হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৭ (নিউ টুইষ্ট)

0
1213

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৭ (নিউ টুইষ্ট)
#লেখকঃ- Tamim

–গতকাল যে একটা মেয়েকে আপনার সাথে রিক্সায় দেখলাম উনি কি হয় আপনার.?

ভার্সিটি যাওয়ার পথে হঠাৎ মায়া তামিমকে রাস্তায় দেখে ফেললো। মায়া তাড়াতাড়ি করে পা চালিয়ে তামিমের পাশাপাশি এসে দাড়ালো আর তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠলো। তামিম একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকাল আর ওমনি মায়া তামিমের থেকে নজর সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

তামিমঃ ওটা আমার কাজিন ছিল (হাটতে হাটতে)।

মায়াঃ ওহ, কেমন কাজিন.?

তামিমঃ খালাতো বোন।

মায়াঃ ওহ আচ্ছা, তা উনি কি আপনাদের এইখানে বেড়াতে এসেছেন.?

তামিমঃ হুম।

মায়াঃ উনার বাড়ি কোন জায়গায়.?

তামিমঃ ______ এই জায়গায়।

মায়াঃ ওহ তাহলে তো অনেক দিন এইখানে থাকবেন নিশ্চয়ই.?

তামিমঃ থাকতে পারে যদি তার ভালো লাগে।

মায়াঃ উনি কি আপনার সাথেই পড়েন.?

তামিমঃ নাহ এইবার ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে।

মায়াঃ ওহ তাহলে তো আমার ছোট।

তামিমঃ হুম।

তারপর মায়া আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ হাটতে লাগলো। ভার্সিটির কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ কোথা থেকে জানি জান্নাত তাদের পাশাপাশি এসে হাটতে লাগলো।

জান্নাতঃ কি ব্যাপার দুজন আজ একসাথে.?

মায়াঃ আরে ভার্সিটিতে আসার পথে উনাকে পেয়ে যাই তাই উনার সাথে হাটতে হাটতে চলে আসি।

জান্নাতঃ ওহ বুঝলাম। তা ভাইয়া গতকাল যে একটা মেয়েকে তোমার সাথে রিক্সায় দেখলাম

মায়াঃ ওটা উনার কাজিন।

মায়ার কথায় তামিম আর জান্নাত দুজনেই কিছুটা অবাক হলো। এতে মায়া ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে লাগলো…

মায়াঃ না মানে উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনিই বললেন যে ওই মেয়েটা উনার কাজিন হয়। আর তুই তো এখন এটাই জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলি তাই আমিই বলে দিলাম (বলেই একটা বোকার মতো হাসি দিল)।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই, বাই (বলেই সে তার ক্লাসের দিকে চলে গেল)।

জান্নাতঃ কি ব্যাপার মায়ু.? তুমি তো দেখছি আমার চেয়েও ফাস্ট.!

মায়াঃ মানে.?

জান্নাতঃ মানে তামিম ভাইয়াকে রাস্তায় পেয়েই গতকালের ব্যাপারে সবকিছু জিজ্ঞেস করে ফেললি। তা তুই এইসব জানার জন্য এতো পাগলি হলি কেন শুনি.?

মায়াঃ আরে উনাকে তো কখনো কোনো মেয়ের সাথে এইভাবে দেখি নি তাই একটু জানতে ইচ্ছা হলো মেয়েটা কে।

জান্নাতঃ কিন্তু আমার তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে।

মায়াঃ অন্যকিছু বলতে.?

জান্নাতঃ যেমন তামিম ভাইয়ার জন্য তোমার মনে সামথিং সামথিং কিছু একটা আছে।

মায়াঃ এই সামথিং সামথিং টা আবার কি.?

জান্নাতঃ বুঝ না তাইনা.?

মায়াঃ বুঝিয়ে না বললে বুঝব কিভাবে.?

জান্নাতঃ মানে হচ্ছে তুই তামিম ভাইয়াকে মনে মনে পছন্দ করিস বাট সেটা উনাকে বলতে পারছিস না। কি ঠিক বললাম তো.?

মায়াঃ আরে দুর এমন কিছুই না।

জান্নাতঃ আচ্ছা তাহলে কয়দিন পর যখন ওই মেয়েটার সাথে তামিম ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাবে তখন দেখব নে।

মায়াঃ ওই মেয়েটা এইবার ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে, মানে আমার ছোট সাথে তামিম ভাইয়ারও। এতো ছোট মেয়েকে উনি কেন বিয়ে করবেন.?

জান্নাতঃ বলা তো যায়না, যদি তাদের পরিবার মিলে বিয়ে ঠিক করে ফেলে (মজা করে)।

মায়াঃ দুর তোর এইসব ফালতু কথাবার্তা রাখ তো আর ক্লাসে চল।

জান্নাতঃ হে এখন তো এইসব শুনতে ভালো লাগছে না।

মায়া আর জান্নাতের কথায় কিছু বললো না চুপচাপ ক্লাসে চলে আসলো। ক্লাসে এসে মায়া জান্নাতের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। সত্যিই কি ওই মেয়েটার সাথে উনার বিয়ে হয়ে যাবে.? দুর আমি কেন এইসব নিয়ে এতো ভাবছি, হলে তাতে আমার কি.?

–––––––

নীলাঃ খালা মণি আমার বাসায় বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না।

দুপুরবেলা তামিমের বাসার সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে বসে খাবার খাচ্ছিল। ঠিক তখনই হঠাৎ নীলা তামিমের আম্মুর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

তামিমের আম্মুঃ বাসায় ভালো লাগছে না তো বিকালে একবার মিলির সাথে আমাদের ছাদ থেকে ঘুরে আসিস।

নীলাঃ আমি কি তোমাদের এইখানে ছাদ ঘুরে দেখার জন্য এসেছি নাকি.? ভাবলাম তোমাদের এইখানে এসে একটু এইখান কার কোনো ভালো ভালো জায়গায় ঘুরাঘুরি করবো তা না তুমি কি বলছ, ছাদে গিয়ে ঘুরতে.?

তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে বিকালে একবার তামিম তোকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে নে।

মিলিঃ শুধু কি নীলা আপুকেই নিয়ে যাবে আমাকে নিবে না.?

তামিমের আম্মুঃ তোরা দুজনকেই নিয়ে যাবে। তামিম বিকালে একবার ওদেরকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসিস তো।

তামিমঃ মিলি তো এইখানের সবকিছুই চিনে। ওরা দুজনেই যাক না আমি গিয়ে কি করবো.?

তামিমের আম্মুঃ দুইটা মেয়েকে একা ছাড়া কি ঠিক.? রাস্তায় যদি কোনো বিপদ হয়.? তাই তুইও ওদের সাথে যাবি।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে (তামিম কখনো তার আম্মুর অবাধ্য হয়না তাই আর না করলো না)।

তামিম তাদেরকে ঘুরতে নিয়ে যাবে এটা শুনে নীলা আর মিলি দুজনেই বেশ খুশি হলো আর খুশি মনে খাবার খেয়ে নিল।

বিকালবেলা…

তামিম সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু নীলা আর মিলির রেডি হওয়া শেষই হচ্ছে না। মেয়েদের এই বিষয়টাই তামিমের কাছে খুব বিরক্তিকর লাগে। কোথাও বের হতে হলে এতো সাজুগুজু করার কি প্রয়োজন.? স্বামী নেই তাহলে কার জন্য এতো সাজগোছ আর কাকে নিজের রূপ দেখাবে.? তাই তামিম মিলিকে সবসময় নিষেধ করে এতো সাজগোছ না করতে, মিলিও তামিমের বলাতে এতো সাজগোছ করে না।

তামিমেরঃ কিরে মিলি তোদের হয়েছে.? নাকি আমি একাই চলে যাব.? (মিলির রুমের কাছে এসে)

মিলিঃ আমি তো সেই কখন রেডি হয়ে বসে আছি কিন্তু নীলা আপুর এখনো রেডি হওয়া শেষ হয়নি।

তামিমঃ এতো সাজগোছ কার জন্য করছেন উনি.?

মিলিঃ কি জানি

নীলাঃ আপনার জন্যই তো করছি (মনে মনে)।

প্রায় ১০ মিনিট পর নীলার সাজগোছ শেষ হলো। নীলা একবার নিজেকে আয়নায় দেখে মিলিকে বললো…

নীলাঃ দেখ তো মিলি আমায় কেমন লাগছে.?

মিলিঃ অনেক সুন্দর লাগছে আপু। কোনো ছেলে যদি তোমায় একবার দেখে তাহলে একেবারে ফিদা হয়ে যাবে।

নীলাঃ কোনো ছেলের ফিদা হওয়ার দরকার নেই, শুধু তোর ভাই ফিদা হলেই হবে (মনে মনে)। তা তামিম ভাইয়াও কি আমায় দেখে ফিদা হয়ে যাবেন নাকি.? (মজা করে)

মিলিঃ একদমই না, কারণ ভাইয়া এতো সাজগোছ করা মেয়েদের পছন্দ করেন না।

নীলাঃ কেন.?

মিলিঃ কি জানি। আচ্ছা এখন চল এমনিতেই ভাইয়া সেই কখন থেকে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

নীলাঃ হে চল। দেখা যাবে উনি ফিদা হোন কি না (মনে মনে)।

তারপর নীলা আর মিলি রুমে থেকে বেরিয়ে তামিমের কাছে চলে আসলো।

তামিমঃ আপনাদের সাজগোছ হয়েছে.?

নীলাঃ জী এবার চলুন যাওয়া যাক।

তামিম আর কথা না বাড়িয়ে তাদের দুজনকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। অতঃপর একটা সিএনজি ডেকে তাদেরকে নিয়ে পাশের একটা পার্কে চলে আসলো। পার্কে এসে অনেক্ষণ সময় ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার পর তাদেরকে নিয়ে তামিম বাসায় চলে আসলো। আসার সময় একটা মার্কেটে ঢুকে নীলা কিছু কেনাকাটাও করেছে তাও নিজের টাকায়। তামিম টাকা দিতে চাইলে নীলা মানা করে দেয় আর বলে আম্মু আপনাদেরকে কিছু কিনে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছে তাই আপনাকে কোনো টাকা দিতে হবে না। তামিমও এতে আর কোনো কথা বললো না। বাসায় এসে নীলা তামিমের আম্মুকে আর মিলিকে ওদের জন্য আনা গিফট গুলো যার যার কাছে দিয়ে দেয়। তামিম ওদেরকে বাসায় দিয়েই কোথায় যেন চলে যায় তাই তামিমের জন্য আনা গিফট নীলা নিজের কাছেই রেখে দেয়।

রাতেরবেলা…

খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম তার রুমে এসে ফোনটা টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। তাঁর কিছুক্ষণ পরেই তার ফোনে একটা কল আসে। ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিল তাই তামিম রিংটোন শুনতে পায়নি। একটু পর আবার তামিমের ফোনে কল আসে ঠিক তখনই নীলা এসে তামিমের রুমে ঢুকে আর তামিমকে রুমে না পেয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখল টেবিলে থাকা ফোনটার স্কিন থেকে আলো ভেসে উঠছে। নীল ফোনটার কাছে এসে দাড়াতেই দেখল ফোনের স্ক্রিনে মায়া নামে সেভ করা একটা নাম্বারে থেকে কল এসেছে। নীলা কোনো কিছু না ভেবেই ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিছিভ করলো।

নীলাঃ হ্যালো।

মায়াঃ হ্যালো তা কে আপনি.?

নীলাঃ যাকে ফোন দিয়েছেন আমি উনার বউ।

মায়াঃ মানে.?

নীলাঃ মানে আমি তামিমের বউ। আপনি কে.?

মায়াঃ উনি বিয়ে করলেন কবে.?

নীলাঃ আজকেই করেছে, আর আজকে আমাদের বাসর রাত। আপনি আর ফোন দিয়ে আমাদের ডিস্টার্ব করবেন না তো (কথাটা বলেই নীলা কল কেটে দেয়)।
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here