হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ১০

0
1731

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ১০
#লেখকঃ- Tamim

–আচ্ছা মায়া তুই কি তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস.? সত্যি করে বল তো আমায়।

ভার্সিটিতে আসার পথে জান্নাত মায়াকে রাস্তার মধ্যে পেয়ে যায় সেই থেকে তাঁরা দুজন একসাথে ভার্সিটির দিকে আসতে লাগলো। রাস্তার মধ্যে মায়া অনেক্ষণ ধরে নীরবে কি যেন ভেবে চলছে, এটা জান্নাত অনেক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছে তাই সে হুট করেই মায়ার দিকে তাকিয়ে উপরের কথাটা বলে উঠলো। হঠাৎ জান্নাতের এমন প্রশ্ন করাতে মায়া কিছুটা চমকে উঠলো আর ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বললো…

মায়াঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন.?

জান্নাতঃ কারণ যেদিন থেকে তুই তামিম ভাইয়ার সাথে উনার ওই কাজিনকে দেখেছিস সেদিন থেকেই তুই সারাক্ষণ কি নিয়ে যেন ভেবে চলছিস, এটা আমি প্রায়ই লক্ষ্য করছি। তারপর আরেকদিন তামিম ভাইয়াকে কোনো একটা কারণে ফোন দিয়েছিলি কিন্তু ওইদিন উনার বদলে ফোনটা উনার কাজিন রিছিভ করেছে আর তোকে বলেছে ওর সাথে তামিম ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। আর এটা সত্যি কি না সেটা জানার জন্য ওই রাতেই তুই আমাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলি এই ব্যাপারে। উনার সাথে তোর প্রথম দেখা হয় আমার এনগেজমেন্টের দিনে, আর ওইখান থেকেই তোদের পরিচয়। আর এখন ভার্সিটিতেও উনার সাথে তোর প্রতিদিন দেখা হয় আর তোদের মধ্যে ভালো-মন্দ কথাও হয়। তোদের এই কথা বলাটা যে কোন পর্যায়ে আছে বা গিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে ইদানীং তুই উনার বিষয় নিয়ে অনেক ভাবছিস। তাই জানার ইচ্ছা হলো তুই উনাকে ভালোবাসিস নাকি। কারণ কেউ কাউকে ভালো না বাসলে তাকে নিয়ে এতোটা ভাবে না।

জান্নাতের কথাগুলো শুনে মায়া কিছুই বললো না শুধু মনে মনে এটাই ভাবতে লাগলো যে, জান্নাত তো ঠিকই বলেছে, কেউ কাউকে ভালো না বাসলে তো তাকে নিয়ে এতোটা ভাবে না বা ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তাহলে আমি কেন উনাকে নিয়ে এতোটা ভাবছি.? আমি কি তাহলে উনাকে ভালোবেসে ফেললাম.?

জান্নাতঃ কিরে চুপ করে আছিস যে।

মায়াঃ তো কি বলবো.?

জান্নাতঃ আমার প্রশ্নের উত্তর দে.?

মায়াঃ কোন প্রশ্ন.?

জান্নাতঃ তুই কি তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস.?

মায়াঃ জানি নাহ।

জান্নাতঃ জানি না মানে.?

মায়াঃ আমি নিজেও বুঝতে পারছি না যে আমি উনাকে ভালোবাসি কি না। আর এটাও বুঝতে পারছি না যে ইদানীং উনাকে নিয়ে আমি এতোটা ভাবছি কেন। তবে উনার সাথে ওইদিন উনার ওই কাজিনকে দেখে আমার মনে কেমন যেন লাগছিল আর অন্যদিন আবার মার্কেটে উনাকে ২ টা মেয়ের সাথে দেখেও আমার মনে কেমন যেন লাগছিল, তার মধ্যে একটা মেয়ে উনার ওই কাজিন ছিল আরেকটা মেয়ে উনার ছোট বোন ছিল। এটা আমি উনাকে পরেরদিন জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি।

জান্নাতঃ কিন্তু আমার মনে হয় তুই উনাকে ভালোবেসে ফেলেছিস তা না হলে তুই উনাকে নিয়ে এতোটা ভাবতি না।

মায়া কিছু বললো না।

কিছুক্ষণ পর তাঁরা ভার্সিটিতে এসে তাদের ক্লাসে চলে গেল। ক্লাস করতে করতে যখন টিফিন টাইম হয়ে গেল তখন তাঁরা দুজনে নাস্তা করতে কেন্টিনে চলে গেল। নাস্তা করা শেষে তাঁরা আবার ক্লাসে চলে আসলো। তারপর বাকি ক্লাসগুলো করে মায়া আর জান্নাত যার যার বাসায় চলে গেল।

এইভাবেই কেটে গেল ১ সপ্তাহ। এই ১ সপ্তাহ ধরে মায়া অনেক ভেবেছে যে সে সত্যিই তামিমকে ভালোবাসে নাকি। কিন্তু মায়া কিছুতেই তাঁর মনের খবর বুঝে উঠতে পারে নি। মায়া ইদানীং ক্লাসেও সারাক্ষণ কি যেন ভাবে জান্নাত এটা প্রায়ই লক্ষ্য করছে। জান্নাত ভালো করেই বুঝে গেছে যে মায়া তামিমকে মনে মনে পছন্দ করে কিন্তু সেটা তাকে বলতে পারছে না তাই সে একটা প্লেন বানিয়েছে এর জন্য তাকে তামিমের হেল্প লাগবে তাই সে একদিন রাতে তামিমের নাম্বারে কল দিল।

তামিমঃ হে জান্নাত বল এতো রাতে হঠাৎ কল দিলি যে কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি.? (কল রিছিভ করে)

জান্নাতঃ সমস্যা আজকে হয়েছে নাকি, সেটা তো অনেক আগেই হয়েছে।

তামিমঃ মানে.?

জান্নাতঃ মানে হলো আমার বান্ধবী মায়া তাকে তো চিন ই, সে তোমায় ভালোবাসে।

তামিমঃ তো এইখানে সমস্যার কি আছে.? What মায়া আমাকে ভালোবাসে মানে.! (অনেকটা অবাক হয়ে)

জান্নাতঃ হে এটা সত্যিই যে মায়া তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা তোমায় কোনো এক কারণে বলতে পারছে না।

তামিমঃ তুই কি আমার সাথে মজা করার জন্য এতো রাতে কল দিয়েছিস.?

জান্নাতঃ জানতাম তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না তাই আমি আগেই একটা প্লেন ঠিক করে রেখেছি।

তামিমঃ কি প্লেন.?

জান্নাতঃ শুন (তারপর জান্নাত সেই প্লেনটা তামিমকে বললো)।

তামিমঃ ওকে তুই যেহেতু বলছিস তাহলে দেখবো নে ট্রাই করে।

জান্নাতঃ আচ্ছা এখন তাহলে রাখি আর যা যা বললাম মনে থাকে যেন (বলেই কল কেটে দিল)।

-মেয়েটা আমায় ভালোবাসে অথচ আমি জানিই না.! জানব ই বা কি করে সে তো আর কখনো আমায় বলেনি যে সে আমায় ভালোবাসে। আর জান্নাতও মিথ্যা বলার মতো মেয়ে নয়। কালকেই আসল সত্যিটা বের হয়ে যাবে তখন ভাবা যাবে এই বিষয়ে, এখন আপাতত ঘুমিয়ে পরি।

পরেরদিন ভার্সিটিতে…

টিফিন টাইমে মায়া আর জান্নাত প্রতিদিনের মতো নাস্তা খেতে ভার্সিটির কেন্টিনে চলে আসলো। প্রায় কিছুক্ষণ পর তামিমও কেন্টিনে এসে ঢুকলো আর এদিক সেদিক তাকিয়ে মায়া আর জান্নাত যেই টেবিলে বসে আছে ওইখানে এসে জান্নাতের পাশের সিটে বসে পরল।

তামিমঃ কি অবস্থা তোমাদের.?

জান্নাতঃ এইতো ভাইয়া ভালো তোমার.?

তামিমঃ উম মুটামুটি ভালো।

জান্নাতঃ মুটামুটি কেন.?

তামিমঃ আর বলিস না, একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।

জান্নাতঃ কি ঝামেলা.?

তামিমঃ গতকাল রাতে খাবার খাওয়ার সময় আম্মু বললো উনি নাকি আমার বিয়ে করাতে চান।

জান্নাতঃ বল কি সত্যি নাকি.? এ তো খুশির খবর এইখানে ঝামেলার কি আছে.?

তামিমঃ আরে এখনো তো পড়াশোনা ই কমপ্লিট করি নি তাই বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই নেই কিন্তু আম্মু বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে।

জান্নাতঃ আন্টি যেহেতু বলছে তাহলে করে ফেল সমস্যা কি.?

তামিমঃ হে করবো অবশ্যই কিন্তু এখন না পড়াশোনা কমপ্লিট হলে। আপাতত কিছুদিনের মধ্যে এনগেজমেন্ট করিয়ে ফেলা হবে ওর সাথে।

জান্নাতঃ এই ও টা আবার কে.?

তামিমঃ নীলা, যার সাথে আম্মু আমায় বিয়ে দিতে চাচ্ছেন।

জান্নাতঃ ওই যে তোমার কাজিন উনি.?

তামিমঃ হুম।

জান্নাতঃ মেয়েটা কি তোমায় বিয়ে করবে.? মানে ও কি রাজি.?

তামিমঃ আরে ও তো আমায় ভালোবাসে তাইতো আম্মু ওর সাথে আমার বিয়েটা করাতে চাচ্ছেন।

তামিমের এই কথাটা শুনে মায়ার হাতে থাকা চামচটা নিচে পরে গেল। মায়ার চেহারায় একটা চিন্তার চাপ ভেসে উঠলো যেটা তামিম আর জান্নাত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।

জান্নাতঃ কিরে তোর আবার কি হলো.? তোর চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন.?

মায়াঃ না কই কেমন দেখাচ্ছে, ঠিক আছি তো আমি। তা আপনাদের এনগেজমেন্ট কবে হবে.? (তামিমের দিকে তাকিয়ে)

তামিমঃ মেবি সামনের শুক্রবারে হবে, আপনি আর জান্নাত কিন্তু অবশ্যই আসবেন আমার এনগেজমেন্টের দিন।

মায়াঃ জান্নাত তুই উনার সাথে কথা বল আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি (কথাটা বলেই বসা থেকে উঠে কেন্টিন থেকে বেরিয়ে গেল)।

মায়া চলে যাওয়ার পর জান্নাত হাসতে আরম্ভ করলো। কিছুক্ষণ হেসে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো…

জান্নাতঃ কি বুঝলে এবার.?

তামিমঃ তোর কথাটাই ঠিক মনে হচ্ছে।

জান্নাতঃ তো এখন কি করবা.?

তামিমঃ কিছুই নাহ, কারণ ও যেহেতু আমায় ভালোবাসে তাহলে ও এসে আমায় ওর ভালোবাসার কথা বলুক তারপর ভেবে দেখবো কি করা যায়।

জান্নাতঃ আচ্ছা আমি দেখি ওকে বুঝিয়ে কিছু করা যায় কি না। আমার খাওয়া শেষ আমি যাই এখন (বলেই উঠে চলে গেল)।

রাতেরবেলা…

তামিম ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল নীলা তার ফোন নিয়ে কি যেন করছে। তামিম একটু চেহারায় রাগী ভাব এনে বললো…

তামিমঃ কি করছ আমার ফোনে.?

নীলাঃ গতকাল রাতে যে আপনাকে একটা মেয়ে ফোন দিয়েছিল তার নাম কি জান্নাত.?

তামিমঃ হে কেন.? আর তুমি কিভাবে জানলে যে ও আমাকে গতকাল ফোন দিয়েছে.?

নীলাঃ তখন আমি আপনার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই আপনাদের কথা শুনতে পেয়েছি। আচ্ছা এই জান্নাত কে আপনার গার্লফ্রেন্ড.?

তামিমঃ নাহ আমার বন্ধুর বোন।

নীলাঃ তাহলে মায়া কে.?

তামিমঃ জান্নাতের বান্ধবী।

নীলাঃ ও কি আপনাকে ভালোবাসে.?

তামিমঃ হ্যাঁ।

নীলাঃ আপনিও কি ওকে ভালোবাসেন.?

তামিমঃ তুমি এতোকিছু জিজ্ঞেস করছ কেন.? এইসব জেনে তুমি কি করবা.?

নীলাঃ যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দেন।

তামিমঃ ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এখনো সেটা আমায় বলেনি, যদি বলে তাহলে

নীলাঃ তাহলে ওকে মানা করে দিবেন।

তামিমঃ কেন.?

নীলাঃ কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনি শুধু আমার আর কারও না। ও যদি আপনাকে ওর ভালোবাসার কথা বলেও তাহলে আপনি রাজি হবেন না। কথাটা যেন মনে থাকে এই নেন আপনার ফোন বলেই ফোনটা বিছানায় ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here