হৃদয় দিয়ে ভালোবাসিব,পর্বঃ- ১
লেখকঃ- Tamim
~বিয়ে বাড়িতে এসে ঢুকতেই কোথা থেকে জানি একটা মেয়ে দৌড়ে এসে তামিমের সামনে দাড়ালো। অতঃপর হাটু ঘেরে বসে তার দিকে একটা ফুল এগিয়ে দিয়ে তাকে ‘I Love You’ বলে প্রপোজ করে বসে। বিয়ে বাড়িতে এসে যে হুট করে একটা মেয়ের থেকে প্রপোজাল পেয়ে বসবে এটা তামিম ভাবতেই পারেনি। মেয়েটার এমন কান্ডে তামিম বেশ অবাক হয়ে যায় সাথে কিছুটা বিচলিতও হয়ে পরে। প্রত্যেকটা বিয়ে বাড়িতেই মানুষের আনাগোনা থাকে। এতো মানুষের সামনে একটা অচেনা মেয়ে তাকে কিভাবে প্রপোজ করে বসল.! আর এখন সে মেয়েটাকেই বা কি বলবে.? তামিম এক গভীর ভাবনায় পরে গেল, এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে সেই মেয়েটা হুট করে বলে উঠলো…
–হ্যালো মিস্টার, এতো কি ভাবছেন.? সেই কখন থেকে হাটু ঘেরে বসে আছি আমার তো পা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। আপনি কি ফুলটা নিবেন না নাকি.? (বলেই তামিমের দিকে তাকিয়ে রইলো)
তামিম কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজকাল কার মেয়েরা কোনো অনুষ্ঠানে (বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা জন্মদিনের) গেলেই বস্তা বস্তা ময়দা মেখে যায় কিন্তু এই মেয়েটার মুখে ময়দার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই.! এই মেয়েটা কীভাবে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে ময়দা না মেখেই চলে আসলো.? এই বিষয়টাই তামিমের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এই প্রথম তামিম কোনো অনুষ্ঠানে একটা মেয়েকে ময়দা ছাড়া দেখতে পেল। ময়দা ছাড়াই তো মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে, তারপরও কেন যে মেয়েরা এতো ময়দা মাখে উপরওয়ালাই ভালো জানেন।
–কি হলো এইভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন.? ফুলটা নিচ্ছেন না কেন.? (কথাটা বেশ জোরেই বললো মেয়েটা)
মেয়েটার কথায় তামিম হকচকিয়ে উঠলো আর কিছু না ভেবেই মেয়েটার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে নিল। ফুলটা নেওয়া মাত্রই মেয়েটা উঠে দাড়ালো আর বললো…
–আসলে ভাইয়া হয়েছে কি (মেয়েটাকে থামিয়ে)
তামিমঃ কি হয়েছে সেটা নাহয় আমি বলি.? এইখানে এসে আপনারা অনেক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করার পর ক্লান্ত হয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে পরলেন। অনেক্ষণ ধরে বসে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না তাই আপনারা ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করলেন বিরক্তি কাটানোর জন্য একটা গেইম খেলবেন। সবাই মিলে ঠিক করলেন ট্রুথ & ডেয়ার গেইমটা খেলবেন। খেলার এক পর্যায়ে আপনি বেশি সাহসী দেখিয়ে ডেয়ার নিয়ে বসলেন আর আপনার ফ্রেন্ডরা ডেয়ার হিসেবে আপনাকে এই কাজটা দিয়ে বসলো মানে যেকোনো একটা ছেলেকে প্রপোজ করতে হবে এটা আর কি। কি ঠিক বললাম তো.?
–জী, কিন্তু আপনি কীভাবে বুঝলেন যে এটা ডেয়ার ছিল.?
তামিমঃ ওই দেয়ালের আড়ালে কয়েকটা ময়দা সুন্দরী লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের দেখছে, ওরা মেবি আপনার বান্ধবী। এতেই বুঝে গেলাম যে এই কাজটা আপনাকে ডেয়ার হিসেবে করতে হয়েছে।
–জী আপনি ঠিকই বুঝেছেন।
তামিমঃ কনের কি হন আপনি.?
–আমি ওর বান্ধবী। ওয়েট ওয়েট, আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আমি মেয়ে পক্ষ.? (অবাক হয়ে)
তামিমঃ বিয়ে বাড়িতে এইসব কাজ সাধারণত মেয়ে পক্ষের মানুষরাই করে (মুচকি হেসে)।
–ছেলে পক্ষের নয় কেন.?
তামিমঃ এর দুইটা কারণ আছে। প্রথমত এইখানে তারা নতুন আর দ্বিতীয় এইখানে সবাই তাদের অচেনা। এই অজানা পরিবেশ আর অচেনা মানুষের সামনে যদি তারা এইসব কাজ করে তাহলে তাদের মান কমে যাবে That’s It.
–আপনি তো দেখছি খুবই ইন্টেলিজেন্ট পারসন.!
তামিমঃ অনেক কথা হয়েছে এবার আপনার বান্ধবীদের কাছে যান। এমনিতেই আশেপাশের মানুষ আমাদের দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে, পরে ব্যাপারটা অন্য মাইন্ডে নিয়ে যাবে।
–এতক্ষণ ধরে একটা মেয়ের সাথে কথা বললেন অথচ তার নাম কি সেটাও জিজ্ঞেস করলেন না.!
তামিমঃ প্রথম সাক্ষাতে কারও নাম জিজ্ঞেস করতে নেই। দ্বিতীয়বার দেখা হলে অবশ্যই নাম জেনে নিব।
–যদি আর দেখা না হয়.?
তামিমঃ ভাগ্যে লিখা থাকলে অবশ্যই হবে। আর হে, নেক্সট টাইম এই ধরনের গেইম খেলার আগে ভেবেচিন্তে খেলবেন। গেলাম তাহলে, আল্লাহ হাফেজ (বলেই সে বাসার ভিতরে চলে গেল)।
তামিম চলে যাওয়ার পর মায়ার বান্ধবীরা তার কাছে এসে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো, ছেলেটা এতক্ষণ ধরে কি বললো, নাম কি, ইত্যাদি ইত্যাদি। মায়া শুধু তাদেরকে একটা কথাই বললো যে এ বিষয়ে তোদেরকে অন্য একদিন বলবো।
তামিম তার মা-বাবার ১ম সন্তান। তার ছোট একটা বোনও আছে, নাম মিলি। সে এইবার অনার্স ৩য় বর্ষে উঠেছে আর তার বোন ইন্টার ১ম বর্ষে। একটু আগে সে যেই মেয়েটার সাথে কথা বলছিল তার নাম মায়া। মায়া তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। সে এইবার অনার্স ১ম বর্ষে উঠেছে। আজকে শুভর ছোট বোনের এনগেজমেন্ট। শুভর বাবার এক বন্ধুর ছেলের সাথেই তার বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে ১ মাস পর আমেরিকা চলে যাবে তাই তারা তাদের এনগেজমেন্টের কাজটা শেষ করে ফেলতে চাচ্ছে। তা ছাড়া জান্নাতেরও ছেলেকে পছন্দ হয়েছে আর বিয়ে না হওয়া অবধি জান্নাত তার বাবার বাড়িতেই থাকবে।
এদিকে তামিম বাসার ভিতরে এসে ঢুকতেই তার বন্ধু শুভ তাকে দেখে তার কাছে চলে আসলো আর বলতে লাগলো…
শুভঃ আধা ঘন্টা আগে ফোন দিয়ে বললি বাসার কাছে চলে এসেছিস আর তুই এখন আসলি.! আর তোকে এতো ফোন দিলাম ফোন ধরলি না কেন.?
তামিম পকেট থেকে তার ফোনটা বের করে টাইম দেখে বললো, ফোন সাইলেন্ট করা ছিল তাই শুনতে পাইনি। আর আসার পথে একটু জ্যামে আটকে পরেছিলাম তাই আসতে দেড়ি হয়ে গেছে।
শুভঃ কিন্তু ফোনে তো বললি বাসার কাছে চলে এসেছিস, আর বাসার আশেপাশে তো এতো গাড়ির চলাচল নেই তাহলে জ্যাম পেলি কোথায়.?
তামিমঃ আরে এখন এইসব বাদ দে একটু পর বর পক্ষের লোকজন চলে আসবে, কোনো কাজ বাকি থাকলে বল সেটা করে দিব নে।
শুভঃ সেই সকাল বাসার কাজে লেগেছি, কাজ করতে করতে সব কাজই শেষ করে ফেলেছি কিন্তু তোর আসার নাম নেই। আর এখন এসে বলছিস কোনো কাজ থাকলে বল করে দিব নে.! ব্যাটা কাজের চাপে আমি আজ ইতির (শুভর Gf) সাথে একটা বার কথাও বলতে পারি নি।
তামিমঃ আহারে কি কস্ত (চেতানোর জন্য)।
শুভঃ দুর ব্যাটা চুপ থাক। এনগেজমেন্টের দিনই এতো ঝামেলা, না জানি বিয়ের দিন কতো ঝামেলা হবে.!
তামিমঃ আরে প্যারা নাই চিল। বিয়ের অনেক দেড়ি আছে। তা ছাড়া বিয়ের একদিন আগেই আমি তোদের বাসায় চলে আসবো তখন তোকে আর এতো ঝামেলায় থাকতে হবে না।
শুভঃ এটা যেন মাথায় থাকে। একটা মাত্র বোন আমার, ওর বিয়েতে যেন কোনোকিছুর কমতি না হয়। এমনিতেই বিয়ে হলে ও পরের ঘরে চলে যাবে আমাদের ছেড়ে (বলতে না বলতে তার চোখে পানি চলে আসলো)।
তামিমঃ আরে কাঁদছিস কেন.? জান্নাত (শুভর বোন) শুধু তোর একার বোন না আমারও বোন। আর ওর বিয়েতে আমরা দুই ভাই মিলে সবকিছু একাই গোছগাছ করবো যাতে বিয়েতে কোনোকিছুর কমতি না হয়। আচ্ছা জান্নাত এখন কোথায় রে.? অনেকদিন ধরে ওকে দেখা হয়নি, আজ যেহেতু এসেছি ওকে একবার দেখে যাই। পরে তো আর সময় পাব না।
শুভঃ ওর রুমেই আছে যা দেখা করে আয়।
তামিমঃ তুইও চল আমার সাথে.?
শুভঃ না তুই যা, মেহমান আসলে আমায় ওদের দেখতে হবে।
তামিমঃ আচ্ছা তুই থাক আমি গেলাম।
তারপর তামিম সিড়ি বেয়ে সোজা জান্নাতের রুমে চলে আসলো (সে প্রায়ই শুভদের বাসায় আসে তাই বাসার কে কোন রুমে থাকে তার সবই জানা। তা ছাড়া শুভ আর তামিম একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই তারা প্রায়ই একে অন্যের বাসায় যাওয়া আসা করে)। জান্নাতের রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখল একটা মহিলা জান্নাতকে সাজিয়ে দিচ্ছে। তামিম ভিতরে ঢুকে জান্নাতের পাশে গিয়ে দাড়ালো আর বললো…
তামিমঃ কিরে এনগেজমেন্টের দিনেও ময়দা মাখা লাগে.? এমনিতেই চেহারা পেত্নীর মতো দেখতে, ময়দা মাখাতে এখন আবার ভূতনির মতো লাগছে তোকে (জান্নাতকে চেতানোর জন্য)।
জান্নাতঃ আসতে না আসতেই শুরু করে দিলে.! এসে একটু ভালো-মন্দ তো জিজ্ঞেস করা যায়, নাকি আমার সাথে কথা বলার সময় তোমার মুখে থাকা মধু উড়ে যায়.?
তামিমঃ মানুষের মুখে আবার মধু থাকে নাকি.?
জান্নাতঃ উফফ তোমার সাথে কথা বলাই ভুল, কথার মধ্যেও প্যাচ লাগিয়ে দেও।
তামিমঃ কথার মধ্যে প্যাচ কেমনে লাগায়.?
জান্নাতঃ এটা তুমি বুঝবা না।
এইভাবে জান্নাতের সাথে আরও কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করে তামিম সেখান থেকে নিচে চলে আসলো আর শুভকে খুজতে লাগলো। তামিম চলে যাওয়ার পরেই মায়া আর তার বান্ধবীরা জান্নাতের রুমে এসে ঢুকলো।
মায়াঃ জান্নাত ওই ছেলেটা কে রে.?
জান্নাতঃ কোন ছেলে.?
মায়াঃ এই যে এইমাত্র তোর রুম থেকে একটা ছেলে বের হয়ে গেল উনি কে.?
জান্নাতঃ ও তামিম ভাইয়ার কথা বলছিস.? উনি ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।
মায়াঃ ও তাহলে উনার নাম তামিম, আর আমার ২ ক্লাস সিনিয়র.! (মনে মনে)
জান্নাতঃ কেন তুই উনাকে চিনিস নাকি.?
মায়াঃ আরে না আমি চিনব কীভাবে, এমনিই জানতে মন চাইল উনি কে তাই উনার ব্যাপারে তোকে জিজ্ঞেস করলাম।
–আরে আমাদের মায়া একটু আগে উনাকে প্রপোজ করে এসেছে, তাইতো তোর থেকে উনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে (এক বান্ধবী)।
জান্নাতঃ বলিস কি.! মায়া সত্যি তুই উনাকে প্রপোজ করেছিস.? (অবাক হয়ে)
মায়াঃ আরে আমি কি আর ইচ্ছা করে করেছি নাকি, এরাই তো ডেয়ার হিসেবে আমায় দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে।
জান্নাতঃ তা ভাইয়া তোকে কিছু বলেনি.?
মায়াঃ তিনি প্রথমেই বুঝে ফেলেছিলেন যে এটা ডেয়ার ছিল তাই তেমন কিছু বলেন নি।
জান্নাতঃ ভাইয়ার এই স্মার্টনেসটার জন্যই কতো মেয়ে যে উনার উপর ফিদা হয়েছে, বাট তিনি তাদের মধ্যে কাউকে পাত্তাই দেননি।
মায়াঃ কেন.?
জান্নাতঃ কি জানি।
মায়াঃ মেবি উনার গার্লফ্রেন্ড আছে তাই।
জান্নাতঃ না উনার এইসব নেই।
মায়াঃ এতো শিওর হয়ে কিভাবে বলছিস.?
জান্নাতঃ তোর থেকে উনাকে আমি বেশি চিনি তাই উনার সব খবরই আমার জানা আছে।
মায়াঃ ওহ বুঝলাম।
–––––––
বর পক্ষের লোকেরা শুভদের বাড়িতে চলে এসেছে। এনগেজমেন্টের কাজও শেষ হয়ে গেছে এতক্ষণে, এখন মেহমানদের খাওয়ানো হচ্ছে। তামিম আর শুভ সবাইকে সার্ভ করে খাওয়াচ্ছে। সবার খাওয়া শেষ হলে তারা দুজনেও খাবার খেয়ে নিল। খাওয়া শেষ করে তামিম শুভর থেকে বিদায় নিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরল।
শুভদের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ উপর থেকে কিছু মেয়েদের হাসির শব্দ তামিমের কানে এসে পৌছালো। তামিম চোখ তুলে বাসার ছাদের দিকে তাকাল আর দেখল জান্নাত আর ওর বন্ধুরা ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। তাদের মধ্যে সে ওই মেয়েটাকেও দেখতে পেল যে তাকে প্রপোজ করেছিল। ওই মেয়েটাও তাদের সাথে হাসাহাসি করছে। তামিম ওই মেয়েটার হাসির দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইলো। কি অপরূপ হাসি মেয়েটার.! এমন অপরূপ হাসি তামিম আগে কখনো দেখেনি। মেয়েটাও কি অপরূপ সুন্দরী.! তামিম যেন মেয়েটার হাসি থেকে চোখ ই ফেরাতে পারছে না। হঠাৎ মায়া তামিমকে তার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় দেখে ফেললো। মায়ার তাকানো দেখে তামিম সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল আর বাসার ভিতর কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে এমনটা বুঝিয়ে সে হাত নাড়িয়ে বিদায় নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। মায়া কিছু বুঝতে না পেরে তামিমের চলে যাওয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো।
.
.
Loading…….