#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৯
#লেখকঃ- Tamim
–আচ্ছা তুই গতকাল রাতে আমায় কল দিয়ে ওইসব কথা জিজ্ঞেস করলি কেন.?
মায়া ক্লাসে ঢুকে জান্নাতের পাশের সিটে গিয়ে বসতেই জান্নাত মায়ার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠলো।
মায়াঃ এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম।
জান্নাতঃ তাহলে গতকাল তামিম ভাইয়াকেও কি এমনিই কল দিয়েছিলি.?
মায়াঃ তুই কিভাবে জানলি যে আমি গতকাল তামিম ভাইয়াকে কল দিয়েছি.?
জান্নাতঃ তুই নিজেই তো ফোন করে বললি আমায় এটা। আরও বললি তামিম ভাইয়ার ফোন কোনো একটা মেয়ে রিছিভ করেছে আর কি কি যেন বলেছে যে তামিম ভাইয়ার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে আর সে নাকি তামিম ভাইয়ার বউ।
মায়াঃ ওহ হে মনে পরেছে, আমিই তোকে বলেছিলাম এইসব।
জান্নাতঃ তা এতো রাতে তুমি তামিম ভাইয়াকে কেন কল দিয়েছিলে হুম.?
মায়াঃ না মানে
জান্নাতঃ মানে সামথিং সামথিং তাইনা.?
মায়াঃ কি সামথিং সামথিং.?
জান্নাতঃ মানে তুমি তামিম ভাইয়ার প্রেমে পরে গেছ এটাই।
মায়াঃ আরে দুর কি বলছিস এইসব, তুই যা ভাবছিস তার কিছুই না।
জান্নাতঃ তাহলে গতকাল কেন তামিম ভাইয়াকে কল দিয়েছিলি শুনি.?
জান্নাতের কথায় মায়া আর কিছু বলতে পারলো না। মায়া একেবারে চুপ করে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর ক্লাসে স্যার চলে আসলে মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচল এটা ভেবে যে যাক জান্নাত আর তাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। তারপর ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলে মায়া জান্নাতকে ফাঁকি দিয়ে বাসায় চলে যাবে, এটা ভেবে মায়া ক্লাসে মনোযোগ দিল।
–––––––
ভার্সিটি শেষে তামিম বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে মিলির রুমে গিয়ে নীলাকে তার রুমে আসতে বলে সে তার রুমে চলে এলো। তামিম নীলাকে তার রুমে ঢেকেছে এটা ভাবতেই নীলা অবাক হচ্ছে। -হঠাৎ তামিম ভাইয়া কেন আমায় উনার রুমে আসতে বললো.? উনিও আমার জন্য কোনো গিফট এনেছেন নাকি.? নাকি গতকাল রাতের বিষয়টা উনি জেনে গেলেন.? দুর এতো ভেবে লাভ নেই, আগে যাই উনার রুমে তাহলেই বুঝতে পারবো উনি কেন ডেকেছেন।
নীলা তাদের রুম থেকে বেরিয়ে তামিমের রুমে আসলো আর ভিতরে ঢুকে দেখল তামিম বিছানায় বসে বসে ফোন টিপছে।
নীলাঃ জী বলুন কেন ডেকেছেন আমায়.?
তামিমঃ তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো এখন, আশা করি তার সঠিক উত্তর দিবে।
নীলাঃ জী বলুন কি প্রশ্ন.?
তামিমঃ গতকাল রাতে তুমি যখন আমার রুমে এসেছিলে তখন কি আমার ফোনে কেউ কল দিয়েছিল.?
নীলাঃ নাহ তখন শুধু একটা মেসেজ এসেছিল গতকাল রাতে তো বললাম ই।
তামিমঃ ওকে, তাহলে কি তুমি কারও নাম্বার ব্লক করেছিলে.?
নীলাঃ নাহ আমি কেন কারও নাম্বার ব্লক করবো.?
তামিমঃ কর নি তাইনা.?
নীলাঃ নাহ।
তামিমঃ সত্যি বলছ তো.?
নীলাঃ আজব তো মিথ্যা বলবো কেন.?
তামিমঃ ওকে তুমি তাহলে এখন যাও।
নীলাঃ আচ্ছা, তা হঠাৎ আমায় এইসব জিজ্ঞেস করলেন কেন.?
তামিমঃ এমনিই, তুমি যাও এখন।
নীলাঃ আচ্ছা বলে তামিমের রুম থেকে বেরিয়ে আবার মিলির রুমে চলে আসলো। আমায় কি আপনি এতোই বোকা পেয়েছেন যে কারও কল রিছিভ করবো আর সেটার হিস্টোরি ডিলেট করবো না.! এতোটা বোকা এই নীলা চৌধুরী নয় মিস্টার তামিম (বলেই মনে মনে একটা ডেভিল হাসি দিল)।
তামিমঃ মেয়েটা আমার সাথে মিথ্যা বলে ভাবছে আমি তার কিছুই টের পাব না.! অথচ আমার ফোনে অলটাইম কল রেকর্ডের সিস্টেম চালু করা থাকে যা কেউ জানেই নাহ হাহা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নীলা কেন মায়াকে এইসব বললো.? আর মায়ার নাম্বার ব্লক কেন করলো.? কি চায় সে.?
রাতেরবেলা…
মায়া তার রুমে শুয়ে শুয়ে নীলার বিষয়ে ভাবছে।
-আচ্ছা ওই মেয়েটা কেন আমায় ওইসব বললো.? আর মজা করেই যদি বলে থাকে তাহলে কেন আমার নাম্বার ব্লক করেছিল.? কি চায় ওই মেয়েটা.? নাকি ওই মেয়েটা তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসে.? না না এটা কিভাবে হবে, ও তো তামিম ভাইয়ার কাজিন হয় তা ছাড়া ও তামিম ভাইয়ার থেকে অনেক ছোট। ও যদি তামিম ভাইয়াকে ভালোই বাসে তাহলে তামিম ভাইয়া কি ওকে ভালোবাসবেন.? আমার তো মনে হয়না উনি বাসবেন। আচ্ছা আমি ইদানীং উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেন.? উনার সাথে যেদিন ওই মেয়েটাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন আমার কেমন যেন লেগেছিল তারপর আবার আরেকদিন মার্কেটে উনার সাথে ওই মেয়েটাকে দেখেও আমার কেমন যেন লেগেছিল আর গতকাল মেয়েটা যখন বললো ও উনার বউ আর তাঁরা আজকে বিয়ে করেছেন এটা শোনার পর থেকে আমার এতো চিন্তা হচ্ছিলো কেন.? তার মানে কি আমি উনাকে ভালোবেসে ফেললাম.? কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না যে আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, তাহলে কেন ইদানীং আমি উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি.?
মায়া নিজেও এইসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। সে কি তামিমকে ভালোবেসে ফেলেছে নাকি না এটাও তার বুঝে আসছে না। মায়া আর এতোকিছু না ভেবে দিল একটা ঘুম কারণ এইসব নিয়ে সে যত ভাববে ততই তার মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হবে আর এতে তার রাতের ঘুমটাই উড়ে যাবে।
–––––––
এদিকে নীলা শুয়ে শুয়ে ভাবছে।
-আচ্ছা এই মায়া মেয়েটা কে যে গতকাল তামিম ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিল.? মেয়েটা কি উনার গার্লফ্রেন্ড.? নাকি ফ্রেন্ড.? ফ্রেন্ড হলে ঠিক আছে, বাট গার্লফ্রেন্ড হলে ওর জীবনে অনেক কষ্ট আসতে চলেছে কারণ তামিম ভাইয়া শুধু আমার আর কারও না। কয়েকদিনের মধ্যেই উনাকে আমি নিজের ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিব যে আমি উনাকে সেই ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাসি। কিন্তু উনি যদি আমাকে ফিরিয়ে দেন আর বলেন উনার গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে.? সমস্যা নেই, উনাকে কিভাবে নিজের করতে হবে এটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। তার আগে উনাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলবো যদি না বোঝেন তাহলে কি করতে হবে তা আমার ভালো করেই জানা আছে। ইশ কবে যে উনার সাথে আমার বিয়েটা হবে (বলেই নীলা তার পাশে শুয়ে থাকা মিলিকে জড়িয়ে ধরলো)।
মিলিঃ কি হয়েছে আপু হঠাৎ এইভাবে জড়িয়ে ধরলে যে.? দুলাভাইকে সপ্নে দেখে আমায় ধরলে নাকি.?
নীলাঃ না গো সোনা, ভাবছি কবে যে উনার সাথে আমার বিয়েটা হবে আর উনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব।
মিলিঃ তার মানে কি তুমি কাউকে ভালোবাস.?
নীলাঃ হুম (চেহারায় কিছুটা লজ্জার চাপ এনে)।
মিলিঃ কে উনি আপু.? উনিও কি তোমায় ভালোবাসে.?
নীলাঃ সময় হলেই জানতে পারবি, আর উনি আমাকে ভালোবাসে কি না জানি না কারণ আমি এখনো উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাই নি।
মিলিঃ কেন জানাও নি.?
নীলাঃ সেই সুযোগই হয়ে উঠেনি এখনো।
মিলিঃ তো কবে জানাবে.?
নীলাঃ খুব শীগ্রই।
মিলিঃ তা দুলাভাই দেখতে কেমন.?
নীলাঃ আমার কাছে উনি কোনো হিরোর চেয়ে কম না।
মিলিঃ তাই.! তা উনাকে কবে থেকে ভালোবাস তুমি.?
নীলাঃ ক্লাস নাইন থেকে।
মিলিঃ বল কি.! ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাস আর এখনো উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাও নি.? কেন উনি কি বাহিরের দেশে থাকেন নাকি.?
নীলাঃ আরে না বললাম না সেই সুযোগ এখনো হয়ে উঠেনি। আচ্ছা এবার ঘুমা অনেক রাত হয়েছে, আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম (বলেই অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পরল)।
মিলিঃ কোথায় এতো রাত হলো, মাত্র তো ১১ টা বাজে। গতকাল তো ১২ টা পর্যন্ত গল্প করেছিলে।
নীলাঃ কিন্তু আজ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তাই আজকে আর গল্প করার মোড নেই। ঘুমিয়ে পর এখন।
মিলিঃ আচ্ছা।
.
.
.
.
.
Loading…….