হৃদয়_নিবাসে_তুই #পর্ব_২৯,৩০

0
724

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_২৯,৩০
লেখনীতেঃ ভূমি
২৯

অদ্রিজার ঘুম ভাঙ্গতেই চোখে পড়ল রক্তিমের নেশা ধরানো চাহনি।ফ্লোরে হাুঁটু ঘেড়ে বসে বিছানার উপর হাত জোড়া রেখে মুখটা অদ্রিজার মুখের সামনেই রাখল।অদ্রিজার ঘুমন্ত চোহারার দিকে ঘোর লাগানো চাহনি ফেলে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার মাঝেই ঘুম ভাঙ্গল অদ্রিজার। চোখ মেলে রক্তিমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই বিব্রত হলো।বার কয়েক চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে বসল এবার।কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলেই এলোমেলো চুলগুলো খোঁপা করতে ব্যস্ত হয়েই বলে উঠল সে,

‘ কি সমস্যা?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনি?’

রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।হাতজোড়ার উপর মুখটা ভর দিয়ে রেখেই বলল,

‘ পরনারীর দিকে তাকিয়ে আছি নাকি?নিজের স্ত্রীর দিকে তাকানোর অধিকার নেই নাকি আমার অদ্রিজা?’

অদ্রিজা চাহনি কঠিন করল।কাঁটকাঁট চাহনি ফেলে রক্তিমকে দেখে নিয়েই শক্ত গলায় বলল,

‘ না নেই!আমি আপনার পরিচিত কেবল।স্ত্রী নয়।মনে নেই?’

রক্তিমের চাহনি এবার থমকাল।হাসি চকচক করা মুখটায় এবার কিঞ্চিৎ গাম্ভীর্য ফুটে উঠে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কিছুটা সময় চুপ থেকেই কৃত্রিম হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ মনে থাকলেই বা কি?এখন আপনি আমার স্ত্রী। স্ত্রী তো পরিচিতই হয়।অপরিচিত কেউ হুট করে স্ত্রী হতে পারে?তাই কেবল পরিচিত বললেও সমস্যা নেই।আপনি আমার পরিচিত ও এবং স্ত্রীও।’

অদ্রিজা খাট থেকে নেমেই উঠে দাঁড়াল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই বলে উঠল,

‘ কিসের স্ত্রী? কে স্ত্রী?আমি আপনার স্ত্রী নই।আপনার আমার বিয়েটা জাস্ট চুক্তি ছিল।আপনারও চুক্তি অনুযায়ী শর্ত পূরণ হয়েছে, আমারও।সেইম সেইম!কয়মাস পর ডিভোর্স পেপারে সাইন করলে সে চুক্তির বিয়ের ও কোন অস্তিত্ব থাকবে না।মনে রাখবেন।’

রক্তিম চোখ মুখ শক্ত করল।চোখমুখে টানটান কঠিন চাহনি নিয়ে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই উঠে দাঁড়াল।চোয়াল শক্ত করে অদ্রিজার দিকে কিছুটা ঝুকতেই অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।রক্তিম বাঁকা হাসল। হাতজোড়া অদ্রিজার দুইপাশে দেওয়ালে রেখেই অল্প দূরত্বে আবদ্ধ করল অদ্রিজাকে। ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কি মনে রাখব?আরেকবার বলুন।প্লিজ।’

অদ্রিজা কুঁচকানো ভ্রু নিয়ে সেভাবেই তাকিয়ে থাকল।আকস্মিকভাবে রক্তিম কাছে চলে আসায় অস্বস্তিতে তেঁতো হয়ে আসল চোখমুখ।রক্তিমের দুই হাতের মাঝে ঐটুকু জায়গায় হাঁসফাঁস করতে করতেই কন্ঠে ঝংকার তুলে বলল,

‘ কি হচ্ছে কি এসব?সরে দাঁড়ান।’

রক্তিমের ভাবলেশহীন জবাব,

‘ সরলাম না।এবার বলুন কি করবেন? ‘

অদ্রিজা বিরক্ত হলো।চরম রকম বিরক্তে থিতিয়ে উঠল মন প্রাণ।সাথে জম্মাল রাগ।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,

‘ আমার ভালো লাগছে না।সরে দাঁড়ান।’

রক্তিম ঠোঁট টিপে হাসল।অদ্রিজার কথাটাকে উপেক্ষা করেই চোখ টিপল।মাঝখানের কয়েক ইঞ্চির দূরত্বটাও মিটিয়ে নিতে লাগলে অদ্রিজা হাত জোড়া রক্তিমের বুকের উপর ভর করে রাখল।যাতে রক্তিম এগিয়ে আসতে না পারে।তা দেখেই হু হা করে হেসে উঠল রক্তিম।অদ্রিজার থেকে বেশ কিছুটা সরে গিয়েই হাসতে হাসতে বলে উঠল,

‘ প্রতিরক্ষার পন্থাটা দারুণ ছিল!কিন্তু রক্তিমের কাছে এই পন্থাটা কিছুই নয়।আপনি বৃথা চেষ্টা করছিলেন আর কি।’

‘ তো?’

‘ তো?তো আপনাকে এসব নরমাল প্রতিরক্ষার পন্থা অনুসরণ করলে চলবে না অদ্রিজা।রক্তিম থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে আরো কঠিন কঠিন পন্থা বেঁছে নিতে হবে।নয়তো সুদে আসলে সবটাই মিটাতে হবে আপনাকে। বলেছিলাম না মিসেস মাহমুদ?’

অদ্রিজা জ্বলে উঠল।মন মেজাজ সব বিগড়ে গেল কয়েক মুহুর্তেই।চোখজোড়ায় চরম বিতৃষ্ণা আর ক্ষোভ নিয়ে রক্তিমের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন এক্ষুনি পারলে এক্ষুনি শেষ করে ফেলত এই লোকটাকে।কিন্তু তা বাস্তবে সম্ভব হলো না।শক্ত কন্ঠেই নজরটা আরো জ্বলন্ত করে তুলে বলে উঠল,

‘ এসব নাটকের কি মানে রক্তিম?আপনার এই মনে হচ্ছে আমি আপনার স্ত্রী আবার কিছুক্ষন পর মনে হবে আমি কেবলই পরিচিত।তাই না?যেখানে বিয়ের শুরুতেই ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করে নিয়েছেন সেখানে আবার মিসেস বলছেন কোন অধিকারে?কয়মাস পর আপনি আপনার জায়গায় আমি আমার জায়গায়।তাই বলছি, নতুন করে এসব ড্রামা করবেন না।একদমই না।ডিভো…’

অদ্রিজা বাকি কথাটা বলে উঠতে পারল না।তার আগেই রক্তিমের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল তার ঠোঁটজোড়া।মৃদু কম্পনে কেঁপে উঠল তার লতানো রূপময় শরীর।রক্তিমের হাতজোড়া নিজের কোমড়ে অনুভব করেই শিউরে উঠল লেমকূপ গুলো।নিঃশ্বাস অতিদ্রুত ঘন হয়ে এল।শিরা উপশিরায় বহমান রক্ত সর্বোচ্চ বেগে প্রবাহিত হলো। হাত পায়ের কম্পন নিয়েই বিস্মিত হলো সে।হাতজোড়া দিয়ে ইচ্ছে মতো রক্তিমের বুকে কিল, ঘুষি বসিয়েও নিজেকে ছাড়ানো গেল না।রক্তিম বাঁকা হাসল।মিনিট কয়েক পর অদ্রিজার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়েই ঠোঁট কাঁমড়াল।অদ্রিজা হাঁফাল।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েই দ্রুত গলায় বলে উঠল,

‘ সাহস কি করে হয় আপনার এরকম করার?’

রক্তিম আবার ঠোঁট টেনে বাঁকা হাসল।হাতজোড়া দিয়ে অদ্রিজার কোমড় আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরেই মুখের দিকে ঝুকল।কানের কাছে গম্ভীর শান্ত গলায় বলল,

‘ আর কখনো ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করলে এই পানিশমেন্টই পাবেন বারবার।এবার আপনিই ডিসাইড করুন, এই শাস্তিটা উত্তম নাকি বারবার আলাদা হয়ে যাবেন, ডিভোর্স হয়ে যাবে এসব বলে বলে ঘ্যানঘ্যান করা উত্তম?’

অদ্রিজা রাগ ফুসল।মুখ ফুলিয়ে কিছু না বলেই চুপ রইল।ফর্সা ধবধবে মুখ লাল হলো মুহুর্তেই।হাতজোড়া দিয়ে ঠোঁট মুঁছতে মুঁছতেই চোখে মুখে বিস্তর ক্রোধ নিয়ে রক্তিমের দিকেই তাকিয়ে রইল সে।রক্তিম হাসল।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,

‘ আমি অনেক হ্যান্ডসাম আমিও জানি।আপনার এভাবে চোখ দিয়ে গিলে নেওয়ার কোন মানে হয় না তাই অদ্রিজা।দৃষ্টি সরান।’

অদ্রিজা দৃষ্টি সরাল না।ঠিক সেভাবেই জ্বলন্ত আভা চোখে ফুটিয়ে তুলে তাকিয়ে রইল।যেন এক্ষুনিই ভস্ম করে ফেলবে। রক্তিম ছোট্ট শ্বাস ফেলেই ভ্রু নাচাল। অদ্রিজার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিয়েই বুকের বাম পাশটায় হাত রাখল। ঠোঁট কামড়ে বলল,

‘ উহ!এভাবে তাকাবেন না।এখানে লাগে আমার।’

অদ্রিজা চাহনি আরো ক্ষ্রিপ্ত করল।চোখমুখ টানটান করেই স্পষ্ট গলায় বলে উঠল,

‘ সমস্যা কি আপনার? আমার সত্যিই আপনাকে চরম রকম বিরক্ত লাগছে রক্তিম।অসহ্য লাগছে আপনাকে।আমি এতদিন স্বাধীন ছিলাম।আমার জীবনটা আমার মতোই অনুভব করেছি।আপনি এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।আমার ইচ্ছে, অনিচ্ছা না জেনেই আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইছি না জেনেও বারবার এমন বিহেভ করছেন যেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি কি ভাবেন,আপনার সেসব কথায় আমি লজ্জ্বায় লাল হয়ে বসে থাকব?মুখ নামিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলব?একদম ভুল।আমি আপনাকে এখন আর ভালোবাসি না।ওটা কয়েকদিনের ভালোলাগা ছিল মাত্র।এর বাইরে কিছুই নয়।আর ঐ যে বলেছিলেন না সাহানুভূতি?সহানুভূতিই ছিল।সো আপনি কোন কথা বা কাজ দ্বারা আমায় বিব্রত করবেন না প্লিজ।আপনার সেসব কথায় বা কাজে কিছু যায় আসে না আমার।’

রক্তিমের চাহনি গম্ভীর হলো এবার।চুপচাপ সবগুলো কথা শুনেই মাথা দুলাল।গম্ভীর রাশভারী কন্ঠে বলল,

‘ সমস্যা নেই।কিছু যায় আসার পন্থা আমি খুঁজে নিব অদ্রিজা।আপনি অপেক্ষায় থাকুন।’

কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রক্তিম।অদ্রিজা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল।রক্তিমের কথার ভাবার্থ বুঝতে না পেরেই চোখমুখে হতাশা নামল।এই লোকটা আসলে কি চায়?কি করতে চায়?কখনো গম্ভীর তো কখনো আবার চরম রকম বিরক্তিকর!কেমন জানি!

.

অত্রিয়ার কাঁধে ব্যাগ।চুলগুলো দুই ঝুটি করা।ছোট্ট বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটা বড্ড মায়াময়।চিকন পাতলা ঠোঁটজোড়ায় হাসির রেশ।সকাল আটটায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়েই ছোট ছোট পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল সে।হঠাৎ ঐ পেঁছন থেকে কেউ বলে উঠল,

‘ এই পুচকি?’

অত্রিয়া পা থামাল।মায়ময় চোখজোড়া দিয়ে চারদিক পর্যবেক্ষন করে ভ্রু কুঁচকাল।কন্ঠটা কার সেটা স্পষ্ট তার কাছে।ঘাড় ঘুরিয়ে পেঁছন ফিরেই লোকটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিল সে।মৃদু গলায় বলল,

‘ আপনি?’

লোকটা এগিয়ে আসল।লম্বা চওড়া শরীরটা অত্রিয়ার কাছাকাছি এসে উপস্থাপন করতেই গম্ভীর হলো তার চোখমুখ।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই কি বলবে না বলবে হাঁসফাঁস করল।অত্রিয়া তা দেখেই ভ্রু কুঁচকাল।বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ কি হলো? কিছু বলছেন না যে রায়মান ভাইয়া?আপনি এখানে এই সকালবেলায় হঠাৎ কি উপলক্ষ্যে?’

রায়মান ছোট ছোট চোখ করে তাকাল।ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করেই বলল,

‘ তোমার জন্য।’

অত্রিয়া ভ্রু কুঁচকাল।চোখের দৃষ্টি সরু করেই জিজ্ঞেস করল,

‘ আমার জন্য?আমার জন্য কেন?’

‘ তোমার বয়স কত?’

রায়মানের আকস্মিক এই প্রশ্নে বিস্মিত হলো অত্রিয়া।চোখেমুখে তীব্র বিস্ময় নিয়ে কোমড়ে হাত রেখে রায়মানের দিকে তাকিয়ে থাকল। রায়মান বুঝতে পারল সাংঘাতিক ভুল করে ফেলেছে সে। মিনিট কয়েক চুপ থেকেই উঁশখুশ করে বলে উঠল,

‘ আই মিন, তোমার বয়স আঠারো হয়নি এখনো?স্যরি!ভুলে ঐ প্রশ্নটা বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে।’

অত্রিয়া হতাশ হলো।এই লোকটা তাকে এতটা ভয় পায়? ঠোঁট চেপে রেখে মৃদু হাসল সে।টানটান কন্ঠে অন্যদিকে ফিরেই বলে উঠল,

‘ আঠারো হতে আরো দুই মাস বাকি। কেন?’

রায়মান আবারও অপ্রস্তুত হলো।মাথার চুলগুলো চুলকেই অপ্রস্তুত হেসে বলল,

‘ না মানে এমনিই।বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে তো তাই।’

অত্রিয়া চমকাল।ভ্রু জোড়া আরো কিছুটা সংকুচিত করেই পরক্ষনেই বলল,

‘ তো?’

‘ তো?কিছু না।বিয়েটা করে নিচ্ছি এই আরকি।তোমাকে বলতে এসেছিলাম।তুমি বড্ড ছোট আমার থেকে।নয়তো,’

‘ নয়তো?’

রায়মান মৃদু হাসল। বলল,

‘ কিছু না।বিয়ের বয়সটা হওয়া দরকার ছিল তোমার।এত পিচ্চি! ‘

অত্রিয়া কাঁটকাঁট চাহনিতে তাকাল।স্পষ্ট গলায় বলল,

‘ দুই মাস পর হবে আরকি।আপনার মতো আমার অতো বিয়ে নিয়ে তাড়া নেই ভাইয়া।আপনি বরং বিয়েসাদি করে নিন দ্রুত। আমাদের দাওয়াত দিবেন। ঠিকাছে? ‘

রায়মান ঠোঁট উল্টে হাসার চেষ্টা করেই বলল,

‘ আমার বিয়ে হলে খুশি তুমি?যার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতা তারই বিয়ে হয়ে যাবে আর তুমি বসে থাকবে?আমার বউ কিন্তু আমার দিকে অন্য কোন মেয়ের নজর পড়তে দিবে না।আগের মতো সেভাবে তাকাতেও পারবে না।’

‘ তো?’

‘ আপসোস হবে না আমাকে ড্যাবড্যাব করে না দেখতে পেরে?’

অত্রিয়া মৃদু হাসল। বলল,

‘ কেন হবে?দিনে কত ছেলের দিকেই ওভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি তার হিসেব নেই। আপনি একজন তার মধ্যে না থাকলে এই আর এমন কি।নতুন আরো কতশত ক্রাশ হাজির হবে । আপনি বরং আপনার বউকে নিয়ে সুখে সংসার করুন ভাইয়া। শুভকামনা রইল।আসি তবে?প্রাইভেটে লেট হয়ে যাবে।’

রায়মান পথ আগলে দাঁড়াল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ তুমি অন্য কোন ছেলের দিকেও এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো অত্রি?’

অত্রিয়া ঠোঁট টিপে হাসল।

‘ হ্যাঁ!কতশত ছেলের দিকেই তো তাকিয়ে থাকি।কেন?আপনি কোন মেয়ের দিকে তাকান না? এতটা লয়্যাল?ওয়াও!’

রায়মান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ তাকাই।একজনের দিকেই।’

অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ আপনার হবু স্ত্রী রাইট?অনেক ভালো একটা হাজব্যান্ড পাবে সে।সত্যিই দুনিয়াতে এমন ছেলেও থাকে?আমি শকড!আপনাদের এই বিয়েতে সত্যিই খুব খুশি খুশি ফিল হচ্ছে ভাইয়া।এতটা ভালোবাসা দুনিয়ায় থাকে?’

রায়মান নিরাশ হলো।নিজের থেকেও সাত বছরের ছোট পিচ্চি এই মেয়েটির কথাবার্তা, চালচলন সবটাতেই হতাশ হলো সে।সকাল সকাল সেই হতাশায় মুখ কালো করল সে।গম্ভীর গলায় বলল,

‘ বিয়েটা করব না আমি।’

‘ ওমাহ!কেন?জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে নাকি আপনাকে?’

রায়মান মাথা দুলাল।যার অর্থ হ্যাঁ।অত্রিয়া আকাশসমান অবাক হয়েই চোখজোড়া বড়বড় করল।তীব্র বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,

‘ ওমাহ!সে কি!এটাতো খুবই ডেঞ্জারাস কেইস!এতদিন শুনেছি মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।এখন দেখছি ছেলেদেরও বিয়ে দিয়ে দেয়।ইউনিক! ‘

রায়মান আরও একধাপ হতাশ হলো।এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পড়াই চরম রকমের ভুল হয়েছে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা সেই চাহনির মজা নিতে গিয়েই কবে যে এই মেয়েটাকেই ভালোবেসে ফেলল কে জানে!এমন পিচ্চি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলা একদমই উচিত হয়নি তার।চরম মাফের ভুল। এই মেয়েকে যে সে ভালোবাসে এটা বুঝাতেই তো তার বছর পেরিয়ে যাবে।আশ্চর্য!

#চলবে…..

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩০
লেখনীতেঃভূমি

আয়নায় স্পষ্ট হয়ে ফুটল লাবণ্যময়ী শরীরটার প্রতিবিম্ব।মোমের মতো সাদা ধবধবে কোমল শরীরটায় আজ গাঢ় সবুজ রংয়ের শাড়ি মোড়ানো।সদ্য ভেজা লম্বা চুলগুলো কাঁধের একপাশ দিয়ে এনে সামনে রাখা।কোমড় পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পানির ঝাপটায় শাড়ির একাংশ ভিজিয়ে তুলল মুহুর্তেই সেই ভেজা চুল।পেটের দিকে আঁচলটা ভিজে গিয়েই লেপ্টে বসল কোমল ত্বকে।অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে চাইল।চুলগুলো তৎক্ষনাৎ হাত দিয়ে সরিয়ে পেঁছনে ফেলেই পেটের আঁচলটা তুলে ঝাড়া দিতেই কেউ একজন নিঃশব্দে হাসল।অদ্রিজা বুঝল না।হাত দিয়ে আঁচলটা হালকা ঝেড়েই তোয়ালে নিয়ে ভেজা চুলগুলো মুঁছড়ে নিবে ঠিক তখনই কেউ এসে তার পেছনে দাঁড়াল।হাতজোড়া বুকে ভাজ করেই মোহনীয় চাহনিতে তাকিয়ে রইল সামনের লাবন্যময়ী মেয়েটির দিকে।ভেজা কালো চুলে চোখমুখে স্নিগ্ধতার আভাস যেন তার ভেতরটা মাতাল করে তুলল মুহুর্তেই।ফর্সা দুধে আলতা সাদা রংয়ের মুখশ্রীতে ঘন পাঁপড়ি ওয়ালা কালো চোখ।চিকন পাতলা খয়েরী ঠোঁটে আদ্র ভাব।রক্তিম মৃদু হাসল।অদ্রিজার হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে নিয়েই ঘোর লাগানো কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

‘ এভাবে নিজের রূপে ঘায়েল করার বুদ্ধিটা কিন্তু চমৎকার আপনার!একটা মানুষকে এভাবে কন্ট্রোললেস করে দেওয়ার প্ল্যান কিন্তু একেবারেই করা উচিত হয়নি আপনার।’

অদ্রিজা চমকে তাকাল।কথাগুলো শুনেই পেছন ফিরে রক্তিমের চোখের দিকে তাকাতে গিয়েই নড়েচড়ে উঠল ভেতরটা।চোখাচোখি চোখ রাখতে না পেরে অস্বস্তিতে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল সে।কন্ঠটা কঠিন রাখার চেষ্টা করেই ঠোঁট চেপে বলে উঠল,

‘ আশ্চর্য!একটা মেয়ে রুমের ভেতর কি করছে না করছে না জেনে, নক না করেই ভেতরে ডুকে গেলেন কেন?অদ্ভুত!’

রক্তিম গা জ্বালানো হাসি হাসল।মৃদু শ্বাস ফেলেই চোখ টিপে বলল,

‘ রুমের ভেতর অতিশয় লাবণ্যময়ী, রূপবতী কেউ থাকলে তাকে দেখার লোভ সংবরন করা বড্ড দায়। ধরে নিন আমিও সেই কারণেই নক না করে ডুকে পড়লাম।তাছাড়া অন্য কারো রুমে তো ডুকিনি।তাই না?’

অদ্রিজা রাগল।রাগে হাঁসফাঁস করেই তীর্যক চাহনিতে তাকিয়ে রইল রক্তিমের দিকে। বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ ফ্লার্টিং করবেন না একদম!’

রক্তিম আওয়াজ করে হাসল।ফর্সা ধবধবে রং, খাড়া নাক, বড়বড় চোখ আর খোঁচা দাড়িওয়ালা মুখে সেই হাসিটা চমৎকার মানাল।ট্যারাব্যাঁকা দাঁত গুলো অবাক রকম সুন্দর!অদ্রিজা আড়চোখে সেই হাসিটা পরখ করতেই ধরা খেয়ে বসল রক্তিমের চোখের দৃষ্টিতে। মুহুর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে ইতস্থত বোধ করে এদিক ওদিক তাকাল।মৃদু শ্বাস ফেলে কিছু বলবে তার আগেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ উহ!আমি জানি আমার হাসিটা মেয়েদের ভীষণ প্রিয়।আপনি চাইলে সরাসরিই তাকিয়ে থাকতে পারেন অদ্রিজা।নো প্রবলেম।’

অদ্রিজা চোখ বড়বড় করে চাইল।চোখেমুখে ফুটে উঠল তীব্র হতাশা।এইভাবে ধরা খেয়ে বসবে জানলে তাকাতই না সে রক্তিমের হাসির দিকে।ইশশ!অদ্রিজা চোখজোড়া একবার বন্ধ করেই আবার খুলল। বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলেই বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ আমি কেন তাকাতে যাব?আশ্চর্য! ‘

রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজাকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ঝুকে দাঁড়াল।থুতনিটা অদ্রিজার কাঁধে রেখেই আয়নায় পরখ করল অদ্রিজা নামক রমণীটিকে।সৌন্দর্যে নুইয়ে থাকা রমণীটির চোখেমুখে মিশ্র রকম অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।সেই অনুভূতিতে যেমন রাগ, তেমনই লজ্জ্বা, আবার তেমনই বিরক্তি উপস্থিত।কৈাতুহল ও আছে বোধ হয়।ঠোঁট চেপে হেসেই অদ্রিজার ভেজা চুলে নাক ডুবাল রক্তিম।চোখমুখ সেই ভেজা চুলের ধাপটে ভিজে উঠতেই নেশাময় হয়ে উঠল তার ভেতরটা।ঠোঁট দিয়ে অদ্রিজার কাঁধে স্লাইড করতে করতেই নাক ঘষল।শ্বাস প্রশ্বাস গুলো উষ্ণ ছোঁয়া উপছে দিল অদ্রিজার পাতলা চামড়ার উপর।সেই ছোঁয়া, স্পর্ষ, শ্বাস প্রশ্বাসের তাড়নায় ভীষণরকম কেঁপে উঠল অদ্রিজা।পুরুষটাকে ফিরিয়ে না দিতে পেরেই ব্যর্থ মন ক্ষনে ক্ষনে শিউরে উঠল।হাত জোড়া খামচে নিল শাড়ির আঁচল।পায়ের আঙ্গুল গুলো খামচে ধরলো ফ্লোর।পুরো শরীর অদ্ভুত শিহরনে কাঁপতে লাগল। রক্তিম মুচকি হাসল। ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ এত সহজেই নুঁইয়ে যাচ্ছেন? লজ্জ্বায় লাল হয়ে যাচ্ছেন?উফফস!আমি তো এবার সত্যিই কন্ট্রোল করতে পারব না নিজেকে।’

অদ্রিজা চমকাল।আয়নায় তাকিয়ে পরখ করল লজ্জ্বায় লাল হয়ে উঠেছে তার মুখ চোখ। চোখেমুখে রাগ ক্ষোভের সেই রেশ না দেখেই হতাশ হলো সে।মুখ চেখে কঠিন কঠিন ভাব এনেই দাঁতে দাঁত চেপেই জড়ানো গলায় বলে উঠল,

‘ ক্ কি হচ্ছে কি এসব?ছাড়ুন আমায় রক্তিম।আমি আপনাকে নিষেধ করেছিলাম এভাবে অনুমতি না নিয়ে আমাকে ছুঁতে।’

অদ্রিজার সেই কথাকে বিন্দুমাত্রও পাত্তা দিল বলে মনে হলো না রক্তিম।মুখে তার বাঁকা হাসি স্থির।আয়নায় সেই বাঁকা হাসিটা দেখেই শরীর জ্বলে উঠল অদ্রিজার।চোখে মুখে তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রক্তিম আয়নায় তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়েই ঠোঁট কাঁমড়ে অদ্ভুত রকম হাসল।হাতজোড়া অদ্রিজার ভেজা চুলের ধাপটে ভিজে উঠা আদ্র শাড়ির ভাজে ডুকিয়েই পেটের ভেজা পাতলা চামড়ায় ছুঁয়ে দিতেই অদ্রিজার শরীরের কম্পন আকস্মিক ভাবে বাড়ল।তার ছোট্ট কোমল শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছুঁয়ে গেল শীতল চামড়ায় উষ্ণ হাতের সেই ছোঁয়া।দাঁতে দাঁতে চেপে চোখজোড়া বন্ধ করেই রক্তিমের হাতজোড়া নিজের হাতজোড়া দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল সে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস আর বুকের ভেতর দ্বিগুণ স্পন্দনে কেঁপে উঠা হৃদপিন্ডকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়েই রক্তিমের হাতজোড়া ছাড়িয়ে দ্রুত সরে দাঁড়াল।যুদ্ধ থেকে লড়ে আসা সৈনিকের ন্যায় চোখেমুখে তীব্র ক্লান্তি ফুটিয়েই চোখ ছোট ছোট করে চাইল রক্তিমের দিকে।রক্তিমের মুখে তখনও দুষ্টুমিমাখা হাসির রেশ।অদ্রিজা সেই হাসি দেখে চটাফট কঠিন কন্ঠে কিছু বলে উঠতে পারল না।হাত পা এখন ও মৃদু কাঁপছে।হৃদপিন্ডের স্পন্দন এখনও দ্রুত গতিতে চলছে।রক্ত গুলো এখনও দ্বিগুণ বেগে শিরায় উপশিরায় বয়ে চলছে।নিজেকে স্থির করার চেষ্টায় বেশ কিছুটা সময় চুপ রইল অদ্রিজা।রক্তিম মুখে হাসির রেশটা দ্বিগুণ করেই বলে উঠল,

‘ এটুকুতেই আমার কাছে হার মেনে গেলেন?লজ্জ্বায় লাল হয়ে বুঝিয়ে দিলেন আপনি আমায় ভালোবাসেন?চমৎকার!এমনটা জানলে আরো আগেই এসব টেকনিক খাটাতাম।সুন্দর না? ‘

অদ্রিজা মিনমিনিয়ে চাইল।জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

‘ সমস্যা কি আপনার?সকাল সকাল আমার সাথে কি শুরু করে দিয়েছেন?আপনার কাছে তো এক মুহুর্তও নিরাপদ থাকব বলে বোধ হচ্ছে না। আমি এক্ষুনিই আম্মুদের কাছে যাব।’

‘ সুইটহার্ট বলে দিয়েছে আপনি এখানে থাকবেন।সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি ডিসাইড করেছি আমার ওয়াইফ আমার সাথে থাকবে।এবার আমি শতবার চান নয়তো হাজার বার চান এখানে থেকে পালানো আপনার জন্য রিস্কি।আমার থেকে পালানো আপনার জন্য আরো রিস্কি! চরম রকম ডেঞ্জারাস।মাইন্ড ইট!’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।রক্তিমের কথা গুলো শুনেই বিরক্তে রি রি করে উঠল শরীর মন।হাতজোড়া মাথায় নিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল পেঁচিয়েই রক্তিমের দিকে তাকাল সে।তাচ্ছিল্য নিয়ে কৃত্রিম হেসেই বলে উঠল,

‘পালাব কেন আমি? আমি কি আসামী?আমি সসম্মানে এই বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যাব।আজই!কি করবেন?’

‘আগে গিয়ে তো দেখান। তারপর না হয় বুঝা যাবে কি করা যায়, কি করা উচিত।তবে যাই করি, শাস্তিটা আপনার জন্য খুব একটা ভালো হবে না অদ্রিজা।’

কথাটা বলেই ঠোঁট টেনে হেসে বেরিয়ে গেল রক্তিম। অদ্রিজা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।চোখমুখ কুঁচকে রক্তিমের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে বিরক্তি নিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ল।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা ধপ করে লাগাতে নিতেই রক্তিমের মুখটা আবারও ভেসে উঠল মুখের সামনে।মুখে চমৎকার হাসি ফুটিয়েই হালকা ঝুকে চোখ টিপে বলল,

‘ ভয় নেই!শাস্তিগুলো আজকের মতোই হবে।আজকের শাস্তিটা কি জন্য দেওয়া হলো জানেন?সকাল সকাল শাড়ি পরে নিজের সৌন্দর্যে বিমোহিত করার ফাঁদ পাতার জন্য এই শাস্তি।পরবর্তীতেও ভুল করবেন তো এমন শাস্তি গুলোই কপালে আছে ভেবে নিবেন।আর ভদ্র মেয়ে হয়ে থাকলে তো নো প্রবলেম।’

অদ্রিজা বিরক্তে চোখ মুখ লাল করল। রক্তিমের কথা গুলোতে চরম বিরক্তি দেখিয়েই মুখের উপর আওয়াজ করে দরজা লাগাল।রাগে ফোঁসফাসঁ করে দরজা লাগিয়ে হেলান দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল রক্তিমের হাসির আওয়াজ!অদ্ভুত!এই লোকটা এত কেন হাসে? এত কেন হাসিখুশি!

.

পার্কে তরতাজা রোদ।কাঠের বেঞ্চিগুলোর একপাশে নেহা। অন্যপাশে দিহান বসা।দিহানের হাতে সাদা কাগজের উপস্থিতি স্পষ্ট।নেহা ভ্রু কুঁচকে সেই কাগজগুলোর দিকে তাকাল।খিলখিলিয়ে হেসেই প্রশ্ন ছুড়ল দ্রুত,

‘ কিরে? কিসের কাগজ ওসব?’

দিহান মাথা তুলে চাইল।মাথার উপর সূর্যের তীর্যক রোদে ঘেমে একাকার হয়ে উঠল পরনের চেইকের শার্টটা।একহাতের তালুতে কপালের ঘামটা মুঁছে নিয়েই ম্লান হাসল দিহান।মৃদু গলায় বলল,

‘ শিট।’

নেহা হাসল।ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ আমি আরো ভাবলাম তুই আমার জন্য প্রেমপত্র নিয়ে হাজির হয়েছিস কিনা।ভয় পেয়ে যদি আমার প্রাপ্য প্রেমপত্র আমার হাত পর্যন্ত না পৌঁছে দিস তাই চটফট জিজ্ঞেস করে বসলাম কিন্তু ওটা তো প্রেমপত্র নয় আমার শত্রু পড়ালেখার পত্র।চরম রকম ডস খেলাম!’

দিহান হাসল।রোদের উত্তাপে মুখচোখ কালো করেই বলল,

‘ প্রেমপত্র দেওয়ার সাহস আছে আমার।সময় আসলে ঠিক দিয়ে দিব।’

নেহা ক্লান্ত গলায় বলল,

‘ অপেক্ষায় রইলাম সেইদিনের যেইদিন তুই প্রেমপত্র গুঁজে দিবি আমার হাতে।হাতে হাত ছুঁয়ে বলে দিবি ভালোবাসি।আমি সেইদিনের অপেক্ষায় আছি।খুব বাজে ভাবে অপেক্ষা করছি সেই দিনটার জন্য।তাত্তাড়ি বলে ফেল তো বেইব!’

দিহান ফিক করে হাসল।এই মেয়েটাকে বুঝে উঠা দায়।এই সিরিয়াস আবার এই মজা।এই মনে হয় তার কথায় হাজারটা দুঃখ আবার এই মনে হয় তার কথার মতো প্রানোচ্ছ্বল কথা আর হতেই পারে না।দিহান হেসেই নেহার দিকে চাইল।চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

‘ এত কিসের তাড়া?তাড়াহুড়ো করে কোনকিছু করা ভালে নয়।জানিস না?’

নেহা খিলখিলিয়ে হাসল।দিহানের দিকে তাকিয়েই চোখ টিপে বলণ,

‘ ধুররর!তুই জানিস না?শুভ কাজে দেরি করতে নেই?’

দিহান আওয়াজ করে হেসে উঠল এবার।সঙ্গে হাসল নেহাও।পার্কের উজ্জ্বল উত্তপ্ত রোদে কাঠের বেঞ্চিতে একজোড়া ভালোবাসার মানুষ হৃদয় থেকে হেসে উঠল।দুইজন দুইজনের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে।এর থেকে ভালো দৃশ্য আছে কি আর?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here