি আসছে না! পরক্ষণেই মনে হলো, প্রেমের টানে মানুষ বেঁহুশও হয়! তামান্না এবার দাঁত কে*লিয়ে হেসে মুন্নির পাশে গিয়ে বসলো। মুন্নি নিজের পাশে কারও উপস্থিতি বুঝে তাকালো তারপর মলিন হাসলো। তামান্নার খারাপও লাগলো কিন্তু একজনের জন্য আরও দুইটা জীবন নষ্ট হোক তা তো হতে দেওয়া যায় না। জারিফকে ভুলে থাকতে পারলে মুন্নির নিজের জন্যও ভালো। তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“তুমি অপাত্রে ভালোবাসা দান করছো মুন্নি। লাইক ব্ল্যাকহোল। যেখানে তুমি যা দেও তা কখনও ফিরে আসবে না। একসময় তুমি এতোটা মানসিক যন্ত্রনাতে ভুগবে যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই ম*রে যাবে।”

মুন্নি হেসে বলল,
“আমার কী ইচ্ছে হয় আমি নিজেও বুঝি না। সকালে ওসব কেনো করলাম আমি নিজেই বুঝতে পারতেছি না। এই যে এখানে বসে আছি কেনো সেটাও বুঝতেছি না। জারিফ ভাইকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করে। খুব কাছ থেকে।”

তামান্না ভাবলো,
“এখন কিছুটা সুস্থ মস্তিস্কে আছে তাই কথাটা বলে দিলে পাগলামী করবে না হয়তো। কান্না করবে তারপর যদি একটু বোঝে।”

তামান্না শেষমেশ বলেই দিলো,
“আজকে জারিফের অপেক্ষায় থেকে লাভ নেই।”

মুন্নি তামান্নার দিকে ঘুরে বসে বলল,
“ঠিক বুঝলাম না ভাবী। লাভ নাই কেনো?”

“কারণ সে আজকে আসবে না।”

মুন্নি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আসবে না তো কোথায় যাবে? আর সে আসবে নাই বা কেনো?”

তামান্না এবার খুব আয়োজন করে জবাব দিবে বলে প্রস্তুত হলো। উৎফুল্লিত হয়ে বলল,
“আজ সে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে। আকদের পর আজকেই গিয়েছে। প্রিয়ার সাথে ভার্সিটি থেকেই একসাথে প্রিয়াদের বাড়িতে গেলো। গতকালকেই যেতো কিন্তু প্রিয়া একটু ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল বলে হয়ে উঠেনি। এখন বউ ছাড়া যাওয়াটা তার কাছে বেমানান লাগে বলে কথা।”

মুন্নির হৃদয়ে যেনো কেউ ছু*ড়ি*র দিয়ে আ*ঘাত করে ক্ষ*তবি*ক্ষত করছে। এতো পরিমান অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে যে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চোখে নোনাজলেরা ভীড় জমিয়েছে। টুপ করে জলের ধারা অক্ষিযুগল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। মুন্নি চোখের জল লুকাতে উঠে দৌঁড়ে গেস্টরুমের দিকে চলে গেলো। তারপর দরজা আটকে বিছানায় পরে কাঁদতে থাকে। তামান্না মুন্নির দৌঁড়ে যাওয়া, দরজা লাগানো সব দেখলো অতঃপর হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গেলো।

_________

প্রিয়ম আজকে একটু জলদি ছুটি নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার নামাজের পর বসার ঘরেই প্রিয়ার বাবার সাথে কথাবার্তাতে মশগুল। বেচারা জারিফ নাস্তা করার পর নামাজ পড়ে এখন আবার চায়ের নাস্তার খপ্পরে পরেছে। জারিফের জন্য অবশ্য প্রিয়া কফি বানিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়ম আসলে প্রিয়ম জারিফকে তার ঘরে নিয়ে যায় আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এদিকে প্রিয়ার মা প্রিয়াকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর আলমারি থেকে নিজের একটা লাল-নীল মিশেলে সিল্ক শাড়ি বের করে দেয়। প্রিয়াকে বলে,

“নামাজ পড়ে এই শাড়ি পরবি। সুন্দর করে পরিপাটি হবি। জামাই বাবা আজকে প্রথমবার থাকবে। তুই যা গ*রুর মতো থাকিস তাতে তোর দ্বারা যে কেমনে সংসার হবে আমি বুঝি না।”

প্রিয়া গোল গোল চোখ করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক কন্ঠে বলে,
“এই রাতের বেলা আমি শাড়ি পরব! তাও কীনা সিল্কের শাড়ি! শাড়ি পরেই কি ঘুমাতে হবে?”

“হ্যাঁ। এই শাড়ি পরেই তোকে আজ ঘুমাতে হবে। জামাই এসেছে তো।”

প্রিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“মা, আমার এমনিতেই নার্ভাস লাগছে তারউপর শাড়ি! না আমি শাড়ি পরব না। সুন্দর দেখে থ্রিপিস পরি।”

প্রিয়ার মা ধ*মকে উঠেন,
“চুপ। তোকে শাড়িই পরতে হবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস কর শাড়ি পরা। শাড়ি পরেই থাকবি আজ। চুপচাপ নিজের ঘরে যা।”

প্রিয়া কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই ওর মা ওর হাতে শাড়ি ধরিয়ে দেয়। তারপর ঠেলে রুম থেকে বের করে দেয়। প্রিয়া শাড়িটা নিয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় ধপ করে বসে তারপর শাড়ির দিকে করুণ চোখে তাকাচ্ছে।

“এমনেই লোকটার সাথে এক রুমে, এক বিছানায় থাকতে হবে ভেবে এই শীতল আবহাওয়ায় আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে! গলা বারবার শুকিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে শাড়ি পরলে যদি সেন্সলেস হয়ে যাই? হাত-পা যেভাবে ঘামছে, প্রেশার ফল করলো কীনা!”

নিজেই নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে। প্রিয়ার মা একটু আগে মেয়ের ঘরে এসে আবারও তাগদা দিয়ে গেছে তাই প্রিয়া বাধ্য হয়ে উঠে। নামাজটা পড়ে শাড়িটা পরে নেয়। তারপর হালকা করে সাঁজে। সাঁজ বলতে ক্রিম, লোশন, লিপস্টিক ও কাজল। সাঁজ শেষ হলে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে স্টোরিও দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর রাতের খাবারের জন্য গেলে প্রিয়ার বাবা-ভাই প্রিয়াকে দেখে অবাক হয় সাথে প্রশংসাও করে। কিন্তু একজন অপলক কিছু মূহুর্ত প্রিয়ার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে ছিল। প্রিয়ার সাথে দৃষ্টি বিনিময়ের পর হালকা হেসে নিচের দিকে তাকায় আর প্রিয়া জারিফের সাথে নজরবন্ধী হওয়ায় আরও লাজুকলতার ন্যায় মিইয়ে যায়।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে জারিফকে রেস্ট নিতে প্রিয়ার রুমে পাঠায়। প্রিয়া বারান্দায় চেয়ারে বসেছিল। জারিফ দরজা লাগিয়ে প্রিয়াকে রুমে না দেখে ব্যালকনিতে যায়। তারপর নিঃশব্দে প্রিয়ার পাশে বসে। প্রিয়া জারিফের উপস্থিতি বুঝে লজ্জায় আরক্তিম হলো। আলো আঁধারিতে তা দৃশ্যমান হলো না জারিফের কাছে। দুই পক্ষেই চলল কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা। শুধু রাতের যানবাহনের কোলাহল ও জোনাকি পোকার শব্দ ছাড়া একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে না। নিরবতা ভেঙে জারিফই বলে,

“তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো হুরপরি আসমান থেকে নেমে এসেছে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৪
লজ্জায় আড়ষ্ট হলো প্রিয়া। নিরবতায় বারবার জারিফের বলা কথাটা কানে বাজছে। জারিফ প্রিয়ার গুটানো হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। হঠাৎ করে হাত রাখায় প্রিয়া হালকা কেঁপে উঠলো। হাত ধরা অবস্থায় জারিফ কম্পন অনুভব করলে নিঃশব্দে হাসে। জারিফ উদাসী কন্ঠে বলে উঠে,

“আচ্ছা? মানুষ কেনো ভালোবাসে? যদি তাতে কস্টের পরিমানটাই বেশি থাকে! ভালোবাসুক এমন কাউকে যাকে ভালোবাসলে কস্টের পরিমানটা সামান্য থাকবে। আমার ভাষ্যমতে, মানুষ ভালো থাকার জন্য ভালোবাসে। নিজের জন্য ভালোবাসে। নিজে কস্টে থাকবে এমন কাউকে ভালোবাসাটা আমার কাছে কেমন যেনো লাগে। অবশ্য আমার প্রেম-ভালোবাসার পূর্ব অভিঙ্গতা নেই তাই জানিনা সঠিক।”

প্রিয়া জারিফের হাতটা আগলে বলে,
“এটা ঠিক যে মানুষ নিজের জন্য ভালোবাসে। নাহলে একজনের জন্য অনেকেই দিওয়ানা থাকে কিন্তু সে তো সবার ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে পারে না। যাকে তার ভালো লাগে তাকেই সে ভালোবাসে। আর ভালোবাসলে কস্ট থাকবেই।”

জারিফ হতাশ স্বরে বলে,
“জীবনে অনেক ব্রেকআপ দেখেছি। কানাডাতে দেখেছি ওরা মিউচুয়ালি ব্রেকআপ করে নিচ্ছে। কেউ কাউকে ফোর্স করছে না। সম্পর্ক আর ভালো লাগছে না তাই ব্রেকআপ। আমাদের এখানে ব্রেকআপ হলে একজন আরেকজনের মুখ দর্শণও করেনা কিন্তু কানাডাতে এমন না। ওরা একে অপরের সাথে নরমালি কথাও বলে। কিছু এক্সেপশনালও ছিল।”

প্রিয়া হুট করে বলে বসে,
“আপনার মুন্নির জন্য খারাপ লাগছে? আর এখানে আজকে আসার কারণও মুন্নি তাই না?”

জারিফ নিশ্চুপ রইল। প্রিয়ার প্রশ্নের জবাব প্রিয়া সরাসরি না পেলেও নিরবতাই জবাব দিয়ে দিয়েছে। প্রিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“সে যখন থেকে আপনাকে ভালোবাসে তখন আপনার জীবনে আমার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আপনার কারও সাথে মন দেওয়া নেওয়ার সম্পর্কও ছিল না। এখন তার মন ভাঙার ব্যাথা আমি, আপনি বুঝব না কারণ তার স্থানে আমরা নেই। আমরা আছি বিপরীত স্থানে। চাইবো, মুন্নি জীবনে কাউকে পাক যে ওকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবেসে সযত্নে রাখবে।”

আকাশের রূপালি থালার মতো চাঁদটা বড্ড সুন্দর। চন্দ্রমা জ্বলমল করে তার টিমটিম জোৎসনায় ধরিত্রীর অন্ধকারকে কাটানোর প্রয়াসে ব্যাস্ত। বারান্দায় থাকা তিন রকমের গোলাপ গাছে দুটোতে ফুল ফুটেছে। গোলাপি ও সাদা গোলাপ। গোলাপের সুবাসে মোহিত চারিপাশ। আরও কিছুক্ষণ বসে থেকে প্রিয়া বলে,

“ঘরে চলুন। রাত বাড়লে শীত শীত লাগবে।”

“আজ রাতটা বারান্দায় কাটালে মন্দ হয় না। আমার ভালোই লাগছে।”

প্রিয়া হালকা হেসে বলল,
“ভালো লাগলেও এখানে কম্ফর্টেবল ভাবে তো থাকার জন্য যোগাড় নেই। তাছাড়া আমার কিছু প্রবলেমও আছে।”

জারিফ জিজ্ঞেস করে,
“কী প্রবলেম?”

“ঠান্ডা লেগেছে!”

“তুমি অনেক কেয়ারলেস। ঠান্ডা লেগেছে তা এতক্ষণ পর বললে। রুমে চলো।”

রুমে প্রবেশ করে জারিফ বিছানার একপাশে বসলো। প্রিয়ার কেমন অস্বস্থি হচ্ছে। এক বিছানায় ঘুমাবে ভেবেই বিছানার কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তারউপর শাড়ি এদিক সেদিক হলে লজ্জায় শেষ হওয়ার মতো অবস্থা হবে। জারিফ ল্যাপটপ খুলে বসে প্রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ল্যাপটপে মনোনিবেশ করে বলল,

“তুমি শাড়িটা চেঞ্জ করে আসতে পারো। অ্যাই থিংক ইউ আর নট কম্ফর্টেবল। নার্ভাসও দেখতে লাগছে তোমাকে।”

প্রিয়া জারিফের আচানক কথায় হকচকিয়ে উঠে। লোকটা তার মনের অবস্থাও বুঝে ফেলেছে। অবশ্য তার নার্ভাসনেস চেহারাতে পরিলক্ষিত। প্রিয়া দ্রুত শাড়ি বদলাতে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে ভাবলো গোসল করবে! সকালে গোসল করে গেছে তাছাড়া এখন অস্থীরতা কমানোর উপায় হিসেবে প্রিয়ার মা*থায় গোসলের চিন্তাই আসছে। তাই একেবারে গোসল করেই বেরোয়। জারিফ এদিকে কাজে ডুবে আছে। পরবর্তী ক্লাসের লেকচার তৈরী করছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর প্রিয়া চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরোয়। তারপর জারিফের সামনে দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঝাড়া দিলে জারিফের চোখে মুখে পানির ছিঁটা যায়। জারিফ পাশে তাকালে দেখে প্রিয়া চুল ঝাড়ছে। জারিফ স্বিয় স্ত্রীর এই দৃশ্য মুগ্ধ চিত্তে অবলোকন করে। সদ্য স্নানে হালকা গোলাপি থ্রিপিসে প্রিয়াকে জারিফের কাছে সদ্য পরিষ্ফুটিত গোলাপের ন্যায় লাগছে। প্রিয়ার চুল ঝাড়া শেষ হলে মুখে ও হাতে-পায়ে ক্রিম ও লোশন লাগিয়ে নেয়। সব কাজ শেষে আয়নার মাধ্যমে জারিফের দিকে নজর গেলে জারিফকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখলে প্রিয়া আবারও লজ্জা পায়। আজ যেনো ওর লজ্জা দিবস! প্রিয়ার সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলে জারিফ হালকা কেশে জিজ্ঞেস করে,

“এই রাতের বেলা শাওয়ার নিলে যে? তোমার না ঠান্ডার প্রবলেম?”

প্রিয়া কী জবাব দিবে ভেবে ভেবে একটু দেরী করে আমতা আমতা করে বলে,

“ওই আসলে অনেক সকালে শাওয়ার নিয়েছিলাম আর সারাদিনের ক্লান্তি তাই। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য আরকি!”

“ওহ আচ্ছা। ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পরো। আমার আরেকটু কাজ বাকি।”

প্রিয়া চটপট বিছানায় কম্বল গায়ে দিয়ে ভেজা চুলেই শুয়ে পরলো। প্রিয়ার এই তৎপরতা দেখে জারিফ আনমনে হাসলো। মেয়েটা যে কী কারণে নার্ভাস তা জারিফ প্রথমেই বুঝে গিয়েছিল।

_________

রাতের খাবারের সময় সবাইকে অবাক করে মুন্নি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,

“আমি কালকেই দিনাজপুর ফিরতে চাই।”

মুন্নির ফোলা ফোলা র*ক্তলাল আঁখিজোড়া দেখে যেকেউ বলে দিতে পারবে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁদেছে। মুন্নির মা জমিলা বেগম উঠে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়ের গা*লে দুই হাত দিয়ে আগলে বলেন,

“তুই ঠিক আছিস মা? চোখের কী বাজে অবস্থা। তোর উপর কী যাচ্ছে তা মা হিসেবে কিছুটা হলেও আমি উপলব্ধি করতে পারি।”

“আমি আগামীকালই বাড়ি ফিরতে চাই মা। সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।”

জায়েদ সাহেব ভাগনির বেদনাতুর নয়নযুগল দেখে ও শক্ত কন্ঠস্বর শুনে বলেন,

“কালই তো এলে। আরও কয়েকদিন থেকে যাও। তুমি যেহেতু বুঝতে পেরেছ তাতেই আলহামদুলিল্লাহ্‌। ”

“আমার এই বুঝ কতক্ষণ স্থায়ী হবে তার সময়সীমা আমি বলতে পারিনা। তোমার ছেলেকে দেখলেই হয়তো আমার সব বুঝ ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। আমি আবারও তার জন্য পা*গলামী করব। তার থেকে ভালো, আমি চলে যাই। দূরে থাকি। শুধু শুধু তার বিরক্তির কারণ নাহয় না হলাম। আমার কারণেই যে সে আজ বাড়ি ফিরল না তাও আমি বুঝি। দোষটা আমার কারণ আমি ভালোবেসেছি। তোমাদের ছেলের কোনো দোষ নেই। আমি আগামীকাল দিনাজপুর ফিরে যাবো। সামনে আমার পরীক্ষাও আছে।”

তরুণীমা বেগম ও তামান্না কিছু বলল না। তরুণীমা বেগম ছেলের মনের বিরুদ্ধে যেতে চাননি নয়তো জারিফ রাজি থাকলে পুত্রবধূ হিসেবে নিজের পছন্দ না হওয়া স্বত্বেও মুন্নিকে বউ করে আনতেন। জায়ান বলে,

“যেহেতু মুন্নি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে তাহলে চলে যাক। সত্যি সামনে তো ওর পরীক্ষা। তাছাড়া শুধু শুধু এখানে থেকে কস্ট না পাওয়ার থেকে দূরে গিয়ে কিছুটা ভালো থাকাটাও উত্তম। আমি তবে রাতের টিকিট কা*টি।”

“না! সকালের। সকালের টিকিট কা*টো ভাইয়া। আমি তার দৃষ্টির আড়ালেই চলে যেতে চাই। মানুষের মন তো! যদি আবার বেঁকে বসে!”

মুন্নি এই বলে দৌঁড়ে আবার গেস্টরুমে চলে যায়। জমিলা বেগমও উঠে যান মেয়ের পিছু পিছু। তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে যা করতে চেয়েছিল তা হয়েছে কিন্তু খারাপও লাগছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here