হৃদয় সমর্পণ,পর্ব-৭,৮

0
2855

হৃদয় সমর্পণ,পর্ব-৭,৮
Writer: Mou Ahmed
পর্ব-৭

জ্বলন্ত সিগারেট এ উদয়ের পুড়ে যাওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।উদয় হালকা উহ আহ করছে ব্যাথায়।কিন্তু অনুকে বুঝতে দিচ্ছে না কিছুই।অনু বলে উদয় ব্যাথা পেয়েছো,, এভাবে হাত টা পোড়ালে ক্যানো?নিচে ফেলে দিলেই তো পারতে।উদয় বলে মন এত বেশী পুড়ছে হাতের এই পোড়া আমার একটুও অনুভব হচ্ছে না।অনুর দিকে তাকিয়ে বলে বাইরের পোড়ার গুরুত্ব মানুষ যতটা দেই অতটা যদি ভেতর পোড়ার জন্য গুরুত্ব দিতো তাহলে জ্বলা পোড়ার যন্ত্রণা কেউ সহ্য করতো না।অনু উদয়ের কথা বুঝেও উদয় কে বলে…

“ক্যানো মিথ্যা বলছো উদয়।তোমার হাতে তো ব্যাথা করছে।”

“মিথ্যা বলা তো তোমার থেকেই শিখলাম অনু।”

“আমার থেকে কিভাবে?”

“ভেবে দেখলে অনেক কিছুই বুঝবে।”

“একটু তো বলো”

“না খেয়ে দিব্বি সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলে দিলে যে তুমি রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এসছো।এই ডাহা মিথ্যা টা না বললে তো মা ঠিক ই খাবার দিয়ে যেতো।আমি তো খারাপ মানুষ আমার জন্য ক্যানো এত মিথ্যা বলতে হবে।মিথ্যা বলে আমাকে আরো ছোট করলে”

“তখন যা সিসুয়েশন তাই বলেছি।আমি চাই না মা বাবার কাছে কোনো কথা শোনো আমাকে নিয়ে”

আমাকে নিয়েও তুমি ভাবো অনু।খুব অবাক লাগলো। যায় হোক তোমাকে এখন খেতে হবে।

উদয় অনুকে বলে বসো আমি রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসি।বলেই উদয় রান্নাঘরে চলে গেলো খাবার আনতে।কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার আজ রান্নাঘরে কোনো খাবার নেই ফ্রিজ ও খালি।উদয় কপালে হাত চালাতে চালাতে উদয় বলে ওহ গড এখন আমি কি করবো কোথাও কোনো খাবার নেই।অনু আজ সকাল থেকে না খাওয়া।ওকে তো যেভাবেই হোক খাবার খাওয়াতে হবে।টেনশনে উদয় কি করবে বুঝতে পারছে না।এই মুহুর্তে কোনো উপায় নেই অনুকে খাওয়ানোর।একমাত্র রান্না ছাড়া কোনো অপশন নেই।উদয় বাধ্য হয়ে ঘরে এসে অনুকে জানায় রান্নাঘরে কোনো খাবার নেই।

অনু বলে খাবার লাগবে না তুমি কিছু একটা খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।

ড্যামেড আমার জন্য না তোমার জন্য খাবার খুজছি।এখন রান্না করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
অনু আমি তো কোনো রান্না জানিনা।তোমাকে কি খাওয়ায় বলোতো।সহজ কোনো রেসিপি বলো।

অনু বলে একটা রাত তো না খেলে কিছুই হবে না।

উদয় তাকিয়ে আছে অনুর পেটের দিকে।অনু উদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উদয়ের চোখ অনুর পেটের দিকে।অনু ভ্রু কুচকে উদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে কি হয়েছে।উদয় অনুর পেটের বেবিকে উদ্দেশ্য করে বলে তোমার খাওয়ার সাথে উনার খাওয়ার সম্পর্ক।তোমার না খেলে চলবে কিন্তু তোমার ভেতরে যে আছে সে তো নিতান্তই ছোট তার তো না খেলে চলবে না।অনু অবাক হয়ে যায়। উদয় তার বেবির জন্য চিন্তা করছে।অনু ভাবতেই পারে নি উদয় কখনো তার বেবিকে নিয়ে ভাববে।

উদয় বলে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিবো আইসক্রিম,ফুচকা,চটপটি,বার্গার কি খাবে। অনু বলে না না এগুলার কিছুই খাবো না।এসব দেখলে গা গোলায় আমার।আমার ইলিশ মাছ ভাজি আর পানতা খেতে ইচ্ছা করছে।উদয় ভ্রু উচু করে বলে এই রাতে পানতা কোথায় পাবো।তার জন্য তো ভাত রান্না করে নিম্ন ৩-৪ ঘন্টা ভাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।ওসব পরে দেখা যাবে।এইদিকে অনুর ক্ষুদা ও লেগেছে কি করবে। আবার পানতা ইলিশ খাওয়ার জন্য অস্হির লাগছে।উদয় অনুকে বলে আমার সাথে একটু রান্নাঘরে চলো।অনু বলে কেনো?উদয় বলে চলোই না আগে তারপর বলছি।অনু উদয়ের সাথে রান্নাঘরে গেলো।উদয় ফ্রিজ খুলে বলে আমি কিছুই রান্না পারি না কিভাবে রান্না করে আমায় হেল্প করো।আপাতত নুডুলস রান্নাকরে দিচ্ছি খেতে লাগো।অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উদয়ের দিকে।অনুর অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই উদয় খানিক টা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।

উদয় পানি গরম করে ডিম ভেঙে দিয়ে মরিচ,পেয়াজ,তেল দিয়ে নুডুলস ছেড়ে দিয়ে সুপ আকারে নুডুলস রান্না করে দিলো।অনু রান্নাঘরে একটা টুল নিয়ে বসে আছে।উদয় বলএ খেতে বিশ্রি হবে জানি তাও খেয়ে নাও কষ্ট করে।অনু উদয়ের দেওয়া সুপ খেতে খেতে বলে বাহ ইয়াম্মি অনেক টেস্টি হয়েছে।উদয় সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে এত জঘন্য খাবার খেয়ে পাম দিচ্ছে।বাধ্য হয়ে উদয়ের এই পাম হজম করতে হচ্ছে।

উদয় মাছ মাংশ বের করলে অনু বলে,,,উদয় মাছ মাংস আমার গা গোলায় এগুলা খেতে পারি না।আলু ভর্তা আর ভাত রান্না করো।উদয় বলে সিরিয়াসলি এখন আলুভর্তা খাবে।শরীর ঠিক হবে কিভাবে।তোমার পন্ডিত শ্বশুর মশাই সব দোষ আমার দিবে।উনার কাজ ই আমার দোষ ত্রুটি খুজে বের করা।তার বৌমার কোনো দোষ ই নেই তাইনা।বলবে আমি আলু ভর্তা খেতে জোর করেছি।এত দোষ আমি ঘাড়ে নিতে পারবো না।অনু উদয়ের কথা শুনে হাসছে।অনু উদয় কে বলে এই অবস্থায় যা খেতে মন চায় তাই খাওয়াতে হয়।উদয় গিজ গিজ করতে করতে বলে পেয়েছে এক অজুহাত।এই বাহানায় যা তা বলছে।

আচ্ছা কিভাবে চাল ধুতে হবে।

চাল নাও নিয়ে ভাল ভাবে পানিতে দিয়ে ধুয়ে নাও।

হুম তারপর।

প্রেসার কুকারে দাও দ্রুত হয়ে যাবে।আর পানি কম করে দাও।

অনুর কথা মতো প্রেসার কুকারে দিয়ে দশ মিনিটের মানে ভাত রান্না করে ভর্তা করে অনুকে খাওয়ালো উদয়।সাথে উদয় ও খেয়ে নিলো।গরম ভাত আর আলু ভর্তার মতো টেস্টি খাবার অনুর কাছে আর দ্বীতীয় টা নেই।

রুমে গিয়ে উদয় ফ্লোরে একটা চাদর নিয়ে সুয়ে পড়লো রুমের লাইট অফ করে।

অনু বিছানায় সুয়ে পড়লো।

হঠাত উদয় মাঝ রাতে দেখে তার কোলের মাঝে কিছু একটা।উদয় দেখলো তার কোলের মাঝে অনু সুয়ে আছে।উদয় তো রিতীমত অবাক হয়ে যায় অনু এখানে কিভাবে এলো।উদয় এর বুকে মাথা দিয়ে উদয় কে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে রইলো অনু।এমন একটা অবস্থা উদয় চাইলেও অনুকে নিজের থেকে সরাতে পারছে না।গোলাপি রঙের ডিম লাইটের আলোতে অনুর মুখ টা যেনো আরো সুন্দর লাগছে।অনু ঘুমোলে একদম ই যেনো একটা বাচ্চা লাগে অনুকে।

ভোর সকালে উদয় রোজ জগিং করে আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।উদয় ভোরে ঘুম ভাংতেই দেখে বুকের সাথে লেপ্ট্ব আছে অনু।চুল গুলো মুখের উপর পড়েছে।উদয় অনুর চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে অনুকে কোলে তুলে বিছানায় তুলে ঠিক ভাবে সুইয়ে দেই গায়ে একটা চাদর ও টেনে দেই।

অনুর ও ঘুম ভেঙে গিয়েছে অনু সকালে বাগানে গিয়েছে রিলাক্স আর মন ফ্রেশের জন্য।কারণ উদয়ের বাগানে হাজারো ফুলের গাছ আছে যা দেখলে মুগ্ধতা আসবেই।অনু বাগানে প্রবেশ করে দেখে উদয়ের ট্রাউজার পরা একটা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা সাদা রঙের,পায়ে জগিং এর জুতা।জগিং এর সাথে উদয়ের লম্বা চুল গুলো কপালে উঠছে নামছে মাঝে মাঝে উদয় কপালের চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। ঘেমে পুরা শরীর ভিজে গিয়েছে।কপাল,নাক, মুখ ঘামের ফোটায় ভিজে গিয়েছে।মাঝে মাঝে উদয় টাওয়াল দিয়ে ঘাম মুছছে।হঠাত উদয়ের খেয়াল হয় অনু বাগানে ফুলের সাথে গল্প করছে।অনু ফুল দেখতে দেখতে অন্যদিকে চলে যায়।এমন সময় উদয়ের ফোনে ফোন আসে।

“কিরে শালা কই তুই।”

“আমার বাপের ভিটে তেই আছি”

“ভিটেতে নাকি বিছানাতে আছিস”

“এখন বিছানাতে থাকি আমি কখনো।জীবনে শুনেছিস।”

“হ্যা এজন্য ই তো ফোন দিলাম।বিয়ের পর কত টুকু পরিবর্তন হয়েছিস।রুম থেকে বেরোচ্ছিস কিনা।।।।”

“ক্যানো বিয়ে করলে কি রুমে পুতে যেতে হয় নাকি।”

“না নতুন বিয়ে করলে তো সাত এক মাসের আগে রুম থেকে বেরোনোর কথা নয়।তা ফুল সজ্জা কেমন হচ্ছে ভাই।”

“ড্যামেড ইওর ফুলসজ্জা।”

“বুঝছি এখন তো কিছুই বলবা না।বউ পাশে নাকি।বউ নিশ্চয় ফোন রাখতে বলছে।”

“সব কিছুতে বউ টানা হচ্ছে কি জন্য শুনি।আমার বউ ওরকম নয়।”

“এক্ষুণি বউ এর উপর এত দরদ। ”

“বউ বলে কথা সাত জন্মের সম্পর্ক বুঝিস ই তো।”

“বউ কেমন দেখতে হয়েছে।”

“আমার বউ পরীর মতো সুন্দর। আর কি তখন থেকে বউ বউ করছিস।জগিং করছি ফোন রাখ। বলেই উদয় ফোন টা কেটে দিলো।”

সকাল আট টা বাজতেই উদয়ের মা আর সালেহা খালা এক প্লেট পানতা আর সাথে ডিমভর্তি ইলিশ ভাজি কয়েক পিছ হাজির করলো।অনু দেখেই খুব খুশি।এগুলো কোথায় পেলো জানতে চাইলে উদয়ের মা বলে কাল রাতেই উদয় মাছের দোকানে অর্ডার করে রেখেছিলো তারা দিয়ে গিয়েছে।অনু ভাবতেই পারেনি উদয় এমন সারপ্রাইজ দিবে।উদয়ের মা বলে অনু মা একটা কথা বলি তুই আস্তে আস্তে এটা জানার চেষ্টা কর উদয়ের এই রাগের কারণ টা কি?উদয়ের তোর প্রতি এখনো সমান ভালবাসা আছে শুধু মাত্র কোনো অজানা রাগে উদয় এমন করছে তুই এটা খুজে বের কর। কিসের এত ঘেন্না।অনু খেতে খেতে বলে আপনি ঠিক বলেছেন মা।আমাকে এটা খুজে বের করতেই হবে।

উদয়ের কাজিন হঠাত উদয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে।সে উদয় আর অনুর ব্যাপারে সব টা জানে।উদয় কে বলে…

অনুর প্রতি রাগ কমেছে।

রাগ, ঘৃণা কিছুই কমে নি কিন্ত ওর অসুস্থতা আমি সহ্য করতে পারি না।ও অসুস্থ থাকলে আমার নিজের ভেতরে এক ভীষণ যন্ত্রণা হয়।আমি অনুকে ভাল দেখতে চাই।

চলবে,,,

হৃদয় সমর্পন
পর্ব-৮
Writer: Mou Ahmed

বিয়ের দু’মাস কেটে গিয়েছে উদয় অনুর সম্পর্ক আজ ও ঠিক হয় নি।উদয়ের অপছন্দ আর ঘৃনা নিয়ে অনু পড়ে আছে উদয়ের বাড়িতে।বর্তমান অনুর বেষ্ট ফ্রেন্ড উদয়ের কাজিন ইফা।অনেক দিন হয়েছে উদয় দের বাড়িতে এসছে।ইফা কে পেয়ে অনু একজন সঙ্গী পেয়েছে।উদয় আর অনুর সব ঘটনা অনু ইফার সাথে শেয়ার করতো।ইফা অনুর কাছে জানতে চাই তাদের ভুল বোঝাবুঝি কি নিয়ে।অনু একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ইফা আমি নিজেও জানিনা।শুধু এটুকু জানি উদয় আমার কাছে কল দিয়ে কেঁদেছিলো আমি ওর কাঁন্না দেখে ওকে আমার মনের কথা জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার না বলা কথা আমি জানাতে পারিনি।উদয়ের খুব ইচ্ছা ছিলো আমার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনবে।কিন্তু ইদয় সেটা পারে নি।তার আগেই সব কিছু উলট পালট হয়ে গিয়েছে।ইফা অনুকে বলে আমার মনে হয় তোমার উদয় কে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত অনু।শুধহ শুধু এই অশান্তির জীবন কেনো ভোগ করছো।আর কেনোই বা পড়ে আছো।উদয়ের বাচ্চার জন্য কেনো এত কষ্ট করছো?

অনু একটাই কথা বলে তার একটাই কারণ আমি উদয় কে ভালবাসি।কোনদিন গেলেও আমি উদয় কে জানিয়ে যাবো যে অনুও তাকে ভালবাসতো।

হঠাত অনু সিঁড়ি থেকে পড়ে যায় গড়াতে গড়াতে নিচে গিয়ে পড়ে।সাথে সাথে মারাত্মক পেটে পেইন শুরু হয়।ইফা দ্রুত এসে অনুকে ধরে।ইফা অনুকে দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। অনুকে খুব কষ্টে উঠায় আর চেচিয়ে বাড়ির সবাই কে ডাকে।ইফার চেচামেচিতে উদয় এর মা বাবা দ্রুত এসে দেখে অনু ব্যাথায় ছটফট করছে।অনুকে সবাই ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেই আর অনুর কাছে জানতে চাই সে পড়ে গেলো কিভাবে?তখন অনু বলে জানিনা হঠাত পা পিছলে গিয়েছে।অনুর পা খানিক টা ফুলে মচকে গিয়েছে। অনু পা বাড়াতে পারছে না।

হঠাত অনুর মা বলে একি সিঁড়িতে এত তেল কেনো?অনু তো এই সিঁড়িতে পিছলে পড়ে গিয়েছে।ইফা বলে তাইতো সিঁড়িতে এত তেল কিভাবে এলো।সালেহা খালা ফেলে নিতো।উদয়ের মা বলে ও আজ কাজেই আসে নি।তাহলে তেল কিভাবে এসছে।ইফা দেখে তেলের ফটো গুলো উদয়ের রুমের দিকে গিয়েছে। ইফা উদয়ের আম্মুকে বলে দেখুন তো মামি তেলের ফোটা গুলো কোন দিক থেকে এসেছে আমার মনে হচ্ছে এটা উদয়েরর রুমের দিক থেকে এসেছে।উদয়ের মা আস্তে আস্তে গিয়ে দেখে উদয় মাথায় তেল লাগিয়ে ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। উদয়ের মা বলেন কি ব্যাপার তুমি আজ তেল লাগিয়েছো হঠাত।উদয় বলে মাথায় খুব পেইন হচ্ছিলো তাই।

মাথায় পেইন তো হবেই সারাদিন এসব হাবিজাবি চিন্তা করলে মাথায় পেইন হবে নাতো কি অন্য কিছু হবে।উদয়ের মা মনে করেছেন উদয়ের ই কাজ এটা।উদয় ইচ্ছা করে ফেলেছে তেল যাতে অনু পড়ে যায় আর বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়। উদয়ের মা বলে এখন তুমি খুশি তো তোমার মনের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে এতদিন মুখোশ পরে ভাল হওয়ার নাটক করে ছিলে।

উদয় রীতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছে সে কেন এটা চাইবে যে অনুর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাক। একটা সময় চেয়েছিল বাচ্চাটা না হোক এখনও উদয় অসন্তুষ্ট নয় কিন্তু এই মুহূর্তে সে চায় না যে অনুর বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে যাক।

উদয় অবাক হয়ে প্রশ্ন করে এগুলা কি বলছো। অনুর বাচ্চা নষ্ট এসবের মানে কি?

মানে কি আমাকে নতুন করে বোঝাতে হবে উদয়।মাথায় তেল লাগিয়ে সে তেল সিঁড়িতে ফেলে রেখেছো যাতে অনু সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তেলের উপর পা দিয়ে পড়ে যায় বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায় তাই না।তুমি কি ভেবেছো কেউ কিছু বুঝবে না।আজ সালেহা বাড়িতে আসে নি আর এদিক দিয়ে তেল নিয়ে কে যাবে?এ বাড়িতে যেখানে সেখানে তেল কে ফেলবে।এ বাড়িতে অনুর আলাদা কোনো শত্রু নেই তুমি ছাড়া।

উদয় ব্যস্ত হয়ে বলে কি বল মা অনু পড়ে গিয়েছে ও ঠিক আছে তো ওর কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তো। উদয়ের মা রাগান্বিত চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে ওর কি হয়েছে না হয়েছে সে বিষয়ে তোমাকে জানতে হবে না। আমি এখনি ওকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি সেটাই ভালো হবে।

উদয় মায়ের কথা পাত্তা না দিয়ে দ্রুত অনুর কাছে ছুটে আসে।অনু পেট ধরে ব্যাথায় ছটফট করছে।উদয় ব্যাস্ত হয়ে বলে অনু কি হয়েছে তোমার।খুব কষ্ট হচ্ছে।কিভাবে পড়লে।অনু বলে উদয় আমার পেটে এমনি তেই ব্যাথা করে প্রায় সময়।জানিনা কেনো?ইফা বলে উদয় সিঁড়িতে কি তুমি ই তেল টা ফেলেছো।উদয় বলে বিশ্বাস করো অনু সরি আমাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ তোমার কাছে নেই জানি তবুও বলবো আমি এ কাজ করি নি অনু। আর আমিতো জানি তুমি পড়ে গেলে তোমার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তোমার ক্ষতি হতে পারে এমন কাজ আমি কখনো করবো না।। আমি জানি আমার কথা বিশ্বাস করার মতো কোনো কারণ তোমার কাছে নেই কারণ আমি এর আগে অনেকবার তোমার বাচ্চা নিয়ে তোমাকে অনেক কিছু বলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো এখন আর আমি চাইনা যে তোমার বাচ্চাটার কিছু হোক। অনু কোনো কথা না বলে উদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা অনু বুঝতে পারছে উদয়ের কথার মাঝে কোনো ভুল নেই কোনো মিথ্যা নেই।অনু উদয় কে বলে আমি জানি উদয় এ কাজ তোমার নয়।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

অনুর মুখে বিশ্বাস কথাটা শুনে উদয় যেনো মানসিক তৃপ্তি পেলো।

কিন্তু উদয়ের মনে এ প্রশ্ন থেকেই গেলো এই তেল এখানে কিভাবে এলো।উদয় তো তেল নিয়ে সিঁড়িতে যায় নি।তেল টা কিভাবে এল।অনু উদয় কে বিশ্বাস করলেও বাড়ির কেউ বিশ্বাস করে নি।তাদের ধারণা এ কাজ উদয়ের ই।

পরের দিন সন্ধ্যায় ইফা অনুকে বলে উদয় বাগানে কাঁদছে অনু। ও হয়তো ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।উদয় আমাকে বলেছে ওর তোমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।যাও অনু বাগানে যাও।অনু বাগানে গিয়ে দেখে উদয় পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।অনু উদয় কে বলে উদয় তুমি কি সত্যি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো।আমি জানতাম একদিন না একদিন তোমার ভুল বুঝতে পারবে।এ বাচ্চা তোমার।আর আমিও তোমাকে ভালবাসি ভীষণ ভালবাসি।প্লিজ আমাকে দূরে সরিয়ে রেখো না।অনু উদয়ের ঘাড়ে হাত দিতেই অবাক হয়ে যায়।এটা উদয় নয় তিহান।অনু তিহান কে বলে একি তিহান ভাই আপনি এখানে?এই সন্ধ্যাবেলা আপনি এখানে কি করছেন।তোমাকে খুব মিস করছিলাম অনু।অনেক দিন দেখি না তোমাকে।ফোন টাও তো রিসিভ করো না।

দেখুন তিহান ভাই প্লিজ এখানে থেকে যান।উদয় দেখলে আমাকে ভুল বুঝবে।উদয় আমাকে আর সহ্য করতে পারবে না।এমনিতে উদয় আপনাকে আর আমাকে নিয়ে সন্দেহ করে।

এমন সময় পেছন থেকে উদয় হাতে ক্লাপ দিয়ে বলে অস্হির সিন অনু অসাধারণ। এটাই হলো আসল অনু আর আমার সাথে থাকে অভিনয় করা অনু।

উদয় তিহানের কলার ধরে কয়েক টা ঘুষি দিয়ে বলে তোর এখানে কি?কি চাস।তোর এই বাচ্চা চাস অনুকে নিয়ে বের হ আমার বাসা থেকে। ওই চরিত্রহীনা কে কি জন্য আমার বাসায় রেখেছিস।টাকার জন্য কত টাকা বল।কত টাকার হাসিলের উদ্দেশ্য এ কাজ করেছিস।কত টাকা হলে আমাকে মুক্তি দিবি এ যন্ত্রণা থেকে।

অনু কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উদয় বিশ্বাস করো আমি কিছুই করি নি।আমি এখানে তুমি ভেবে এসছি।আমি জানতাম যে এখানে তুমি আছো।তিহান ভাই কিভাবে এলো আমি জানিনা।

উদয় রেগে মেগে বলে চুপ একদম চুপ কোনো কথা বলবি না।বেরিয়ে যা তিহানের সাথে। তোকে কে বলেছে আমি এখানে ছিলাম।

ইফা আপু বলেছে।

একদম ই মিথ্যা বলবি না।এখন ইফার দোষ দেওয়া হচ্ছে।ইফা না থাকলে তো আজ তোর এই কুকির্তী আমি ধরতেই পারতাম না।

অনু অবাক হয়ে যায় ইফা নিজেই তো অনুকে এখানে পাঠিয়েছিলো।ইফা আবার উদয় কে অফিস থেকে আসতে বলেছে।তার মানে ইফা ইচ্ছা করে ঘটনা টা ঘটিয়েছে।

কেটে গেছে সাত দিন উদয় অনুর সাথে একটা কথা ও বলে না।অনুর সাথে যত প্রকার খারাপ ব্যাবহার আছে কিছুই করতে বাদ রাখে নি উদয়।

এভাবে প্রায় ১০ দিন কেটে গেলো।উদয় অফিস থেকে ফেরার সময় খেয়াল করে তিহান একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে বসা।উদয় অনুকে ভিডিও কল দিয়ে দেখে অনু বাড়িতেই আছে।তাহলে এই মেয়েটা কে?

উদয় গাড়ি থেকে নেমে একটু এগিয়ে যায়!

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here