হৃদয়_নিবাসে_তুই #পর্ব_০৮,০৯

0
688

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৮,০৯
লেখনীতেঃভূমি
০৮

কিছুটা দূরেই রক্তিম দাঁড়িয়ে। নিরন্তরভাবে তাকিয়ে রইল অদ্রিজা আর দিহানের বাহুবন্ধনের দিকে।কতোটা ভালোবেসে হাতটা আঁকড়ে ধরেছে দিহান। রক্তিম তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।চোখজোড়া দিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলল অদ্রিজার দিকে।কি সুন্দর মুখে হাসি।এই মেয়েটা তার সামনে এভাবে কখনো হেসেছে?মনে পড়ে না রক্তিমের।বাম হাতের ঘড়িতে সময় দেখেই অদ্রিজার দিকে আরেকবার চাইল সে।ঠিক তখনই অদ্রিজার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল রক্তিমের।সঙ্গে সঙ্গেই দিহানের হাতটাকে ঝাড়া দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল অদ্রিজা।রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ছোট শ্বাস ফেলল।লোকটা কি অন্য কিছু ভাবছে তাকে নিয়ে?দিহান আর তার সম্পর্ককে অন্য কিছু ভাবছে নাহ তো?দু পা বাড়িয়ে রক্তিমের কাছে যাবে তখনই দিহান আবারও অদ্রিজার হাতটা চেপে ধরল।শান্ত কন্ঠে বলল,

‘ হাতটা ছাড়িয়ে নিলে দ্রিজা?আবারও এড়িয়ে যাচ্ছো আমায়?কেন?’

অদ্রিজা চোখ ফিরিয়ে চাইল।কপাল কুঁচকে নিয়েই বলল,

‘ আগে কখনো এভাবে হাত ধরতে না তুমি দিহান।বারবার এভাবে হাত ধরছো কেন তুমি?’

দিহান মুচকি হাসল।হাতটা ছাড়ল না।সেভাবেই ধরে রেখেই বলল,

‘ ভয় নেই।আমি তোমায় আবার আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইব না দ্রিজা।হ্যাঁ আগে তোমার হাত কখনো ধরিনি।হয়তো সে কারণেই তুমি আমার হলে না।তোমায় ধরে রাখতে পারলাম না।’

অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এতক্ষন চাপা থাকা অপরাধবোধটা তড়তড় করে বেড়ে উঠল এবার।দিহানের দিকে সরু চাহনিতে তাকাতেই দিহান হাতটা ছেড়ে দিল।মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ স্যরি।আর কখনো এই বিষয়ে কথা বলব না আমি।হাতও ধরব না।বাই দ্রিজা।’

অদ্রিজা কি বলবে বুঝে উঠল না।চোখজোড়া বন্ধ করেই বার কয়েক শ্বাস ফেলল সে। দিহান উল্টোপথে পা বাড়িয়েছে ততক্ষনে।অদ্রিজা চোখ খুলে দিহানকে পেছন থেকে দেখে নিয়েই উল্টোদিকে ফিরল।রক্তিম সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে এখন ও।মুখে অদ্ভুত হাসি।যে হাসির মানে অদ্রিজার জানা নেই।তবে মনের ভেতর জ্বলজ্বল করে উঠল রক্তিমের উপর জমে থাকা সহস্র অভিমান। আচ্ছা রক্তিম কি তাকে স্যরি বলতে এসেছে?এভাবে আঘাত করে কষ্ট দিয়ে এখন স্যরি বলতে এসেছে?নয়তো কেন আসবে?এই ভার্সিটিতে তে রক্তিমের আর কেউ থাকার কথা নয়।অদ্রিজা চোখ মুখ কুঁচকে চাইল।রক্তিম স্যরি বললেও সে কোনভাবেই ক্ষমা করবে না এমনটাই সিদ্ধান্ত নিল তার মন।পা জোড়া এগিয়ে রক্তিমের কাছে গিয়েই বলে উঠল,

‘ আপনি আমার ভার্সিটিতে?আমার পিছুপিছু চলে এসেছেন?কেন এসেছেন?’

রক্তিম ভ্রু জোড়া কুঁচকে চাইল অদ্রিজার দিকে।চোখে মুখে ফুটে উঠল তীব্র বিরক্তির ছাপ।ঘড়িতে একনজর সময় দেখে নিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ এনি প্রবলেম?’

অদ্রিজা হতাশ হলো।ভেবেছিল রক্তিম তাকে স্যরি বলবে।নরম গলায় বলবে,” ব্যাথা পেয়েছেন ?তখনকার ব্যবহারটার জন্য আমি দুঃখিত অদ্রিজা। ক্ষমা করে দিবেন আমায়?প্লিজ!” কিন্তু তেমন কিছুই বলল না রক্তিম।বরং পুরোপুরি মুখচাহনি দিয়ে বুঝিয়ে দিল অদ্রিজা তার বিরক্তির কারণ।তবুও হাল ছাড়ল না অদ্রিজা।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ অবশ্যই সমস্যা রক্তিম।একটা লোভী মেয়ের পিছুপিছু আপনি তার ভর্সিটিতে আসবেন কেন?কি কারণ?’

অদ্রিজাকে এবারও নিরাশ করল রক্তিম।ম্লান হাসি হেসে বলে উঠল,

‘ ভুল!ভার্সিটিটা কেবল আপনি আর আপনার প্রেমিকের নয় অদ্রিজা।’

‘ মানে?ভার্সিটিতে আপনার পরিচিত আর কে আছে?বলুন। ‘

রক্তিমের বিরক্তির ছাপটা এবার আরও ঘাঢ় হলো।মুখ চোখ কুঁচকে নিয়েই অদ্রিজার বাহুজোড়া চেপে ধরল দুই হাতে।শক্ত হাতজোড়ার চেপে ধরা সহ্য করতে পারল না অদ্রিজার নরম তুলতুলে পেশীর হাতজোড়া।ব্যাথায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখচোখ কালো হয়ে গেল অদ্রিজার।রক্তিম একনজর তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ সমস্যা কি আপনার?জ্বালাচ্ছেন কেন আমাকে? বুঝতে পারছেন না আমি আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছি?আপনাকে বিরক্ত লাগছে আমার অদ্রিজা।আপনাকে সহ্য করতে পারছি না আমি।বুঝার চেষ্টা করুন।আমায় ছেড়ে দিন। প্লিজ লিভ মি অদ্রিজা।প্লিজ।’

অদ্রিজা টলমলে চাহনিতে তাকাল রক্তিমের দিকে। কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরটা।বলার মতো কিছু খুঁজে ও পেল না সে।কান্না পাচ্ছে।রক্তিমের প্রতি সদ্য জম্ম নেওয়া অনুভূতিগুলো নিমিষেই ভেঙ্গে গেল যেন। অস্ফুট কন্ঠে বলল কেবল সে,

‘ হাত ছাড়ুন রক্তিম।আমি আপনাকে ছাড়তে পারব না। বিরক্ত লাগলে ও আমাকে সহ্য করতে হবে রক্তিম।আমি আপনার সাথে থাকতে বাধ্য।’

রক্তিম ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিল অদ্রিজার হাতজোড়া।অদ্রিজা হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরেই দুই পা পিঁছিয়ে গেল।রক্তিম নামক পুরুষটার প্রতি আবার ও জম্মাল শত সহস্র রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণা।চোখজোড়া দিয়ে জ্বলন্ত চাহনি নিক্ষেপ করেই বলল সে,

‘ আমি জানতাম আপনি খারাপ, চরিত্রহীন। তবুও আপনার সাথে জীবনটা জড়িয়েছি। হ্যাঁ, আপনার কাছে আমি লোভী মেয়ে রক্তিম।কিন্তু আপনার এই ধারণাটা যে ভুল সেটা প্রমাণ করতেই আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না কোনদিন।কোনদিনও না।’

রক্তিম তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

‘ ব্যস এইটুকু? বাট ইউ নো হোয়াট অদ্রিজা?আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন এটাই সত্যি।সেটা যে কোনদিন যে কোন ক্ষণ।মিথ্যে আশা দেখাবেন না আমায়।’

অদ্রিজা তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলল রক্তিমের দিকে।এতটা অবিশ্বাস কেন এই লোকটার?কেন ছেড়ে যাবে সে?উত্তর খুঁজে না পেয়েই জ্বলন্ত নিয়ে চাইল সে।কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সেই স্থানে আগমণ ঘটল মোমের মতো সাদা সুন্দরী এক নারীর।পরনে কালো রংয়ের জামা।চোখ মুখ চমৎকার।সৃষ্টিকর্তা যেন অনেক সময় নিয়ে অনেক যত্ন করে বানিয়েছে সেই মেয়েটিকে।অদ্রিজা সরু চাহনিতে মেয়েটার দিকে চাইতেই মেয়েটা অদ্ভুত কাজ করে বসল।রক্তিমের বুকে ঝাপটে পড়ল পাগলের মতো।দুই হাত দিয়ে রক্তিমের বুকে ঘুষি দিতে দিতেই ভেজা কন্ঠে বলল,

‘ তুমি খারাপ রক্তিম।এই পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মানুষ তুমি। আমার অস্তিত্বটাই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো তুমি রক্তিম। চাইলেও আমি তোমায় ভুলতে পারছি না রক্তিম।আমার কাছে মনে হচ্ছে মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোন কিছু করার নেই রক্তিম।আমি বাঁচতে পারছি না এইভাবে।’

রক্তিম হালকা হাসল।মেয়েটার কাঁধে দুই হাত রেখেই সরে দাঁড়াল সে।মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ তুমি অনেক ভালো মেয়ে তানিশা।আমার থেকেও ভালো ছেলে তুমি ডিজার্ব করো।আর আমি তো তোমায় কোনদিনও ভালোবাসি বলিনি তানিশা।শুধু শুধু নিজের মূল্যবান অনুভূতিতে কেন আমায় জড়ালে?কেন ভাবলে আমিও তোমায় ভালোবাসি?আমি তো কোনদিন তোমায় বলিনি ভালোবাসি।’

তানিশা জ্বলে উঠল।ক্ষ্রিপ্ত গলায় বলল,

‘ তুমি রিমুর সাথে যেমনটা করেছো ঠিক তেমনটাই করতে চাইছো আমার সাথে?আমাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চাইছো রক্তিম?রিমুকেও তুমি এইভাবেই ঠকিয়েছো।রিমুও মানিসক ভাবে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।বারবার মরতে চেয়েছিল।ঠিক যেমনটা এখন আমার হচ্ছে। তুমি ঠিক তেমনটাই করতে চাইছো আমার সাথে।তাই না?’

রক্তিম হাসল।বলল,

‘ উহ,তানিশা। প্লিজ, মৃত্যুর কথাটা ভাববে না প্লিজ।যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসো তো আমি বলব, জীবনে এই ছাড়াও অনেক কিছু আছে তানিশা।একটা মানুষের উপর ভালোবেসেই যদি পুরো জীবনটা কাঁটানো যেত তবে মানুষ বারবার প্রেমে পড়ত না।আজ আমাকে ভালোবাসছো, কাল ঠিকই অন্য একজনকে ভালোবাসবে তানিশা।এবং আই হোপ, সে আমার থেকে অনেকগুণ ভালো হবে।আর রিমুর সাথেও কিন্তু আমি কিছুই করিনি তানিশা।ও কেও আমি কোনদিন ভালোবাসি কথাটা বলিনি। আমি এই জীবনে কোনদিনও কাউকে ভালোবাসি বলিনি তানিশা।আর বলব ও না।’

তানিশা চোখ ভরা জল নিয়ে চেয়ে থাকল।এই রক্তিম নামক মানুষটা তাকে ভালোবাসেনি ভেবেই হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে তার। হু হু করে কেঁপে উঠছে বুকের ভেতরটা।দলা পাকিয়ে কান্না আসছে।তীব্র অভিমান নিয়ে ব্যাগ থেকে বের করল বিয়ের কার্ডটা। রক্তিমের দিকে এগিয়ে দিয়েই বলে উঠল,

‘ আর দশদিন পর আমার বিয়ে রক্তিম।রিমুর পথটাই বেছে নিলাম আমিও।তুমি নামক অভিশাপটা থেকে বাঁচতে বিয়েটাই করতে বাধ্য হলাম। দেখি বর নামক মানুষটা তোমায় ভোলাতে পারে কিনা।’

রক্তিম এগিয়ে নিল কার্ডটা।মুখে হাসি রেখেই বলল,

‘ শুভকামনা তানিশা।অনেক সুখী হবে দেখো।’

তানিশা আর এক পা ও দাঁড়াল না। উল্টোদিক ফিরে হাঁটা ধরল।অদ্রিজা সেখানেই থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল।কি অদ্ভুত!মেয়েটা রক্তিমকে কতটুকু ভালোবাসে। অতচ রক্তিম?ফিরিয়ে দিল?কেন?বুঝে উঠল না অদ্রিজা।রক্তিমের কাছাকাছি গিয়েই জিজ্ঞেস করল,

‘ মেয়েটাকে এভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলেন কেন রক্তিম?আপনাকে ভালোই তো বেসেছিল।’

রক্তিম বাঁকা হাসল অদ্রিজার কথা শুনে।ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ ইটস কলড গেইম অদ্রিজা।আপনি বুঝবেন নাহ।আমি মজা পাই ওদেরকে এভাবে ভেঙ্গেচুড়ে গুঁড়িয়ে দিতে।আহ!’

সাথে সাথে মুখচোখ শক্ত হয়ে গেল অদ্রিজার।একটা মানুষ কতটা খারাপ হলে অনুভূতি নিয়ে খেলতে পারে।একটা মেয়েকে নিয়ে খেলতে পারে।ঘৃণায় মুখ চোখে দেখা গেল কুৎসিত এক বর্ণ।ক্ষ্রিপ্ত গলায় বলে উঠল সে,

‘ ইউ আর এ সাইকো রক্তিম।ছিঃ!তানিশা, রিমু, না জানি আরো কত মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছেন আপনি।কত মেয়ের শরীর নিয়ে খেলেছেন।আর কত মেয়ের মনে জাগা পবিত্র অনুভূতি গুলোকে ভেঙ্গে চুড়মাড় করেছেন।ছিঃ!আসলেই আপনি পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মানুষ রক্তিম।কোন মনুষত্ব্যই নেই আপনার মাঝে।থাকতেই পারে নাহ।একটা খারাপ, চরিত্রহীন লোক আপনি। কে জানে আরো কতজন আপনার স্বীকার হতে চলেছে।আজ আমি তো কাল অন্য কেউ!ছিঃ!আই হেইট ইউ রক্তিম।’

.

রিক্সায় চড়ে ভার্সিটি থেকেই ফিরছিল অদ্রিজা।রক্তিমের সাথে কথা বলেই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসেছিল সে।চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে আছে।নাকের অগ্রভাগও লাল।রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণায় কান্না পাচ্ছে তার। প্রচুর মাথা ব্যাথা নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ রাস্তার পাশে নেহাকে দেখল। ভ্রু জোড়া কুঁচকে নেহার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুইজনের চাহনি।নেহা সঙ্গে সঙ্গেই ইশারা করল নেমে যাওয়ার জন্য।অদ্রিজা কপালটা আরো কিছুটা কুঁচকে নিল। নেহা বার কয়েক নেমে যাওয়ার অনুরোধ করতেই সেও উপায় পেলনা নেহাকে না করার।রিক্সা থেকে নেমে পড়ে রাস্তা পার হয়ে নেহার কাছে গিয়েই বলল,

‘ কিরে নেহা?কি হয়েছে?এখানে দাঁড়িয়ে আছিসই বা কেন?’

নেহা মুখ কালো করে চাইল।মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ দ্রিজা, মামনি দেশে ফিরেছে এক সপ্তাহ হলো বুঝলি।এখন দেখা কি করে করি বলতো।বাবা জানলে তো জীবনেও দেখা করতে দিবে না।আর মামনির সাথে দেখা না করলে আমার ভালো লাগে না।শত হোক আমি তার কার্বন কপি বলে কথা।এটুকু তো টান থাকা উচিত বল?মানুষ ভুল করতেই পারে।আমার পরিবার কেন যে মামনিকে মেনে নিচ্ছে নাহ।কে জানে!’

অদ্রিজা সরু চোখে চাইল।নেহার কাছে তার মামনির সম্পর্কে অনেক শুনেছে সে।দেখাও হয়েছে নেহার মামনির সাথে বার কয়েক।সম্পর্কে নেহার বাবার বোন সে মহিলা।ভদ্রমহিলা জীবনে কোন ভুল করেছে তা নেহার কাছে এই পর্যন্ত হাজারবার শুনেছে সে।কিন্তু কি ভুল তা সে জানে না।নেহাও কোনদিন বলেনি।অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

‘ থাকছেন কতদিন উনি দেশে?’

‘ এই ধর একমাস।’

অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলেই বলল,

‘ সে অনেক সময় নেহা।একমাসে ত্রিশটা দিন।আমরা কোন একটা দিন ঠিকই সুযোগ করে দেখা করে আসব।ঠিকাছে?আজ আসি আমি।ভাল্লাগছে না আমার নেহা। ‘

নেহা মুখ ফুলিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলল।মুখের চাঞ্চল্য টা মুহুর্তেই হারিয়ে গেল অদ্রিজার মন খারাপ দেখে। হতাশ চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলল,

‘ হু। বাই।’

#চলবে….

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃভূমি

শীতের রাতের ঠান্ডা বাতাসে শরীরটা কেঁপে উঠল অদ্রিজার।নেহার সাথে তার মামনির বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল এই ঠান্ডার মধ্যে।বাড়ির গেইটে তালা ঝুলছে।দাড়োয়ান সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে,” বাড়ির মালিক এখন নেই।ডুকতে দেওয়া হবে নাহ।”। এই ঠান্ডায় প্রচন্ড মন খারাপ নিয়েও রাত দশটায় অবশেষে নেহার জন্য ছুটেই আসতে হলোই অদ্রিজাকে।কাল সকালেই ভদ্রমহিলা চলে যাবে এই দেশ থেকে।এক মাস থাকার পরিবর্তে হুট করে এভাবে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন কারণ খুঁজে পেল না অদ্রিজা। সারাটাদিন রাগ, ক্ষোভ আর রক্তিমের উপর পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে মাথাটাই ভারী হয়ে আছে তার।মুখ চোখ কুঁচকে নেহার দিকে তাকাতেই মনে পড়ল রক্তিমের কথা।নেহাকে আর দিহানকে রক্তিম কিভাবে চেনে তা তো জিজ্ঞেসই করা হয় নি তার।আর এক মুহুর্তও দেরি করল না অদ্রিজা। দ্রুত প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ নেহা?তুই রক্তিম মাহমুদকে আগে থেকে চিনিস? আর উনিই বা তোকে কিভাবে চেনে নেহা?কে হয় উনি তোর?’

নেহা ভ্রু কুঁচকে চাইল।রক্তিমকে নিয়ে অদ্রিজার সিরিয়াসলি প্রশ্ন করা দেখেই ফিক করে হাসল নেহা।চোখ টিপেই বলল,

‘ কিরে বান্ধবী? বরকে নিয়ে এত চিন্তা। একে তো তুই তোর বরের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলি না তার উপর যখন দেখলি চেনা মানুষ তখন টেনশনে পড়ে গেলি?তোর বরকে নিয়ে কি ভাগব নাকি দ্রিজা?’

অদ্রিজা বিরক্ত হলো নেহার কথায়।কাঙ্খিত উত্তর না পেয়েই কপাল কুঁচকে বলল,

‘ যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে।উল্টোপাল্টো কথা বলিস কেন?আজব!’

নেহা হেসে উঠল খিলখিলিয়ে।কয়েক সেকেন্ড হেসেই বলল,

‘ উনি?উনি তো আমার প্রেমিক।যেদিন প্রথম দেখেছিলাম উনাকে সেদিনই বড়সড় ক্রাশ খেয়েছিলাম উনার উপর।তখন তো উনি অবিবাহিত ছিল।কিন্তু মাঝখান দিয়ে তুই আমার সতীন হয়ে গেলিরে দ্রিজা।’

অদ্রিজা ভ্রু বাঁকিয়ে নেহার দিকে তাকাল।মুখ কালো করে বলল,

‘ সত্যি করে বল না কে হয় উনি তোর?আমি জানতে চাই।’

অদ্রিজার কথার উত্তরে নেহা কিছু বলার আগেই পেছনে এসে দাঁড়াল শক্তপোক্ত, লম্বা চওড়া একটা লোক।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে নিজের পেঁছনে সেই মানুষটার অবয়ব দেখেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল অদ্রিজার।তৎক্ষনাৎ পেঁছন ফিরতেই মানুষটার শক্ত পেশির চওড়া বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে কয়েক পা পিঁছিয়েই মাথা তুলে চাইল অদ্রিজা।তার সামনে সেই ঘৃণাময় লোকটা।রক্তিম নামক পুরুষটা।সঙ্গে সঙ্গেই মুখচোখ লাল হয়ে উঠল অদ্রিজার।বুকের ভেতর থাকা ক্ষোভ ঘৃণা আবারও তরতাজা হয়ে উঠল মুহুর্তেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ রক্তিম? আপনি?এখানে?’

রক্তিম মৃদু হাসল।মুচকি হেসে বলল,

‘ আমি আপনাকে অনেকটা ভালো ভেবেছিলাম অদ্রিজা।আপনাকে নিয়ে আমার ধারণা গুলো অনেকটা স্বচ্ছ আর সুন্দর ছিল।কিন্তু আপনি আসলেই তেমন না।নয়তো রুহানা চৌধুরির সাথে দেখা করতে আসতেন নাহ।’

অদ্রিজা ছোটছোট চোখ করে তাকাল।রুহানা চৌধুরী নেহার মামনির নাম। নেহার কাছেই শুনেছিল সে।কিন্তু তার সাথে দেখা করতে আসার সাথে অদ্রিজাকে ভালো, খারাপ ভাবার কারণ কি?অদ্ভুত।কপাল কুঁচকে চেয়ে থেকেই বলল অদ্রিজা,

‘ তো? খারাপ ভাবতে শুরু করে নিয়েছেন?’

রক্তিম মুচকি হাসল। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আমি আপনাকে খারাপ ভাবতে আরো আগে থেকে শুরু করে দিয়েছি অদ্রিজা।আপনি সবথেকে নিকৃষ্ট নারী।আমাকে ক্ষণে ক্ষণে নিঃস্ব করে দিচ্ছেন আপনি।এনিওয়েজ, গাড়িতে গিয়ে বসুন।আমি নেহার সাথে কথা বলে আসছি।’

অদ্রিজা জোরে জোরর শ্বাস ফেলল।রক্তিমের কথাবার্তা কিছুই তার মস্তিষ্ক বুঝে উঠে না।কখনো বুঝে উঠা সম্ভব কিনা তাও জানে না।এই লোকটা এত অদ্ভুত কেন বুঝে উঠে না অদ্রিজা।রক্তিমের বলা কথাটাকে মান্যতা না দিয়েই ক্ষ্রিপ্ত গলায় বলল,

‘ গাড়িয়ে গিয়ে বসব?আমি মামনির সাথে দেখা করে তারপরই যাব রক্তিম।আপনি চলে যান।’

রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজাকে একবার দেখে নিয়েই নেহার দিকে তাকাল।চোখ টিপে বলল,

‘ হাই লিটল ওয়াইফ।’

নেহা মুখ ফুলিয়ে হাসল।কাছাকাছি দাঁড়িয়েই উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল,

‘ হ্যালো রক্তিম ভাইয়া। দাদিমা কেমন আছে?’

রক্তিম মিষ্টি হেসেই বলল,

‘ আমি থাকতে খারাপ থাকে কি করে?’

নেহা হাসল।রক্তিমও হাসল। অদ্রিজার তাদের দুইজনের কথোপকোথন শুনেই হা হয়ে চেয়ে রইল।এদের কথোপকোতন বলছে দুইজন দুইজনার কতটুকু পরিচিত।অথচ অদ্রিজা এদের সম্পর্কটা কি আজও জানল না।নেহার দাদিমার সাথেই বা কি সম্পর্ক রক্তিমের?অদ্রিজা বুঝে উঠল না।রক্তিম হেসেই বলল,

‘ ঐ মহিলার সাথে তো দেখা হবে না লিটল ওয়াইফ।বাসায় ফিরে যাও। আমি মনে করি ঐ মহিলাটার সাথে তোমার দেখা করা উচিত ও না নেহা।’

নেহার হাসিতে ফুলে উঠা মুখটা মুহুর্তেই চুপসে গেল।বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠল,

‘ তোমরা এমন করো কেন মামনির সাথে? এতটা ঘৃণা কি মামনির আসলেই প্রাপ্ত ভাইয়া?অন্তত তুমি এমনটা করতে পারো না ভাইয়া।’

রক্তিম আওয়াজ করে হেসে উঠল।তারপরই বলল,

‘ ঐ খারাপ মহিলাটা সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই আমার।ভালো থেকো।এত রাতে রাস্তায় না দাঁড়িয়ে বাসায় যাও।উনি দেখা করবেন না লিটল ওয়াইফ।ফিরে যাও।’

অদ্রিজা কিছুই বুঝল না।ঠোঁট চেপে প্রশ্ন করল,

‘ নেহার মামনির সাথে আপনার কি সম্পর্ক রক্তিম?খারাপ বলছেনই বা কেন উনাকে?এতটা ঘৃণাই বা করেন কেন আপনি উনাকে।উনি কে আপনার?’

রক্তিম উত্তর দিল না।আশেপাশে তাকিয়েই একটা রিক্সা ডেকে নিল।নেহাকে ইশারা করেই বলল,

‘ উঠে পড়ো নেহা।আমি চাই না তুমি এখানে মাঝরাস্তায় এতরাতে ঐ মহিলাটার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো। উনি কাল সকালেই ব্যাক করবে।তোমার সাথে উনার দেখা হবে না নেহা।তারপরও যদি চাও তো কাল সকালে এসে দেখা করতেই পারো।তবে আজকের মতোই ফিরে যেতে হবে আই হোপ।আর হ্যাঁ, অদ্রিজাকে সাথে নিয়ে নয়।আমি চাই না অদ্রিজা ঐ মহিলার সাথে দেখা করুক।মনে থাকবে?’

নেহা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকল কেবল।অদ্রিজাও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।রক্তিম নামক পুরুষটাকে বুঝে উঠতে না পেরেই নিজের ভেতরটা জ্বলে উঠেছে নিরবে।এত কিসের ভাব এই লোকটার?তাকে, তার কথাকে এভাবে উপেক্ষা করার সাহস কি করে হয় এই যুবকটির?জ্বলন্ত চাহনিতে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থাকতেই রক্তিম ফিরে চাইল অদ্রিজার দিকে।বাঁকা হেসে বলল,

‘ উহ, মিসেস অদ্রিজা।প্লিজ এভাবে চেয়ে থাকবেন নাহ।আই নো, আমি দেখতে সুন্দর।সুন্দর পুরুষের প্রেমে পড়ে গেলে পরে আমাকে দোষারোপ করবেন না।’

অদ্রিজা বিরক্তি নিয়ে তাকাল। রক্তিমের স্বাভাবিক আচরণ দেখে অবাক ও হলো।আগের মতোই হাসিটা আর কথাগুলো শুনে মনের ভেতর জমলো বিস্তর কৌতুহল।দৃঢ় কন্ঠে বলল,

‘ নেহা কোথাও যাবি না।আমরা মামনির সাথে দেখা করে তারপরই যাব।রাত একটা হোক বা রাত দুটো।দেখা করে তারপরই যাব।’

নেহা হতাশ চাহনিতে তাকাল। উত্তর দিল না।রক্তিমের চোখমুখের পরিবর্তন ঘটল খুব দ্রুত।চোয়াল শক্ত হয়ে গেল দ্রুত।অদ্রিজার বৃথা তর্কে ধপাধপ জ্বলে উঠল তার মস্তিষ্ক।অদ্রিজার নরম তুলতুলে হাতটা হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরেই টেনে আনতে আনতে চেঁচিয়ে বলল,

‘ লিটল ওয়াইফ? উঠে পড়ো রিক্সায়।বাই।’

অদ্রিজা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল নিজের সবটুকু দিয়ে। কিন্তু পেরে উঠল না রক্তিমের হাতের সাথে।নিজের হাতটাকে ছাড়াতে না পেরেই চেঁচিয়ে বলে উঠল অদ্রিজা,

‘ রক্তিম?ছাড়ুন আমার হাত।ব্যাথা পাচ্ছি আমি।’

রক্তিম ছাড়ল না হাতটা।হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েই ঝুঁকে পড়ল অদ্রিজার উপর।হাত জোড়া অদ্রিজার দুপাশে সিটে রেখেই মুখোমুখি মুখ রাখল।কঠিন কন্ঠেই বলল সে,

‘ আপনার প্রেমিক যখন হাত ধরে তখন কিন্তু আপনার হাত ব্যাথা হয় না অদ্রিজা।একেকজন ধরলে একেকরকম অনুভূতি হয় নাকি আপনার?অদ্ভুত!’

অদ্রিজা জ্বলে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ ফালতু কথা বলবেন না একদম রক্তিম।নেহার মামনির বিষয়টাকে ঢাকাচাপা দিতে এসব তুলছেন। তাই তো?’

রক্তিম সরে আসল এবার অদ্রিজার সামনে থেকে।নিজের সিটে গা এলিয়ে দিয়েই গাড়ির আয়নায় অদ্রিজার মুখটা পরখ করল।ফর্সা ধবধবে মুখটা লাল হয়ে আছে।হালকা বাতাসে উড়ছে চুলগুলো।রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার দিকে ফিরে বলল,

‘ আপনি দেখা করবেন না উনার সাথে। আমি যখন বলে দিয়েছি দেখা করবেন না তখন করবেন নাহ অদ্রিজা।নয়তো ভালো হবে না।একদম ভালো হবে না। ‘

অদ্রিজা তৎক্ষনাৎ জ্বলে উঠে বলল,

‘ অধিকার দেখাচ্ছেন?আমার উপর অধিকার দেখাচ্ছেন আপনি?’

রক্তিম আওয়াজ করে হাসল। অদ্রিজার কাছাকাছি মুখ এনে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল অদ্রিজার কপালের চুলগুলো।কানের কাছে মৃদু গলায় বলে উঠল,

‘ অধিকার? কে জানে।আপনি যা ভাবেন।এনিওয়েজ,আপনার অদ্ভুত লাগছে না আমায় দেখে?আমি আজ হাসছি, আপনার সাথে আগের মতোই কথা বলছি দেখুন।অনেকটা খুশি আজ।সে হিসেবে আপনার উপর অধিকার প্রয়োগ করা হলেও কি। আর না করলেও কি।’

অদ্রিজা ছোট ছোট শ্বাস ফেলল।রক্তিমের সাথে পাল্লা নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,

‘ দেখা তো আমি করবোই রক্তিম।আর আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে উনি কাল চলে যাবেন এইজন্যই আপনি এতটা খুশি।আপনি বাধ্য করেছেন উনাকে চলে যেতে?’

রক্তিম ঠোঁট চেপে হাসল।অদ্রিজার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করল।শীতের রাতে ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে উঠল অদ্রিজা।কাঁপতে থাকল সাদা তুলতুলে মুখের মোহনীয় ঠোঁটজোড়াও।রক্তিম মাঝে মাঝেই নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকাল সেই ঠোঁটজোড়ার দিকে।আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতে মন চাইল সেই ঠোঁটজোড়া।তবুও ছুঁলো না।গাড়ি চালাতে চালাতেই বলল,

‘ অদ্রিজা?আপনি কি আমার খেলায় আমায় হারিয়ে দিবেন? আমি হেরে যাচ্ছি। খুব করে হেরে যাচ্ছি আমি অদ্রিজা।আপনি চান কি আমি হেরে যাই? ‘

অদ্রিজা হতবাক হয়ে চাইল।রক্তিমের কথার আগাগোড়া কিছু বুঝে না উঠেই বলল,

‘ কি বলছেন কি?কিসবই বা বলছেন? আমি কোন খেলায় আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছি?’

রক্তিম মুচকি হাসল।হঠাৎ গাড়ি থামিয়েই অদ্রিজার দিকে তাকাল গভীর দৃষ্টিতে।হাত দিয়ে সরিয়ে দিল অদ্রিজার কপালের চুলগুলো।মুখটা অদ্রিজার কানের কাছে নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আপনি আমায় মুক্তি দিন ।আপনি নামক রমণী থেকে আমায় মুক্তি দিন অদ্রিজা। আমি জড়িয়ে যাচ্ছি।না চাইতেও আপনার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি।এখনও সময় আছে অদ্রিজা।আমায় মুক্তি দিন।আমি আমার মতো বাঁচতে পারব।আমি চাই না আপনি আমায় নিয়ে খেলেন।আমি সেই খেলায় অবশ্য হারব।এটাই আমার নিয়তি।কিন্তু আমি আপনার খেলার স্বীকার হতে চাই না অদ্রিজা।বাঁচতে চাই।নিজের মতো বাঁচতে চাই।তানিশা, রিমু, ওদের মতো নিজের নিজস্বতা হারিয়ে ছটফট করে মরতে চাই না আমি।আমি আজ তাদের অনুভূতি গুলো বুঝতে পারছি।বেশ করে বুঝতে পারছি আমি। জীবনের এত লড়াই পেরিয়ে আসা যুবকটা এই লড়াই টা মানিয়ে উঠতে পারছ না অদ্রিজা।সে এই লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালাতে চাইছে।আমায় ছেড়ে দিন অদ্রিজা।প্লিজ।মুক্তি চাই আমার।’

অদ্রিজা মূর্তির মতো বসে স্তব্ধ হয়ে চাইল রক্তিমের দিকে।এতক্ষন চুপচাপ রক্তিমের বলা সব কয়টা কথা শ্রবণ করেই কঠিন হয়ে উঠল তার চাহনি।তাচ্ছিল্য হেসেই বলে উঠল,

‘ শেষ?আমার মেয়াদ কাল শেষ আপনার কাছে রক্তিম?রিমু, তানিশা,এরপর আমিই ছিলাম।তাই না?এখন আমায় নিয়ে খেলা শেষ রক্তিম?এতটাই ঠুনকো একটা নারী আপনার কাছে?কেন?একটা মেয়েকে এতটা ছোট নজরে দেখেন কেন? আমি জানি, আমার থেকে মুক্তি নিয়ে আপনি আবারও অন্য কোন মেয়েকে ঠকাবেন।তার বিশ্বাসকে ঠকাবেন।কিন্তু আম তো মুক্তি দিব না।আপনাকে এই লড়াইটা লড়তে হবে রক্তিম।দেখা যাক কে এই লড়াইটা জিতে।আমি নাকি আপনি?’

রক্তিম সিটে গা এলিয়ে চোখ বুঝল।বুকের ভেতর মুহুর্তেই জেগে উঠল অদ্ভুত ব্যাথা।নিজের পাশে বসে থাকা রমণীটির কাছে এভাবে ভিক্ষুকের মতো চেয়েও মুক্তিটা পেল না সে।তবে কি এতদিন সে যেভাবে সবার অনুভূতিকে নিয়ে যেভাবে মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে দিয়েছে সেভাবে সেও ভাঙ্গবে?সেও সেভাবে মিশে যাবে হাজারটা কষ্ট নিয়ে?

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here