#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,৩৯,৪০
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৯
দুপুরের পর মুন্নি বাড়ি ফিরল। ওর বাবা ওকে ছাদে যেতে ডেকে গেলেন। হঠাৎ বাবা ছাদে যেতে বলায় কিঞ্চিত অবাকও হয়েছে। জারিফদের বাড়ি থেকে ফেরার পরও মুন্নির বাবা ওকে এভাবে ছাদে ডেকেছিল। আজ আবার কী কারণে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। ফ্রেশ হয়ে দুই কাপ মালাই চা বানিয়ে ছাদে উঠলো। মুন্নির বাবা মেয়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। মুন্নিও হেসে বাবার পাশের চেয়ারটায় বসল। মুন্নির বাবা বলতে থাকেন,
“ভেবো না তোমাকে বোঝা ভাবি! তোমাকে সারাজীবন আমার কাছে রাখতেও আমার কোনো কৃপণতা নাই। তবে তোমার মানষিক দিক বিবেচনা করেই বলব যা বলার। তোমার কি রাদিফকে পছন্দ? বিয়ে করবে ওকে?”
মুন্নি অবাক দৃষ্টিতে বাবার দিকে চাইলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না। হুট করে এসবই বা কেনো জিজ্ঞেস করছে তাও বোধগম্য হচ্ছে না। মুন্নির বাবা আবারও বললেন,
“রাদিফ আজ এসেছিল। সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি ওকে কোনো কথা দেইনি। জীবনটা তোমার তাই তোমার মতামত জানা উচিত।”
মুন্নি বিবশ বসে রইল। এর জবাব তার কাছেও নাই। মুন্নির বাবা মিরাজ সাহেব ভণিতা না করেই বললেন,
“রাদিফকে ছেলে হিসেবে আমার খারাপ মনে হয়নি। এক মাস আমাদের বাড়িতে ছিল। যথেষ্ঠ পোলাইট ও ফ্রেন্ডলি। তোমার মায়েরও পছন্দ।”
মুন্নি ঠোঁট প্রসারিত করে মিষ্টি হেসে বলে,
“তোমাদের যা ইচ্ছা সেটাই। এই জবাব আমি উনাকেও দিয়েছিলাম। নিজ থেকে আমি কিছুতে জড়াবো না। তোমরা আমার জন্য যা ভালো বুঝবে তাই করো। আমার আপত্তি নেই।”
মিরাজ সাহেব মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন,
“সূর্যের মতো উজ্জ্বল হোক তোমার মুখের হাসি। দোয়া রইল।”
মিরাজ সাহেব চলে গেলে মুন্নি আকাশপানে দৃষ্টি স্থীর করে। স্বগোতক্তি করে,
“সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না আবার কিছু ভালোবাসার জোর এতোটাই যে আপন গতিতে পূর্ণতার পথে এগোয়।”
রক্তিম নীল অম্বরে সূর্য তার দিনের শেষ হাসি হাসছে। মুন্নি সেদিকে উদাসীন চেয়ে আছে।
_________
দেখতে দেখতে চারটা দিন কে*টে গেছে। জারিফ ও প্রিয়ার বিয়ের সব অনুষ্ঠানও শেষ। কাল থেকে প্রিয়ার নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে কিন্তু জারিফ প্রিয়ার মাঝে তেমন আগ্রহ দেখছে না। রাতে প্রিয়া বিছানা গোছাচ্ছিল তখন জারিফ জিজ্ঞেস করে,
“কাল তোমার ক্লাস কখন?”
“সাড়ে আটটায় মনে হয়।”
প্রিয়ার ভাবলেশহীন জবাব জারিফের পছন্দ হলো না। পেছোন থেকে ওর হাত টেনে নিজের দিকে ফিরালো। প্রিয়া হঠাৎ এমন হওয়ায় অবাক হয়ে বলল,
“কী হলো?”
“তোমার কী হয়েছে বলোতো? এতো উদাসীন কেনো তুমি? কাল থেকে তোমার নতুন সেমিস্টারের ক্লাস। তোমার মধ্যে আমি কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। এনিথিং রং?”
জারিফের সন্দিহান কণ্ঠে প্রিয়া মলিন চোখে চাইল।
“নাহ্ কিছু না। সকাল সকাল ক্লাস তাই একটু।”
জারিফ প্রিয়ার মন খারাপ বুঝে হাসাতে বলল,
“গত সেমিস্টারে তোমার প্রথমদিন ক্লাসে যাওয়ার দিন আমাদের দেখা হওয়াটা মনে আছে?”
প্রিয়া না চাইতেও হেসে ফেলল।
“তা কি ভোলার! আপনি কতোটা নার্ভাস ছিলেন আর আমি ছিলাম বির*ক্ত!”
জারিফ প্রিয়ার কো*মড় পেঁচিয়ে ধরে বলে,
“আর আজ সেই বিরক্ত করা লোকটা তোমার হাসবেন্ড এন্ড ইউনিভার্সটির স্যার!”
শেষোক্ত কথায় প্রিয়ার তার ব্যাচমেটদের কথা মনে পরে গেলো। জারিফ আবারও প্রিয়াকে অন্যমনস্ক দেখে প্রিয়ার গালে নিজের দুই হাত রাখল। আগলে নিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড প্রিয়া? ইউ ক্যান শেয়ার উইথ মি।”
“নাথিং। চলুন ঘুমাব। কাল অতো সকালে উঠতে হবে তো।”
“হুম।”
প্রিয়ার কথা ঘুরানো জারিফ বুঝলো। এখন বলতে চাইছে না বলে আর জোর করল না। জারিফ নিজেই খুঁজে বের করবে।
__________
চারদিন হলো পিহু আয়ানকে একটা বারও নক করেনি। দুইদিন তো আইডি ডিএক্টিভ ছিল। আয়ানের কাল প্রথম ক্লাস। সে সকালে ক্লাস নেয়নি এবার। ভাবল নিজ থেকেই পিহুকে নক করে জিজ্ঞেস করবে। ভাবনা-চিন্তা আর না বাড়িয়ে নক করেই বসলো। কিন্তু পিহু তো মেসেজ দেখছেই না। পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেলো তাও না। পাঁচ মিনিট পর আবার লিখল,
“আর ইউ এং*ড়ি উইথ মি?”
নাহ্! এবারও রিপ্লাই এলো না। আয়ান দেখল আধঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পিহু হয়ত অনলাইনে নেই। তাই সে আর মেসেজ করল না। কিছুক্ষণ ফেসবুক স্ক্রোল করে জলদি ঘুমিয়ে গেলো। পরেরদিন একটা ফ্রেশ সকালের অপেক্ষা করছে সে।
এদিকে পিহু মোবাইলের উপরে আসা নোটিফিকেশন দেখেছে কিন্তু মেসেঞ্জার আনইন্সটল তার। ফেসবুক লাইট দিয়ে মেসেজ করতে পারবে কিন্তু সে করবে না! সে ভেবেছে, দুইদিনেও আয়ানের মেসেজ সিন করবে না! পিহুর খালাতো বোন পিহুকে বলে,
“নিজেই অপেক্ষা করছিলি আয়ান ভাইয়ার মেসেজের আর এখন বলছিস দুইদিনেও সিন করবি না! কী চাইছিস তুই? এই চারদিনে তো মন খারাপ করে বসে থেকে থেকে আমার মুডেরও চৌদ্দটা বা*জিয়ে ছেড়েছিস।”
পিহু আচানক পরীর সামনে এসে ধ*প করে বসলো। পরী হকচকিয়ে উঠে।
“সে আমাকে অপেক্ষা করিয়েছে না? আমিও করাব। টি*ট ফর ট্যা*ট! হুহ্!”
পরী তোঁ*তলাতে তোঁ*তলাতে বলে,
“পরে আবার আমার মুডের সর্বনা*শ করবি নাতো?”
পিহু ভ্রুঁকু*টি করে বলে,
“কী বললে তুমি?”
“না না। কিছু না। ঘুমা তুই। কাল তো ক্লাস আছে তোর। জলদি ঘুমা।”
পিহু পরীর কথায় রাজি হয়ে গুনগুন করে গা*ন গাইতে গাইতে শুয়ে পরে। পরী মুখ লটকে পিহুর কাণ্ডকা*রখানা দেখছে। মেয়েটার কখন কী হয় বোঝা দায়।
____________
দুপুর বারোটা বাজে। ক্যাম্পাসে ওরা সাতজন একসাথে বসে আছে। আড্ডা চলছে ওদের। আয়ান পাঁচ-দশ মিনিট পরপর ফোন চেক করছে। ফেসবুকে কিছুক্ষণ আগে পিহু নিজের প্রফাইল পিকচার বদলেছে কিন্তু মেসেজ দেখছে না। আয়ান একবার ভাবে আবার নক করবে! আবার ভাবে করবে না। ওদের বন্ধুদের সামনে চারজন এসে দাঁড়ালো। তাদের মধ্যে রূপা নামের মেয়েটি টি*ট*কা*রি করে ব্যাঙ্গাত্নক ভাবে বলল,
“কেমন আছো প্রিয়া? বিবাহিত জীবন কেমন চলছে?”
প্রিয়া রূপার দিকে নিশ্চলভাবে তাকালো অতঃপর জবাব দেয়,
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।”
রূপা তার বান্ধুবীদের দিকে তাকিয়ে বি*শ্রী হাসে।
“জারিফ স্যার বুঝি খুব ভালোবাসে? তা কীভাবে?”
প্রিয়া ওদের নোং*রা ইঙ্গিতে চোখ খিঁচে নিলো। নিশি, মিম, অর্ষা, আয়ান, রাদ ও সাদ এহেনো অবান্তর নোং*রা প্রশ্নে বিরক্ত হলো। অর্ষা বলে উঠল,
“তা জেনে তুমি কী করবে রূপা?”
রূপা মুখ ভে*ঙ*চি দিয়ে বলে,
“এমনিতেই আস্ক করলাম। কেনো ফ্রেন্ড হিসেবে জানতে চাইতে পারিনা?”
মিম মুচকি হেসে বলে,
“অবশ্যই পারো। কিন্তু জিজ্ঞাসা করারও একটা ধরণ ও লিমিট আছ। তাই নয় কি?”
“উপস! মাই ব্যা*ড!”
রূপা আর ওর বান্ধুবীরা হেসে উঠল। রাদ ও সাদ বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আয়ান ওদের হাত ধরে নিষেধ করল। নিশি বলে,
“ফার্স্ট অফ অল, তোমার বলার ধরণ ফ্রেন্ডলি ছিল না এন্ড ইটস সাউন্ড অ*কওয়ার্ড।”
রূপার ফ্রেন্ড ন্যান্সি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“স্যারকে বিয়ে করাটা বুঝি অ*কওয়ার্ড না? স্যারকে কিভাবে বশ করল সেটাতো জানতে চাইনি! তাই না?”
প্রিয়ার চোখ বেয়ে জল গড়ালো। এদের মুখ লাগলে এরা পুরো ক্যাম্পাসে বাজে কিছু রটাবে। আয়ান শান্ত ভাবে বলল,
“মাই*ন্ড ইউর ওয়ার্ড। বলার আগে ভাববে তারপর বলবে।”
সাদ বলে,
“এই কথাগুলো তোমরা কী উদ্দেশ্যে বলছ আর কেনো বলছ তা বুঝা হয়ে গেছে। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। স্যার ও প্রিয়া এতে অন্যায় কী করেছে?”
রূপার আরেক ফ্রেন্ড বলে উঠে,
“ও শা*টআ*প সাদ! আমরা জানি সব অকে!”
ওরা রে*গে গেলো। রাদ দাঁতে দাঁত খিঁ*চে বলল,
“কী জানো? বলো কী জানো? তোমরা যা জানো সেটা ভিসি বা চেয়ারপার্সন স্যারের কাছে গিয়ে নাহয় বলিও। আর যা সত্য সেটাও আমরা তাদেরকে গিয়ে বলব। ইনফ্যাক্ট, উনারা সব জানেনও।”
রূপা নাক ফুলিয়ে রেগে আঙুল উুঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই আয়ান শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“প্লিজ লিভ। নো মোর ওয়ার্ডস। জাস্ট লিভ।”
রূপা হাতে থাকা কোকের বোতলটা ছুঁ*ড়ে ফেলে হনহন করে চলে গেল। ওরা যাওয়ার পর মিম প্রিয়াকে ঝাঁ*কিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
“তোরে কী বো**বায় ধরেছিল? ওরা এতোকিছু বলল কিছু বললি না কেনো?”
প্রিয়া মিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। এই চারদিন ধরে এসব প্রিয়াকে খুব এ*ফেক্ট করছিল বলে সে এগুলো থেকে দূরে থাকছিল। অর্ষা ও নিশি প্রিয়াকে কাঁদতে মানা করছে ও মা*থায় হাত বুলাচ্ছে। সাদ বলে,
“ওকে পানি খাওয়া। এরপর আবার কিছু বলুক ওরা! গ্রুপেও বাজে কথা বলেছিল আর এখানেও। এরপর কম*প্লেইন করা হবে।”
পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে ওরা প্রিয়াকে নিয়ে লাঞ্চ করতে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
চেয়ারপার্সনের রুমে জারিফ, প্রিয়া, প্রিয়ার বন্ধুরা ও সকালে যারা প্রিয়া ও জারিফকে নিয়ে নোং*রা কুটক্তি করেছে সেই মেয়েগুলো অবস্থান করছে। মেয়েগুলো এখন ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। জারিফ দুই হাত পেছনে রেখে স্ট্রেটফরওয়ার্ড দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া বারবার জারিফের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তাতে জারিফের কোনো হেলদোল নেই। খানিকটা ভয়েও আছে! জারিফ আবার রে*গে নেই তো? মুখাবয়ব দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে রূপা ও তার বান্ধুবীদের অবস্থা নাজেহাল। চেয়ারপার্সন স্যার সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,
“রূপা, ন্যান্সি, শারিকা ও শীলা। আপনারা প্রিয়াকে জারিফ রিলেটেড কী বলেছেন?”
রূপারা ভয়ে ঢোক গিলল। ওদের চুপ করা দেখে চেয়ারপার্সন স্যার হুং*কা*রে ন্যান্সি ভয়ে কেঁপে উঠে বলল,
“স্যার, আমরা খারাপ কিছু বলিনি।”
“আমি জানি আপনারা কী বলেছেন। কে কী করল তাতে আপনাদের কী? আপনারা এখনি জারিফ ও প্রিয়ার কাছে ক্ষমা চাইবেন তারপর আপনাদের আমি কিছু কথা বলব। যদি আপনাদের সেটাতে অপরাগতা থাকে তাহলে হ্যা*রাস*মেন্টের জন্য ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ডও হতে পারেন!”
রূপারা ভয় পেয়ে গেলো। তাদের পরিবার পর্যন্ত খবর পৌঁছালে ঝামেলা হয়ে যাবে কিন্তু ক্ষমা চাইতেও ইতস্ততবোধ করছে। কিন্তু ক্ষমা না চাইলে যে খুব বড়ো খেসারত দিতে হবে! এই মুহূর্তে প্রিয়ার প্রতি রাগ হলেও কিছু করার নেই। চারজন একে অপরের দিতে তাকাতাকি করে শেষ পর্যন্ত না পারতে ক্ষমা চায়। চেয়ারপার্সন স্যার বলতে শুরু করেন,
“আপনাদের জারিফ স্যার আর প্রিয়ার মধ্যে বিয়ের আগে কোনো প্রেম-ভালোবাসা ছিল না। প্রিয়া যে জারিফের বন্ধুর বোন সেটাও জারিফ জানত না। পারিবারিক ভাবে জারিফের বিয়ে তার বন্ধুর বোনের সাথে ঠিক হয় তারপর যখন জারিফ জানতে পারে তখন সে আমাদের সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের জানায়। সে দ্বীমনাতে ছিল যা আমরা ক্লিয়ার করেছি। এমনকি প্রিয়ার পরীক্ষার খাতা আমি নিজে দেখতাম। মিড২ ও ফাইনালের প্রশ্ন জারিফ আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিল যাতে আমি মডিফাই করে দেই। প্রিয়া যেসব সেকশনে থাকবে জারিফ সেসব সেকশনে ক্লাস নিবেনা বলে জানিয়েছে। এতোকিছু কিন্তু সে নাকরলেও পারত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এসব করার কারণ! যাইহোক, আগামীতে এরকমটা যেনো না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখবেন।”
রূপা ও তার বান্ধুবীরা চেয়ারপার্সন স্যারকে বলে বেরিয়ে চলে গেল। প্রিয়ারাও চলে আসল। জারিফ চেয়ারপার্সন স্যারকে কৃতঙ্গতা স্বরূপ বলে,
“থ্যাংকিউ স্যার।”
“মাই প্লেজার বেটা। আগাছা ছোটো থাকতেই উপড়ে ফেলতে হয়। সবসময় মনে রাখবে। মে আল্লাহ ব্লেস বোথ অফ ইউ।”
জারিফ মুচকি হেসে বলে,
“দোয়ায় রাখবেন স্যার। আসি।”
____________
প্রিয়া ক্যাম্পাসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে। হুট করে বলে উঠে,
“উনি এই ব্যাপারে কীভাবে জানল! আমি তো বলিনি আর সে আশেপাশে ছিলও না। তার মানে রাদ!”
প্রিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকায়। রাদ বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জারিফের অফিস রুমের জানালার দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠে,
“আপনার স্বামী ওই ওইযে উপরে তার অফিস রুমের জানালা দিয়ে পুরো ঘটনা দেখছেন কিছু না শুনলেও। আপনাকে কাঁদতেও দেখেছেন আপা! তারপর আমি ডিপার্টমেন্টে ফারুক স্যারের কাছে গেলে সে আমাকে তার অফিস রুমে ডেকে সব জানতে চেয়েছেন।”
প্রিয়া ভাবুক কণ্ঠে বলে,
“ওহ আচ্ছা। তাহলে এই ব্যাপার!”
রাদ বলে,
“হ্যাঁ। ভালোই হয়েছে স্যার সব মিটমাট করে ফেলেছে। এসব ঝামেলা না রাখাই ভালো।”
প্রিয়াও সায় দেয়। কিন্তু জারিফ যে প্রিয়ার সাথে কথা বলল না! চেয়ারপার্সন স্যারের রুম থেকে বের হয়ে প্রিয়া জারিফকে ডেকেছিল কিন্তু জারিফ না তাকিয়ে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেছেন।
বাসায় ফেরার পথেও জারিফ একদম নিরব। ড্রাইভিং করে যাচ্ছে একমনে। আর বেচারি প্রিয়া! কখন থেকে উুঁশখুশ করছে। একবার জারিফের থেকে পানি চাইছে তো আরেকবার টিসু চাইছে! জারিফও চুপ থেকে সব এগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কথা বলছে না। প্রিয়া এই অবস্থা দেখে মুখে নখ কা*টতে কা*টতে ভাবল কিছু একটা করবে। হঠাৎ করে প্রিয়া গাড়ির ব্রেকে চাপ দিয়ে জারিফকে ব্রেক করতে বাধ্য করল। গাড়ি থামিয়ে জারিফ এখন সামনের দিকে অনড়ভাবে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া নিজের সিটবেল্ট খুলে জারিফের দিকে এগিয়ে নিজের কান ধরল! তারপর বলল,
“সরি সরি। দেখেন ওদের কথাগুলো আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ট্যুর থেকে ফেরার দিনই দেখেছি। আপনি ওদেরও স্যার তাই জানাতে চাইনি। আজকে সামনাসামনি ওদের কথাবার্তা আমাকে স্তব্ধ করে তুলেছিল। মস্তিস্কে কিছু বলার মতো শব্দ বা জবাব আসছিল না।”
জারিফ তাও নিরুত্তর। প্রিয়া আবার বলে,
“ঝামেলা হওয়ার ভয়ে কিছু বলতে চাইনি। এরপর থেকে এমন কিছু হলে সবার আগে আপনাকে জানাব। প্রমিস।”
“এমন কিছু হবেও না আশাকরি।”
প্রিয়াকে প্রত্যুত্তর করে গাড়ি স্টার্ট করল। ওদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
__________
রাতে আয়ান দেখল পিহুর কোনো জবাব আসেনি। আয়ান লম্বাশ্বাস নিয়ে লিখল,
“অ্যাই ওয়ান্না মিট উইথ ইউ। আগামীকাল বিকেলে। তোমার ঠিকানা থেকে রমনাপার্ক কাছে। সেখানেই আসব। ঠিক বিকেল পাঁচটায়।”
পিহুর ফোনে নোটিফিকেশন আসা মাত্রই সে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। পিহুর হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠাতে পরী হকচকিয়ে উঠল। বেচারি পরী হেডফোনে গান শুনছিল। পিহু পরীকে হুড়মুড়িয়ে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাসের সাথে বলে,
“ইয়েয়ে! সে দেখা করতে আসবে।”
পরী থতমত খেয়ে বুকে থু*থু দিয়ে বলে,
“ওহ। তাহলে যা। বইন দয়া করে একটু ধীরে সুস্থে কথা বলিস। ভাইয়া না আবার ভয়ে পালায়!”
পিহু ভ্রুঁ বাঁকিয়ে বলে,
“উফ! আপু। একটু এক্সাইটমেন্টে করে ফেলেছি। কালকে তুমিও যাবা আমার সাথে।”
“এই না না। আমি তোদের দুজনের মাঝে যেয়ে কী করব?”
“আমাকে নিয়ে যাবা। আমি কি চিনি নাকি! কাছে হলেও একা একা যাব না। তুমি নাহয় দূরে দাঁড়িয়ে থেকো। তাও চলো প্লিজ প্লিজ। একা গেলে খালামনি অন্যকিছুও মনে করতে পারে। খালামনিকে বলবা, ফুচকা খে*তে যাব তাহলেই হবে।”
পরী অবাক! পিহুটা এতো চালাক! পিহুর কান জোড়ে মলে দিয়ে বলে,
“ওরে বা*টপা*র! ভালোই তো বা*টপা*রি শিখছ। প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাবা ফুচকার বাহানায়!”
পিহু কানে হাত বুলাতে বুলাতে মুখ কুঁচকে বলে,
“কোনো প্রেমিক ফেমিক না বুঝেছ! সে নিজেই বলেছে এটা। তাও তাকে দেখার ইচ্ছে দমাতে পারিনা।”
পরী হালকা হেসে বলে,
“তুই একটু বেশি চিন্তা করিস। সবকিছু হুট করে হয় না। টাইম দে সব ঠিক হবে। তখন এসব প্রেম হওয়ার আগের সময়টা খুব মিস করবি। তখন এই অনুভূতি গুলোই হৃদয়ে কড়া নাড়বে। এখন চল খেতে যাই। মা পরে ডাকতে চলে আসবেন।”
পিহু মুচকি হাসে অতঃপর ওরা ডিনার করতে যায়।
__________
সুন্দর একটা সবুজ থ্রিপিস ও সবুজ রঙের হিজাব পরে এসেছে পিহু। পরীর সাথে সে রমনাপার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। পাঁচটা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি কিন্তু পিহু বারবার সময় দেখছে।
“রিল্যাক্স পিহু। সময় তো হয়নি এখনও। তোর জন্য দশমিনিট আগে এসে বসে আছি।”
পরীর কথায় ভাবান্তর হলো না ওর।
“সবুজ রঙে ভালো লাগছে আমায়?”
“এই এক কথা তোকে কতোবার বললাম বলতো? সুন্দর লাগছে অনেক।”
পিহু লাজুক কণ্ঠে বলে,
“তার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিন সে সবুজ টিশার্ট পরেছিল। পাহাড়ের বুকে তাকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছিল!”
পরী একটু রম্যস্বরে বলে,
“কিন্তু এই রমনাপার্কে তোকে গাছের মতো লাগবে!”
পরীর কথায় পিহু রেগে যায় যার বিনিময়ে কিছুটা ভুগতে হয়েছে পরীকে।
আয়ান ও রাদ এসেছে রমনাপার্কে। রাদকে বলার পর রাদ জোড় করেই এলো। তার বাহানা সে ছবি তুলে দিবে! আয়ান ও রাদ, পিহুদের কাছে গেল। ওদের পরিচয় পর্ব হলো। আয়ান ও পিহুকে আলাদা কথা বলতে দিয়ে রাদ ও পরী অন্যদিকে হাঁটতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ