#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#পর্ব_৪৪(অন্তিমের সারপ্রাইজ)
#নুুরুন্নাহার_তিথী
শরতের বিকেল। এখনও আসরের আজান হয়নি। রমনাপার্কে শিউলি গাছের নিচে বসে আছে পিহু। সাথে পরীও আছে। ফুচকা খাওয়ার বাহানায় পরী পিহুকে নিয়ে এসেছে অথচ এখনও ফুচকা খাওয়ার নাম নাই! পরী বলেছে রাদের জন্য অপেক্ষা করবে তাও ওরা দুজনে অপেক্ষা করছে। শিউলি গাছের নিচে পড়ে থাকা সাদা-কমলা মিশেলে শিউলি ফুলগুলোকে পিহু দুহাতের মুঠোয় তুলে আবারও ভূমিতে ছড়াচ্ছে। বিষয়টা ওর কাছে ভালো লাগছে। সে অবশ্য পরীর সাথে আসতে চায়নি কিন্তু পরী ওকে ছাড়া আসবেই না। আর চারদিন পর পরী ও রাদের বিয়ে তাই পরী একা বেরোতে চাচ্ছিল না। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর পিহু অধৈর্য হয়ে বলে ওঠল,
“কী আপু? রাদ ভাইয়া কি আসবে না? আর কতো অপেক্ষা করব?”
পরী অনবরত দাঁ*ত দিয়ে ন*খ কা*টছে! রাদ মেসেজে জানিয়েছে আর পাঁচ মিনিটের মতো লাগবে আসতে। পিহুর কী রিয়াকশন হবে তা ভেবেই পরীর গলা শুকিয়ে আসছে। বলা বাহুল্য যে, পিহু এই চার বছরে আয়ানের কথা পরীর সামনে বলেছে বলে পরীর মনে পরে না। পরী জবাব দেয়,
“পাঁচ মিনিট ওয়েট কর বাবু।”
পিহু আবারও ফুলগুলোর সাথে খেলছে। কিয়ৎক্ষণ পর শুকনো পাতার ম*ড়ম*ড় ধ্বনিতে পিহু খানিকটা শিউরে উঠল অতঃপর ভাবলো হয়তো পরী এসেছে তাই আর তোয়াক্কা করল না। আচমকা নিজের অক্ষিদ্বয়ের উপর কারও হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠল। হাতের স্পর্শটা কেমন যেনো অন্যরকম। পেছোনের মানুষটির শরীর থেকে একটা পরিচিত সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। যেনো খুব কাছের। পিহু ঠাওর করতে করতেও নিরুত্তর রইল। জবাব না পেয়ে আয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিহুর চোখ ছেড়ে দিয়ে ওর পাশে বসলো। দুজনের দৃষ্টি সম্মুখপানে শিউল গাছটার দিকে। খানিক বিরতি দিয়ে আয়ান জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো পিহুরানী?”
অভিমানের পাল্লা বুঝি বড্ড ভারী হলো! নিশ্চুপ রইল পিহু। আয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমার মধ্যে সি*জোফ্রেনিয়ার লক্ষণ আমার দাদী প্রথমে লক্ষ্য করেন। দাদার মৃত্যুর পর তিনি আমাকে নিয়ে সচেতন। এই রোগটা আসলে কেনো হয় তা জানা যায়নি তবে অনেকসময় বংশগতও এটা বহন করে। আমি ভাবতাম আমি চুপচাপ তাই হয়তো এমন কিন্তু দাদী বললেন, ছোটো বেলায় আমি প্রচুর কথা বলতাম এবং পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্তও। তবে সেটা না আমার মনে পরে না। অনেক কিছু মনে পরে না। আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। ট্রিটমেন্ট নিচ্ছি তবে আমি সিরিয়াস অবস্থায় ছিলাম না বলে অতো গু*রুত*রভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। এটার ট্রিটমেন্ট চলবে। আমি তখন চাইনি তোমার জীবন নষ্ট করতে। তুমি নিশ্চয়ই জানো যে প্রিয়ার বিয়ে হবার পরেও আমি কেমন যেনো ব্যাবহার করতাম। দুঃখ বা কষ্ট কখন লাগতো বুঝতে পারতাম না! দ্যাটস হোয়াই।”
পিহু আয়ানের চোখের দিকে চাইলো। বলল,
“বলা শেষ? আপনি যে আমার সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় রাখেননি সেটার কোনো কারণ আছে? বলতে পারবেন কেনো?”
“আমি আশা দিতে চাইনি তোমাকে।”
“তাহলে এখানে কিসের আশায় এসেছেন?”
“তোমার।”
পিহু নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে চাইলো। আয়ান পিহুর সামনে এক বক্স চকোলেট ধরলো। বক্সটাতে অনেক ধরনের চকোলেট আর বড়োও। পিহু মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“আমি এখনও বাচ্চা নাই যে চকোলেট দিয়ে ভুলাবেন।”
আয়ান বাঁকা হেসে বক্সটা নিয়ে নেয় আর বলে,
“অহ অকে। এটা আমি তবে সারিকাকে দিবো! ইউ নো? সি লাভস চকোলেট!”
পিহু তাৎক্ষনিত আয়ানের দিকে ফিরে তেড়ে এসে বলে,
“এই সারিকা কে? ওও এজন্যই আমাকে আপনার মনে পরেনি? এখন বুঝতে পারছি। আমাকে আপনার ভালোবাসার কোনো কারণ তো নাই। সরি মাফ করবেন।”
এই বলে পিহু উঠে দাঁড়ায়। চোখের কোনে মুছে চলে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত ধরে আটকিয়ে বলে,
“সারিকা আমার মামাতো বোন। মাত্র ১০ বছরের। আমেরিকাতে থাকে ওরা। আমি মাঝেমধ্যে যেতাম তাদের কাছে। আমার সাথে মামা-মামিরাও বাংলাদেশে এসেছে।”
পিহু চোখ মুখ খিঁচে দাঁত দিয়ে জিভ কা*টে। আয়ান রম্যস্বরে বলে,
“তোমার ননোদিনি বলতে পারো। আফটারঅল চারদিন পর আমাদের বিয়ে!”
পিহু হতবাক হয়ে যায়। চারদিন পর তো পরী ও রাদের বিয়ে।
“মানে!”
“মানে এটাই যে তোমার ও আমার পরিবার আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। তুমি ছাড়া সবাই জানে বুঝেছ? ”
পিহু ধ*পা*স করে বসে পরে বুকে হাত গুঁজে মুখ ফুলিয়ে বলে,
“দ্যাটস নট ফেয়ার! আমি মানব না।”
ওদের পেছোন থেকে মেয়েলি কণ্ঠস্বরে কেউ বলে ওঠে,
“মানবে না মানতে হবে। আমাদের বন্ধুর বউ আমরা নিয়ে যাবোই।”
পিহু ও আয়ান পেছোনে ঘুরে দেখে প্রিয়ারা সকলে দাঁড়িয়ে। আর কথাটা প্রিয়া বলেছে। পিহু ছুটে গিয়ে প্রিয়া, নিশি, মিম, অর্ষাকে একত্রে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাসিত হয়ে বলে,
“আপুউউ। কেমন আছো তোমরা? আর প্রিয়াপু? আমার পুচকুর কি খবর?”
প্রিয়া পিহুর গাল টিপে বলে,
“ওরে পিচ্চি। তুমি সেই খবরও পেয়ে গেছো?”
“হুম হুম।”
নিশি হেসে বলে,
“বান্ধুবী প্রেগনেন্ট এখন তবে আমরাও বেবি নিব বলে হাসবেন্ডদের জানিয়ে দিয়েছি। ছেলে-মেয়ের বিয়ে ঠিক করতে হবে না!”
এই বলে হেসে ওঠে। পিহু ভ্রুঁকুটি করে বলে,
“প্রিয়াপুর মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো আমি।”
অর্ষা দুষ্টমি করে বলে,
“তাহলে রাজি তুমি?”
মিম রম্যস্বরে বলে,
“না হয়ে উপায় আছে ওর? যদি প্রিয়ার প্রথম বাচ্চা মেয়ে হয় তবে ওর তো এখনও বিয়েই হয়নি!”
সকলে হেসে উঠে তা দেখে পিহু মুখ ফুলায়। সন্ধ্যার আগে প্রিয়াকে নিয়ে জারিফ চলে যায় কারণ জারিফের মায়ের আদেশ, এই সময় সন্ধ্যার পর কারণ ছাড়া বাহিরে থাকা যাবে না।
__________
তিন কবুল বলে আয়ান ও পিহু এবং রাদ ও পরীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ে পড়ানোর পরই ওরা সাজেকের উদ্দেশ্য রওনা করেছে ট্রেনে করে। বাসর তারা সাজেকের রিসোর্টেই করবে। প্রিয়ারা সবাই যাচ্ছে। অনেক বলার পর জারিফ ও তার মা রাজি হয়েছে। প্রিয়াদের বন্ধুমহলের সবাই একসাথে সাজেক যাচ্ছে। প্রিয়ার জন্যই ওরা ট্রেনে করে যাচ্ছে। তারপর সুবিধামত বাহন পছন্দ করে যাওয়া যাবে। সাজেকের স্নিগ্ধ আবহাওয়া ওদের অপেক্ষা করছে। ওদের সকলের জীবন সুন্দর ও আনন্দময় হোক।
আর রাহা? রাহা খুলনা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। রাহা পড়ালেখাতে অনেকটাই সিরিয়াস হয়েছিল। ক্যাম্পাস দেখতে গিয়ে এক থার্ড ইয়ারের বড়ো ভাইয়ের সাথে ওর যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ছেলেটা রাহা ও রাহার বাবাকে অনেক সাহায্য করেছে। ছেলেটাকে দেখেই বুঝা যায় ছেলেটা খুব ভদ্র স্বভাবের। নাম ইয়াদ। আজ রাহাকে ওর বাবা খুলনাতে রেখে এসেছে মেডিকেল হোস্টেলে। নতুন পরিবেশ, নতুন শহর, নতুন মানুষজনের ভীরে ইয়াদ কিছুটা পরিচিত। এখান থেকে হয়তো শুরু হবে এক নতুন প্রেম কাহিনী!
সমাপ্ত
পাঠকমহলের অস্থী*রতা কমেছে? সবার পূর্ণতা দেখালাম। রাহার জন্যও ক্লু দেখালাম। সবাই খুশি হয়ে যান তো। ভালোবাসা অবিরাম। আসসালামু আলাইকুম।