হৃদয় সমর্পণ,পর্ব-৯,১০
Writer: Mou Ahmed
পর্ব-৯
তিহানের সাথে থাকা মেয়েটাকে দেখে চমকে যায় উদয়।তিহানের সাথের মেয়েটি তার ই কাজিন ইফা।আশ্চর্য লাগলো উদয়ের কাছে তিহান এর সাথে ইফা কিভাবে এলো।দুজনে খুব হাসাহাসি করছে তার মানে ইফা তিহান কে আগে থেকেই চিনে।দুজন কে দেখে বেশ ক্লোজ মনে হচ্ছে।উদয় যেনো মানসিক ভাবে একটা ধাক্কা খেলো।তাহলে সেদিন যে ইফা বললো সে তিহান কে চিনেনা।সেদিন ইফা কল দিয়ে উদয় কে বলেছিলো,,,
“উদয় দ্রুত বাসায় এসো।অনু একটা ছেলেকে বাগানে ফোন দিয়ে ডেকে এনেছে আর ফিস ফিস করে কথা বলছে।”
“হয়তো অনুর পরিচিত হবে।”
“আরে না উদয় পরিচিত হলে তো অনু আমাকে বলতোই।অনুর সাথে আমার এত ভাল রিলেশন অনু তো আমাকে বলতো তাইনা।”
“ওহ! তাহলে হয়তো অনুর কোনো প্রয়োজন তাই কাউকে ডেকেছে।কারণ ছাড়া তো অনু ডাকে নি।”
“উদয় ব্যাপার টা তুমি নরমালি নিচ্ছো।অনু ফোন করে ডেকে এনেছে ছেলেটাকে।”
“ইফা ইটস নরমাল ইস্যু। ”
“উদয় আমার না ডাউট লাগতেছে মনে হচ্ছে অন্য কোনো কিছু হবে।অনুর মেবি এক্স বয়ফ্রেন্ড।”
“ইফা অনুর কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না কোনদিন।আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে।বয়ফ্রেন্ড থাকলে আমি জানতাম ই।তাছাড়া অনু ও টাইপের মেয়ে না।”
“তাহলে অনুকে অত্যাচার করো কেনো?যে অনুর বাচ্চা আমার না।অনু অপবিত্র।তুমি এগুলা বলো বলেই তো আমার মনে হলো ছেলেটা সে কিনা।তাই তোমাকে জানালাম।বাকিটা তোমার ব্যাপার ভেবে দেখো”
“ছেলেটাকে দেখো তো তুমি চিনো কিনা।”
“না আমি চিনি না তবে একটা পিকচার তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
উদয় হোয়াটস এপ এ তিহানের পিকচার দেখে চমকে যায়।আর প্রেসেন্ট রেখে সাথে সাথে বাসায় চলে আসে নিজ চোখে দেখার জন্য।কেবল ই উদয়ের মন নরম হয়েছিলো যে অতীতে যেটা হয়েছে হয়েছে অনুর সাথে আর সে খারাপ ব্যাবহার করবে না।কিন্তু অনুর আবার ও বিশ্বাস রাখতে পারলো না।উদয় বাড়িতে এসে অনুর ফোন চেক করে দেখে সত্যি তিহান কে ফোন দেওয়া হয়েছিলো।
যদিও অনু অনেকবার বলেছিলো এই ফোন সে করে নি।আর তিহান কিভাবে এসছে অনু সেটা জানেও না।উদয় অনুকে বিশ্বাস করে নি।কিন্তু আজ তিহান আর ইফা কে এক সাথে দেখে অবাক হচ্ছে উদয়।ইফা তাহলে সেদিন মিথ্যা বলেছিলো।
উদয় গাড়িতে গিয়ে বসে কপালে হাত চালাতে লাগে।কোথাও কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে।এমন সময় ওখান দিয়ে অনু যাচ্ছিলো।অনুকে দেখে বেশ মন খারাপ লাগছে। উদয় অনুকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে অনুর কাছে যায়।অনু উদয়ের থেকে বেশ কিছু দূর এগিয়ে।হঠাত অনুর পায়ে কিছু একটা বেঁধে অনু পড়ে যেতে যায়।সাথে সাথে তিহান গিয়ে অনুকে ধরার চেষ্টা করলে অনু নিজেকে সামলে নিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে ডোন্ট টাস মি ভাইয়া।
“তিহান বলে অনু তোমার শরীর ঠিক নেই।আমি হেল্প করছি।”
“অনু আরো বেশী বিরক্তি নিয়ে বলে হেল্প কিসের হেল্প।আজ অবধি একটা হেল্প ও করেছেন আমাকে।আমাকে যদি একটা হেল্প ও করতেন তাহলে আজ আমাকে উদয়ের অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো না।”
“অনু আমায় ভুল বুঝছো।”
“লিসেন তিহান ভাই এই পৃথিবীর মানুষ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া বাইরের মানুষ কখনো আপন হয় না।আপনাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ভুল করেছি আমি।”
“দেখো অনু তুমি চলো বসবে মাথা গরম করো না প্লিজ।আমি তোমার খারাপ চাই না অনু।”
“দুই হাত জোড় করছি আমার আর ভালো করতে হবে না আপনাকে।আমার এত উপকার আর সহ্য হচ্ছে না।আপনি ক্যানো গেছিলেন উদয় দের বাড়িতে।আমি কি ডেকেছিলাম আপনাকে।বলুন ডেকেছিলাম কিনা।আবার কি আশ্চর্য ভাবে দেখি আমার নাম্বার থেকে আপনার নাম্বারে ফোন।কে দিয়েছিল ফোন আপনাকে?”
“অনু..কোথায় একটা গন্ডগোল হচ্ছে”
“আমার নাম ধরে ডেকে আমাকে আর কোনো ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করবেন না প্লিজ।উদয়ের সামনে কি নাটক টাই না করলেন আর কি বাজে ভাবে মিথ্যা বললেন আমি আপনাকে ডেকেছিলাম।”
“অনু আমি ভেবেছি কল টা তুমি দিয়েছিলে।”
“একদম ই মিথ্যা বলবেন না।আপনি যখন ওখানে পৌছে গিয়েছেন তার অনেক পরে আপনার নাম্বার ডায়াল করা।”
“অনু আমার মনে হয় কি উদয় এসব করছে।উদয় প্লান করে এসব করছে যাতে তোমাকে ওর জীবন থেকে বাদ দিতে পারে।উদয় চাই না অনু তুমি ওর সাথে থাকো।”
“আমি উদয় কে নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না।উদয় কেমন আমাকে চেনাতে হবে না।আমি সিয়ার থেকে সব টা শুনেছি।আপনাকে আমি ভাই এর মতো জানতাম আর আপনি কিনা আমাকে পছন্দ করতেন।উদয়ের সাথে চ্যালেঞ্জ করতেন।আমি উদয় কে ভালবাসি এটা জানা সত্ত্বেও।উদয় আমাকে ভালবাসে জেনেও এত নাটক কেনো করলেন।”
“উদয় তোমাকে ভালবাসলে উদয়ের বাচ্চা কেনো স্বীকার করছে না। উদয় কেনো তোমাকে ঘৃনা করে।পৃথিবীতে কোনো ছেলে আছে কাউকে ভালবাসলে তার বাচ্চাকে অস্বীকার করে।”
“সেটা আমার ই দূর্ভাগ্য।”
অনু রাগান্বিত ভাবে তিহানের কাছ থেকে চলে যায়।সামনে অনুর মা বাবা দাঁড়িয়ে আছে।অনুর হয়তো কোনো কাজ আছে এখানে তাই মা বাবার সাথেই এসছে।
উদয়ের হাত পা কাঁপছে অনু আর তিহানের কথা শুনে।আজ উদয় এটুকু সিওর তিহানের সাথে অনুর কোনো রিলেশন নেই।অনু যে তিহান কে ভালবাসে না বা বাচ্চাটা ও তিহানের না।তাহলে কি বাচ্চাটা সত্যি উদয়ের।কিন্তু উদয়ের কিছুই মনে নেই। যাকে কখনো স্পর্শ করে নি তার সাথে কিভাবে কি হয়।উদয়ের মাথায় এটাই ঢুকছে না।
বেশ অনেক গুলা দিন আগের কথা উদয় আর অনুর তখন চোখে চোখে কথা হতো।অনু উদয় কে তখন ও মুখ ফুটে বলে নি সে উদয় কে ভালবাসে।উদয় তখন মনে করতো অনু দিন দিন তিহানের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে যাচ্ছে।অনু উদয় কে বলেছিলো আমি একদিন তোমাকে ভালবাসার সারপ্রাইজ দিবো।উদয় সেই প্রারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও অনুর সেই সারপ্রাইজ আর পাই নি।যেদিন অনু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।সারপ্রাইজ হিসাবে দেখেছিলো তিহান আর অনুর ঘনিষ্টতা।
বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে ভাবতে উদয় দেখে একটা ছেলে বেলি ফুলের মালা বিক্রি করছে। উদয় একটা মালা নিয়ে ছেলেটি দাম বলার আগেই এক হাজার টাকা দিলো।ছেলেটি বলে ভাংতি দেন। উদয় বলে এটা তোমার নিয়ে যাও।ছেলেটি বলে সামান্য একটা মালা আপনি এত টাকা দিয়ে কিনছেন কেনো স্যার।উদয় বলে এটা সামান্য না তার হাসিটা অসামান্য।সে খুব পছন্দ করে এই মালা।এই মালা দেখলেই তার মুখে অন্য রকম একটা হাসি ফুটে ওঠে।ছেলেটি আরেক টা মালা দিয়ে এই মালা টা আপনার সেই তাকে দিবেন স্যার।তাহলে সে অনেক খুশি হবে।উদয় ছেলেটিকে বলে ওইযে ব্লু কালারের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে উনাকে গিয়ে মালাটা দিয়ে এসো।
ছেলেটি অনুর কাছে গিয়ে বলে দিদি মালা নিবেন।দেখুন একদম তাজা ফুলের মালা।অনু ছেলেটিকে বলে আমার মন মরে গিয়েছে এই মালা এখান আর আমার হাতে শোভা পায় না।ছেলেটি বলে এই মালা আপনার হাতে শোভা পাই বলেই আপনার জন্য এনেছি।অনু ছেলেটির হাতে একশ টাকা দিয়ে বলে এটা নাও আর আমার মালা লাগবে না।ছেলেটি অনুর হাতে মালা টা দিয়ে বলে এটা রাখুন প্রিয় জনের দেওয়া জিনিস ফিরিয়ে দিতে নেই।মালা টা দিয়ে ছেলে টি চলে যায়। অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে আর মনে মনে বলে আমার যে কোনো প্রিয়জন নেই।সব কিছু হারিয়ে গিয়েছে জীবন থেকে।সে কোনদিন একটি মালা দিয়ে আমায় বলবে না শুধুমাত্র তোমার খুশির জন্য এনেছি।সে কখনো ছোট ছোট খুশির কথা ভাববে না।অনুর বাবা মা বিদায় নিতেই অনু বাড়ির দিকে রওনা হতেই দেখে উদয় তার সামনে।উদয় কে দেখেই ফুলের মালাটা মাটিতে ফেলে দেই অনু।উদয় অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে হাজারো অভিযোগ আর অভিমানে ভরা অনুর মুখ।উদয় কিছু না বলে ফুলের মালাটা মাটি থেকে তুলে বলে প্রিয় জিনিস গুলা এভাবে অবহেলা করে ছুড়ে ফেললে তাদের বড্ড কষ্ট হয় অনু।
“ওর তো প্রাণ নেই উদয় তাই কষ্ট বুঝবে না।যার প্রাণ আছে সে বুঝে এই অবহেলার কষ্ট।”
“প্রাণ নেই তাই ওরা বলতে পারে না।ঠিক আমার মতো প্রাণ থাকতেও কষ্টের কথা বলতে পারি না।”
“অনু উদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে অবাক লাগলো কথা গুলো শুনতে।বলেই সামনে হাঁটা দিলো।উদয় অনুর হাত ধরে বলে চলো গাড়িতে বসবে।একসাথে বাড়িতে যাবো।”
“সরি মিষ্টার উদয় আমি চাইনা আমার মতো নিকৃষ্ট কাউকে আপনার পাশে বসিয়ে অস্বস্তুিতে পড়েন।আমি আপনার আর বিরক্তির কারণ হতে চাই না।”
“প্লিজ অনু এই খারাপ মানুষ টার সাথে না হয় আজকে চলো”
“খারাপ তো তুমি না উদয়।তুমি তো পবিত্র আর অপবিত্র আমি”
তোমার পায়ে ধরছি প্লিজ অনু।উদয়ের চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।উদয় চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু অনুর চোখে স্পষ্ট উদয়ের চোখের পানি।অনু বুঝতে পেরে উদয় কে বলে তোমার চোখে কিছু গিয়েছে দেখো।বলেই একটা রিক্সা ডেকে চলে যায়।
উদয় অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনুর রিক্সার দিকে,,,
চলবে,,,,
হৃদয় সমর্পণ
১০
writerঃmou ahmed
প্রচন্ড নেশা করে গায়ের কোর্ট খুলে হাতে করে বাসায় ফিরেছে উদয়।গলার টাই টা ঢিলে ঢালা।একজন পেশাধারী মাতাল এর মতো বাসায় ফিরেছে উদয়।বাড়িতে ঢুকতেই বারান্দার সাইডে রাখা বড় মাটির ফুলদানিটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।চিৎকার চেচামেচি করে অনু অনু করে ডাকছে।অনু দো’তলা থেকে দেখছে উদয় এর এই ভয়ানক কান্ড।উদয় সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিচ্ছে।রাগান্বিত কন্ঠে ডাকছে অনু এই মুহুর্তে আমার সামনে না এলে আমি সব লন্ড ভন্ড করে ফেলবো।এমন কিছু করবো অনু কল্পনা করতে পারবে না তুমি।এই মুহুর্তে আমি তোমাকে চাই মানে চাই।সালেহা খালা অনুর হাত ধরে রেখেছে আর বলছে আল্লাহর দোহায় লাগে অনু মা তুমি যেও না।অনু সালেহা খালা কে বলে খালা উদয় আমাকে আজ আবার মার ধোর করবে ও নেশা করলে প্রচুর মারে।এখন আমার এ অবস্থায় যদি আমার গায়ে হাত তোলে আমার বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যাবে খালা।আমি আর এগুলো মেনে নিবো না।উদয় কে আর আমি প্রমাণ দিতে যাবো না যে এ বাচ্চা তার।একটা মানুষের বোঝাবো উচিত অন্যর বাচ্চার জন্য কেউ মার খেয়ে পড়ে থাকে না।আমি ক্লান্ত খালা।আমি এখান থেকে চলে যাবো।তবে আজ ই আমার শেষ মার খাওয়া উদয় এর হাতে।
সালেহা খালা বলে একদম চিন্তা করো না মা।তুমি কোনো একটা ঘরে লুকিয়ে থাকো।ভেতর থেকে একদম দরজা লাগিয়ে দিবে উদয় বাবা যেনো কিছুতেই খুজে না পায়।
খালা ও নিচ তলার সব গুলা রুম রান্নাঘর খুজছে দেখছো না কি করছে।নিচে কোথাও আমি নেই তার মানে উদয় বুঝে গিয়েছে আমি উপরেই আছি।আমি দরজা লাগিয়ে রাখলে ও দরজা ভেঙ্গে ফেলবে।
উদয় অনুকে ডাকাডাকি করেই যাচ্ছে।উদয় এবার নিচ তলা থেকে দো’তলায় রওনা হয়।
উদয়ের বাবা বলে দাঁড়াও আজ যদি অনু মায়ের গায়ে হাত তোলো তাহলে এ বাড়িতে অনেক কিছু হয়ে যাবে।রোজ মাতলামো করা শুরু করেছো।বেরিয়ে যাও এক্ষুনি আমার বাসা থেকে।তোমার জন্য সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবো না দেখছি।মানুষ আমাকে কি বলবে ছিঃ।যে আমার ছেলে নিয়মিত নেশা করে বৌ কে মারে।
উদয় কোনো কথার উত্তর না দিয়ে বলে অনুকে ডেকে দাও বাবা।
উদয়ের মা বলে বাড়াবাড়ির লিমিট আছে উদয়।তুমি সব কিছুর সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছো।আমার লজ্জা লাগছে তোমার মতো সন্তানের জন্ম দিয়েছি বলে।আজকের পর আর মা বলে ডাকবে না আমায়।বেরিয়ে যাও এ বাড়ি থেকে।অনুর গায়ে হাত দিলে আজ আমাদের ও হাত উঠবে।
উদয় কারো কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা দো’তলায় চলে যায়।উদয়ের মা বাবা উদয়ের পিছ পিছ আছে।তারা উদয় কে বিভিন্ন ভাবে খারাপ কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু উদয় পাত্তা দিচ্ছে না কোনো কিছুতে।।।।
অনু অনু করে ডেকে যাচ্ছে উদয় কিন্তু অনু কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না।অনু ভয়ে চুপসে আছে।ভয়ে বুক কাঁপছে অনুর। কারণ উদয়ের মার খুব সাংঘাতিক মার।দো’তলার সব রুম তন্ন তন্ন কর খুজে যাচ্ছে কিন্তু কোথাও নেই।উদয় খেয়াল করে সালেহা খালার পিছে লুকিয়ে আছে অনু।উদয় এক পা এক পা করে অনুর দিকে এগোতে থাকে।
সালেহা খালা সহ উদয়ের মা বাবা উদয় কে আটকানোর চেষ্টা করছে উদয় ওর নিজের মতো করে এগোচ্ছে।অনু চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে আমি মেনে নিচ্ছি এ বাচ্চা আমার না তবুও আমার গায়ে হাত দিও না দোহাই তোমার।আমার বাবা মায়ের হাতে আমাকে তুলে দাও প্লিজ।আমি আর কোনদিন আসবো না তোমার জীবনে।
উদয় সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনুকে হ্যাচকা টান দিয়ে এনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
সালেহা খালা উদয়ের মা বাবা সবাই অবাক হয়ে যায় তারা কি ভেবেছিলো আর কি হলো।নেশাক্ত অবস্থায় উদয়ের খেয়াল নেই তার মা বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
উদয় অনুকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলে আজ আমার সাথে গাড়িতে আসলে না ক্যানো? আমার খুব ইচ্ছা করছিলো তুমি আমার পাশে এসে বসবে।আমার তোমার সঙ্গ পেতে মনে চাচ্ছিলো।অনু আমার কেমন পাগল পাগল লাগছে তুমি ছাড়া।আমি এত খারাপ কিভাবে হয়ে গেলাম অনু।দেখো অনু এরা সবাই আমাকে কত খারাপ ভাবে।আমি নাকি তোমাকে মারবো।আমি কি সত্যি তোমার গায়ে হাত তুলতে পারি।অনু এরা আমাকে তোমার কাছে আসতে দিতে চাইছিলো না।আমার যে তোমাকে দেখতে চাওয়ার তীব্র তৃষ্ণা পেয়েছিলো।অনু আই লাভ ইউ অনু।আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসি।আমার হার্টবিট এর স্পন্দন শোনো অনু।এইখানে তোমার জন্য কত যন্ত্রণা।অনু এই খারাপ হয়ে ছেলেটা কে আগের উদয় তে পরিণত করো না হয় আমাকে মেরে ফেলো।আমার হৃদয় অনেক আগেই তোমাতে সমর্পণ করেছি।
অনু অবাক হয়ে যায় উদয়ের এমন কথা শুনে।উদয়ের বুকে দীর্ঘ ক্লান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে অনু।দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরে যাচ্ছে।এ যেনো ভীষণ ক্লান্তির পরে স্বস্তি।
উদয় অনুর পেটে হাত দিয়ে বলে এই বেবি তুই কি সত্যি আমার।তুই যদি সত্যি আমার হস তাহলে তোর মাম্মা কে কেনো বলিস না পাপ্পার কষ্ট হয় পাপ্পা সেটা বোঝাতে পারে না।তোর মাম্মাকে বল পাপ্পার কষ্ট দূর করে দিতে। পাপ্পার মনের মাঝে অনেক কষ্ট।তুই আর তোর মাম্মা আমাকে খুব ঘৃণা করিস তাইনা।আমি তোদের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না।আমি তোর মাম্মাকে কখনো বুঝতে চেষ্টা করিনি।তোর মাম্মা কেনো আমাকে বোঝাতে পারে না, কেনো আমার সন্দেহ দূর করতে পারে না।আই লাভ ইওর মাম্মা।বলেই উদয় ঘুমিয়ে যায় অনুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়।
অনু তাকিয়ে দেখে উদয়ের মা বাবা সালেহা খালা তাকিয়ে আছে সবাই যেনো আজ হতবাক।অনু উদয়ের বাবা কে বলে বাবা উদয় কে একটু ধরূণ। উদয়ের বাবা উদয় কে রুমে সুইয়ে দিলো।কেউ কিছু না বলে যে যার জায়গা চলে গেলো।
অনু উদয়ের কপালে হাত দিয়ে উদয়ের পাশেই বসে আছে।এমন সময় ইফা অনুর রুমে প্রবেশ করে।ইফা যেনো খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে উদয় কে দেখে।ইফা অনুকে বলে কি হয়েছে উদয়ের ও তো এত সকালে ঘুমোয় না।উদয়ের চোখে মুখে ইফা হাত দিয়ে দেখতে গেলে অনু ইফার হাত টা এক ঝটকা মেরে সরিয়ে দেই।
ইফা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।।।।
অনু বলে কারো রুমে প্রবেশ করলে তার অনুমতি নিতে হয় এতটুকু ভদ্রতা কি তোমার নেই।বিশেষ করে আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ আছি সেখানে না বলে অসভ্যর মতো প্রবেশ করলে।প্রাইভেট প্লেসে এভাবে কেউ আসে।
অনু এভাবে কথা বলছো কেনো?
আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে সেটাই বলেছি।আর একটা কথা ইফা অনু কখনোই ভেজা বেড়াল ছিলো না প্রতিবাদী মেয়ে ছিলো।মাঝ খানে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা আমাকে নিশ্চুপ জগতে নিয়ে গেছিলো।কিন্তু আমার সন্তান আমাকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে তার মা কোনো ভুল করে নি তাই কারো অয়্যায় আবদারে আর চুপ করে থাকবে না।
অনু তুমি কি আমার উপরে রাগ করেছো?
দেখো ইফা তুমি আমার কাছে খুব বেশী ইমপরটেন্ট কেউ না যে তাই তোমার উপর রাগ করতে হবে।মানুষ যাকে ভালবাসে তার উপর রাগ দেখাই যেমন উদয়।উদয় আমাকে ভালবাসে তাই রাগ দেখাই।আমার বেবি আমাকে বুঝিয়েছে ওদের পাপ্পা ওদের মাম্মা কে প্রচন্ড ভালবাসে বলে এ রাগ।
উদয় তোমাকে ভালবাসে অনু?
হ্যা ভালবাসে সেটা উদয় আজ নিজ মুখে বলেছে।তুমি এখন আসতে পারো ইফা।তোমার এখানে থাকাটা আমি পছন্দ করছি না।
কিন্তু কেনো অনু?
আমি থাকতে আমার স্বামির গায়ে হাত দিয়ে দেখার তুমি কে?আমার সামনে তুমু ওকে স্পর্শ করার সাহস কিভাবে পাও।
তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছো অনু।আমি কিন্তু এতদিন তোমার পাশে থেকে সাপোর্ট করেছি।
তুমি আমাকে কতটা সাপোর্ট করেছো সেটা আলাদা করে না বললেও হবে।তিহান কে আমার ফোন থেকে ফোন দিয়ে আবার উদয় কে ডেকে এনে উদয় এর সামনে আমাকে খারাপ প্রামণিত করে কি লাভ টা হয়েছে শুনি।উদয় আমাকে ভুল বুঝছে কষ্ট দিয়েছে এটাই তো চেয়েছিলে কিন্তু সত্য দিনের আলোর মতো ইফা।একদিন তা প্রামাণিত হয় ই।
এমন সময় উদয় অনু অনু করে ডাকতে থাকে।
অনু ইফার দিকে তাকিয়ে বলে প্লিজ গো ইফা।আমাদের একটু আলাদা টাইমের প্রয়োজন।
ইফা রাগ আর অপমানে বাইরে বেরিয়ে আসে।অনু আসলে জানে না যে ইফা উদয় কে ভালবাসে।এ বিষয় টা উদয় জানলেও কখনো সিরিয়াসলি নেই নি।
উদয় চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে নেশা নেশা কন্ঠে অনুর হাত টেনে ধরে উদয়ের পাশে সুইয়ে দেই।উদয় অনুর চোখে মুখে বেশ কত গুলো চুমু দিতে থাকে।উদয় অনুকে বুকের সাথে নিয়ে সারারাত নেশার ঘোরে প্রলাপ বকতে বকতে ঘুমিয়ে যায়।আর অনু উদয়ের বলা আর করা সব কাজ গুলো ফোনে ভিডিও করে রাখে।
চলবে,,