হৃদয়_নিবাসে_তুই #পর্ব_৩৩,৩৪

0
817

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৩,৩৪
লেখনীতেঃ ভূমি
৩৩

নেহা সহই রক্তিমের মায়ের বাসায় আসল অদ্রিজা।নেহার জোরাজুরিতেই এখানে আসতে রাজি হয়েছিল সে।রক্তিমকে ভার্সিটিতে আসবে বলেই বেরিয়ে আসল।ভেবেছিল নিজের মনের কৌতুহলটাও মিটিয়ে নেওয়া যাবে।রক্তিমের অপারেশনের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়ে যাবে।জেনে যাবে রক্তিমের কি হয়েছিল।কিন্তু তা আর হলো না।রক্তিমের মা নামক ভদ্রমহিলার বাসায় প্রবেশ করে আরাম করে বসতে না বসতেই নিজের মোবাইলে রক্তিমের কল দেখেই চমকাল সে।বার কয়েক ঢোক গিলে কল রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ জাস্ট দুই মিনিট সময় দিচ্ছি।দুই মিনিট সময়ের মধ্যে দ্রুত ঐ বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াবেন।নয়তো আর কোনদিন বাসা থেকে বেরুনোর পারমিশন পাবেন না আপনি।বন্দি জীবন কাঁটাতে হবে।মাইন্ড ইট!’

অদ্রিজা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুটা সময়।পরপরই নেহাকে বসা থেকে টেনে উঠিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসল সেই বাসা থেকে।রাস্তার মোড়ে আসতেই থম মেরে দাঁড়িয়ে গেল।মাথাটা ঝিমিয়ে উঠল মুহুর্তেই।রক্তিম নামক লোকটা এমন কেন?কিভাবে সব জেনে যায়?ক্যামেরা ট্যামেরা সেট করে দিয়েছে নাকি?অদ্রিজা নিজের ভাবনা ভেবেই অবাক হলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে তাকাতেই আরেক ধপা বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে । নিজের থেকে কিছুটা দূরেই রক্তিম বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে ঠোঁট বাঁকানো সেই বাঁকা হাসি।অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকাল।রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থাকতেই কানে এল নেহার বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠ,

‘ কি হলো এটা দ্রিজা?মাত্র গেলাম।মামনির সাথে তো কথাও হয়নি।তার আগেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলি কেন?এটা কোন ধরণের কাজ হলো দ্রিজা!’

অদ্রিজা আনমনেই বলে বসল,

‘ ধুররর!তুই জানিস কি সাংঘাতিক কাজ ঘটে গেছে?অনেক কষ্টে রক্তিমের ঐ বাসা থেকে বেরুনোর পারমিশন পেয়েছি।এবার মনে হচ্ছে তাও হারাব।’

নেহা বুঝে উঠল না।ভ্রু জোড়া কুঁচকে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই সেও চমকাল।ড্যাবড্যাব করে রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম হাসল।হাত নাড়িয়ে হাই বুঝাল নেহাকে।নেহা হাসার চেষ্টা করল।অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ কি হলো এটা?রক্তিম ভাইয়া এখানে? কিভাবে জানল আমরা এখানে এসেছি।তুই তো ভার্সিটির কথা বলে বেরিয়েছিলি তাই না?’

অদ্রিজা বোকার মতো তাকাল। নিরাশ চাহনি নিয়েই বলল,

‘ উনি নিশ্চয় আমাকে ফলো করে!নয়তো সিসি ক্যাম ট্যাম লাগিয়ে রেখেছে বুঝলি?নয়তো কিভাবে সবকিছু জেনে যায়?কিভাবে পসিবল?’

নেহা দাঁত কেলিয়ে হাসল। ঠোঁট বাঁকিয়েই বলল,

‘ পসিবল, পসিবল!সব পসিবল রে।’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।নেহার দিকে একনজর তাকিয়েই সামনের দিকে তাকাল। রক্তিমকে একইভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতেই নড়েচড়ে দাঁড়াল।উঁশখুঁশ করে ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে অন্যপাশ ফিরল।নেহার হাতটা চেপে ধরেই বলে উঠল,

‘ খবরদার ওদিকে তাকাবি না নেহা।জাস্ট ইগনোর কর উনাকে। রিক্সা ডাক।আমরা রিক্সায় করে ভার্সিটি চলে যাব।ভালো বুদ্ধি না?’

নেহা ভ্রুজোড়া কুঁচকাল।বলল,

‘ কি বলছিস তুই?রক্তিম ভাইয়া তো জেনেই গেছে মামনির বাসায় আমরা এসেছিলাম তার উপর উনাকে ইগনোর করে চলে যাওয়া কতখানি অন্যায় হবে বুঝতে পারছিস তুই?তোকে তো আর বেরই হতে দেবে না বাসা থেকে ঐ অপরাধের অপরাধী হওয়ার জন্য!’

অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,

‘ একদম ভদ্র সাঁজবি না নেহা।এটা কোন অপরাধই না।আমরা উনাকে দেখতেই পাইনি।আর দেখতে যেহেতু পাইনি এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নও আসছে না।বুঝলি?’

নেহা খিলখিলিয়ে হাসল।ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ তোর এই লজ্যিক জীবনেও রক্তিম ভাইয়া মানবে না।আমি তুই দুইজনই উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।উনি তা দেখেছেন।’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।মুখ কালো করেই ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ দেখলে দেখুক!আমি আজ এতদিন উনার ঐ বদ্ধ বাসায় থেকে বোর হয়ে গেছি।এখন বাসা থেকে বের হয়েও শান্তি নেই, উনার সামনে গেলে উনি বাসায় নিয়ে চলে যাবে আবার।দেখিস!’

নেহা আওয়াজ করে হাসল।দু পা এগিয়েই রক্তিমের সামনে এসে দাঁড়িয়েই বলে উঠল,

‘কেমন আছো ভাইয়া?’

রক্তিম হাসল।ভ্রু চুলকে বলল,

‘ প্রথম প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল,” ভাইয়া,এখানে কেন তুমি?”তাই না?’

নেহা থমকাল।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘ স্য্ স্যরি।আমি দ্রিজাকে আসতে নিষেধ করেছিলাম।সত্যিই।কসম!আমি তো বলেছিলাম কেবল আমিই আসব।মামনির সাথে দেখা করেই চলে যাব। কিন্তু ওর জোরাজুরিতেই ওকে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম আরকি।’

অদ্রিজা অবাক হলো।ড্যাবড্যাব করে নেহার দিকে তাকিয়েই ভাবল, একটা মানুষ এতটা নিঁখুত ভাবে মিথ্যে কিভাবে বলে?কিভাবে!মোটেই সে জোরাজুরি করে এখানে আসে নি।বরং নেহার জোরাজুরির জন্যই তাকে এখানে আসতে হয়েছে।মুহুর্তেই চোখমুখ গরম হয়ে উঠল নেহার প্রতি অদৃশ্য এক রাগে।এগিয়ে গিয়েই নেহার পেটে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল,

‘ এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত নেহা!তোর জন্যই তো আমি এখানে আসলাম।আর তুই?’

নেহা মুখ চেপে হাসল।পরমুহুর্তেই মুখ তুলে নিরীহ প্রাণীর মতো ভাব ধরেই রক্তিমের দিকে তাকাল।রক্তিম মুচকি হাসল।বুকের মাঝে হাতজোড়া সেভাবেই গুঁজে রেখে গাড়ির দরজাটা খুলেই ইশারা করে বলল অদ্রিজাকে,

‘ উঠে পড়ুন। ভার্সিটিতে নাহয় কাল থেকেই যাবেন।এমনিতেও টাইম ওভার। উঠে পড়ুন।কিছু কথা বলার আছে।’

অদ্রিজা চাহনি সরু করে তাকিয়ে রইল।ঠিক যেটা ভেবেছিল সেটাই হয়েছে।আবার সেই বদ্ধ বাসা।নিরাশ চাহনি নিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর মাঝেই নেহা ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ দোস্ত?তোরে প্রোপোজ করবে মে বি ভাইয়া। নো টেনশন।কিভাবে প্রোপোজ করেছে তা বলিস কল করে।আমি যাচ্ছি তাহলে?’

অদ্রিজা জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নেহার দিকে তাকাল।রাগে জ্বলে উঠল ভেতরটা।শুধু শুধুই তার উপর দোষ চাপিয়ে দিল।কি এমন ক্ষতি করেছিল সে নেহার!এমন ক্ষতি না করলেই কি নয়?

.

গাড়িতে উঠার পর রক্তিম একটা কথাও বলেনি। অদ্রিজা অবাক হলো।আড়চোখে রক্তিমের থমথমে গম্ভীর মুখচাহনির দিকে তাকিয়ে থাকল পুরোটা পথ।হঠাৎ এতটা গম্ভীর? এত থমকানো চাহনি?রক্তিম কি রেগে আছে?অদ্রিজা বুঝে উঠল না।বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই একইভাবে আড়চোখে তাকিয়ে পরখ করতে লাগল রক্তিমকে।গাড়িটা বাসার সামনে এসে থামতেই অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকাল রক্তিমের দিকে।কি এমন কথা বলবে যে এতটা শান্ত হয়ে আছে?ঠোঁটে ঠোঁট চেপেই বলে উঠল সে,

‘ আপনি এত চুপচাপ হয়ে আছেন যে? কি জানি বলবেন বলছিলেন।’

রক্তিম শান্ত শীতল চাহনিতে তাকাল অদ্রিজার মুখের দিকে।চোখজোড়া বন্ধ করে রাগ দমনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেই মৃদু গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

‘ বলেছিলাম তো ঐ মহিলার সাথে দেখা না করতে।তবুও কেন শুনেন না আমার কথা?কেন গিয়েছিলেন?’

রক্তিমের সেই শীতল কন্ঠেই অদ্রিজা কেঁপে উঠল।কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকতেই রক্তিম চোখ মেলে চাইল।আগের থেকেও শান্ত গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

‘ আপনিও কি ঐ মহিলার মতোই ছেড়ে যাবেন আমায়?ঐ মহিলার মতো আমার সন্তানকে ভুলে যাবেন? ভুলে যাবেন সবটা?ঐ মহিলার মতোই?’

অদ্রিজা অস্ফুট স্বরেই বলে উঠল,

‘ রক্তিম!’

রক্তিম হাসল।বলে উঠল,

‘ কি হলো? ভুলে যাবেন? আমাকে, আমাদের সন্তানকে রেখে চলে যাবেন ঐ খারাপ মহিলাটার মতোই?’

অদ্রিজার চোখ লাল হয়ে উঠল।ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়েই অস্পষ্ট গলায় বলে উঠল,

‘ আমি আমার সন্তানকে ছেড়ে কোনদিনও যাবো না রক্তিম।তাকে আমার সবটা দিয়ে সব সময় আগলে রাখব।যতদিন বেঁচে থাকব আমি তার চারপাশে সবসময় থাকব।তাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি এখনও ভাবতে পারি না। পারি না ভাবতে। ‘

‘ আর আমাকে?আমাকে যাবেন না তো ছেড়ে?’

অদ্রিজা শক্ত চাহনি নিক্ষেপ করল।রক্তিমের শীতল চাহনির দিকে তাকিয়েই কঠিন কন্ঠে বলল,

‘ আপনাকে ছাড়ার প্রশ্ন নতুন করে আসার তো কথা নয় রক্তিম।আপনার আর আমার ছেড়ে যাওয়ার কথা আশা রাখি অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাই না?আপনিই তো বলেছিলেন আমার সাথে থাকতে চান না।ভালোবাসেন না আমায়।তাহলে?ডিভোর্সের জন্য তো আপনিই এপ্লাই করে রেখেছিলেন।আম্মুকে বলেছিলেন তো। তাই না?নিজের স্ত্রীকে অন্য একজনের কাছে তুলে দিতেও চেয়েছিলেন।দিহানকে বলেছিলেন আমার পাশে থাকতে।আমাকে আগলে নিতে।বলেননি?ছিঃ!একজনের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে আমাকে আগলে রাখবে অন্য একজন পরপুরুষ!এই কথাটা আমার জন্য কতটা অপমানজনক হতে পারে ভেবেছিলেন আপনি?আমাকে আপনার ফেলনা মনে হয় তাই না রক্তিম?ফেলনা আমি?বিয়ে করলেন, ইউজ করলেন, তারপর মন উঠে গেল আর ছুড়ে ফেলে দিলেন?ওহ। স্যরি!ছুড়ে ফেলে দেওয়া বললে ভুল।আপনি আমায় অন্য একজন পরপুরুষের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন!ছিঃ!কতটা জঘন্য চিন্তাধারা আপনার!’

রক্তিম মুখে এবার হাসির রেখা দেখা গেল।সেই রেখাটা দেখেই অদ্রিজা আরো জ্বলে উঠল।পুরো শরীর জুড়ে রক্তিমের হাসি নামক বিষাক্ত বিষটা ছুঁয়ে যেতেই ক্ষ্রিপ্ত হলো তার চাহনি।রক্তিমের কলারটা হাতজোড়া দিয়ে চেপে ধরেই দাঁতে দাঁতে চেপে শক্ত গলায় বলে উঠল,

‘ হাসছেন?এসব শুনেও হাসছেন?আসলেই আপনার মন নেই।নিকৃষ্ট!পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট মানুষ আপনি।আপনার সাথে থাকার প্রশ্নই আসে না।ডিভোর্স হলেই আপনাকে ছেড়ে চলে যাব। আপনার আশেপাশে ও থাকব না।আপনি তো খুশি।আবার জিজ্ঞেস করছেন আপনাকে ছেড়ে যাব কিনা?লজ্জ্বা করে না আপনার?’

রক্তিম আবার ও হাসল।পাশ ফিরে অদ্রিজার দিকে গভীর নেশালো চাহনিতে তাকাল। সাদা ধবধবে মুখ লালচে হয়ে উঠছে ক্রমশ।রাগে পাতলা ঠোঁটজোড়া কাঁপছে।কাঁপতে থাকা সেই ঠোঁটজোড়াকে দেখেই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করা গেল না।হাতজোড়া অদ্রিজার কোমড়ে রেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ঠোঁটজোড়া দিয়ে অদ্রিজার কাঁপতে থাকা চিকন, পাতলা ঠোঁটজোড়া দখল করে নিয়েই কাঁমড় বসাল অদ্রিজার নিচের ঠোঁটে।সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল অদ্রিজা। অস্ফুট স্বরে “আহ” বলতেই রক্তিম মুচকি হাসল।ঠোঁট বাঁকিয়ে পিচেল গলায় বলে উঠল,

‘ এভাবেই রেগে যাবেন।সময়ে অসময়ে রেগে কথা শুনাবেন আপনার ঠোঁটজোড়া নেড়ে।আর রাগে কাঁপতে থাকা সেই ঠোঁটজোড়া দেখে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে ছুঁয়ে দিব আমি।ঠোঁটজোড়া দিয়ে ভিজিয়ে দিব।দারুণ না?’

অদ্রিজা ক্ষেপল।দাঁতে দাঁত চেপেই শক্ত গলায় বলল,

‘ অসহ্যকর!আপনি একটা অসহ্যকর লোক!’

রক্তিম বাঁকা হেসেই অদ্রিজার কোমড়টা আরো শক্ত করে চেপে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আর এই অসহ্যকর লোকটার সাথেই পুরো জীবনটা কাঁটাতে হবে আপনার।এবার কিভাবে কাঁটাবেন তা আপনিই বুঝে নিন।’

রাগে অদ্রিজার চোখমুখ আরো লাল হলো।ঘন হলো নিঃশ্বাস!কাঁপতে থাকা ঠোঁটজোড়া চেপে রেখেই রাগে হাঁসফাঁস করতে লাগল।রক্তিম তা দেখেই হেসে উঠল।অদ্রিজার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আপনি রাগলে কি যে লাগে! নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যায় অদ্রিজা।পরে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে গেলে সামলাতে পারবেন না । বলে দিলাম।’

‘ বিরক্তিকর!’

কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলেই অদ্রিজা গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই রক্তিম তার হাত চেপে ধরল।মৃদু হেসে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

‘ ঐ মহিলার সাথে আর দেখা করতে যাবেন না।একদমই না।কথাটা যেন মাথায় থাকে।যদি দেখা করেন তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না অদ্রিজা।আমি চাই না ঐ চরিত্রহীন, খারাপ মহিলাটার ছায়া আমার সন্তানের উপর পড়ুক। আমি চাই না ঐ মহিলার ছায়া পড়ে আপনার প্রতি তার কোন প্রতিফলন ঘটুক।আমি চাই না ঐ মহিলার মতোই আপনি আমার চোখে দোষী হোন।প্লিজ!দেখা করতে যাবেন না ঐ খারাপ মহিলাটার সাথে।অনুরোধ করছি।’

অদ্রিজা চোখ তুলে রক্তিমের মুখের দিকে হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে রইল।রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার হাত ছেড়ে দিয়েই ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,

‘ বাই।টেইক কেয়ার।’

#চলবে……

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৪
লেখনীতেঃভূমি

সুইটহার্ট দরজা খুলতেই অদ্রিজা তার লাল হওয়া মুখচোখ নিয়ে সরু চোখে চেয়ে থাকল।নিচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে চেপে রেখেই ওড়নাটা মাথা থেকে সরাতে সরাতেই ভেতরে আসল।সোফায় বসেই সুইটহার্টের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ সুইটহার্ট?তুমি বলেছিলে আমায় কথাগুলো বলবে।বলবে এখন?আমি জানতে চাই।’

সুইটহার্ট গম্ভীর চাহনিতে তাকাল।পরনের শাড়িটা ঠিক করে নিয়ে পা এগিয়ে অদ্রিজার সামনে দাঁড়াল।বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলেই পানির জগটা ইশারা করে বলে উঠল,

‘ বাইরে থেকে এসেছো অদ্রি।এক গ্লাস পানি খেয়ে নাও।’

অদ্রিজা জেদ নিয়ে তাকাল।নিচের ঠোঁটে রক্তিমের কাঁমড়ের জন্য হালকা ব্যাথা অনুভব করেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুখ ফুলিয়ে বসে রইল।গম্ভীর গলায় মুখ কালো করে বলল,

‘ বলবে না তা সোজাসুজি বললেই তো পারো সুইটহার্ট!তোমরা সবাই আসলেই রক্তিমমুখী!কি আছে ঐ খারাপ লোকটার মাঝে?ঐ লোকটা বলতে নিষেধ করলে তোমাদের মুখ থেকে একটা শব্দ তো দূর,একটা অক্ষরও বের হয় না সুইটহার্ট।অথচ আমার সব কথাই উনাকে বলে দাও।কেন?এই যে এখন উনার অপারেশনের কথা জিজ্ঞেস করছি এটাও নিশ্চয় বলে দিবে তাই না?সবাই খারাপ!আমায় কেউই ভালোবাসে না।’

সুইটহার্ট আনমনেই হাসল।কুচকানো চামড়ায় সেই হাসি ভারী মানাল।কাঁচা পাঁকা চুলগুলোর কিছু চুল কপালে ভীড় করতেই তা কানের পেঁছনে গুঁজে নিল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,

‘ ধুররর!কেন তোমায় কেউ ভালোবাসবে না?এই মিষ্টি মেয়েটাকে ভালো না বেসে থাকা যায়? ‘

অদ্রিজা ঠোঁট উল্টেই বলল,

‘ দিব্যি যায়।তুমি, নেহা সবাই তো ভালো না বেসেই আছে।কেউ আমায় সত্যিটা বলোনি।এখনও বলছো না সুইটহার্ট!’

সুইটহার্ট মিনমিনে চোখে তাকিয়ে রইল।অদ্রিজার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,

‘ সত্যিটা জানার কি এতটাই প্রয়োজন অদ্রি?না জানলেই নয়?ঐসব তিক্ত দিনগুলোর কথা মনে করতেই খারাপ লাগে।বলতে গেলে তো আরো খারাপ লাগবে।তোমারও খারাপ লাগবে। ‘

অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকাল।ঠোঁট বাঁকিয়েই বলল,

‘ কি এমন কথা যে খারাপ লাগবে?বলে ফেলো সুইটহার্ট।আমার নয়তো শান্তি হবে না।’

সুইটহার্ট হাসল ঠোঁট টেনে।লম্বা একটা শ্বাস ফেলেই বলল,

‘ আচ্ছা বলছি।’

অদ্রিজা মৃদু হাসল।চোখেমুখে উৎসুক দৃষ্টি।কি এমন ঘটেছিল?সত্যিটা আসলে কি ছিল?সুইটহার্ট কি বলবে? এসব ভেবেই মনোযোগী হয়ে তাকিয়ে রইলো সুইটহার্টের দিকে।সুইটহার্ট সেই উৎসুক দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করেই কয়েক সেকেন্ড পর বলতে লাগলেন,

‘ রক্তিমের ব্রেইন টিউমার ছিল অদ্রি।তোমার সাথে যখন রক্তিমের বিয়ে হয় তারও প্রায় বছর এক আগে বিষয়টা আমরা জানতে পেরেছিলাম।প্রচন্ড মাথ ব্যাথায় যখন ছটফট করত প্রথমে বিষয়টা অতোটা গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে যখন ডক্টর দেখানো হলো, বিভিন্ন টেস্ট করা হলো তখনই জানতে পারলাম ওর ব্রেইন টিউমার।আমি তখন ভীষণ ভেঙ্গে পরেছিলাম।দিন রাত কেবল কান্না করতাম।কেন ওর জীবনে এমন কিছু হলো তা ভেবেই।ছোটবেলা থেকে কষ্ট পেতে পেতে জমে যাওয়া ছেলেটার জীবনেই আবার কেন এমন শাস্তি!সৃষ্টিকর্তার কাছে বারবার প্রার্থনা করেছি যাতে জানের সাথে খারাপ কিছু না হয়।দিনরাত কেঁদে ভাসিয়েছিলাম।কিন্তু ও কোনদিন এই বিষয়টা নিয়ে এটুকুও মন খারাপ করেনি।বাবা মায়ের থেকে কষ্ট পেয়ে ম্যাচিউর হওয়ার পর থেকে ওর মুখে সর্বক্ষন যে মুচকি হাসিটা জড়িয়ে থাকত সেই হাসিটা তখনও ছিল।নিজের জীবনের এমন একটা কথা জানতে পেরে কোনদিন ওর মনেই হয়নি দুঃখ করা উচিত।কারণ ও জানত, আমিও কিছু বছর পর ওর সাথে আর থাকব না।কোন একদিন আমিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব।তখন তো ও একা হয়ে যাবে।কি করে বাঁচবে সেই নিঃসঙ্গ জীবন?সেই কষ্টকর নিঃসঙ্গ বিশ্রী জীবনটা কাঁটানোর থেকে এভাবে ব্রেইন টিউমারের উপলক্ষ্যে অকালে মরে যাওয়াই ভালো।এটাই ওর মাথায় ডুকেছিল তখন।ওর মনে হতো সৃষ্টিকর্তা এটা ওর ভালোর জন্যই করেছে।ঐ যে বলে না, বিধাতা যা করে ভালোর জন্যই করে।জানও ঐ কথাটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করল। কিন্তু আমি মানতে পারলাম না।ডক্টরের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার নামক অভিশাপটা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।তবে নিশ্চয়তা নেই।অপরেশনটার সফলতার অংশ ছিল পঞ্চাশ শতাংশ আর অসফলতার অংশ পঞ্চাশ শতাংশ।আমি সেইদিন ভীষণ কান্না করেছিলাম। আজও মনে পড়ে।সেইদিন জানও আমায় জড়িয়ে কেঁদেছিল।চোখের পানি মুঁছিয়ে দিয়ে বলেছিল,” সুইটহার্ট?আর কতদিন বাঁচব তা তো আমি জানি না হয়তো খুব শীঘ্রই মরে যাব, নয়তো বেশি হলে আর অল্প কয়েক বছর।সেই তো একদিন আমি মারাই যাব সুইটহার্ট। কিন্তু অপারেশনটা অসফল হলে আমাকে এক্ষুনিই সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই দুনিয়া থেকে, তোমার থেকে চিরতরে চলে যেতে হবে সুইটহার্ট। তার থেকে আর কয়টা দিন বাঁচি সুইটহার্ট? তোমায় নিয়ে।সুন্দর করে আর কয়েকটা বছর কাঁটাই?প্লিজ!’আমি সেইদিন জানের কথার উপর আর কোন কথা বলতে পারিনি অদ্রি।কান্নায় বারবার চোখ ভিজে গেছিল আমার।তারপর আর সেই প্রসঙ্গ জানের সামনে তুলিইনি কোনদিন আমি।যদি ওর মন খারাপ হয় সেই ভয়েই আর কোনদিন এই বিষয়টা ওর মনেই পড়তে দিই নি।সবসময় ওকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতাম আমি।সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করতাম।যাতে কোনদিন ও ঐ কথাটা মনে করে কষ্ট না পায়।’

সুইটহার্ট ছোট নিঃশ্বাস ফেললেন সবগুলো কথা বলেই।অদ্রিজা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।রক্তিমের জীবনের এতকিছু সম্পর্কে কোনদিনও এইটুকুও আন্দাজ করতে পারেনি সে।সত্যিই রক্তিমের মুখের হাসিটা কোনদিন ও বুঝতেই দেয় নি তার ভেতরের এতকিছু।সত্যিই কি কষ্ট হতো না তার এই কথাটা ভেবে?সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন এটা মানলেও দিনশেষে কি আক্ষেপ হতো না?কান্না পেত না?অদ্রিজা ভেবে পেল না।চোখজোড়া অল্প টলমল করে উঠতেই অন্য পাশ ফিরে চাইল।জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই কান্না দমিয়ে বলে উঠল,

‘ তারপর?তারপর কি হয়েছিল সুইটহার্ট?অপারেশণ টা কবে হয়েছিল?’

সুইটহার্ট তপ্তশ্বাস ফেললেন।গম্ভীর মুখখানি অদ্রিজার দিকে তাক করেই গম্ভীর চাহনি ফেললেন। ভিজে উঠা কন্ঠটা নিয়েই আবার বলতে লাগলেন,

‘ তোমার সাথে যে ওর বিয়ে হয়েছিল, বিষয়টা আমি প্রথমে জানতাম না।হয়তো ওর বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছে ভেবে কষ্ট পাব, এই ভেবেই বলেনি।জানি না ঠিক।তবে হয়তোবা তোমার সাথে বিয়ের পর থেকেই রক্তিম তার নিজের সাথে ভেতরে ভেতরে লড়তে থাকল।নিজের সাথে নিজেই প্রতিনিয়ত লড়তে লড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে যেত, পরাজিত হয়ে যেত তখনই টলমলে চোখে চেয়ে থাকত ও।কোনকোনদিন কান্না ও করত।আমি অবাক হয়ে চাইতাম।যে সব দুঃখকে লুকিয়ে হাসতে জানে, সে যে কাঁদতেও জানে তা ঐ দিনগুলোতেই আমি টের পেয়েছিলাম।আমার ছোট্ট দাদুভাই যে সেই ছোট্টটিই রয়ে গেছে তা ঐ দিনগুলোতেই আমি বুঝেছিলাম।বারবার বলত, “সৃষ্টিকর্তা এমন কেন করল আমার সাথে।” আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম।প্রায় একমাস, একমাস থেকে কম হবে অবশ্য, ও আমার থেকে দূরে ছিল।জিজ্ঞেস করলেই বলত অফিসের কাজে।সেই প্রথম ও আমার থেকে কিছু লুকিয়ে গিয়েছিল।তোমার সাথে ওর বিয়ের কথাটা লুকিয়ে গিয়েছিল।যেইদিন জানতে পারলাম তোমাদের বিয়ের বিষয়টা আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। পরমুহুর্তেই অবশ্য আমি হেসেছিলাম।আমি সত্যিই চেয়েছিলাম ওর জীবনে কেউ আসুক, কেউ ভালোবাসুক ওকে।আমি যখন থাকব না দুনিয়ায় তখন যাতে কেউ তাকে ভালোবেসে আগলে রাখে।সত্যিই চেয়েছিলাম।সৃষ্টিকর্তা সেই ইচ্ছেটাই পূরণ করলেন তোমায় এনে।তখনই বুঝেছিলাম দিনের পর দিন ওর মন খারাপের কারণ।কান্নার কারণ।বুঝতে পেরেছিলাম ও তোমায় ভালোবাসে।সেইদিন সত্যিই কতোটা খুশি হয়েছিলাম আমি জানা নেই।মনে মনে বারংবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম।কিন্তু ঐ যে!দিনশেষে ঐ একটাই ভয়!ঐ ভয়টার কারণেই ও তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। ঐ ভয়টার কারণেই তোমার সুন্দর জীবনটাকে ওর অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে চায়নি। নিজের ভালোবাসাকেও বিধাতার ঐ অভিশাপের ভেতর মুড়িয়ে নিয়েছিল।ভালোবাসার মানুষটা নিজের জেনেও পর করে দিতে চেয়েছিল।শুধু ঐ একটাই কারণে!’

অদ্রিজা থমকে গেল!রক্তিম যে তাকে ভালোবাসে কথাটা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতেই কেঁপে উঠল শরীর।কিছুতেই বোধগম্য হলো না কথাটা।মনটা বাচ্চাদের মতো বারংবার জিজ্ঞেস করল,” সত্যি?সত্যিই রক্তিম তোমাকে ভালোবাসে অদ্রিজা?” অদ্রিজা চোখ বন্ধ করল। রক্তিম তাকে ভালোবাসে কথাটা বারংবার মনের ভেতর ঘুরতে লাগল।চোখ মেলেই সুপ্তশ্বাস ফেলে সুইটহার্টের দিকে তাকাল।প্রশ্ন করল,

‘ উনি আমাকে ভালোবাসে?কিভাবে?কি বলছো তুমি সুইটহার্ট?’

সুইটহার্ট মুচকি হাসল। বলল,

‘ সেটা না হয় ওর কাছ থেকে জেনে নিও অদ্রি।ভালোবাসে কিনা জিজ্ঞেস করে নিও। ‘

‘ উনি বলবেন, উনি আমায় ভালোবাসেন?স্বীকার করবেন? ‘

‘ সেটা তো জানা নেই।’

অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকাল।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ তারপর?তারপর কি হয়েছে?’

‘ তারপর?তারপর ও তোমায় দূরে সরিয়ে দিল।সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল, ওর অনিশ্চিত জীবনের সাথে তেমার জীবন কিছুতেই জড়াবে না।সেই হিসেবে তোমার মায়ের কাছে ভুলভাল সব প্রমাণ করে তোমায় রেখে আসল।ভেবে নিয়েছিল এবার তোমার আর ওর পথ আলাদা।সেই আলাদা পথ হাঁটতে গিয়ে নিজেই বারংবার রক্ত ঝরিয়েছে।নিজেই কষ্ট পেয়েছে।চিৎকার করে কেঁদেছে।শুধুমাত্র তোমার থেকে আলাদা হওয়ার কষ্টে।দিনশেষে সেই কষ্টগুলোকে আপন করেও নিজেকে আলাদা রাখল তোমার থেকে।কিন্তু বিধাতা বোধ হয় তা চায় নি।তাই তো মাসখানেক পর অত্রিয়া কল করে বলল তুমি মা হতে চলেছো।সেইদিন ওর অনুভূতিটা কেমন হয়েছিল তা হয়তো বলে বুঝাতে পারব না।ওর মুখের সেই হাসিটাতে পৃথিবীর সব সুখ ছিল সেইদিন।আর সেইদিন ও সিদ্ধান্ত নিল অপারেশনটা হবে।নিজের সন্তানের জন্যই সেদিন ওর বাঁচার আকুতি মিনতি দেখে আমার চোখ টলমল করছিল।ঝাপসা চোখে ওর দিকে সেদিন অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম আমি।তারপর সেই সময়টা এল।দেশ ছেড়ে অপরিচিত দেশে ওর চিকিৎসার জন্যই গিয়েছিলাম।এতটা রিস্ক নিয়ে জীবন ম/রন নিয়ে প্রশ্ন রাখা সেই অপারেশনটা যখন ঠিকভাবে সম্পন্ন হলো, সফল হলো জানাল ডক্টর তখন কান্নায় চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছিল আমার।দুইদিন পর যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম।ও শুধু হেসেছিল সেদিন।অস্ফুট স্বরে বলেছিল,” সুইটহার্ট!আমার সন্তান আমার সাথেই বাঁচবে।সৃষ্টিকর্তা আমার সন্তানের সাথে অন্যায় করেনি।”সে কথাটা শুনে কান্না করতে করতেও হেসেছিলাম আমি।তারপর আরও একমাস পর আবার দেশে ফেরা,তোমায় জ্বালানো, তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা,তোমায় আপন করার প্রচেষ্টা।সেখান থেকেই শুরু। ‘

কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুইটহার্ট। অদ্রিজা কেবল টলমলে চোখে চেয়ে থাকল।রক্তিমের এত বড় একটা অপারেশন হলো অথচ সে কিছুই জানল না?কিছুই জানাল না কেউ তাকে?যদি রক্তিম আজ না থাকত?যদি রক্তিমের কিছু হয়ে যেত?ভাবতেই মুঁছড়ে উঠল ভেতরটা।শত হোক, ভালোবাসে তো!ঐ মানুষটাকেই তো ভালোবাসে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here