হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৬
লেখকঃ- Tamim
–আজ তোর শিলা খালার মেয়ে নীলা আমাদের বাসায় আসবে। ওকে দুপুর ১২ টায় বাস স্টেশন থেকে নিয়ে আসিস তো।
সকালবেলা তামিম যখন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল ঠিক তখনই তামিমের আম্মু তার রুমে এসে কথাটা বললেন। তামিম তার আম্মুর কথা শুনে আয়না থেকে মুখ সরিয়ে তার আম্মুর দিকে তাকাল আর বললো…
তামিমঃ শিলা খালার মেয়ে আমাদের এইখানে আসছে কেন আর ওকে আমিই বা নিয়ে আসবো কেন.? এতো ছোট একটা মেয়েকে খালা একাই পাঠিয়ে দিয়েছে নাকি.? ওর সাথে কেউ আসেনি.?
তামিমের আম্মুঃ ওর পরীক্ষা শেষ তাই আমাদের এইখানে কিছুদিনের জন্য ঘুরতে আসছে। আর ছোট মেয়ে বলছিস কাকে.? নীলা এইবার ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। ওর আব্বু অফিস নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকায় ওকে একাই পাঠিয়ে দিয়েছেন আর বলেছেন তুই যেন ওকে বাস স্টেশন থেকে নিয়ে আসিস।
তামিমঃ কিন্তু আমি ওকে চিনব কিভাবে.? সেই ছোটবেলায় খালার বাসায় বেড়াতে গিয়ে ওকে দেখেছিলাম। এখন তো ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে তাহলে তো মিলিরও বড়, ওর চেহারারও নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে অনেক।
তামিমের আম্মুঃ নীলার ফোনে তার আম্মু তোর একটা ছবি দিয়েছে যাতে নীলা তোকে দেখে চিনতে পারে। তুই শুধু ১২ টার সময় বাস স্টেশনে গিয়ে বসে থাকবি, নীলা তোকে দেখলেই তোর কাছে চলে আসবে।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে ভার্সিটিতে গেলাম বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।
ভার্সিটিতে এসে তামিম ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস করতে করতে কখন যে ১২ টা বেজে যায় সেদিকে তামিমের কোনো খেয়ালই নেই। হঠাৎ ফোনে একটা কল আসাতে তামিম দেখল ১২ টা বেজে গেছে। একটা অচেনা নাম্বার থেকে কে যেন কলটা দিয়েছে। তামিম কিছু না ভেবে কলটা রিছিভ করলো।
–হ্যালো কই আপনি.? (একটা মেয়েলি কণ্ঠে)
তামিমঃ আপনি কে বলছেন.?
–আমি নীলা, আপনি কি বাস স্টেশনে আসেন নাই.? সেই কখন ধরে বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছি আপনার অপেক্ষায়।
তামিমঃ ওহ আপনি এসে পরেছেন, আচ্ছা আরেকটু ওয়েট করেন আমি ৫ মিনিটের মধ্যেই বাস স্টেশনে আসছি (বলেই কলটা কেটে দিল)।
তারপর তামিম ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাস স্টেশনে চলে আসলো। বাস স্টেশনে এসে তামিম এদিক সেদিক তাকিয়ে নীলাকে খুজতে লাগলো কিন্তু পেল না, পাবে কি করে সে কি আর নীলাকে চিনে?
–এই যে এতক্ষণ লাগে আপনার আসতে.?
হঠাৎ পিছন থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে কথাটা তামিমের কানে আসলো। তামিম পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা সেলোয়ার-কামিজ পরা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তামিমঃ নীলা.?
–জী, আসতে এতো দেড়ি করলেন কেন.?
তামিমঃ আসলে ক্লাসে ছিলাম, কখন যে ১২ টা বেজে যায় খেয়ালই নেই। চলেন তাহলে এখন যাওয়া যাক, আর আপনার ব্যাগটা আমার কাছে দিন।
নীলাঃ এই নেন (ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে) আর আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন কেন.? আমি তো আপনার থেকে অনেক ছোট, তুমি করে বলেন।
তামিমঃ অচে (বলতে গিয়েও বললো না নাহলে আবার মেয়েটা মাইন্ড করে ফেলবে), ওকে বলার চেষ্টা করবো।
নীলাঃ চেষ্টা নয় বলতেই হবে।
তামিমঃ ওকে চল এবার।
তারপর তামিম নীলাকে সঙে নিয়ে একটা রিক্সা করে তাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় ঢুকতেই নীলা তামিমের আম্মুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তামিম নীলার ব্যাগটা ওইখানে রেখে তার রুমে চলে গেল।
নীলাঃ কেমন আছ খালা মণি.?
তামিমের আম্মুঃ ভালো আছি রে মা, তুই কেমন আছিস.?
নীলাঃ এখন ভালো আছি।
তামিমের আম্মুঃ এখন ভালো আছি মানে.?
নীলাঃ আরে তোমাদেরকে দেখে এখন অনেক ভালো লাগছে তাই বললাম ভালো আছি।
তামিমের আম্মুঃ তাহলে মাঝেমধ্যে আসিস না কেন আমাদের এইখানে.?
নীলাঃ কীভাবে আসবো বল পড়াশোনার যে চাপ.! পরীক্ষা শেষ হয়েছে দেখে আম্মু বললো তোমাদের এইখান থেকে কিছুদিন ঘুরে যাই তাই আমিও না করলাম না, চলে আসলাম তোমাদের দেখত।
তামিমের আম্মুঃ ভালো করেছিস, এসেছিস যখন বেশিদিন থাকতে হবে কিন্তু।
নীলাঃ আচ্ছা থাকব, আর যদি ইচ্ছা হয় আমাকে একেবারে রেখে দিতে পার তোমাদের এইখানে।
তামিমের আম্মুঃ কিভাবে রাখবো.? তোর রেজাল্ট দেওয়ার আগেই তো আবার চলে যাবি তোদের বাড়িতে।
নীলাঃ এই যেমন তোমার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিলে তো আমি তোমার বউমা হয়ে যাব তাইনা.? তখন তো এটাই আমার বাড়ি হয়ে যাবে আমিও আর তখন আমাদের বাড়িতে যেতে চাইব না হিহি (মজা করে)।
মিলিঃ খুব শখ আমার ভাইকে বিয়ে করার হুম.? (হঠাৎ মিলি নীলার গলার আওয়াজ শুনে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে কথাটা বললো)
নীলাঃ আরে ননদী তুমি.! কেমন আছ.?
মিলিঃ ভালো আছি ভাবি তুমি কেমন আছ.?
নীলাঃ আমিও ভালো আছি ননদী।
তামিমের আম্মুঃ তোদের আর মজা করার বয়স গেল না.! মিলি যা তো নীলাকে ওর রুম দেখিয়ে দে।
নীলাঃ কেন আমি কি আলাদা রুমে থাকব নাকি.?
তামিমের আম্মুঃ তাহলে কার রুমে থাকবি.?
নীলাঃ মিলির রুমে, মিলির সাথে থাকব আমি। কেন এতে কি মিলির সমস্যা হবে.?
মিলিঃ আরে কিসের সমস্যা, চল তুমি আমার রুমেই থাকবে। আমি তো আম্মুকে আগেই বলেছিলাম যে নীলা আপু আসলে আমার রুমে থাকব নে। কিন্তু না আম্মু সেটা শুনে নি বলেন তুমি নাকি আমার সাথে থাকবা না তাই তোমার জন্য অন্য একটা রুম গুছিয়েছে আমায় দিয়ে৷
নীলাঃ উফফ খালা মণি তুমি না.! আমি মিলির সাথে কেন থাকব না শুনি.? বাসায় আমি একা একটা রুমে থাকি বলে এইখানেও থাকব নাকি.? আমি মিলির সাথে ওর রুমেই থাকব আর দুজন মিলে সারারাত গল্প করবো।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে তোর যেহেতু মিলির সাথে থাকার ইচ্ছা তাহলে ওর সাথেই থাক। যা এবার নীলাকে নিয়ে তোর রুমে যা আর নীলা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
নীলাঃ আচ্ছা খালা মণি, মিলি চল।
মিলিঃ হুম আস।
তারপর মিলি নীলাকে নিয়ে তার রুমে গেল আর ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে তাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। নীলাও ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
–––––––
মায়াঃ আচ্ছা জান্নাত তামিম ভাইয়ের সাথে রিক্সায় থাকা মেয়েটা কে ছিল.? আর ওরা কোথায়ই বা যাচ্ছিল.?
জান্নাতঃ আমি কিভাবে বলবো.? আমিও তো এই প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম।
মায়াঃ মেয়েটা কি উনার গার্লফ্রেন্ড.?
জান্নাতঃ আরে নাহ গার্লফ্রেন্ড হবে না। নিশ্চয়ই কোনো আত্নীয় হবে, দেখলি না তামিম ভাইয়ার হাতে একটা বড় ব্যাগ ছিল। গার্লফ্রেন্ড হলে কি উনি সাথে এতো বড় ব্যাগ নিয়ে ঘুরতেন নাকি.? হয়তো মেয়েটা তামিম ভাইয়াদের বাসায় ঘুরতে আসছে।
মায়াঃ হতেও পারে।
জান্নাতঃ আচ্ছা এবার তাহলে তুই তোর বাসায় যা আমিও আমার বাসায় যাই।
মায়াঃ আচ্ছা।
তামিম যখন নীলাকে সঙে নিয়ে বাসার দিকে আসছিল তখন জান্নাত আর মায়া তাদেরকে এক জায়গায় দেখে ফেলে আর তখন থেকেই মায়ার মনের ভিতর কেমন যেন করতে লাগলো। মায়া অনেক্ষণ ভাবার পরেও যখন বুঝতে পারলো না তামিমের সাথে থাকা মেয়েটা কে তখন সে জান্নাতকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। বাকিটা পথ মায়া এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই বাসায় এসে পরল। বাসায় এসে হালকা খাবার খেয়ে মায়া তার রুমে এসে আবার এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো।
-আচ্ছা আমি উনার এই বিষয়টা নিয়ে এতো ভাবছি কেন.? উনি তো আমার কিছু হোন না তাহলে কেন এই বিষয়ে আমি এতো ভাবছি.? আর উনাকে ওই মেয়েটার সাথে দেখে আমার খারাপ লাগছে কেন.? তাহলে কি আমি উনার না না এটা কিভাবে হবে, এসব কিছু না।
রাতেরবেলা তামিমের আব্বু বাসায় আসলে নীলা উনার সাথে ভালো-মন্দ কিছু কথা বললো অতঃপর সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে নিল। খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে গেল। নীলা আর মিলি মিলে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো অতঃপর রাত ১ টার দিকে দুজন ঘুমিয়ে পরল।
.
.
.
.
.
Loading…….