হৃদয়_নিবাসে_তুই #পর্ব_৩১,৩২

0
770

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩১,৩২
লেখনীতেঃ ভূমি
৩১

সন্ধ্যা থেকে অল্প কিছু পর। সময়টা বোধ হয় আটটা কি নয়টা। বেলকনির হলদেটে আলোয় আকাশ দেখছিল অদ্রিজা ।হালকা ফুলো পেট।পরনে ছাঁই রাঙ্গা কামিজ।চুলগুলো অগোছালভাবে খোঁপা করা।রক্তিমদের বাসাটা তেমন নিশ্চুপতায় ঘেরা থাকে না আগের মতো।সুইটহার্ট সর্বক্ষণ তাকে হাসিখুশি রাখে।তবুও আজ তার মন খারাপ।বিষন্নতার কালো ছায়ায় ছুঁয়ে যাচ্ছে কোমল মন।ইচ্ছে হলো একছুটে বেরিয়ে যাক এই বাসা থেকে। কিন্তু রক্তিম নামক মানুষটার জন্য তাও সম্ভব নয়।চার দেওয়ালের বদ্ধ রুমে এই কয়দিন থাকতে থাকতেই ঝিমিয়ে উঠল মন।নিঃশ্বাস,প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন গুলো নিস্তেজ হয়ে উঠল।নিজের মনে রক্তিমের জন্য ভালোবাসা, রাগ, ক্ষোভ এসবের সাথে লড়তে লড়তেই দিন পার হচ্ছে।তবুও কোন রকম সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না সে।রক্তিমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচ্ছেদ নিয়ে নেওয়া উচিত?নাকি ভালোবেসে আগলে নেওয়া?বারংবার ভেবেও এসব সমীকরণের কোন সমাধান তার মস্তিষ্ক কিংবা মন দিতে পারল না।অদ্রিজা হতাশ হলো।সেসব কঠিন ভাবনার হেরফের ঘটল বাসার সামনে গাড়ি থেকে নামা এক মাঝবয়সী মহিলাকে দেখে।চোখেমুখে তীব্র প্রখরতা।বড়বড় চোখে গম্ভীর স্তম্ভিত চাহনি।পরনে সবুজরাঙ্গা শাড়ি।দেখতে কোন এক মহীয়সী মানবীর মতোই এই মহিলা।কে বলবে এই মহিলা তার সন্তানকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গিয়েছিল কোন এক সময়?আদৌ কি সত্যি এই কথাটা?অদ্রিজা থমকাল।এই মানবীটিকে এখানে দেখে বিস্মিত হলো।কিন্তু তার বিস্ময়ে কিই বা এসে যায়?ভদ্রমহিলা বেশ গম্ভীর চাহনিতে বার কয়েক বিল্ডিংয়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে গেইট খুলে ভেতরে ডুকলেন।অদ্রিজা চোখ ছোট ছোট করল। বেলকনি থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেই ড্রয়িং রুমে এসে থমকে দাঁড়াল ভারী শরীর নিয়ে।সুইটহার্টকে দেখে নিয়েই বিস্ময নিয়ে বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে,

‘ সুইটহার্ট?রক্তিমের আম্মু আবার দেশে ফিরেছে। জানো তুমি?নেহাকে কল করে বলো তো।ওর বড্ড ইচ্ছে উনার সাথে কথা বলার, দেখা করার।’

সুইটহার্টের হাসিখুশি মুখটা মুহুর্তেই গম্ভীর হলো।চাহনি হলো গমগমে।ভাজ হওয়া চামড়ার ভাজে ভাজে ফুটে উঠল এক চরম কঠোরতা।গম্ভীর দৃষ্টিতে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই শুধালেন তিনি,

‘ তুমি কি করে জানো অদ্রি?আমরা তো জানি ও গতবার যখন এসেছিল, চলে গিয়েছিল।আবার এসেছে? কখন?’

অদ্রিজা নিশ্চল চাহনিতে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠল,

‘ আমি তো জানি না সুইটহার্ট । বেলকনি দিয়ে দেখলাম মাত্র।উনি এই বাসায়ই আসছেন হয়তো।দেখে নিও।’

অদ্রিজার পুরো কথাটা শেষ হলো কি হলো না তার আগেই বাসার কলিংবেল বাঁজল। ঘাড় ঘুরিয়ে সেইদিক পানেই তাকাল অদ্রিজা।চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা ফুটিয়েই বলে উঠল,

‘ এই তো!এই যে উনিই এসেছেন।আমি শিউর!’

সুইটহার্ট হতাশ হলেন।গম্ভীরভাবে দরজার দিকে চোখ জোড়া দিয়ে তাকিয়েই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।কপালের চুলগুলো কানে গুঁজে নিয়েই গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,

‘ আমি দেখছি।তুমি বসো অদ্রি।’

অদ্রিজা বসল না।চোখজোড়া নিয়ে দরজার পানে তাকিয়ে থেকেই চঞ্চলতা নিয়ে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।রুহানা নামক মহিলাটাকে এর আগেও বেশ কয়বার দেখেছে।নেহার চেহারার সাথে পুরোপুরি মিল এই মহিলার চেহারা।চোখ, নাক, ঠোঁট, চুল পুরোটাই।তাই হয়তো উনার প্রতি নেহার এই টান!অদ্রিজা আনমনেই হাসল।আচ্ছা?রক্তিমের আম্মু এই বাসায় এসেছে। এটা শুনে রক্তিমের কি রিয়্যেকশন হবে?খুশি হবে?নাকি রেগে যাবে?অদ্রিজা বুঝল না।অপেক্ষারত চোখজোড়ার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতেই চোখের সামনে ফুটে উঠল সেই মহিলার ভাসমান চেহারা!বয়স অনুয়ায়ী মহিলার সৌন্দর্যের এটুকুও দফারফা ঘটেনি।বোঝায় দায় তার বয়সের অংক!অদ্রিজা হাসল।ঠোঁট উল্টে সুইটহার্টের কাছে গিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ সুইটহার্ট?আমার শাশুড়ী আম্মা একেবারে তার ছেলের মতো সুন্দর!এদের এত সৌন্দর্য কোথায় রাখে বলো তো।’

সুইটহার্ট হালকা হাসল।অদ্রিজার গোল গোল ফুলো মুখে হাত রেখেই মুচকি হেসে বলল,

‘ যেমন ভাবে তুমি তোমার সৌন্দর্য রাখো সেভাবেই হয়তো!ইদানিং আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছো তুমি অদ্রি!এজন্যই জান এখন তোমার প্রেমে হাবুডুবু খায়!সুইটহার্টের কথা মনে পড়ে নাকি তার?’

অদ্রিজার হাসিটা এবার মিলিয়ে এল কিছুটা।রক্তিম কি আদৌ তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে?আদৌ ভালোবাসে তাকে?হুট করে এত ভালোবাসার উদ্ভব কি অস্বাভাবিক নয়?নাকি সবটাই বানোয়াট?দুইদিন আগেও যে তাকে বেহায়া, আত্নসম্মানহীন বলে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল, কারো সামনে তাকে স্ত্রী হিসেবে ট
পরিচয় দেয়নি সেই মানুষটার আজ হঠাৎ এত পাগলামি কেন?কি কারণ?অদ্রিজা চোখজোড়া বন্ধ করেই মৃদু তপ্তশ্বাস ফেলল।সুইটহার্টের কথায় মৃদু হাসার চেষ্টা করল।চোখ খুলে ভদ্রমহিলার দিকে তাকাতেই ভদ্রমহিলার উৎসুক দৃষ্টি সর্বপ্রথম চোখে পড়ল।সুইটহার্ট গম্ভীর গমগমে কন্ঠে বলে উঠল দ্রুত,

‘ আবার কেন এসেছো তুমি?নিষেধ করেছিলাম তো আসতে।কেন মানো না প্রতিবার এই কথা?ঘুরেফিরে এই বাসায় কেন আসো বারবার?দাদুভাই রেগে যাবে তুমি এসেছো শুনলে।তার রাগের মুখোমুখি হওয়ার থেকে সোজাসুজি তোমার ভালোর জন্য বলছি, চলে যাও।দ্রুত চলে যাও এখান থেকে।’

ভদ্রমহিলা নিরাশ হলেন।চোখেমুখে হতাশ চাহনি ফুটল মুহুর্তেই।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলেই অনুনয়ের স্বরে বলে উঠলেন তিনি,

‘ আম্মা!রক্তিম আমার সন্তান।ওকে দেখা, ওর সাথে কথা বলার অধিকার আছে আমার।আমি ওর মা হই।আপনি এভাবে আমায় চলে যেতে বলতে পারেন না আম্মা।’

সুইটহার্ট গুরুগম্ভীর চাহনি নিয়েই ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠলেন,

‘ যখন দাদুভাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তখন মনে পড়েনি ও তোমার সন্তান?তুমি ওর মা?এখন কেন মনে পড়ে?এখন কেন ওর সাথে কথা বলার এত ইচ্ছা?ছোট্ট বাচ্চাটা যখন মাকে খুঁজত, মা মা বলে কাঁদত তখন আমাকে ওকে আকাশের তারা দেখিয়ে ভুলাতে হয়েছে।কেন?তোমার বোকামির জন্য।তোমার করার কাজের জন্য আজ দাদুভাই ভুগছে।আবার বলছো নিজের সন্তান?তখন কেন মনে পড়েনি ও তোমার সন্তান?’

ভদ্রমহিলা মিনিমিনে চোখে চেয়ে রইলেন।বেশ কিছুটা সময় চুপ থেকেই বলে উঠলেন,

‘ আমি যেমন ছেড়ে গিয়েছি।অন্য একজনের সাথে স্যাটেল করেছি।তেমনটাতো ওর বাবাও করেছে।দ্বিতীয় বিয়ে করে নি ওর বাবা?ওর বাবার সাথে তো এতটা খারাপ ব্যবহার ও করে না।আমার সাথে কেন এত জঘন্য ব্যবহার করে?কেন?’

‘ কারণ তুমি পালিয়ে গিয়েছিলে।প্রথমে তুমিই ছেড়ে গিয়েছিলে।’

ভদ্রমহিলা আক্ষেপ নিয়েই বলে উঠল এবার,

‘ তো? তো কি করব আমি?ওর বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা তার অনেক আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল।তবুও সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা উচিত ছিল?ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানো উচিত ছিল?’

‘ না,বেরিয়ে আসতে।মুক্ত হয়ে রক্তিমকে নিয়ে বাঁচতে পারতে।তাই বলে অন্য এক লোকের সাথে পালিয়ে যাওয়া উচিত নয় তোমার।যায় হোক!তোমারও আজ বয়স হয়েছে। উচিত অনুচিতের সংজ্ঞাটা এখন আমার থেকে শেখা লাগবে না আশা করি।তুমি নিজেই বুঝো,বুঝবে।এখন যাও।দাদুভাই আসলে রেগে যাবে।ইদানিং দাদুভাই বেশ খুশি থাকে।আমি চাই না তোমার কারণে তার সে খুশিটা কষ্টে পরিণত হোক।’

ভদ্রমহিলা ছোট ছোট চোখে তাকালেন।বললেন,

‘আমি থাকতে আসিনি আম্মা।ওকে একবার চোখ ভরে দেখে নিয়েই চলে যাব।কতদিন দেখা হয় নি ওকে।এত বড় একটা অপারেশন হলো অথচ ওর মা হয়ে আমি জানতেই পারলাম না। যদি কিছু হয়ে যেত? যদি ও আর বেঁচে না ফিরত? একজন মা কে না জানিয়েই তার সন্তানের এমন একটা অপারেশনে কি করে মত দিলেন আপনি?যদি কিছু হয়ে যেত?’

সুটটহার্ট চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল মুহুর্তেই!সেই অসহনীয়, দুঃস্বপ্নময় দিনগুলো মনে করেই শিউরে উঠল।গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একনজর অদ্রিজার দিকে তাকাল।অদ্রিজার চোখে মুখে কৌতুহলের স্পষ্ট আভাস।আর সেই কৌতুহলটা সুইটহার্ট তাকানো মাত্রই বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে,

‘ সুইটহার্ট?অপারেশন?কিসের অপারেশন?বেঁচে না ফেরার মতো কি এমন অপারেশন হয়েছে উনার?কখন হয়েছে?’

সুইটহার্ট চোখ বন্ধ করলেন।অদ্রিজার উত্তর গুলো না দিয়েই শান্ত গলায় বললেন,

‘ অদ্রি?এতটা অস্থির হওয়ার মতো কিছু নেই বর্তমানে।সহজভাবে ভাবো বিষয়টাকে।আমি তোমায় পরে সবটা খুলে বলব। আপাদত ঐটা নিয়ে হাইপার হওয়ার কিছু নেই। কেমন?রুমে যাও।’

অদ্রিজা লক্ষী মেয়ের মতো মাথা দুলাল।সুইটহার্টের কথার উপর আর কোন কথা না বলে ধীর পায়ে উল্টোদিক ফিরে হাঁটা দিল।পেঁছন থেকে রক্তিমের মা নামক ভদ্রমহিলার মৃদু গলায় ভেসে আসল,” আম্মা?এটা নেহার বান্ধবী না?এই মেয়েটাই রক্তিমের বউ? “অদ্রিজা স্পষ্ট শুনল কথাগুলো।তবুও পেঁছন ফিরে চাইল না।ধীর পায়ে এগিয়ে দ্রুত রুমে গেল।মাথায় ঘুরল অদ্ভুত সব চিন্তা।

.

বিদ্ঘুটে অন্ধকারে টিউশনি শেষে রাস্তা ধরে হাঁটছিল দিহান।পরনে বরাবরের মতো চেইকের শার্ট।গোছালো চুলগুলো কপালে ঝুকে আছে।বাম হাতের ঘড়িটায় একনজর সময় দেখে নিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল দিহান।রাত দশটা। অবশেষে সারাদিনের ব্যস্থতার অবসান।তারপর বাসায় গিয়ে চমৎকার ঘুম!দিহান হালকা হাসল।বরাবরের মতো বাসায় ফেরার পথটাতে নেহাদের বাসাটা আজও পড়বে।দিহান দূর হতেই দেখল বাসাটা।চারতালা বিল্ডিংয়ের কোন কোন বাসায় আলো জ্বলছে আবার কোনটায় অন্ধকার।ছাদেও ঘুটঘুটে অন্ধকার।সোডিয়ামের আলোয় দূর হতে বিল্ডিংটার অন্যসব কিছু স্পষ্ট বুঝে উঠা গেল না।শান্ত স্থির চোখজোড়া সেইদিক থেকে নামিয়েই গম্ভীরভাবে পা চালাল দিহান।মিনিট কয়েক জোরে জোরে পা চালানোর পরই আকস্মিক কোন এক নারীর উপস্থিতিতে থামতে হলো তাকে।থমকানো চোখমুখ নিয়ে মেঁপে মেঁপে দেখল সামনের মেয়েটিকে।মুখে হালকা হাসি ফুটিয়েই ভ্রু নাচাল যার অর্থ, “কি হয়েছে?” তার সে ভ্রু নাচানো দেখেই মেয়েটা হাসল খিলখিলিয়ে।দিহানের দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকেই দিহানের শার্টটা আঁকড়ে ধরল।মুচকি হেসেই চোখ টিপে বলে ফেলল,

‘ কিছু না।তোকে দেখতে মন চাইল।’

দিহান অপ্রস্তুত হলো।আকস্মিক কোন রমণী এতটা কাছে এসে শার্ট আঁকড়ে ধরার মতো কোন ঘটনা এর আগে তার সাথে ঘটেছে কিনা সে জানে না।চারদিকে একবার তাকিয়ে নিয়েই ভাসা গলায় বলে উঠল,

‘ কি করছিস নেহা?এটা তোর বাসা।তোর আব্বু আম্মু কেউ দেখে ফেললে কি রকমের সমস্যা হবে বুঝতে পারছিস তুই?শার্ট ছেড়ে সরে দাঁড়া।’

নেহা ভ্রু কুঁচকাল।জনমানব ভরা রাস্তার মাঝেই দিহানের আরো কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াল।শার্টটা আরো কিছুটা খামচে ধরেই বলে উঠল,

‘ ছাড়লাম না।সরে দাঁড়ালাম না।কি সমস্যা? ‘

দিহান আরো কিছুটা অপ্রস্তুত হলো।নেহার মুখের দিকে বার কয়েক ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েই হতাশ হলো।মেয়েদের নাকি অনেক লজ্জ্বা!এই মেয়ের মুখে এটুকুও লজ্জ্বা নেই।এতগুলো মানুষের সামনে তাকে একটা মেয়ে ধরে রেখেছে ভাবতেই ফ্যাঁকাসে হয়ে উঠল তার মুখ চোখ।শুকনো ঢোক গিলে চারপাশে তাকিয়েই মানুষজনকে এদিক পানে তাকিয়ে হেঁটে চলে যেতে দেখেই আরো ফ্যাঁকাসে হলো চাহনি।নেহার হাতজোড়াকে শক্ত করে নিজের হাতে পুরে নিয়েই শার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিল।লম্বা শ্বাস ফেলেই নেহার হাতজোড়া সেভাবেই শক্ত করে ধরে রেখে বলে উঠল,

‘ নেহু?কি করছিস এসব?সবাই দেখছে।কি ভাবছে, কি ভাবতে পারে বুঝিস? ‘

নেহা আবারও ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল বলল,

‘ তো?ভাবলে ভাবুক।আমি কি তোকে কিস করেছি?কিংবা জড়িয়ে ধরেছি?আজব!’

‘ না, তেমন কিছু নয়।’

‘ তো?তাহলে?’

দিহান মাথা চুলকাল।বলল,

‘ মানুষ যেভাবে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছিল আমরা প্রেমিক প্রেমিকা।তোর বাবা মা দেখে ফেললে কি হতো? তোর প্রেমিক আছে শুনলে দফারফা হয়ে যেত না আজ?তাছাড়া আমারও অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল।’

নেহা খিলখিলিয়ে আওয়াজ করে হেসে উঠল এবার।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ ভীতু!তুই একটা ভীতুর ডিম দিহান।প্রথমত তোকে যে ভালোবাসি তা আমার ফ্যামিলি সেইদিন থেকেই জানে যেইদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম, প্রথম ভালো লেগেছিল।বুঝলি?মা বাবা দেখলে কিছু বলত না, বরং আলাদা স্পেস দিয়ে যেত।দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, তোর অস্বস্তি হচ্ছিল?সিরিয়াসলি দিহান?তুই ছেলে, আমি মেয়ে।আমি যেখানে কস্ফোরটেবল সেখানে তুই অনাম্ফোর্টেবল ফিল করছিস?মানা যায় ইহা?’

দিহান কপাল কুঁচকাল।নেহার হাতজোড়া ছেড়ে দিয়েই নিরাশ চাহনিতে অন্যদিকে তাকাল।গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

‘ মজা নিবি না একদম।আমি কম্ফোর্টেবল হলে তুই ওখানেই শেষ! ‘

#চলবে…..

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩২
লেখনীতেঃভূমি

রাত প্রায় এগারোটা।ভদ্রমহিলা এখনও এই বাসা থেকে যায় নি।সুইটহার্ট বিরক্তি নিয়েই বসতে বলল তাকে।অদ্রিজাকে রাতের খাবারটা খাইয়ে দিয়েই নরম গলায় ঘুমিয়ে পড়তে বললেন।অদ্রিজাও মিনমিনে চোখে তাকিয়ে মাথা দুলাল।আড়চোখে গভীর ভাবে পরখ করল রক্তিমের মা নামক মহিলাটিকে।উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছেন সেই ভদ্রমহিলা।হয়তো তার মতোই পরখ করে দেখছেন।অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল।ভারী, ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে রুমের ভেতর এসেই বিছানায় এলিয়ে দিল শরীরটা।ইদানিং শরীরটা বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগে।চোখজোড়ায় সর্বক্ষণ যেন ঘুম লেগেই থাকে।আজও ব্যাতিক্রম হলো না।বালিশে মাথাটা রাখতেই রাজ্যের ঘুম এসে ধরা খেল চোখজোড়ায়।কিন্তু ঘুমটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না।কিছুটা সময় পরই তীক্ষ্ণ এক আওয়াজে তড়িঘড়ি করে ঘুমটার ইতি ঘটল।বুক ধড়পড়িয়ে উঠে বসল মুহুর্তেই।অজানা আতংকে হৃদস্পন্দন দ্রুত ঘটল।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা চালাতেই বুঝতে পারল কেউ একজন এই বাসায় ভাঙ্গচুর করছে।তার সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছু ভেঙ্গে ঘুড়িয়ে দিতে চাইছে।অদ্রিজা আৎকে উঠল।বুক ডিপডিপ করা সেই হৃদস্পন্দন নিয়ে উঠে দাঁড়াল।ছোট ছোট পা ফেলে দরজার কাছটায় এসে দাঁড়াতেই রক্তিমের রাগে লাভা সদৃশ ক্ষ্রিপ্ত তীক্ষ্ণ চাহনি দেখেই কেঁপে উঠল সে।চোখমুখ লাল টকটকে, থমথমে গম্ভীর!এক হাত রক্তাক্ত।হাতের মুঠোটা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে।চোখে মুখে তীব্র রোশ আর ক্ষোভ নিয়েই একের পর এক জিনিস ফ্লোরে ছুড়ে মারছে সে।সেই জিনিসগুলোর ভাঙ্গনের তীব্র আওয়াজেই মাথা টনটন করে উঠল অদ্রিজার।রক্তিমের এমন উম্মাদের মতো আচরণ প্রখর চাহনিতে পর্যবেক্ষন করেই তপ্তশ্বাস ফেলল।ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসবে ঠিক তখনই রক্তিম ড্রয়িং রুমের শেষ ফুলদানিটাও আঁছাড় মারল ফ্লোরে।তীব্র ক্ষোভ নিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠল,

‘ কি সমস্যা আপনার মিসেস রুহানা? কেন যেচে অপমানিত হতে আসেন?লজ্জ্বা করে না?বারবার আমার সামনে কেন পড়েন আপনি?কেন এই নাটক করতে আসেন?আমি আপনার সন্তান নই।আর নাহ তো আপনি আমার মা।কথাটা মাথায় রাখবেন।এবার বেরিয়ে যান।ফার্স্ট!’

ভদ্রমহিলা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে রইল রক্তিমের।চোখ ছলছল করছে তার।রক্তিমের দিকে দু পা এগিয়েই দুইহাত দিয়ে রক্তিমের মুখ ছুঁতে যেতেই রক্তিম তেজ নিয়ে সরে গেল।ক্ষ্রিপ্ত গলায় বলে উঠল,

‘ একদমই নয়!একদমই নয় মিসেস রুহানা।আপনার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছোঁয়ার একদমই চেষ্টা করবেন না।যদি বাড়াবাড়ি করেন তো তাহলে আমি ভুলে যাব আমি আপনাকে চিনি।আপনি আমার পরিচিত কেউ।ভুলে যাব!’

ভদ্রমহিলার গম্ভীর চোখজোড়া বেয়ে এবার পানি গড়াল।নরম গাল পানিতে ভিজে গেল মুহুর্তেই।ভেজা গলায় বলে উঠল,

‘ রক্তিম!কেন এমন করো আমার সাথে?তোমার প্রতি কি আমার এটুকুও অধিকার থাকার কথা নয়?তোমাকে একনজর দেখার অনুমতিও আমার নেই?কেন?হ্যাঁ ভুল করেছি আমি।তাই বলে এত বড় শাস্তি কেন?যে নিজের সন্তানের প্রতিও আমার কোন অধিকার থাকবে না!’

রক্তিম তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।সোফায় গা এলিয়ে দিয়েই সুপ্ত গলায় বলে উঠল,

‘ যে অন্যায় করে সে কখনোই স্বীকার করে না যে সেই অন্যায় করেছে।আপনি তো বুঝেই উঠলেন না আপনি অপরাধী কিনা।আসলেই কি পরিমাণ মূর্খ হলে নিজের সন্তানকে রেখে অন্য এক পুরুষের সাথে পালিয়ে গিয়ে স্যাটেল করার পরও আবার নিজের সন্তান বলে দাবি করতে আসে!আমি আসলেই ভেবে পাই না, এতবছর পর আমার প্রতি আপনার এই ভালোবাসা কোথায় থেকে উতলে আসল?নাকি অন্য স্বার্থ?যদি স্বার্থের জন্য এমন করছেন তো তাড়াতাড়ি ঝেড়ে বলুন। এসব নাটক টলারেট করা যাচ্ছে না!’

‘ রক্তিম!তুমিই আমার একমাত্র সন্তান।একমাত্র সন্তানের প্রতি ভালোবাসা জম্মানো কি অপরাধ?অস্বাভাবিক?’

রক্তিমের চোয়াল শক্ত হলো।দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠো করে নিজের ভেতর জ্বলে উঠা রাগ, ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েই বলে উঠল শক্ত গলায়,

‘ হ্যাঁ!অস্বাভাবিক!আপনার মতো চরিত্রহীন, স্বার্থপর মহিলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকই।আপনার থেকে তো মিস্টার মাহমুদের দ্বিতীয় স্ত্রীও অনেক গুণ ভালো।সে আমায় জম্ম দেয় নি, আমার মা নয় তবুও যে কয়দিন উনাকে পেয়েছি উনি আপনার থেকে বেস্ট ছিল বলেই মনে হয়েছে আমার।আপনি তো একটা খারাপ জঘন্য মহিলা!গেট লস্ট! প্লিজ!আমি সহ্য করতে পারছি নাহ আপনাকে।’

ভদ্রমহিলা নিশ্চুপে চেয়ে রইলেন।ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠেই উল্টো দিকে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। রক্তিম লম্বা শ্বাস ফেলল।চোখজোড়া বন্ধ রেখেই সোফায় এলিয়ে দিল শরীরটা।মাথা চেপে ধরেই জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

‘ সুইটহার্ট?উনি কিভাবে জানলেন?কে বলেছে উনাকে?তুমি?’

সুইটহার্ট চাহনি সরু করল।সোফার এককোণে বসে রক্তিমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই বললেন,

‘ আমার সাথে ওর কোন যোগাযোগ থাকে না জান। আর আমি যে বলব না তা নিশ্চয় তুমিও জানো।তাই না?’

রক্তিম চোখজোড়া খুলল।সুইটহার্টকে দেখে নিয়েই মৃদু হাসল।গালে হাত ছুঁয়ে দিয়েই বলে উঠল,

‘অনেক রাত হয়েছে।ঘুমাও গিয়ে।’

সুইটহার্ট মিনমিনে চোখে তাকিয়েই বলল,

‘ হাত থেকে রক্ত পড়ছে।শুধু শুধু দেওয়ালে ঘুষি দিলে।কি দরকার ছিল?ব্যান্ডেজ করে দি।বসো।’

রক্তিম উঠে দাঁড়িয়েই হেসে বলল,

‘রুমে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে নেব। তুমি ঘুমাও গিয়ে।রাত হয়েছে। অদ্রি কি ঘুমিয়ে গিয়েছে?খেয়েছে?’

সুইটহার্ট মিষ্টি হেসেই মাথা দুলাল যার অর্থ হ্যাঁ।তারপর ঠোঁট টেনে হেসেই বলে উঠল,

‘সামনে সামনে আপনি, অদ্রিজা।পেঁছনে অদ্রি।সোজাসুজি তুমি আর অদ্রি বলে ডাকলেই বা ক্ষতি কি জান?’

রক্তিম হাসল।বলল,

‘ একটু টাইম দাও।সব ডাকব।অদ্রি টু ডার্লিং সব!এনিওয়েজ রুমে যাও সুইটহার্ট। ঘুমাও।বেশি রাত জাগা কিন্তু ভালো না সুইটহার্ট।গুড নাইট।’

কথাটা বলেই পা বাড়াল রক্তিম।চোখেমুখে তিক্ততা স্পষ্ট।অন্যদিনের মতো মুখে অদ্ভুত রকম হাসিটা আজ অনুপস্থিত।শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতেই রুমে ডুকল সে।দরজার সামনে অদ্রিজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই থমকে দাঁড়াল সে।তার মানে ঘুমোয়নি অদ্রিজা?রক্তিম বুঝল না।অস্পষ্ট চাহনি নিয়ে অদ্রিজার মুখের দিকে তাকিয়েই ভ্রু নাচাল।জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠল,

‘ কি সমস্যা?ঘুমোননি কেন এখনো?আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?এত ভালোবাসা! ওয়াও!’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।সদ্য ধরা ঘুম রক্তিমের জন্যই ভেঙ্গে গিয়েছে।আর সেই ভাঙ্গা ঘুমের জন্যই মাথাটা টনটন করে ব্যাথা করছে।মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরক্তিকর ব্যাথা।সেই বিরক্তিকর ব্যাথার জন্যই বিরক্তিতে রি রি করল শরীর।কোমড়ে হাতজোড়া রেখেই রক্তিমের দিকে তাকাল সে।বিধ্বস্ত বেশ।আহত চাহনি।ক্লান্ত শরীরে জড়িয়ে থাকা কালো রংয়ের শার্টটার বোতাম গুলো খোলা থাকায় দৃশ্যমান হলো রক্তিমের উম্মুক্ত চওড়া বুক।ফর্সা ধবধবে বুকের বা পাশেই কালো কুঁচকুঁচে তিল চমৎকার ঠেকল। চোখজোড়া ফিটফিট করে তিলটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই রক্তিম পিচেল গলায় বলে উঠল তৎক্ষনাৎ,

‘ উফফস!মনে মনে ভাবছেন নিশ্চয়, এত সুদর্শন ছেলে আপনার হাজব্যান্ড হলো কি করে। তাই না?দেখে নিন।ইচ্ছে মতো দেখে নিন। আপনি চাইলে পুরো শার্টই খুলে রাখতে পারি।ওহ শিট!শুধু শার্ট নয়, সব। সব! ‘

অদ্রিজা দৃষ্টি সরাল দ্রুত।তবুও যেন দৃষ্টি সরল না।ফর্সা ধবধবে চওড়া বুকে কালে তিলটা অদ্ভুত সুন্দর!বারংবার তাকালেও মোহ কাঁটে না।রক্তিম মুচকি হাসল।ফিসফিসিয়েই আবারও বলল,

‘ উহ!এত লুকোচুরি করে দেখার কি আছে বলুন তো।সোজাসুজি তাকিয়েই দেখুন না।কেউ নিষেধ করেছে?’

অদ্রিজা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।চোখ তুলে রক্তিমের মুখের দিকে তাকাতেই রক্তিমের মুখে বাঁকা হাসিটা চোখে পড়ল সর্বপ্রথম।সেই বাঁকা হাসিকে প্রশ্রয় না দিয়েই কপাল কুঁচকানোর চেষ্টা করল সে।গম্ভীর শান্ত গলায় বলে উঠল,

‘ একটা মেয়ের সামনে শার্ট খুলে বসে নায়ক সাঁজতে এসেছেন?আপনার নোংরামো পর্যবেক্ষন করছিলাম জাস্ট।আর কিছু না।অন্য কিছু ভাববেন না।’

রক্তিম দুষ্টুমিমাখা হাসি ফুটাল মুখে।অদ্রিজার কাছাকাছি মুখ এনেই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ উহ!বউয়ের কাছে সব রকমের নোংরামো খাটে।জানেন না?এনিওয়েজ আপনার ঐ চাহনিতে কিছু ভাবলাম না।ভাবলাম না কিন্তু!’

কথাটা বলেই ঠোঁট কাঁমড়াল রক্তিম।মুখে মুচকি হাসি।অদ্রিজা বিরক্ত হলো।কি এমন করেছে?তিলটার দিকে তাকিয়েছেই না হয়।ক্ষতি কি?খেয়ে তো নেয় নি!চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়েই রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইল আরো কিছু সময়। প্রসঙ্গটা বাদ দিতেই বলে উঠল,

‘ এবার বলুন, সামনে অদ্রিজা।পেঁছনে অদ্রি। ঘটনা কি?অদ্রি, অদ্রিজা এত নাটক কেন?আপনি আমায় অদ্রি নামে চিনেছেন সর্বপ্রথম তাহলে অদ্রিজা ডাকেন কেন?অদ্রিজাই যদি ডাকবেন তাহলে পেঁছনে অদ্রি বললেন কেন?’

রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।পরমুহুর্তেই হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,

‘ বাহ!গুড!লুকিয়ে লুকিয়ে আমার আর সুইটহার্টের কথা শুনছিলেন আপনি?’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ মোটেই না।’

‘ তাহলে?’

অদ্রিজা স্পষ্টভাবে বলল,

‘ আপনি আগে বলুন অদ্রিজা ডাকেন কেন? আবার অদ্রি হিসেবেই বা কিভাবে চেনেন?অদ্রি হিসেবেই যদি চেনেন তাহলে প্রথম থেকে অপরিচিতের মতো অদ্রিজা ডেকে আসলেন কেন?’

রক্তিম হাসল।অদ্রিজার দিকে ঝুকেই গম্ভীর গলায় শুধাল,

‘ আপনিই তো বলেছিলেন অদ্রি না ডাকতে। তাই ডাকি না। সিম্পল!নিজের উত্তর নিজের কাছে থাকা স্বত্ত্বেও প্রশ্ন করছেন?বাই দ্যা ওয়ে, যে দিন অনুমতি দিবেন সেইদিন থেকে নাহয় অদ্রি ডাকব।অদ্রি হিসেবে চেনার গল্পটা অন্য একদিন শোনাব।এবার বলুন, আপনি কেন লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনছিলেন?’

অদ্রিজা দৃষ্টি সরু করল। কন্ঠে ঝংকার তুলে বলে উঠল,

‘একদমই না।আপনার কথা লুকিয়ে শুনতে চাওয়ার ইচ্ছে আমার জীবনেও হবে না।আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।আপনার অত্যাচারে ঘুমটাও হলো না।আসলেই আপনার অত্যাচারে আমার জীবনটা বিষিয়ে উঠছে রক্তিম।কেন এত অত্যাচার?’

রক্তিম ভ্রু নাচিয়েই বলল,

‘ যেমন?’

‘ সারাদিন রুমে আটকে রেখেছেন।এটা অত্যাচার নয়?সময় অসময়ে বিরক্ত করছেন।ঘুমটাও ভালোভাবে যেতে দিচ্ছেন না।এসব অত্যাচার নয়?বলুন।’

রক্তিম হাসল।পরনের শার্টটা খুলে রেখেই পা বাড়িয়ে নিজের টিশার্ট নিয়ে পরতে পরতেই বলে উঠল সে,

‘ জাস্ট এইটুকু?অপেক্ষা করুন।আরো কত রকম অত্যাচার যে আপনার কপালে আছে ভাবতেও পারছেন না আপনি।’

অদ্রিজা বুঝে উঠল না।দ্বিধান্বিক চাহনিতে রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম ঠোঁট কাঁমড়ে হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই চোখ টিপে বলে বসল,

‘ ভয় পেয়ে গেলেন?’

অদ্রিজার কঠিন টানটান দৃষ্টি।শক্ত গলায় বলল,

‘ নাহ!’

রক্তিম সেভাবেই তাকিয়ে রইল।হাতের ক্ষতটায় ব্যান্ডেজ করতে করতেই অদ্রিজার বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকাটা উপলব্ধি করল।ঠোঁট টিপে হেসেই বলে ফেলল,

‘ প্রথমদিনের মতো আজ আমার হাতের ক্ষতের কথা জিজ্ঞেস করলেন না যে?কষ্ট পেলাম!’

অদ্রিজা হালকা শ্বাস ফেলল।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেই বলে উঠল,

‘ জিজ্ঞেস করলে বেহায়া হয়ে যেতাম না?শুধু শুধু আপনার সামনে বেহায়া সাঁজার কারণ আছে বলুন তো?তার চেয়ে আপনি আপনার ক্ষত নিয়ে পড়ে থাকুন।কাঁটুক, রক্ত ঝরুক, আমার কি?’

‘ কিচ্ছু না?’

অদ্রিজা দৃঢ় গলায় বলে উঠল,

‘ নাহ!কিচ্ছু নাহ।’

রক্তিম বাঁকা হাসল।বলল,

‘ তাহলে আমার অপারেশন হয়েছে শুনেই প্রশ্ন করেছিলেন কেন সুইটহার্টকে?জানতে চেয়েছিলেন কেন?কিছুই তো যায় আসে না আমাকে নিয়ে।তাই না?’

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চাপল।রক্তিমের সাথে আর একটাও কথা না বলে ধপাস করে খাটে শরীর এলিয়ে দিল।একপাশ হয়ে শুঁয়েই চোখ বন্ধ করল।মনের ভেতর একরাশ বিরক্তি উপস্থিত হলো মুহুর্তেই।সুইটহার্টকে জিজ্ঞেস করেছে ভালো, তা বলে সুইটহার্ট সেটা বলে দেবে এই ফালতু লোকটাকে?তার মান সম্মানের এভাবে ফালুদা বানিয়ে দেবে?মোটেই উচিত কাজ করে নি এটা সুইটহার্ট!এই নিষ্ঠুর মানবটার সমানে তার আত্নসম্মানের দফারফা না করলেই কি হতো না?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here