হৃদয় সমর্পন,১৪ এবং শেষ
Writer: Mou Ahmed
আট মাসের গর্ভবতি অনু।উদয় চব্বিশঘন্টা অনুর খেয়াল রাখছে।অনুকে একটা কুটো ও নাড়তে দেই না।সকালে অনুকে খাইয়ে উদয় চেম্বারে যায় আবার সারাদিন ফোন করে অনুর খোজ খবর রাখে।উদয় আর অনুর মাঝের সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে।উদয় আর অনু এখন অনেক ভাল আছে।হঠাত অনুর গরুর ভুড়ি আর রুটি খেতে মনে চেয়েছে।এমন একটা খাবার হুট করে কাকে বলবে। বললেও তো পাওয়া যাবে না।উদয় অনুকে ফোন দিয়েছে অনুর কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না কিনা তাহলে উদয় নিয়ে আসবে।কিন্তু অনু শুধু মুখ কুচকাচ্ছে।উদয় কে বলতেই পারছে না।এমন সময় সালেহা খালা উদয় কে পাশ থেকে বলে উদয় বাবা অনু মায়ের তো গরুর ভুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।উদয় সব গুলো রেস্টুরেন্টে ফোন দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে রান্না করা ভুড়ি পেয়ে গেলো।উদয় রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার সময় অনুর জন্য বেশ কয়েক টা শাড়ি ও কিনলো সাথে কাচের চুড়ি ও কিনলো। কারণ আজ অনুর জন্মদিন।উদয় অনুকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।উদয় হঠাত খেয়াল করে তিহান কে পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।উদয় একটা পরিচিত লোকের থেকে জানতে পারে একটা মেয়ের সাথে ভালবাসার অভিনয় করে তাকে রেপ করে এতদিন লুকিয়ে ছিলো তিহান পুলিশ আজ তাকে খুজে পেয়েছে।উদয় যেনো মারাত্মক একটা স্বস্তি পেলো। অপরাধ করে কেউ কোনদিন পালিয়ে ভাল থাকতে পারে না।ইফা নিজেই অনুতপ্ত আর তিহানের বিচার আইন করবে।
উদয় বাসায় ফিরেই অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে কয়েক টা চুমু দিয়ে বলে শুভ জন্মদিন কলিজা।অনু অবাক হয়ে যায় উদয় এত ঝামেলার মাঝেও এটা মনে রেখেছে।অনু উদয় কে জড়িয়ে ধরে বলে আই লাভ ইউ টু কলিজা।ভীষণ মিস করছিলাম তোমাকে।উদয় অনুকে বলে কয়দিন বা বাঁচবো বেশি টাকা দিয়ে আর কি করবো ডিউটি কমিয়ে দিয়ে তোমাকে টাইম দিবো।অনেক টাকা জমিয়ে রেখে মারা গিয়ে লাভ কি?তার থেকে তোমাকে সময় দিবো সেটাই ভাল হবে তাইনা কলিজা।।
অনু উদয়ের হাত ধরে বলে উদয় অনেক টা ভুল বোঝাবুঝির পরে আমরা এক হয়েছি বাকিটা জীবন এভাবেই তোমার হাত ধরেই কাটিয়ে দিতে চাই।উদয় অনুর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলে অনু আমি অনেক ভাগ্যবান আমার সব দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে এই অধম কে তোমার জীবনে জায়গা দিয়েছো।তোমাকে পেয়েছি আমি অনেক ভাগ্যবান তাই।সারাটা জীবন এভাবেই পাশে থেকো।অনুর পেটে একটা চুমু দিয়ে বলে আমার বেবি কে আমার কোলে তুলে দাও অনু।একটা মানুষের জীবন অপূর্ণ বেবি ছাড়া।তুমি আমার কাছে আল্লাহর দেওয়া বেষ্ট গিফট আর তুমি বেষ্ট বলেই তোমার মতোই বেষ্ট গিফট আমাকে দিতে চলেছো।আমার জীবনের সব টুকু সুখ দিয়ে আমি তোমাদের সুখি রাখবো অনু।আমি তোমার জন্য ছোট্ট একটা ড্রিম হাউজ বানাবো অনু।যেখানে তুমি আমি আর আমার ফিউচার থাকবে।অনু উদয়ের হাত ধরে বলে আমার আর কিছুই লাগবে না এই তুমিটা থাকলেই হবে।
উদয় রাত বারোটা বাজতেই ইয়া বড় একটা কেক হাজির করলো।নিজের ফ্যামিলি সাথে নিয়ে অনুর জন্মদিন সেলিব্রেট করলো।
পরের দিন উদয় নিজ হাতে অনুকে একটা লাল শাড়ি পরিয়ে দিলো বাঙালি মতে।হঠাত অনুর সাজতে মন চেয়েছে।অনুর ইচ্ছা পূরণ করতেই উদয় অনুকে নিনের মনের মতো করে সাজিয়ে দিলো।
অনুর লিভার পেইন এর এখনো দেরি আছে মাত্র সাড়ে আট মাস চলছে।উদয় সেদিন হসপিটালে ইমারজেন্সি মিটিং এ ছিলো।অনুর হঠাত প্রচন্ড পেটে পেইন শুরু হয়েছে।অনু ব্যাথায় ছটফট করছে।উদয় কে ফোন দিয়ে জানাতেই উদয় ভয় লেয়ে যায় এত দ্রুত কিভাবে সম্ভব এখনো তো ডেট হয় নি।উদয় গাইনি ডাক্তার কে বিষয় টা জানালে গাইনি ডাক্তার বলে মিসক্যারেজ এর ভয় আছে।এমন টাইম এ খিচুনি হয়ে মা বাচ্চা উভয় ই মারা যায়।উদয় কথাটা শুনে মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়।বাড়িতে দ্রুত এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিলো।অনুকে হসপিটালে আনা হলো দ্রুত।অনু ব্যাথায় ছটফট করছে আর বলছে উদয় আমি বোধহয় বাঁচবো না।আমার বেবিকে তুমি দেখে রেখো।উদয় অনুর হাত ধরে বলে কিছুই হবে না তোমার।তোমার বেবি আর তুমি দুজন ই সুস্থ থাকবে। ভয় পেও না অনু।
টেনশনে উদয়ের প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে।ডাক্তার কে উদয় বলেই দিয়েছে যেভাবেই হোক মা বাচ্চা দুজন কেই বাঁচাতে হবে।এই বাচ্চার জন্যই অনু অনেক কষ্ট করেছে।এই বাচ্চার কিছু হলে অনুকে বাঁচানো যাবে না।ডাক্তার উদয় কে বলে অনুকে এক্ষুণি অপারেশন করতে হবে।তাহলে হয়তো মা বাবা দুজন কেই বাঁচানো যাবে।উদয় এর অনুমতিতে অনুকে ওটি তে নেওয়া হলো।
উদয় অনুর জন্য বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে মানত করলো।ফ্যামিলির সবাই টেনশন করছে কি হবে না হবে এটা ভেবে।ইফা ও হসপিটালে এসছে। ওটি শেষ হলে ডাক্তার গুড নিউজ দিলো অনু সুস্থ আছে জমজ দুইটা ছেলে হয়েছে।উদয় যেনো খুশিতে পাগল হওয়ার উপক্রম।অনুর কেবিনে ঢুকেই অনুর গালে চোখে চুমু দিয়ে ছেলেদের কোলে তুলে নিলো।অনুর হাত ধরে বলে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তুমি ঠিক আছো তাই।ইফা অনুর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে নেই।অনুও ইফা কে ক্ষমা করে দিলো।
অনুর আর তার দুই ছেলেকে বাড়িতে আনা হলো।অনুর মা বাবাও এসে অনুর বাড়িতেই উঠেছে কারণ দুইটা বাচ্চা সামলাতে অনু আর উদয় দুজনের মা বাবাই হিম সিম খেয়ে যায়।অনু আর উদয়ের মা বাবা দু’পক্ষই ভীষণ খুশি।তাদের নাতি নিয়েই তাদের দিন কেটে যায়।
বাচ্চাদের বয়স দেড় বছর হতেই মহা অশান্তি শুরু হয়।বাচ্চা দুইটাই হাঁটা শিখেছে।দুইটাই ভারী দুষ্টু হয়েছে।উদয়ের ফোন নিয়ে একবার পানিতে ভেজাচ্ছে, ইচ্ছা করেই দুজনে বিছানায় হিসু করছে।রিমুট ভেঙে ফেলছে।রুমের জিনিস পত্র সব এলোমেলো করে রাখছে।অনুকে বাচ্চারা অতিষ্ট করে তুলছে।
রাত বারোটার আগে একটাও ঘুমোইনা আবার ভোর চার টায় উঠে যায়।
অনু বাচ্চাদের উদয়ের কাছে রেখে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ইদানিং অনু রোজ এই কাজ করছে।বাচ্চাদের বকলে উদয় আবার রাগ করে তাই অনু উদয়ের কাছেই বাচ্চাদের রেখে যায়।অনেক দিন হয়েছে দুজনে একটু আলাদা সময় কাটাতে পারে না।অনু রাত এগারোটার দিকে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে।উদয় বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে পাশের রুমে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।অনু বলে এই তুমি যাও তো।সারাদিন তোমার বাচ্চারা আমাকে ঘুমোতে দেই না।ওদের পিছে ঘুরতে ঘুরতে আমি ক্লান্ত এখন ঘুমোবো উদয় আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উহু আজ বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো।ওদের পাশে আজ সালেহা খালাকে রেখে এসেছি।অনু ঘুম ঘুম চোখে বলে উদয় ঘুমোতে দাও না।উদয় অনুর গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে বলে একটু ভালবাসতে দাও না।দুইটা ছেলের বাবা হয়েছি বলে কি আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি বউ কে ভালবাসতে পারবো না।এই এক বছরে যা গ্যাপ গিয়েছে সব টা উসুল করে নিবো।অনু বুঝতে পেরেছে তার উদয় আজ অনেক রোমান্টিক মুডে আছে তাকে কোনো ভাবেই আটকানো যাবে না।বাধ্য হয়েই বরের কাছে ধরা দিতে হলো।
উদয় অনুকে আদর করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।পরের দিন খুব ভোরে উদয় তাকিয়ে দেখে অনু তার কোলের মাঝে আর দুই বাচ্চা তাদের কাছে এসে হাতে তালি দিচ্ছে আর হাসছে।অনু উদয় কে ঝটকা মেরে ফেলে দিয়ে বলে সরো ছেলেরা বড় হচ্ছে দুষ্টুমি কমিয়ে দাও।
ছেলে দুইটা সত্যি দুষ্টু হয়েছে উদয় অনুকে একটা চুমু দিলেই দাদু আর নানু কে বলে দেই সাথে সাথে।
এই বাচ্চা দুটোই তাদের ফ্যামিলির হাসি আনন্দের একমাত্র কারণ।আসলেই বাচ্চা ছাড়া একটা ফ্যামিলি সম্পূর্ণ অপূর্ণ থাকে।সব অপূর্ণতা বাচ্চারা পূর্ণ করে দেই।
উদয় অফিস থেকে আসলে অনুর জন্য চকলেট সাথে বাচ্চাদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে।উদয়ের কাছে অনু ও একটা বাচ্চা।
এই দুষ্টু দুইটা বাচ্চার জন্য উদয়ের ফ্যামিলি আরো বেশী জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
উদয় অনুর ভালবাসা পূর্ণতা পেয়েছে তাদের দুই সন্তানের জন্য।
সমাপ্ত।